আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - অন্তিম পর্ব ৩৩ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


চোখের সামনে এত দ্রুত যে এমন একটা ঘটনা ঘটবে সেটা কেউই ভাবতে পারেনি।
তিতিরের থাপ্পড়ে প্রাচী সহ পার্থ দু'জনেই হতবাক হয়ে যায়। এই মেয়ে ছাড়ো বলতেই তিতির হ্যাকচা একটা টান দিয়ে পার্থকে ছেড়ে দেয়। বাসা ভর্তি কাজের মানুষের সামনে এমন ব্যবহারে পার্থ ভিষন লজ্জা পেয়ে রেগে যায়।  রাগে সেন্টার টেবিলে একটা লাথি মেরে বলে, আমার গায়ে হাত তোলা! এই পার্থের শরীরে আঘাত করা? তোমার স্বামীকে যদি আমি দেউলিয়া না বানাইছি...........

কথাটা শেষ করতে পারেনি পার্থ। তার আগেই মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তিতির বলে উঠলো, তাহলে আমি প্রভাষ রায়ের ছেলে নয়। পল্লবী রায়ের প্রথম সন্তান পার্থ রায়। যার ক্লাস এইট পড়ুয়া ছোট বোন হঠাৎ করে পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। এই তো তোমার পরিচয়? কি সঠিক বললাম তো!

পার্থের মেজাজটা এবার একটু বেশিই খারাপ হয়ে গেল। পার্থ কারো পিছনে পড়লে তার অতীত বর্তমান সব কিছু যাচাই করে। কিন্তু এই মহিলা দেখছি তার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে আছে। পার্থ প্রায় জ্ঞানশূন্য হয়ে তিতিরের উপর চড়াও হতেই সাদ দৌড়ে এসে পার্থের পা দু'টি জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। আঙ্কেল আমার মা খুবই অসুস্থ। তাকে আর বকবেন না।

কিন্তু প্রাচী সোজা কোন কথা না বলে তিতির গায়ে হাত তুলতেই ওয়াহিদ ওর হাতটা শক্ত করে ধরে চোখমুখ কঠিন করে বলল-

~" ২জনের মধ্য ৩য় জনকে একদমই মানায় না। আপনার হ্যাসব্যান্ড ইচ্ছা করে এতগুলো অন্যায় কাজ করেছে, কই তাকে তো নিষেধ করেন নি! আমার তো মনে হয় আপনার হ্যাসব্যান্ড সব কথায় আপনার সাথে শেয়ার করে।"

কথাগুলো বলেই ওয়াহিদ প্রাচীর হাত ছেড়ে দিয়ে সাদকে টেনে তুলে বলল-

~" সাদ, তোমার মা একজন স্ট্রং ও দায়িত্বশীল মানুষ। তোমাকে পেটে নিয়ে ও জিবনে যেই লড়াই করেছে তার কাছে এই সমস্যাগুলো অত্যান্ত তুচ্ছ।"

আপনি এখুনি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যান না হলে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব। আপনার শশুরের মত মন্ত্রী আমার পকেটে দু'চারটা সব সময় থেকেই থাকে। মেয়ে মানুষ বলে বেঁচে গেলেন। এক্ষুনি বের হয়ে যান। আর প্রস্তুত হয়ে থাকেন আমি আজ থেকে ঠিক কি কি করি আপনার পরিবারের সাথে। সন্তান মারা গিয়ে দেখি শিক্ষা হয়নি আপনার। কথাগুলো বলেই পার্থ তিতিরের দিকে চেয়ে দেখলো ওর চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। 

পার্থের কথাটি নিতে পারেনি তিতির। যেই মানুষ তার মুখের উপর কোনদিনও কোন কথা বলেনি আর সেই মানুষ আজ এমন করে কথা বলছে। মাথার ব্যাথাটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। চোখ দু'টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। নিজের ভিতর পরিবর্তন হচ্ছে দেখে তিতির বড় বড় শ্বাস ফেলে বলতে লাগলো, ওয়াহিদ আমাকে এখান থেকে দ্রুত নিয়ে চলুন। এখানে থাকলে আমি আর বাঁচবোনা।

ওয়াহিদ তিতিরের হাত ধরে ওকে সঙ্গে সঙ্গে সোফায় বসিয়ে দিয়ে প্রাচীকেই অস্থির স্বরে বলে উঠলো-

~" প্লিজ আমাকে এক গ্লাস পানি এনে দেন। ওর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।"

প্রাচীও পরিস্থিতি দেখে দ্রুত পানি আনতে বলল কাজের লোকটিকে। ততক্ষনে তিতির জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। মা মা বলে বার বার করে তিতিরকে ঝাকিয়েই চলছে সাদ। 
এই তিতির তোমার কি হলো বলতেই পার্থ এবং প্রাচী দু'জনেই যেন আকাশ থেকে পড়লো। তিতির বলেই প্রাচী পার্থের দিকে চেয়ে দেখলো, পার্থের চোখ দু'টি দিয়ে জল গড়িয়ে টপ করে পড়লো।

পার্থ দ্রুত মুঠোফোন বের করেই ডাক্তারকে কল দিল। ওপাশে হ্যালো বলতেই পার্থ উত্তেজিত কন্ঠে বলল-

~" ডক্টর আপনি যেখানেই থাকুন না কেন আমার বাসায় এক্ষুনি আসেন।"

~" স্যার আমার আসতে তো দেরী হবে। আমি অন্যজনকে পাঠাই?"

~" আমি কোন কথা শুনতে চাইনা। আপনি দ্রুত চলে আসেন।"

কথাটা বলেই পার্থ তিতিরের দিকে চাইলো। প্রাচী দ্রুত গিয়ে তিতিরের হিযাব খুলে দিতেই পার্থ পরিতৃপ্তি চোখে তিতিরকে দেখতে লাগলো। 

কে এই পার্থ!
তিতির যখন ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয় স্কুলে তখন থেকে এই পার্থ ওকে পছন্দ করতো। পার্থ তখন ক্লাস এইটে পড়তো। পাক্কা ৩ বছর তিতিরের পাছে ঘুরেছে। দু'জনের ধর্ম আলাদা হওয়ায় সম্পর্কটা আর তাদের জোড়া লাগেনি। কিন্তু পার্থের পাগলামি বেড়েই যায়। এর জন্য একদিন স্কুলের হেডমাস্টার অফিসকক্ষে নিয়ে পার্থকে বেদম মাইর দেয়। ভালো ছাত্র বিধায় টিচাররা ওকে স্কুল থেকে বের করে দেয়নি। 

তারপর সর্বোচ্চ রেজাল্ট নিয়ে স্কুল পাশ করে কলেজ লাইফে ওঠে তবুও তিতিরের পাছ ছাড়েনি সে। তিতির তখন ক্লাস এইটে পড়ে। পার্থর ছোট বোন প্রীতিলতা তিতিরের কাছের বান্ধবী ছিল। হঠাৎ সে পুকুরে গোসল করার সময় পানিতে ডুবে মারা যায়। প্রীতিলতার মৃত্যুর পর পার্থকে তেমন আর দেখেনি তিতির।

একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে তিতিরের পথ আটকায় পার্থ। তারপর হাত জোড় করে বলে, তুমি যা বলবা আমি তাই করবো, আমার ধর্মও পাল্টাবো। তবুও তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিওনা। শেষে তিতিরের পা ধরে পার্থ। সেদিন তিতির কিছু বলতে পারেনি। ওর বাসার পরিস্থিতি ভালো হলে হয়ত ওদের সম্পর্কটা অন্যরকম হতো। বাসায় যখন তিতির ফিরে তখন ওর এক বান্ধবী পার্থ আর তিতিরের ব্যাপারে সব কিছু বলে দেয় ওর মা আদরীকে। তারপর সেদিন আদরী তিতিরকে এতোই মারে যে ও ৯দিন বিছানা থেকে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে পার্থর পরিবারের কাছেও পার্থের এমন পাগলামো গোপন থাকেনা। এমনি একটা সন্তানকে হারিয়ে প্রভাষ রায় পাগলপনা হয়ে গিয়েছে। তার ভিতর ছেলে আবার অন্য ধর্মের মেয়ের পিছে পাগলপ্রায়। তাই তিনি ছেলেকে নিয়ে ইন্ডিয়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যাওয়ার একদিন আগে তিতিরের সাথে অনেক কষ্টে দেখা মিলে পার্থের। তখন পার্থ ওকে জোড় হাত করে বলে আমার জন্য অপেক্ষা করবে তুমি?

তিতিরের প্রতিউত্তর ছিলো, কখনো না। পার্থ সাথে সাথে বলছিল, আমার মত করে তোমাকে কেউ ভালোবাসবে না।

~" আপনার সমান কিংবা আপনার থেকেও যদি বেশি কেউ আমায় ভালোবাসে তাহলে আমি বিয়ে করবো। না হলে কোনদিনও বিয়ে করবোনা। আপনাকে কথা দিলাম।"

সেদিনই শেষ কথা হয় ওদের। তারপর আর দেখা হয়নি তাদের। তিতির তার কথা রেখেছে। মাহাদের থেকে তিতিরকে কেউ কোনদিনও ভালোবাসেনি কিংবা ভালোবাসতে পারবেও না। এমনকি তিতিরের নিজের মাও তিতিরকে এতোটা ভালোবাসা দেয়নি। আল্লাহ্ তিতিরের কাছ থেকে সব কেড়ে নিয়েছিল কিন্তু তার বিনিময়ে মাহাদকে উপহার সরুপ ওর জিবনে পাঠিয়েছিল। এর থেকে উত্তম আর কি চাই!

.
তিতিরের যখন সেন্স ফিরে তখন দেখে তিতির পার্থের রুমে শুয়ে আছে আর পার্থ তিতিরের পাশে মুখটা মলিন করে বসে আছে। তিতির আজ তোমার শরীরে ধকল বেশি হয়ে গেছে। বাসায় চলো বলতেই ওয়াহিদের হাত চেঁপে ধরে পার্থ। ওকে নিয়ে যাবেন না প্লিজ, আমার ওর সাথে ওনেক কথা আছে। তিতির আমি মোটেও জানতাম না মাহাদ তোমার স্বামী। জানলে আমি এমন কাজটা কোনদিনও করতাম না। আমাকে ক্ষমা করে দাও।

~" খুব কষ্ট দিয়েছ তুমি! আমি তোমার সাথে কোনদিনই দেখা করতাম না।  কিন্তু তুমি আমার কলিজায় আঘাত করেছ তাই বাধ্য হয়ে এসেছি তোমার কাছে।"

আমি বললামতো আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি ইচ্ছা করে এমন কিছু করিনি। প্রাচীকে জিঙ্গাসা করো! এমন কোন দিন নেই যে আমি তোমার কথা চিন্তা করিনা। কত চোখের জল ফেলেছি। তোমার বাবার কাছেও গিয়েছিলাম। তিনি কোন কথা বলেন নি তোমার সম্পর্কে। কারো কাছে তোমার খোঁজ পাইনি। কিন্তু দেখ, যাকে এক পলক দেখার জন্য আমি পাগল ছিলাম সে নিজে আজ আমার কাছে হাজির। মাহাদ কতোই না সুভাগ্যবান যে তোমাকে পেয়েছে। তোমাকে আর বলতে হবে না যে, মাহাদ তোমায় কত ভালোবাসে! কারন তুমি কখনো কথার খেলাপ করোনা। সত্যিই হয়ত মাহাদ তোমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে। 

আমার তোমাকে দেখার খুব শখ ছিলো। পার্থ তোমার কথা এতই বলতো যে কি আর বলবো তোমায় আমি। এমনকি আমি নিজেও ওকে বিয়ে করেছি তোমার দোহাই দিয়ে। এদিক থেকে আমি তোমার কাছে অনেক ঋনী। কথাগুলো বলতে বলতে তিতিরের কাছে এসে বসল প্রাচী। তিতির চুপচাপ কথাগুলো শুনে চলছিল। ওর মাথায় এখন মাহাদের চিন্তা। মাহাদ বাসায় এসে না জানি কত ছটপট করছে।

রাত ১০টা,
মাহাদ অস্থির হয়ে গেছে তিতিরের জন্য। বাবাকে ওর গ্রামে পাঠানো, ভাইয়ার অফিসে আগে খেকেই ছুটির ব্যবস্থা করা সহ রুমের ভিতর ল্যাপটপ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করা এসব দেখে মাহাদের কাছে সব পরিষ্কার এসব তিতিরের কাজ। তার বউ কবে থেকে এত বুদ্ধিমান হলো। টিভিতে যখন ফুয়াদ আর কামরান সাহেবের ফাইল ফুটেজ দেখাচ্ছিল তখনই ফুয়াদের অফিস থেকে নোটিশ আসে ফুয়াদ সাতদিন যাবত ছুটিতে রয়েছে। তাহলে সে কোকেন বিষয়ে কিভাবে জড়িত থাকতে পারে তাও আবার অফিসের গাড়ী ব্যবহার করে! তাছাড়া ফুয়াদকে গাড়ীতে পাওয়া যায়নি। উপর মহল থেকে মিডিয়ার সমস্ত যুক্তিকে দুর্বল করে ফেলে।

আজ নিসা নিজে এসে মাহাদের রুমে বসে আছে। মাহাদকে বার বার বলছে দেখ, ও বাসায় ফিরলে যেন ওকে কিছু বলিস না। ও যা করেছে আমাদের সবার ভালোর জন্যই করেছে।
 হঠাৎ নিসার এত পরির্বতন কেন সেটা মাহাদ বুঝতে পেরেও চুপ করে আছে। তারপর মাহাদ ওকে জিঙ্গাসা করলো, ওর সাথে তোর কথা হয়েছে?

হুম, ড.ওয়াহিদ ওর সাথে আছে। এই কিছু সময়ের মধ্যই চলে আসবে। কথাগুলো বলে নিসা ওর রুমে চলে গেল।

রাত ১২টার দিকে কাক ভেজা হয়ে ছেলেকে বুকে নিয়ে বাসায় ফিরলো তিতির। বাসায় তখনো কেউ ঘুমায়নি। ডাইনিংরুমে ঢুকেই সবাইকে দেখলো কিন্তু মাহাদকে দেখতে পেলোনা। আজ মাহাদ যে ওকে কি করবে সেটা ভাবতেই তিতিরের বুকটা ধুকধুক করছে। পার্থ ছাড়তেই চাচ্ছিলোনা তাই এতো লেট। সাদের রুমে এসে ঘুমন্ত সাদের মাথা মুছে দিয়ে পোশাক পাল্টিয়ে দিতেই লাবীবা বেগম এসে তিতিরকে বলল-

~" তিতির আমি করছি। তুমি একটু মাহাদের কাছে যাও। ছেলেটা ভিষন রেগে আছে।"

তিতির সাদের কপালে চুমু খেয়ে রুম থেকে বের হয়ে রুমে এসে দেখলো, মাহাদ দোলনায় গুটিশুটি মেরে বসে আছে। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি পড়ছে। সারা ব্যালকুনিতে বৃষ্টির পানিতে স্রোত বয়ে চলছে। তিতির বোরখাটা খুলে মাহাদের কাছে আসতেই মাহাদ সেখান থেকে উঠে কোন কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে সাদের রুমে গেল। গোলাবও পিছু পিছু চলে গেল সাদের কাছে। 

মাহাদকে দেখে লাবীবা বেগম ওর কাছে এসে হাত দু'টি ধরে অনুরধের স্বরে বলে উঠলো-

~" মাহাদ ওকে যেন কিছু বলিস না! ওর শরীরের যে অবস্থা তাতে ও কি করে সেটা ও নিজেই জানেনা। জানিসতো ওর মাথার সমস্যা!"

মাহাদ ক্ষেপে উঠে বলল-

~" ওর মাথার সমস্যা! যার মাথার সমস্যা হয়,  সে কিভাবে এত নিখুত কাজ করতে পারে মা!  যেখানে আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করেও কোন সমাধান করতে পারিনি সেখানে ও কিভাবে এত তথ্য জানলো আর এক চুটকিতে সলভ্ও করে ফেলল! কোন ক্যাটাগরিতে বলবা ওর মাথায় সমস্যা হয়েছে? আর আজ ও কোথায় গেছে জানো! ঐ পার্থ রায়ের বাসায়। যার জন্য এতকিছু আমাদের সমস্যা। মানুষ বলবে কি! নিজে পারিনি বলে স্ত্রীকে টোপ হিসেবে ওর কাছে পাঠিয়েছি। আমার সম্মান ও সব শেষ করে দিয়েছে।"

আমরা যেটা পারিনি বলে ও পারবেনা সেটা ত তো সঠিক নয়। এখন রুমে যা। দেখ ও খাবার খেয়েছে কিনা? পুরোদিনেও মেডিসিন নেয়নি হয়তো। যা ওর কাছে। আমি এদিকটায় সামলিয়ে নিচ্ছি। 

ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে মাহাদ চলে এলো ওর রুমে। এসে দেখলো তিতির নেই। এদিক ওদিক ভালো করে খুজতেই তিতির ওয়াসরুম থেকে বের হতেই দেখলো মাহাদ ওকে খুজছে। তিতির মুচকি হেসে বলল-

~" আমাকে খুঁজছেন?"

মাহাদ চমকে উঠে তিতিরের দিকে চেয়ে কিছু না বলে বেডে গিয়ে সুয়ে পড়লো। আমি না থাকলে এই মানুষটা কিভাবে থাকবে! কথাগুলো ভাবতেই তিতিরের চোখ ছলছল করে উঠলো। তিতির লাইটটা বন্ধ করে দিয়ে মাহাদের পাশে গিয়ে নিজের জায়গা করে নিতেই মাহাদ ওর ডান হাতটি বিছিয়ে দেয়। তিতির কোন কথা না বাড়িয়ে পাশ ফিরে মাহাদের বাহুতে মাথা রেখে শুতেই মাহাদ ওকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো। তিতিরও কাঁদে মাহাদও কাঁদে নিঃশব্দে। মাহাদ ওর বাম হাত দিয়ে তিতিরের ভেজা চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দিতেই তিতির শান্তগলায় বলল-

~" মাহাদ।"

~" হুম...।"

আপনাকে আমার অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু এখন বলতে পারবোনা। যদি আমি অপারেশনে মারা যাই তখন সবকিছু ফিকে হয়ে যাবে। কথাগুলো বলেই তিতির মাহাদের দিকে পাশ ফিরলো। মাহাদ আপনি কাঁদছেন কেন?

মাহাদ আর কথা বলতে পারেনা। তিতিরকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত কিস করতে থাকে। তুমি আমাকে বার বারই আঘাত করো তিতির। তোমার আঘাতগুলো যে আমি নিতে পারিনা। কেন এত কষ্ট দাও আমাকে। এত নেগেটিভ চিন্তা কেন করো? মাথার উপর আল্লাহ্ থাকতে এতো চিন্তা কিসের! উনিই সব সমাধান করে দিবেন 

তিতির মাহাদের কথার জবাব না দিয়ে ওকে ভালোবাসার আলিঙ্গনে ভরিয়ে তুলল। তিতিরের মনে হচ্ছে আর মাহাদকে সে এমন ভাবে কাছে পাবেনা। তাই যতোটা পারছে মাহাদকে নিজের মধ্য সুখ খুজে নিতে সাহার্য্য করছে। প্রিয়তমার ডাকে সারা না দিয়ে মাহাদ আর থাকতে পেলোনা। সেও তিতিরের সাথে যোগ দিল ভালোবাসায় আদায় করতে।


রাত ৩টা,
হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গে তিতিরের। শরীরে শক্তি পাচ্ছেনা। মাহাদ এক হাতদিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে তিতিরকে। মাহাদের বুকে হাত বিছিয়ে দিয়ে ওকে ঝাকাতে লাগলো তিতির। মাহাদ, মাহাদ ওঠেন না! দরজা কেউ ধাক্কাচ্ছে।

তিতিরের হাতের ঝাকুনিতে মাহাদ চোখ খুলে বলল-

~" কি হয়েছে তোমার!  কোন সমস্যা হচ্ছে?"

তিতির হাত দিয়ে দরজা দেখিয়ে দিতেই মাহাদ ধড়পড় করে উঠে নিজেকে ঠিক করে দরজা খুলে দিতেই কুসুম ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠলো-

~" নিসা ভাবী......।"

পুরো কথা না শুনেই মাহাদ দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল নিসার রুমের দিকে। গিয়ে দেখলো, নিসা পেটে হাত দিয়ে চিৎকার করছে। নিসার নাক আর মুখ দিয়ে হালকা রক্ত ঝড়ছে। 
ফুয়াদ আর মাহাদ দু'জনেই তাড়াহুড়া করে নিসাকে হসপিটালে নিয়ে গেল। 
ডক্টররা সবকিছু চেকাপ করে জানালো নিসার দু'টো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত সুস্থ কিডনি ট্যানস্ফার না করলে ওকে সুস্থ করা যাবেনা। এমন কথা শুনে পুরো পরিবারের উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।

নিসাকে ওখানে রেখেই ফুয়াদ এসে ওর লকার থেকে টাকা বের করতে গিয়ে দেখলো টাকা নেই। এখানেই তো টাকা ছিলো কিন্তু টাকাগুলো কই! পুরো রুম
 তন্নতন্ন করে খুজেও যখন পেলোনা তখন তিতির কথাটি ফাস করলো। রুপালী ফুফু টাকাটা সরিয়েছে। এনিয়ে বাসায় দফায় দফায় ঝগড়া হয়ে গেল রুপালী আর বাতাসির। রুপালী তিতিরকে অনেক অভিশাপ দিতেই  বাতাসি এসে তিতিরকে বলল-

~" তুই কি সত্য কথা কইছোস! অ্যার মাইয়ায় টাকাটা নিছে?"

রুপালীর অভিশাপ শুনে মাহাদ তিতির! বলে একটা কঠোর ডাক দিল।
মাহাদের এমন ধমকে তিতির সেখান থেকে বের হয়ে চলে গেলো।

মাহাদও বের হয়ে নিজের রুমে এসে কিছু টাকা নিয়ে ফুয়াদকে সাথে করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। 

নিসার অবস্থা খুবই খারাপ। ওর মা বাবা সহ সবাই এসেছে। দুই মেয়েই কেঁদে চলছে। এখন দেশের যে অবস্থা খারাপ তাতে যার তার থেকে কিডনী নেওয়া যায়না। শেষে ফুয়াদ বললো, আমারটা টেষ্ট করেন। যদি হয় তাহলে আমিই দিব।
অবশেষে লাবীবা সহ অনেকে টেষ্ট করালো। এমনকি মাহাদও টেষ্ট করালো কিন্তু মাচিং খেলোনা। সবাই যখন অস্থির তখন রজনী বলে উঠলো-

~" তিতির বাঁকি আছে। ওরে টেষ্ট করাও।"

মাহাদ সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বললো-

~" ওকে বাদ দিয়ে কথা বলুন ফুফু!"

আর কেউ কথা বলতে পারেনি এ বিষয়ে।  দুপুরের দিকে কামরান সাহেব তিতিরের বাবাকে নিয়ে হসপিটালেই হাজির হয়। সাথে ইভানও এসেছে। মাহাদ শুধু সম্মানের খাতিরে তাকে সালাম দিল। তারপর বাসায় ফিরে এলো। 
জামাইয়ের এমন ব্যবহারে এরশাদ কষ্ট পেলেও তা প্রকাশ করলোনা। হঠাৎ এরশাদ সবার সামনে প্রস্তাব রাখলো, তাকে যেন টেষ্ট করা হয়। যদি ফলাফল পজেটিভ আসে তাহলে সে নিজেই কিডনি দিতে চায়।
এরশাদের কথায় অনেকে বিশ্মিত হয়ে গেল।
 অবশেষে ডাক্তারও  তাকে টেষ্ট করে দেখলো, এবং তার কিডনির সাথে পারফেক্ট ম্যাচ খেল। ফুয়াদের জন্য এ যেন মরুর বুকে এক পশলা বৃষ্টির সমান। মেয়ের সাথে দেখা করার আগেই তিনি অনুরোধ করলেন যেন দ্রুতই অপারেশন করা হয়। 

মাহাদ বাসায় এসে দেখলো তিতির বিছানা থেকে পড়ে গেছে, সাদ আর কুসুম চিৎকার দিয়ে ডাকছে সবাইকে। বাসায় কেউ নেই। ওঘরে শুধু রেজওয়ান ছিল। রাতিশা তাকে নিয়ে তিতিরের কাছে এসেছে। রেজওয়ান ফোন বের করে ডাক্তারকে কল দিতে ব্যস্ত। 
তিতিরের হৃদপিন্ড বন্ধ হয়ে গেছে। মাহাদের পুরো শরীর মনে হয় ঠান্ডা হয়ে গেছে। তারপরও সে এই অবস্থায় CPR করতে শুরু করলো।
বুকের বাম পাশে হৃদপিন্ড যেখানে থাকে সেখানে এত জোড়ে চাপ দিতে লাগলো যে মনে হলো মিনিটে ১২০ বার করে চাপ পড়ছে তিতিরের বুকে।
মাহাদ এতই জোড়ে চাপ দিচ্ছে যে প্রতিবার চাপে তিতিরের বুকের খাঁচা ২ ইঞ্চি করে ডেবে যাচ্ছে। 
এতেও যখন কাজ হলোনা তখন মাহাদ কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে লাগলো। তিতিরের মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে এত জোড়ে জোড়ে শ্বাস দিল যাতে ওর ফুসফুসের শেষ প্রান্তে গিয়ে পৌছে যায়। হুম এতে কাজ হয়েছে। তিতির ঝিকে উঠে শ্বাস নিতে শুরু করলো। 
ততক্ষনে ডাক্তার এসে তিতিরকে চেকাপ করেই বলল-

~" আজ যদি আপনি Cardiopulmonary Resuscitation না করতেন তাহলে পেসেন্ট হয়ত মারায় যেত। অভিঙ্গ ব্যাক্তি ছাড়া এটা কেউ করতে পারেনা।"

মাহাদ ডাক্তারের কোন কথার জবাব দিতে পারেনা। সবার সামনেই তিতিরকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে।
ডাক্তার চলে যেতেই ওয়াহিদকে খবর দেওয়া হয়। ওয়াহিদ এসে তিতিরকে পরীক্ষা করেই বলল-

~" আর সময় নষ্ট করা ঠিক হবেনা। আজই ওর অপারেশনটা আমি করতে চাই। আপনি মানুষিক ভাবে প্রস্তুত তো!"

ওয়াহিদের কথা শুনে মাহাদের বুক কেঁপে উঠলো। এই বুঝি তিতির সারা জিবনের জন্য ওকে ছেড়ে চলে যাবে। শেষে অনেকটা ওয়াহিদের জোড়াজুড়িতেই ডিসিশন ফাইনাল করা হয়।
.
রাত সাড়ে আটটা,
নিসার অপারেশন কাল হবে। আর আজ তিতিরের। চোখের সামনে ছোট ভাই ইভান। কত বড় হয়ে গেছে সে। ইভান এসে তিতিরকে সালাম দিয়ে পাশে দাড়িয়ে রইলো। দু'ভাই-বোনের কত কথা। সাদকে কোলে নিয়ে এরশাদ একটু দুরে দাড়িয়ে আছে। আজ সবাই তিতিরের কাছে এসেছে। কত ভালো ব্যবহার সবার। বারবার চোখ ছলছল করে উঠছে তার। সবার দিকে একবার চেয়েই চোখ বন্ধ করেই তিতির বিরবির করে বলল, আলহামদুলিল্লাহ্ আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। এবং আল্লাহ্ আপনিও আমাকে ক্ষমা করে দিন। চোখ দিয়ে দু'ফোটা অশ্রু ঝরে যেতেই এবার স্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো তিতির-

~" আমি যদি কারো মনে এতটুকুও দুঃখ দিয়ে থাকি তাহলে সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর আমার কিছু হয়ে গেলে আমার স্বামী আর সন্তান কে দেখবেন।"

আর কারো সাথে কথা বলার সুযোগ দেয়নি ওয়াহিদ। হুইল চেয়ারে করে ওকে নিয়ে যায় অপারেশন থিয়েটারে। সাথে অবশ্যই মাহাদও ছিলো। এটা তিতিরের শেষ ইচ্ছা। মাহাদ যেন ওর পাশে সব সময় থাকে।
মাহাদ ছিলোও ওর পাশে। তিতির বার বার কেঁদে বলছিলো, আল্লাহ্ এবারের মত আমাকে বাঁচিয়ে দাও। আমার স্বামীকে একটা কথা বলার আছে। আমার ছেলেটার জন্য হলেও আমাকে বাঁচিয়ে দাও।

পাক্কা একটানা ৮ঘন্টা অপারেশন চললো। এই আটটা ঘন্টা মাহাদ তিতিরের ফেরার জন্য আল্লাহর কাছে প্রাথর্না করেছে। বাসার সমস্ত মানুষ এমনকি ছোট্ট ফিহা অবদি তার চাচীর জন্য অশ্রু বির্সজন দিয়েছে। তবুও তাদের প্রিয় মানুষটা ফিরে আসুক।


১৯ দিন পর,
তিতির আজ অনেকটা সুস্থ। দুপুরে আজ বাসায় খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। নিসাও সুস্থ। মাহাদের সাথে তার শশুরের একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এরশাদকে কথা দিয়েছে সে, তিতির সুস্থ হলেই তাকে নিয়ে শশুর বাসায় যাবেন। এরশাদ বাসায় গিয়ে আদরীর সাথে তিতিরকে কথা বলিয়ে দিয়েছে। আদরীর আর কোন মেয়ে না থাকায় হয়ত তিতিরকে কিছুটা হলেও মেয়ে ভেবেছে। 

দীপু, রেনু, ওয়াহিদ, আসমা সহ বাসার সকলে মিলে একসাথে দুপুরের ভোজন করতে ব্যস্ত।  এখানে পার্থ এবং প্রাচীও এসেছে। পার্থের নজর ছিলো মাহাদের উপর। সত্যিই মাহাদ তাকে খুব ভালোবাসে। স্ত্রীর প্লেটে ভাত বাড়িয়ে দেওয়া সহ লেবু পর্যন্ত চিপে ভাতের সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে মাহাদ। বেঁচে থাকুক এমন পবিত্র ভালোবাসা।

সন্ধ্যায় আকাশে আধো আবছা বাঁকা চাঁদ দেখা গিয়েছে। কাল থেকে পবিত্র মাহে রমাদান। মাহাদ এখনো বাসায় ফিরেনি। এমন সময় রাতিশা ওর বাবাকে নিয়ে তিতিরের কাছে এসে বলল-

~" আন্টি বাবা আপনার সাথে একটু কথা বলবে।"

রাতিশা কথাগুলো বলে চলে যেতেই রেজওয়ান ওর কোলে রাখা ব্যাগটা তিতিরের হাতে দিয়ে বলল-

~" তিতির ফুয়াদের রুম থেকে টাকাটা মা নিয়েছিল। উনি লজ্জায় দিতে পারছিলোনা। কিন্তু আমার তো লজ্জা নেই। কারন তুমিতো আমার শালিকা হও।"

তিতির হাসি মুখে টাকাটা নিয়ে রেজওয়ানকে বলল-

~" ভাইয়া আপনি কি আমাকে ক্ষমা করেছেন?"

রেজওয়ান বেশ কিছুক্ষন ধরে তিতিরের দিকে চেয়ে তারপর মাথা নিচু করে বলল-

~" তুমি আমার জন্য যা যা করেছ আল্লাহ্ তার প্রতিদান দিক।"

~" আমীন। ভাইয়া আমরা কিন্তু ঈদের পর ক্যালিফোর্নিয়াতে যাচ্ছি। আশা করা যায় আপনি আবার সুস্থ হয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ্।"

রেজওয়ান বোঝে এখন, সে জিবনে কি কি শাস্তি পাচ্ছে তার ভুলের জন্য। এখন আল্লাহ্ মাফ করলেই হয়।

তিতির ফুয়াদের হাতে টাকা দিয়েছে। তিতিরকে কিছু বলতে হয়নি। ফুয়াদ সব বুঝতে পেরেছে। ফুয়াদ শুধু মুখ ফুটে একটা কথাই বলল-

~" তিতির, তোমার বাবা তো আমাদের বিশাল ঋনের মধ্য ফেলে দিয়েছেন।"

ঋন শোধ করার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। কথাটি বলেই  তিতির রুমে এসে দেখলো বাতাসি বিবি মাহাদের কম্বলের নিচে বসে আছে। তিতিরকে দেখে বাতাসি মাহাদকে বলল-

~" এই অসুস্থ বউডারে তুই ক্যামনে কি!"

মাহাদ বাতাসির কথা বুঝতে পারলো কিন্তু তিতির বুঝতে পারেনি। মাহাদ বাতাসির জবাবে মুচকি হেসে কিছু বলতেই বাতাসি বলল-

~" আই এই বয়সে ছাওয়াল পয়দা করবার পারুম না। তোর বাপের আর ভাইবোনের দরকার নাই।"

~" না তুমি চাইলে একবার চান্স নিতে পারি। কি কাজী ডাকতে হবে!"

~" মস্করা করোস ক্যান! কইলাম তো এই বয়সে তোর বউয়ের মত পোয়াতি হইবার পারুম না।"

তিতির প্রচন্ড লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে হতেই মাহাদ বলল-

~" দিলেতো আমার বউটারে লজ্জাতে ফেলে! এত সব কথার ট্রেনিং নিয়েছ কোথা থেকে বাতাসি? মনে হয় মুখ দিয়ে কথার ফুলঝুড়ি ঝরে।"

হ এহন তো বউ পাইছোস। বাতাসির আর কেডাই খোঁজ লায়। আই বুড়া হইয়া গেছিনা! তাই অ্যারে ভালো লাগবো তোর? থাক তুই অাই যাই বলে বাতাসি মাহাদের রুম থেকে বের হয়ে গেল। তিতিরে বাহিরে গিয়ে উকি দিয়ে দেখলো, সাদ সবার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে যাকাতে মালপত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় রাখছে। কাল থেকে রোযা তাই ১ম দিন থেকেই যাকাত দেওয়া হবে গরীবদের।

তিতির দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসে কোমরে হাত দিয়ে বলল-

~" আপনি সবাইরে বলে দিয়েছেন আমি প্রেগন্যান্ট?"

মাহাদ দু'হাত উপরে তুলো গা মোচর দিয়ে বলল-

~" সেটা কি আর গোপন থাকে?"

~" আমার তো লজ্জা করে?"

~" ওলে বাবালে, আমার বউয়ের কোথায় লজ্জা করে। নাকে, মুখে না চোখে!"

~" যাহ্ কি বলেন? আমি কি এমন কথা বলছি নাকি?"

আমি ঘুমাবো, আমাকে ডিসর্টাব করোনাতো বলেই মাহাদ উপর হয়ে শুয়ে পড়লো।
তিতির দ্রুত এসে মাহাদের হাতটা টেনে ধরে সোজা করে সুয়ে দিয়ে বলল-

~" এভাবে কখনো শুবেন না। শয়তান সবসময় উপর হয়ে থাকে। তাই উপর হয়ে শোয়া ঠিক না।"

~" তাহলে কি চিৎ হয়ে শোব!"

নাহ্ ডানপাশ হয়ে হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমানো উত্তম। কথাগুলো বলেই তিতির মাহাদের পাশে বসলো।
আচ্ছা বুঝলাম বলে মাহাদ তিতিরের হাতটা নিয়ে ওর বুকের সাথে ঘষতে লাগলো। তারপর হাত আস্তে আস্তে ওর নাভীর কাছে নিয়ে যেতেই তিতির হাতটা চট করে টান দিয়ে বলল-

~" মতলব কি আপনার হু! কি করতে চাচ্ছেন?"

উমহ্ বেশি কিছুনা। ছেলে রুমে আসার আগে একটু খানি আদর হলেই চলবে। কথাগুলো বলেই তিতিরকে জাপটে ধরলো মাহাদ। এভাবেই ওদের মধ্য খুঁনশুটি চলতে থাকলো।

পরিশেষে একটা কথা আবারও প্রমানিত হলো। ধৈর্য্যর মত সুমিষ্ট ফল পৃথিবীতে আর একটিও নেই। যারা তার প্রভুকে বিশ্বাস করে সত্য পথে ধৈর্য্যর সাথে জিবন অতিবাহিত করবে। দিন শেষে তাদেরই জয় তার ঝুলিতে উঠে আসবে। ধৈর্য্যই একমাত্র সকল সমস্যার সমাধানের মূল।



                              ***(সমাপ্ত)***
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।