যদি বলি ভালোবাসি - পর্ব ১১ - ফাবিয়াহ্ মমো - ধারাবাহিক গল্প



--ওওই মমেয়েকে ওমমন ননজরে দেদেখিনা পাককনি.....
'ঠাসস' করে আরেকদফা চড় বসিয়ে কলার ছেড়ে করুণ চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি গাল ধরে চোখ নামিয়ে দাড়িয়ে আছেন। হঠাৎ রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো আবির ভাইয়া। সে দৌড়ে এসে মুগ্ধ ভাইয়ার কাধ ধরে জিজ্ঞাসা করা শুরু করলেন। 
--মুগ্ধ দোস্ত তুই এখানে কি করোস? এইখানে আসছিস কেন? কিরে গাল....

ভাইয়া মুগ্ধ ভাইয়ার গালের দিকে তাকিয়ে কিছু অনুমান করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন-

--বদমাইশ শয়তানের হাড্ডি! তোর ঠাসঠাস থাপ্পড়ের আওয়াজ যে রুম ভেদ করে বাইরে যাইতেছে জানোস? আম্মু বা আব্বু যদি জেগে থাকতো কি কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো বদমাইশ! ইশ..গালটাকে দেখ কি করছে!....মুগ্ধ, ভাই চল এখান থেকে।
মুগ্ধ ভাইয়া আবির ভাইয়ের হাত ধরে বলল-
--আবির প্লিজ চলে যা...আমি ওর সাথে কথা বলেই চলে যাব। প্লিজ ওকে আমার সামনে বকিস না, আমি সিরিয়াসলি বেশিক্ষন থাকবো না। বিলিভ!
আবির ভাইয়া আমার দিকে রাগী লুক দিয়ে দরজা চাপিয়ে চলে গেল। আমি বিছানায় বসে চোখের পানি ফেলছি মুগ্ধ ভাইয়া আমার সামনে হাটু গুজে বসলেন। রুমে লাইট জ্বালানো বিধায় ভাইয়ার গালে চটাস চটাস চড়ের দাগগুলো লাল হয়ে আছে, শরীরের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে চড় মেরেছি বলে কথা। উনি অনুরোধ সুরে বলে উঠলেন-
--দেখ আমি একটা থার্ড ক্লাস ছেলে, ক্লাসলেস বলতে পারিস। তোকে বিয়ে করিনি তারপরও তোকে নিজের সাথে কত জায়গায় ঘুরেছি, আদর করেছি, রাগারাগী, থাপ্পর অপমান আরো অনেক কিছু। এগুলো কি ভালো ছেলেদের লক্ষণ? ভালো ছেলেরা এমন করে? করে না তো পাকনি। আমি চরম একটা লম্পট ছেলে...আমার সাথে সুখী থাকবি? রাফিন ভাই ভালো মম। সে খুব ম্যাচিউরড পার্সন, ওয়েল মেন্টালিটির ছেলে। আমার মতো না...
আমার সামনে হাটুগুজে উনি রাফিন লুইচ্চার ভালো গূনগান করছেন। ওই রাফিন ভালো? ছি! ওই রাফিন যদি বখাটের মতো হয়েও ভালো গুনাবলির সুনাম পায় তাহলে রাদিফ মুগ্ধ কি? উনার কথা শুনেই ফুপিয়ে কাদছি, বাধভাঙা কান্না। মুগ্ধ ভাইয়া আমার কান্না দেখে সিক্ত গলায় বলে উঠলেন-

--বুঝলি পাকনি, আমি একটা কলঙ্ক। যেখানে যাই ওখানে যেয়েই কলঙ্কের ছোয়া দিয়ে আসি। নিজের উপর হাসি পাচ্ছে খুব!! এইযে দেখ, আমি না আসলে তুই তোর মতো থাকতি, হাসিখুশি সুন্দর দিন পার করতি। আঙ্কেল আন্টির সাথে মিলেমিশে থাকতি। আমি এসেই সব ন্যস্ত করে কলঙ্কের কলুষ লাগিয়ে দিয়েছি। আমি.....(একটু থেমে) আমার ভাগ্য জানিস এতো খারাপ সহজে সুখ হাতছানি দিয়ে আসে না, এক মুঠো প্রশান্তি হাতের নাগালে পাই না কিছু ধরে রাখার আগেই সব অন্যের কোঠায় হারিয়ে যায়....

মুগ্ধ ভাইয়া কেমন কথা বলছেন তাতে আমি আন্দাজ করা ছেড়ে দিয়েছি। উনিও কষ্টে আছেন, আমিও কষ্টের পরিহাসে। আমি কান্নায় হেচকি তুলতে বলে উঠলাম-
--প্লিজ আমি রাফিনের সাথে বিয়ে করতে চাই না। আপনি লম্পট না প্লিজ, উনি লম্পট। বিশ্বাস করুন, আমি ওকে নিয়ে এক সেকেন্ডের জন্য কল্পনা করতে পারবো না। আমি তার চেয়ে বরং বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। আপনিও আমায় মেনে নিবেন না আর রাফিনের সাথে ভালো থাকবো না। আমি চলেই যাই প্লিজ...চিন্তা করবেননা সুইসাইড করবো না। 
-- না প্লিজ না, প্লিজ প্লিজ....বাড়ি ছেড়ে পালানোর মতো কাপুরুষতা দেখানো ঠিক না। সবাই তোকে নিয়ে ছিছি করবে...আঙ্কেল আন্টির সম্মান নষ্ট করা হবে প্লিজ, তুই তো সব বুঝিস প্লিজ। 
--আপনি নিজে বিয়ে করবেন না, আমাকে পালাতেও দিবেন না, মরতেও বলবেন না...তো আমি করবো টা কি! কি করবো আমি! বিষ খেয়ে মরবো? নাকি ছাদ থেকে লাফ দিয়ে ডিরেক্ট মরার প্ল্যান করবো? কি করবো!

উনি হাত দুইহাত টেনে হাতে হাত বুলিয়ে বলে উঠলেন-
--তোর ছোটবেলার মানুষ হিসেবে একটা জিনিস চাই? প্লিজ একটা বার? আমি কখনো কিচ্ছুর আবদার করবো না। ওয়াদা করছি। প্লিজ শেষবারের মতো রাখ?
আমি কেদে চলছি, হয়তো আমি জানি উনি আমাকে ছোটবেলার দোহাই দিয়ে রাফিনকে বিয়ে করার অনুরোধ করবেন। আমি হাত ছেড়ে হাত জোড় করে কেদে বললাম-
--প্লিজ প্লিজ আপনার দোহাই লাগি রাফিনের সাথে বিয়ের কথা বলবেন না। আমি আপনার মতো মহৎ মানুষ না!! আমি মহৎ গুনসম্পন্ন না নিজের ভালোবাসাকে এভাবে ভুলে যাব। প্লিজ আমায় নিজের করে নেওয়ার দয়া ভিক্ষা করুন!!

মুগ্ধ ভাইয়া কনুইয়ের ভাজে চোখ মুছে নিচ্ছেন। আমার হাত নামিয়ে উনি উঠে দাড়ালেন, শান্ত গলায় হাসি দিয়ে বলে উঠলেন-
--আমার ভাগ্য এতো ভালো না রে পাকনি এতো সহজে তোকে পেয়ে যাব। নিরানব্বইয়ে যেয়ে আটকে যাওয়ার স্বভাব আছে আমার, বুঝছিস। শতকের ঘরে পৌছাতে পারিনি তার আগেই আমার পাওনা জিনিস অন্যের ঝুড়িতে হারিয়ে যায়....আসলে কি, মুগ্ধ সবাইকে মুগ্ধ করে চললেও ভাগ্যের নির্মম লিখায় মুগ্ধ হয়ে উঠতে পারিনি কখনো....মাফ করে দিস পাকনি। তোকে ভালোবাসার পরিণাম একটু তিক্ত হলেও আফটার আ'ম ইন লাভ্ড।আ'ম পিসফুলি হ্যাপি.... 

উনি আর এক মূহুর্ত দাড়ালেন জানালা দিয়ে পাইপ বেয়ে চলে গেলেন গন্তব্যে।আর আমি? হুহু করে  চোখের বাসনা মিটাচ্ছি....কান্নার ঢলে ভেঙে পড়েছি। আমার না চোখের চেয়ে মনের আকুতি বেশি। চোখ তো কান্না করে প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু মনের সেই মাংশল হৃৎপিন্ডটা এত ছারখার করে উফ! দেখাতে পারলে চোখের পরিদর্শনের সামনে হার মানতো। মানুষ বুঝতে পারতো শক্ত মনের মানুষ গুলা চোখের চেয়ে মনের আঘাতে অনেক বেশি ক্ষতবীক্ষত। 

র্নিঘুম এক কান্না জড়ানো রাত পার করলাম। এক পলকের জন্য হলেও চোখের দুটো ক্লান্ত পাতা এক হতে পারেনি। ঘুমের জন্য চোখ বন্ধ করলে ভেসে আসে উনার প্রতিটা কথা। উনি ভালোবাসা ত্যাগ করলেন? কার জন্য? নিজের বড় ভাইয়ের জন্য? ওই শয়তান বজ্জাতের জন্য? কিভাবে কোন হাতে কোন মনে পারলেন এমনটা করতে? উনি কি এখনো বিদেশ যাওয়ার ঘটনার সাথে বহু কিছু লুকিয়ে চলছেন? ঢাকা দিয়ে চলছেন কি?? "জানি না" শব্দে আটকে গিয়েছি আমি, জানি না...

মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসেছি ফোন নিয়ে। গান শুনে মন হালকা করবো বলে ইয়ারফোন ঢুকাচ্ছি ফোনে। মিরা আপু দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন সাথে আমার মনিরা। কাল মনিরাকে খুব করে পাশে চেয়েছি কিন্তু একটা বিশেষ কারনে বাইরে যেতে হয়েছিলো ওর। মনিরা এসে আমার পাশে বসেই গলা জড়িয়ে চেপে ধরলো। মিরা আপু টেবিলের উপর খাবারের প্লেট রেখে চলে গেছে। মনিরা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো-

--মম, তুই কাদিস না প্লিজ। আমার ডেভিল জেদি রাগী বান্ধুবিটা কাদতে পারেনা। তোর চোখে কান্না দেখিনাই দোস্ত, আজকে কান্না দেখে আমার খারাপ লাগতাছে বইন। 
আমি চোখের কোনায় পানি মুছে মনিরাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বসালাম। ওর চোখেও কান্না। নাক লাল করে কান্না করছে। ওর চুলগুলো কানের পিছনে গুজিয়ে বলে উঠলাম-

--ইশশ...আমার বরিশাইল্লা খ্যাতটা কান্না করে দিছে !! এই কান্না করিস নাতো... আমি কি কান্না করতেছি? দেখ চোখে পানি নাই...দেখ,

চোখ বড় করে ভূতের মতো তাকিয়ে দেখাচ্ছি আমার চোখে পানি নেই। মনিরা ফিক করে হেসে দিল। পরক্ষনে মনটা খারাপ করে বলে উঠলো-

--মুগ্ধ ভাই বিয়ে করবো না? ফাইনাল বলে দিছে?
--হুম, বলে দিছে। উনি উনার কথায় অটুট মনিরা। উনি যদি বলেন হ্যা তবেই হ্যা, যদি বলেন না তাহলে না। 
--হালারে জুতাটা দিয়া বাইড়ায়া বাইড়ায়া ঠেলাগাড়ি বানান দরকার! পিরিতি করার সময় বিয়ের কথা মাথায় ছিলো না! এখন নিজে করবো না ভালো কথা! তোকে গছিয়ে দিতেছে বড় ভাইয়া রাইফেলের কাছে! হালার ***!!!

--এহ্ খোদা! থাম বান্ধুবী! মুখ ছুটানো স্টার্ট করিস না। মন ভালো না এমনেই। ওই দাড়া, রাইফেল কে? এই রাইফেল কোত্থেকে আসলো?

--মুগ্ধ ভাইয়ের বড় ভাইয়ের নাম জানি কি...রাইফ্ফা...রানু...
--ওরে ওরে, হইছে বুঝছি!রাফিনের কথা বলতেছিস? থাক বুঝছি। তোর মুখের বুলি...মাবুদ!

--মম ওই হালার ছবি দেখমু! আমারে ওর সামনে নিয়া যা! সামনে দাড়ায়া ড্রেনের পানিতে চুবায়া ছবি তুইল্লা ফেসবুকে ছাইড়া বলমু, "শালা কামলা, মাইয়া দেখলে কারেন্ট লাগে হালার"।

--ইছছি! কিসব বাজে কথাবার্তা বলতেছিস! মনিরা সিচুয়েশন বোঝায় চেষ্টা কর!!প্লিজ!

--ঠিকি বলতেছি!ওই হালার লজ্জা শরম নাই! নাকি ঘাটে বিক্রি করে এইখানে কুকাম করতে আসছে!কেমন নিচ মানসিকতার তুই একটু ভাব? তুই উনার ছোট ভাইয়ের সম্পদ! তোরে নিয়া কেমনে টানাটানি করে?ছেসড়া পাবলিক!

--মাথা গরম করিস না প্লিজ। আমি পরিস্থিতি সামলানোর ট্রায় করতেছি। একদিকে আমার বিয়ে অন্যদিকে উনার। তুই বুঝতে পারতেছিস আমি কি লেভেলে টেনশনে আছি? মাথা ঘুরঘুর করতেছে মনিরা। তুই আসছিস প্লিজ সলিউশন দে, মাথা খাটা।  

--দোস্ত আগে রাইফেলরে দেখতে চাই। ওর চামচিকা মার্কা চেহারা দেখলে মাথার ঢিলামি খুলতে পারে। আমি কি বলি শোন, আগে ওর বাসায় চল। আমি রাইফেলরে দেখতেছি, তুই মুগ্ধ ভাইরে যেমনে পারোস ওমনে মানানোর ট্রায় কর। কথা না শুনলে দিব থাবড়া! তাও থামবি না। শেষে আমি তুই আর কয়েকজন মিলা মুগ্ধ ভাইরে কিডন্যাপ করমু, তারপর কাজি তুইল্লা আইনা বিয়া। বুঝছোস তো প্ল্যানিং??
--কিডন্যাপ ?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন