এক শ্যামবতী কন্যা খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য একটি মেয়ের সাথে।মেয়েটির পড়নে লাল শাড়ি।খালি পায়ে ঘাষের উপরে দাড়িয়ে আছে। পায়ে আলতা লাগানো।লাল কাচের চুড়ি গুলো তার হাত নাড়ানোর তালে তালে রিনঝিন আওয়াজ তুলছে।মুগ্ধ হলো আয়াজ।মুহূর্তেই তার হৃদপিন্ডে শুরু হলো ঝড়।মেয়েটাকে আরো কাছ থেকে দেখার জন্য কিছুটা কাছে এগিয়ে গেলো সে।মেয়েটার তো কোনো দিকেই খেয়াল নেই। সে তার মতোই ব্যস্ত।বাতাসে তার খোলা চুলগুলো এলোমেলো উড়ছে। অথচ সেই মানুষ টা তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এতো পিচ্চি একটা মেয়ে শাড়ি পড়েছে বয়স আর কতো হবে চৌদ্দ কি পনেরো।একটু হাসলো আয়াজ।
হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ দুটি খুলল আয়াজ।দেখল তার হাতে আরশির হাত।একটু হাসল আয়াজ।নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইল। আরশি বুঝতে পেরে লজ্জায় নিজের হাতটা সরিয়ে নিল।গাড়িতে বসে জানালা দিয়ে সে বাহিরের প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত ছিল।কিছুক্ষণ পর আয়াজের দিকে ফিরে দেখল আয়াজ সিটে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে ।কতক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আয়াজের মুখপানে।আরশি বেশ বুঝতে পারছে কিছু বেহায়া অনুভূতি কড়া নাড়ছে তার মনে আয়াজের প্রতি। তাই তাড়াতাড়ি করে চোখ সরিয়ে নিতে গেলে নজর পড়ে আয়াজের ব্যান্ডেজ করা হাতে।মনটা কেমন করে উঠল তার আয়াজের কাটা হাতটা দেখে। বার বার সে আয়াজ কে ডাকতে লাগল হাত কিভাবে কাটল জানার জন্য। কিন্তু আয়াজ সে তো ব্যাস্ত ছিল অতীতের কিছু মধুময় স্মৃতি নিয়ে ভাবতে।আরশি ভাবল আয়াজ হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে তাই সে আলতো করে আয়াজের ব্যান্ডেজে হাত বুলাল।সাথে সাথেই আয়াজ চোখ মেলে তাকালো।আরশির চোখে লজ্জা +আতঙ্ক দেখতে পেলো।দুষ্টমি স্বরে বলল-
-যেখানে সেখানে সুযোগ নিবেন না মিস আরশি।
আয়াজের মুখে এই কথা শুনে লজ্জায় অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো সে।
-হাত কিভাবে কাটল নায়ক সাহেব?(নিজের লজ্জা কোনো মতে নিবারণ করে প্রশ্নটা করল আরশি)
আয়াজ মুচকি হেসে জবাব দিল -তেমন কিছু না। ছুরি দিয়ে আপেল কাটতে গিয়ে লেগে গেলো।
কেনো যে আরশির কথাটা বিশ্বাস হলো না।এতো সার্ভেন্ট থাকতে আয়াজ নিজে আপেল কেটে খাবে। আরশি একটু রসাত্মক ভঙিতে প্রশ্ন করল---আপনি আপেল ও খান?
-হুম খাইতো।আরও অনেক কিছু খাই।এই ধরো যেমন.. ভয় দেখানোর জন্য আরশির একদম কাছে ঝুঁকে ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল আয়াজ।
আর আরশি সে তো ভয়ে একদম সিটের সাথে মিশে গেছে।আয়াজের ঠোঁটের দিকে তাকানো বুঝতে পেরে এক হাতে ঠোঁট ও চেপে ধরল।
আরশির ভায় পাওয়া ফেইস দেখে অনেক মজা পেলো সে।হেসে সরে গেলো আরশির উপর থেকে।
------------
প্রায় ঘন্টা খানেক পর তারা এসে পৌঁছাল সিলেটে। রাত হয়ে গেছে।আগে থেকেই রিসোর্ট বুকিং করা আছে।একজন গার্ড এসে আয়াজের পাশের দরজাটা খুলে দিল।আয়াজ নেমে আরশির পাশে গিয়ে নিজে দরজাটা খুলে আরশি কে নামতে ইশারা করল।অবাক হলো সব গার্ডরা এবং ওইখানে অবস্থিত সবাই।আরশি নেমে এলে আয়াজ নিজের হাতের মুঠোয় আরশির হাতটা নিয়ে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।আরশি আবারও তাকিয়ে রইল তার নায়ক সাহেবের দিকে।আয়াজের পাশে একটা মেয়েকে দেখে তাও আবার হাত ধরে রেখেছে দেখে সবাই যেনো আকাশ থেকে পড়ল।চারদিকে এতো মানুষ আর শুটিং এর জিনিস দেখে আরশির আর বুঝতে বাকি রইল না আয়াজ শুটিং এর জন্যই এখানে এসেছে।কিন্তু তাকে কেনো নিয়ে এসেছে?কিছুই বুঝতে পারছে না সে।এই দুদিনে সে বুঝতে পেরেছে আয়াজ কে বুঝার সাধ্যি তার নেই। আয়াজের সাথে জড়িয়ে আছে তার অতীত এতটুকুই বুঝতে পেরেছে সে।
দূর থেকে একটা মেয়ে এগিয়ে এলো তাদের দিকে।আরশি মেয়েটা কে চিনে।আয়াজের সাথে একটা মুভিতে নায়িকা হিসেবে দেখেছিল সে।নাম স্নিগ্ধা। দেখতে খুবি সুন্দরী।স্নিগ্ধার প্রথম নজরে পড়ল আয়াজের হাতে নিবদ্ধ আরশির হাতটার দিকে। চোখটা ছলছল করে উঠল। স্নিগ্ধার নজর এড়াল না আরশির।প্রথমে অস্বস্তি লাগলেও পর মুহূর্তে আয়াজের হাতটা সে নিজেও অনেক শক্ত করে ধরল।বাঁকা হাসল আয়াজ।আরশি জানে স্নিগ্ধা আয়াজ কে ভালোবাসে।বহুবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সবার সামনেই প্রপোজ করেছে আয়াজ কে।কিন্তু আয়াজ সে বারবারই ছিল গম্ভীর। তার উত্তর ছিল "না"। কারণ তার মন যে বহু বছর আগে তার প্রিয়তা কেড়ে নিয়েছে এক মুহূর্তের দেখায়।
স্নিগ্ধা আয়াজের দিকে ছলছল চোখে তাকাল।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে জিজ্ঞেস করল- এ কে আয়াজ?
-বউ।
চোখ দুটো ছাপিয়ে জল নেমে এলো স্নিগ্ধার আয়াজের মুখে বউ শব্দটা শুনে।
-মানে?
-বউ মানে বউ।আমার বউ।
আরশি কে একহাতে জরিয়ে নিজের বুকের মাঝে টেনে তাচ্ছিল্য স্বরে উত্তর দিল আয়াজ।দৌড়ে চলে গেলো স্নিগ্ধা।আর কিছু শুনতে পারবে না সে।সবাই প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে কাছে এসে কংগ্রেস জানাতে লাগল।বেশ লজ্জা লাগছিল আরশির তা বুঝতে পেরে আয়াজ বলে উঠল- জার্নি করে এসেছি।আমার বউয়ের শরীর খারাপ করছে তো।পরে দেখা হবে গাইজ।
-----------
রুমে এসে আরশি প্রথমে গোসল সেরে নিল।এতো জার্নি করে এসে মাথা কেমন যেনো ভার ভার লাগছিল।ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে আয়াজ বসে আছে বিছানায়।একি রুমে উঠেছে দুজন।এইটা আয়াজের-ই ডিসিশন। সে আরশি কে চোখে চোখে রাখতে চায়।আর কিছু হারাতে চায় না সে।আরশি বের হতেই আয়াজ ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
আয়নার সামনে আরশিকে ভেজা চুলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কেমন ঘোর লেগে গেলো আয়াজের।কি স্নিগ্ধময় চেহারা!!শ্যামলা মেয়েরা কি এতোই স্নিগ্ধ আর মায়াবতী হয় নাকি আয়াজের কাছেই আরশি কে এতো মায়াবতী মনে হয়।পিছন থেকে আরশির কোমড় জরিয়ে ধরল সে।কেঁপে উঠল আরশি।আরশির চুল গুলোতে নাক ঘষে ঘ্রাণ নিলো সে।চুলগুলো সরিয়ে একপাশে রাখল।ভেজা ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়াল।আয়াজের হাত দুটো খামচে ধরল আরশি।চোখ দুটো বন্ধ করে নিল।একের পর এক ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে ভরিয়ে দিতে লাগল আয়াজ।কোমড় ছেড়ে আরশি কে নিজের দিকে ফিরালো।বন্ধ চোখে ঠোঁটের ছোঁয়া দিল।তারপর আরশির কম্পনরত ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো আরশি।কয়েক পা পিছিয়ে গেলো আয়াজ পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো সে।রাগ হলো তার।আরশির দিকে তেড়ে যেতেই আরশি আঙুল তুলে বলল
--ওইখানেই দাঁড়ান নায়ক সাহেব।
চমকালো আয়াজ আরশির সাহস দেখে। আরশি ভেতরে ভেতরে ভয় লাগলেও একটা কথা মনে পড়তেই কিছুটা সাহস যুগিয়ে বলল-
-কোন অধিকারে আপনি আমার কাছে আসছেন?
-স্বামীর অধিকারে।(নিরলস জবাব আয়াজের)
-ওই বিয়ের কাবিননামা সত্য হলেও সেটা আমি মানি না।কারণ আমি নিজের ইচ্ছায় কখনও স্বাক্ষর করেছি বলে মনে পড়ছে না।অন্য কাউকে ভালোবেসে আমার কাছে কেনো মিথ্যা দাবি নিয়ে আসছেন?
-অন্য কাউকে মানে?(ভ্রু কুঁচকে কথাটা বলল আয়াজ)
-অন্য কেউ মানে আপনার প্রিয়তা।প্রিয়তার নামে চিরকুট লিখে আবার আমার সাথে অসভ্যতামি,নষ্টামি করতে আসেন।(তীব্র অভিমান আর রাগ নিয়ে বলল আরশি)।
আয়াজ আরশির তার প্রিয়তার জন্য চিরকুট লিখার কথাটায় অভিমান ছিল বুঝে প্রথমে মনে মনে হাসি পেলেও আরশির বলা নষ্টামি শব্দটা শুনে চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো।আরশিকে ঠেলে চেপে ধরল পেছনে দেয়ালের সাথে।মাথায় একটু ব্যাথা পেলো আরশি।কিন্তু একদম চুপ রইল।বাহু দুটো শক্ত করে চেপে ধরল।
-আমি নষ্টামি করি তাই না?কি নষ্টামি করেছি তোর সাথে বল?তোর ইজ্জত কেড়ে নিছি?আর তোর সাহস কি করে হলো আমার জিনিসে হাত দেওয়ার? লজ্জা পেলো না তোর কারও পারসোনাল জিনিসে নজর দিতে?(চিল্লিয়ে কথা গুলো বলল আয়াজ)
।নিজের রাগ কোনোভাবেই কন্ট্রোল করতে পারছে না সে।এই মেয়েটা কেনো তার পবিত্র ছোঁয়া গুলোকে নষ্টামির নাম দিবে!!আর টাচ করবো না এই মেয়েকে আর কখনো না।
আরশির বাহু ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো সে।ওইখানে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল আরশি।চোখের জল একদমই কোনো বাঁধা মানছে না।
-আমি তো রাগে অভিমানে বলে ফেলেছি ।ক্ষমা করবেন আমায় নায়ক সাহেব ক্ষমা করবেন। দুই দিনের পরিচয়ে নিজের মনে আপনার প্রতি অনুভূতির বাসা বেঁধে ফেলেছি।আপনার কাছে আসা আপনার করা কেয়ার পাগল করে দিয়েছে আমায়।আমার কি দোষ বলুন?বাবা মা মারা যাওয়ার পর কেউ তো আমায় এইভাবে আগলে রাখে নি।দীর্ঘদিন পর কেউ আমায় এতে সুন্দর করে আগলে রেখেছে কেয়ার করেছে আমার মনে নতুন এক অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। যদি আপনার জীবনে অন্য কেউই থাকে তবে কেনো আমাকে নিজের এতো কাছে টানলেন?কেনো আমার মনে এমন অনুভূতির জন্ম দিলেন?কষ্ট হচ্ছে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে আপনাকে আঘাত করে।প্লিজ ক্ষমা করবেন।নিজে নিজেই কথাগুলো বলে ঢুকরে কেঁদে উঠল আরশি।
বাহিরে একটা বেঞ্চে এসে বসল আয়াজ।চুল গুলো টেনে নিজেকে একটু শান্ত করে নিল সে।বড্ড অভিমান হচ্ছে তার আরশির প্রতি। ভেবেছিল আরশি কে সারপ্রাইজ দিবে।আরশির সাথে রিলেটেড সবকিছুই খুলে বলবে।খুলে বলবে তার প্রিয়তার কথা।
-------------
অনেক কষ্টে চোখ দুটো খুলল আরশি।রাতে যেখানে বসেছিল সেখানেই নিজেকে আবিষ্কার করল।কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে।আরশি বুঝতে পারল আয়াজ আর রুমে আসে নি।আয়াজ হয়তো খুব রাগ করেছে।তারই বা কি দোষ আয়াজ অন্য কাউকে ভালোবাসলে কেনো তার কাছে আসবে,,কেনো তাকে আগলে রাখবে?তাই রাগে সে উল্টা পাল্টা বলে ফেলেছে। কোনো মতে উঠে দাঁড়াল সে।বাহু দুটোতে ব্যাথা অনুভব করছে।ফ্রেশ হয়ে আসতেই একজন ওয়েটার সকালের খাবার দিয়ে গেলো।সে বুঝতে পেরেছে আয়াজই পাঠিয়েছে।তাড়াতাড়ি করে খাবার টা খেয়ে নিল সে।তার সরি বলতে হবে আয়াজ কে।তাই তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে এলো আয়াজের খোঁজে।কিন্তু কোথাও আয়াজের দেখা পেলো না।দূর থেকে ড্রাইভার এগিয়ে আসছে তার দিকে।
-ম্যাম স্যার বলেছেন আপনাকে নিয়ে যেতে।
-ওনি কোথায়?
-ওনি একটু আগেই বেরিয়েছেন জাফলং এর উদ্দেশ্য। আজ তো শুটিং আছে।
মনে কষ্ট অনুভব করল আরশি।তাকে কি সাথে নিয়ে যেতে পারত না আয়াজ।আজ এতো অবহেলা?
-এতোই অভিমান করেছেন তার নায়ক সাহেব?
—————
গাড়ি থেকে নেমে দাড়াল আরশি।নিশাদ দৌড়ে এসে বলল
--চলুন ম্যাম।
-আগেই বলেছি আমায় ম্যাম বলবেন না ভাইয়া।আমি আপনার ছোট আপনি আমায় আরশি বলেই ডাকবেন।
-ঠিক আছে চলো।স্যার অপেক্ষা করছে।
-আপনার স্যার আমার জন্য অপেক্ষা করলে কি আমায় ফেলে আসতো?(বিড় বিড় করে বলল আরশি)
-কি হলো চলো?
-জ্বী চলুন।
জাফলং এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলো আরশি।মন ভালো থাকলে হয়তো এতক্ষণে লাফিয়ে উঠত। ছোট বেলা থেকেই প্রকৃতি খুব পছন্দ তার।বাবা মার কাছে সবসময় আবদার করত ঘুরার জন্য। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলীন করার জন্য। কথাটা মনে পড়তেই চোখ ভরে এলো তার।
আয়াজ দূর থেকেই আরশিকে লক্ষ করছে।যতই অভিমান করে দূরে থাকুক না কেনো দূর থেকেই সে আরশির খেয়াল রাখছে।কড়া সিকিউরিটির মাধ্যমেই আরশিকে এতদূর আনা হয়েছে।আয়াজ কে দেখে আরশির মনটা খুশিতে ভরে গেলো।এগিয়ে গেলো তার দিকে।মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল--
-নায়ক সাহে,,,,,,
আরশি নিজের কথা শেষ হওয়ার আগেই আয়াজ আরশি কে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। একবার ফিরেও তাকালো না।মনটা বিষন্ন হয়ে উঠল আরশির।তবুও সে দমবে না।আয়াজ শুটিং এর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।শুটিং শেষ হলে না হয় আবার কথা বলবে আয়াজের সাথে।একটা পাথরের উপর বসে গালে হাত রেখে মনোযোগ দিয়ে আয়াজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আরশি।আয়াজ বুঝতে পারছে কিন্তু অভিমানে সে আর আরশির দিকে তাকাচ্ছে না।কিন্তু আরশির তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই। সে তো আয়াজ কে দেখতে ব্যাস্ত। কারো পাশে দাঁড়ানোর শব্দে আরশি পাশ ফিরে তাকাল।দেখল নিশাদ দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে তার দিকে।
-কিছু বলবেন?
-হে হে,,,স্যার খুব সুন্দর তাই না?(আরশি বুঝল নিশাদ তার দৃষ্টি বুঝে ফেলেছে।)
-নায়ক সাহেবের বোনও খুব সুন্দর তাই না?
(আরশির কথা শুনে ভীতু হয়ে গেলো নিশাদ)
আবারও বলে উঠল,,,
-তা নায়ক সাহেব জানেন আপনাদের প্রেম লীলা?
এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না নিশাদ।তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো।এমনভাবে গেলো যেনো এখান থেকে এখন এই মুহূর্তেই পালিয়ে যাওয়া শ্রেয়।হেসে উঠল আরশি।নিশাদ কে জব্দ করে বেশ মজাই পেলো সে।তার হাসি দেখে দূর থেকে আয়াজও হালকা হাসল।শীতল স্রোত ভয়ে গেলো তার হৃদপিন্ডে।
----------
শুটিং শুরু হলো কিছুক্ষণ আগেই।
এমনিতেই ওনি এতো হ্যান্ডসাম এখনতো আরো বেশি লাগছে।(দুই গালে হাত রেখে বলল আরশি)
মনোযোগ দিয়ে শুটিং দেখতে লাগল সে।অভিনয়ের এক পর্যায়ে যখন আয়াজ স্নিগ্ধার কোমড়ে হাত রাখল খুব বেশি কষ্ট অনুভব করল আরশি।মনে হলো তার হৃদপিন্ডে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।নিতে পারছে না সে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।কারো সাথেই সে তার নায়ক সাহেব কে ভাবতে পারছে না।স্নিগ্ধা আর নায়ক সাহেব দুজনকেই খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার।সাথে প্রিয়তা নামের মেয়েটাকেও।তার মন বলছে তোর নায়ক সাহেব তোর স্বামী সে কেনো অন্য কারো হবে?যদি কোনো প্রিয়তাকে ভালোবেসেও থাকে তবেও হতে দিবে না।উঠে দাঁড়াল সে।দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে।
আরশি কে এইভাবে দৌড়াতে দেখে আয়াজ শুটিং ছেড়েই তার পিছু পিছু দৌড়াতে লাগল। সবাই অনেক অবাক হলো।কি হলো দুজনের।আর আয়াজ ভাবছে আরশির কি হলো এতক্ষণ তো ভালোই বসে ছিল।কোনো কারণে কি কষ্ট পেলো মেয়েটা?কান্নার বেগে কিছুই চোখে দেখছে না আরশি।সবকিছু ঝাপসা লাগছে।কোনোমতে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে কান্নারত কন্ঠে বলল-
-আমারর শরীরর খারাপপ লাগছে।প্লিজ আমায় রিসোর্টে নিয়ে চলুন।
-কিন্তু ম্যাম?
-কোনো কিন্তুু না না..প্লিজ নিয়ে চলুন।
গাড়ি স্টার্ট দিলো ড্রাইভার। তাদের গাড়ির পিছু পিছু গার্ডের গাড়িও ছুটে চলল।আয়াজের আগে থেকেই নির্দেশ দেওয়া আরশি যেখানেই যায় তার পিছু পিছু যেনো গার্ডরা ও যায়।আয়াজ দৌড়ে এসে দেখল আরশি চলে গেছে। তার গাড়ির পিছনে গার্ডদের গাড়ি দেখে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল সে।
রুমে এসে আরশি দরজা বন্ধ করে কাঁদতে শুরু করল।কি হচ্ছে তার সে নিজেই বুঝতে পারছে না।
ওনি তো অভিনয় করছিল আরশি তাহলে তুই কেনো অভিনয় অভিনয়ের মতো নিতে পারছিস না।কেনো তোর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে? কই আগে তো ওনার মুভি দেখেছি খারাপ তো লাগে নি তবে আজ কেনো এমন হচ্ছে? কেনো তুই ওই নায়ক সাহেব কে ভালোবেসে ফেললি আরশি?কেনো?আচ্ছা ওনি কি ভালোবাসেন আমায়?না না ওনি তো ওনার প্রিয়তাকে ভালোবাসে।(কাঁদতে কাঁদতে এলোমেলো ভাবে কথা বলতে লাগল আরশি।)
আয়াজ সব অভিমান রাগ ভুলে আরশির রুমের দরজায় বার বার নক করছে।কিন্তু আরশি খুলল না।সারাদিন কেটে রাত হলো তবুও আরশি এখনো বের হলো না।চিন্তা হচ্ছে আয়াজের। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সে ভাবছে হঠাৎ আরশির কি হলো?এই মেয়েটাকে যে কীভাবে বুঝাবে সে?আদো কি আরশি বুঝবে?
---------------
দুটো হাত ধীরে ধীরে আয়াজকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরল।একটু চমকালো আয়াজ তবুও পিছু ফিরল না।হাতের অধিকারী আলতো করে মাথা ঠেকাল আয়াজের পিঠে।কোমল স্বরে বলে উঠল,,,,,"ভালোবাসি নায়ক সাহেব! "
থমকালো আয়াজ।থমকে গেছে তার সকল অনুভূতি। না পারছে নড়তে না পারছে কিছু বলতে।তৃপ্ততার সুখ ছেয়ে গেলো সারা মনে।এতো বছরের জমানো ভালোবাসা গুলোও মনে হচ্ছে আবার নতুন করে কড়া নাড়ছে মনের দরজায়। নিজের হাত দুটো নিয়ে জরিয়ে ধরে রাখা মানুষটার হাতের উপর রাখল।ধীরে ধীরে পিছন থেকে টেনে সামনে দাঁড় করালো মানুষটাকে। দুই পাশে হাত রেখে তার দিকে সামান্য ঝুঁকল।নেশা ধরানো কন্ঠে উচ্চারিত করল--"আবার বলো প্রিয়তা!!""
কানটা মনে হলো ঝাঁঝা করে উঠল আরশির আয়াজের মুখে প্রিয়তা নামটা শুনে।চোখ ছলছল করে উঠল এই বুঝি গড়িয়ে পড়বে বেহায়া জল গুলো।অথচ আয়াজ সে দিব্যি তাকিয়ে আছে আরশির দিকে।চোখে মুখে তার খুশি উপচে পড়ছে।পাবেই না কেনো তার প্রিয়তা এখন শুধুই তার।মুখ ফিরিয়ে নিলো আরশি।নিজের মনের মধ্যে কষ্টগুলো,, আয়াজের প্রতি অনুভূতিগুলো চেপে রাখতে পারছিল না সে।তাই এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিল।মনটা ভেঙে গেলো তার।
আরশিকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখে দুই গালে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফিরালো আয়াজ।আরশির চোখে পানি দেখে বুকটা ধুক করে উঠল। পর মুহূর্তেই অনুধাবন করতে পারল আরশির চোখে পানির কারণ।আরশির কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল সে।নিজের পকেট থেকে ফোনটা বের করে আরশির মুখের সামনে ধরল।ভ্রু কুঁচকালো আরশি।আয়াজ তাকে ইশারা করল মোবাইলের দিকে তাকাতে।ফোনের স্ক্রিনে একটা মেয়ের শাড়ি পড়া হাসোজ্জল একটা ছবি।পুরো চেহারা টা দেখা যাচ্ছে না।একপাশ দেখা যাচ্ছে।। ছবিটার একপাশে ইডিট করে লিখা আছে "আমার প্রিয়তা"❤️।
চোখ দুটো বড় বড় করে আয়াজের দিকে তাকালো আরশি।ঝাপটে ধরল আয়াজকে খুব শক্ত করে।আয়াজও জরিয়ে ধরল।মাথায় চুলের উপর দিয়ে একটা চুমু খেল।আরশিকে আরও শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।তৃপ্ত স্বরে বলল--"" ভালোবাসি প্রিয়তা। অনেক বেশি ভালোবাসি। নিজের থেকে ও তুমি প্রিয় আমার কাছে আমার প্রিয়তা❤️।
প্রায় মিনিট দশেক পর আরশি আয়াজের বুক থেকে মাথা তুলে ছবিটা দেখিয়ে বলল-"এইটা আপনি কোথায় পেলেন? এমন কোনো ছবি তো আমি কখনও তুলি নি।"
-পাইনি। আমি নিজে তুলেছি।(একটু হেসে বলল আয়াজ)
-মানে?
-চার বছর আগে তুমি রাঙ্গামাটি গিয়েছিলে মনে আছে?
-হুম। বাবা মা আর আমার এক কাজিনের সাথে।(মনটা খারাপ হয়ে গেলো আরশির)
-রাঙামাটি আমি একটা কাজে গিয়েছিলাম।সেদিন তোমায় দেখে থমকে গিয়েছিলাম আমি।লাল শাড়ি পরিহিতা শ্যামবতী কন্যাকে দেখে মনে হয়েছিল এই পিচ্চি মেয়েটা শুধু আমার।শ্যামলা মেয়েরা কি এতো মায়াবী হয় সেদিন তোমায় দেখে মনে এই প্রশ্নটা জেগেছিল আমার।যখন তুমি পাশের মেয়েটার সাথে হাসতে ব্যাস্ত ছিলে তখনই ছবিটা তুলে নেই আমি।ছবিটা তুলে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখে সামনে তাকিয়ে দেখলাম তুমি নেই। ঐদিন সারাক্ষণ আমি তোমাকেই খুঁজেছি কিন্তু পাইনি।তখন মনে হচ্ছিল আমার এক মুহূর্তে সৃষ্টি হওয়া ভালোবাসা এক মুহূর্তেই হারিয়ে গেছে।
অসংখ্য ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো আরশির মন।চার বছর আগে থেকেই তার ভালোবাসার মানুষটা তাকে ভালোবাসে এইটা ভাবতেই ভালো লাগছে তার।
-সেদিন আমরা চলে এসেছিলাম।(দৃঢ় কন্ঠে বলল আরশি)
আরশি কে পিছন থেকে জরিয়ে নিল আয়াজ।
-হুম আর খুঁজে পায় নি তোমায়।ঢাকা ফিরে একটুও স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না।খুব অস্থির হয়ে পড়েছিলাম।রাতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারতাম না।নিজেকে পাগল পাগল লাগছিল।নিজের লোক লাগিয়ে দিয়েছিলাম ঢাকা শহরেও তোমায় খোঁজার জন্য। তবুও নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারি নি।আবারও রাঙ্গামাটি যায় তোমায় খুঁজতে।কিন্তু পায় নি।আমার এই অস্থিরতা পাগলামী দেখে আনহা ও চিন্তায় পড়ে গেলো।ছোট বোন হলেও তার সাথে আমার আচরণ সবসময় বন্ধুত্বসুলভ।সবকিছু খুলে বলি তাকে।
"ভাইয়া মেয়েটার নাম জানিস?"
"জানি তো।"
"কি নাম?"
"প্রিয়তা।আমার দেওয়া নাম"
একটু হাসল আনহা-"নিজের দেওয়া নাম দিয়ে সারাজীবন খুঁজে বেড়ালেও খুজে পাবি না তোর প্রিয়তাকে।"
"কিছুই জানিনা আমি আনহা।আই ওয়ান্ট হার আনহা,,আই নিড হার।"'
নিজের ভাইয়ের অস্থিরতা দেখে খুব বেশি অবাক হলো আনহা।এক মুহূর্তের দেখায় কি কেউ কাউকে এতো ভালোবেসে ফেলতে পারে?এটাও কি সম্ভব? এটা তার ভাইয়ের মোহ নয়তো?না না মোহ হলে দুই মাস লাগিয়ে শুধু মেয়েটাকে খোঁজত না।এতো অস্থির ও হতো না।
আজ অবাকের উপর অবাক হচ্ছে আরশি।প্রথম দেখায় কেউ বুঝি এতো ভালেবাসতে পারে?কারো জন্য এতো অস্থির হতে পারে?
-আচ্ছা আপনি আমায় প্রিয়তা কেনো ডাকেন?
হালকা হাসল আয়াজ।আজ তার খুশির দিন।এতো বছর পর তার প্রিয়তা তার এতো কাছে।আরশিকে আরও গভীর ভাবে আগলে নিল সে।
-সেদিন তোমায় দেখার পর থেকে মনটা বার বার তোমায় দেখতে চাইত।তোমায় দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়ত।মনের আয়নায় বার বার ভেসে উঠতে তুমি।আমার হৃদয়হরণকারী তোমার শ্যামলা মুখটা।মনের আয়নায় প্রতিদিন দেখতাম তোমার প্রতিচ্ছবি।দিনকে দিন নিজের চেয়ে ও প্রিয় হয়ে উঠলে তুমি।তাই নাম দিলাম "প্রিয়তা" ❤️।প্রিয়তা শুধু একটা নাম না প্রিয়তা আমার জীবনের চেয়েও প্রিয়। যার জন্য সব করতে পারব আমি সব।
কেঁদে দিল আরশি।নিজের হাতে পানি অনুভব করতেই আতকে উঠল আয়াজ।
-কি হলো কাঁদছো কেনো?
-আপনি কেনো আমায় এতো ভালোবাসেন নায়ক সাহেব?এতো ভালোবাসা আমি হারাতে চাই না নায়ক সাহেব।কখনও হারাতে চাই না। যতদিন বাঁচি আপনার প্রিয়তা হয়ে বাঁচতে চায় নায়ক সাহেব।
আয়াজ আরশিকে টেনে নিজের বুকে আনল।খুব যত্নে মাথা নিজের বুকে রাখল।
-আমার বাবার এক বন্ধু ছিলেন।ছোট বেলার বন্ধু।একদিন এক ফাংশনে ওনার সাথে দেখা হয় আমার।বাবা মা যখন মারা যায় তখন এসেছিলেন ওনি।ফাংশনে দেখে ওনাকে নিজের পরিচয় দিতেই চিনে ফেলেন ওনি।একদিন ফোন করে ওনার বাসায় দাওয়াত দিলেন আমি যেনো আনহা কে নিয়ে যায়।ওনার বাসায় গিয়ে মনে হচ্ছিল খুশিতে পাগল হয়ে যাবো আমি।বাবা মা মারা যাওয়ার পর জীবনে অনেক কষ্ট ফেইস করতে হয়েছে আমার।তারপর আর এতো খুশি কখনও হয়নি যতটা হয়েছি আমার প্রিয়তা কে ফিরে পেয়ে।হে সেদিন আমি তোমার খোঁজ পেয়েছিলাম।বৈঠক রুমে দেখেছিলাম আমার প্রিয়তা কে তার বাবা মায়ের সাথে ফ্রেমে বন্দিতে।
-তার মানে আমার বাবা আপনার বাবার বন্ধু ছিলেন?(চোখ বড়বড় করে বলল আরশি)
-হুুম।তোমার বাবা ছিলেন খুবি বিচক্ষণ মানুষ। আমার দৃষ্টি আমার খুশি তার চোখ এড়ায় নি।আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললেন-"তুমি কি আমার মেয়েকে চিনো?"
"জ্বী আংকেল।ইনফেক্ট আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি।"
আমার সহজ স্বীকারোক্তি শুনে হেসে উঠলেন তোমার বাবা।তারপর উনাকে সব খুলে বললাম।তোমাকে চাইলাম উনার কাছে।আংকেল আমার পিঠ চাপড়ে বললেন-"নিঃসন্দেহে তুমি আমার মেয়ের জন্য পারফেক্ট। কোনো রাস্তাই আমি তোমায় ছাড়তে বলব না।আমি জানি তুমি কারো খারাপ করো না।আমার মেয়েটা ছোট আয়াজ। তাকে কয়েক বছর সময় দেই?তারপর আমি নিজেই তাকে তোমার হাতে তুলে দিবো।"
আংকেল কে জরিয়ে ধরে বললাম-"শিওর আংকেল।কিন্ত দিন শেষে আমার প্রিয়তা যেনো আমারই হয়।"
-"অবশ্যই আরশি মানে তোমার প্রিয়তা তোমারই হবে মাই সান।"
সেদিন বাসায় ছিলে না তুমি।আন্টির কাছ থেকে শুনলাম কোনো এক ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলে।তোমাকে কাছ থেকে আবারও দেখার ইচ্ছেটা পূরণ হলো না আমার।তার কিছুদিন পরেই আংকেল আমাকে তার অফিস ডেকে পাঠায়।বলল খুব বেশি আর্জেন্ট।গিয়ে দেখি আংকেল মনোযোগ দিয়ে কি যেনো চিন্তা করছে।চোখে মুখে চিন্তার রেখা।আমায় দেখেই আমার হাত দুটো চেপে ধরলেন ওনি।
"আমি জানি আমি যা করছি তা হয়তো ঠিক না।কিন্তু বাবা হিসেবে মেয়ের ভালো মন্দের দায়িত্ব আমার।তুমি তো আমার মেয়েকে চাও তাই না?তাহলে সিকিউর করে দাও আমার মেয়ের জীবনটা।চিন্তা মুক্ত করে দাও আমায়।
আংকেলের কথায় কিছুই বুঝতে পারছিলাম না আমি।একটা কাগজ এনে আমার হাতে দিতেই অবাক হলাম আমি।আংকেলের দিকে তাকিয়ে বললাম--" প্রিয়তা নিজের ইচ্ছেতে সাইন করেছে আংকেল?"
"না আয়াজ।ওকে দিয়েছিলাম পড়তে।কিন্তু ও বুঝে নি।বাবার ওপর অগাধ বিশ্বাস তার।তাই না পড়েই সাইন করে দিয়েছে। "
"কিন্তু আংকেল পরে যদি ও জানতে পারে সবাইকে ভুল বুঝবে।"
"একটু ভুল বুঝলে কিছু হবে না।আমি ঠিক ওকে মানিয়ে নিবো।প্লিজ তুমি সাইন করে দাও।"
আমিও কাবিননামা কাগজে সাইন করে আংকেলের দিকে তাকিয়ে বললাম-"এনিথিং রং আংকেল?হঠাৎ কি হয়েছে আপনার?আমায় বলুন। নতুন কোনো কেইস নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বা চিন্তিত আপনি?
"হুম।তুমি কাল একজন কাজি নিয়ে আমাদের বাসায় এসো।আর কালই আরশিকে নিজের সাথে নিয়ে যাবে।আমি বুঝিয়ে বলব ওকে।আর কাল খুব ইম্পরট্যান্ট কথাও আছে তোমার সাথে।তাড়াতাড়ি চলে এসো। "
কাল আর যাওয়া হয় নি।তার আগেই সেদিন রাতে,,,,
কিছু জরুরি কাজ করছিলাম আমি।তখনই ফোন বেজে উঠল।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে যা শুনলাম স্তব্ধ হয়ে রইলাম।আনহার ডাকে সম্মতি ফিরে আসতেই কোনোমতে ছুটে গেলাম তোমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে,,,,,