ইহান: আপনি শুধু আমার আনহা। জানেন সেই ছোটবেলা থেকে পাগল ছিলাম কিন্তু তখন ফিলিংটা বুঝতে পারিনি। কিন্তু আপনি যখন আমাকে ছেড়ে গেলেন। আমি আপনাকে ভোলার বদলে আপনাকে আকড়ে ধরে বাচতে চেয়েছি। যা করেছি সবটা আপনার জন্য আনহা..... আমি যে আপনাকে পাগলের মত চাই..... কিন্তু আপনি তা কোনোদিন বুঝতে পারেনি। তাই আমি আপনাকেই কারো কাছে আসতে দিতে চাইনি......
যদিও আপনি এটা গ্রহন করবেন না। কিন্তু আমার কিছু করার নেই আমি বাধ্য....
আনহা কাজ শেষ করে গোসল করে এসে আয়নার সামনে নিজের শাড়ি ঠিক করেছিল। যদিও আনহা শাড়ি পরতে চায়নি কারন ও পারে না। কিন্তু শাড়ি ছাড়া কিছু খুজেও পেল না তাই বাধ্য হয়ে ওঠাই পড়ল।কিন্তু শাড়ির আগা মাথা কিছুই বুঝছে না
তখনি ইহান আসে.... আনহাকে এভাবে দেখে ইহানের মাথাটাই ব্লক করে..... তখনি আনহার চোখ ইহানের দিকে যায়.....
আনহা: এই তোর মাথায় কমন ন্সেস নেই ঘরে ডুকতে দরজা নক করতে হয়😡😡😡
ইহান: আজব তো আমার ঘরে আমি এসেছি। আমার মাথায় এইটুকু ন্সেস ঘর আমার তাই আসতেই পারি। কিন্তু আপনার নেই যে ড্রেস ঠিক করার সময় দরজা লক করতে হয়.....
আনহা: ইয়ে.... মানে....
ইহান: থাক আর বলতে হবেনা। আপনি পড়ুন ….
আনহা: পড়ুন মানে😲😲😲 তোর সামনে পরমু নাকি...
ইহান: সেটা জানিনা কিন্তু আমি আমার রুম থেকে যাচ্ছি না। [ বিছানায় শুয়ে পরে ]
আনহা বাধ্য হয়ে বাথরুমে গেল। এটা দেখে ইহান একটু হেশে টিভি অন করে দেখতে থাকে.....
৩০ মিনিট পর....... আনহা বেড়িয়ে আসে।কিন্তু শাড়ি কই প্রথম যেভাবে পড়েছিল তার চেয়ে খারাপ অবস্থা আর আনহা ঘেমে একসাথ...... ইহান জানত এটাই হবে। কিন্তু আনহা এতটা চেষ্টা করবে জানত না। আনহা ইহানের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ইহান: হেল্প লাগবে... [ গম্ভীর গলায় ]
আনহা: হুমম.....
ইহান বাকা হেশে আনহার কাছে গিয়ে শাড়ি ঠিক করে দেয়.....
আনহা: কি ব্যাপার বলত ভার্রসিটির প্রোগ্রামে তো শাড়ি ঠিক করতে ১ ঘন্টা লেগেছিল কিন্তু আজ কিহল🤔🤔🤔
ইহান: আমি ভালো স্টুডেন্ট তো.... সেদিন আপনার শাড়ি ঠিক করার হেল্প করতে যাওয়ার পর ইউটিউব দেখে শিখে নিয়েছি....
আনহা: কেনো🤔🤔
ইহান: যাতে ভবিষ্যতে প্রব্লেম না হয়। মানে ভবিষ্যতে কোনো মেয়ে হেল্প চাইলে হেল্প করতে পারি..... 😁😁😁
আনহা: মানে... আমার সাথে মশকরা হচ্ছে টিচারের সাথে.....
ইহান তখনি আনহার আচলটা জড়িয়ে কাছে নিয়ে আচলে একটা প্যাচ দিয়ে বলে....
ইহান: আপনি এখন তো আমার বউ তাহলে আপনার সাথে মশকরা না করে কার সাথে করব.....
আনহা: আল্লাহ..... 😡😡😡 ওই তুই ধুর হো.... [ ইহানের কাছ থেকে সরে ] সালা পোলা তো পোলাই হয় সেটা যেই হোক... 😡😡 আর এসব শাড়ি পরাইয়া হেল্প করার আইডিয়া বাদ দে....
ইহান: দেখা যাক.... [ তখনি জানতাম ভবিষ্যতে আমার শাড়ি পরার নিয়মটা কাজে লাগবে। তাই শিখে নিয়েছি। কারন আপনি ভার্রসিটিতে যা করেছিলেন তারপর আপনাকে শেখানোর চেয়ে নিজে শেখাটা বেশি বেটার মনে হয়েছে.... ]
তখনি ইহানের চোখ আনহার আধ ভেজা চুলে আটকে যায়। আনহা চুল আচরাচ্ছিল। ইহান গিয়ে একদম আনহার গা গেশে দাঁড়ায় আনহার চুলের ঘ্রান ওর নাকে আসে....
আনহা: এই ছেলেটার হয় কি..... ওই কি করছিস তুই....
ইহান: আপনার চুল থেকে সুন্দর ঘ্রান আসছে.... তাই...
আনহা ভ্রু কুচকে তাকায়....
আনহা: এটা চুলের না শ্যাম্পুর ঘ্রান....
ইহান: ইয়ে মানে... [ মাথা চুলকে ] আচ্ছা কি শ্যাম্পু....
আনহা: যেটা তুই দিস। মানে তোর টাই ইউস করেছি। আমারটা খুজে পাইনি.... [ একটু সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ]
ইহান: ওওও আচ্ছা [ আর একটি মিনিট ওয়েট করল না বেড়িয়ে এলো রুম থেকে যেন বাঘের গুহা থেকে বেড়ল ]
কিছুক্ষন পর আবার ইহান রুমে যায়.... আনহা টিভি দেখছিল টিভিতে স্কুল নিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছিল.....
আনহা: আসলেই তুই ছোটবেলায় অনেক ভদ্র ছিলি এখন কেমন হয়ে গেছিস... কেমন কেমন কথা কস.....
ইহান:…... [ আর আপনি দিন দিন আরো বেশি অবুঝ হচ্ছেন। নাহলে এটা বুঝতে পারছেন না আমি এখন আপনার হাসবেন্ড। কিন্তু আপনার কাছে এখনো সেই স্টুডেন্ট.... নিজের বউয়ের সাথেই মজা করেছি অন্য মেয়ের সাথে তো করিনি খারাপ কি??? ]
আনহা: কিরে কি ভাবছিস...???
ইহান: ভাবছি কি ভাবে কিভাবে আমি আপনার স্টুডেন্ট হয়ে গেলাম তাইনা আনহা.....
আনহা: সে আর বলতে😇😇😇😇......
অতিতে...............
আনহা ৮ম শ্রেনিতে আর ইহান ৩য় শ্রেনিতে উঠার পর আনহার পরার চাপ প্রচুর বেড়ে যায়। কিন্তু ইহান দিন দিন পড়ালেখার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছিল। শুধু আনহার জন্য বায়না করত। আনহা যেন ওর দরকারী কোনো জিনিস যা ছাড়া ও থাকতে পারে না। আর ইহানের বাবা-মা চেয়েও ইহানকে নিজেদের কথা শোনাতে পারেনি। কারন ততদিনে তাদের শান্ত শিষ্ট ছেলেটা অনেকটা জেদি হয়ে উঠেছিল। ও শুধু আনহা ছাড়া কিছুই বুঝত না। ইহান ওর প্রাইভেট টিউটরের কাছে পরতে চাইতো না। তাই বাধ্য হয়েই ছেলের এই অবস্তা দেখে ওর মা-বাবা আনহাকে ডেকে পাঠায়।
আনহাকে ইহানের বাড়িতে ডেকে পাঠালে স্কুল থেকে আনহাকে ইহানের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। কারন সেই স্কুলের ট্রাস্টি ইহানের বাবা........
আনহা ইহানের বাড়িতে আসে। বাড়িটা বেশ বড় আর গোছানো। এরকম বাড়ি হয়ত আনহা আগে দেখেনি...... তাই চোখ বুলিয়ে চারপাশটা দেখে নেয়।
আনহা: বাহহহ আমার পিচ্চিটা এই বাড়িতে থাকে.... আর ও কিনা আমার বাড়ি যেতে চায়.... 🤔🤔🤔 আমার এরকম বাড়ি থাকলে সারাদিন ঘরে বসেই ব্যাডমিন্টন খেলতাম😁😁😁
তখনি সিড়ি দিয়ে কাউকে নামতে দেখে..... হ্যা একজন মহিলা নামছে। দেখতে বেশ সুন্দরী, স্টাইলিশ আর একটু রাগী বলে মনে হল আনহার কাছে। কেন জানি মহিলাটাকে দেখে আনহার '''আলিফ লায়লার"' মালেকা হামিদা বলে মনে হল। যে তার তালিব থেকে তায়েবাকে আলাদা করতে চায়। কিন্তু কেন মনে হচ্ছে বুঝতে পারছে না আনহা...... ও বেশ ভয় পায়...... ওনাকে দেখে সোফায় বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আনহা.....
মহিলাটা এসে আনহাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। তারপর মহিলাটা পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে। টেবিলে থাকা গ্রিন টির কাপে একটা সিপ বলল.....
মহিলা: তুমি তারমানে আনহা..... [ চায়ের কাপ রেখে মোবাইল হাতে নিয়ে ]
আনহা: জি.... [ মাথা নাড়িয়ে ]
মহিলা: বসো.....
আনহা কিছু না বলে বসে পড়ে। কারন ওর অনেক ভয় লাগছিল.…..
মহিলা:তুমি জান আমি কে???
আনহা মাথা নেড়ে না বলল....
মহিলা: আমি ইহানের মা....
আনহা:...... [ ভয়ে চুপসে গেছে ]
মা: জানত আমি কোনদিন ইহানকে কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলতে দেখিনি। তুমি একমাত্র যার সাথে ও মিশে। শুধু মিশে না আনহা বলতে ও পাগল.....[ ভারী কন্ঠে ]
আনহা:........
মা: এর কোনো কারন আছে আনহা.... [ বেশ ঝাঝালো কন্ঠে....
আনহা:...... [ কান্না করবে এমন অবস্তা ]
মা: তুমি জান কেন তোমাকে আসতে বলেছি.....
আনহা: না.হহ..হহহহ [ মাথা নিচু করে ]
তখনি ইহান আসে..... আনহাকে দেখে এসেই আনহাকে জড়িয়ে ধরে। আনহার পেট পর্যন্ত পরে ইহান......
ইহান: আপনি এসেছেন আনহা। আমি আপনাকে আর যেতে দিব না। আপনাকে আমার কাছে রেখে দেব.... ইয়েয়ে.....
আনহা: ইহান থামো। ওনার সাথে কথা বলছি.... [ ইহানকে থামিয়ে ]
মা: ভালোই কন্ট্রোল করতে শিখেছ ওকে.. যাই হোক তোমার জন্য একটা জব অফার আছে......
আনহা: জব মানে….. আমি কি জব করব??? [ বেশ অবাক হয়ে ]
মা: তোমাকে ইহানকে পরাতে হবে। তার জন্য তোমাকে একটা ভারী এমাউন্টও প্রেমেন্ট করা হবে.....
আনহা: কিন্তু আমি.....
মা: আমি জানি তুমি ছোট। আমি আমার ছেলের জন্য বেষ্টটা চাই। ওর জন্য আমি অনেক বেশি এমাউন্ট দিয়ে টিচার রাখা। কিন্তু ওর এক কথা তোমার কাছে ছাড়া পরবে না। যদিও তোমাকে ওর টিচার হিসেবে রাখার ইচ্ছে নাই। কিন্তু ইহানের জিদের কাছে হার মানতে হলো..... এখন তুমি কি বলো.......
আনহা কি বলবে বুঝতে পারছে না।
ইহান: প্লিজ আনহা রাজি হয়ে জান না। প্লিজ প্লিজ..... [ আনহার হাত ধরে ঝাকিয়ে ]
মা: দেখ আমি শুনেছি তুমি স্টুডেন্ট হিসেবে ভালো তাই তোমাকে পরাতে বলছি... তারমানে এই নয় আর কোনো টিচার থাকবে মা। তুমি শুধু ১ ঘন্টা তোমার মত পরাবে। আর স্যাররাই ওকে পরাবে। আমি শুধু ইহানের জিদ রাখার জন্য বলছি........
আনহা: আচ্ছা...... [ মাথা নেড়ে ]
মা: ওকে.... এর জন্য তোমায় ভালো এমাউন্ট দেওয়া হবে আগেই বলেছি.....
ইহান: Thank you.... আম্মু... [ মাকে জড়িয়ে ধরে ]
মা: আমার ইহান বাবাই যা চেয়েছে তাই দিয়েছি এখন থেকে মাম্মার কথা শুনবে তাই না......
ইহান: ওকে মাম্মাম.......
মা: এইত আমার গুড বয়.... [ ইহানকে চুমু দিয়ে ] আমি আমার ইহানের সব ইচ্ছে পুরন করব। সব দেব যা আমার ইহানের চাই.....
আনহা: তাহলে আমি কি এখন থেকে পরাব।
মা: হুমম.... ইহান যাও তোমার নতুন মিসকে নিজের রুম দেখাও....
ইহান: চলুন আনহা [ আনহাকে টেনে নিয়ে রুমে যায় ]
মা: যাক ছেলেটাকে শান্ত করতে পারলাম। মেয়েটা যদি ওকে শান্ত রাখতে পারে তাহলে আমিও শান্তিতে কাজ করতে পারব.......
ইহান: এইটা আমার ঘর.... [ একটা বিশাল রুমে নিয়ে ]
আনহা: এ.… ই পিচ্চি তুই কার সাথে থাকিস😲😲😲
ইহান: একা একা...
আনহা: আমার ছোট্ট রুমে একা থাকতে পারিনা আর তুই এখানে.... [ চারদিক ঘুরে ]
ইহান: আসুন আগে...... [ তারপর ইহান আনহাকে নিজের সবজিনিস দেখায় ]
আনহা: দেখলি পিচ্চি তোর জন্য আমাকে আজ টিচার হতে হল। সে যাই হোক তাতে কি আমার আর হাত খরচ চাইতে হবে না
[ আনহা একটু বেশি self dependent ]
ইহান: আচ্ছা চলুন.....
আনহা যেতে নিলেই পিছলে পরে যায়....
আনহা: ওমা গেলাম গো..... [ কোমরে হাত দিয়ে ]
এইটা দেখে ইহান হেশে কুটি কুটি........
ইহান: আপনি আমার চেয়েও ছোট....
আনহা: পিচ্চির বাচ্চা.... তোকে আজকে😠😠😠 [ উঠতে গিয়ে পরে যায় ]
ইহান: আপনি আমার চেয়েও বেইবি🤣🤣🤣
আনহা: আমি বেবি নই😥😥😥
ইহান: তাহলে কি বুড়ি.... 😄😄😄 আপনি আজ থেকে... বুড়ি......[ আনহার গাল টেনে ]
আনহা: নাহহহ😭😭😭😭
ইহান: না আপনি বুড়ি....😇😇😇 আচ্ছা না আপনি কুকি...... [ বিস্কিটের নাম ] আপনি কুকি.... কুকি কুকি.....
আনহা: নাহহহ😭😭😭😭
ইহান: আপনি কি বেইবি নাকি.... তাহলে কাদছেন কেন??? দেখেন আমি বড় তাই কাদি না😇😇😇
আনহা: ওরে বড় রে এখনো নাক দিয়ে ঠান্ডা লাগলে.... ছ্যা.....
ইহান: দেখুন ঠান্ডা লাগলে সেটা সবার হয় [ কিছুটা লজ্জিত হয়ে ]
আনহা: হয়েছে বড় মানুষ এবার পরতে আসেন।
এভাবে আনহা হয়ে উঠে ইহানের টিচার। দুজনেই পড়ালেখা করতে থাকে ভালোভাবেই। কিন্তু ইহান কখনো আনহার পড়া পারত না।
আর তাই আনহা ওকে শাস্তি দিত। কখনো কান ধরে দাড় করিয়ে রাখত। বা কখনো কান টেনে দিত। কখনো আবার মারত। কিন্তু ইহানের সবটাই ভালো লাগত। এসব ওর কাছে খেলা মনে হত....
একদিন আনহা ইহানকে প্রচুর মারে কারন ও যা দিয়েছিল কিছুই করেনি। খুব রেগে ছিল আনহা। কিন্তু পড়ানোর শেষে টেবিল থেকে খাতা পরে যায়। আনহা খাতাটা খুলে দেখে আনহা এতোদিন যা দিয়েছে ইহান সব করেছে কিন্তু আনহাকে দেখায়নি। ইহানকে জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু ও সেদিন শুধু হেসেছিল......
এভাবেই আনহার হয়ে উঠেছিল ইহানের টিচার। এভাবেই আনহার JSC পরিক্ষা শেষ হয়। বেশ ভালো নম্বর পায়।
এভাবে আরো একবছর চলে যায়। ইহান এখন ক্লাস ফাইভে আর আনহা ক্লাস 10.... কিন্তু তখনি ঘটে বিপত্তি। ইহান আর আনহার জীবন থেকে চলে যাওয়ার সময় আসে......
কারন আনহার বাবার চাকরি ট্রান্সফার হয়ে যায়। যার কারনে ওদের সবকিছু সিফট করতে হয় চট্টগ্রাম...... আর এজন্য আনহার স্কুল সিফট করে ওখানে নিয়ে নেওয়া হয়। আর সবকিছু ওখনেই ঠিক করা হয়।
ইহান এটা শুনে প্রায় পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিল। আর তখন ইহানের বয়স কেবল ১০। আগের চেয়ে বড় হলেও চাইলে কিছু করতে পারেনি সেদিন ইহান...... যাওয়ার দিন.......
ইহান: আনহা প্লিজ যাবেন না। [ আনহাকে জড়িয়ে কান্না করে ]
আনহা: আমিও যেতে চাইনা পিচ্চি কিন্তু কি করব বল। আমি যে নিরুপায়। তাই বাধ্য হয়ে চলে যেতে হচ্ছে.।।।। [ নিজেও কান্না করে ]
ইহান: আমি জানিনা আনহা। আপনি শুধু আমার সাথে থাকবেন.......
আনহা: পারব না রে পিচ্চি..... এইনে এটা তোর জন্য.।।।[ হাতে বানানো একটা বেসলেট দিয়ে ]
ইহান ওটা নেয়......
ইহান: আপনি তার মানে যাবেন আনহা....
আনহা:.......
ইহান: ঠিক আছে.... আর কোনোদিন আসতে হবে না আনহা। আপনি খুব পচা। [ বেসলেট ফেলে দেয় যার জন্য ওটা ভেঙে যায়। তারপর দৌড়ে ইহান চলে যায়। ]
আনহা: ইহান..... [ কিন্তু ফিরল না ]
আনহা: সরি ইহান ভালো থাকিস......
তারপর চলে যায় আনহা........ ইহানের ছোট্ট দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে। তারপর আনহা চেয়েও ইহানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনা। একসময় নতুন পরিবেশ মানুষ সবকিছু পেয়ে আনহা ইহানকে ভুলতে শুরু করে..... ইহানের কথা মনে পরলেও ততটা মিস করত না। মায়াটা কাটিয়ে উঠেছিল কয়েকবছরে.......
আর ইহান........... আনহা ইহানের সবটা ছিল। আনহা যাওয়ার পর.........
—
ইহান: আপনি তার মানে যাবেন আনহা....
আনহা:.......
ইহান: ঠিক আছে.... আর কোনোদিন আসতে হবে না আনহা। আপনি খুব পচা। [ বেসলেট ফেলে দেয় যার জন্য ওটা ভেঙে যায়। তারপর দৌড়ে ইহান চলে যায়। ]
আনহা: ইহান..... [ কিন্তু ফিরল না ]
আনহা: সরি ইহান ভালো থাকিস......
তারপর চলে যায় আনহা........ ইহানের ছোট্ট দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে। তারপর আনহা চেয়েও ইহানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনা। একসময় নতুন পরিবেশ মানুষ সবকিছু পেয়ে আনহা ইহানকে ভুলতে শুরু করে..... ইহানের কথা মনে পরলেও ততটা মিস করত না। মায়াটা কাটিয়ে উঠেছিল কয়েকবছরে.......
আর ইহান........... আনহা ইহানের সবটা ছিল । আনহা যাওয়ার পর.........,
বর্তমান.........
ইহান: আনহা.... আনহা.... [ আলত করে ডেকে ]
ইহানের ডাকে আনহার ঘোর ভাঙে।
আনহা: তোর আবার কি হল😡😡😡
ইহান: সবসময় আমি হারিয়ে যাই আজ কি আপনি হারিয়ে গেলেন নাকি.....
আনহা: আচ্ছা আমি যখন তোকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম তখনকি আমার কথা তোর মনে পরেনি.....
ইহান:...............
আনহা: কিরে Dongki কি ভাবছিস....
ইহান:........
আনহা: তারমানে আমার কথা একটু ও মনে পরে নাই..... [ ভ্রু কুচকে চলে যায় ]
আনহার এমন কথায় ইহানের বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠে। খুব করুন দৃষ্টিতে ইহান আনহার দিকে তাকায়।
ইহান: আপনাকে যদি কোনোদিন ভুলতে পারি তবে তো মনে পরবে আনহা। আমি যে আপনাকে এক মুহুর্তের জন্য ভুলতে পারিনি। কি করে ভুলবো আপনি আমার মনে না নিশ্বাসে মিশে ছিলেন আনহা..............
ভেবে আবার অতিতে ডুব দেয় ইহান.........
এভাবেই কেটে যায় প্রায়...... ৫ বছর। আনহা এখন ঢাকার থাকে। HSC এক্সামের পর ওর বাবা চাকরি ঢাকায় সিফট করে নেয়। তারপর আনহা ঢাকার একটা ভার্রসিটিতে এডমিশন নেয়......
আনহা এখন অর্নাস ৩য় বর্ষের স্টুডেন্ট..... আনহার লাইফে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ওর লাইফ আগের মতই আছে। এখানে এসে ও আর অন্তি একসাথেই এডমিশন নিয়েছে। সব কিছুর মধ্যে শুধু ইহান নামের সেই পিচ্চিটাই মিসিং আনহার লাইফ থেকে। যদিও ঢাকায় এসে ইহানের খোজ করেছিল কিন্তু তেমন কিছু জানতে পারেনি কারন ততদিনে আনহা আর ইহানের দুরত্বটা অনেক বেশি ছিল...... আর তাই আস্তে আস্তে আনহা প্রায় তা ভুলেও ভোলেনি .....
আনহা: পিচ্চিটা আমার... জানি আমার উপর অনেক রাগ করে আসিস তুই কিন্তু কি করব বল তখন কি আমি চাইলেও তোর কাছে থাকতে পারতাম।
তখনি অন্তি আসে.....
অন্তি: কিরে মিস কুকি... এখনো সেই পিচ্চি নিয়ে পরে আসিস......
আনহা: কি করে ভুলি বল??? সালার ৫ বছরে একটা খোজ ও নিতে পারলাম না। [ ইহানের ছবিটা বইয়ের মধ্যে রেখে ]
অন্তি: তুই শুধু শুধু ওর কথা ভাবছিস। দেখ ওর হয়ত তোর কথা মনেও নেই.....
আনহা: তাই হবে হয়ত.... [ মন খারাপ করে ] আচ্ছা অন্তি.... ইহানের বয়স তো এখন কেবল ১৬ কিংবা ১৭ হবে। আর হিসেব অনুযায়ী ও এবার কলেজে তাই না......
অন্তি: হুমম কিন্তু কেন বলত???
আনহা: ইসসস আমার ক্লাস ফাইভের পিচ্চিটা এবার SSC দিয়ে কলেজে উঠেছে ভাবতেই কেমন লাগছে......
তখনি ওদের সামনে আসে আদ্র।
সদ্র: তা মিস অর্নি কি এখনো তার পিচ্চিতে ডুবে আছে। এই অধম যে তার পথ চেয়ে আছে..... [ আদ্র এবার মাস্টার্স। আনহার বয়ফ্রেন্ড। ২ বছরের রিলেশন ]
অন্তি: দেখছেন ভাইয়া পিচ্চি হয়েও আপনার সতীন হয়ে বসে আছে। আচ্ছা যদি সত্যি সত্যি থাকত তবে আপনার আর আনহার সাথে রিলেশন করা লাগত না।
আদ্র: কেন????
অন্তি: কারন সেই পিচ্চি ওকে নিয়ে এতটাই প্রজেসিভ ছিল আমাকেই ওর সাথে কথা বলতে দিত না। 😁😁
আদ্র: Like seriously anha....... শেষ পর্যন্ত আমার সতীন হবে একটা পিচ্চি ভাবা যায়।
আনহা: চুপ করবে তোমরা ভালো লাগছে না আমার। ইহানকে নিয়ে কেউ মজা করবে না।
আদ্র: আচ্ছা বাবা এখন আমার সাথে একটু চলো তোমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাব আজকে।
আনহা: আমার ভালো লাগছে না। [ বলেই চলে গেল ]
আদ্র: কি হল.....???
অন্তি: কিছুই না ওইযে ইহানের নাম নিতেই ওর মুখটা চুপসে যায়......... এখনো মিস করে ওই খারুস পিচ্চিটাকে....
আদ্র: খারুস মানে... আনহা যে বলল খুব সফট....
অন্তি: সফট না কচু।😡😡😡 ওটা শুধু আনহার কাছে। আমার সাথে ৩ বছরের একদিন ও কথা বলেনি। আর আনহা যাবার পর ওই পিচ্চির সামনেই কেউ যেতে পারেনি......
ওদিকে আনহা উঠে গিয়ে মাঠের শেষ কোনার গাছের নিচে বসে। এদিকে সচরাচর কেউ আসে না। আনহার ভালো না লাগলে এদিকে এসে বসে.... আনহা ওখানে বসে খাতার মধ্যে আকি ঝুকি আকতে থাকে.... আর ওর ছাড়া সিল্কি চুলগুলো বার বার ওর মুখের উপর আচরে পড়ছে। যার জন্য আনহা বার বার তা কানের নিচে গুজে দিচ্ছি কিন্তু অবাধ্য চুলগুলো যেন আনহার কথাই শুনছে না.........
হঠাৎ করে আনহার অদ্ভুত একটা ফিলিংস হয় ওর মনে হতে থাকে কেউ ওকে ফলো করছে। ওর আশেপাশে কেউ আছে। বার বার চারদিকে দেখে বোঝার চেষ্টা করল কিন্তু কাউকে দেখতে পায়নি আনহা। আনহা নিজের মনের ভুল মনে করে নিজের কাজ করতে লাগল।
কিন্তু ফিলিংসটা যেন বাড়তে লাগল। কারো নজর যেন আনহার গায়ে কাটার মত ফুটছিল। আনহার বেশ ভয় হতে লাগল। তাই ও আর কিছু না বলে দৌড় দিল। কিছুদুর যেতেই আনহা কিছুতে বেজে পরে যায়। মাথায় ব্যাথা পাওয়ার কারনে চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা দেখতে থাকে.........
এতক্ষন ধরে দুরে দাড়িয়ে আড়াল থেকে আনহাকে যে দেখছিল সে বেড়িয়ে আসে...... সে আনহার দিকে আস্তেআস্তে এগিয়ে যায়। আনহা বুঝতে পারে কেউ তার দিকে আসছে কিন্তু ও চোখের সামনে ঝাপসা দেখার কারনে তাকে চিন্তে পারছে না। আনহা ঝাপসা চোখে এক হাটু গেড়ে কাউকে নিজের পাশে বসতে দেখে... আনহা তার শরীরে কালো জিন্স আর কালো শার্ট দেখতে পায় তার শার্টের বোতামের খোলা অংশে যতটুকু বুক দেখা যায় তাতে কোনো একটা নামের শেষ অংশ দেখতে পায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই আনহা ন্সেসলেস হয়ে যায়...... তারপর আর কিছু মনে নেই আনহার...........
আনহাকে মাটিতে পরে থাকতে দেখে সে কি করবে বুঝতে পারে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনহার দিকে। কত বছরের না দেখার স্বাদ পুরন করছে এমন ভাবে দেখছে আনহাকে। আনহার মুখের একটু কাছে গিয়ে সে আনহার মুখটা দেখতে থাকে। আনহার মুখের উপর উড়ে আসা চুলগুলো যেন শত্রুর মত আনহার চেহারাটা লুকিয়ে রেখেছে। তাই সে ঠোঁটের উপরের চুল গুলো কানের কাছে গুজে দেয়.......
তারপর আরো কাছ থেকে আনহাকে দেখতে যায়। আনহার মাঝে নেশাক্ত হয়ে গেছে সে। সে আনহার মাঝে কি খুজছে, কেন ওকে দেখছে, কি চাই ওর কিছুই বুঝতে পারছে না.......দুচোখ ভরে আনহাকে দেখতে থাকে..........হঠাৎ তার চোখ আনহার ভেজা ঠোঁটে যায়। নিজের অজান্তেই তার মুখে একটা হাসি ফুটে উঠে কিন্তু কেন বুঝতে পারে না।সে খুব সফটলি আনহার ঠোঁটে নিজের বুড়ো আঙুল দিয়ে স্লাইড করে। ওর মাথা কাজ করাই বন্ধ হয়ে গেছে.....
নিজের অজান্তেই সে তার নিজের বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে বুকে থাকা নামের ট্যাটুটা দেখে নেয়..... তারপর বলে.....
সে: আনহা.... আমি ফিরে এসেছি..... আপনি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি আপনাকে ছেড়ে থাকতে পারিনি তাই চলে এলাম....... আপনার কাছে... [ আঙুল দিয়ে আনহার গালে স্লাইড করে আনহার হাতটা নিজের বুকে রেখে একটা বুক ভরে দীর্ঘ নিশ্বাস নেয়। ]
তারপর আনহার দিকে একটু এগিয়ে যেতেই কারো ডাক শুনতে পায়......
অন্তি: আনহা....... আনহা কই তুই......
অন্তিকে আসতে দেখে প্রচন্ড বিরক্ত হয় সে। এতটাই রেগে যায় যে ওর মন চাইছিল কিছু দিয়ে অন্তির প্রানটাই কেড়ে নিবে..... কিন্তু অন্তির সাথে অন্য কাউকে দেখে নিজেকে শান্ত করে নেয় সে.........
সে: দেখছেন আনহা কেউ চায় না আমি আপনার কাছে থাকি। সে জন্য বার বার আমার থেকে কেড়ে নিতে চায় আপনাকে। কিন্তু আমি তো আপনাকে ছেড়ে যেতে চাই না আনহা.... [ কান্না করতে করতে ] আচ্ছা আপনি থাকুন আমি আজ আসি.... আমি আবার আসব.... [ আনহার কপালে চুমো একে.। তারপর আর একমিনিট অপেক্ষা করে না সে চলে যায়.... ]
অন্তি এসে আনহাকে দেখে একটা চিতকার করে। কারন আনহার মাথাটা অনেকটা ফুলে গেছে। আর ও নিথর ভাবে মাটিতে পরে আসে।
অন্তি: আদ্র দা....
[ তারপর অন্তি আর আদ্র আনহাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যায়। আনহার জ্ঞান ফিরলে আনহা নিজের আশেপাশে কাউকে খুজতে থাকে.....
অন্তি: কিরে কাকে খুজছিস....
আনহা: ওই ছেলেটা যাকে আমি দেখছিলাম.....
অন্তি: ছেলেটা মানে। 🙄🙄🙄 তোকে যেখানে পেয়েছি সেখানে তুই ছাড়া আর অন্য কেউ ছিল না।
আনহা: কিন্তু আমি দেখেছি...
আদ্র: stop it Anha...... বলছি তো ওখানে কেউ ছিল না তুমি ভুল দেখেছ....
আনহা: কিন্তু.......
আদ্র: আর একটা কথা না। রেস্ট নেও..... [ রেগে গিয়ে ]
আনহা: আচ্ছা..... [ কিন্তু আমি সত্যি এতটা ভুল হয় কিভাবে আমি তো স্পষ্ট দেখলাম। কিন্তু......... ]
সে: আনহা আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আর কোনোদিন আপনাকে একা রেখে যাব না। এবার আমার থেকে আপনাকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। এমনকি আপনি নিজেও না আনহা........... [ পাগলের মত আনহার ছবির উপর স্লাইড করে নিজ মনে বকছে ]
তারপর থেকে আনহা একটা দিনও শান্তি পায় না
শুধু বার বার মনে হতে থাকে কেউ তার আশেপাশে কেউ আছে। কিন্তু কে সেটা বুঝতে পারে না। রাতে ঘুমের মাঝেও ভয়টা পেয়ে বসেছিল আনহার। কখনো কখনো আনহার মনে হতে থাকে কেউ তার কাছে এসে তাকে ছোয়ার চেষ্টা করছে। আনহা তার ছোয়াটা বূঝতে পারে। কারন তার ছোয়ার প্রতিটি চিহ্ন আনহার শরীরে দৃশ্যমান। কিন্তু এটা ও কাউকে বলতেও পারে না। কি বলবে আনহা.......
এভাবেই একরকম ভয়ের মধ্যে আনহার দিনগুলো পার হতে থাকে। সবকিছুতেই ভয় পেতে শুরু করে। মনের মাঝে সবসময় একটা কিছু খটখট করতে থাকে.......
আনহা একদিন ভার্রসিটির দোতলায় বেলকনির পাশে বসে ছিল মনমরা হয়ে। তখন অন্তি আসে......
অন্তি: কি মন খারাপ করে বসে আছিস কেন???
আনহা: এমনি। বল কি বলবি?? তা তুই এত খুশি কেন???
অন্তি: জানিস আমাদের ভার্রসিটিতে এবার 1st year এ একটা ছেলে ভর্তি হয়েছে। দেখতে অসম্ভব কিউট আর হান্ডস্যাম। ইসস বয়সে যদি আরেকটু বড় হত তাহলে নির্ঘাত প্রেম করতাম।
আনহা: 1st year তাহলে কি বড় হবে নাকি তোর চেয়ে।
অন্তি: তেমনটা নয়। আসলে ও অনেক ছোট এবার কলেজ স্টুডেন্ট হওয়ার কথা। কিন্তু কিভাবে যে ভার্রসিটিতে ভর্তি হল কে জানে.....
আনহা: কত বছর.....
অন্তি: ওই আমাদের ইহানের বয়সী। হবে ১৬ কি ১৭.......
আনহা: এইটা কিভাবে সম্ভব.......
অন্তি: সেটা জানি না। তবে ছেলেটাকে দুর থেকে কিছুটা চেনা চেনা লাগল কিন্তু বুঝতে পারলাম না। আচ্ছা ও কি ইহান হতে পারে.....
আনহা: পাগল তুই ইহান এবার কলেজে ও কিভাবে.....
অন্তি: তাও ঠিক। তবে হলে ভালো হত.......
আনহা: হুমম বেচারা দু বছর আগেই আসবে না।
তখনি আনহা মাঠে কাউকে দেখতে পায়। খুব চেনা মনে হচ্ছে আনহার কাছে। আনহা কিছু না ভেবেই তাকে দেখে উঠে দারায়........
অন্তি: কিহল......
আনহা:...............
অন্তি:অন্তি......................
আনহা: আমি আসছি...... [ বলেই অন্তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই একটা দৌড় দেয় ]
অন্তি: অর্নি....... [ কিন্তু কে শোনে কার কথা ]
[আনহা এক দৌড়ে ভার্রসিটির মাঠে চলে সেই নতুন ছেলেটার সামনে গিয়ে হাটুতে দুহাত দিয়ে হাপাতে থাকে...... তারপর ও সেই ছেলেটার দিকে তাকায়...........
ছেলেটার চেহারা দেখতেই আনহার চোখে মুখে আলাদা একটা হাসির ঝলক ফুটে উঠে... সেই ছোট ছোট দুইটা চোখ, খারা নাক আর স্থীর চাওনী সবটা আগের মতই আছে। আনহার দিকে মায়াভরা চোখের চাহনি আজও একরকম আছে। চেহারা গড়নটা পরিবর্তন হলেও মায়াভরা চোখের চাওনিতে আনহার চিনতে কষ্ট হলো না তার সামনে ইহান দাড়িয়ে আছে..........
আনহা: ইহান........ [ খুশিতে আত্নহারা হয়ে ]
ইহান:...........
ইহান আনহার সামনে দারিয়ে। আজ ৫ বছরের প্রতিক্ষার ফল পেল ওরা দুজন। ইহান আর আগের মত নেই। ইহান আগে আনহার কোমরে আসত না সেই ইহানের বুক বরাবর পরে আনহা। দেখতে আগের মত শুটকো নেই। একদম হিরোদের মত বডি আর মেয়েদের মত দুধফর্সা গায়ের বর্ন.... কিন্তু সিল্কি চুল আজও ইহানের চোখ গুলো ডেকে দিচ্ছি। চেহারার বাচ্চার আদোলের ছাপ....... কালো একটা জিন্স আর শার্ট পরে কাধে ব্যাগ নিয়ে attitude নিয়ে দারিয়ে আছে.....মুখে বয়সের কারনে পিচ্চির আদোলটা না গেলেও মুখে attitude এর কোনো কমতি নেই.......
আনহা: এভাবে তাকিয়ে আছিস যেন চিনতে পারছিস না।
ইহান:............
আনহা: আরে আমি আনহা। তোর সেই আনহা.....
ইহান: Excuse me...... মানে......[ বেশ অবাক হয়ে ]
ইহানের এমন কথা শুনে বাকি সবাই হেশে দেয়। আনহা এমনটা আশা করেনি।
আনহা: তুই আমাকে চিনতে পারছিস না। আমি আনহা যার সাথে তুই স্কুলে ছিলি। আমাকে আপনি বলে ডাকতি.... [ কিছুটা আশা নিয়ে ]
ইহান: আপনি আমার বয়সে বড় তাই আপনাকে আপনি বলেই ডাকব......
আনহা: ইহান..... [ ওর চোখে পানি ] আমি সেই আপনি নয়। আমি তোকে পরিয়েছি তোর মনে নেই। আমি তোকে পাও ভাজি বানিয়ে দিতাম।
ইহান:.….....
আনহা: ইহান...... [ কান্না করে ]
অন্তি: ছাড়ত। হয়ত তোর কথা ওর মনে নেই। আর আমাদের ইহান কিভাবে হবে তুই বল। ও ভার্রসিটিতে পরে আর আমাদের ইহান এবার কলেজে....
আনহা: অন্তি তুই বিশ্বাস কর ওই ইহান। আমাকে চিনতে পারছে না হয়ত অনেকদিন পর দেখেছে.....
অন্তি: আজব তো আনহা তুই চল....
আনহা: ইহান তুই সত্যি আমাকে চিনিস না। [ ইহানের হাত ধরে ]
ইহান আনহার হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। একজন অচেনার মতই বলে......
ইহান: সরি.... আমি অলরেডি লেট। I have to go.... Excuse me..... [ বলে চলে গেল কিছুদুর গিয়ে পিছনে ফিরে আবার আনহার দিকে তাকায় তারপর চলে যায়।। ]
আনহাকে অন্তি টানছে.....
অন্তি: আনহা ও আমাদের ইহান নয়...
আনহা: আমি ইহানকে চিনতে ভুল করেনি। ওই আমার পিচ্চিটা....
অন্তি: দেখ হয়তো চিনতে পারছে না। নয়ত না চেনার ভান করছে। বড়লোকের ছেলে বলে কথা এখন কি তোকে মনে করে লাভ আছে....
আনহা: কিন্তু....
অন্তি: কোনো কিন্তু নয় চল তুই....... [ তারপর আনহাকে টেনে নিয়ে গেল ]
অন্তি: আচ্ছা হিসেব অনুযায়ী ইহানের কলেজে থাকার কথা কিন্তু ও ভার্রসিটিতে কিভাবে...
আনহা: সেইটাই তো বুঝতে পারছি না। আর আমাকে ও চিনল না এটা কিভাবে হয়।
অন্তি: জানিনা বাদ দে.... তোর ইহান দেখার স্বাদ মিটেছে তাই অনেক এবার থেকে আর জালাবি না।
আনহা:..... [ আর কাকে নিয়ে জালাবো সেই তো চেনেই না। ]
ওদের কথা দুরে দারিয়ে শুনছিল ইহান.....
ইহান: থাকতাম আনহা এখন আমি কলেজে থাকতাম। কিন্তু আপনি তা হতে কই দিলেন। আজ আপনার সাথে থাকার তাগিদে আমি আজ ভার্রসিটিতে..... সেদিন যখন আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলেন কি বলেছিলেন আনহা হয়ত আপনার মনে নেই কিন্তু আমার আছে......
সেদিন যখন আনহা চলে যাচ্ছিল.......
ইহান: আপনি আমার সাথে থেকে যান না আনহা। আমার বাড়িতে থাকবেন আপনি [ কাদতে কাদতে ]
আনহা: তা নয় না পিচ্চি আমাকে যেতে হবে।
ইহান: তাহলে আমি আপনার সাথে যাব আপনার সাথে একস্কুলে এক সাথে পরব....
আনহা: তুই আমার চেয়ে অনেক ছোট ক্লাসে পরিস। আর তাই তুই চাইলেও আমার সাথে পরতে পারবি না। পিচ্চি।
ইহান: আমি আপনার ক্লাসে ভর্তি হব।
আনহা: পাগল ছেলে একটা তা হয় নাকি..
ইহান: কেন.....
আনহা: কারন তুই আমার ৫ ক্লাস নিচে।
ইহান: আমি ঠিক আপনার ক্লাসে যেতে পারব আনহা খুব পড়ব তাও যাবেন না। [ কান্না করতে করতে ]
আনহা: ভালো থাকিস ইহান...... [ ইহানকে জড়িয়ে ধরে........ বাকিটা আপনাদের জানা ]
ভাবনা থেকে ফিরে আসে ইহান........
[ আনহা যাওয়ার পর ইহান একদম ভেঙে ফেলে। ওর সব কিছু থেকে মন উঠে যায়। দিনদিন শুধু রাগী জিদ্দি আর একগুয়ে হয়ে উঠেছিল। কিছুতেই ইহানকে সামলানো যায়নি। এমন করার জন্য ইহানের 5 এর রেজাল্ট খারাপ হয়। কোনোরকম পাস করে। কিন্তু পরে ইহান জেদ করে ওকে ৮ম ক্লাসে ভর্তি করতে। ওর বাবা আর কোনো উপায় পায় না। তাই বাধ্য হয়েই ৮ম ক্লাসে ভর্তি করে। কারন ওর বাবা ওই স্কুলের ট্রাস্টি তাই সমস্যা হয়নি। যদিও ওনারা এটা ভেবেছিল ইহান খারাপ করবে আর এক ক্লাসে রেখে দিবে কিন্তু হয় তার বিপরীত খুব ভালো রেজাল্ট করে ও। ওর একটাই কথা ছিল আনহার ক্লাসে ওকে উঠতেই হবে। আর এজন্য ওর ২ বছর আগেই মাস্টার্স কমপ্লিট হয় ]
ইহান: আপনাকে ধরার তাগিদ আমার এতটাই ছিল আমি ২ বছর বাদ দিয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু আপনাকে ধরতে পারেনি। কিন্তু আমি হার মানেনি আনহা। ৫ বছরের ব্যাবধান আজ ৩ বছরে পরিনত হয়েছে। আর আপনি ও আজ ঠিক আমার কাছে আনহা...... দেখুন আমি আজ আমার আপনিকে পেয়েছি..........