সকালে রুমে পায়চারি করছে সাহেলা বেগম । রুপা তো এত বেলা পর্যন্ত ঘুমায় না কখনো। রুপার রুমে যায় সাহেলা বেগম । এখনও ঘুমাচ্ছে রুপা। কালকে ওর আম্মু মারছে ওকে তাই বোধ হয় শরীর খারাপ করেছে সেজন্য ঘুমাচ্ছে।
সাহেলা বেগম রুপার মাথার কাছে বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মাথায়। মেয়েটার মুখটা বিশুদ্ধ,স্বচ্ছ একদম। নিঃসন্তান সাহেলা বেগমের মনে রুপার জন্য রয়েছে অগাধ ভালোবাসা । তাইতো রুপার সব পাগলামী সহ্য করে। বুকে একটাই আশা রুপা একদিন সুস্থ হবে। রুপা সুস্থ হলে কি রুপার বাবা-মা রুপাকে সাহেলা বেগমের কাছে রাখবে? নাকি আজিজ চৌধুরীর কথাই সত্যি হবে?
বুক চিঁড়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে সাহেলা বেগমের ।
আদুরে গলায় ডাকে রুপাকে । বেঘোরে ঘুমাচ্ছে রুপা। কপালে হাত দিয়ে দেখে সাহেলা বেগম । জ্বর আসছে কি রুপার গায়ে? না শরীরের তাপমাত্রা তো স্বাভাবিক।
রুপার কানের কাছে মুখ নিয়ে সাহেলা বেগম বলে,
-'রুপা আম্মু উঠো তো। অনেক বেলা হয়েছে।'
অনেকক্ষন ডাকার পর ঘুম ভাঙে রুপার।রুপার ঘুম থেকে উঠতে নারাজ। সাহেলা বেগম রুপাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘুম থেকে উঠালো।
-'এত বেলা পর্যন্ত ঘুমানো শরীরের জন্য ক্ষতি তো।'
ঘুম ঘুম চোখে রুপা বলে,
-'উঁহু।'
একটু রাগী গলায় সাহেলা বেগম কথা বলতেই উঠে বলতেই উঠে বসে রুপা। সাহেলা বেগম হেসে বলে,
-'ভালো কথা তোর কানে যায় না তাই না?'
কোন কথা না বলে হনহনিয়ে বিরক্ত হয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেলো রুপা।
.
রান্না করে খেতে খেতে একটা টিউশনির সময় ওভার হয়ে গেলো। বাসা থেকে বের হলো তুরান। বার বার রুপার রুমের দিকে তাকাচ্ছে। সকাল বেলা রুপার মুখটা না দেখে বেরুতে ইচ্ছা করছে না।
দেয়ালে হেলান দিয়ে একটা কাগজের টুকরোর কি যেন লিখে রুপার রুমের দিকে ছুঁড়ে মারলো তুরান।
কাগজের টুকরো দেখেই তাড়াহুড়া করে কুড়িয়ে হাতে নিলো রুপা। তুরান ছাড়া এ আর কার কাজ? আম্মু যদি দেখে ফেলে তাহলে খারাপ হবে।
'রুপা বাবু চিঠি পড়তে জানো তো তুমি? না জানলেও সমস্যা নেই। এটা নিয়ে ভেবে আবার অজ্ঞান হয়ে যেয়ো না। ভার্সিটি তে যাচ্ছি আমি হুম? রুম থেকে বের হয়ো না।কোন পাগলামী করো না।'
মুচকি হেসে দেয় রুপা। তুরান কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-'শুধু চিঠি না,মানুষের মন পড়তেও জানি আমি।'
এক বুক প্রশান্তি নিয়ে বাসা থেকে বের হয় তুরান ।
তুরানের কথা মত রুপা সারা দিনেও রুপ থেকে বের হয় নি। কোন ভাংচুরও করে নি। রুপা এখন হাত ,পা কাটে না। রুমে বসে তুরানের চিঠিটা নিয়েই দুপুর টা কাটিয়ে দিলো। তুরান কখন বাসায় ফিরবে সেই অপেক্ষা শুধু।
রুপার এমন স্বাভাবিক আচরন দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে সাহেলা বেগম । ঠোঁটে হাসি ফুঁটিয়ে আজিজ চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-'দেখো রুপা এখন প্রায় স্বাভাবিক।'
-'সব স্বাভাবিক কোথায়? ওর অতীত...'
আজিজ চৌধুরীর কথা শেষ না হতেই থামিয়ে দিলো সাহেলা বেগম। থমথমে মুখে বলে,
-'ওটা অত জরুরী না।'
একটু থেমে আবার বলে,
-'রুপা আগে কি করতো মনে নেই তোমার? ওর বাসায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো, ওর ছোট ভাই কে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। এমন কি পাগলামী আছে ও করে নি? ওর বাবা-মা এসবে তিক্ত হয়ে মারতো ওকে। সেজন্যই বাবা-মার কথা শুনতে পারে না। সে তুলনায় এখন অনেক গুন ভালো।'
আনন্দিত মনে আজিজ চৌধুরীর সাথে বসে বসে কথা বলছে সাহেলা বেগম । কথা বলার মেইন টপিক রুপা। রুপার জন্য সাহেলা বেগমের এত ভালোবাসা দেখে আফসোস হচ্ছে আজিজ চৌধুরীর । রুপাকে যখন ওর বাবা-মা নিয়ে যাবে তখন কি সহ্য করতে পারবে সাহেলা বেগম?
গোসল সেরে হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে চুল শুকাচ্ছে রুপা। সাহেলা বেগম রুপার রুমে আসতেই রুপা হেসে বলে,
-' আগে কত বড় চুল ছিলো,শুকাতে অনেক সময় লাগতো। আর এখন কম সময় লাগে। ভালো হয়েছে তাই না?'
বলেই হেসে দেয় রুপা। সাহেলা বেগমের ইচ্ছা করছে রুপার গালের উপর একটা থাপ্পর দিতে। রাগ সংযত করে সাহেলা বেগম বলে,
-'খেতে আসো ।'
খাওয়া শেষ করে রুমে আসতেই রুপার চোখ পরে তুরানের দিকে । বাসায় ফিরেছে তুরান!
এখন সাহেলা বেগম বাসায় তাই তুরানের কাছে যেতে পারলো না। অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলো কখন সাহেলা বেগম বের হবে বাসা থেকে ।
সাহেলা বেগম বাসা থেকে বের হতেই দৌঁড়ে ছাদে চলে যায় রুপা।
চেয়ারে বসা তুরান । রুপা কে দেখেই হেসে দেয়।
-'এতক্ষন আসার সময় হলো বুঝি?'
হাঁপিয়ে গিয়েছে রুপা। কথা বলতে পারছে না। তুরান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
রুপাকে চেয়ারে বসিয়ে বলে,
-'হেঁটে আসলেই তে পারতে। এভাবে দৌঁড়ে আসতে বলেছে কে?'
রুপা এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে,
-'খেয়েছেন তো?'
এই টুকু কথার ভিতরও ভালোবাসা খুঁজে পায় তুরান ।
-'হ্যাঁ খেয়েছি তো।তুমি খেয়েছো?'
মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয় রুপা।
-'মাঝে মাঝে চিঠি লিখতে পারবেন? ভালো লাগে আমার।'
-'পারবো।যদি তুমি চিঠি উত্তর দেও।'
রুপা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
-'চিঠি লিখতে পারি আমি ।'
তুরান হেসে বলে,
-'আমি কি বলেছি তুমি পারো না?'
তুরান আবার বলে,
-' তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।'
উৎসাহিত কন্ঠে রুপা বলে,
-'কি?'
-'চোখ বুঁজো আগে তারপর।'
-'বুঁজলাম চোখ।'
-'যতক্ষন না বলব আমি ততক্ষন চোখ খুলবে না।'
রুপাও বাধ্য মেয়ের মত তাই করলো।
তুরান পকেট থেকে পায়েল বের করে রুপার পায়ে পরিয়ে দিলো। রুপার চোখে আঁকাবাঁকা করে লেপ্টিয়ে কাজল দিয়ে দিলো। একটা কালো টিপ রুপার কপালে পড়িয়ে দিলো। সবুজ এক মুঠ চুড়ি রুপার হাতে পড়িয়ে দিলো।
-'চোখ খোলো এবার ।'
রুপা বিস্ময়ে হাঁ হয়ে রয়েছে। তুরান রুপার সামনে হাঁটু ঘেঁষে বসে বলে,
'শোনো, আধুনিকতা একদম পছন্দ না আমার। তুমি আমার রানী হয়ে থাকবে। যাঁর চোখে থাকবে গাঢ়,মোটা কাজল। হাত ভর্তি চুড়ির আওয়াজ বাজবে সারাক্ষন। কপালে থাকবে বাঁকা টিপ,টিপ ঠিক করার ছলে মাঝে মাঝে কপালে হাত ছুঁয়ে দিবো। যত্ন করে পায়ে পড়িয়ে দিবো পায়েল। কাউকে কাজল পড়িয়ে দেওয়ার অভ্যাস আমার একদম নেই। তাই তো আঁকাবাঁকা হয়েছে।'
রুপার চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। অতি আনন্দের জল।রুপা তুরানের হাত ধরে বলে,
-'অনেকদিন হলো কেউ আমায় ভালোবাসে না । আপনি একদম ব্যতিক্রম।'
-'ভালো মেয়ে হয়ে থাকবে তাহলে সবাই ভালোবাসবে।'
আজিজ চৌধুরীর কন্ঠে শুনে তুরানের হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় রুপা। নিচ তলা থেকে ডাকছে আজিজ চৌধুরী।
তুরান ভ্রু কুঁচকে বলে,
-'আংকেল বাসায়?'
-'বাবার শরীর ভালো না তাই যায় নি অফিসে। বাবা বাসায় থাকলে ভয় হয় না। কারন সে সারাক্ষন রুমে বই নিয়ে বসে থাকে । দুনিয়ার অন্য কোন বিষয়ে তাঁর খেয়াল নেই।'
এই বলে দ্রুত পায়ে চলে গেলো রুপা। আজিজ চৌধুরী তো কখনো ডাকে না এই সময় আজ কেন ডাকছে?
তুরান হতাশ ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে রইল। এমন সময় কেউ ডিস্টার্ব করে? হায়! অদৃষ্ট।
.
একটু পরে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফিরে আসলো রুপা।
-'কি হলো রাগে গজগজ করছো কেন?'
-'মেজাজ খারাপ হচ্ছে ।'
-'কেন ,কেন?'
-'আরে আমি চিনি না জানি না কোথা থেকে কে ফোন দিয়ে আলাপ দেয়।'
-'কে ফোন দিয়েছে?'
-'প্রনয় রায়।'
তুরান ভ্রু কুঁচকে বলে,
-'আংকেলের ফোনে কল দিয়েছে ছেলেটা?'
-'হুম।'
-'কি বলেছে তোমায় ?'
-'জানে কে আজাইরা কথা । বাদ দেন।'
চিন্তায় পড়ে যায় তুরান। আজিজ চৌধুরীর ফোনে কল দিয়েছে নিশ্চয় রুপার পরিচিত কেউ । তুরান ভয় পাচ্ছে অন্য কারনে। পরক্ষনে মনে পরলো প্রনয় রায় ছেলেটা হিন্দু ! ভয় কেটে গেলো তুরানের!
—
রুপার সাথে প্রেমের বয়স যত বেড়ে চলেছে , তুরান এর চিন্তা তত গাঢ় হচ্ছে। রুপা আর চার-পাঁচটা মানুষের মত স্বাভাবিক নয়। হয়ত রুপা স্বাভাবিক নয় বলেই তুরান এত বেশি ভালোবেসে ফেলেছে ওকে। তবুও এ নিয়ে প্রতিনিয়ত চিন্তায় ভুগছে তুরান। প্রেম-ট্রেম অত নিয়ম-কানুন মেনে হয় না। কেমন একটা অনিশ্চয়তার মাঝে আছে। ভবিষ্যতে কথা ভাবলেই শিউরে উঠে তুরান। রুপার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। রুপার কাছ থেকে জানার সুযোগ নেই, এসব কথা সব সময় ইগনোর করে রুপা। মাত্র এই কয়েক দিনে খুব ভালোবেসে ফেলেছে রুপা। ভালোবাসা কেমন একটা অদ্ভুত ব্যাপার!
দুপুরে ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে বারান্দার দিকে তাকায় তুরান! রুপা যে প্রতিদিন ওর অপেক্ষায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে গেটের দিকে। তুরান কে দেখলেই এক চিলতে হাসির চিহ্ন ফুটে ওঠে রুপার ঠোঁটের কোনে।
আজ রুপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে নেই। কিছু টা শূন্যতা অনুভব করছে তুরান। হয়ত ঘুমাচ্ছে রুপা।
বাসায় এসে কাঁধের ব্যাগ টা তাড়াহুড়ো করে ছাদে যায় তুরান রুপার খোঁজে। এই মেয়েটা কে নিয়ে সব সময় অজানা ভয় কাজ করে তুরানের মনে। রুপা কে ছাদে না দেখে রপার রুমের জানালা দিয়ে উঁকি দেয় তুরান। রুপা রুমেও নেই! মেজাজ খারাপ হচ্ছে তুরানের।
বিকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সারা বিকাল ছাদে পাঁয়তারা করছে তুরান। রুপার কোন খোঁজ ই নেই। মনের ভেতর খুব অস্থিরতা কাজ করছে।
এমন তো কখনো হয় নি। আজিজ চৌধুরীর বাসায় যাবে কি একবার? না বিষয় টা কেমন বেমানান লাগে! সংকোচিত মনে আজিজ চৌধুরীর বাসার সামনে ঘুরঘুর করছে তুরান।
জানালার ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সোফায় বসে বসে চায়ের কাপ হাতে গল্প করছে আজিজ চৌধুরীর আর সাহেলা বেগম। সাহেলা বেগম নিঃসন্তান তবুও দুই জন কত ভালো ভাবে পথ চলছে।
হঠাৎ আজিজ চৌধুরী বাসার ভেতর থেকে মোটা কন্ঠে তুরান কে ডাক দেয়। তুরান যথারীতি ঘাবড়ে যায়। অপ্রস্তুত বোধ করে উত্তর দেয়,
-'জ্বী আংকেল।'
-'ওখানে কি করো আসো আসো বাসার ভিতরে আসো।'
তুরান কে দেখেই মিষ্টি হেসে সাহেলা বেগম বলে,
-' রুপা কে খুঁজছিলে বুঝি?'
তুরানের উত্তরের অপেক্ষা না করে সাহেলা বেগম আবার বলে,
-' বসো বসো চা নিয়ে আসছি।'
তুরান আজিজ চৌধুরীর পাশে বসে। আজিজ চৌধুরী বই হাতে বসে আছে। বই টা হাত থেকে রেখে তুরানের দিকে মনোযোগ দেয়।
-' রুপা কে তো ওর মা আজ নিয়ে গেছে। যেতেই চাচ্ছিল না মেয়ে টা।'
বুকের মাঝে ধক করে উঠল তুরানের। হতবাক হয়ে বলল,
-'নিয়ে গেছে মানে ? এক বারে নিয়ে গেছে?'
যতটা সম্ভব নিজের হতভম্ব ভাব টা লুকিয়ে রেখে প্রশ্ন গুলো করে তুরান।
-'না,না একেবারে নিয়ে যাই নি। ওর এক আত্মীয় মারা গেছে তাই আর কি দেখতে গেছে।'
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল তুরান। রুপা কবে আসবে জানার জন্য মনটা ছটফট করছে কিন্তু আজিজ চৌধুরী কে এত প্রশ্ন করলে যদি সন্দেহ করে? নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে আর কোন প্রশ্ন করল না তুরান।
এর ভিতর চা নিয়ে আসে সাহেলা বেগম।
চা খেতে খেতে খানিকক্ষণ গল্প করে তাঁদের দুই জনের সাথে। মানুষ দুই জন ফ্রেশ মাইন্ডের।
এক পর্যায়ে তুরান প্রসঙ্গক্রমে জিজ্ঞেস করে,
-' রুপা আপনাদের কাছে থাকে কেন?'
আজিজ চৌধুরী কিছু বলতে গেলেও থামিয়ে দিলো সাহেলা বেগম।
-'আমাদের তো সন্তান নেই তাই রুপা আমাদের কাছে থাকে।'
কথা বাড়ায় না আর তুরান। রুমে এসে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে। শরীর বেশ ক্লান্ত! রুপা কে ভীষণ মিস করছে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠে তুরানের। ওপাশ থেকে বলে উঠে,
-' হ্যালো..তুরান বলছেন? আমি রুপা। আমি বাসার সামনে। আম্মু কে বলেন না। আপনি চুপি চুপি চলে আসেন।'
তুরান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দিল রুপা।
তুরান অবাক হয়ে যায়। রাত প্রায় দশটা বাজে ,রুপা কোথা থেকে আসলো?আর রুপার কাছে তো ফোন নেই ,ফোন দিলো কিভাবে? হয়ত অন্য কারো ফোন দিয়ে কল দিয়েছে কিন্তু ফোন নম্বর পেলো কোথায়?
উদগ্রীব হয়ে বাসার সামনে গেলো তুরান। রুপা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-' এত রাতে কোথা থেকে আসলে? আর তোমার নাকি কোন আত্মীয় মারা গেছে? ফোন পেলে কোথায়? আমার ফোন নম্বর পেলে কোথায়? আর এখানে দাঁড়িয়ে কেন? বাসার ভিতরে যাচ্ছো না কেন?'
অনার্গল ভাবে প্রশ্ন গুলো করলো তুরান।
-' এত গুলো প্রশ্ন কোন টার উত্তর দিব বলেন তো?'
-'সব গুলোর উত্তর দেও তাড়াতাড়ি। আর জানো তোমায় না দেখে আমার কত টেনশন হচ্ছিলো?'
-' আমায় আম্মু এসে জোর করে নিয়ে গেছে। এক আত্মীয় মারা গেছে নাকি। ওই বাড়িতে গিয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তাই চলে আসছি। আর রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে কল দিয়েছি। আপনার ফোন নম্বর তো আমি জানি ই। আর বাসায় যাবো না কারন এভাবে চলে আসছি জানলে আমায় বকবে।'
তুরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
-' বাসায় যাবে না তো কি করবে? আর তোমার মা - বাবা টেনশন করবে না? এত পাগলামি কেন করো বলো তো?'
খিলখিল করে হেসে দেয় রুপা।
-' ওই বাড়িতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই আম্মু আমায় একটা রুমে নিয়ে বলল ঘুমাতে। উনারা ভাববে আমি ঘুমাচ্ছি। আর খোঁজ করলেও সকালে করবে। সকালে সাহেলা আম্মু ফোন দিয়ে জানিয়ে দিবে যে আমি চলে আসছি।'
-' রাতে যদি খোঁজ করে?'
রুপা ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
-'করলে করুক আমার কি?'
তুরান শক্ত গলায় বলল,
-' তুমি না বলছো আর পাগলামি করবে না?'
কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে থাকে রুপা। তুরান আবার বলে,
-' হয়েছে অনেক পাগলামি এবার বাসায় চলো।'
-'বাসায় যাবো না আজ সারা রাত আপনার সাথে ঘুরবো।'
কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় তুরান। মুচকি হেসে বলল,
-' ভেবেছিলাম তোমার মাথায় গোবরের গোডাউন। না বুদ্ধি সুদ্ধিও আছে।'
তুরানের কথার উত্তরে মুচকি হাসছে রুপা। ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে তুরান বলে,
-' প্রেম শিখে গেছো দেখছি।'
এবারও লাজুক হাসি দেয় রুপা।
রুপা আগের থেকে স্বাভাবিক অনেক। বিষয়টা খুব স্বস্তিদায়ক তুরানের জন্য।
-' আপনায় একটু জড়িয়ে ধরি?'
রুপার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় তুরান।
তুরান চারদিকে তাকিয়ে বলে,
-' রাস্তা ভরা মানুষ তো।'
রুপা তুরান কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তুরানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
তুরানের অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করলেও অস্বস্তি বোধ করে। চারদিকে মানুষ অথচ এ ব্যাপারে রুপার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। রুপা টা এমন কেন?
হাঁটতে হাঁটতে একটি নিরিবিলি জায়গায় এসে পরলো। রুপার সাথে এভাবে সময় কাটানোর অদ্ভুত অনুভূতি প্রকাশ করার উপায় তুরানের জানা নেই।
জ্যোৎস্না রাত চারদিকে আলো ছড়িয়ে পরেছে। থমথমে পরিবেশ। তুরান আর রুপা একটা বেঞ্চে বসলো।
-'রুপা সত্যি আজ সারা রাতে বাসায় যাবে না?'
রুপা জোর গলায় বলল,
-'না যাবো না।'
রুপার খানিকটা কাছে গিয়ে তুরান বলল,
-' ভালোবাসো আমায়?'
রুপা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
-' হ্যাঁ।'
কথা বলতে বলতে তুরানের কাঁধের উপর ঘুমিয়ে গেল রুপা। এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে রুপা? তুরান যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেল।
এদিকে সকাল ও প্রায় হয়ে যাচ্ছে। পবিত্র ভালোবাসায় রাঙানো যেন দুটি প্রান।