আমার একটাই যে তুই - পর্ব ১০ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


আজ হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যাবে আমার কাহিনী। কিন্তু তখনি ইউসুফ ভাইয়া ঝাপ দেয়। আর আমার হাত চেপে ধরে পাহড়ে আরেকটা আগাছা ডালে ধরে ফেলে।  আমি তার এহেন কাজে ভয় পেয়ে চোখ বুজে নেই। সঙ্গে সঙ্গে তিনি টেনে তার বারবার করে আমাকে দাড় করায় শক্ত করে কোমর চেপে ধরে। আমি পিট পিট করে চোখ খুলতেই। তিনি দাঁত বের করে হাসি দিলেন। তার হাসিতে গা জ্বলছে আমার। উনার কিছু হলে কি হতো তখন। তাই রেগে বললাম,,

--"এমন করলেন কেন আপনি? যদি কিছু হয়ে যেতে আপনার! কে বলেছে আপনাকে ঝাপ দিতে? হুম! সুখে থাকলে ভুতে কিলায়!  তাই না? "

তিনি আমার কথার পাত্তা না দিয়ে দাঁত কেলিয়ে গেয়ে উঠলেন,,

--"তুমি যেখানে আমি সেখানে সে কি জানো না
   একি বাধনে বাধা দুজনে ছেড়ে যাব না"

তার এমন কাজে হতভম্ব ।কেউ এমন একটা বিচ্ছিরি সময় গান ধরতে পারে।  রাগে কটমট করে বলতে লাগি,,

--" ফাজলামো করেন!  মানে,  এমন সিচুয়েশনে আপনার মজা কমচ্ছে না কেমনে ভাই?এমন একটা বিচ্ছিরি সময় তো আপনি গান ধরেছেন? "

ইউসুফ ভাই ভ্রু উঁচু করে বললেন,,

--" তো কি কাঁদবো নাকি? আজিব তো? মরেই যখন যাবো এভাবে ঝুলে থাকাটা এনজয় করেই মরি! (বাঁকা হেসে) কি বলো??"

আমি তার কথায় চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছি! কি যাতা বলছে এ লোক! মাথা ঠিক আছে তো?? 

--" এই আপনি পড়ার সময় মাথা চট পাননিতো? "

ইউসুফ ভাই ভ্রু কুচকে বলল,,

--"কেন?" ব্যথা পাবো কেন?"

--"যদি না পেয়ে থাকেন তাহলে এমন পাগলের প্রলাপ করছেন কেন?"

--" আশ্চর্য নরমাল থাকার ট্রাই করছি তুই আমাকে পাগল বানিয়ে দিচ্চিস! আমাকে পাগল বললে তুই পাগলী!  হুহ!"

--" এই আপনি আপনি আমাকে পাগলী কেন বলছেন? আমি কি করেছি?"

--" একটু আগে কি করেছিস তুই ভুলে গেছিস? হাত কেন ছেড়ে দিছিলি?ওরকম ফালতু কাজ কে করতে বলেছিল তোকে? আমার উপর বিশ্বাস ছিল না? " গম্ভীর শুনালো তার কন্ঠ..!

আমি কিছু বলবো তার আগেই উপর থেকে তিথি বলল,,

--" ভাই তোমরা এই সিচুয়েশনে ঝাগড়া করছো? কিভাবে! হাউ? আমরা টেনশন করছি আর তোমরা..!"

তিথির কথার মাঝে ইউসুফ ভাই চেঁচিয়ে বললেন,,

--"হে দেখতে পাচ্ছি কতো টেনশন তোদের এখনো দড়ি যোগাড় করতে পাড়লি না আবার টেনশন চুপ থাক...! (পরে আমার দিকে ফিরে বললেন) হে! পড়ে আমরা কোথায় যেন ছিলাম! ও হে! লাফ কেন দিলি বল!"

আমি আমতা আমতা করে বলি,,

--" ততত..তো ককক..কি করবো! দদদ...দুজন একসাথে মরবো নাকি!"

ইউসুফ ভাই তখন রেগে ধমকে বললেন,,

--" আর আমি দিচ্ছি তোকে মরতে বেদ্দপ! একবার এখান থেকে উদ্ধার হইতে হাড্ডিগুড্ডি ভাঙ্গবো আমি।"

তার ধমকে ভয় চুপসে গেলাম আমি। কিছু বললাম না আর। কিন্তু সে ভাষণ দিয়ে যাচ্ছে। এমন সিচুয়েশনে কেউ যে বকা দিতে পারে এতো উনাকে না দেখলে বুঝতেই পাড়তাম না আমি। 

আমাদের কথার মাঝে হাসান ভাই দড়ি ফেললেন আর বললেন,,

--"ভাই এটা শক্ত করে ধরে উঠে এসো আমরা টানচ্ছি।"

--"ওকে!"

দঁড়ি ধরে উপরে উঠছি আমরা মনে মনে দোয়া পরছি। আর ইউসুফ ভাইয়াকে ঝাপঁটে ধরে রাখি। ইউসুফ ভাই শক্ত করে ধরে আছেন আমাকে।আমরা প্রায় উঠে পড়েছি! তখনি ঘটলো অঘটন। দড়ি মাঝ দিয়ে ছিড়ে যেতেই ইউসুফ ভাইয়া আর আমি আবার গোল গোল গড়াগড়ি খেতে খেতে নিচে পড়ে যাই এবার। পিছন থেকে ভেসে আসে চিৎকার তাদের। পড়তে পড়তে এতো নিচে চলে আসি যে উপরের কারো কন্ঠ আর শোনা যাচ্ছে না। না দেখা যাচ্ছে কিছু। মাথা ঘুড়চ্ছে। এভাবে গোল গোল ঘুড়াতে। এক পর্যায় চোখের সামনে কালো হয়ে আসে সব! তারপর আর কিছু মনে নেই আমার।

________________________

চোখ খুলতেই নিজেকে একটি অজানা পরিবেশে পাই।মাথা চেপে উঠে বসতেই চোখে পড়ে আশেপাশে বড় বড় সবুজ গাছ-পালা। এতটা ঘন যে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে আসচ্ছে। চারিদিকের পরিবাশটা দেখে গা ছমছম করতে লাগে আমার। ইউসুফ ভাইয়ার কথা মনে পড়তেই উঠতে নিতে গিয়ে পড়ে যেতে নিলাম। মাথা এখনো ঘোড়াচ্ছে। আশে পাশে চোখে বুলাতেই কিছু দূর দেখতে পেলাম ইউসুফ ভাইকে। সেন্সলেস উনি। তাড়াতাড়ি তার কাছে আসতেই চমকে গেলাম আমি তার মাথা ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে! কি করবো বুঝতে পারচ্ছি না! রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে যেন!আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।কান্না আসচ্ছে খুব। ভয়ে ভয়ে  নাকের কাছে আঙ্গুল দিলাম শ্বাস নিচ্ছেন তিনি।তারপর তাকে আমার ওড়না দিয়ে মাথা বেঁধে দেই। পরে তাকে ঝাকাতে ঝাকেতে ডাকতে লাগলাম আমি।

--ইউসুফ ভাই! ভাইয়া উঠুন না! ভাইয়া! ভাইয়া প্লীজ উঠুন।

তিনি উঠলেন না।মনে পড়লো ব্যাগে পানির পট আছে। উপর থেকে পড়ার সময় ব্যাগ আমার সাথেই ছিল। আমি বোতল থেকে পানি নিয়ে তার চোখ মুখে দিতেই তার জ্ঞান ফিরে আসলো। সাথে ফুঁটে উঠলো আমার ঠোঁটে হাসি।

ইউসুফ ভাইয়া আর আমি হাটচ্ছি পাশা পাশি। ভাই এখন মোটামোটি সুস্থ!  তিনি বার বার ফোনে নেটওয়ার্ক এসেছে কিনা চেক করছেন।কিন্তু না আসচ্ছে না।কি করবো ভাবচ্ছি তখন ইউসুফ ভাই বললেন,,

--" তাড়াতাড়ি যেতে হবে এখান থেকে সন্ধ্যা হয়ে আসচ্ছে! আশেপাশে কোনো ঘর বাড়ি আছে নাকি দেখতে হবে চল।"

বলে তিনি আমাকে ধরে হাটা ধরলেন। আমার খুব মজা লাগচ্ছে অচেনা পরিবেশে আমি আর ইউসুফ ভাই আর কেউ নেই! কতটা রোমাঞ্চকর বিষয়। খুশি খুশি লাগচ্ছে খুব! কিন্তু পাশের লোকটার মুখ ভাড় করে আছে। দেখতে মোটেও ভাল লাগচ্ছে না আমার। তাই দুষ্টুমি করতে গান ধরলাম,,

--"এখন তো সময় ভালোবাসার
   এ দুটি হৃদয় কাছে আসার
 তুমি যে একা আমিও যে একা
 লাগে যে ভালো ও প্রিয়....ও প্রিয়"

ইউসুফ তখন ফোন উঁচু করে নেটওয়ার্ক খুঁজতে ব্যস্ত। গান শুনে রেগে মেগে দিলেন ধমক,,

--" কি সমস্যা? এমন সময় তোর রোমান্টিক গান গাইতে মন চাইছে! না? এদিকে টেনশনে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে আমার বেদ্দপ!"

তার কথায় আমারো রাগ উঠলো। পাহাড়ে ঝুলে থাকা অবস্থায় তিনি যখন গান ধরলেন? তখন কি?  আর এখন আমি এত সুন্দর পরিবেশটাকে আরো সুন্দর করতে কত না সুন্দর গান গাইলাম আর এই খাটাশ লোক আমাকে ঝেড়ে দিল,,তা তো মানবো না..!

আমি কোমরে হাত দিয়ে ঝগড়ার শুরে বললাম,,

--"ওহো! আমি গাইছি তাই দোষ? আপনি কি করেছিলে ঝুলে থাকা অবস্থায়? মনে আছো তো? নাকি?"

ইউসুফ ভাই তখন ভ্রু কুচকে বললেন,,

--"তো?"

তার "তো" কথায় রাগে গা রি রি করে উঠলো। আমি তেড়ে গিয়ে বললাম,,

--" তো আবার কি হে? নিজের বেলা ১৬ আনা আর আমার বেলায় ১ আনাও না? এ কেমন কথা? এটা হতে দেবো না আমি!  হুহ!"

আমার কথা শেষ হতে না হতেই তিনি দু কদম এগিয়ে আসলেন আমার দিক। কিন্তু আমি নিজ জায়গা ছাড়লাম না।  কেন ছাড়বো? তাকে কে কি ভয় পাই নাকি আমি..!হুহ..! মোটেও না।

ইউসুফ ভাই আমার মুখামুখি দাঁড়িয়ে হাত দুটো আড়াআড়ি  ভাজ করে  বললেন,,

--" আমি বড়!  যা ইচ্ছে করতে পাড়ি!  আর একটি কথা বলবি তো এখানেই রেখে চলে যাবো!"
 
বলে হাঁটা ধরলেন সামনে। আমি রাগে দুঃখে মরে মরে যাই! এই ছিল তোর মনে! পাহড়ে ঝুলা অবস্থায় কত কেয়ার দেখালো। আমার জন্য লাফ দিলো আর এখন! সব সব আদিখ্যেতা! হুহ..!

—————

চারদিক ঝাপসা করে অন্ধকার নামছে।হেঁটে চলছি দুজন। দুজনের মাঝে চলছে পিনপতন নীরবতা। ইউসুফ ভাইয়া শক্ত করে হাতটি ধরে রেখেছেন আমার। এই বুঝি হারিয়ে যাবো আমি তা ভেবেই হয়তো!আমি মুগ্ধ নয়নে তাকে দেখচ্ছি আর হাটচ্ছি তার পিছু পিছু। 

তখনি ঝুম ঝুমিয়ে বৃষ্টি নেমে এলো শীতল বাতসের সাথে পুরো শরীর ঠান্ডা করে দিলো । ইউসুফ ভাইয়ার যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।  এমন ভাব ভঙ্গিমা করে বললেন,,

--"এটারি বাকি ছিল!"

তাঁর মুখের এমন ভঙ্গিমা দেখে না চাইতেও হাসি চলে হাসচ্ছে আমার।এদিকে ভিজে একাকার হচ্ছি আর মুখ  হাত দিয়ে হাসি আটকানোর আপ্রাণ চেষ্ট করছি যা চোখ এড়ালো না ইউসুফ ভাইয়ের। তিনি খেঁকিয়ে বললেন,,

--"এত হাসি কিসের তোর?  মুখ বন্ধ! একদম বন্ধ! নয়তো শিলি করে দেব তোর মুখ!"

তার এমন কথায় বিস্মিত হলাম। সামন্য হাসির জন্য নাকি শিলি করে দিবেন বাবা গো বাবা! আমি কি কাথা নাকি ছেঁড়া কাপড় যে শিলি করবে! যতসব আজাইরা কথা। মুখ ভাড় করে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি হাত দুটো ভাজ করে।

ইউসুফ ভাই আমার দিক কোনো তোয়াক্কা না করে  ছুটে গেলেন জঙ্গলের দিক! তার এহেন কাজ বুঝতে অক্ষম আমার ছোট মন। কি করবো ভাবচ্ছি! যাবো কি তার পিছনে? সে তো কিছু বলেও গেল না! নাকি ফেলে চলে গেল একা এই জগ্ঙলের মাঝে! এসব ভেবেই কান্না পাচ্ছে। খুব কান্না,  মরা কান্না যাকে বলে! সে কি সত্যি আমায় ছেড়ে গেল! এখন হবে টা কি আমার?

আমার ভাবনা চিন্তায় পানি ঢেলে ঢুলে ইউসুফ ভাইয়া দুটো বড় বড় কচু পাতা নিয়ে হাজির হলেন। আমাকে কাঁদতে দেখে ভ্রু কুচকে বললেন,,

--"ওই কি হইছে? কাঁদিস কেন তুই!"

আমি কি উত্তর দিব ভেবে পাচ্ছি না। নিজের মনে উল্টো পাল্টা ভাবার জন্য লজ্জা লাগচ্ছে! সে বৃষ্টিতে না ভেজের ব্যস্থা করছিল আর আমি কি না! ছিঃ।

আমি আমতা আমতা করে বললাম,,

--" সবার কথা মনে পড়চ্ছে!"

ইউসুফ ভাই আদরের সহিত কাছে টেনে নিলেন। বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য মেলে ধরলেন মাথার উপর কচু পাতা। আর বললেন,,

--" বিপদ কেঁটে যাবে বাবুইপাখি!  কাঁদিস না!  এখন চল ওই দেখ পাহারের সামনে গুহার মতো দেখা যাচ্ছে সেখানে ঠাই নেই! বৃষ্টি কমলে না হয় এগিয়ে যাবো!"

আমি মাথা নেড়ে সাই দিলাম। দ্রুত এলাম এখানে কিন্তু বিপত্তি ঘটলো। গুহা টাইপ হলেও এখানে দুটো মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়লো।একদম ইউসুফ ভাইয়ার গা ঘেষে বসতে হলো।  

বৃষ্টির বেগ বাড়চ্ছে। গুহাতে বৃষ্টির ছাট এসে পড়চ্ছে।ইউসুফ ভাইয়া কচু পাতা দুটি সামনে বেড়ার মতো করে দিলেন যেন বৃষ্টি না আসে। এদিকে ঠান্ডা লাগচ্ছে খুব। ভেজা কাপড় লেপ্টে আছে শরীরে। ভাগ্যিস সন্ধ্যা ছিল। নয়তো ইউসুফ ভাইয়ার সামনে লজ্জায় মরে যেতে হতো!

বৃষ্টি বেগে বেড়েই চলেছে। পানি এসে জমা হচ্ছে গুহোর মাঝে।কি করবো তখন ভাবতেই নড়াচড়া শুরু করি আমি।ঠিক সেই মুহূর্তে কারো উষ্ণ হাতের ছোঁয়া আমার কোমরে পাই। বুঝতে বাকি নেই ব্যক্তিটি কে। তিনি কোমোর চেপে তার দিকে টেনে নিয়ে বসিয়ে দিলেন! তার এভাবে টানার জন্য বুকের উপর পরলাম এক হাত তার বুকে। তার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম মাতাল চোখ দুটো। এ চোখে কত নেশা আজ। বুঝতে পেরে সরে আসতে নিতেই তিনি ধমকে উঠলেন,,

--"একদম নড়বি না! চুপ করে বসে থাক! বেদ্দপ!"

আমি সাথে সাথে মাথা নত করে বসে রইলাম চুপ করে।এদিকে তার এত টা কাছে যে তার গরম নিশ্বাস পড়চ্ছে  আমার মুখে,  কানে, ঘাড়ে! পাগল হয়ে যাচ্ছি তার স্পর্শ।  মন চাইছে শক্ত করে আবদ্ধ করে নেই তাকে!

বৃষ্টির বেগ হালকা হচ্ছে! মন চাইছে বৃষ্টি গুলো ছুয়ে দেখতে। আমি পাশে তাকালাম। ফোনের ফ্ল্যাশের আলোয় ইউসুফ ভাইয়ার মুখটি দেখা যাচ্ছে! কি মায়াময় তার মুখ খানা। 

আমি সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে উঠে দাড়ালাম নিঃশব্দে। দুহাত মেলে বৃষ্টি ছুঁতে লাগলাম।ঠান্ডা বরফ যেন বৃষ্টির পানি!তখনি পিছন থেকে ইউসুফ ভাইয়া বললেন,,

--" কুহু সাবধানে! মাটি পিচ্ছিল হয়ে আসে! পড়ে যাবি!"

আমি পাশে তাকালাম এক হাটু ভাজ করে বসে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছেন। আমিও মুচকি হেসে বললাম,,

--"পড়বো না ভাইয়া!"

 "পড়বো না" কথাটি বলতে না বলতে পা স্লিপ কেটে দুম করে পড়ে গেলাম ইউসুফ ভাইয়ার উপর। আর তখনি ঘটে গেল অঘটন। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে এক হয়ে গেল আমাদের ঠোঁট। সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে দূরে চলে এলাম আমি! লজ্জায় জান জান যায় যায়। মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তে মাটি ফাক হোকে আর আমিস ঝাপ দেই তাতে!
আড় চোখে ইউসুফ ভাইয়ার দিকে তাকাতেই বুঝলাম তিনি হতভম্ব এমন সিচুয়েশনে ।

____________________________________________

বৃষ্টি কমতেই বেড়িয়ে পড়লাম আমরা। এর মাঝে কোনো কথাই হলো না আর। তখনের কথা মনে পড়তেই গাল দুটি বরাবর গরম হয়ে যাচ্ছে লজ্জায়!

হেঁটে চলছি সোজা। রাস্তায় পরে থাকা মুকনো পাতায় পাড়া দিতেই খচ খচ শব্দ গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠচ্ছে।হেঁটে অনেক খানি যেতেই। দূর থেকে দুটি লিকলিকে ধোয়ার শিখা উড়ছে দেখা যাচ্ছে। ভয় পেয়ে  ইউসুফ ভাইয়ার হাত চেপে ধরলাম আমি! ইউসুফ ভাইয়া বুঝতে পেরে ফিসফিস করে বললেন,,

--" ভয় পাশ না! আমি আছি তো?"

ধীমি পায়ে এগিয়ে গেলাম আমরা। কিচ্ছু দূর যেতেই ভেসে এলো টিমটিম  আলো! সেই আলোয় দেখা যাচ্ছে একটি কাঠের দোতালা বাড়ি!বাড়ি বাহিরে বলকনিতে চলচ্ছে একটি হারিকেন। 

এই জনমানব শূন্য জায়গায় মানুষ পেয়ে শান্তি লাগলো। দ্রুতে এ গিয়ে যেতেই দেখা মিললো অধিবাসী বুড়ো বুড়ির। বারান্দায় বসে খোশ গল্প মেতে তারা। দূর থেকে ভেসে আসচ্ছে তাদের হাসি!বুড়ির পোষাক দেখে আমি অবাক ব্লাউজ ছাড়া কাপড় পড়েছেন তিনি। তাকে দেখে লজ্জা লাগচ্ছে আমার।

আমরা তাদের কাছে যেতেই বিস্মিত হয়ে বললেন,,

--" একি তোমরা কে! বাছা?"

ইউসুফ ভাই তখন বিনয়ের সাথে বললেন,,

--" জ্বি আমরা টুরিস্ট! " 

তারপর একে একে সব কথা বললেন তিনি! শুধু চেপে গেলেন আমরা সম্পর্কে ভাই বোন! এ কথাটি! এর পরবর্তীতে তিনি যা বললেন। তাতে চমকে গেলাম আমি। বুড়ি সন্দিহান দৃষ্টিতে জিগ্যেস করলো,,

--" তাতো বুঝলাম! কিন্তু তোমরা কে?মানে সম্পর্কে কি হও?" 

ইউসুফ ভাই তখন চট করে আমায় কাছে টেনে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললেন,,

--" আমরা স্বামী-স্ত্রী! হানিমুনে এসেছিলাম। এর এখন এই হাল।"

বুড়ো তখন আপসোসের সাথে বললেন,,

--"বেচারা!"

আমি তাদের কথায় যেন আকাশ থেকে পড়লাম। কি বলছে এসব তারা? আমি রাগে কটমট করে তাকিয়ে রইলাম তার দিক! ইউসুফ ভাই হেসে হেসে চোখ টিপ মারলেন আমার দিক। আমি অবাক হয়ে তার কর্মকাণ্ড গুলো দেখে যাচ্ছি! দিন দিন বেশরম হয়ে যাচ্ছে এই লোক!

তখন বুড়ো আবার বলল,,

--"এ জায়গাটা তেমন সুবিধার না! তোমরা সুস্থ সবল আছো এটাই শুকরিয়া।"

তারপর ইউসুফকে ইশরা করে বলল,,

--" তুমি আমার সাথে আস বাবা!"

ইউসুফ ভাইয়া মাথা নেড়ে তার সাথে চলে গেল।তখন বুড়ি আমাকে তার সাথে নিয়ে একটি রুমে এলো। তারপর জিগ্যেস করলো,,

--" তোমার কাপড়  চুপড় তো ভিজা শেষ! কাপড় আছে ব্যাগে!"

আমি মাথা নাড়িয়ে না করলাম। কারণ কাপড়ের ব্যাগ রিসোর্টে ছিল।  আর সেখানে যাওয়ার কথা ছিল আমাদের। বুড়ি তখন হেসে বললেন,,

--" আচ্ছা আমি দিতেছি! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ব্লাউজের! 

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,,

--" তাহলে পড়বো কিভাবে!"

--" কেন ব্লাউজ  ছাড়া!"

আমি সাথে সাথে বিসম খেলাম। জোড়ে বলেই ফললাম,,

--"অসম্ভব! "

--"অসম্ভব!  কেন? "

--"উনার সামনে কিভাবে পড়বো!"

বুড়ি হেসে দিয়ে বললেন,,

--" সমস্যা কি স্বামী তো!"

আমি কাঁদ কাঁদ মুখে বললাম,,

--"আমি পড়বো না!"

তিনি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,

--"কেন পড়বা না!"

এদিকে আমি পড়লাম মহা জালায়! আদ কি সম্ভব এভাবে শাড়ি পড়ে ইউসুফ ভাইয়ার সামনে যাওয়া??আমি মুখটা কাচু মাচু করে বললাম,,

--"ল...লজ্জা ক..রে!"

তিনি হেসে গাল টেনে দিয়ে বললেন,,

--" লজ্জা কিসের!  স্বামীইতো!"

আগত তিনি  তাঁর মতো করে কাপড় পড়িয়ে ছাড়লেন আমায়। এখন ভীষণ লজ্জা লাগছে কেমনে যাব ইউসুফ ভাইয়ার সামন্য।

কাপড় পড়ে নিজেকে আয়নায় দেখে লজ্জায় লাল আমি! বুড়ি বললেন তখন,,

--"সুন্দর লাগচ্ছে মা তোমাকে!"

আমি কি বলবো বুঝতে পাড়চ্ছি না। শুধু হাসলাম। তিনি আবার বললেন,,

--" চলো তোমারে দিয়া আসি!"

--"কই!"

--"কই আবার তোমার স্বাীর কাছে!" বলে ফিক করে হেসে দিলেন তিনি।

এদিকে দম আটকে মারা যাওয়া উপক্রম অামার। দু হাত মুচরে যাচ্ছে! কাঁপালে জড় হচ্ছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।  না জানি কেমন রিএকশন দিবে আজ ইউসুফ ভাই।

রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে। ভিতরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না আমার। কি হবে না হবে ভেবে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসচ্ছে আমার।এদিকে বুড়ি আমাকে তারা দিচ্ছে ভিতরে যেতে! কিন্তু পা সেটে গেছে আমার মাটির সাথে! লাষ্টে পর্যন্ত বুড়ি আমাকে ঠেলে ঠুলে ভিতরে ঢুকিয়ে দিতেই.....!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন