সারা রাত ঘুম হলো না তুরানের। এ রকম সিচুয়েশনে ঘুম আসে না। রুপার আচরণে খুব বেশি বিরক্ত হয়েছে তুরান। এতটা অবুঝ হলে কিভাবে চলে? আর অন্য দিকে দুঃশ্চিন্তা আর হতাশায় তুরানের অবস্থা শোচনীয়। কিসের জন্য পাগলা গারদে রাখবে রুপাকে? এ রকম কোন সিচুয়েশন হলে রুপাকে নিয়ে দরকার হলে পালিয়ে যাবে। রুপা যদি বিষয়টা তুরানের সাথে শেয়ার না করে তাহলে তুরানের কি করার আছে? কিন্তু রুপা কথাটা সত্যি কিনা মিথ্যা বলেছে এটাই এখন ভাবার বিষয়। সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরী যথেষ্ট সচেতন আর টাকাওয়ালা মানুষ। তাঁরা কি রুপা কে পাগলা গারদে দিয়ে আসবে? তাছাড়া রুপার তো গার্ডিয়ান আছে। তুরানের মাথায় কিছুই খেলছে না। রুপার সাথে কথা না বললে কিছুই জানা যাবে না। রাতের সেই ভয়ংকর পরিস্থিতির কথা ভেবে শিউরে উঠে তুরান। একবার যদি সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরীর কাছে ধরা খেয়ে যেতো তাহলে যে কি হতো কে জানে!
ফযরের আজান দেওয়ার সাথে সাথে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় তুরান। চোখ গুলো ভয়ংকর রকমের লাল হয়ে আছে। মুখটা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে আর চিন্তার সূক্ষ্ম রেখা দেখা দিচ্ছে কপালে। শরীরও খুব ক্লান্ত লাগছে তুরানের।
তুরান যে স্টুডেন্ট পড়ায় কালকে তাঁদের পরীক্ষা। সুতরাং আজকে পড়াতে না গেলে টিউশনি থাকবে না তাও শিওর তুরান। যাওয়ার আগে রুপার সাথে কথা বলে সম্পূর্ণ টা না জানলে কিছু তেই মন শান্ত হবে না তুরানের। নাকি সাহেলা বেগমের কাছে জিজ্ঞেস করবে? পরক্ষনে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় তুরান! সাহেলা বেগমের কাছে এসব জিজ্ঞেস করা অযৌক্তিক। এমনিতেই ব্যাচেলর দের কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না, সামান্য দোষ ত্রুটি পেলেই বাসা থেকে নামিয়ে দিতে দুইবার ভাবে না । কারন তাঁদের ভাড়াটিয়ার অভাব নেই, কিন্তু ব্যাচেলর দের এমন বাসার খুব অভাব।
তুরান উদ্ভ্রান্তের মত রুম থেকে বের হয়। রুপার দেখা পাওয়া যায় কিনা এই ভেবে। রিলেশনের এই পর্যায়ে এসে তুরান বুঝেছে আর যাই হোক একটা ম্যাচিউর মেয়ের সাথে প্রেম করা উচিত। রুপার অবুঝ পাগলামি গুলো ভালোলাগে তুরানের, কোন কিছুতেই বিরক্ত হয় না তুরান। তাই বলে এমন অযোক্তিক পাগলামি করবে। তুরানের ব্রেনের উপর খুব বেশি ডিপ্রেশন সৃষ্টি হচ্ছে।
রুপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। হাতে চায়ের মগ। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চা খাচ্ছে। রুপার ভাব দেখে বুঝা যায় সে খুব নিশ্চিতে আছে। রুপার এমন কান্ড দেখে অবাক না হয়ে পারে না তুরান। ইমোশনাল ব্লাকমেইল করছে রুপা? রুপা কে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না তুরান। তুরান বিভিন্ন ভাবে রুপা কে ইশারা করার চেষ্টা করলো, কিন্তু রুপা ফিরে তাকাচ্ছে না। হয়ত রুপা কথা বলতে চাচ্ছে না তাই কোন রেসপন্স করছে না। তুরান বরাবরের মতো একটা চিরকুট ছুঁড়ে ফেললো বারান্দার দিকে। এভাবে চিঠি দিলে রুপা খুব বেশি খুশি হতো। তুরান চরম অবাক হয়ে গেলো! রুপা ফ্লোর থেকে কাগজটা তুলে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিলো। আর তুরানের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালো। নতুন রুপা কে দেখছে যেন তুরান। একটা মানুষ সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এত রাগ করতে পারে জানা ছিলো না তুরানের।
তুরানের রাগ হলো ,ঠিক রাগ না খানিকটা অভিমানও। রাগ ,অভিযানের মিশ্রন যাকে বলে। এতটা ইগ্নোর করা কি রুপার ঠিক হয়েছে? তুরান হতাশ হয়ে রুমে চলে গেলো। তুরানের এখন মনে হচ্ছে রাতে রুপা যে বলেছিলো যে ওকে পাগলা গারদে রেখে আসবে বিষয়টা মিথ্যা।
তুরান রুপার এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরনে খুব বেশি কষ্ট পায়। তুরান তাড়াহুড়ো করে রেডী হয়ে টিউশনির উদ্দেশ্য রওয়ানা হয় । টিউশনি শেষে ভার্সিটি তে যাবে সেখান থেকে দুপুরের পর আসবে। তুরান বারান্দার দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলো।
রুপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুরানের চলে যাওয়া দেখছে। তুরান চলে যাওয়ার পর রুপা ফ্লোর থেকে কাগজের টুকরো গুলো তুলে মিলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পারল না । রুপার নিজের গালের উপর দুইটা চড় দিতে ইচ্ছে করলো । কি দরকার ছিল ঢং করে কাগজটা ছিঁড়ে ফেলার? রুপা মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছে। তুরান তাহলে সত্যিই বিশ্বাস করেছে যে রুপা কে পাগলা গারদে রেখে আসবে। পাগলের মত করেছিলো তুরান । একটুর জন্য ধরা খায় নি! আনমনে হাসছে রুপা। এবার বুঝো রং ঢং করে মেয়েদের সাথে কথা বলার ফল! রুপা মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞা করলো যে এরকম শাস্তি আরও দুই দিন অব্যাহত থাকবে। জীবনে আর যেন কখনো মেয়েদের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তাকানোর সাহসও যেন না পায়! রুপা কে চিনতে ভুল করেছে। এবার বুঝুক মজা!
তুরান চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ ও সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরীও চলে গেলো । বাসায় একা একা শূন্যতা অনুভব করছে রুপা। তুরানকে অনেক বেশি মিস করছে কিন্তু তুরানের উপর রাগ কমছে না । রুপার রাগটা খুব দীর্ঘস্থায়ী। হঠাৎ রুপার নিজের রুমটা গোছাতে ইচ্ছা করলো। এর আগে কখনো এমন ইচ্ছা করে নি। সব সময় সাহেলা বেগম রুম গুছিয়ে দিয়েছে। রুম গুছিয়ে টাইম পাস করতে চাচ্ছে বোধ হয়। বোরিং সময় গুলো সহজে কাটতে চায় না। রুপা রুম গুছিয়ে গেটের সামনে গেলো । যদিও রুপার গেটের বাইরে বেরুনো নিষেধ। দাড়োয়ান কে বুঝিয়ে কোন রকম বের হলো। সামনেই ফুসকা পাওয়া যায়। হঠাৎ রুপার কে জানি ইচ্ছা করছে ফুসকা খেতে ।
সাহেলা বেগম হসপিটাল থেকে এসে যখন দেখবে রুম পরিপাটি করে গোছানো তখন একদম সারপ্রাইজড হবে। রুপা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে। হঠাৎ তুরান কে দেখে চমকে যায় । এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসছে কেন তুরান? অসুস্থ দেখাচ্ছে তুরান কে।
তুরানও হঠাৎ রুপা কে দেখতে পায় । তুরান আস্তে আস্তে হেঁটে রুপার কাছে আসে। রুপা খাওয়া থামিয়ে আড় চোখে তুরানের দিকে তাকাচ্ছে। কেমন যেন উস্কখুস্ক দেখাচ্ছে তুরান কে। তুরান কথা না বলে রুপার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। রুপা হয়ত আশা করেছিলো তুরান কিছু বলবে। কাউকে সামনে রেখে এভাবে একা একা খাওয়া বিষয়টা বেশ বিব্রতকর। কিন্তু রুপা তো প্রতিজ্ঞা করছে তুরানের সাথে কথা বলবে,এখন সাধবে কি করে?
রুপা কি যেন ভেবে বলে,
-' খাবেন?'
তুরান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
-' না তুমি খাও।'
-' এত তাড়াতাড়ি ফিরলেন যে?'
-' ভার্সিটি তে যায় নি। শরীর খারাপ লাগছে খুব। টিউশনি করে এসে পরেছি।'
তুরান পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে ফুসকাওয়ালার টাকা টা শোধ করে গেটের ভিতরে ঢুকে গেলো। রুপার দিকে একবার তাকালো না । তুরানের এমন আচরণে বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো রুপা। তুরান কখনো এমন আচরণ করে নি। নাকি তুরানের শরীর খারাপ লাগছে বলে? তুরানের এমন সামান্য অসুস্থতায় রুপা কষ্ট অনুভব করলো। রুপা ফুসকার প্লেট টা রেখে দ্রুত বাসায় চলে গেলো ।
বাসায় বসে ছটফট করতে লাগলো রুপার । কথা বলতে ইচ্ছে করছে তুরানের সাথে। রুপা দ্রুত তুরানের রুমের দিকে গেলো । রুমের দরজা ভিতর থেকে লক করা, এমনকি জানালা গুলোও সব আটকানো। রুপা কলিং বেল চাপ দিলো, ভিতর থেকে কোন রেসপন্স নেই। রুপা ডাকতে লাগলো তুরান কে। তুরান রাতের ঘটনার জন্য প্রতিশোধ নিচ্ছে নাকি?
প্রায় দুই ঘন্টা তুরানের রুমের কাছে দাঁড়িয়ে রইলো রুপা। দরজায় কতগুলো লাথিও দিলো , কিন্তু কোন সাড়া নেই। তুরান কি সেন্সলেস হয়ে গেলো নাকি? একটু পরে রুপার মনে হলো সেন্সলেস হলে কেউ দরজা- জানালা বন্ধ করে হয় না। এ তো দেখছি আমার থেকে এক কাঠি সরেস শয়তানিতে।
সাহেলা বেগম কে বাসায় আসতে দেখে রুপা নিজের রুমে চলে গেল।
—
লম্বা ঘুম শেষে বিকালের দিকে কে উঠে তুরান । এক ঘুমে যেন সকল ক্লান্তি- বিষাদ দূর হয়ে গেছে। ঘুম ঘুম চোখে দরজা, জানালা গুলো খুলে তুরান। জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখলো আশেপাশে রুপা আছে কিনা! রুপার সকালের ব্যবহারে খুব বেশি রাগ হয়েছে তুরানের। আবার মিথ্যা বলে ডিপ্রেশনে রেখেছে। মেয়ে টার বুদ্ধি বোধ হয় হাঁটুর নিচে। মিনিমাম সেন্স নেই, একটা মানুষ যে চিন্তায় মরে যাচ্ছে আর সে মিথ্যা বলে ব্লাকমেইল করছে। তুরান গোসল সেরে সকালের অবশিষ্ট নাস্তা খেয়ে নিলো! ওয়াক্ত মতো রান্না করাও হয়ে উঠে না তুরানের! ব্যাচেলর লাইফ কোন রকম খেয়ে পেট ঠান্ডা রাখতে পারলেই এনাফ। রুপা বোধ হয় অনেকক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। থাকুক দাঁড়িয়ে! খানিকটা চাপা অভিমান জমে তুরানের মনে।
রুপার তুরানের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এমন কেন তুরান? রুপার রাগ ভাঙালোই না উল্টো নিজেই এখন ভাব ধরে বসে ছিলো। রুপা মনে মনে ভেবে নিয়েছিলো অনেক দিন কথা বলবে না তুরানের সাথে কিন্তু রুপা কেন জানি কথা না বলে পারছে না। আগে কখনো এমন হয়নি রুপার। রুপা রাগ যত ইচ্ছা তত করবে তাই বলে তুরান রাগ ভাঙাবে না? এমন আচরণ করবে? ভীষণ মন খারাপ হচ্ছে রুপার। সব মেয়েরাই বোধ হয় চায়, তাঁর ভালোবাসার মানুষটা ধৈর্য সহকারে রাগ ভাঙাক।
রুপার তুরানের সাথে কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। রুপা তুরানের রুমের কাছে গেলো। রুমের দরজায় বাইরে থেকে ছিটকানি লাগানো। এর মানে তুরান কোথায়ও গেছে। কোথায় গেছে ছাদে নাকি অন্য কোথায়ও? বিকাল টাইমটা তুরান বেশিরভাগ ছাদেই থাকে। রুপা ছাদে গিয়ে দেখে ছাদের এক কোনায় চেয়ারে বসে বই পড়ছে তুরান। চোখে সেই মোটা ফ্রেমের চশমাটা। কেমন হাবা হাবা দেখাচ্ছে তুরান কে। রুপা তুরানের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একটু কেশে শব্দ করলো। তুরান মনোযোগ সহকারে বইয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে। রুপা এবার গিয়ে তুরানের চেয়ারের পাশে দাঁড়ালো। তুরান বই থেকে মুখ না তুলেই বললো,
-' পড়ছি ডিস্টার্ব করো না। কিছু বলার থাকলে বলে চলে যাও।'
খানিকটা অভিমান দোল খায় রুপার মনে। ভ্রু কুঁচকে বলে,
-' আমি আপনায় ডিস্টার্ব করি?'
উত্তর দেয় না তুরান। তুরানের এমন আচরণে অবাক না হয়ে পারে না রুপা। রুপা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । কোন কথা বলছে না। তুরান অনেকক্ষণ পরে বললো,
-' আমার আচরনে খুব বেশি অবাক হওয়ার কিছু নেই।'
তুরান একটু থেমে আবার বলে,
-' যে মানুষের বিন্দু মাত্র রেসপনসিবিলিটি নেই তাঁর সাথে এর থেকে ভালো ব্যবহার করতে পারি না আমি। মিথ্যা বলার একটা সীমা আছে রুপা। আচ্ছা মানলাম আমার ভুল হয়েছে। আমি তোমার রাগ ভাঙিয়ে নিতাম। তুমি কি আচরণ টা করলে ? এমন সব মিথ্যা বললে আমার পাগল হওয়ার অবস্থা। একটুর জন্য ধরা খায়নি। সামান্য একটা বিষয় তুমি টেনেটুনে কত বড় করেছো বুঝতে পারছো?আরে মেয়েটা আমার ফ্রেন্ড, আমার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসছে। এটা যাস্ট একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাটার।'
এই টুকু বলে রুপার দিকে তাকায় তুরান।টপটপ করে জল গড়াচ্ছে রুপার চোখ থেকে।
রুপা কান্না চেপে বললো,
-' আমার তো কোন ফ্রেন্ড-ট্রেন্ড নেই। আর আমি তো আর লেখাপড়াও করি নি। তাই ওসব ম্যাটারও বুঝি না। মেয়েটা কে চড় দিয়েছে বলে আপনার লেগেছে খুব সেটা ডিরেক্টলি বললেই পারেন এত ভনিতার দরকার নেই।'
তুরান বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে রুপার দিকে তাকায়। চেয়ার থেকে উঠে রুপার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,
-' এসব চিন্তা ভাবনা কোথায় পেয়েছো? ওই মেয়ের জন্য আমার লাগবে তাই না?'
তুরানের কথা না শুনেই চলে যায় রুপা। তুরানও আটকায় নি রুপা কে। রুপা চলে যাওয়ার পর ঠাস করে চেয়ারে বসে পড়ে তুরান। নিজের মাথার উপর বারি দিতে ইচ্ছে করছে তুরানের। রুপা কে এমন কঠিন কথা শুনানোর কি দরকার ছিলো? ও তো এমনই,সব কিছু উল্টো বুঝবে। বিষয়টা এ পর্যন্তই তো শেষ হয়ে যেত আবার রাগ শুরু হয়েছে। তুরান হতাশ ভঙ্গিতে বসে রইল। রুপার রাগ যত দ্রুত সম্ভব ভাঙানো দরকার।
তুরান ছাদে বসে রইলো। বিকেল পেরিয়ে গোধূলি লগ্ন, সূর্য টা অস্ত যাচ্ছে । রক্তিম আভায় ছেয়ে গেছে পুরোটা। তুরান উদাস মনে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে। সারা সন্ধ্যায় রুপা কে একবারও দেখেনি তুরান। খুব বেশি খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে কি? এই রাগ ভাঙাতে ছোট খাটো ঘূর্ণিঝড়ও হয়ে যেতে পারে।
রুপা যদি রাতে ছাদে আসে তাহলে রাগটা ভাঙানো যাবে। যার সাথে কথা না বলে থাকা যায় না তাঁর সকল রাগ , অভিমান মেনে নেওয়াই বোধ হয় শ্রেয়। তুরান ছোট একটা কাগজের টুকরায় রুপা কে ছাদে আসার জন্য লিখলো। রুপার রুমের জানালার ফাঁক দিয়ে কাগজ টা ছুঁড়ে মারে। রুপাকে কাগজ টা হাতে নিতে দেখে ঠোঁটের কোনে চিলতে হাসি ফুটে তুরানের। সেদিনের পর থেকে রুপার রুমের কাছে যেতে ভয় লাগে তুরানের। তুরানের শঙ্কা কাজ করছে রুপা আসবে তো?
তুরান টাইমও বলে দিয়েছে। তুরান ছাদে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। প্রায় আধা ঘন্টা অপেক্ষা করলো, রুপা আসলো না।তুরান ছাদে থেকে নেমে রুপার রুমের দিকে উঁকি দেয়। জানালাও বন্ধ,লাইট অফ। তার মানে ঘুমিয়ে পড়েছে রুপা , আসবে না ছাদে।
তুরান এক রাশ হতাশা নিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো। কালকে দিনে যে করেই হোক রুপার রাগ ভাঙাতেই হবে।
সকাল বেলা ঘুম এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। মাঝে মাঝে রুপা এসে সকালে ঘুম ভাঙাতো তুরানের। খুব মিস করছে রুপা কে । তুরান ফ্রেশ হয়ে খেয়ে টিউশনির উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয় । বাসায় ফেরার সময় রুপার পছন্দের সব কিছু নিয়ে আসবে, তাহলে রুপা আর রাগ করে থাকতে পারবে না। তুরান মনে মনে ভাবলো আজও ভার্সিটি তে যাবে না। কারন টিউশনি করিয়ে বাসায় এসে দেখবে সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরী কেউই বাসায় নেই। এটাই রুপার রাগ ভাঙানোর সুযোগ।
তুরান টিউশনি শেষে রুপার জন্য দুই মুঠো চুড়ি কিনলো, রুপার পছন্দের ফ্লেভারের আইসক্রিম আর কতগুলো কদম আর রজনীগন্ধা ফুল নিলো।
রুপা এবার আর রাগ করে থাকতে পারবে না। এগুলো দেখে রুপার রিয়্যাক্ট কেমন হবে তা নিয়ে ভাবছে আর মিটিমিটি হাসছে তুরান। তুরান বাসায় এসে দেখলো আজিজ চৌধুরী বাসার মেইন ডোরে বড়োসড়ো একটা তালা ঝুলানো। এর মানে বাসায় কেউ নেই।আর রুপা কে তো বাসার ভিতরে বন্দি করে রেখেছে যাবে না । তুরান পুনরায় হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বাসার আশেপাশে ঘুরে ঘুরে দেখলো বাসায় কেউ আছে কিনা। কেউ নেই বাসায়।
তুরানের এখন কি যে ইচ্ছা করছে নিজেও জানে না। পাশের ফ্ল্যাটের কারো কাছে জিজ্ঞেস করে জানা যাবে। কোথায় যেতে পারে রুপা? তুরান হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে গেলো।
পাশের ফ্ল্যাটের ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞেস করে জানলো রুপা সাহেলা বেগম আর আজিজ চৌধুরীর সাথে কক্সবাজার গেছে। তুরানের মাথায় যেন বাজ পড়লো। কক্সবাজার কি ঘুরতে গেছে উনারা? তুরান ফ্লোর ঘেঁষে বসে পড়লো।
এমন কেন রুপা টা? একবার বললো না! ও কি বুঝে না ওর জন্য কারো খুব বেশি টেনশন হয়। কবে ফিরবে রুপা? অনিশ্চিয়তার হতাশ হয়ে যাচ্ছে রুপা।