দুপুরে রোদের ভিতর পায়ে হেঁটে ভার্সিটি থেকে ফিরছে তুরান। বেশ তাড়াতাড়ি হাঁটছে! রোদে মাথা ঝিমঝিম করছে। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে তুরান। বাবা-মা খুব কষ্ট করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছে। অবশ্য এখন টিউশনির টাকায়ই চলে যায় তুরানে। তবুও সব সময় হিসেব থাকে কিভাবে টাকা বাচানো যায়। ভার্সিটি থেকে পায়ে হেঁটে বাসায় আসলে ত্রিশ টাকা বেচে যায় । জীবনে সাকসেস হতে হলে এই টুকু কষ্ট তো করতেই হয়! তিন বোন এক ভাইয়ের মাঝে তুরানই বড়। বোন তিন জন তুরানের ছোট। টানাপোঁড়নের সংসারে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয় তুরানের বাবার।
ছোট্ট একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তুরান। দুপুর বেলা রাস্তা পুরো ফাঁকা। এলোমেলো পায়ে তাড়াতাড়ি হেঁটে চলে আসলো বাসায়। বাসায় এসে কিছুক্ষন রেস্ট নিলো। আজকে রাঁধতে ইচ্ছা করছে না মোটেও। কলেজ লাইফ থেকে ম্যাচে থাকত তুরান। মাঝে মাঝে বুয়ায় অনুপস্থিতে রান্না করতে করতে এখন পাক্কা রাঁধুনী হয়ে গেছে! যদিও রাঁধুনী শব্দটা শুধু মেয়েদের সাথেই যায়।
রান্নার উদ্দেশ্য শোয়া থেকে উঠে ক্লান্তির জন্য আর রাঁধতে ইচ্ছে হলো না। আবার শুয়ে পরলো।
কলিং বেলের শব্দে ঘুমানো আর হলো কোথায়? খুব বেশী বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলল তুরান।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রুপা। হাতে এক প্লেট পোলাউ আর মাংস। রুপার দিকে জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টিতে তাকালো তুরান।
মুচকি হেসে রুপা বলল,
-'আপনার জন্য এনেছি।'
-'সাহেলা আন্টি পাঠিয়েছেন?'
কোন উত্তর দেয় না রুপা। রুমে ঢুকে টেবিলের কাছে প্লেট টা রেখে বলল,
-'নেন,নেন খেয়ে উদ্ধার করেন আমায়।'
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তুরান । এখন একদম স্বাভাবিক মনে হচ্ছে রুপাকে। কালো রঙের একটা থ্রী পিচ পরা রুপা। চুল গুলো বেনী গাঁথা ,হাঁটু ছোঁয়াচে। ঠোঁটের নিচের তিলটা স্পষ্ট হয়ে আছে। বেশী পরিপাটি মনে হচ্ছে!
মনে মনে খুশি হয়েছে তুরান । রান্না করতে ইচ্ছা করছিলো না, এমন সময় যদি কেউ খাবার পাঠায়! অদ্ভুধ রকমের ভালো লাগে।
তুরান রুপার দিকে তাকিয়ে বলল,
-'আমার শার্ট,প্যান্ট নিতে আসো নি তো আবার খাবার দেওয়ার বাহানায়?'
হেসে দেয় রুপা। হাসিটা স্বচ্ছ।
-'না ,না শার্ট ,প্যান্ট তো ছাদ থেকেই নেওয়া যায়। তার জন্য কি রুমে আসার প্রয়োজন আছে?'
তুরান একটু ভেবে বলল,
-'তাইতো।'
-'আপনার সে দিনের প্যান্টটা দিয়ে দিবো। আলখল্লার মত ঢিলা হয়। শার্ট রেখে দিবো।'
বলেই তুরানের দিকে উত্তরের আশায় তাকায় রুপা।
তুরান মাথা নেড়ে বলল,
-'আচ্ছা।'
হঠাৎ মুখ গম্ভীর করে রুপা বলল,
-'সেদিন আপনার গায়ে গ্লাস মেরেছি,সে জন্য আম্মু আমায় থাপ্পর দিয়েছে। ভালোই করেছে তাই না? ভুল করলে তো সবাই মারবে।'
রুপার কথা গুলো কেমন যেন বাচ্চা টাইপ লাগছে তুরানের কাছে। এখন যেন একদম ইন্নসেন্ট রুপা!
বেশ মজা পাচ্ছে তুরান। বলে,
-'হ্যাঁ মারবেই তো।'
-'সে কি আপনি খাচ্ছেন না?'
তুরান খাবার মুখে নিলো । রুপা একটা চেয়ার টেনে তুরানের কাছে বসলো।
-'আম্মু হাতের রান্না খুব মজা তাই না?'
খাবার মুখে দিতে দিতে তুরান বলল,
-'হুম অসাধারন।'
-'আপনি একাই খাবেন?'
খাবার মুখে দিতে গিয়েও থেমে যায় তুরান। হেসে বলে,
-'তুমি খেয়ে আসো নি?'
-'আরে বাবা আমি কখন খেলাম? আমি তো আমার খাবার আপনার জন্য নিয়ে আসলাম।'
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় তুরান। লজ্জাও পেয়েছে বেশ!
-'তোমার খাবার তুমি আমার জন্য এনেছো কেন? আমি তো ভাবছি সাহেলা আন্টি পাঠিয়েছে। এখন তো আমি ভাত ,মাংস মেখে ফেলেছি। তুমি কি খাবে?'
-'না,না আপনি খান। কিন্তু আমি আপনার সামনে বসে আছি আমায় একটু সাধা কি উচিত ছিলো না?'
অস্বস্তিকর অবস্থায় পরে যায় তুরান । ইচ্ছে করছে আধ খাওয়া ভাত আর মাংস ফেরত দিয়ে দিতে।
-'আমি তোমায় সাধবো কিভাবে? ভাত তো এক প্লেটই এনেছো? আচ্ছা তুমি আমার জন্য ভাত আনতে গেলে কেন!আজব।'
রুপা হেসে বলল,
-'আপনার সাথে ভাব জমাতে। না ,না ভাত ফেরত নিবো কেন? আপনি খেয়ে নিন।'
এখন আর ভাত গলা দিয়ে নামছে না তুরানের। রুপা মিটিমিটি হাসছে।
-'লজ্জা পেয়েছেন বুঝি?'
কথা বলছে না তুরান । কিছুক্ষন চুপ থেকে গম্ভীর গলায় বলে,
-'তোমার মাথায় কি প্রবলেম আছে? তোমার খাবার তুমি আমার জন্য এনেছো কেন?'
-'বললাম তো ভাব জমাতে।'
একা একা বিড়বিড় করে বকছে তুরান।
রুপা চেয়ারটা টেনে তুরানের আর একটু কাছে গিয়ে বলল,
-'একা খেতে লজ্জা পাচ্ছেন এখন? আচ্ছা_ আচ্ছা! আপনিও খান,আমায়ও দেন।'
-'তোমার খাবার তুমি পুরো টা নিয়ে যাও।'
রুপা হাঁ করে বলল,
-'দেন খাইয়ে দেন।'
নিঃসংকোচ আবেদন! রীতিমত অবাক হয়ে যায় তুরান। এভাবে অপরিচিত এক জন মানুষের সাথে এমন বিহেভ কিভাবে করা যায় ভেবে পায় না? আর রুপা চাচ্ছে টা কি? না... রুপার এসব পাগলামী কোন চাওয়া-পাওয়া খুঁজে লাভ নেই । বড্ড বাচ্চা টাইপের মেয়েটা ।খাম-খেয়ালির বশত করছে এসব।
তুরান কে নিরুত্তর দেখে রুপা আবার বলল,
-'কি হলো দিচ্ছেন না কেন?'
-'তুমি বাসায় যেয়ে খেয়ে নিও।'
চোখ লাল করে রুপা বলে,
-'কেউ যদি আমার কথা না শুনে তাহলে আমার মাথা ব্যাথা হয়। কাঁদতে ইচ্ছা হয়। আপনি কি চান আমি পাগলামী করি?'
কি ধরনের ব্লাকমেইল এগুলো? তুরান এবার রেগে গিয়ে বলল,
-'তোমার খাবার তুমি নিয়ে যাও। দ্যান বাসায় গিয়ে পাগলামী করো।'
মুখ গম্ভীর করে ফেলে রুপা। চোখ ছলছল করছে। আর একটু হলেই কেঁদে দিবে।
-'আমার মুখে কি ময়লা আছে? খাইয়ে দিলে কি পাপ হবে?'
-'দেখো রুপা তুমি বাচ্চা মেয়ে। তুমি এসব বুঝবে না। আমার রুমে তোমায় কেউ দেখলে বাজে বলবে। প্লীজ তুমি যাও।'
চেঁচিয়ে উঠে রুপা।
-'যাবো না আমি।'
চেয়ায় ধরে শক্ত করে বসে। যেন কেউ রুম থেকে বের করতে না পারে।
-'রুপা তুমি ভালো ব্রেনের ডাক্তার দেখাও।'
-'ব্রেন কি?'
কথা বলে না তুরান। এলিয়েন মনে হচ্ছে রুপাকে।
-'আপনি যদি আমায় খাইয়ে না দেন তাহলে আমি কাঁদবো,চিৎকার করবো।'
মেজাজ খারাপ হচ্ছে তুরানের।
-'এই মেয়ে পাগল পেয়েছো তুমি আমায়? বের হও আমার রুম থেকে।'
তুরান রুপার হাত ধরে বের করে দিতে চাইলে চেয়ারের হাতল ধরে আরও শক্ত হয়ে বসে রুপা।
এমন পাগলামী মানুষ করে? ফুঁফিয়ে কেঁদে দেয় রুপা। বাচ্চা দের মত ঠোঁট বাঁকা করে কাঁদছে।
তুরান মহা বিপদে পরেছে যেন! এমন বিপদে আল্লাহ যেন কাউকে না ফেলে।
তুরান চরম বিরক্ত নিয়ে বলল,
-'হাঁ করো খাইয়ে দিচ্ছে ।'
চোখের পানি মুছে রুপা হেসে বলল,
-'উঁহু! এভাবে বললে খাবো না । মিষ্টি করে বলেন।'
তুরান রাগ চেপে বলল,
-'রুপা শয়তান বেটি খেয়ে উদ্ধার কর আমায়।'
উচ্চশব্দে হেসে দেয় রুপা। হাসতে হাসতে বলে,
-'বেটি কি?'
তুরান কোন কথা বলে না। প্লেটের বাদ বাকী পোলাউ রুপাকে খাইয়ে দিয়ে প্লেট টা রুপার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-'আর কখনো আমার রুমের ধারে কাছে আসবে না ।
ভেংচি কেটে রুপা বলল,
-'সে পরে দেখা যাবে ।'
ইস! ভাব জমাতে আসছে উনি! বদের হাড্ডি।রুপার বিষয়টা একটু আধটু ভাবাচ্ছে তুরান কে। রুপা এমন অদ্ভুধ কেন?
—
রুপাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো তুরান । রুপার বিষয়টা তুরান কে ভাবাচ্ছে খুব। মেয়েটার সাথে যতই খারাপ বিহেভ করুক কখনো রাগ করবে না। নাকি রাগ,অভিমানও বুঝে না রুপা?.. কি জানি!
হাতে প্লেট নিয়ে বাসায় ঢুকতেই সাহেলা বেগম বলল,
-'ভাত নিয়ে তুমি কোথায় গিয়েছিলে রুপা?'
সামনে পা বাড়াতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালো রুপা। হাসিমাখা মুখে বলল,
-'আরে এই বাসায় একটায় ভ্যাবলাকান্ত আছে না? যাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছলাম।'
এই পর্যন্ত বলেই আবার উচ্চশব্দে হেসে উঠে রুপা। রুপার কারন ছাড়া হাসি তে বেশ বিরক্ত হচ্ছে সাহেলা বেগম। রাগী গলায় বলল,
-'আবার কি করেছো তুমি তুরানে সাথে?'
উত্তর না দিয়ে সোফার উপর দুই পা তুলে দারুন ভঙ্গি নিয়ে বসলো রুপা।
-'আরে কি আর করবো? উনার সাথে ভাব জমাতে উনার বাসায় গিয়েছিলাম খাবার নিয়ে। কিন্তু আম্মু উনি একদম সুবিধার না।'
ভ্রু কুঁচকে সাহেলা বেগম বলল,
-'সুবিধার না মানে?'
আবার হেসে উঠে রুপা। বলে,
-'উনার রুমে একটু গিয়েছি তা বলে মানুষ দেখলে বাজে বলবে, আর কখনো আমার রুমে আসবে না ব্লা ব্লা ব্লা।'
-'তুরান সুবিধার বলেই এসব বলেছে। এসব কথার মানে তুমি বুঝবে না।'
একটু থেমে গম্ভীর হয়ে সাহেলা বেগম বলল,
-'রুপা তুমি কিন্তু আমার কথা শুনছো না। আর আমার কথা না শুনলে আমি কিন্তু তোমার বাবা-মায়ের কাছে তোমায় দিয়ে আসবো। তখন আর এমন করতে পারবে না। '
মা-বাবার কথা শুনে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় রুপার।
-'কত দিন না বলছি উনারা আমার মা-বাবা না। আমায় তো তুমি মারো না,উনারা আমায় মারে। উনারা আমার বাবা-মা হয় কিভাবে?'
রুম থেকে ডাক দেয় আজিজ চৌধুরী। আজিজ চৌধুরীর ডাকে সাড়া দিয়ে দ্রুত পায়ে রুমে চলে যায় সাহেলা।
-'আমার এখানে একটা বই রেখেছি? বইটা কোথায়?'
-'আমি কিভাবে বলব তোমার বইয়ের কথা? আমি কি পড়ি বই?'
-'পড়ো না সেজন্য কি তুমি বইটা অন্য জায়গায় রাখতে পারো না?'
ক্ষীপ্ত কন্ঠে সাহেলা বেগম বলল,
-'না,পারি না। সারাক্ষন বই বই আর বই। বাসায় যতক্ষন থাকো বই নিয়ে বসে থাকো।'
বিড়বিড় করতে থাকে সাহেলা বেগম। বাসায় এসে যে দুই দন্ড কথা বলবে তা না! সারাটা ক্ষন বই পড়বে। বাড়িতে পুরো লাইব্রেরি বানিয়ে ফেলছে।
আজিজ চৌধুরী হেসে বলল,
-'এখন কি আর প্রেম ভালোবাসার বয়স আছে যে বাসায় এসে তোমার সাথে প্রেম করে টাইম পাস করবো।'
মেজাজ খারাপ হয়ে যায় সাহেলা বেগমের । চোখ লাল করে তাকায়।
আজিজ চৌধুরী আবার বলে,
-'আরে ভুল কি বলেছি? এভাবে চোখ লাল করে তাকাও কেন?'
সাহেলা বেগম কোন উত্তর দেয় না। বইটা খুঁজে পেয়ে ছুঁড়ে মারে আজিজ চৌধুরীর দিকে। হাত দিয়ে আচমকা বইটা ধরে ফেলে আজিজ চৌধুরী।
-'এত ভারী বইটা যদি আমার মাথায় উপর পরতো তাহলে কি আমি বাঁচতাম?'
-'যে বই গুছিয়ে রাখতে পারে না তার বই না পড়াই ভালো।'
-'আহা সাহেলা! তুমি একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। তোমার মাথাই যদি এত গরম থাকে। রোগীদের অবস্থা কি হবে?'
-'এত সব নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।'
এই বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যায় সাহেলা বেগম। রুপার রুমে গিয়ে দেখে শুয়ে আছে রুপা। জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও চার পাশের বড় বড় বিল্ডিং গুলোর জন্য আকাশ দেখার জো নেই।
সাহেলা বেগম কে দেখেই উঠে বসে রুপা। মুচকি হেসে সাহেলা বেগম রুপার পাশে বসলো।
-'আগের মত মাথায় পেইন হয়?'
মাথা ঝাঁকিয়ে রুপা বলে,
-'না। আগের থেকে কম।'
-'ওই যে তোমার হঠাৎ করে মাথা গরম হয়ে যায়। নিজের শরীরে নিজে আঘাত করো, ভাংচুর করো। কান্না করো । এখন কি এরকম হয়?'
রুপা একটু ভেবে বলল,
-'না। দুই দিন এরকম হয় নি ।'
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাহেলা বেগম। কিছুটা হলেও তাহলে সাকসেস উনি। মনের ভিতর একটাই চিন্তা রুপার মাকে দেওয়া কথা রাখতে পারবে তো?
সাহেলা বেগম ফোনের গ্যালারি থেকে একটা ছবি বের করে রুপাকে দেখালো।
সাদা অ্যাপ্রন পরে বাইকের উপর বসে আছে রুপা। সাহেলা বেগমের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছবিটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে রুপা বলে,
-'আমি।'
-'তোমার বাবা-মা যদি এখানে তোমায় দেখতে আসে তাহলে কি পাগলামী করবে?'
চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে রুপা। যেন সাহেলা বেগম খুব বিশ্রী কথা বলেছে।
-'উফ! উনাদের আমার সহ্য হয় না। বুঝো না কেন তুমি ব্যাপারটা? উনারা আমায় কত মেরেছে!'
বলেই কেঁদে দেয় রুপা।
-'ভালো হয়ে চললে কেউই মারবে না।'
শক্ত গলায় রুপা বলে,
-'উনারা যেন এখানে না আসে। ভালো হবে না কিন্তু!'
হতাশ হয়ে যায় সাহেল বেগম।
-'উনারা তোমার বাবা-মা। উনাদের কি তোমায় দেখতে ইচ্ছা করে না?'
সাহেলা বেগমের আর একটু কাছে ঘেঁষে বসে রুপা বলে,
-'না তুমিই আমার আম্মু।'
সাহেলা বেগম রুপাকে সব কথাটা শুনাতে পারলে এই কথাটা কিছুতেই শুনাতে পারছে না। ভুল কিছু রুপার মা-বাবারও আছে। উনাদের রুপাকে বুঝা উচিত ছিলো।
এ ব্যাপারে আর কিছু বলে না সাহেলা বেগম।
-'তোমার ঘুমের টাইম হয়েছে ঘুমিয়ে যাও। ছাদে যাবে না কিন্তু। আমার কথা না শুনলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।'
চুপ-চাপ শুয়ে পরলো রুপা। অনেকক্ষন ঘুমের ভান করে শুয়ে রইল। ঘুম আসছে না। পা টিপে টিপে ছাদে গেলো। এই টাইমে ছাদে গেলেই তুরানের দেখা মিলে।
ছাদে গিয়ে হতাশ হয়ে গেলে রুপা। মনটাও খারাপ হয়ে গেল। তুরান ছাদে নেই! রুপা তুরানের দরজার কাছে গিয়ে দেখলো দরজায় তালা ঝুলানো। জানালাও বন্ধ। উনি কি এই বাসা চলে গেলো?
ছাদে গিয়ে দেখলো শুধু একটা শার্ট শুকাতে দেওয়া । তুরান ছাড়া আর কার শার্ট? আজকে আর শার্ট নেয় নি রুপা।
ব্লেড দিয়ে শার্টের এক হাতা কেটে ফেললো। তারপর দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো। রুমে গিয়ে শার্টের হাতাটা হাতে নিয়ে আপন মনে হাসছে। মজার তো ব্যাপার! এক হাতা আছে আর এক হাতা নেই । একা একা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো রুপা।
তুরান হয়ত কোথায়ও গেছে। বাসা ছেড়ে গেলে কি শার্ট রেখে যেত?
একটু পর ছাদে চেঁচামেচি শুনা গেলো। পাশের বাসায় আন্টি চিল্লাচ্ছে। তাঁর হাজবেন্ডের নতুন শার্টের হাতা পাচ্ছে না। এগুলো কেমন অসভ্যতামি? কান খাড়া করে সবটা শুনছে রুপা। ভয়ে চুপসে গেল! যদি কোন ভাবে জেনে যায়?
চুপ-চাপ ঘুমের ভান করে শুয়ে রইল। চেঁচামেচি শুনে ছাদে গেলো সাহেলা বেগম । সাহেলা বেগম কে ছাদে দেখেই শার্ট'টা উনাকে দেখিয়ে বলল,
-'দেখেন খালা কালকে শার্ট'টা কিনে এনেছে। ইজি ব্যান্ডের! তিন হাজার টাকা শার্ট টার মূল্য।'
কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে শার্টের মালিক অনেক রেগে আছে। রুপা কি এমন টা করেছে? না জেনে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
সাহেলা বেগম দ্রুত পায়ে রুপার রুমে আসলো। এসে দেখলো রুপা ঘুমাচ্ছে।
কয়েক বার ডাক দিলো রুপাকে । কোন সাড়া নেই। সাহেলা বেগম নিশ্চিত হলো রুপা এসব করে নি তাহলে!
সাহেলা বেগম চলে যাওয়ার পরই উঠে বসে রুপা। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। শার্টের হাতাটা দ্রুত লুকিয়ে ফেলল।
কিন্তু মন ভীষন খারাপ হয়ে গেলো। তুরানের রুমের দরজায় তালা ঝুলানো। জামা- কাপড়ও ছাদে রোদ দেওয়া নেই। তবে কি সত্যি চলে গেল তুরান?