আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ০৩ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


- এরশাদ রবিনকে নিয়ে রিক্সা চালক গফুরের বাসায় গেল। গফুরের বৌ ও জানালো তার স্বামী বাসায় আসেনি।

গফুরের না আসার কথা শুনে এরশাদের চোখে অন্ধকার নেমে আসে। মেয়ে তার গেল কই। গফুরের বৌকে আর কিছু না বলে রবিন কে নিয়ে চলে এল এরশাদ।

কি বলবে এটা তো মানসম্মানের প্রশ্ন।

|

- রাস্তা সহ আশেপাশে সব খানে খুঁজল কিন্তু কোথায়ও আর পেলনা তিতিরকে। আদরী ঠিকি বলেছিল ওর পড়াশুনার দরকার নাই। কেন যে আমি ওকে ভর্তি করাইতে নিয়ে গিয়েছিলাম! আর ওকে কেন যে একা ছাড়লাম! আল্লাহ্ এখন আমি কি করবো।

|

- চাচা কোন দুর্ঘটনা হলনাতো! গফুর চাচা এতটা খারাপ না যে তাকে সন্দেহ করবো। আমার মনে হয় তিতির আর গফুর চাচা কোন বিপদে পড়ছে। থানায় গিয়ে কিছু বলি চলেন।

|

- এরশাদ এবার বেশ জোড়েই ধমক দেয় রবিন কে। পাগল হয়ে গেছিস! ওরা তো খুঁজে দিবেই না তার উপর মান সম্মান কিছু থাকবেনা। বাসায় চল বলে রবিনকে নিয়ে বাসায় আসল এরশাদ।

|

- কথা আর গোপন থাকলনা আদরীর কাছে। আদরীরও মুখে যা আসছে সব দিয়ে গালি দিচ্ছে তিতির কে।

যার মা নাং করে গলায় দড়ি দিতে পারে তার মেয়ে আর কতটা ভাল হতে পারে সেটা জানায় আছে সবার। মা টাও যেমন বেশ্যা মেয়েটাও তার থেকে ডবল বেশ্যা হয়েছে। এই বয়সে এমন! নাজানি আরো কত কি দেখতে হবে।

দেখ গিয়ে কোন নাঙ্গের সাথে ফষ্টিনষ্টি তে আছে।

|

- আদরীর কথাটা আজ এরশাদের বুকে এসে বিঁধল। রুবিনার কথা খুব করে মনে পড়ল আজ। সেদিন যদি রুবিনাকে ওভাবে রাগের মাথায় কথাগুলো না বলত তাহলে হয়ত ব্যাপারটা অন্য রকম হতো।

|

- আদরী তার দুই ছেলে-মেয়েকে রাতে খাওয়াই নিজে খেয়ে ঘুমাতে চলে গেল। এরশাদ আর খেতে পারলনা। মেয়েটা কি অবস্থায় আছে আল্লাহ্ ভাল জানে। ইভান বিছানা থেকে উঠে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল বাবা আপু কই গেছে! মা আবার আপুকে কেন বকছে?

|

- এরশাদের কাছে এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। ইভান যাও ঘুমিয়ে পড়ো বাবা। তাছাড়া মা বকা দিবে যাও। সকাল না হওয়া পর্যন্ত আর কিছুই করা যাবেনা।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- ভোরের দিকে তিতির চোখ খুলল। মাথায় ব্যান্ডেজ, হাতে সালাইন। শরীরের অনেক জায়গায় ব্যাথা। নরার মত ক্ষমতা নাই। পাশে গফুর চাচা দাড়িয়ে আছে।

|

- মা তুমিতো ভয় পাইয়ে দিছিলা। তোমার মায় যে খারাপ হের লাগি বাড়িতে একটা খবরও দিতে পারি নাই। আল্লাহয় জানে তোমাগো বাড়িতে কি অবস্থা।

|

- সন্ধ্যার কথা মনে পড়ে গেল তিতিরের। বাজারের কাছ থেকে একটু দুরে যাওয়ার পরেই পিছন থেকে কি জানি একটা ধাক্কা দেয়। রিক্সা থেকে হুমরি খেয়ে পরে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খায় তারপর আর কিছু মনে পড়েনা।

মায়ের কথা মনে পড়তেই তিতিরের চোখ দিয়ে পানি পড়ে গেল। পুরা রাত বাহিরে। মা কি আর বাসায় ঢুকতে দিবে? অহ্ আল্লাহ্ যদি আজ মরে যেতাম তাহলে কতই না ভাল হত।

|

- তিতির সকাল হলে তোমার বাপরে খবর দিমু। এখনতো ভোর তাই দিতে পারুম না। আল্লাহয় জানে তোমার কপালে কি আছে। যে ব্যাডা এগুলো করছে হেই আমাদের এহানে নিয়া আইছে। কিন্তু তারে দেহি নাই।

|

- গফুরের শরীরে অনেক জায়গায় কাটা ছেড়া। মনে হয় তিনি প্রচুর আঘাত পেয়েছেন। আর কিছুক্ষন থেকে সকাল হলে গফুর গ্রামে চলে গেল এরশাদকে আনতে। জানেনা কি হবে।

|

- একটা নার্স এসে তিতিরকে বলল আপু যে তোমাকে আডমিড করেছে তাকে কি তুমি চেন!

|

- তিতির শুধু ঘাড় নাড়িয়ে না জবাব দিল। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।

|

- তাইতো বলি ওমন মানুষের আত্বীয় আপনি কিভাবে হোন। তাহলে উনি কি মিথ্যা বলল! সব বিলও দিল আবার বলে গেল পরে আবার আসবে। মনে হয়না আর আসবে। নার্স আর কিছু না বলে চলে গেল। তিতিরের মাথায় কিছুই আসলনা নার্স কি বলে গেল। ওর চিন্তা শুধু একটায় মা বাসায় ঢুকতে দিবে তো! আল্লাহ্ সাহার্য্য করো আমাকে।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- সকাল ৭ টার দিকে মনুজান, এরশাদ আর ইভান চলে আসল। ইভান এসেই তিতিরে বেডে বসে বলল আপু তোমার কি হয়েছে? তুমি বাসায় যাওনি বলে মা কত্ত বকা দিল তোমায়।

|

- তিতির কিছু বলতে যাবে এমন সময় মনুজান কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। বাপ তোর বৌয়ের এবার একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়। কাল কতগুলা গালি দিল মাইয়াটারে। কোন মা এমন কইরা গালি দেয়! ভাবছোস বাড়ির ভিতরের কথা বাহিরে আহে না! সব শুনছি। মাইয়াডারে শেষ করে দম নিবো তোর বৌ। তিতিরের পড়া যদি বন্ধ করছোস তাহলে কিন্তু এবার আমার রুপ দেকবি।

|

- এরশাদ আর কিছু বলতে পারেনা। তিতিরকে বিছানা থেকে তুলে বলল মা চল বাড়ি যাবো। তিতির আস্তে আস্তে হেঁটে বাবার সাথে বাহিরে চলে আসল। এমন প্রাইভেট ক্লিনিকে সেবা পাওয়াটা অনেক টাকা পয়সার ব্যাপার সেখানে তিতিরকে এসি রুমে সেবা দেওয়া হয়েছে অতি যত্ন সহকারে। এমনকি এর জন্য টাকাও নেওয়া হয়নি। এরশাদ অনেকবার জিঙ্গাসা করেছে নার্সদের কিন্তু কোন তথ্য বের করতে পারেনি। তিতির জানতেও পারল না তার এতবড় উপকার কে করল।

|

- তিতিরকে নিয়ে সকাল ৯ টার দিকে বাসায় ফিরল এরশাদ। বাসায় আসার পথে অনেকে কৌতুহলী হয় জিঙ্গাসা করল কি হয়েছে তিতিরের! আবার কি তার মায়ে ধরে মারছে! এসব কথা আর কি?

|

- আদরী তিতিরকে দেখে কিছু বলতে গিয়েও আর বলল না কারন এরশাদ কঠিন মুখ করে আছে। মনুজান এসে তিতিরকে বিছানায় শুয়ে দিতেই এরশাদ প্লেটে খাবার নিয়ে চলে আসল। তিতিরকে খাওয়াই দিয়ে ঘুমাতে বলে চলে গেল এরশাদ।

|

- ইভান ইভাকে কোলে নিয়ে এসে বলল আপু ও তোমাকে দেখেই কান্না করছে। বেডে ইভাকে বসে দিয়ে ইভান পাশে বসল। ছোট্ট ইভা কে কাছে নিয়ে তিতির আদর করতে লাগল।

এদের ৩ ভাই-বোনের ঠিকি মিল আছে কিন্তু কাল নাগীনির সাথেই কারো পরতাই পরেনা।

|

- আমি কাল নাগীন? আমার সাথে তো কারোই পরতা পড়েনা তাইনা! আগেরটারে তো সেই মারধোর করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন। আপনিও কি আমায় ওর মত বোঁকা ভাবছেন! বেচারী তো গলায় দড়ি দিয়ে মরে বাঁচছে আর আমার কাধের উপর যম গছে দিয়ে গেছে। কথাগুলো আদরী বলতেই এরশাদ এসে ঠাসসসস্ করে আদরীর গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল আর একটা কথা যদি বলিস তাহলে আজই এই বাসায় তোর শেষ দিন হবে।

|

- আদরী চিৎকার দিয়ে কান্না করে উঠে বলল তোমার মা যে এত কথা আমায় শোনায় তার বেলায় কিছু না! আমার গায়ে তুমি হাত তুললে? থাকো তোমার ছেলে মেয়ে নিয়ে আমি বাপের বাসায় আজই যাবো বলে আদরী গিয়ে কাপড় গোছাতে লাগল।

|

- জন্মের মনে চলে যা বাসা থেকে। খবরদার বাসায় আর আসবি না বলে এরশাদ বাসা থেকে বের হয়ে গেল। আদরীও একটু পর ব্যাগ গুছে ইভাকে নিতেই মনুজান বলল যাবি একা যা ইভারে নিতে পারবিনা। দেখি কত তোর বাপের বাড়ি থাকার সখ। কয়দিন তোর বাপ তোরে বসিয়ে খাওয়াই সেটাও না দেখে আমি ছাড়ছিনা। অনেক জ্বালাইছোস আমার তিতির আর এরশাদরে। রাখ ইভাকে বলেই আদরীর কাছ থেকে ইভাকে কেড়ে নিল মনুজান।

|

- আদরী বাসা থেকে চলে গেল সবাইকে রেখে। কি মতলবে গেল সেই শুধু জানে। তিতির যেহেতু অসুস্থ তাই মনুজান বাসার সমস্ত কাজ করলো। পরের দিন ঐ অসুস্থ অবস্থায় তিতির ছোট বোনকে দেখাশুনা সহ বাসার সব কাজ করা শুরু করল। এরশাদও কাজে নানা সাহার্য্য করে। এভাবে আরও ৪ টা দিন চলে গেল তবুও আদরীর আসার নাম নাই।

এরশাদও রাগ করে আর নিতে যায়নি।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- ৮ দিন পর আদরী নিজে বাসায় আসে। এখানে আদরীরও প্লান ছিল। যাতে ঐ অসুস্থ শরীর নিয়েও বাসায় কাজ করে তিতির। আদরী তখনও জানতো না তিতির কলেজে ভর্তি হয়েছে। বাসায় এসেই আদরী ইভাকে নিয়ে রুম গোছাতে রুমের ভিতর চলে গেল। আর তিতির বেচারী একা একা সব কাজ করে।

|

- এরশাদ বাসায় এসেই আদরীকে দেখল কিন্তু কথা আর বলল না। ইভাকে কোলে নিয়ে ইভান কে সাথে নিয়ে তিতিরের কাছে গিয়ে বলল তিতির আমাদের খাবার দে তো!

|

- তিতির ওদের খাবার দিয়ে ইভাকে খাওয়াতে লাগল।

|

- তিতির আর কয়টা বই লাগবে মা লিষ্টটা দিস তো! কাল শহরে যাব। আসার সময় কিনে আনবো। কোন বই যেন বাদ না থাকে। আর কয়েকটা ড্রেসও আনবো তুই তোর চাচীর কাছ থেকে বানিয়ে নেস। যা মজুরি হয় তা দিয়ে দিব নি।

|

- আচ্ছা বলে ইভাকে মুখে ভাত পুরে দিতেই ও ঘর থেকে আদরী চিল্লাইতে চিল্লাইতে চলে আসল। ও কলেজ যাবে আর আমি ছোট বাচ্চা হাতে কিভাবে এতগুলো কাজ করবো! কোন কিছুর একটা সীমা আছে। আমি পারবোনা একা এতগুলো কাজ করতে।

|

- কাজ করতে যখন পারবিনা তখন বাপের বাড়ী চলে যা। চলেতো গিয়েছিলি আবার কেন আসছিস! বাপের বাড়ী বসে বসে খাওয়ার সখ তোর মিটছে! এটা মনে রাখবি এরা ছাড়া তোর আপন আর কেউ নাই। আমি কি একবারও বলেছি যে তুই বাড়ীতে চলে আয়? এরশাদ অর্ধেক খেয়ে বাঁকিটা রেখে খাবার ছেড়ে উঠে গেল। তিতির আর কিছু বলল না। আমার জন্যই বাসায় এত ঝগড়া। ইভাকে পানি খাওয়ায় দিতেই আদরী এসে ইভাকে কেড়ে নিয়েই তিতিরের পিঠে কয়েকটা মুটকি মেরে বলল বাপকে তাবিজ করছোস আমার বিরুদ্ধে! আমি ছিলাম না আর এর মাঝে এত কিছু করেছিস! দেখি তুই কিভাবে কলেজ যাস বলে আদরী চলে গেল।

|

- তিতিরের চোখের পানি চলে আসল। ইভান খাবার ছেড়ে এসে তিতিরকে বলল আপু আমি বড় হয়ে চাকরি করলে তোমাকে এখান থেকে অনেক দুরে নিয়ে যাবো। কেঁদ না আপু বলে বা হাতে তিতিরের চোখের পানি মুছে দিল ইভান।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- তিতিরের কাজ যেন বেড়েই চলে। একের পর এক কাজ করতে দেয় আদরী। আজ কলেজের প্রথম দিন তাই সকাল-সকাল উঠে সব কাজ করার পারাপারি উঠে যায়। ভাতটা রান্না করে সব ঘুছিয়ে রাখতেই বাড়ীর গেটে টোকা দেওয়ার শব্দ হতেই তিতির গেট না খুলেই বলল রবিন ১০ মিনিট সময় দে আমি আসছি বলে দৌড়ে গিয়ে রেডী হতে লাগল। কেবল রেডী হয়ে কাধেঁ ব্যাগ নিতেই আদরী আরও একটা কাজ ধরিয়ে দিয়ে বলল এটা করে যা। এবার তিতির হতাস গলায় বলল মা আমি এসে করে দেই! আমার একদম সময় নাই। রবিন অনেক্ষন থেকে বাহিরে দাড়িয়ে আছে।

|

- ঐ ওরাই তো তোর মাথা খাইছে। কাজ গুলো করে তারপর কলেজে যাবি। আমি করতে পারবোনা বলে চলে যেতেই এরশাদ চেঁচিয়ে উঠে বলল তিতির কলেজ যা। যা কাজ বাঁকি আছে আমি করছি। দেখি ও আর কত বসে থেকে খেতে পারে। বাড়ীর বড় হয়েও তার ৮ টায় ঘুম ভাঙ্গে। নামায কালাম তো নাই শুধু মাথা ভরা পেঁচুক বুদ্ধি।

|

- তিতির চলে গেল। ওর বাবা মা ইতিমধ্য ঝগড়া লেগে গেছে সেদিকে খেয়াল দিলে চলবে না বলে বাসা থেকে বাহিরে আসতেই গেটের সামনে একটা রিক্সা দেখল তিতির।

|

- ঐ রিক্সাই ওঠ তাছাড়া সময় নাই বলে রিক্সাই উঠে বসল রবিন। সেটা দেখে তিতিরও চুপচাপ করে উঠে বসল। রিক্সা চলছে রবিন অনেক কিছু শিখিয়ে দিচ্ছে কলেজে গেলে কেমন ভাবে থাকতে হবে। তিতির ছেলে বন্ধু যেন কখনো করতে যাবিনা। যা দরকার হয় আমাকে বলবি। চাচী যা তাতে কারো সাথে বন্ধুত্ব করা ঠিক হবেনা।

|

- বাজারে এসে রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে একটা সিএনজিতে উঠে কলেজের পথে রওনা দিল। আরও ৪৫ মিনিট পর কলেজে পৌছাল ওরা। তাড়াতাড়ি করে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে তিতির কে নিয়ে কলেজে ঢুকে হলরুমের দিকে ছুটল রবিন। হলরুমে এসে দেখল সবাই চলে আসছে। রবিন লজ্জা শরম সব কিছু ভুলে গিয়ে তিতিরকে নিয়ে মেয়েদের ভিড়ে গিয়ে একটি বেঞ্চে বসে পড়ল।

যাতে এত অপরিচিতদের মাঝে ভয় পেয়ে না যায় তিতির।

|

- ১০ মিনিট পর স্যার চলে আসল ক্লাসে। সবার সাথে পরিচয় হয়েই রবিনকে দাড়াতে বলল স্যার।

|

- এই ছেলে এত বসার সিট থাকতে মেয়েদের সারির ভিতর কি করছো! দেখতো তোমার মত একটা ছাত্রও এমন কাজ করেছে কিনা! মেয়েদের কাছে না গেলে কি তোমার ভালো লাগেনা বলতেই পুরো ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা হেঁসে উঠল।

|

- রবিনও লজ্জায় ওদের সামনে মুচকি হাঁসি দিয়ে উঠল। কোনমতে ক্লাস করে তিতিরকে নিয়ে বাহিরে আসল। দেখলি তিতির বাহিরের জগৎটা কত কঠিন! এরা সবাই মজা পেতে সব কিছু বলতে পারে। দারা ছাত্রলীগে নাম লেখাবো আর এই স্যারকেই প্রথমে ধরবো সময় আসলে। শিক্ষা কাকে বলে সেদিন তাকে দেখাবো।

|

- শিক্ষক তো শিক্ষকই হয় রবিন। উনি অন্যায় করলে তার শাস্তি উনি এমনি একদিন পাবে তুই কেন পাপের ভাগ বাড়াবি বলতেই তিতিরের ফোনে কল আসল। অচেনা নাম্বার থেকে কল আসল।

|

- এক সপ্তাহ হয়নি বাবা এই বাটনের সেটটা কিনে দিছে তার মধ্য অচেনা নাম্বার থেকে কল! রবিনের দিকে তাকাতেই রবিন ফোনটা নিয়ে রিসিভ করতেই বলল হ্যালো আপনি কি জান্নাতুন তাজরীম তিতির বলছেন? সুন্দরবন কোরিয়া সার্ভিস থেকে বলছি।

|

- এবার রবিন তিতিরকে ফোন দিয়ে বলল কথা বল। তিতির ফোন নিয়েই বলল হ্যাঁ আমি তিতির।

|

- ম্যাম আপনার নামে একটা পার্সেল আসছে। প্লিজ পার্সেলটি নিয়ে যান ম্যাম বলে কেটে দিল কল।

|

- কিরে তিতির তোকে কে পার্সেল করবে! কাউকে কিছু দিতে বলছিলি?

|

- তিতির ভয় পেয়ে বলল আমি তো কাউকে চিনিই না রবিন। আমার খুব ভয় লাগছে। কে এমন কাজ করলো।

|

- আরে বোঁকা চলতো আগে দেখি তারপর দেখা যাবে বলে রবিন একটা রিক্সা ডেকে তাতে চড়ে তিতিরকে নিয়ে চলে গেল।

রবিন আর তিতির একটা ছোট্ট প্যাকেট রিসিভ করে আবার কলেজে আসল।

একটা ফাঁকা জায়গাতে বসতেই রবিন বলে উঠল কোন হারকিপ্টা পাঠাইছে। কোন ওজনই নাই প্যাকেটের।

|

- তিতিরে চোখেমুখে কৌতূহলের চেয়ে ভয়টায় বেশি কাজ করছিল। কে তাকে পার্সেল দিবে? কাউকে তো চিনে না সে। ঢাকা থেকে পার্সেলটি করা হয়েছে।

|

- রবিন খুলেই অবাক হল। শুধুই একটা চিঠির খাম। এ্যাঁ শুধুই একটা খাম!!!!!!!

আল্লাহ্ জানে তুই কোন ধাপ্পাবাজের পাল্লায় পড়েছিস রে তিতির বলেই খামের মুখ খুলে একটা চিঠি বের করল। খামের ভিতর মাথার চুল বাঁধার কাঠের স্টিকের অর্ধেক অংশ। এই তিতির এটা তোর চুলের কাটা তাইনা! কিন্তু এটা অর্ধেক কেন?

অনেকক্ষন ভেবে রবিন বলল বাঁকি অর্ধেক নেই মানে ঐ ব্যাক্তিটির কাছে অর্ধেকটা আছে। তারমানে যে এটা পাঠিয়েছে সেই তোরে ভাল করেই চিনে। কিরে সত্যি করে বল প্রেম টেম করছিস নাকি হুম! চাচী বা চাচা জানলে কি হবে বুঝছিস! এখানেই তোর পড়াশোনা ইস্তেফা দিতে হবে।

|

- তিতির খুব ভয় পেয়ে গেল এবার। আমি কাউকে চিনি নারে রবিন। আমার ফোন নাম্বার সে কই থেকে পাইবে বল! বাবা তো আমায় ফোন কিনে দিছে এক সপ্তাহও হয়নি। তুই তো আমাকে ভাল করেই চিনিস আমি এমন কাজ কোনদিনও করবোনা। এমনি বাসায় সময় পাই না। আমার খুব ভয় করছে রে কে পাঠালো এগুলো?

|

- আরে বেকুব বাদ দে তো! পরে গবেষনা করবো এখন এটা পড়ি আর তুই ভালো করে শোন বলে রবিন পড়তে লাগল।

চিঠিটা একান্ত গোপনীয়। চিঠির মালিকই যেন পড়ে এমন কথা সর্বোপ্রথমেই ঠিঠিতে লেখা আছে।

শেষে রবিন চিঠিটা তিতিরের হাতে দিয়ে হতাস গলায় বলল নে তুই পর। আমার আর পড়ার অনুমতি নাই বলে তিতিরে হাতে চিঠিটি গুজিয়ে দিল রবিন।

|

- এবার তিতির পড়তে লাগল।

♥তিতির♥

উম আপনাকে কি নামে ডাকি বলেন তো! তিতির না আমার ময়ূরাক্ষী। হুম আমার ময়ূরাক্ষী..... শুধু আমারই। আপনার চুলের স্টিকের অর্ধেক আমার কাছে রেখে দিলাম। নিশ্চয় একটা সময় আসবে যেদিন বাঁকি অর্ধেকটা আমি নিজ হাতে আপনাকে দিব। ভালবেসে ফেলছি.... এবং খুবই ভালবেসে ফেলেছি আপনাকে। তাই ভালবাসাটা এভাবেই প্রকাশ করলাম। অনেক কিছু দেওয়ার আছে আর পাওয়ারও আছে। ময়ূরাক্ষীর দায়িত্বটাই আমি আপনাকেই সঁপছি। তাই আশা করি নিজের খেয়াল রাখবেন আর আমার ময়ূরাক্ষীর হেফাযত করবেন।

★অচেনা অতিথী★

পুরোটা পড়ে তিতিরে শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।