আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ২৩ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


দৃশ্যটা তিতিরের জন্য আগুনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে জ্বলার মত। তিতিরের চোখ ছাপিয়ে চোখের জল গড়ে পড়লো ওর গাল বেয়ে।

 তিন আঙ্গুল দিয়ে চোখের জল মুছলো। তারপর বৃদ্ধা আঙ্গুলের মাথার চোখের পানিগুলো শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে মাহাদের দিকে স্টিকের মত ছুড়ে মারলো তিতির। ওখানে আর এক মুহুত্তেও দেরী করেনা।

নিজের রুমে এসে দরজাটা ভালো করে বন্ধ করে দিয়ে দু'হাতে মুখ চেপে ধরে ডুকরে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো। ও কি করে পারলো অন্য মেয়েকে আমার জায়গা দিতে! ও জানেনা ওটা শুধু তিতিরের জায়গা! তারপরও এতবড় ভুল ও কিভাবে করে!

তিতিরের এখন এই বাসায় নিজেকে পরগাছা মনে হচ্ছে। যার জন্য এখানে থাকা সেই যদি জিবনে না থাকে তাহলে  এখানে থাকার কোন প্রশ্নই ওঠেনা। বিয়েটা শেষ হয়ে যাক তারপর আর একমুহুত্ত্বও এখানে থাকবোনা।

তিতিরের এত রাগ হলো যে মনে হচ্ছে নিজেকে আগুনের মধ্য বির্সজন দিতে। বাবা-মা ছাড়া সবাই অপমান করতো তখন এই মন ও শরীর সইতো এই মনে করে যে, তারা তো আমাকে ভালোবাসেনা তাই তাদের কাছে ভালো ব্যবহার পাওয়া আশা করা যায়না। কিন্তু এই মানুষটা আমাকে ভালবেসে যদি এমন কিছু করে তাহলে সেখানে সমস্তু স্বপ্ন তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে যায়। তিতির ওর ফোনে তার আগের সিম তুলে  বিকাশ থেকে রির্চাজ করে রবিনকে কল দিল।

তিতির আশ্চার্য হয়ে গেল, কল যেতে দেরি আছে কিন্তু  ধরতে এক মুহুত্বে দেরি হয়না।


ফোনের ও পাশ থেকে রবিনের কান্না জনিত কন্ঠ ভেঁসে এলো। তিতির,  এতদিন পরে আমাকে মনে করলি! 


দুই ভাইবোনে কাঁদছে। তিতির একটু বেশিই কাঁদছে। কান্না শব্দ বেশি হওয়াতে তিতির বাথরুমে চলে গেল যাতে কেউ শুনতে না পায়। 
কান্না জড়িত কন্ঠে অস্পষ্ট শব্দে বলে উঠলো, " রবিন কেমন আছিস ভাই! বাবা, দাদী সহ বাসার সবাই কেমন আছে?

 জানিস রবিন,  বাবা আমার একবারও খোঁজ খবর নেয়না। তুই বল মানুষ এভাবে কতদিন পরের বাসায় বেহায়ার মত থাকবে! আমার যে যাওয়ার কোন জায়গা নাই রে।


রবিন কান্না করতে করতে বললো," দাদী নাইরে, দু'মাস আগে মারা গেছে। তোরে দেখার জন্য এত অনুরোধ করেছে চাচাকে কিন্তু ওনার মন বদলাতে পারেনি। চাচার একটাই কথা উনি তোকে কোনদিনও এখানে নিয়ে আসবেনা।"


দাদী নাই......! তিতির গগিয়ে কেঁদে উঠলো। মনে হচ্ছে বুকের উপর বিশাল পাথর পড়ে গেছে। সেই পাথর সরানোর কোন পথ পাচ্ছেনা তিতির। তিতির এত জোড়ে জোড়ে কান্না করে যে সেখানে কেউ থাকলে তার চোখ দিয়ে অটোমেটিক চোখের পানি ঝড়বে। রবিন দাদীটাও আমার কাছ থেকে চলে গেল! আমার নসিবটাই খারাপ রে। যাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই তাই আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। 


এই কষ্টের সময়ও  রবিন বলে উঠলো, " তিতির, জানিস আমি বিয়ে করেছি। আর আমি এখন ঢাকাতে থাকি। তুই কোথায় আছিস জানিনা। তবে তুই ঢাকায় আসলে আমার বাসাতে আসিস। বাবা-মা মেনে নেয়নি। তাই এখানে এসে একটা ছোট খাটো জব করি আর লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি।


রবিনের এমন কথায় তিতির বেক্কেল সেজে গেল। রবিন তুই এই বয়সে বিয়ে করেছিস! কাকে নিয়ে পালাইছিস?


রবিন মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো," তোর শান্তনার কথা মনে আছে! ওকে বিয়ে করেছি।"


ভাই তুই তলতলে এত কিছু করেছিস আর আমরা কেউ জানতেই পারলামনা? তোর বাসার ঠিকানা বল আমি অবশ্যই তোর বাসায় যাবো।
প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে তিতির আর রবিন কথা বললো। তিতির আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়। ফোনটা রেখে দিয়ে তিতির রুমে ফিরে আসলো। তিতির আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে বার বার দেখছে। নিজের চেহারা নিখুত ভাবে দেখছে এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো।


আপা বাড়ীর সগ্গলে খাইতে বসেছে। আপনারে ডাকলো চাচী আম্মায়। সাবিনা কথা গুলো বলে রুমে ঢুকলো।


তিতির চট করে পাশ ফিরে চোখের পানিগুলো মুছে সাবিনার দিকে ফিরলো। সাবিনা খাইতে ইচ্ছে করছেনা। তুমি যাও, আমি আজ খাবোনা।


আপা আপনি কানছেন? কিয়ের লায় কানছেন! কেউ কিছু কইছে? আর কপাল! আমাগো কান্দোন ছাড়া আর কি আছে? আপনি খাইতে না গেলে হয়ত দেখবেন কাল থেকে আর কেউ ডাকবেনা। 


সাবিনা বললাম না আমি খাবোনা! একদিন না খেলে আমার কিছু হবেনা। তুমি যাও এখান থেকে। আমার কিছু ভালো লাগছেনা। 


সাবিনা তিতিরের ধমক খেয়ে চলে যায়। তিতিরের এখন মনে হচ্ছে সে এই বাসার একজন উচ্ছিষ্ট ছাড়া কিছুনা। নিজেই নিজের প্রতি ঘৃনা লাগছে। মানুষের ভাগ্য খারাপ হলে এতটা খারাপ হয়না। 
এসব কথা ভাবতেই মৌয়ের মা আমেনা ফুফু এসে তিতির কে বললো চল একসাথে খাবার খাই। হাটতে পারবিতো?


ফুফুকে আর না করতে পারলোনা। জ্বী ফুফি পারবো। মৌতুসিও ইতিমধ্য চলে এসেছে। পরে ওরা ৩ জনে খাবার খেতে নিচে গেল। 

♦♦♦♦

রাত সাড়ে এগারোটার দিকে সবাই ডিনার করতে বসেছে এক সাথে। তিতির খাবার টেবিলে এসে দেখলো টেবিলটাই চেন্জ করা হয়েছে। বিশাল টেবিল। একসাথে সবাই খেতে বসেছে। বড়লোকদের সব কিছুই হাইফাই অবস্থা। মৌতুসি, ওর মা, আর তিতির একসাথে বসলো। তিতিরের চোখ শুধু মাহাদকে খোঁজে কিন্তু মাহাদ এখানে নেই। তাহলে মাহাদ এখনো ঐ মেয়েটার সাথে?


সবাই যখন খেতে শুরু করেছে তখন রূপসা মাহাদকে নিয়ে নিচে নামলো। মাহাদ নিচে নামতেই বাতাসি চিক্কুর পাইরা বললো," মাহাদ এহানে আয়, আর পাশে বস।"


মাহাদ সোজা গিয়ে বাতাসির পাশে বসলো আর ওর পাশে রুপসা বসলো। রূপসা মাহাদের পাশে বসতেই রুমকি আর মৌসুমীর চোখ রূপসার দিকে পড়লো। রুমকি যে বিবাহিত তাও রূপসার উপর খুব রাগ হচ্ছে। পারছেনা যে রূপসাকে চুলের মুঠি ধরে এনে সবার সামনে আচ্ছামত ধোলায় করতে।


হঠাৎ মৌতুসি তিতিরের কানের কাছে এসে ধীরে ধীরে বললো," তিতির মাহাদ ভাইয়ার কাছে মেয়েটা কে রে?"


তিতির মাহাদের দিকে না তাকিয়েই বললো, আমিতো জানিনা। "

♥ 

তিতিরের এমন জবাব শুনে মৌতুসী মৌসুমীর দিকে তাকালো। এখন তার বড় বোনকে দেখার মত। মৌতুসি মনে মনে বললো," আপু এখানে রাগ করার মত কিছু নেই। বেশি কিউট ছেলেদের প্রতি একটু মেয়েদের দুর্বলতা বেশিই।"

♦♦♦♦♦

রূপসার যেন দরদ উতলে উঠেছে মাহাদের প্রতি। মাহাদ এটা নে সেটা নে বলে মাহাদকে বিরক্ত করে তুলছে। শেষে মাহাদ অসহায়ের মত বাতাসি বিবির দিকে তাকালো।


এবার বাতাসিরে পায় কে। বাতাসি ওর কেরামতি দেখাতে শুরু করলো।
বাতাসি সোজা খাবার থেকে উঠে মাহাদকে বললো," আর মন চাইছে আই এহানে বসমু রূপসার লগে। নাতীন আর কতদিন পর আইচে তার সোহাগ নিমু। যা ওঠ এহান থেকে।

মাহাদ উঠে যেতেই বাতাসি চট করে বসে প্লেটটা নিজের কাছে টেনে এনে বললো," রুপসা এবার আরে দরদ দেহা। কি খাওয়াবি সব খাওয়া। পারলে নিজের হাতে রান্দেও খাওয়াইতে পারিস।"


মাহাদ হাফ ছেড়ে বাঁচলেও রূপসা বাতাসির ফাদে পড়লো। নানী তুমি আর ঠিক হইলানা। রূপসা বার বার ঢোঁক গিলছে খাবার ছেড়ে। কারন নানী তার ছাড়ার পাত্রী নয়।


সখ করে যহন দরদ দেখাইতে আইছোস তহন আর নামে একটা আন্ডা ভাইজা আনতো! আর খাওনের মন চাইছে। যাহ্ জলদি ভাইজা আন।


এবার রূপসা করুন গলায় বললো," নানী আমিতো ডিম ভাজতে পারিনা।"


কাম যখন করতেই পারোসনা তাহলে অন্যর রান্দা করা তরকারি দিয়ে এত পোদ্দারি দেহাস্ কিয়ের লায়! আর যেন তোর এই আলগা পিরীত করা না দেহি বলে বাতাসি খাবারে মনযোগ দিল।


মাহাদের মনে নানান চিন্তা ভাবনা ঘুরছে। সবাই আছে আজ কিন্তু ফুয়াদ ভাইয়া নেই। কত দিন উনি সবার সাথে এভাবে খাবার খায়নি। তার অনুপস্থিতিতে বাসার কারো যায় আসেনা। মাহাদ খাবার গিলতে পারছেনা। শেষে মাহাদ উঠে পড়ে খাবার ছেড়ে। হাতটা ধুয়ে সোজা ওর রুমে চলে যায়। তারপর দরজা বন্ধ করে একের পর এক সিগারেট শেষ করতে লাগলো। আমরা দু'জন যদি বাবার উপর রাগ করে দুরে থাকি তাহলে তার পুরো ফায়দা রেজওয়ান নিবে।   লাষ্ট সিগারেটটা শেষ করে মাহাদ সোজা ওর বাবার রুমে গিয়ে বসে রইলো। আজ এর শেষ দেখবে সে। যা হয় হোক তবুও মাহাদ ওর সিদ্ধান্তেই অটল থাকবে।


এদিকে মাহাদ চলে গেছে অনেক আগেই। তিতির ভাত নারাচাড়া করে কিন্তু মুখে তুলতে পারছেনা। এক নজরের জন্য মাহাদকেও সে দেখতে পেলনা। অনেকে উঠে চলে গেছে। তাই এই সুযোগে তিতিরও উঠে পড়লো। নিজের রুমে এসে সব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়তে বসল। এখন ওর একটাই টার্গেট সেটা হল সব থেকে বেষ্ট রেজাল্ট করা।

♦♦♦♦

কামরান সাহেব খাবার শেষ করে নিজের রুমে এসে মাহাদকে দেখে থমকে দাড়ালো। কামরান সাহেব ভাবলো তিনি ভূল করে হয়ত মাহাদের রুমে এসেছেন তাই তিনি দ্রুত চলে যেতেই পিছন থেকে মাহাদ বাবা বলে ডেকে উঠলো।


মাহাদের মুখে বাবা ডাকটা শুনে কামরান সাহেবের শরীরটা মৃদু কেঁপে উঠলো। কত বছর পরে এই বাবা ডাকটা শুনলো। মাহাদ এবার উঠে গিয়ে ওর বাবাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে বললো," বাবা আমার কাছে আপনার আসতে মন চায়না!" 
স্যরি বাবা......! এতদিন ধরে আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। আপনি ছাড়া আমাদের কে আছে বলেন! আমাকে ক্ষমা করে দেন।


কামরান সাহেবের এতটা ভালোলাগা কোন দিনও সৃষ্টি হয়নি। কামরান সাহেব ছোট বাচ্চাদের মত কাঁদতে লাগলো। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হলোনা। পিছন ফিরে ছেলেকে বুকে নিয়ে কেঁদেই চলছে। মাহাদের চোখে মুখে অনেক গুলো চুমা খাচ্ছে কামরান সাহেব। যেন তার হারিয়ে যাওয়া মূল্যবান জিনিস ফিরে পেয়েছে। অনেক সময় কেটে যায় এর মধ্য।


অনেক্ষন পর লাবীবা রুমে ঘুমাতে এসে দেখলো, কামরান সাহেব সুয়ে আছে আর মাহাদ তার বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। লাবীবা দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসে মাহাদের পাশে বসে হাত দিয়ে ইশারা করে বললো," কেমন করে এসব সম্ভব হলো!"


মাহাদ উপরে ও বামদিকে শূন্যতে তার পর আঙ্গুল দিয়ে নিজেকে হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝালো সব আল্লাহ্ সুবহানাতালা তিতিরের মাধ্যমে দিয়ে আমাকে কাজটা করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু লাবীবা আল্লাহ্ ইশারা করা বুঝলো কিন্তু মাহাদ যে তিতিরকেও ওর সাথে ইশারা করে বুঝিয়েছে সেটা বুঝলো না।
আবেগে লাবীবা চোখের পানি চলে আসলো।

মাহাদের  এক বিছানায় বাবা-মায়ের মধ্য থেকে রাতটা কাটাতে হলো। তার মা জোর করে রেখেছে এতে নাকি তার স্বামীর খুব ভালো লাগবে। কি আর করা মায়ের কথায় শুনতে হলো।


ভোরে কামরান সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে দেখলো তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝখানে মাহাদ সুয়ে আছে। ছেলেটার অভ্যাস এখনো বদলায়নি। এখনো গুটিসুটি মেরে ঘুমায়। আজকের সকালটা যে এত মধুর হবে সেটা কামরান কখনো ভাবতে পারেনি। মাহাদের কপালে চুমা খেয়ে কামরান সাহেব উঠে পড়লেন। তারপর ফ্রেস হয়ে এসে আস্তে করে লাবীবাকে নামাযের জন্য ডাকলো। তারপর তিনি নামাযে দাড়িয়ে গেলেন। নামাযে দাড়িয়েই কামরান সাহেব চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছেন। আল্লাহ্  প্রতিটা স্বামী-স্ত্রীর জন্য সন্তান হল শ্রেষ্ট নিয়ামত। আজ আপনি সেই কথা আবার প্রমানিত করে দিলেন। 

নামায শেষ করে মাহাদের পাশে বসে আছে। মনে হচ্ছে মাহাদকে তার নিজের চোখের সামনে থেকে এক মুুহুত্তের জন্যও সরাতে চাননা কামরান সাহেব।

আরো কিছুক্ষন থেকে মাহাদকে তুলে দিয়ে ফ্রেস করে নিজের সাথে ডাইনিংটেবিলে  নাস্তা করার জন্য চলে আসলো। বাতাসি বিবি তো অবাক হয়ে গেছে। আজ সূর্য কয়টা উঠেছে?


সবাই নাস্তা করছে কিন্তু তিতির নাই। কারো এতে মাথাব্যথাও নেই। সবাই যে যার মত করে নাস্তা খেয়ে চলছে।

এমন সময় তিতির বোরখা পড়ে বাহিরে যাচ্ছিলো। কামরান সাহেব তিতিরকে দেখে বললো, " তিতির এত সকালে কই যাও! আসো এক সাথে নাস্তা করি"
আর আজ বাসায় এতবড় অনুষ্ঠান আর এই দিনে তুমি বাহিরে যাচ্ছো!


আঙ্কেল আমি সকালের নাস্তা করেছি। ভার্সিটিতে আমার একটু কাজ ছিলো। সামনে এক্সাম তো তাই কিছু নোটস্ দরকার ছিল।


তিতির আর একটু দেরী করো আমি না হয় পৌছে দিব। আমার খাওয়া শেষের দিকে।


শুকরিয়া আঙ্কেল,  আজ অলরেডি দেরি হয়ে গেছে। ইনশাল্লাহ্ আল্লাহ্ চাইলে আমরা অন্য কোনদিন যাবো বলে তিতির মাহাদের সামনে দিয়ে চলে গেল।


একে বলে একটা সুযোগ্য মেয়ে। প্রচুর পরিশ্রমী একটা মেয়ে। আমি চোখের সামনে দেখতে পাই এর ভবিষ্যত উজ্জ্বল। দেখছো লাবীবা,  মেয়েটা ঠিকমত হাঁটতে পারছেনা তবুও নিজের আত্ত্বসম্মানের জন্য কারো নিচে মাথা নিচু করবেনা। সব সময় মাথা উচু করেই পথ চলে।


মামা, মেয়েটা কে? ওকে তো আগে দেখিনি। কথাগুলো বলে রূপসা কামরান সাহেবের দিকে চাইলো।


মৌ সগৌরবে বললো," রূপসা, ও আমার কাজিন হয়। প্রচন্ড মেধাবী একটা মেয়ে। ওকে নিয়ে যে কেউ গর্ব করবে। কারন ও সব দিকে থেকে পারফেক্ট একটা মেয়ে।"


মানুষকে নিয়ে গর্ব না করে নিজে গর্ব করার মত তো কোন কাজ করতে পারোনা। শুধু সাজুগুজু করে বেড়াও। বাতাসি কথাগুলো বলতেই সবাই চুপ।


কিন্তু মাহাদ প্রচন্ড রেগে গেলো তিতিরের ভার্সিটিতে যাওয়ার ব্যাপারে। কেন ওকে এই শরীর নিয়ে ভার্সিটিতে যেতে হবে! আমার উপর রাগ করে নিজেকে কেন কষ্ট দেয়? মাহাদ রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো।

♦♦♦♦♦

তিতির বাহিরে এসে ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। তারপর কিছুক্ষন ওয়েট করতেই ট্যাক্সি পেয়ে গেলো। 
মামা যাবেন বলে এড্রেস বললো টাক্সি চালককে?


বৃদ্ধ চালক বললো," যাবো কিন্তু ভাড়া পাঁচশতের কম নিবোনা মা। অনেক দুরের পথ তাও আবার রাস্তা খুব খারাপ।"


আমার কাছেতো এতটাকা নাই! চারশো কুড়ি  টাকা আছে চলবেতো! এর বেশি দিতে পারবোনা মামা।


টাক্সি চালক হেসে বললো," কি বলো মা, এত বড় বাসায় থাকো কিন্তু বলছো টাকা নেই?"


তিতির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো," মামা, আমি এখানে তাদের আশ্রয়ে থাকি। বড় বাসায় শুধু মালিকতো থাকেনা। অনেক কাজের লোকও থাকে মামা।"


আচ্ছা মা ঠিক আছে। চলো বলে তিতিরকে নিয়ে চলে গেল।
এদিকে মাহাদ রুমে এসে তিতিরকে বার বার কল দিচ্ছে। কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছেনা। ফোন আবার রেখে যায়নি তো! মাহাদ কিছু না ভেবেই তিতিরের রুমে চলে গেল। তিতিরের রুমে গিয়েই দরজাটা বন্ধ করে দিলো। হুম ঠিক, যা ভেবেছে তাই করেছে। ফোনটা রেখে গিয়েছে। ফোনটাতে হাত দিতেই দেখলো মেডিসিনের বক্সটা খোলা আর মেডিসন এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে।

 মাহাদ মেডিসিনের বক্সে হাত দিতেই চমকে গেলো। এই তিনদিনে তিতির একটা মেডিসিনও খায়নি। এবার কাজের মেয়েটার উপর ক্ষেপে গেল মাহাদ। মাহাদ রুম থেকে বের হয়ে আগে কাজের মেয়েটাকে সাবিনার হাতে ডেকে পাঠালো।


মেয়েটার নাম আসমা। সাবিনার থেকে দু বছরের বড় হবে। আসমা এসেই বললো," সাহেব আমায় ডেকেছিলেন!"

" আসমা, তোমাকে এখানে কেন রাখা হয়েছে!"

" আঙ্গে সাহেব, আপার দেখাশুনা করার জন্য।"

মাহাদ এবার ক্ষেপে গিয়ে বললো," তুুমি তোমার দায়িত্ব পালন করেছো! তোমার আপা তিনদিন ধরে মেডিসিন নেয়নি সে কথা আমায় বলোনি কেন! কেন বলোনি?"

"সাহেব, আমি মেডিসন খাওয়ার কথা বললেই সে বলে খেয়েছে। তাছাড়া বাসায় এত মেহমান। তাদেরও তো দেখাশুনা আমায় করতে হয়। আমি কোনদিকে যাবো আপনি বলেন। আপার কাছে গেলেও কথা শুনতে হয় দাদির কাছ থেকে।"

মাহাদ এবার বুঝলো সব বাতাসির চ্যাল। একে কেউ কোনদিন শুধরাতে পারবেনা। কবরে না গেলে এ ঠিক হবেনা।
মাহাদ বললো," আচ্ছা ঠিক আছে। ওয়াসরুমে দেখলাম তিতিরের  কাপড়-চোপড় ভেজানো আছে ওগুলো ধুয়ে দাও আর বেড শীটটাও পরিষ্কার করে নতুন বেডশীট বিছাও। বেডের উপর বেডশীট রাখা আছে।"

"জ্বী,  বলে আসমা চলে গেল।"

এর পর মাহাদ রেডী হয়ে কই যেন চলে গেল।

♦♦♦♦

তিতির রবিনের দেওয়া ঠিকানায় এসে ট্রাক্সি থেকে নামলো। তারপর ভাড়াটা দিয়ে ব্যাগে হাত দিয়ে দেখে ফোন আনেনি। আল্লাহ্ ফোনটা তো বাসায় ভুলে রেখে আসছি। এখন রবিনকে খুজি কিভাবে। তিতির আসে-পাশে চেয়ে দেখলো বড় বড় বিলডিং।  কি আর করা। টাকাও নাই যে ফিরে যাবে তাই বাধ্য হয়ে ওখান থেকেই খুঁজতে লাগলো রবিনের বাসা। এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেলের পথে কিন্তু বাসা আর চিনতে পারেনা। কি করবে এখন। মাহাদের নাম্বারটা মুখস্ত আছে কিন্তু নিজের জেদের জন্য আর তাকে কল দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলোনা। 

আরও ঘন্টা খানেক খুঁজে ব্যার্থ হয়ে তিতির আবার রাস্তায় আসলো। এবার কি করে বাসায় যাবে! টাকাও তো নেই। মাগরিবের  আযান দিবে।  তিতিরের আস্তে আস্তে ভয় করতে শুরু করলো।

এমন সময় সেই টাক্সি মামা তিতিরের কাছে এসে বললো," মা, এখন কি বাড়ি যাবা?

টাক্সি মামাকে দেখে তিতিরের মনে সাহস এল। বড়সড় ঢোক গিলে বললো," আপনি এখনো বাসায় যাননি?"

কাছেই আমার আত্বীয়র বাসা আছে।  এদিকে অনেকদিন আসা হয়নি। আজ সুযোগ পেলাম তাই তার বাসায় গিয়েছিলাম।

মামা আমাকে বাসায় একটু নিয়ে যাবেন! আমি গিয়ে আপনাকে ডাবল ভাড়া দিয়ে দিব।

না মা যাবোনা। বাড়িতে আমার গর্ভবতী মেয়ে আছে। বাসায় যেতে বলেছে জলদি। তুমি চাইলে আমি তোমার যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি বলে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কোন টাক্সি আছে কিনা। আরো কিছুক্ষন দেরী করলো কিন্তু ওদিকে কোন গাড়ীই যেতে চাইলো না। অবশেষে একটা কার যেতেই বৃদ্ধ লোকটি হাত তুলে থামতে বললো।

কারটি থেমে জানালার কাঁচ নামালো।  একটা ২৮ বছরের ছেলে বসে আছে। বৃদ্ধ লোকটি ইস্ততো বোধ করলো কিন্তু এদিকে আকাশে প্রচন্ড মেঘ করেছে তাই বাধ্য হয়ে ছেলেটিকে বললো," বাবা, আপনি কি গুলশানে যাবেন! খুব বিপদে পড়েছি মেয়েটাকে নিয়ে।


ছেলেটি তিতিরের দিকে চেয়ে বললো," গুলশানে আমার বাসা। কোন বাসায় যাবেন।"

বৃদ্ধটির চোখ খুশিতে চকমক করে উঠলো। তিতিরকে ডেকে বললো, " মা, ওনার বাসা গোলসানে। তুমি ওনার সাথে যাও। তিতির যাইতে চাচ্ছিলোনা কিন্তু বৃদ্ধটি একপ্রকার জোড় করেই তুলে দিল। "

মা,  একটু না একটু সবাইকে বিস্বাস করতেই হয়।


তিতির গাড়ীতে উঠতেই ছেলেটি গাড়ী স্টার্ট দিল। গাড়ী চলছে।  ছেলেটি এবার তিতিরকে জিঙ্গাসা করলো, "কোন বাসায় যাবেন!"

" তিতির বাসার আড্রেসটি দিয়ে চুপ করে রইলো।"

বাসার ঠিকানা শুনে ছেলেটি বিশ্ময়ের সাথে জিঙ্গাসা করলো," আপনার নাম কি! ওখানে তো বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে।"

" জ্বী, আমি ওখানেই থাকি। আমার নাম তিতির।"

তিতিরের কথা শুনে রিপার ভাই রাশেদ কটমট করে তিতিরের দিকে তাকালো। তিতির নিজেও জানে না সে কত বড় বিপদের ফাঁদে পা দিয়েছে।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।