সিঁদুর রাঙা মেঘ - পর্ব ০২ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


আছরের নামাজ আদায় করে কুহু এসে দাঁড়ালো ছাদের কোনে।  মাথার ওড়নাটি এখনো পেঁচানো। বাসায় মেহমানদের আনাগোনা শুরু হয়েছে এরি মধ্যে।  তাদের সোরগোল কানে আসচ্ছে।  বুকের মাঝে চিন চিন ব্যাথাটা আরো আকড়ে ধরেছে। এতটা যে শ্বাস আটকে আসছে। তাই কোনো রকম নামাজটা পড়েই ছাদে এসে দাঁড়ায়।  বরাবরই এ বাড়ির ছাদটি তার খুব পছন্দের।তার একটি বিশেষ কারণ এ ছাদ জুড়ে আছে ইউসুফ আর কুহু কত শত স্মৃতি।

দূরের আকাশে আজো সেই সিঁদূর রাঙ্গা মেঘ করেছে তাকিয়ে রইলো সে দিকেই। আকাশের এই রূপ প্রতিবারেই মায়াবী লাগে কুহুর। ইউসুফের  সাথে মিষ্টি স্মৃতি ভেসে উঠে চোখের সামনে। ঠিক সেদিনও করেছিলো। সেদিন কুহু ইউসুফের উপর খুব রেগে ছিল নতুন কলেজে ভর্তি হওয়ায় কিছু ফ্রেন্ড জুটে ছিল তার। তার মাঝে একটি ছেলেও ছিল সায়ান নামে। ইউসুফ তাকে মোটেও পছন্দ করতো না। কলেজ থেকে কুহুকে আনতে গিয়ে সেদিন ইউসুফের চোখ ধরা পড়ে যায় কুহু হেসে হেসে ছেলেটির সাথে কথা বলছে। ইউসুফের রাগ প্রতিবারি ছিলো আকাশ ছুঁয়া। হুট হাট রেগে যেত।কুহুর সাথে কোনো ছেলেকে দেখলে যেন কথাই নেই। সেদিনি ঠিক তাই হলো হুট হাটে রেগে কুহুকে সবার সামনে ধমকে উঠেছিল। কুহু তখন নতুন ফ্রেন্ডসদের সামনে খুব লজ্জায় পায়। এত লজ্জা যে ইউসুফের উপর বড্ড অভিমান করে বসে। ঠিক তার রাগ ভাঙ্গাতেই কুহুকে  ইউসুফ ঠিক এ সময় ছাদে আসতে বলে। কুহু যখন ছাদে পা রাখে ইউসুফ তার মাথার উপর ফুলের বর্ষণ করে। কুহু খুশি হলেও মুহূর্তে মুখ ফ্যাকাসে করে নেমে যেতে নিলো। সে মূলত এসেছে মিশুর কথায়। মিশু বলেছিল ছাদ যেতে সে কফি নিয়ে আসছে  দু বোন মিলে জমিয়ে আড্ডা দিবে। কিন্তু হলো উল্টো এসে দেখতে পেল ইউসুফ দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে তার দিক তাকিয়ে। তার বা হাতে গিটার। কুহু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো পায়ে হাটা ধরলো। তখনি ইউসুফ গিটারে সুর তুলল,,

---" শুধু তোমায় ঘিরে,
শুধু তোমায় ঘিরে,
সিঁদুর রাঙা মেঘ করেছে দূরে
শুধু তোমার ছায়া মেঘের উপর
ঢেউ খেলে রোদ্দুরে।

অভিমানের আড়ি কেটে,
কোথায় তুমি যাচ্ছ হেঁটে
হৃদয়ের চিরকুটে তুমি খুব ডানপিটে।
আমি তোমার মান ভাঙাবো,
ভালোবাসার চোখ রাঙাবো,
মিষ্টি কোনো গান শোনাবো
গলার নরম স্বরে।

শুধু তোমায় ঘিরে,
শুধু তোমায় ঘিরে,
সিঁদুর রাঙা মেঘ করেছে দূরে
শুধু তোমার ছায়া মেঘের উপর
ঢেউ খেলে রোদ্দুরে।

পুরোনো স্মৃতি মনে পড়তেই হাসলো কুহু। কত সুন্দর না কেঁটেছিল তার দিন গুলো। কুহু মাথার কাপড় খুলে ওড়না এক সাইডে করে রাখলো।বড় চুলে করা তার হাত খোপাটি খুলে গেল বেখেয়ালি । তখনি শান্ত বাতাসের ঝাপটা এসে উড়িয়ে দিল অবাধ্য চুল গুলো। কুহুর বাধতে  ইচ্ছে করলো না চুল গুলো আর। উল্টো চোখ বুজে মৃদুল বাতাস  উপভোগ করতে লাগলো।
তখনি নাকের মাঝে সিগারেটে গন্ধ আসতেই খুক খুক করে কেশে উঠলো সে। কুহু কখনই সিগারেটে গন্ধ সহ্য করতে পারে না। ছাদের মাঝে এমন বিষাক্ত গন্ধ কোথা থেকে আসচ্ছে তার উৎস খুঁজতেই পিছনে ফিরে।  উঁকি-ঝুকি দিতেই  ছাদের অন্যপাশের সেই পরিচিত   মানুষটিকে দেখে গায়ে শীতল বাতাসের স্রোত বয়ে গেল তার। পা দুটি নিশ্চল হয়ে গেল মুহূর্তেই। সেখানে দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো তার শরীর পাঁচটা বছর পর লোকটির সামনে কোন মুখে দাঁড়াবে? তা ভেবেই শরীর অসাড় হয়ে এলো।  চুল পরিমাণ নড়তেই পারলো না আর।

সিগারেটে  শেষ ফুক দিতেই কারো পায়ের শব্দ পেয়ে পিছনে ঘুরলো ইউসুফ। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা চেনা পরিচিত মুখটি দেখে ইউসুফের রাগ মাথায় চড়ে গেল। কিন্তু সে ছাদের বর্ডারে হেলে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিক। আর কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসলো। সেই বাঁকা হাসি! যে হাসির মায়ায় কুহু হাজার বার মরতে রাজি ছিল। ইউসুফের হাতে শেষ হওয়া সিগারেট টা ফেলে দ্রুত এগিয়ে গেল কুহুর দিক। কুহু ভয়ে ছাদের দরজার পাশের দেয়ালটায় লেগে দাঁড়িয়ে পড়লো। হাজার গুন বেগে হৃদপিণ্ড ছুটছে তার।

ইউসুফ কুহুর মুখোমুখি এক হাত পকেটে গুঁজে দাঁড়িয়ে। দুজনের মাঝে এক হাত ফাঁকা। কুহুর বড় বড় চোখে ইউসুফকে দেখছে। ডাগর ডাগর চোখ তার।এই চোখের মায়ায় পড়ে ধংস হয়েছে সে। ইউসুফ আবার হাসলো। শান্ত গলায় বলল,,

---" কেমন আছিস কুহু?"

ইউসুফের মুখে "কুহু নামটা শুনে বুক ফেঁটে কান্না এলো তার। ইউসুফ সব সময় কুহুকে "বাবুইপাখি " বলে ডাকতো। সে যতই রেগে থাকুক না কেন। কুহুর চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো। ইউসুফ সাথে সাথে হাত পেতে চোখের জল টুকু ধরে ফেলল। ভ্রু কুচকে বলল,,

---" অযথা চোখের জল ফালছিস কেন? আমি কি তোকে মেরেছি নাকি বকেছি? অবশ্য এটাই করতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমার চোখের সামনে যখন পড়বি, গলা টিপে মেরেই ফেলবো তোকে! কিন্তু দেখ? বালের ভাগ্য আমার। তুই সামনে তবুও করতে পাড়চ্ছি না কি করি বলতো? "

কথাটু বলেই আবার সিগারেট ধরালো ইউসুফ। এদিকে কুহুর ভয়ে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। লোকটি তাকে এতো ঘৃণা করে?যে মেরে ফেলতে চায়? কুহু নিজেকে সামলে বলল,,

---" কেমন আছেন ইউসুফ ভাইয়া?"

কুহুর কথায় যেন আহত বাঘ জেগে উঠলো। চোখ দুটি মুহূর্তেই লাল হয়ে গেল। কুহুর একদম কাছে এসে রাগে,ক্ষোভে  জলন্ত সিগারেট  ঠেসে ধরলো কুহুর গলার ঠিক নিচটায়। কুহুর মুখ দিয়ে এক চিৎকার বের হতেই ইউসুফ অন্য হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে।  রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,,

---" ঠিক এমনটাই আছি আমি। যেভাবে এখন তোর জ্বলে যাচ্ছে আমারো জলচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত। এতটা সুখে আছি। "

কুহু ইউসুফকে ধাক্কিয়ে সরাতে চাইলো।যন্ত্রণায়  কুহু কুকিয়ে উঠছে।চোখ দিয়ে অনড়গল পানি পড়তেই লাগলো। ইউসুফ এমন কিছু করবে কুহু ভাবতেই পারেনি। ইউসুফ আবার বলল,,

--" কি হলো নড়ছিস কেন? আমি ধরলেই ধাপাধাপি করতে মন চায়? তোর সেই আশিক যখন ধরতো? আরাম পেতি তাই না?"

কুহুর মুহূর্তে কান গরম হয়ে গেল লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করলো।  কুহু এবার নড়াচড়া বন্ধ করে দিল। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো ইউসুফের দিক। ইউসুফ কুহুকে ছেঁড়ে দিলো। ইউসুফ ছাঁদের বর্ডার ঘেষে  দাঁড়িয়ে পড়লো  কুহুর দিক ফিরে আবার সিগারেট ধরিয়ে কুহুকে বলে,,

---" কি অবাক হচ্ছিস? হওয়ার কথাই আমার কাছে সব কিছুর খবর আছেরে কুহু,  সব কিছুর। তোর করা বেইমানির প্রতিটা হিসাবে টুকে রেখেছি। সময় মতো সব সুধে আসলে ফিরত দিবো বলে। তুই যে এতটা ক্যারেক্টার লেস হয়ে যাবি? জানাই ছিল না আমার।"

---"ইউসুফ ভাইয়া..!

সিক্ত চোখে চেঁচিয়ে উঠলো কুহুু।ইউসুফ  আবার বলল,,

---" চেঁচাচ্ছিস কেন? সত্য সব সময় তিক্ত। তার উপর দেখ তুই কতটাই না নির্লজ্জ হয়েছিস? যাকে ভালবাসলি, ভুড়ি ভুড়ি স্বপ্ন দেখালি। যখন স্বপ্ন পূরেনর সময় হলো তখন লাথি মেরে চলে গেলি। আর এখন ধেই ধেই করে বিয়ে খেতে চলে এসেছিস  তাও নিজের প্রাক্তনের?তোর মতো নির্লজ্জ আগে দেখিনি।  ছিঃ।"

কুহু এবার সেখানেই বসে পড়লো।আকাশ ভেঙ্গে পড়লো যেন তার মাথায়। এ মানুষটি তাকে ক্যারেক্টার লেস, নির্লজ্জ  উপাধি দিবে ভাবেই নি কখনো  তার এ মুহূর্তে পুড়ে যাওয়া জায়গা থেকে বেশী যন্ত্রণা দিচ্ছে ইউসুফের কথায়। কুহুতো আসতেই চায়নি ওর মা ওকে এক প্রকার জোড় করেই এনেছিল। 

ইউসুফ অনেক আগেই নিচে চলে গেছে। কুহু এখনো সেখানে বসে আছে। আকাশের সিঁদুর রাঙা মেঘের ভেলা এবার উড়ে চলে যাচ্ছে। কুহু তার লাল ফোলা চোখে তাকালো সেদিকে।  বিড়বিড় করে বলল,,

---" কি আশ্চর্য  তাই না ইউসুফ ভাই! সেদিন আপনি আমার সামান্য রাগ ভাঙ্গার জন্য কত কিছুই না করেছিলেন! নিজের কন্ঠেগান শুনিয়ে ছিলেন আর আজকে? সেই আমাকে আপনার বাবুইপাখিকে কষ্ট দিয়ে চলে গেলেন। এক ফুঁটো আফসোস দেখা গেলো না আপনার মুখে। এতটাই খারাপ হয়ে গেলাম আমি!"

কুহু এবার বিলাপ করে কাঁদতে লাগলো। চারিদিক অন্ধকার করে আসচ্ছে। পাখিরা নিজ নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু কুহু? সে কবে ফিরবে তার সঠিক নীড়ে?

—————

রাতে খাবার টেবিলে খেতে যেতে বলেছে আয়শা। কুহু তখন খাটে ঘাপটি মেরে বসে আছে।  পুড়ে যাওয়া জায়গাটায় এখনো জ্বলছে। ফোস্কা পড়ে গেছে একদম। লোকটির একটু মায়া-দয়া হলো না ওর প্রতি?

---" কুহু চল খাবি!"

কুহুর ভাবনার সুতো কাঁটে মিশুর কথায়। কুহু একবার মিশুর দিক তাকিয়ে জানালার বাহিরে তাকালো। বলল,,

---" খিদে নেই মিশুপি।"

মিশু কুহুর পাশে এসে বসে বলল,,

---" কি হয়েছে তোর! খাবি না কেন? মন খারাপ?"

কুহু মাথা নত করে বলল,,

---" মিশুপি ভাইয়ার সামনে যেতে পারবো না আমি!"

---" কেন যেতে পাড়বি না? সে দিব্যি ভালো আছে।  তুই এসেছিস যেনেও এমন ভাব করছে যেন সব স্বাভাবিক। "

কুহু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। সত্যিকি সব স্বাভাবিক? কুহু বলল,,

---" মিশুপি অনেক সময় চোখের সামনে আমাদের যা স্বাভাবিক মনে হয় তা অনেক সময় সত্যি হয় না।"

---" তুই কি দার্শনিকদের মতো কথা বলছিস বলতো? আমি বুঝতে পাড়ি না মাঝে মাঝে তোর কথা! এবার উঠ তো ক্ষুধা লাগছে আমার অনেক!"

মিশু এক প্রকার টেনে নিয়ে এলো খাবার টেবিলে কুহুকে। সেখানে আগে থেকেই সবাই বসে আছে। এমনকি কুহু বড় মামা মহসিন আর ছোট মামা তুহিন ও বসে আছে। তাদের দেখে  হাত-পা কাঁপছে কুহুর। সেদিনের পর আজ মুখোমুখি হয়েছে সে। মিশু কুহুকে তার পাশে বসালো। কুহুর ঠিক উল্টো পাশে বসে খাবার খাচ্ছে ইউসুফ। কুহু আড় চোখে তাকালো তার দিক একবার। তখন মাইশা বলল,,

---" কিরে কুহু আসার পর থেকে তোকে দেখলামি না কইছিলি? শুধু শুনেছি এসেছিস আর এখন দেখা! তা কি খবর তোর?"

কুহু চাপা হাসলো বলল,,

---" ভালো বড় মামনী।"

তখন মহসিন বলল সুমিকে উদ্দেশ্য করে,,

---" কিরে তোর বাসার সবাই কেমন আছে?"

সুমি হেসে বলল,,

--"ভালো!"

মহসিন তারপর মিশুর সাথে কথা বলল। কুহু খেয়াল করলো। মহসিন তার সাথে কথা বলছে না। অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো। তাই সে নিজেই আগ বাড়িয়ে বলল,,

--" বড় মামা কেমন আছো?"

মহসিন তার কথা যেন শুনেইনি এমন ভাব করে মাইশাকে বলল তরকারির বাটি টা দিতে। এমন ব্যবহারে কুহুর খুব খারাপ লাগলো। সকলেই তা বুঝতে পেরেও আর কিছু বলল না। নিরবে খাবার খেতে লাগলো। 

---" হাই এভরিওয়ান।"

একটি মেয়ের কন্ঠে সবাই সেদিকে তাকায়। মেয়েটিকে দেখেই বাসার সবাই উঠে গেলেন খাবার ছেড়ে তার কাছে। সুন্দর মতো গোলগাল চেহারা, কার্লি চুল, পড়নে তার সেলুয়ার সুট।  কুহু পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে ফিসফিস করে বলল মিশুকে,,

---" মিশুপি সে কে?"

মিশু ও কুহুর মতো করেই বলল,,

---" ইউসুফ ভাইয়ার হুর!"

কুহু ভ্রূচকাতেই মিশু হেসে বলল,,

---" আরে আমাদের হবু ভাবি।"

কুহুর বুকে ছ্যাঁত করে উঠলো। কুহু আবার তাকালো। মেয়েটি আসার পর থেকেই সবাই তাকে নিয়ে মেত কুহু একবার চোরা চোখে ইউসুফকে দেখলো। সে ফোন স্ত্রল করায় ব্যস্ত। কুহু খাবেরে মন দিলো। কুহুর ছোট উত্তর,,

--"ওহো!"

 খাবার শেষে উঠে গেল কুহু। নিজের রুমে এসে বেলকনিত চলে গেলো। আসার আগে ইউসুফের আর হুরের কিছু মুহূর্ত খাবার টেবিলে  দেখে এসেছে সে।বড় মামনী তখন হুরকে খাবারের জন্য ইউসুফের পাশে বসিয়ে দেয়। হুর তখন এক প্রকার জেদ ধরেই ইউসুফের মুখে খাবার পুরে দিচ্ছিলো আর ইউসুফ তা সদরে গ্রহন করছে। আর এসব দেখে কুহুর ভিতরে না চাইতে হিংসে হতে  লাগলো।

খাবার টেবিল গুছিয়ে রাখতে রাখতে বলল সুমি,,

--" বড় ভাবী মেয়েটি ভাড়ী মিষ্টি দেখতে। কোথায় পেলেন এই হিরাকে? "

মাইশা হাসলো,,

---" আমার ছেলে কম কিসে? রাজপুত্র সে!আমাদের এলাকার কমিশনারের এক মাত্র মেয়ে হুর। গুনে,  রূপে সব দিক থেকে পারফেক্ট ইউসুফের জন্য। ইউসুফ তো নাকচ  করে ছিল কত এ সম্বন্ধে।  কিছুতেই বিয়ে করবে না। মেয়ে তো পাগল প্রায়। বিয়ে করবেই তো ইউসুফকেই। জহির সাহেব মেয়ের পাগলামো সহ্য করতে না পেরে নিজেই দু তিন বার এসে হাজির। এত অনুনয়-বিনয় করলো আর না করতে পাড়লো না ইউসুফের বাবা।পরে  ওর বাবাই বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করিয়েছে ইউসুফকে।"

---" আমাদের ইউসুফতো লক্ষে এক সবাই চাইবেই তার মতো এমন ছেলে মেয়ের জন্য।"

আয়শার কথায় মাইশা খানিকটা খোঁচা মেরে বলল,,

---" ঘরের মানুষ আমার ছেলেকে চিন্তে ভুল করেছে ঠিকিই! বাহিরের মানুষ ঠিকি চিনেছে!"

সুমি খোঁচা ধরতে পারলো। আর কিছু বলতেই পাড়লো না। শুধু মেয়ের উপর রাগ উঠছে তার।  এ মুহূর্ত  জুঁতা দিয়ে পিটাতে ইচ্ছা করছে কুহুকে।

তাদের কথার মাঝেই হাজির হলো হুর " আন্টি মনি " বলেই জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী সুরে বলল,,

---" আন্টি আমি সবাইকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে যেতে চাই।  তুমি তোমার ছেলেকে বলে দাও না। সে রাজি হচ্ছে না।"

---" কেন রাজি হবে না চল দেখি ও যাবে না ওর ঘাড় যাবে।"

বলেই হেসে উঠলো তারা। সুমি পাশে দাঁড়িয়ে আফসোস করলো মনে মনে।  বলল,, আজ এ জায়গায় আমার কুহুর থাকার কথা ছিল। অথচ পোড়া কঁপাল কুহুর।

মাইশা ইউসুফের কাছে এসে বলল,,

---" কিরে তুই আমার বউমার কথা শুনছিস না কেন?"

ইউসুফ ফোনে গেইম খেলতে ব্যস্ত। বলল,,

---" কোন কথা মা?"
---"এদের আইসক্রিম খেতে নিয়ে যা।"

বিরক্ত হলো ইউসুফ। বলল,,

---" মা শীত পড়েছে বাহিরে। তার উপর এতো ন্যাকা আবদার আমি মানতে পাড়ছি না। ওদের মন চাইছে ড্রাইভারকে বলো নিয়ে যাবে। আমাকে বিরক্ত করো না।" 

ইউসুফের কথা হুর মন খারাপ করে কিছুটা। প্রতিবার একটু সময় কাঁটাতে চায় কিন্তু ইউসফ তাকে এক প্রকার এড়িয়ে চলে।এর মাঝে কুহু আর মিশু নিচে নেমে এলো। ইউসুফ সেদিকে একবার তাকিয়ে কি ভেবে উঠে দাঁড়ালো।  প্যাকেটে ফোন ঢুকিয়ে বলল,,

---" গাড়িতে ওয়েট করছি পাঁচ মিনিট সময়। যে যে যাবে চলে আয়। পাঁচ মিনিট ওভার হলেই মত পাল্টে যাবে আমার।"

খুশিতে গদ গদ হয়ে গেল সবার মন। সাথে  সাথে বের হয়ে গেল তারা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন