যদি তুমি জানতে - পর্ব ১৩ - ইসরাত জাহান তানজিলা - ধারাবাহিক গল্প


হঠাৎ রুপার এমন এবনরমাল আচরণের কারন খুঁজে পাচ্ছেনা তুরান। রুপা ওকে ক্যারেক্টারলেস বললো কিন্তু কেন? আর হঠাৎ মালিহার গালে চড় দিলো কেন? অনেকক্ষণ পর আসল বিষয়টা তুরানের মাথায় আসলো। মালিহার সাথে কথা বলার কারনে কি রুপা ওকে ভুল বুঝেছে। কোন মেয়ের সাথে কথা বলার কারনে কেউ এমন সিন ক্রিয়েট করে? রুপার অন্তত জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো মেয়েটা কে? সেই কতক্ষন ধরে রুপা কে খুঁজতে ছিলো তুরান। কোথায় ছিলো এতক্ষন রুপা?
হঠাৎ একটা বিষয় মনে মনে পড়তেই তুরান চিন্তায় পড়ে গেলো।‌‌‌রুপা তো আর পাঁচটা মানুষের মত স্বাভাবিক না । রুপার আচরণে স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। রুপা ছোট খাটো বিষয় নিয়ে অনেক বড় কান্ড ঘটাতে পারে। এমনকি রুপা কোন কারনে কষ্ট পেলে নিজের শরীরে আঘাত করতেও বিন্দু মাত্রও বিচলিত হয় না। তুরানের চিন্তা ক্রমে ক্রমে গাঢ় হতে লাগলো। সত্যিকারের একটা চিন্তায় পড়ে গেলো তুরান। রুপা তো তুরানের কথা কোন যুক্তিই শুনতে চাইবে না। রুপা যেমনি হোক তুরান তো রুপা কে ভালোবাসে। আর এই ভালোবাসা সব ধরনের সমস্যা কে উপেক্ষা করতে পারে। তুরানের মাথায় এখন একটা চিন্তাই কাজ করছে রুপা যেন ওর ক্ষতি না করে । যেভাবে হোক রুপাকে বুঝিয়ে ঠিক করতে হবে। রুপা তো এমনই ওর প্রতি রাগ করেই বা কি হবে?
দিন টা ভালোই যাচ্ছিলো তুরানের। হঠাৎ ঝামেলা বেঁধে গেলো। রুপার ঠোঁটে চুমু খাওয়ার মুহূর্তের কথা ভাবতেই শিউরে উঠছে তুরান।কত সুন্দর মুহূর্ত নষ্ট হয়ে গেলো কি এক আজাইরা কারনে।সব ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো তুরান। রুপার জন্য মনটা বড্ড ছটফট করছে।‌
বিছানার উপর আধশোয়া অবস্থায় বসে রইল রুপা। অশান্তি লাগছে রুপার।‌‌‌‌‌কখনো উঠে বসে,কখনো একটু হাঁটে। আবার বালিশে হেলান‌ দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় বসে থাকে। অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না রুপা।‌ রুপার মনে এখন ঠিক অস্থিরতা কাজ করছে না, রুপার মনে এখন কাজ করছে তুরানের উপর ক্ষোভ।রুপা মনে মনে তুরানের সাথে কথা না বলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছে। তুরান কেন অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে গেলো? তুরানের সামনে বসে ওই মহিলা আর মেয়েটা অপমান করলো রুপাকে অথচ তুরান কোন প্রতিবাদ করলো না । তীব্র অভিমানে ছেয়ে যাচ্ছে রুপার মন। চাপা কষ্ট কাজ করছে রুপার মনে। রুপা মনে মনে ভেবে নিলো রুম থেকে কয়েক দিনে বের হবে না। তুরানের সামনেও পরবে না। যত ইচ্ছা মেয়েদের সাথে কথা বলুক, রং ঢং করে কথা বলুক। বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে মন থেকে কষ্ট দূর করতে চাচ্ছে রুপা। অবাধ্য চোখ জোড়া বুঁজে শুয়ে রইলো, নিজেকে ঘুমে মগ্ন রাখার চেষ্টা করছে যথারীতি। 
তুরান বাসায় এসে রুপার রুম টার দিকে তীব্র কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। চার দিকে নিরব একটা পরিবেশ বিরাজ করছে। তুরান হয়ত আশা করেছিলো বাসায় এসে রুপার চেঁচামেচি শুনবে ‌। কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না। সাহেলা বেগম রুপার রুমের পাশে একটা ইজি চেয়ারে ‌ খুব আয়েশ করে বসে রইলো। সাহেলা বেগমের ভাব- ভঙ্গিমা খুব স্বাভাবিক। তুরান আড়ালে দাঁড়িয়ে সাহেলা বেগমের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করে রুপার রুমটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো তুরান তেমন কোন লাভ হলো না। রুপার কোন খোঁজ নিতে পারলো না। তুরান হতাশ হয়ে রুমে চলে গেলো। তুরান এরকম পরিস্থিতির উপর যেন বিরক্ত হচ্ছে খুব।‌ বিকালে রুপা ছাদে গেলে সবটা বুঝিয়ে বলবে ,এ ছাড়া এখন আর কোন উপায় নেই। তুরান রুমে এসে গোসল সেরে নিলো। শরীরটা খুব ফ্রেশ লাগছে এখন। গোসলের পর চা বা কফি খাওয়া তুরানের অভ্যাস। দক্ষ হাতে চা তৈরি করে নিলো দ্রুত। দীর্ঘ দিন এভাবে ব্যাচেলর থাকতে থাকতে মেয়েলি সব কাজই মোটামুটি নিজের প্রয়োজনে শিখে ফেলেছে।তুরান বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর বইয়ের পাতায় একটু- আধটু চোখ বুলাচ্ছে। তুরানের চোখে ডাক্তারের দেওয়া সেই মোটা ফ্রেমের চশমা টা। বই পড়ার সময় ছাড়া চশমাটা চোখে দেয় না তুরান। চশমা পড়তে তেমন ভালোলাগে না।‌ আর চশমা পড়লে চেহারায় কেমন একটা হাবা হাবা‌ ভাব চলে আসে।
তুরান নিজেকে বইয়ের পাতায় মগ্ন রাখতে চাইলে রাখতে পারছে না। বার বার রুপার কথা মনে পড়ছে। তুরান চায়ের কাপ টা বেড সাইডে রাখলো। বইটা আর চশমা‌ টাও রেখে দিলো। তুরান চোখ বুঁজে আজকে‌ পুরো দিনের সব ঘটনা আরেক বার ভেবে নিলো। আজকে দিনটা তুরানের কাছে অনেক টা স্পেশাল। কারন রুপার ঠোঁটে প্রথম চুমো খেয়েছে।‌ সম্পূর্ণ অন্যরকম ছিলো অনুভূতি টা। কেমন তীক্ষ্ণ একটা অনুভুতি, এমন অনুভূতি কখনো ভোলার নয় । এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমের রাজ্যে চলে গেলো তুরান।
রুপা অনেকক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। ঘুমিয়ে মানুষ সব মান,অভিমান ভুলে থাকতে পারে। ঘুম কি একটা অদ্ভুত জিনিস। রুপা কিছুতেই রুম থেকে বের হতে চাচ্ছে না। 
নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাচ্ছে, তাই টেবিলের কাছে রাখা খাতা আর পেন্সিল টা হাতে নিলো। রুপার কেন জানি হঠাৎ মনে হলো সে খুব ভালো ছবি আঁকতে পারে।‌ রুপার সাথে মাঝে মাঝে অদ্ভুত কান্ড ঘটে। মাঝে মাঝে রুপার মনে হয় সে অনেক কিছু জানে। এটা কেন মনে হয় রুপা জানে না। আর জানতেও চায় না। এসব নিয়ে ভাবতে গেলে রুপার মাথায় পেইন হয়। অথচ সাহেলা বেগম সব সময় রুপা কে এসব নিয়ে ভাবতে বলে। মাঝে মাঝে একারনে সাহেলা বেগমের প্রতি চরম বিরক্ত হয় রুপা।
রুপা অবচেতন মনে ছবি আঁকতে চেষ্টা করলো। রুপার ধারনা মিথ্যা না আসলেই রুপা খুব দারুন ছবি আঁকতে পারে। রুপা অবাক হয়ে যায়। এর আগে কেন রুপার মনে হলো না যে ও এত ভালো আঁকতে পারে? যদি জানতো তাহলে তুরানের একটা ছবি আঁকত।‌ এখন তো তুরানের সাথে রাগ রুপা,তাই তুরানের ছবি আঁকার কথা মাথায় আনছে না রুপা।
ঘুম থেকে উঠে তুরান দেখে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তুরান তড়িঘড়ি করে ছাদে যায়। ছাদে নেই রুপা। রুপা হয়ত আরও আগে এসে তুরানের জন্য অপেক্ষা করে চলে গেছে। তুরানের নিজের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। অস্থির হয়ে ছাদে পাঁয়তারা করতে লাগলো। হঠাৎ তুরানের মনে হলো এখন আর অপেক্ষা করে লাভ নেই। তাই তুরান যেভাবে হোক রুপার রুমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রুমে যাওয়া সম্ভব না হলেও জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া তো যাবে।
রুপার রুমের জানালা ভিতর থেকে আটকে দেওয়া। রুপা কি রাগ করে তুরানের কাছে থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখছে? ক্লিয়ারলি বিষয়টা বুঝতে পারছে না রুপা। এত টাইম রুপা তো কখনো তুরানের চোখের আড়ালে থাকে নেই। আর রুপা যদি তুরানের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করত তাহলে তুরান কে ছাদে না দেখে অবশ্যই তুরানের রুমে যেতো। তার মানে রুপা রাগ করে আছে,ইভেন তুরানের কোন খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করে নি। 
তুরান আজিজ চৌধুরীর বাসার সামনে ঘুরঘুর করতে লাগলো। বিকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আজিজ চৌধুরীর রুম থেকে রুপার কথায় শব্দ আসছে। তুরান জানালার ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু দেখা গেলো না কারন জানালার পর্দা গুলো দেওয়া। রুপা রাগ করে নি , করেছে চাপা অভিমান। রাগ করলে হয়ত এতক্ষনে এসে তুরানের গালে কষিয়ে কয়েকটা থাপ্পর দিতো। রুপার এমন শূন্যতায় তুরান অনুভব করছে রুপা কে কতটা ভালবাসে। আসলে মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষ টার সাথে দূরত্ব তৈরি করে , নিজের গুরুত্বটা বুঝাতে হয়।


সারা সন্ধ্যা আজিজ চৌধুরীর বাসার সামনে ঘুরঘুর করে তেমন লাভ হয়নি, রুপার দেখা পাওয়া যায় নি। মেয়ে টা এত অভিমানী তুরানের আগে জানা ছিলো না। রাগ অভিমান যাই করুক সেটা ভাঙানোর তো সুযোগ দিবে, সত্যি টা বুঝার চেষ্টা তো করবে অন্তত। মেয়ে মানুষ গুলো কেন যে এত বেশি বুঝে তুরান ভেবে পায় না, একটু তেই অভিমানে ফেটে পড়ে। তাও আবার যুক্তি ছাড়া অভিমান। যুক্তি ছাড়া হোক আর যাই হোক সেটা ভাঙানোর সুযোগ তো দেওয়া উচিত।‌‌‌‌ এতক্ষন রুপার জন্য ওয়েট করলেও এ পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে গেলো তুরান। নিজের রুমে এসে পড়লো। কয়েক মাস বাদে ফাইনাল এক্সাম। তুরান জানে ওর খুব ভালো একটা চাকরি হবে। ফ্যামিলির সব অভাব ঘুচে যাবে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে তুরান। জীবনে হাজার বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে হলেও লেখাপড়া টা শেষ করতে পেরেছে। দারিদ্র্যতা, অসহায়ত্বের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করেছে। টাকার অভাবে না খেয়ে থেকেছে, পায়ে হেঁটেছে মাইলের পর মাইল। এখন যে সব সমস্যার সমাধান হয়েছে তাও না, কিন্তু আগের মত না খেয়ে থাকতে হয় না। টিউশনির টাকা দিয়ে দিব্যি চলে যায়। ভালো চাকরি নিবে, বোন দের লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে দিবে, সংসারের দায়িত্ব নিবে! কত দায়িত্ব তুরানের কাঁধে। তার উপর এক অনিশ্চিত ভালোবাসায় জড়িয়েছে। রুপা মেয়েটা কখনো তুরানের পরিবার সম্পর্কে তেমন জানতে চায় নি। এসব ব্যাপারে রুপা উদাসীন। তুরান তো গ্রাম থেকে উঠে আসা দরিদ্র পরিবারের ছেলে। রুপা নিশ্চিয়ই কোন এক আলালের ঘরের দুলালী। এসব নিয়ে রুপার সাথে কখনো কথা বলা হয়নি। 
তুরান নানান চিন্তা ভাবনা শেষে বইয়ের দিকে মনোযোগ দিলো। মাঝে মাঝে রুম থেকে বের হয়ে রুপার রুমের দিকে তাকায়। রুপার রুমের লাইট অফ, বারান্দায়ও দেখা যায় না রুপাকে। তুরান রুপা দের বারান্দার কাছে গিয়ে তুরান কয়েক বার শীষ বাজালো। রুপার কোন সাড়া পাওয়া গেলো না। খুব বেশি শূন্যতা অনুভব করছে রুপা আবার বিরক্তও হচ্ছে।
তুরান রাতে খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়লো। রুপার উপর রাগ হচ্ছে খুব। ঘুম আসছে না তুরানের। তবুও চোখ বুঁজে শুয়ে রইলো। এক সময় গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে গেলো। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া তুরানের অভ্যাস। আপনা- আপনি ঘুম ভেঙে যায় এই সময় টায়। তুরান উঠে বসলো। ঘুম ঘুম চোখে কিছুক্ষণ বসে থেকে রুম থেকে বের হলো। 
কি আজব! রুপার রুমের লাইট অন। এত রাতে কি করছে ও? নাকি আজ বরাবরের মতো মাঝরাতে ঘুম ভাঙে নি তুরানের? তুরান নিশ্চিত হওয়ার জন্য রুমে গিয়ে ঘড়ি দেখলো। রাত 2:31 বাজে। তুরান সতর্ক পায়ে হেঁটে রুপার রুমের কাছে গেলো। জানালা গুলোও খোলা এখন। তুরান আস্তে আস্তে জানালার দিয়ে উঁকি দিলো । রুপা টেবিলের কাছে বসা। কিছু আঁকছে বোধ হয়। এত রাত পর্যন্ত সজাগ থেকে কি করছে রুপা? খুব মনোযোগ দিয়ে আঁকছে রুপা। রুপা কে কিভাবে ডাক দিবে ভেবে পাচ্ছে না তুরান। চারদিকে শুনসান নীরবতা। সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন । কোথায়ও কোন শব্দ নেই। এমন নীরব পরিবেশে ছোট ছোট শব্দ গুলো প্রকট শোনা যায়। তার উপর বিল্ডিং এর ভিতর কথার শব্দে গমগম আওয়াজ হয়।
তুরান আস্তে শিষ বাজালো রুপার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। রুপা বোধ হয় শুনতেই পায় নি। তুরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে চাপা গলায় বলল,
-' রুপা।'
রুপা চারদিকে তাকালো। হঠাৎ জানালার কাছে তুরান কে দেখতে পায়। রুপা ক্ষ্যাপা বাঘিনীর মত তেড়ে এসে ঠাস করে জানালাটা আটকে দেয়। তুরান হাঁ করে তাকিয়ে রইল।
-' রুপা আমার একটা কথা শুনবে তো প্লীজ। এভাবে তুমি আড়াল হয়ে থাকলে আমি তোমার রাগ ভাঙাবো কিভাবে?'
রুমের ভিতর থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেলো না। তুরান আবার বললো,
-' রুপা বাবু সরি। ওই মেয়েটা আমার ফ্রেন্ড। কথা বলা একদমই উচিত হয়নি ওর সাথে। তুমি যে এত অবুঝ বুঝি নি । এই যে কানে ধরেছি দেখো আর এমন হবে না।'
তুরান সত্যি সত্যি কানে ধরলো। ভাবলো হয়তো জানালা খুলবে রুপা। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। তুরান বুঝতে পারলো রুপা যতটা পাগলি টাইপের, ঠিক তত টাই শক্ত মেজাজের ।
রুপার রাগ ভাঙানোর জন্য তুরান একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে বিশেষ কোন লাভ হলো না। কোন রকম সাড়া দিচ্ছে না রুপা।
অনেকক্ষণ পর রুপার গলার শব্দ শোনা যাচ্ছে। রুপা চাপা স্বরে বলছে,
-' আমি অবুঝ আর যাই হই সেটা নিয়ে কারো ভাবতে হবে না। কালকের পর আর খুঁজে পাবেন না আমায়। পাগলা গারদে দিয়ে আসবে আমায় । সবার সামনে আপনি আমায় পাগল প্রমান করলেন। ভার্সিটি থেকে যান, টিউশনি তে যান ।কত মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলেন , সেলফি তুলেন। কই কখনো তো আমার একটা ছবি তুললেন না! আমি তো অমন সুন্দর না, ফর্সাও না।'
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে রুপা। তুরান রীতিমতো ঘামতে শুরু করে। অন্য সময় হলে হয়তো হাসতো রুপার এমন কথা শুনে কিন্তু এখন তুরানের পা নিচের মাটি সরে যাচ্ছে বোধ হয়। কিসের জন্য পাগলা গারদে দিয়ে আসবে রুপা কে? রুপা হয়ত একটু এবনরমাল তাই বলে কি মেন্টাল নাকি? নাকি রুপা মিথ্যা বলে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করছে? যদি সত্যি হয়! 
তুরান তীব্র কষ্ট অনুভব করছে। গলা ধরে আসছে তুরানের, কথা বলতে পারছে না। তুরান খানিকক্ষণ চুপ থেকে কষ্টে জর্জরিত গলায় বললো,
-' রুপা তুমি মিথ্যা বলে মজা করবে না। কেন পাগলা গারদে রাখবে তোমায়? এমন যদি সিদ্ধান্ত কেউ নিয়ে থাকে তাহলে আমি তোমায় নিয়ে এখন পালিয়ে যাবো।'
রুমের ভিতর থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তুরান পাগলের মত বিলাপ করতে করতে বললো,
-' রুপা কথা বলো! কথা বলছো না কেন? তুমি বুঝতে পারছো না আমার মনের অবস্থা? তুমি যা শাস্তি দিবা আমি তাই মাথা পেতে নিবো। আমার ভুল হয়েছে খুব। তুমি কি আমায় ভালোবাসো না? তুমি কি আমায় ছাড়া থাকতে পারবে?'
তুরান কিছুক্ষণ চুপ থেকে তীব্রতর হতাশ হয়ে বললো,
-' আরে তুমি পাগলা গারদে থাকবে কেন? কি আজব কথা! আমি তোমায় বিয়ে করে নিয়ে যাবো।'
তুরান জানালায় আঘাত করে জোরেসোড়ে। ক্ষুব্ধ গলায় বলল,
-' আমার কথা কানে যাচ্ছে না তোমার? বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু তুমি। আরে কি এমন হয়েছে যে তুমি এমন করছো? তুমি এমন চুপ থাকলে আমি কেমন করবো?'
তুরান এবার আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না। শরীরের সমস্ত শরীর দিয়ে জানালায় আঘাত করলো। চেঁচিয়ে বললো,
-' মজা নিচ্ছো তুমি আমার সাথে? তোমায় সামনে পেলে এখন আমি তোমার হাত-পা ভেঙে দিতাম। মুখে কথা বলতে কি এমন প্রবলেম তোমার? পাগল পেয়েছো আমায়?'
আজিজ চৌধুরী আর সাহেলা বেগম দৌড়ে রুপার রুমের দিকে আসছে। আজিজ চৌধুরী চেঁচিয়ে বললো,
-' কে ওখানে কে? '
তুরান কোন রকম দৌড়ে পালালো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন