অচেনা অতিথি - পর্ব ১৬ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


তিতির আপনি আপনার  রুমে চলে যান। এদের প্রশ্নর জবাব দেওয়ার জন্য বাতাসি তো রয়েছে।"

তিতির মাথা নিচু করে চলে গেল সাথে মাহাদও নিজের রুমে চলে গেল।

ঃ- " আম্মা এবার বলেন তো! আপনারা কই গিয়েছিলেন?"

ঃ-" রুপালীর কথা শুনে চটে যায় বাতাসি। আমি কই যাই না যাই তোরে সেটা বলুন লাগবো! তুই কে যে তোকে বলতে হবে? বাতাসি রাগের চোটে গটগট করে ওর নিজের রুমে চলে গেল।"

বাতাসির এমন রাগ আগে কেউ দেখেনি। তাই ভয়ে ভয়ে কেউ কিছু আর বলল না। আর বলবেই বা কি রকম করে যে মুখের সাইজ করে রাখছে সেখানে যেকোন কথা তোলাই অপরাধ হয়ে দাড়াবে।

♦♦♦♦

-" লাবীবা রুমের ভিতর ঢুকতেই কামরান বলে উঠল -" মাহাদ কি বাসায় আসছে?"

ঃ-" আমাকে কেন বলছেন! নিজের ছেলেকে গিয়ে কি জিঙ্গাসা করতে পারতেন না? ছেলে কি আমার একা  না আপনারও। নিজেদের সমস্যা নিজেরা মিটিয়ে নিতে পারেন না? সব দোষ যেন আমার। আপনার কি একবারো ফুয়াদের কথা মনে পড়েনা! মাহাদ সব সময় আমাকে দোষ দেয়। আমি কি করেছি বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠে লাবীবা।"

ঃ-" কানের কাছে এসে চিৎকার করবা না। যে যেমন সে তেমন সাজা পাইছে। বাসার মানসম্মানের যে চিন্তা করেনা তার জন্য কোন চিন্তা আমি করিনা। আমি ঘুমাবো বলে কামরান পাশ ফিরে সুয়ে পড়ল।"

ঃ-" ভাল করে ঘুমান। আপনাকে তো আর ছেলের কাছে গিয়ে জবাব দিহিতা করতে হয়না তাই আপনি সুখের ঘুম ঘুমাবেন নাতো কে ঘুমাবে! আরো কয়েকটা কথা বলে লাবীবা কামরানের পাশে এসে সুয়ে পড়ল।

পরের দিন সকালবেলা চিৎকার চেঁচামিচিতে সবার  ঘুম ভেঙ্গে গেল। এত সকালে কান ফাঁটানো চিৎকারে রুম থেকে সবাই বের হতে বাধ্য হল। বাতাসির ছোট ভাই "বুদুন" আসছে বাসায়। এসেই হট্টোগল।  আমরা জানলে আমার বোনকে এই ঘরে বিয়াই দিতাম না। এই বয়সেও বোনডার কপালে দেখছি সুখ নাই। আমার বিধবা বোনটা  বৃদ্ধকালেও আর সুখ পাইলো না।"

রুপালী তরিঘড়ি করে নিচে নেমে এসে বলল-" মামা আপনি! এত সকালে এখানে? 

ঃ-" দুঃক্কে এই সকালে তোরকে বাড়িত আসতে হল। বাতাসি বুবু কই তুমি। এখনো বুদুন বাঁইচা আছে। তোমার খাওয়া পড়ার কষ্ট হবেনা। চল আমার লগে সুখের অভাব দিমুনা তোমায়।"

ঃ-" বাতাসি ডাইনিং রুমে এসেই বুদুন বলে একটা হাঁক ছাড়ে। ভাই আইছোস? আই এহানে থাকুম না। নিজের পেটে শত্রুদের রাখছি আর জন্মাইছি।  বাড়িতে শত্রুই ভইরা গেছে । আমারে এই জাহান্নাম খানা থাইকা লইয়া চল ভাই।"

ঃ-" কাল রাতে ফোনে কথা বলার পর শুধু ভোর হওয়ার  অপেক্ষায় ছিলাম। সকাল সকাল ঘাটা ধরছি বুবু । চল আমার সাথে দেহি কে আটকায়? "

নানী কই যাচ্ছেন? আর আমরা কি এমন করেছি যার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন? নিজের বাসার নামে কি সব বদনাম করছেন?(রেজওয়ান)

ঃ-" তুই চুপ থাক। তুই কি বাড়ীর খবর রাখিস? কাল আমি কত্ত হেনেস্তা হইছি তার খবর রাখোস? তোদের সগ্গলরে দেইখা লমু। চল ভাই আর এই বাড়ীতে থাকুম না।"

আম্মা এমন করছেন কেন? কি হইছে আমাকে অন্তত খুলে বলেন। আমাকে ছাড়া কাকে বলবেন।  আপনাকে কে  কি বলছে একবার শুধু বলুন আমায়; তারপর তার ব্যবস্থা আমি নিজে নিব।(কামরান)

ঃ-" তুই কি বলবি! তুই আবার ব্যাটা ছল! আমি হিজড়া জন্ম দিছি। যে নিজের পোলাগরে শাসন করার ক্ষমতা রাখেনা তারে হিজড়া ছাড়া আর কি ভাবমু।"

বাতাসির এমন কথায় কামরানের মুখ চুপসে গেল। তার মা এমন একটা কথা সবার সামনে বলবে সেটা কল্পনাতে ও আনেনি কামরান।

আম্মা আবার আপনি এমন কথা বলেন? রুমের ভিতর কথা গুলো বললে মানা যেত কিন্তু ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সামনে অন্তত আমার সম্মান রাখেন।

ঃ-" তোর আবার সম্মান আছে নাকি! তোর বড় পোলা অনেক আগেই তোর সম্মান খাইছে আর এহন সম্মানের দাপট দেখাস আমারে!"

কামরান আর কোন কথা বলেনা। সোজা মাথা নিচু করে রুমে চলে গেল। এখানে থাকলে তার মা যে আর সম্মানের ছিটাফোঁটা রাখবেনা সেটা কামরান ভাল করেই জানে। মায়ের উপর কথা বলাটা তার একদম পছন্দ না। সেটারও কারন আছে।

ঃ-" বুবু আর না অনেক হইছে এবার চল আমার বাড়ীতে। এবার বুচছি কাল ক্যান ওমন করে দুপুর রাত্তে কল দিয়া কানছো। তাই তো বলি বুবু আমার কান্দে ক্যান।"

৩ তিনটা বউরে নিয়া আপনি বুদুন দাদা এমনিতেই অস্থির হয়ে পড়েছেন।  সেখানে বাতাসির মত খান্নাস্ বোনকে নিয়ে গিয়ে নিজের বাড়ী ছাড়া হতে মন চাচ্ছে? আপনার বাসায় কি ফোন দিয়ে জানাতে হবে আপনি এখানে বাতাসিরে নিতে আসছেন?
বাসায় যান না একবার তারপর দেখেন বউগুলো আপনাকে ফ্যানের সাথে লটকাবে ।"

-" মাহাদের কথা শুনে বুদুন কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। ও ভাল করেই জানে বউরা ওকে আচ্ছামত ধোলায় দিবে। কিন্তু বড় বুবু যা রাগিত তাতে বউদের থেকেও কম নয়।"

-" ঐ তুই কি আমার সতীন আইছোস? আমার পিছে এত লাগিস ক্যান! তোর সাথে কে কথা কইতে চাইছে। তোরে কিচু কইছি?(বাতাসি)

ঃ-" বলার মত তোমার মুখ আছে নাকি! মাহাদ নিচে নেমে এসে বাতাসির কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল-" বুড়ি আমিতো ঠিকি আমার বউটারে নিয়ে রোমান্স করবো। তুমি গেলে বরং আমার জন্য ভালয় হবে। যাও যাও এখুনি ভাইয়ের সাথে বিদায় হও। ভাইয়ের বউদের হাতে ঠেঙ্গানি খাও। আমি তো বউ নিয়ে বেশ সুখেই থাকবো।"

ঃ-" খুব বাহাদুরি তাইনা! তোর সব কাজকর্মর কথা বাড়ীর সগ্গলরে কইয়া দিমু। কি পাইছোস আমায়! আমি কি জিনিস এবার তুই দেখবি।"

ঃ-" বুড়া বয়সে জেলের ভাত খাইতে না চাইলে চুপ করে থাকবা। আর বললে বলবা! আমি কি তোমাকে ভয় পাই নাকি? না তোমার ছেলেকে ভয় পাই!

 আর কি এমন হবে! না হয়  তিতিরকে নিয়ে বাসা থেকে চলে যাবো। এর তো বেশি কিছু হবেনা। তোমার যা ইচ্ছা তাই করো। 

সাবিনা এক কাপ কফি নিয়ে আমার রুমে আয়তো! সকালটাই নষ্ট করে দিয়েছে দুই ভাই-বোনে।"

মাহাদের কথায় বাতাসি চিন্তায় পড়ে গেল। মাহাদ যা ঠ্যাটার ঠাটা ; যা বলবে তাই করেও দেখাবে।এভাবে একটা পরিবার ধংস হয়ে যাবে!  এমনি একটা পোলা চলে গেছে বাড়ি ছাইড়া অন্যটা গেলে আমার কামু পাগল হইয়া যাবে। ১০টা না ৫টা না  আমার সখের একখানই পোলা।এই বাড়ী থেকে কেউ তো একজন যাবে আর সেটা হল ঐ মাইয়া। আমি যদি জানতাম তুই আমার বাড়ীতে বইসা যাবি তাহলে তোর পড়ালেখা উগারোত তুলতাম। 
বাতাসি কিছুক্ষন ভেবে বলল-" তোর বউরা শেষে তোরে যদি সত্যই বাড়ীত থাইকা খেদাই দেয়  তাইলে কারে লইয়া বাপের বাড়ীর বাহাদুরি দেখাইমু। তুই যা ভাই। অন্য কোনদিন যামু।

ঃ-"বুদুন বাতাসীর কথা শুনে খুঁশি হয়ে গেল। আচ্ছা বুবু তাহলে তুমি থাকো আমি যাই।"

ঃ-"কিছু খাইয়া যা। কত্তদিন পর আইছোস। তোরে একটু খাতির যত্ন করি।"

ঃ-" না বুবু বাড়িত ম্যালা কাম আছে। অন্যদিন আসমু আজ থাউক। বুদুন যাইতে পারলে বাঁচে। বুদুন চলে গেলে বাতাসি চুপচাপ ওর রুমে চলে গেল।

♦♦♦♦♦♦♦

-" সাবিনা কফি নিয়ে মাহাদের রুমে যেতেই দেখল ভিতর থেকে দরজা বন্ধ। আমি জানতাম ভাইজান দরজা বন্ধ করে দিবে। আগের অভ্যাস ছাড়োন যায়! সাবিনা কফি ফিরিয়ে এনে রান্না ঘরে চলে আসল। 
আচ্ছা কালতো এদের সাথে তিতির আপা ছিল তারে জিগাইলে কেমন হয়। তাড়াতাড়ি টাটকা খবর পাওয়া যাবে। যেই কথা সেই কাজ সাবিনা তিতিরের কাছে চলে গেল। "
আপা আসবো?

ঃ-" তিতির ম্যাথ করা বাদ দিয়ে সাবিনার দিকে তাকালো। কিছু বলবা সাবিনা?

ঃ-" আপা দরজা খুলে রাখছেন ক্যান! ভাইজান না আপনারে এভাবে দরজা খুলতে নিষেধ করেছিল? যাইহোক একখান কথা কইতে আইছি। কাল তো আপনি দাদীদের লগে ছিলেন। কি হইছে একটু কন না আপা........

ঃ-" তুমি এমন কেন সাবিনা!  তুমি যানোনা কারো কথা কাউকে লাগাইতে নাই?
তাছাড়া দাদীর কড়া নিষেধ তাই বলতে পারবোনা। আমি কথার খেলাপ কখনো করিনা সাবিনা। অন্য কিছু বল; আমার জানা থাকলে আমি অবশ্যই বলব।

ঃ-" না থাউক। একটা কথা বলবো?
আমার না মাহাদ ভাইরে খুব ভালা লাগে। কোন ছবির হিরোর থেকে কম না ওনি। মনডা চায় সবসময় তার সামনে ঘোড়াঘুড়ি করি।
 আমি গরীবের ঘরে জন্ম নিছি। যদি বড়লোকের বেটি হইতাম তাইলে কখনো ভাইজানরে হাত ছাড়া করতাম না। ভাইজান যাহা কইত তাহাই করতাম। সবই কপাল বলে সাবিনা তিতিরের রুম থেকে বের হয়ে গেল।"

এবার তিতির ক্ষেপে গেল মাহাদের উপর। ইচ্ছে করছে মাহাদরে বোরখা পড়াইয়া রাখতে। এত তার সাজগোজ কেন? সিম্পল ভাবে থাকলে কি হয়? সাবিনার মত মেয়ে যদি বাদ না যায় তাহলে না জানি তলে তলে আরও কি আছে আল্লাহ্ ভাল জানে।"

♦♦♦♣♦♦♦

বাসার সবাই খুব ব্যাস্ত। তিতির ভারর্সিটিতে সকালে চলে গেছে। বাসায় থাকলে অন্তত রাতিশারে কোলে নিয়ে থাকতো। মৌয়ের এত কাজ করতে হিমসিম উঠে যাচ্ছে। রেজওয়ান হঠাৎ করেই এসে বলেছে আজ রুমকিকে কয়েকজন দেখতে আসবে। তারপর থেকে কাজ বেড়ে গেছে।

এদিকে রুমকি চোখের পানি নাকের পানি এক করে দিয়েছে। কারো সাথে কথা বলছেনা শুধু কেঁদেই চলছে। রুপালী মেয়েকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে কিন্তু মেয়ে কোন মতেই স্বাভাবিক হচ্ছেনা। এমন সময় বাতাসি এসে বলল কিরে এতে কাঁন্দনের কি আছে। মেয়ে হয়ে জন্মাইছোস বিয়া তো করতেই হইবো।"

ঃ-"মা তোমার এই খাট্টাস্ মার্কা মাকে আমার চোখের সামনে থেকে সরাবে! না হলে কিন্তু তাকে খুন করে ফেলবো।  সব তার জন্য হয়েছে বলেই কাঁদতে লাগল রুমকি।

ঃ-"মৌ তোমার ননদরে এই বাড়ীর খাবার জন্মের মত করে খাওয়াউ। শশুরের বাড়িত পাবে কিনা জানিনা।  মুরুব্বী দের সম্মান কিভাবে দিতে হয় সেটা তোর মেয়েরে শিখাইয়া শশুরের বাড়িতে পাঠা রুপালী। তানাহলে মাইয়ার শশুর বাড়ীর লোকের কাছে গালিগালাজ খাবি। বাতাসি রুম থেকে বের হয়ে যায়।"

ঃ-"তোর নানীর কথায় মন খারাপ করিস না। আজকে মাহাদকে অবদি ছেড়ে কথা বলেনি। তাহলে দেখ আমাদের ছেড়ে দিবে? (রুপালী) 

ঃ-"মা তুমিও বুঝলানা আমায়! আমি যখন থাকবোনা তখন বুঝবা। (রুমকি)

ঃ-"গাঞ্জাখোর মেয়ে একটা। তোরে আবার বোঝার কি আছে!  সেদিন ওত কিছু ঘটে গেল তবুও নেশা করা ছাড়লি না। তুই আর কতই মূল্যবান সেটা আমার জানা হয়ে গেছে। তোর বিয়ের ব্যাপারে আমিও একধাঁপ এগিয়ে দিছি। এখন যদি শশুরের বাসায় গিয়ে নিজেকে শুধরাস। (মৌ)

রিতিমত রুমকিকে দেখতে ৬ জন মানুষ চলে আসল। তার ভিতর দুইটা মেয়েও এসেছিল। পাত্রীকে তাদের খুব পছন্দ হয়েছে। 
রেজওয়ান ও এই সুযোগটা হাতছাড়া করেনি। একেবারে বিয়ের প্রস্তাব রাখে। কারন রুমকির নেশা করাটা এর মধ্য একদিন মৌ ওকে নিজের চোখে দেখিয়েছে। পাত্র অনেক ভাল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। খুব ভাল পজিশনে আছে। এর থেকে বেশি আর কি চাই। কামরানের সাথে আলোচনা করে সেদিনই বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয় রুমকি আর সৌরভকে। 
বিয়ের সব কাজ কমপ্লিট করে একটা দিন দেওয়া হল। সেদিন মূলত বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে। বরপক্ষ সেদিনের মত বিদায় হল।

সারাটি দিন এমন ভাবেই কাটলো। রুমকি তো এক কান্নায় আছে। তুমি ভাইয়া হয়ে আমার জিবন নষ্ট করলে! তোমাকে আমি কোনদিনও ক্ষমা করবো না বলে নানা হাবিজাবী কথা বলে কাঁদতে লাগল রুমকি।

♦♦♦♦♦♦♦♦

-"মাহাদ রাত ১০ টার দিকে বাসায় এসে শুনলো রুমকির বিয়ে হয়ে গেছে। কিছুটা খারাপ লাগল। মনে হল ওর শিক্ষা জিবন এখানেই ইতি টানতে যাচ্ছে যেখানে মাহাদ কিছুটা হলেও দায়ী। ঐদিন সবাইকে ওভাবে না জানালেও পারতো।
মাহাদ ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে যেতে যেতে ১১ টা বাজল। খাবার মুখে তুলতেই লাবীবা বলল -" রুমকিকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে আগামী সোমবারে। ফুয়াদকে আসতে বললে কি ও আসবে?"

ঃ-"মুখের খাবারটা আবার প্লেটে রেখে মাহাদ বলল-" এর মধ্য আমাকে একদম টানবেনা। ওদের আনতে ইচ্ছা হলে তুমি কল দিবা না হয় তোমার বরকে নিমন্ত্রণ করতে বলবা। আমি এর ভিতর নাই।"

ঃ-"তোকে দেখছি কোন কথা বললেই তোর ঝাল লেগে যায়। ভাল করে বললেও দোষ। এমন করিস কেন?"

ঃ-" মা আমার মনে হয় বৃদ্ধ বয়সে তুমি তোমার শাশুড়ীর হাত পাবা। হয়ত তার থেকেও বেশি। বাতাসি তবুও তোমাকে ভালবাসে কিন্তু নিসা! ওকে তো তুমি দু'চোখে ও দেখতে পারোনা । তুমিতো বাতাসির থেকেও একধাপ এগিয়ে। কোন দিকে কম না।
মাহাদ খাবার কমপ্লিট করে ওর রুমে চলে যেতেই একবার তিতিরের রুমের দিকে চাইল। দরজা বন্ধ। পুরোটা দিনেও তিতিরকে দেখা হয়নি। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে আসল।  তারপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে ব্যালকুনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরাল। রকিং চেয়ারে বসে সিগারেটটা কমপ্লিট করে রুমে এসে লাইট অফ করে দিয়ে সুয়ে পড়ল।"

-"তিতির সেই কখন থেকে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে আছে। মশার কামড়ে হাত-পা ফুলে তুলছে। মাহাদ খাবার খেতে যখন গিয়েছিল তখন সেই ফাঁকে তিতির রুমে ঢুকে পড়েছিল। কাজটা অনেক কষ্টে করেছে। শুধু মাহাদের ঘুমানোর অপেক্ষায়। এতেক্ষনে নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়ছে। যদি সেইদিনের মত থাপ্পড় মারে সেই ভয়ে মাহাদের ঘুমের জন্য অপেক্ষা করছে তিতির।"

-"তিতির কতক্ষণ  আর মশার কামড় খাবা সোনা♥!  পর্দার আড়াল থেকে বের হয়ে আসো। অনেক কষ্ট করছো আর করতে হবেনা।"

-"মাহাদের কথা শুনে তিতির থতমত খেয়ে গেল। আমি এখানে দাড়িয়ে আছি উনি জানলো কি করে?"

-"এখনো ঘুমাইনি তিতির। ঘুমিয়ে যদি পড়ি আর সেই ঘুম যদি তুমি ভেঙ্গে দিছ তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে। চুপচাপ করে আমার কাছে চলে আসো।"

-"তিতির পর্দার আড়াল থেকে গুটিগুটি পায়ে মাহাদের কাছে এসে বসতেই মাহাদ উঠে বসল।তারপর লাইটা জ্বালিয়ে তিতিরের দিকে তাকালো। কয়টা মশার কামড় খাইছো বউ?????
দেখি তোমার পা! কোন মশার এতবড় সাহস হইলো আমার বউকে কামড় দেওয়ার!

-" আমি এখানে আসছি আপনি কিভাবে জানলেন?"

-" ম্যাজিক......নিজের প্রিয় জিনিসটার উপর একটু কড়াই নজরদারী করি আমি। 
কিন্তু তুমি এখানে কেন আসছো? নিষেধ করছিনা এখানে আসতে!"

-" ভাল লাগছিলনা তাই আসছি বলে সোজা মাহাদের বুকের মধ্য ঢুকল তিতির। থাপ্পড় খাই আর যাই খাইনা পরে সেটা দেখা যাবে। সুযোগ বুঝে কাজটা লুফে নিল তিতির।"

ঃ-"মাহাদ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করল। তারপর চোখ খুলে বলল -" ঘুমাবো এখন তোমার রুমে চলে যাও।"

ঃ-" সবসময় দুরে দুরে থাকেন কেন! থাকিনা একটুখানি এভাবে। জাষ্ট কয়েকমিনিট। তারপর না হয় আমি নিজেই চলে যাবো।"

ঃ-"মাহাদ চট করে তিতিরের পা ছুতেই তিতির দ্রুত মাহাদের বুক থেকে সরে গিয়ে বলল -"কি করছেন! পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?"

ঃ-"মশার কামড় গুনতে চাইছিলাম। কয়টা কিসি দিছে আমার বউটারে। তিতির পা টা এগিয়ে দাও তো?"

ঃ-"তিতির দুইটা পা আরো গুটিয়ে নিল। আচ্ছা আপনি কি খুব বড় ধরনের মাস্তান বা নেতা-টেতা টাইপের কেউ! কথাটা বলেই  মাহাদের দিকে তাকিয়ে মুখ চুপসে গেল তিতিরের। না মানে সেদিন কয়েকটা ছেলে আমাকে দাড় করিয়ে কিছু বাজে কথা বলছিল হঠাৎ ওদের কাছে একটা ভাইয়া এসে বলল-" এই তোরা কি করছিস! এই আপুটাকে মাহাদ ভাইয়ার সাথে কলেজে দেখেছি।"

শুধু এতটুকু বলাতে তারা স্যরি বলেই চলে গেছে। তাই ভাবলাম আপনি হয়ত অমন ধরনের কিছু একটা হবেন।"

ঃ-"নেতা টাইপের মানুষকে কি তোমার খুব ভাল লাগে তিতির? যদি না ভাল লাগে তাহলেও তোমাকে ভাল লাগাতে হবে।  কারন আমি শুধু নেতাই না সাথে গুন্ডাও। মানুষকে শায়েস্তা কি করে করতে হয় সেটা আমার চেয়ে ভাল খুব কম মানুষই জানে।
মৌয়ের বাবার কথা মনে আছে তিতির! যে তোমার সাথে অসভ্যতামি করেছিল। জানো তার সাথে আমি কি করেছি?

ঃ-"ওসমানের কথা শুনতেই তিতির একটু নড়ে উঠল। সেদিনের বিভৎস্য ব্যাপারটা তিতির কিছুতেই ভুলতে পারেনা। ভ্যাগ্গিস মৌতুসি ছিল না হলে কি যে হত আল্লাহ্ ভাল যানে।"

ঃ-"মাহাদ দু'হাতে ভর দিয়ে তিতিরে দিকে আরও এগিয়ে গিয়ে  ওর ঠোট দুটি স্পর্শ করেই বলল ও আমার তিতিরের গায়ে হাত দিছে ওকে কি আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব! ওর যতটা সখ উঠেছিল ততটাই ওর সখ মিটিয়ে দিয়েছি। কোন কথা না সোজা সমকামীদের হাতে তুলে দিছি ওরে। মি. ওসমানকে একবার জিঙ্গাসা কইরো মাহাদ কি জিনিস বাকিটা ও নিজেই ওর আচরনে দেখিয়ে দিবে।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন