আমার অন্তরালে তুমি - পর্ব ০৫ - সিজন ২ - ফারহানা ছবি - ধারাবাহিক গল্প


বর্ণ ভিতরে ঢুকতে না পেরে গাড়ি নিয়ে ফিরে যায় বর্ণ ৷ এলোমেলো পা ফেলে চৌধুরী ম্যানশনে ঢুকতে বর্ণ থমকে যায় মিসেস বর্ণালির চিন্তিত মুখ দেখে৷  মিসেস বর্ণালি বর্ণের রক্তিম চোখ , এলোমেলো চুল ,শুকনো মুখ দেখে তার বুকের ভেতর যেন মোচর দিয়ে উলটো৷ 

"" বর্ণ তুই ঠিক আছিস? তোর এই অবস্তা কেন ?""

"" মম আ'ম ওকে বাট তোমার চোখ মুখের এই অবস্তা কেন?""

"" তোর ড্যাডের আবার শরীল খারাপ করেছে৷ ডক্টর চেকয়াপ করছে ৷""

"" ওয়াট! আমি এখুনি ড্যাড কে দেখে আসছি মম""

"" নাহ এখন তোকে ওখানে যেতে হবে না তুই রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আয় ৷""

মিসেস বর্ণালির জোড়া জুড়িতে বর্ণ রুমে চলে যায়৷ শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে তার নিচে দারিয়ে আছে বর্ণ ৷ বর্ণ তার মনে জমে থাকা প্রশ্ন গুলোর জবাব খুজে পাচ্ছে না ৷ দোটানায় ভুগছে ৷ 

দের ঘন্টা ধরে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখে বন্যা খাবার নিয়ে বসে আছে৷ 

"" ভাইয়া ডিনার করে নে ৷ অনেক রাত হলো ..."

"" ড্যাড কে দেখে আসছি দেন ডিনার ..."

"" ড্যাড ঘুমিয়ে পরেছে ভাই এখন গিয়ে কি করবি ? তার চেয়ে বরং সকালে দেখা করে নিস""

বর্ণ কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে যায়৷ বন্যা তার ভাইয়ের শুকনো মুখটা দেখে ভিষন কষ্ট হচ্ছে ৷ কিন্তু ও নিরপায় , চেয়েও সত্যিটা বলতে পারছে না তার ভাই কে .... 

দুপুর থেকে না খাওয়া ৷ খাওয়ার কথা শুনে বর্ণের পেটের ভিতর সব যেন ঘুর পাক খাচ্ছে ৷ ধিরে ধিরে খাওয়া শুরু করলো ৷ বর্ণের খাওয়া শেষ হতে  বন্যা ট্রে তে প্লেট গুলো নিয়ে বর্ণ কে বলে " ভাই তুই তোর প্রশ্নের উওর পাওয়ার জন্য যে ভাবে আগাচ্ছিস ঠিক সে ভাবে এগিয়ে যা ৷ আমি আছি তোর সাথে , তোকে সাহায্য করতে ৷ আমার বেস্টফ্রেন্ড কে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে আনতে তোকে আমি সাহায্য করবো ৷""

"" বেস্টফ্রেন্ড হাহ! তুই জানিস না বোন ছন্দের আসল রুপ টা ৷ সেটা কতোটা ভয়াবহ৷""

"" আমি সবটা জানি ভাই ৷ বরং তুই অনেক কিছু জানিস না ৷ আর সে না জানা গুলো তোকে খুজে বের করতে হবে৷ আর একটা কথা এভাবে ওর বাড়ির গেটে দারিয়ে থাকলে ওর মন গলবে না ৷ বুদ্ধি খাটাও ভাই ৷ আমার সেই আগের ইন্টিলিজেন্ট ভাই হয়ে যাও ৷ আমার এই মজনু দাস ভাই চাই না ৷ ..""

কথা গুলো এক নাগালে বলে চলে গেল বন্যা ... বর্ণ তার বোনের কথা গুলো প্রথম থেকে ভাবতে লাগলো ... " হুম বন্যা সত্যি বলেছে এভাবে চলতে থাকলে আমি আসল সত্যিটা কোন ভাবে জানতে পারবো না ৷ কাল আমায় কিছু একটা করতে হবে ৷ আই এম শিওর বন্যা সবটা জানে তবে আমাকে নিজ থেকে জানাবে না ৷ আমাকে খুজে বের করতে হবে৷ ..." 

বর্ণ বিছানায় শরীল এলিয়ে দিতে ক্লান্ত শরীল নিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল বর্ণ৷ রাত তিনটে ঘড়ির কাটা টিক টিক করে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে ৷ একজন ছায়া মানবী অন্ধকার রুমে ঢুকে বর্ণের মাথার কাছে এসে বসে ৷ বর্ণের চুলে বিলি কেটে কপালে চুম্বন দিয়ে এসির পাওয়ার কমিয়ে ধিরে ধিরে রুম থেকে বের হয়ে যায়৷ 

_______________________________________________________________

ভাঙা হাত নিয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে হাজির রাহুল ৷ রাহুল কে দেখে ছন্দের মুখের ভাব ভঙ্গি পাল্টালো না ৷ সে তার মন দিয়ে ব্রেডে জেলি লাগিয়ে খাচ্ছে ৷ ছন্দ কে এতোটা শান্ত থাকতে দেখে Md ভিতরে ভিতরে ভিষন ভয় পাচ্ছে ৷ অনিল চুপ করে পাশে দারিয়ে আছে৷ রুনা কাব্য কায়রা তারাও চুপ চাপ খাচ্ছে ৷ কিরন কে এক সারবেন্ট সামলাচ্ছে ৷ ছন্দের খাওয়া শেষ হতে টিসু দিয়ে মুখ মুছে৷ কাব্যের দিকে তাকিয়ে ছন্দ বললো" ভাইয়া আমি কোন ঝামেলা চাই না তাই সরা সরি বলছি এখানে তোমাদের জীবনের রিক্স আছে তাই তোমরা বাড়ি থেকে বের হবে না৷ কোন কিছুর প্রয়োজন হলে সারবেন্টদের বলবে ৷ ""

"" কিন্তু এভাবে সারাদিন বাড়িতে কি করে থাকবো?""

"" তাহলে আজ-ই লন্ডন ব্যাক করবে তোমরা নাও চয়েজ ইট'স ইউর'স..""

"" ওকে ফাইন আমি বাড়ির বাইরে যাবো না ৷ ""

"" বাড়িতে বসে থাকবে এমন নয় তোমার রুমে কিছু ফাইল আছে ওগুলো চেক করে বিকেলের মধ্যে আমাকে দিবে ওকে?""

"" হুম ..."" 

ছন্দ চেয়ার ছেড়ে উঠে কিরন কে আদর করে বেরিয়ে যায় ৷ গাড়ি নিয়ে বের হতে ছন্দ খেয়াল করে ব্যাক মিররে কেউ একজন দুরে দারিয়ে নজর রাখছে ৷ ছন্দ বাকা হেসে সানগ্লাস টা চোখে পড়ে নিয়ে বলে....

"" মিস্টার আয়মান চৌধুরী কখনো সুদরাবে না ৷ .."" 

""  ম্যাম কিছু বললেন?""(আখি)

"" নো , আখি আজ মিস্টার শেক্ষরের সাথে মিটিং ফিক্সড করো ৷ ""

"" ওকে ম্যাম.. ম্যাম একটা কথা ছিলো.."

"" হুম কন্টিনিউ ...."

"" ম্যাম মিস্টার আয়মান চৌধুরী তার বিজনেস পাটনার মুইনালের একমাত্র মেয়ে সামিরার সাথে আয়ান স্যারের বিয়ে দেওয়ার প্লান করছে৷""

কথাটা শুনে ছন্দ রহস্যময় হাসি দিয়ে  গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো ৷ আখির প্রান যায় যায় অবস্তা ৷ আখি চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলতে লাগলো....

"" আল্লাহ এই বার আমায় বাচিয়ে দেও ৷ প্রমিজ করে বলছি বেচে থাকতে আমি আর কোনদিন ম্যামের গাড়িতে উঠবো না""

হঠাৎ গাড়ি থেমে যেতে আখি এক চোখ মেলে সামনে তাকিয়ে দেখে গাড়ি সত্যি থেমেছে ৷ এবার দু চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ছন্দ নেই ৷ আর গাড়িটা একটা বড় কফিশপে সামনে দার করানো ৷ ছন্দ গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে দেখে গাড়ি লক করা ৷ এর মানে তার ম্যাম তাকে গাড়িতে লক করে রেখে গেছে ৷ রাগে দুঃখে আখির কান্না পাচ্ছে ৷ 

কফিশপের ভিতরে ঢুকতে কিছুটা দুরে দেখে একটা মেয়ে বসে আছে ৷ পুরো কফিশপ ফাকা ৷ কারন পুরো কফিশপ ছন্দ বুক করেছে৷ ছন্দ মেয়েটির সামনে গিয়ে বসতে মেয়েটি চমকে ওঠে ৷ ভয়ার্থ চোখে ছন্দের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ ছন্দের মনে হচ্ছে  মেয়েটা হয়তো এখুনি কেদে দিবে ভয়ে৷ ছন্দ মুখ টা গম্ভির রেখে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে ৷ এবার মেয়ে সত্যি ভয়ে কেদে ফেলে ৷ 

"" প্লিজ আমার ছোট্ট মেয়েটাকে মারবেন না ৷ আমি কিচ্ছু করে নি বিশ্বাস করুন৷ আমার কোন শাস্তির ফল আমার মেয়েটাকে দিবেন না প্লিজ""(মেয়েটি)

""  মারবো না যদি আমার কথা শুনে কাজ করো তাহলে...""

"" আমি আপনার সব কথা শুনবো তবুও প্লিজ আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দিন..."" 

"" উহু আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি আমার শিকার হাত ছাড়া করি না ৷ কাজ শেষ হওয়ার পর তুমি তোমার মেয়ে কে কাছে পাবে তার আগে না ৷""

"" আমাকে কি করতে হবে?"" 

"" তোমাকে ঠিক কি কি করতে হবে তা সব অনিল তোমাকে বুঝিয়ে দিবে ৷ বাট বাট আমার সাথে ডাবল গেম খেলার চেষ্টা করলে চিরদিনের জন্য নিজের মেয়ের কথা ভূলে যাও ৷""

"" মেয়ের কসম আমি কোন ডাবল গেম খেলবো না ৷""

অনিল কয়েকটা সাদা পেজ মেয়েটার সামনে রাখতে ছন্দ বলে"" সব গুলোয় পাতার শেষে তুমি সাইন করবে কোন প্রশ্ন ছাড়া..."

মেয়েটি কোন প্রশ্ন করলো না দ্রুত সাইন করে দিলো ....

"" গুড গার্ল , অনিল তোমাকে  সবটা বুঝিয়ে দিবে ওকে ৷ আর একটা কথা আমার প্রত্যেকটা কথা শুনবে তো তোমার মেয়ে প্রিন্সেসের মতো থাকবে  আর যদি আমার কথা না শোন তাহলে........""

"" না না আমি বললাম তো আমি আপনার সব কথা মেনে চলবো..."" 

ছন্দ ঠোটের কোনে বাকা হাসি নিয়ে কফিশপ থেকে বেরিয়ে গেল৷ গাড়িতে উঠে দেখে আখি ফোনে গেম খেলছে ৷ ছন্দ কে দেখে আখি গেম খেলা বন্ধ করে দিলো ৷ 

ছন্দ গাড়ি স্টার্ট দিতে আখি আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো ৷ ছন্দ এক ঝলক আখির দিকে তাকিয়ে আবার গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো৷ 

________________________________________________________________

সাদা শার্ট রক্তে ভিজে লাল টকটকে রঙ ধারন করেছে ৷ বর্ণের সে দিকে কোন নজর নেই ৷ হাতে ধাড়ালো চাকু সাথে রবীন্দ্র সংঙ্গিত চলছে ৷ মিহির একটু দুরে সরে দারিয়ে আছে রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরে ৷ রক্তের এমন উৎভট গন্ধ মিহিরের একদম পছন্দ নয় ৷ তবুও তা সহ্য করতে হচ্ছে দ্যা গ্রেট আয়ান চৌধুরী বর্ণের জন্য... 

লোক দুটোর অনেক আকুতি মিনুতি করার পর ও বর্ণের হৃদয় এক বিন্দু গললো না ৷  সোজাসুজি ছুড়িটা নিয়ে  প্রথম লোকটির বুক বরাবর ঢুকিয়ে নিচের দিকে টান দেয় ৷ সাথে সাথে বুক চিরে যায় লোকটার ৷ প্রথম লোকটার অবস্তা দেখে দ্বিতীয় লোকটা সেখানে সেন্সলেস হয়ে পরে ৷ এতো মাস পর মিহির বর্ণের এমন রুপ দেখে হতবম্ব ৷ মিহির ভেবেছিলো হয়তো বর্ণ তার এই দিক টা ভুলে গেছে ৷ কিন্তু সে যে ভুল ছিলো তা আজ আবার প্রমানিত হয়ে গেল৷ 

মৃত লোকটার কলিজা বের করে সেটা আবার কুচি কুচি করে খান্ত হয় বর্ণ ৷ তারপর দ্বিতীয় লোকটার প্রথমে গালায় পোচ দেয় তারপর দু হাত ছুড়ি দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করতে থাকে৷ 

"" বস লোক দুটোর অপরাধ কি ছিলো এতো ভয়ঙ্কর মৃত্যু কেন ওদের পেতে হলো?""

"" বিশ্বাসঘাতকের জন্য এমন ভয়ঙ্কর মৃত্যু প্রাপ্য মিহির...""

"" বিশ্বাস ঘাতক এরা?""

"" হ্যা , এরা আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ৷ আমার লোক হয়ে অন্য কারোর হয়ে কাজ করতো ৷ সে দিন এরাও আমাকে ভূল ইনফরমেশন দিয়েছিলো"""

"" কোন দিন স্যার ?""

বর্ণ এবার আর কিছু বলছে না ৷ বর্ণ উঠে দিয়ে রক্ত মাখা ছুড়ি টা ছুড়ে মেরে রক্ত মাখা শাট টা খুলে ছুড়ে মারে মৃত ব্যাক্তি দুটোর দিকে তারপর বলে"" জ্বালিয়ে দে এদের ৷ এদের যেন কোন অস্তিত্ব না থাকে ৷""

"" ওকে বস ..." 

বর্ণ শরীলের রক্ত পরিষ্কার করে অন্য শার্ট পরে নিয়ে বেরিয়ে যায় ৷ কারন আজ নতুন ইনভেস্টম্যান আসবে তাদের সাথে মিটিং আছে৷ 

মিহির লোক দিয়ে সব সেট করে নিজে সরে পরে কারন মানুষ পোড়া গন্ধ টা মিহির একদম সহ্য করতে পারে না ৷ গা গুলিয়ে আসে ৷ তাই অন্যদের দ্বায়িত্বে দিয়ে নিজে সরে পরে৷ 

_____________________________________________________________________

মিটিং রুমে মিস্টার শেক্ষর উপস্তিত ৷ ঠিক বার টায় মিটিং শুরু হওয়ার কথা আর এখন বারোটা বাজতে এখনো দু মিনিট বাকি ৷ ঠিক এগারোটা ঊনষাট মিনিটে ছন্দ মিটিং রুমে এসে উপস্তিত হয় ৷ মিস্টার শেক্ষর ছন্দের টাইম সেন্স দেখে খুব খুশি ৷ 

ছন্দ মিটিং রুমে ঢুকতে মিস্টার শেক্ষর হাত বারিয়ে দেয় হ্যান্ডশেক করার জন্য ...

"" হ্যালো মিস SJ ...""

"" হ্যালো মিস্টার শেক্ষর .প্লিজ সিট..""

"" শিওর..."" 

"" তো মিস্টার শেক্ষর আপনি হয়তো অনরেডি প্রডাক্টের সেম্পল দেখেছেন?""

"" ইয়েস মিস SJ আমি প্রত্যেকটা প্রডাক্টের সেম্পল দেখিছি ৷ তবে আমার একটা প্রশ্ন ছিলো মিস.."

"" আপনার যা কোশ্চেন আছে সেটা আমার পিএ কে জানাবেন ৷ সে আপনার সব কোশ্চেনের উওর দিয়ে দিবে ৷ এখন আমাদের মিটিং টা করা জরুলি অলরেডি পাচঁ মিনিট ওয়েস্ট হয়েছে মিস্টার শেক্ষর..""

"" ওহ স্যরি মিস , ""

ছন্দ কিছু প্রেজেন্টেশন দেখায় মিস্টার শেক্ষর কে ৷ মিস্টার শেক্ষর প্রেজেন্টেশন দেখে তার ভিষন পছন্দ হয় ৷ রাজি হয়ে যায় ডিল টা করার জন্য....  


মিটিং শেষ করে ছন্দ নিজের কেভিনে এসে দেখে আখি মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে ৷ আর  টেবিলের উপর পা রেখে মুখের উপর পেপার রেখে কেউ বসে আছে ৷ আখি ছন্দ কে দেখে যেন জানে প্রান ফিরে পেল ৷ ছন্দ আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার চেয়ারে বসে থাকা মানুষটার দিকে এগিয়ে গিয়ে মুখের উপরে থেকে পেপারটা সরাতে নিলে চেয়ারে বসা মানুষটা ছন্দের হাত ধরে ঘুড়িয়ে নিজের কোলের উপর বসিয়ে মুখের উপর থেকে পেপার টা সরিয়ে বলে....

"" কেমন আছো টিয়াপাখি ?"" 
টিয়াপাখি নাম টা শুনে ছন্দের শরীলে কাটা দিয়ে উঠলো..

"" মি,, মিস্টার চৌধুরী এটা কোন ধরনের অসভ্যতা ছাড়ুন আমাকে..."" 

ছন্দের কথা শুনে বর্ণ ছন্দের কোমড় আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে ... বর্ণ আখিকে ইশারা করে চলে যেতে , আখি বাধ্য মেয়ের মতো কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়৷ 

"" তো কি বলছিলে যেন টিয়াপাখি ...?""

"" এক্সকিউজ মি মিস্টার চৌধুরী আমি কারো টিয়াপাখি নই ৷ আমি SJ  আর আপনি অসভ্যতামি করছেন এর পরিনতি কিন্তু আপনাকে ভুগতে হবে৷ আমি ডিল ক্যান্সেল করে দিবো ..""

"" রিয়েলি সুইটহার্ট ! ক্যান্সেল করো কিন্তু তুমি তো আমার থেকে ছাড়া পাচ্ছো না এভাবে থাকতে হবে সারাটা দিন..""

"" ওয়াট! আর ইউ ক্রেজি মিস্টার চৌধুরী ৷ ভালোয় ভালোয় বলছি আমাকে ছেড়ে দিন না হলে কি করে নিজেকে আপনার মতো খারাপ অসভ্য লোকের হাত থেকে বাচাতে হয় সেটা এই SJ খুব ভালো করেই জানে...""

"" উমম কি রকম টিয়াপাখি? আমিও একটু দেখি ..."" বর্ন ছন্দের গলায় মুখ গুজে কথা কথা গুলো বলতে লাগলো ৷ ছন্দ পারছে না বর্ণের স্পর্শ নিতে তাই বাধ্য হয়ে ছন্দের পায়ের হিল দিয়ে বর্ণের পায়ে জোড়ে আঘাত করে পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা পাওয়ায় বর্ণের হাত হালগা হতে ছন্দ বর্ণের পেটে কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে উঠে পরে ছন্দ ৷

"" তো মিস্টার চৌধুরী দেখলেন তো আমি কি পারি আর কি পারি না! এবার তৈরি হন নিজের বিজনেসের লস দেখার জন্য, অনিল..."" 

ছন্দ অনিলে নাম ধরে ডাকতে অনিল  এসে হাজির ৷

"" ইয়েস কুইন ...""

"" মিস্টার চৌধুরীর সাথে আমাদের কোম্পানির যে ডিল হয়েছিলো তা ক্যান্সেল করে দেও৷""

"" কুইন আপনি তো অলরেডি অনেক গুলো টাকা এডভান্স করেছেন""

"" তার থেকে তিন ডবল টাকা মিস্টার চৌধুরী ব্যাংক ঋন নিয়েছে ৷ ওটা কি করে পরিশোধ করবে এটা ভাবুক৷""

 ছন্দ বর্ণের দিকে বাকা হেসে কথা গুলো বললো ৷ ছন্দের কথা শুনে বর্ণের মনে পড়লো সত্যি এই ডিল টার জন্য ব্যাংক ঋন নিতে হয়েছে অনেক গুলো টাকা ৷ ডিল ক্যান্সেল হয়ে গেলে পথে বসা ছাড়া আর কোন ওয়ে থাকবে না ৷ 

" কি হলো মিস্টার চৌধুরী হাওয়া ফুস!  হা হা হা যাই হোক এই SJ সাথে লড়তে হলে সমানে সমানে হওয়া চাই মিস্টার চৌধুরী ৷ এরকম বেচারা টাইপ লোকের সাথে অন্তত এই SJ লড়তে যাবে না ৷ ""

"" বাহ টিয়াপাখি অনেক কথা শিখেছো দেখছি ৷ আগে তো কথা-ই মুখ দিয়ে বের হতো না ৷ যাই হোক আই এম স্যরি ডিল টা ক্যান্সেল করো না প্লিজ...""

"" উহু এভাবে বললে তো চলবে না মিস্টার চৌধুরী , আমি আপনার কোন ইয়ার বা দোস্ত নই তাই তুমি বলা বন্ধ করুন আপনি করে বলবেন মিস্টার চৌধুরী ...""

"" ওকে ফাইন , আপনি প্লিজ ডিল টা ক্যান্সেল করবেন না ..""

"" ভেবে দেখবো, নাও গেট লষ্ট ৷ আপনার সাথে ফালতু কথা বলে আমি আমার মূল্যবান টাইম ওয়েস্ট করতে চাই না ৷"" 

ছন্দের কথা শুনে দফায় দফায় অবাক হচ্ছে বর্ন তার টিয়াপাখির পরিবর্তন দেখে....

বর্ণ আর এক পা দারায় না কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়৷ বর্ণ চলে যেতে ছন্দ তার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে ফেলে ৷ অনিল বুজতে পারছে তার এখন এখানে কোন কাজ  নেই ৷ অনিল কেবিন থেকে চলে যায়৷ 



বর্ণ প্রচন্ড স্পিডে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে ৷ পাশে মিহির বসে আছে ৷ এতো জোড়ে গাড়ি চালাতে দেখে মিহিরের প্রান পাখি উড়ে যাওয়ার মতো অবস্তা ৷ মিহির মনে মনে আল্লাহ্ নাম নিচ্ছে কারন এভাবে গাড়ি চালালে যে কোন সময় যা কিছু ঘটে যেতে পারে ৷ বর্ণ  ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড রেগে আছে এটা মিহির বুজতে পারছে ৷ হঠাৎ বর্ণের ফোন টা বেজে ওঠায় বর্ণ গাড়ির স্পিড স্লো করে সাইডে দার করায়৷ তা দেখে মিহির হাফ ছেড়ে বাচঁলো ৷ 

বর্ণ কল রিসিব করে কানে ধরতে বর্ণের ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো ৷ বর্ণ ঠোট নাড়িয়ে শুধু বললো"" আমি আসছি..."" এতোটুকু বলে কল কেটে আবার ড্রাইব করতে লাগলো ৷ 

_______সামনে একটা লোক মাটিতে আকিবুকি করছে ৷ বর্ন সে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ 

"" বস লোকটা তো পাগল হয়ে গেছে ৷ নিজের নাম টাও বলতে পারছে না ঠিক করে.."" 

""  এর এই অবস্তা হলো কি করে?"

" স্যার সেই ব্লাস্টে সবাই মারা গেছে শুধু এই লোক টা বেচে রয়েছে ৷ এই লোকটা সুস্থ হলে আপনি ওনার সাথে কথা বলতে পারবেন৷ আর ওই দিন এই লোকটা ম্যামের সাথে কি করছিলো এটাও জানতে পারবেন৷"

"" এর ভালো ট্রিটমেন্টের ব্যাবস্থা করো৷ এর সুস্থ হওয়াটা খুব জরুলি ৷ আর ধোয়াশার ভিতর থাকতে পারছি না ৷ সবটা জানতে হবে আমাকে... ""

"" ওকে বস আপনি চিন্তা করবেন না ৷  এনাকে সুস্থ করার ভার আমাদের ..." 

বর্ণের লোক গুলো লোকটা কে নিয়ে ভিতরে চলে যায় ৷ তখনি মুরাদ এসে হাজির হয়৷ 

"" আমাকে ডেকেছিস বর্ণ?""

"" হুম , মুরাদ আমি টিয়াপাখির কিছু ইনফরমশন চাই ৷""

"" ইনফমেশন!""

"" হুম , টিয়াপাখি কোথায় যায় কার সাথে কথা বলে সবটা টা ...""

"" ওকে পেয়ে যাবি কিন্তু......."

"" কিন্তু কি? ""

"" ছন্দ যদি কোন ভাবে জানতে পারে আমি ওকে ফলো করছি তাহলে ছন্দ আমাকে ছাড়বে না আমি শিওর...""

"" টিয়াপাখি তোর অন্তত কোন ক্ষতি করবে না আই এম শিওর দ্যাট...""

"" গড নো'স ""



"" কিহ! সাকিল বর্ণের হাতে পড়ে গেছে?""

"" জ্বি স্যার ..""

"" সালাকে ওদিন মেরে ফেললে ভালো হতো ৷ কেন যে বাচিয়ে রাখলাম এখন আমার গলার কাটা হয়ে দারাচ্ছে...""

"" স্যার! বর্ণ স্যারের আশ্রয়ে থাকা লোকটা কে আমার ধারা কোন ক্ষতি করা সম্ভব নয় ৷ কারন বর্ণ স্যার যদি কোন ভাবে জানতে পারে আমি তার দলে থেকে তার বিরুদ্ধে কাজ করছি তাহলে এর আগে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে ধরা পরেছিলো তাদের মৃত্যু আমি নিজের চোখের সামনে দেখেছি স্যার ৷ আমকর পক্ষে স্যারের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়৷""

"" তাহলে তো আমাকে এবার অন্য ব্যাবস্তা নিতে হবে ৷ বর্ণ কে বাড়ি আর অফিস এই দুটো তে আটকে ফেলতে হবে ৷ নাহলে খুব বেশি দেরি নেই আমার সব সত্যিটা বর্ণের সামনে প্রকাশ পাবে৷ "" 

"" আপনি ভাবুন আপনি কি করবেন আমি আর এই সবে নাই স্যার ভালো থাকবেন রাখি ৷ আসসালামু আলাইকুম ৷"" 

রাগে পুরো শরীল কাঁপছে আয়মান চৌধুরীর ৷ বর্ণ যে এভাবে এতো তারাতারি ওই দিনের ঘটনা জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে এটা তার জানা ছিলো না৷ বর্ণ সবটা যদি জানতে পারে তাহলে বাবা বলেও ছাড় পাবে না তার ছেলের কাছে এটা খুব ভালো করেই জানে আয়মান৷

কিছুক্ষন ভেবে আয়মান দারুন একটা প্লান করে ৷ যাতে সাপ ও মরে আর লাঠিও না ভাঙে.... 

আয়মান তার পার্টনার কে ফোন করে তাকে সবটা বুঝিয়ে দেয় তাকে কি করতে হবে ৷ আয়মানের পার্টনার আয়মানের কথায় রাজি হয়ে যায় ৷ 

" এবার দেখি বর্ণ আমার পাতা ফাঁদ থেকে কি করে বের হয় ৷ হা হা হা ""



""আঙ্কেল আমি কুইনের অফিসে যাবো আপনি কি যাবেন আমার সাথে..?"" 
রাহুলের কথা শুনে Md চোখ যেন কপালে উঠে গেল৷ 
" বলে কি এই ছেলে মনে কি সামান্য ভয় ডর বলতে নেই? "

"" না নেই আঙ্কেল, মনে মনে কথা না বলে জোড়ে বলুন ৷ নাহ থাক আমি বলছি ৷ কুইন কে দেখে আমার মটেও ভয় লাগে না ৷ এতো কিউট মায়াবী মেয়ে কে দেখলে কি কারো ভয় লাগে উলটো ভালোবাসা জা... বাকিটা বলার আগে MD রাহুলের মুখ চেপে ধরে... 

"" চুপ একদম চুপ ৷ এই কথা গুলো কুইনের কানে গেলে তোমাকে আর আস্ত রাখবে না ৷ এখানে তোমাকে পুতে ফেলবে...""

"" উফফ , আর একটু হলে তুমি আমাকে দম আটকে মেরে ফেলতে...""

"" স্যরি, বাট এই কথা দ্বিতীয় বার মুখে উচ্চরন করবে না ৷ ""

"" ওকে নাও বাই ..."" বলে রাহুল রুম থেকে বেরিয়ে যায় আর পিছুন থেকে  Md রাহুল কে যেতে নিষেধ করে কিন্তু রাহুল কোন কথা পাত্তা না দিয়ে ছন্দের অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে  যায়৷ 

"" ছেলেটা আজ নির্ঘাত মরবে ৷ উফফ এই পাগল ছেলেটাকে নিয়ে কি যে করি?""

__________ত্রিশ মিনিটের মাথায় ভাঙা হাত নিয়ে ছন্দের অফিসে হাজির হয় রাহুল ৷ ছন্দ তার নিজের কেবিনে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো ৷ হঠাৎ কেবিনে কারো উপস্তিতি বুজতে পেরে সামনে তাকিয়ে রাহুল কে দেখতে পেয়ে প্রচন্ড রেগে যায় ছন্দ৷ 

"" হাই কুইন! কিছু মনে করোনি তো আমি এসেছি না বলে ৷ আসলে বাড়িতে ভালো লাগছিলো না তাই ভাবলাম তোমার সাথে কিছুক্ষন গল্প করা যাক৷"" 

অনিল ছুটে ছন্দের কেবিনে ঢুকতে দেখে রাহুল অলরেডি ছন্দের কেবিনে বসে আছে ৷ Md অনিলের ফোনে কলে ছিলো ৷ অনিল ফোন কানে ধরে বলে"" যা হওয়ার তা হয়ে গেছে MD রাহুল কুইনের সামনে বসে আছে আর দাঁত কেলিয়ে যাচ্ছে৷ ""

"" সর্বনাস রাহুল কে হয়তো আর বাচাতে পারলাম না অনিল ৷ ""

"" হ্যা Md ! কুইনের চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি প্রচণ্ড রেগে আছে ৷ ""

"" রাহুল শেষ ""

অনিল কে ছন্দ দেখতে পেয়ে বলে..." অনিল এই প্রেজেন্টেশন টা কম্পিলিট করো আর ইউ আমার সাথে গল্প করবে না? "

"" হুম.."" খুশি হয়ে...

"" তাহলে চলো আমার সাথে , এটা অফিস তাই আমি এখানকার রুলস ব্রেক করতে পারবো না ৷ আমরা না হয় বাইরে কোথাও  বসে গল্প করবো ..""

"" হুম ঠিক বলছো, চলো তাহলে অন্য কোথাও যাই ..""

"" হুম চলো...."" 

রাহুল ছন্দের পিছু পিছু কেবিন তারপর অফিস থেকে বের হয়৷ ছন্দ বাইরে বের হয়ে দেখে দুরে বর্ণের গাড়ি দাড়িয়ে আছে আর তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে ৷ বর্ণ কে দেখে ছন্দ তার প্লান চেন্জ করলো ৷ ছন্দ রাহুল কে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে চলে যায় ৷ পিছু পিছু বর্ণ চলে আসে ৷ 

"" বাহ! আমি তো ভেবেছিলাম কুইন আমার কথা শুনবে না কিন্তু এ তো মেঘ না চাই তে বৃষ্টি ৷ সোজা রেস্টুরেন্ট বাহ বাহ রাহুল তোর কপাল তো খুলে গেল .."" রাহুল মনে মনে নিজে নিজের প্রশংসা করতে ব্যাস্ত .... 

ছন্দ রাহুল যে টেবিলে বসে আছে তার ঠিক দুটো টেবিল পেছনে বসে আছে বর্ণ ৷ রাগে দুচোখ রক্তিম বর্ণ হয়ে আছে ৷ রাহুল অফিসে ঢোকা মাত্র বর্ণের কানে খবর টা চলে যায়৷ বর্ণ আর এক মুহূর্ত দেরি না করে অফিসের সামনে এসে হাজির হয় ৷ এসে দেখে ছন্দ আর রাহুল দুজনে এক সাথে কোথাও যাচ্ছে ৷ বর্ণ ও পিছু নেয় ওদের ৷ 

"" কি খাবে বলো?""(ছন্দ)

"" এনেথিং তুমি যা বলবে..""

ছন্দ ওয়েটার কে ডাকতে ওয়েটার কে আস্তে করে কি যেন বলে ছন্দ ৷ ওয়েটার ছন্দের কথা মতো মাথা নেড়ে চলে যায়৷ পনেরো মিনিট পর ওয়েটার নিয়ে এসে হাজির হয়৷ 

"" নেও রাহুল খেতে শুরু করো৷"" এই বলে ছন্দ চামচে খাবার নিয়ে রাহুলের মুখের সামনে ধরতে বর্ণের চোখ মুখের রঙ পাল্টে গেল ৷ দুহাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে ওখান থেকে উঠে বেরিয়ে গেল৷ ...

রাহুলের মুখে খাবার টা যেতে রাহুলের চোখ নাক মুখ লাল হয়ে গেছে ঝালে তবুও রাহুল খেয়ে যাচ্ছে ৷ 

অন্যদিকে বর্ণ রেগে আগুন হয়ে বাড়িতে ফিরে দেখে পুরো বাড়ি ডেকোরেট করা কিন্তু সামনে দারিয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে বর্ণের রাগ সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেছে.....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন