যদি তুমি জানতে - পর্ব ১১ - ইসরাত জাহান তানজিলা - ধারাবাহিক গল্প


রুপা কে বেশ পরিপাটি ভাবে সাজতে দেখে সাহেলা বেগম জিজ্ঞেস করে,
-' কোথায় যাবি তুই এখন?'
রুপা হাতে চিরুনি নিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। লম্বা চুলের থেকে এমন চুলই ভালো। আঁচড়াতে সময় কম লাগে, ঘুমানোর সময় বেনী গেঁথে ঘুমানোর ও ঝামেলা নেই,এমন কি তেল ও কম খরচ হয়, শ্যাম্পুও কম লাগে। কোন জায়গায় যাওয়ার সময় দ্রুত আঁচড়ানো যায়। রুপা নিজের মনে যথারীতি চুল নিয়ে গবেষণার শুরু করেছে। ছোট চুল থাকার কি কি সুবিধা। লম্বা চুলের কি কি অসুবিধা। এরকম আজগুবি চিন্তা ভাবনায় নিজেকে মগ্ন করে রাখে রুপা। আবার নিজের মনে হেসে উঠে। সাহেলা বেগমের কথার দিকে কোন মনোযোগ নেই। রুপা কে নিরুত্তর দেখে সাহেলা বেগম আবার জিজ্ঞেস বললো,
-'কি হয়েছে কথা বলিস না কেন?'
রুপা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে সাহেলা বেগমের দিকে তাকায়।রুপার কাছে বিষয়টা খুব আশ্চর্য লাগে! রুপা যখনই কোন কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকবে তখনই সাহেলা বেগম এসে ডিস্টার্ব করবে।
নাক মুখ কুঁচকে রুপা বলে,
-' তুমি দেখছো না আমি চুল নিয়ে গবেষণা করছি! বিরক্ত করো কেন?'
সাহেলা বেগম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। রুপা আজ কাল অদ্ভুত অদ্ভুত আচরন করে।
-'কিসের গবেষণা করিস তুই? তুই তো ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তোর চেহারা দেখিস!'
-' গবেষণা কি মানুষ চেঁচামেচি করে নাকি? আমি তো মনে মনে ছোট চুলের সুবিধা নিয়ে গবেষণা করছিলাম।'
রুপার এসব কথার প্রত্যুত্তরে আর কিছু বলে না সাহেলা বেগম। রুপার পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলে,
-' নীড়া দের বাসায় যাবি নাকি?'
-'হুম।'
-' সারা দিন আমি সাধলাম তখন তো গেলি না।'
-'তখন ভালোলাগে নি তাই যাই নি,এখন ভালোলাগে তাই যাচ্ছি।'
এই কথা বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল রুপা। সাহেলা বেগম আজকাল রুপার মতিগতি বুঝতে পারছে না। রুপা আগের মত ভাংচুর করে না, কোন ধরনের পাগলামি করে না,নিজের হাত-পা কাটে না ,রুপা এখন স্বাভাবিক প্রায়। নিজেকে কিছুটা হলেও সার্থক মনে হচ্ছে সাহেলা বেগমের।
রুপা নীড়া দের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। তুরানের তো এই সিঁড়ি তেই থাকার কথা ছিলো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে তুরান কে দেখতে পেলো না। তুরান কি ওকে রেখে চলে গেছে? এর ভিতর রুপা পিছনে তাকিয়ে দেখলো পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে সিঁড়ির দিকে আসছে তুরান। হাতে ঘড়ি, চুল গুলো স্পাইক করা। সব মিলিয়ে এক সুদর্শন পুরুষ।
রুপা চোখ বড় বড় করে তুরানের দিকে তাকিয়ে আছে। তুরান কে অবাক হয়ে দেখছে রুপার চাহনিতে সেরকম ভাব নেই। কোন কারনে রেগে আছে রুপা তাই ওভাবে তাকিয়ে আছে।
-' একটু দেরি করে ফেলেছি তাই না? সরি, সরি।'
রুপা কোন উত্তর দিলো না রুপা। চুপ মেরে রইলো। 
কিছুক্ষণ পর রাগের সাথে চাপা কন্ঠে রুপা বলে,
-' আমি একটু কাজল দিতে পারবো না। আর নিজে হিরো সেজে এসেছে। আপনার দিকে মেয়েরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে এটা আমার ভালো লাগবে তাই না? যান রুমে যান। এসব চেঞ্জ করে টিয়া কালারের একটা লুঙ্গি পরবেন , আর হলুদ কালারের ফতুয়া পরবেন। নয়ত আমি যাবো না।'
রুপার কথা শুনে হাঁ করে তাকিয়ে রইল তুরান। 
-'কি বললা? লুঙ্গি পরে কেউ বিয়ে বাড়ি যায়?তাও আবার টিয়া কালারের লুঙ্গি! হলুদ কালারের ফতুয়া।আরে ওসব তো আমি জীবনেও পরি নি। আমি কি জোকার?'
তুরানের কোনো রকমের যুক্তি মানতে নারাজ রুপা। শেষ পর্যন্ত সিন্ধান্ত হলো পুরানো শার্ট, প্যান্ট পরে যেতে হবে। 
রুপা মনে মনে খুব মজা পাচ্ছে, সারা দিন বিয়ে বাড়ি যেতে না দেওয়ায় প্রতিশোধ টা অবশেষে নিতে পারলো।
তুরান রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে এসে বললো,
-' এবার খুশি?'
রুপা হাসি চাপিয়ে বলল,
-'খুব।'
তুরান হতাশ ভঙ্গিতে রুপার দিকে তাকিয়ে বলল,
-'এই রুপা তুমি এত ডেঞ্জারাস কেন?'
রুপা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
-' নিজে আমার থেকে এক কাঠি সরেস।'
রুপা গিয়ে নীড়ার পাশে বসলো। তুরান আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। মানুষের সাথে ভাব জমাতে রুপার খুব বেশি সময় লাগে না। নীড়া আর ওর সব কাজিন দের সাথে আড্ডা জুড়ে দিলো। তুরান রুপা কে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে এই টুকু সময়ের মধ্যে মানুষের সাথে এত মিশা যায় কিভাবে? রুপা এমন ভাবে আড্ডা দিচ্ছে মনে হচ্ছে সবাই ওর কত চেনা।
তুরান একা একা বোর হচ্ছে। কারো সাথে সহজে মিশতে পারে না তুরান। তুরান কে একা বসে থাকতে দেখে আশেপাশে থাকা তরুণীর দল খোঁচা মেরে কথা বলছে। ওসবে কান দিচ্ছে না তুরান, মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে নিজের মনে। রুপার উপর রাগ হচ্ছে তুরানের। আড্ডা দিতে দিতে তুরানের কথা বোধ হয় ভুলেই গেছে। এত বেখেয়ালি হলে চলে?
রুপা নীড়া কে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। রুপার কথা গুলো নীড়ার কাছে খুব ভালো লাগলো। রুপার সব প্রশ্নের সুন্দর করে উত্তর দিচ্ছে নীড়া।
-' নীড়া আপু তোমার মত আমার যদি আজ বিয়ে হতো তাহলে আমি লজ্জায় কারো সাথে কথাই বলতাম না।'
-'আমার বিয়ে আরও এক বছর আগে হয়েছে। লজ্জা কেটে গেছে বুঝলে?'
রুপা বিস্মিত হয়ে বলে,
-' বলো কি! তো আবার বিয়ে করছো কেন?'
নীড়া প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই সাহেলা বেগম ডাক দেয় রুপাকে। রুপা বরাবরের মত বিরক্ত হয়ে সাহেলা বেগমের কথা শুনতে যায়।
রুপা চলে যাওয়ার পরেই নীড়ার খালাতো বোন অন্তরা নীড়া কে জিজ্ঞেস করে,
-'এতক্ষন যে মেয়ে টা চলে গেল ওই মেয়েটা কি এ বাসায় ই থাকে?'
অন্তরার প্রশ্নের উত্তরে নীড়া বলে,
-' হুম কেন? চিনিস নাকি? মেয়েটা কে খুব ভালো লাগে আমার কাছে। অনেক সুন্দর করে কথা বলে । কেমন কেমন পিচ্চি পিচ্চি টাইপ।'
নীড়ার কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে দিলো অন্তরা। অন্তরার অকারণে হাসিতে বিরক্ত হলো নীড়া।
-'অযথা হাসছিস কেন?'
অন্তরা হাসি থামিয়ে বললো,
-' ওই মেয়ে দেখতে পিচ্চি আসলে পিচ্চি না।তোর আর আমার এক ব্যাচ সিনিয়র।'
নীড়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।
-' বলিস কি? আমি তো ভাবছি হাই স্কুলের গন্ডিই পার করতে পারেনি এখনো।'
নীড়ার কথা শুনে আবারও হেসে উঠলো অন্তরা।
-'শতরুপা আপু আর আমি একই মেডিকেলে পড়ি। হেভী টেলেন্ট। নাচ,গান সব কিছু তে পাক্কা। আমার সাথে আগে মাঝে মাঝে দেখা হতো কিন্তু তেমন পরিচয় নেই।'
নীড়া অস্ফুট স্বরে বলল,
-'শতরুপা!'
-'হ্যাঁ, হ্যাঁ হিন্দু‌। শতরুপা থেকে রুপা আর কি!'
রুপার সম্পর্কে এমন চঞ্চলকর তথ্য শুনে কেন জানি খুব বেশি অবাক হয় নীড়া। বেশি অবাক হয় রুপা হিন্দু এটা জেনে। হিন্দু , মুসলিম এটা কোন ফ্যাক্ট না কিন্তু নীড়া ভেবেছিল রুপা মুসলিম।
এবার নীড়া হেসে বলে,
-'ইস! আমি কি পিচ্চি ভেবেছি।'
-'আর উনার গানের গলা শুনার মতো। অনুষ্ঠানে সব সময় গান করতো তাই ভালো করে চিনি। নামটাও চমৎকার শতরুপা রঙ্গন রায়।'
-' আমি তো এখানে থাকি না চট্টগ্রামেই থাকা পরে। মাঝে মাঝে আসলে দেখা হত তাই অত কিছু জানি না।'
এর ভিতর হাতে মেহেদী নিয়ে হাসতে হাসতে নীড়ার কাছে এসে বসে রুপা। রুপা কে দেখে রুপার সম্পর্কে আলোচনার সমাপ্তি ঘটে।
-' অবশেষে তোমায় মেহেদী লাগানোর দায়িত্ব টা আমার কাঁধেই চাপলো। টেনশন করো না ভালোই মেহেদি পরাতে পারি।'
রুপার কোন খোঁজ না পেয়ে হতাশ হয়ে বসে রইল তুরান। রুপা যে রুমে আছে সেখানে সব মেয়ে মানুষ। সেখানে এখন না যাওয়াই মঙ্গল। একটু আগে জানালা দিয়ে উঁকি দিতে গেছে তা নিয়েও তুরান কে কথা বলতে ছাড়ে নি রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে গুলোয়। মেয়ে দের প্রবলেম কি বুঝে না তুরান একটু চুপচাপ টাইপের ছেলে দেখলেই খোঁচা দিয়ে কথা বলতে থাকে। 
এর ভিতর একটা পিচ্চি মেয়ে কে দেখে ডাক দেয় তুরান। বিয়ের আনন্দে মত্ত মেয়েটা তাই তুরানের ডাকে একটু বিরক্ত হয়। মেয়ে টার বয়স বোধ হয় পাঁচ- ছয় বছর হবে। দুই হাত ভরা আচার, চকলেট, কিটক্যাট এজাতীয় খাবার দাবারে।
মেয়েটা তুরানের কাছে এসেই ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,
-' কেন ডেকেছেন?'
-' এভাবে কথা বলো কেন? ভয় পাই তো আমি।'
তুরানের কথা বলার ভঙ্গি দেখে পিচ্চি টা হেসে দেয়। 
তারপর কি যেন মনে করে তুরানের পাশে চেয়ার টেনে বসলো। তুরানের দিকে একটা কিটক্যাট বাড়িয়ে বললো,
-' খাবেন?'
এই পিচ্চির আবার কোন মতলব নাই তো? প্রথম ঝাঁঝালো কন্ঠে কথা বললো ,এখন আবার পাশের চেয়ারে বসলো। আবার কিটক্যাট সাধে।
তুরান কিটক্যাট টা নিলো। তারপর হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,
-' নাম কি তোমার?'
-' লোজা।'
পিচ্চি সামনের দাঁত গুলো নেই। তাই রোজা কে লোজা বললো। তুরান হাসি চাপিয়ে বললো,
-' যে রুমে সব মেয়েরা আড্ডা দেয় আর কি যে রুমে বসে নীড়া হাতে মেহেদি লাগায় ওই রুমে গিয়ে বলবে রুপা কে? যদি রুপা নামে কেউ থাকে তাহলে বলবে আমি ডাকছি।'
রোজা ঘাড় বাঁকিয়ে বললো,
-' আচ্ছা যাচ্ছি।'
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো রুপারও দেখা নেই রোজারও দেখা নেই। একটু পর রোজা এসে বললো,
-' উনি নীলা আপুল হাতে মেহেদি লাগাচ্ছে। একটু পলে আসছে।'
রোজার কথা শুনে এবার হেসে দিলো তুরান। অন্যদিকে রুপা কে না দেখে মেজাজ খারাপ হচ্ছে।
অবশেষে দেখা মিললো রুপার। রুপা কাছে আসতেই তুরান রুপার হাত ধরে টেনে আড়ালে নিয়ে গেলো।
-' আমার কথা মনে পড়ে নি আপনার একবারও তাই না?'
রুপা ইতস্তত বোধ করে বললো,
-' গালি দিয়েন না প্লীজ। সবার হাতে মেহেদি লাগাচ্ছিলাম আসবো কিভাবে?'
তুরান একটু রেগে কথা বললেই কেঁদে দেয় রুপা। 
-' হয়েছে আর কাঁদতে হবে না । তুমি হাতে মেহেদি লাগাও নি কেন?'
-' আমার ভালো লাগে না।'
-' ভালো লাগতে হবে। এক্ষুনি তোমায় মেহেদি কিনে এনে দিচ্ছি।'
-' ওখানে মেহেদি আছে তো।'
-' ওখানে মেহেদি থাকলে কি? আমি কিনা দিবো সেটা হাতে দিবা।'
রুপা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেহেদি কিনে নিয়ে আসে তুরান‌। রুপার হাতে দিয়ে বলে,
-'রুমে গিয়ে দুই হাত ভরে মেহেদি লাগাবে। আর রাত জাগা যাবে না। চলো এখন।'
রুপার যেতে ইচ্ছা করছে না । এখানে ভালোই লাগছিলো। তুরানের কথা না মেনে উপায় নেই।
-' তুমি যে এত স্কিলড মেহেদি ডিজাইনার আগে জানা ছিলো না তো।'
হেসে দেয় রুপা।


রাতে হাতে মেহেদি লাগিয়ে ঘুমিয়ে যায় রুপা। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় রুপার । পুরো হাত লেপ্টে আছে মেহেদি তে,এমন কি বিছানার চাদরও। রাতে মেহেদি হাতে লাগিয়ে শুকানোর অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে রুপা।
রুপার এই সাজসকাল বেলার চেঁচামেচি শুনে দৌড়ে আসলো সাহেলা বেগম।
-' কি হয়েছে, হয়েছে কি? চেঁচাচ্ছিস কেন? কি আবার অঘটন ঘটালি?'
-' দেখা আম্মু হাতের অবস্থা দেখো। আজ আমি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবো কিভাবে? চাদর,বালিশ সব নষ্ট হয়েছে।'
সাহেলা বেগম কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
-'বিছানার চাদর,আর বালিশ নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। রাতে হাত ধুয়ে ঘুমাসনি কেন?'
রুপা মিনমিন করে বলল,
-' ঘুমিয়ে পরেছিলাম।'
-' ফুল হাতার ড্রেস পড়িস দেখা যাবে না।'
রুপা মন খারাপ করে বসে থাকে। তুরান কত আগ্রহ করে মেহেদি এনে দিয়েছে। বলেছে সকালে এসে দেখবে কেমন হয়েছে! এখন তো দেখানোর মত অবস্থা নেই। তুরান আরো বলেছে মেহেদি শুকানোর পর হাত ধুয়ে ঘুমাতে। এক গাদা কথা শুনতে হবে আজ আবার।
তুরান ছাদে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রুপা আসছে না কেন? শরৎ এর পুরো আকাশ জুড়ে খন্ড খন্ড শুভ্র মেঘ। নীল আকাশের মাঝে সাদা মেঘের খন্ডগুলো চমৎকার ভাবে ফুটে রয়েছে। শরৎ এর আকাশ জুড়ে থাকা সাদা মেঘ আর সেই সাথে উড়ে যাওয়া সাদা বক যে মনোযোগ দিয়ে দেখে নি সে বোধ হয় বাংলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে নি। তুরান মগ্ন হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। হঠাৎ আকাশের এমন সৌন্দর্য টা কেন ভালো লাগলো কে জানে। নাকি প্রেমে পড়লে সবই ভালোলাগে?
পিছন থেকে এসে আচমকা তুরানের কলার টেনে ধরে রুপা। তুরান তাল সামলাতে না পেরে রুপার গায়ে হেলে পড়ে। রুপা বেশ মজা পেয়েছে!
এখন ছাদে যে কেউ আসতে পারে তাই তুরান একটু ব্যবধান রেখে দাঁড়ালো। কেউ দেখে ফেলবে বা কেউ সন্দেহ করবে এমন চিন্তা ভাবনা রুপার কখনোই ছিলো না। এসব চিন্তা ভাবনা রুপার মনে কখনো উঁকি দেয়ই না বোধ হয়।
-' আমি কতক্ষন ধরে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছি অথচ নিজে মগ্ন হয়ে আকাশ দেখছে। আকাশ টা কি আমার থেকে সুন্দর।'
তুরান হেসে ফেলে।
-' পৃথিবীতে তোমার থেকে সুন্দর কিছু নেই তো।'
-' খুব ঢং শিখছেন দেখছি!'
হঠাৎ একটা কথা তুরানের মাথায় নাড়া দেয়। রুপার মুখে সব সময় আপনি শুনতে অভ্যস্ত তুরান। কখনো তুমি বলে নি। ব্যাপার টা তো খুব অদ্ভুত! 
-' কি হলো আবার কি চিন্তা করছেন?'
-' তুমি আমায় আপনি না বলে তুমি বলতে পারো না?'
রুপা নাক মুখ কুঁচকে বলে,
-' তুমি টুমি ভালোলাগে না আপনিই ভালোলাগে। আপনি করে বললে প্রেম প্রেম পায়।'
তুরান একটু ভেবে দেখলো রুপা আসলে খারাপ বলে নি। রুপার মুখে আপনি করে বলা টা ই বোধ হয় বেশী ভালো লাগে। আর ওঁদের প্রেম তো ইউনিক, অদ্ভুত রকমের। তাই আর চার- পাঁচ টা কমন প্রেমের মত তুমি বলে না বলাই শ্রেয়। ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটিয়ে তুরান বলে,
-' সারাজীবন আপনি করে ই বলো বুঝলে রুপা বাবু টা? আচ্ছা.. আচ্ছা হাতে মেহেদি দেও নি রাতে? ইস! শরৎ এর আকাশ দেখে দেখে সবই ভুলে গেছি।'
রুপাও এ প্রসঙ্গ টা ভুলে খুব স্বস্তি তে ছিলো। রুপা হাত দুটো পিছনে লুকিয়ে ফেলে।
-' রাগ দিবেন না প্লীজ। রাতে মেহেদি দিয়ে ঘুমিয়ে গেছি। সকালে উঠে দেখি হাত লেপ্টে গেছে।'
এই বলেই কেঁদে দেয় রুপা। তুরান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সব সময় একটা ভুল কাজ করে 'রাগ দিবেন না প্লীজ' বলে কেঁদে দেওয়া রুপার অভ্যাস। কেউ যদি রাগ দেওয়ার আগেই কেঁদে দেয়, তাঁকে রাগ কিভাবে দেয়?
তুরান রুপার হাত দুটো সামনে এনে বলে,
-' এই টুকুর জন্য কেউ কাঁদে বলো? তোমার এই লেপ্টানো মেহেদির রঙের মাঝেও যে ভালোবাসা খুঁজে পাই।'
রুপা কান্নাকাটি বাদ দিয়ে হেসে দেয়। ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে বলে,
-' এভাবে কান্নার একটা সুবিধা আছে আপনি রাগ দিতে পারেন না।"
-' তোমরা মেয়েরা কান্নার মাধ্যমে যুদ্ধও জয় করতে পারবে। এবার বাসায় যাও গোসল দিয়ে রেডী হয়ে নেও,শাড়ী পড়বে কিন্তু। আর এভাবে সময় অসময় আমাদের মানুষ ছাদে দেখলে সন্দেহ করবে।'
রুপা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
-' যাবো না।..লাগবে!'
তুরান ভ্রু কুঁচকে বলে,
-' লাগবে মানে? কি লাগবে?'
রুপা মুখ টা তুরানের কানের কাছে নিয়ে বললো,
-' চুমো লাগবে চুমো।'
এটা বলে তুরানের দিকে তাকাতেই ভীষন লজ্জায় পড়ে যায় রুপা। নিজের ব্রেকলেস কথার জন্য নিজের কানের উপরই দুইটা থাপ্পড় দিয়ে ইচ্ছা করে।
তুরান ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে রুপাকে কাছে টেনে বলে,
-' চোখ বুঁজো।'
রুপা চোখ বুঁজলেও ওর চোখের পাতা কাঁপছে। তুরানের নিঃশ্বাস রুপার মুখে বারি খাচ্ছে। আবার সেই ভালোলাগার অনুভূতি তে নিজেকে হারিয়ে ফেলে রুপা। 
তুরান আলতো করে নিজের ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে দিলো রুপার কপালে। রুপা কেঁপে উঠলো।
সিঁড়ি তেই কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে দুই জন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। সাহেলা বেগম নয়ত?বিয়ে বাড়ির পিচ্চির দল ছাদে এসেছে।
রুপা তুরানের দিকে না তাকিয়ে দ্রুত ছাদ থেকে নেমে গেলো। তুরান মনে মনে পিচ্চি গুলোকে গালি দিচ্ছে। ডিস্টার্ব করার সময় পেলো না আর! 
রুপা খুব সহজ সরল ভাষী । নয়ত কেউ এভাবে নিসংকোচ ভাবে চুমো চাইতে পারে? বিশাল এই সৃষ্টি জগতে রুপা যেন আল্লাহর সৃষ্টি স্পেশাল মানুষ।

রুপা গোসল সেরে নিলো। ভেজা চুল গুলো দ্রুত হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিলো। সিল্কের কালো রঙের একটা শাড়ি পড়লো, কালো রঙের চুড়ি,কানে কালো খাঁজকাটা ঝুমকো। থুতনির নিচে কালো কুচকুচে তিলটাও যেন শাড়ী,চুড়ির সাথে ম্যাচিং করে আছে। 
তুরান জানালার ফাঁক দিয়ে বরাবরের মত একটা কাগজ ছুঁড়ে মারলো।
‘ টিয়া কালারের লুঙ্গি, আর হলুদ ফতুয়া নেই তো। কি পড়বো আমি এখন?’
তুরান এত ফাজলামি করতে পারে রুপার জানা ছিলো না।
রুপা হনহন হয়ে রুম থেকে বেরুলো। 
-' আজকে স্নো, পাউডার, ফাউন্ডেশন, মেকআপ ,আই লাইনার, লিপস্টিক,কাজল ,টিপ সব দিতে পারবেন। ইচ্ছা করলে কনের মত করে পার্লার থেকে সেজেও আস্তে পারেন।'
রুপার কথা শুনে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ার মত অবস্থা তুরানের। রুপার এমন রাগ করে কথা বলা টা বেশ লাগে! তুরান সিরিয়ার ভাব নিয়ে বললো,
-' আমার কাছে নেই তো,তুমি ধার দিবে?'
রেগেমেগে রুমে দিকে পা বাড়ালয় রুপা। তুরান পিছন থেকে ঢেকে বলে,
-' ম্যানিকুইন রুপা! লিওনার্দো দা ভিঞ্চি যেমন বছরের পর বছর ধরে মোনালিসা কে এঁকেছিলো ,আমি তোমায় আমার মনের রং তুলিতে হাজার বছর ধরে হাজার রুপে আঁকতে চাই!'
তুরানের কথা না শুনেই চলে গেল রুপা। তুরান হতাশ হয়ে নিজের মনে বলল,
-' এত মহা মূল্যবান প্রেম উক্তি কেউ মিস করে। ধ্যাত!'
রুপা কালো পরী সেজেছে,তুরান সম্পূর্ণ হোয়াইট পড়লো। হোয়াইট শ্যার্ট, প্যান্ট,শু।শুধু সানগ্লাস টা ব্লাক। 
যেকোন মেয়ে একবার দেখলে আর একবার দেখার ইচ্ছা পোষণ করবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন