আধ আধ চোখ মেলে তাকায় বারিশ। সাথে সাথে উঠে বসে সে, নিজেকে হাসপাতালে দেখতে পায়।এভাবে হুড়মুড় করে উঠে বসাতে মাথায় অনেক পেন হচ্ছে তার।মাথায় হাত চেপে ধরে সে। তখন সামনে থাকা বৃদ্ধ একটি লোক বলে উঠে,
----বাবা আপনে ঠিক আছেন?
বৃদ্ধার কথা শুনে বৃদ্ধার দিক তাকায় বারিশ।তারপর বলে উঠে,
-----জ্বি আব্দুল চাচা..!
লোকটি অবাক হয়ে বলল,
----বাবা আপনে আমারে চেনেন?
বারিশ বিরক্তির সুরে বলল,,
----কি বলছো তুমি চাচা এসব? আমি কেন চিনবো না তোমাকে?
বৃদ্ধি লোক আরো অবাক হয়ে বলল,
----বাবা আপনি আমারে কেমনে চিনেন? যত দূর মনে পরে আপনাকে আমি আপনারে আইজকা প্রথম দেখছি।
----কি বলছো এসব চাচা? আমি ইউসুফ আমাকে চিন্তে পারছো না?
লোকটি এবার চোখ বড় বড় করে তাকালো। যেন চোখের কৌটা থেকে ফট করে বেরিয়ে আসবে।নিজেকে সামলে লোকটি আবার বলে,
-----কোন ইউসুফ বাবা?
ইউসুফ এবার রাগে বলল,
-----মসকরা কেন করছো চাচা? তুমি আমার বাসায় ২৫ বছর ধরে মালির কাজ করছো আর আমাকে ভুলে গেল?
লোকটি এবার বিস্ময় সুরে বলল,
-----কি বলতাসেন আপনে। ইউসুফ বাবা তো গত হয়েছে বছর পাঁচকে উপরে আর আপনে কন আপনে ইউসুফ কমনে। চেহারাও তো মিল নাই আপনার? আমার উল্লোক পাইছেন?
আব্দুল চাচার কথায় হকচকিয়ে উঠে ইউসুফ, কি বলছেন আব্দুল চাচা এসব?? তখনি নার্স রুমে ঢুকে।নার্স সাথে ইউসুফ বলে উঠে আয়না দিতে।
নার্স আয়না নিয়ে ভিতরে ঢুকে। আয়না দেখে বিস্ময় চেয়ে থাকে কতক্ষন চেহারায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগে এ কার চেহারা? পরক্ষনেই ধীরে ধীরে মনে পরতে থাকে সব। সেদিন তার এক্সিডেন্ট, দাদু তাকে পাওয়া, কুহুকে বিয়ে করা ইউসুফের বাবা মার মৃত্যু..? তার সাথে তখনের কথাও মনে পরে যায়। যখন লাস্ট কুহুকে মেন রোডে জড়িয়ে ধরেছিল।তখনি কেউ হুট করেই মাথায় বাড়ি দেয়। তারপর কিছু মনেই তার।
তখন আব্দুল চাচা বলেন,
-----আমি কাম শেষে রাস্তা দিয়ে চাইতেছিলাম। আপনারে দেখে থেমে যাই। আপানার মাথার পিছনতে অনেক রক্ত পরতেছিল। মানুষ দেখতে ছিল কেউ ধরে করে নাই। পরে আমি অটো ডাইকা আপনারে এহানে নিয়ে আসি।
ইউসুফের আজ অনেক কান্না পাচ্ছে। ভদ্র বেশে ঘুরে ফেরা মানুষ গুলো জানি কেমন। তারা শিক্ষিত হয়েও একে অন্যের জন্য এগিয়ে আসতে চায় না। হারে মানুষ।
ইউসুফ আব্দুল চাচাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
----চাচা তোমাকে অনেক ধন্যবাদ তুমি আমার দ্বিতীয় বার জান বাচিঁয়ে দিছো।প্রথমবার সাপের হাত থেকে আর আজ মরার হাত থেকে। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া।
লোকটি হকচকিয়ে উঠে।তারপর ছল ছল চোখে বলে উঠে,,
---আপনি সত্যি আমাগো ইউসুফ বাবা।
ইউসুফ মুচকি হাসে।
--------------------------------------
কুহুকে হাত পায় শিকল পরিয়ে খাটের সাথে বেঁধে রেখে তার সামনেই চেয়ার টেনে বসে পরে আশিক। পাশেই তার মামা দাড়িয়ে।কুহু কান্না করেই যাচ্ছে। আর ছেড়ে দিতে বলছে তাকে। তখনি আশিক উঠে এসে কুহুর চুলে মুঠ করে ধরে। আর দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
-----খুব বার বেড়েছিস তুই! এবার দেখি কে বাচায় তোরে। তোর বর তো এতক্ষনে পটল তুলেছেরে।
কুহুকে এভাবে ধরায় "আহ" শব্দটি মুখ থেকে বের হয়ে আসে। তার পরেও হাসি রেখা মুখে টেনে কুহু বলে উঠে,
-----তোর মত নর্দমার কিট তার কিছু করতে পারবে না বুঝলি।সে ইউসুফ, আমার ইউসুফ, আমার সাইকো। আমার জন্য সব করতে পারে আর তোদের সব কটাকে মাটিতে মিশিয়ে দিবে বুঝলি। মনে রাখিস#psycho_is_back😎। বলে হাসতে লাগলো কুহু।
কুহুর কথায় আশিক ভয়ে তার মাথা চুল থেকে হাত সরিয়ে দিল। কুহুর মামাও এমন কথা ভয়ে ছাপ ফুটে উঠলো মুখে।তিনি তোতলাতে তোতলাতে বললেন,
-----এই মেয়ে কি যা ইচ্ছে বলছিস? ইউসুফ মরে গেছে। আমি মারিয়েছি। সে আসবে কই থেকে? ফালতু কথা সব।
কুহু মচকি হেসে বলে,
---- শয়তানকে তো একবার না একবার ধ্বংস হতেই হয়।
মামা ঘামতে লাগেন দ্রুত রুম ত্যাগ করলেন। এখন যে খবর লাগাতে হবে, বারিশ নাকি ইউসুফ খোঁজ নিতে হবে। এঁকেও শেষ করতে হবে। নয়তো এতদিনের সব পরিকল্পনা শেষ।তখনি সদর দরজা দিয়ে কিছু বিদেশি কালো পোশাক পরিহিত বডি বিল্ডার লোক ঢুকে। প্রতি লোকের হাতে একটি করে বন্দুক।মামা এসব দেখে ভ্রু কুঁচকে জিগাস করেন,
-----এই আপনারা কে? একটা মেয়রের বাসায় এভাবে কিভাবে ঢুকতে পারেন আপনারা? গার্ডস গার্ডস। বলে জোড়ে চিৎকার করতে লাগলেন। কিন্তু কেউ আসচ্ছে না।
তখন এক গার্ডস বললেন,
-----এভরিওয়ান ইজ ডেড।
মামার ভয় এবার বাড়তে লাগে,
সাথে সাথেই ইউসুফ ঢুকে মামাকে উদ্দেশ্য বলে উঠে,
----হাই চাচ্চু! হাউ আর ইউ?বলে আরামসে সোফার উপর পা তুলে বসে পরে।
মামা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। তার পর বললেন,,
-----তু তু তুমি কে?
ইউসুফ বাঁকা হাসলো আর বলল,
----নিজের ভাতিজাকে চিনতে পারছ না? হাউ স্ট্রেঞ্জ? শুনেছি চাচা নাকি ভাতিজা নাড়ি-নক্ষত্র পর্যন্ত চিনি! আর তুমি আমাকে ভুলে গেলে?
মামা কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। রীতিমত কাপাকাপি স্টার্ট তার। তা দেখে ইউসুফ আবার বলল,
----হায় হায় চাচ্চু কাঁপচ্ছো কেন? কই এত দিন পর তোমার ভাতিজা এসেছে তাকে আদর আপ্যায়ন করবে তা না করে দাড়িয়ে কাঁপচ্ছো? বাট হোয়াই? আচ্ছা তুমি কি ভাবচ্ছো আমি তোমাকে মারতে এসেছি? এক ভ্রু উঁচু করে বলল ইউসুফ।
মামা এবার নিজেকে সামলে চেচিয়ে বলল,
----তোর সাহস কেমনে হয় আমার বাসায় আসার?
ইউসুফ আবার ভ্রু কুচকে বলল,,
-----তোমার বাসা?
মামা ভরকে গেল, আর বলল,
----হে আমার বাসা। সব আমার।
----তার জন্যই তো বাবা- মা এবং কি নিজের জন্মদাত্রী মাকে মেরে দিছো। তা কেমনে পারলা চাচু টাকার জন্য নিজের আপন মানুষকে মেরে দিলে?একটি বার হাত কাঁপলো না?
-----না কাঁপে নাই কাঁপে নাই হাত। সৎ মা, সৎ ভাই তাদের জন্য আমার কিসের দরদ থাকবেরে? সব কিছুতে তোরা ভাগ বসিয়ে ছিলি আমার।
----আচ্ছা না হয় তারা ভাগ বসিয়েছিল তাই মেরে দিছো। কিন্তু কুহুর মা! কায়নাত আন্টি কি করছিল? সে তো তোমার আপন রক্তের ছিল..!
----ওর কোনো দোষ ছিল না। বাবা ওর নামে ৬০% সম্পত্তি দিয়ে দিছিল। আর আমাদের দুজনকে ৪০%। আমার একাই ১০০% চাই তাই মেরে দিছি।
----- বাহ্ চাচু টাকার লোভের জন্য নিজের ওয়াইফকেও মেরে দিলা?
মামা বিস্ময়ের সাথে চেয়ে থাকে। আর ভাবে! এটাতো জানার কথা না। সে তো তারে স্টাডি রুমেই রেখে চলে আসচ্ছিল। ইউসুফ কেমনে জানলো?
তখন ইউসুফ বলে উঠে,
----কি ভাবচ্ছো? আমি কিভাবে জানি তাই তো?
চাচী??
সাথে সাথে রাহুল তার মাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে। চাচীর মাথা ব্যান্ডেজ করা। চাচীকে দেখে ইউসুফের চাচা ভুত দেখার মতো চেয়ে থেকে বলে,,
-----তুমি??
চাচী হেসে বলে,
-----পাপ কাউকে ছাড়ে না।
রাহুল বলল,
-----ছি! বাবা তুমি এত নিচ?
ছেলের চোখে নিজের জন্য ঘৃণা দেখে ভেঙ্গে পরছেন রাহুলের বাবা। ছেলের কাছে গিয়ে বলে উঠে,,
-----বাবা এসব কিছু তোর জন্যই করছি যেন আমার মত ঠকতে না হয়।
-----বাবা কেউ তোমাকে ঠকায়নি উল্টো তুমি ঠকিয়েছো সবাইকে।তোমাকে বাবা বলে ডাকতেও ঘৃণা হচ্ছে আমার।
ছেলের কথা যেন কলিজায় আঘাত করলো তার। সাথে সাথে বুকে হাত চেপে বসে পরলেন তিনি। বুকে যে চিন চিন ব্যথা শুরু করেছে। মাটিতে বসে ভাঙ্গা গলায় বললেন,,
----আমার সন্তানদের জন্যই আজ এত সব করেছি তারাই আমাকে আজ ঘৃণা করছে? আমি ভাবতে পারিনি এমন হবে।
----বাবা তুমি ভাবলে কি করে? অন্যের কবরে বিল্ডিং গড়ে সুখে থাকবো আমরা??
মামা যেন নিতে পারছে না আর। শুধু বলে যাচ্ছেন,,
-----আমাকে মাফ করে দে বাবা? বলে বুকে জোরে চেপে আহ্ উহু করে চেচাতে চেচাতে চোখ বুজে গেলেন। তখনি ইউসুফ আর রাহুল দৌড়ে তার কাছে যেতেই চাচী বাঁধা দিলেন আর বললেন,,
-----ও নাটক করছে। কাছে যেও না ওর?দীর্ঘ ৩০ টি বছর এ লোকের সাথে বসবাস হারে হারে চিনি এরে আমি।দাড়া প্রমান দিচ্ছি। বলে মামী রান্না ঘরে যায়। কিছুক্ষণ পর একটা বোতল নিয়ে হাজির হলেন।বোতলে পানির সাথে কেরাসিন তেল মিলানো। মামী সাথে সাথে বোতলটি মামার শরীরে ঢেলে দিলেন।
নাকে কেরাসিনের গন্ধ যেতেই। হুড়মুড় করে উঠে বসেন মামা। মামী সাথে সাথে হাসতে হাসতে বলেন,,,
----- দেখে নে তোরা।
উপস্থিত সবাই হতভম্ব। তখন মামা চিল্লিয়ে বলতে লাগে তোদের সবাইকে দেখে নিব আমি বলে উল্টো রাস্তায় দৌড় দিতে নেয়।তখনি পুলিশ হাজির।এবং মামাকে ধরে। ইউসুফ তখন বলে উঠে,
-----আমি চাইলে নিজ হাতে তোমায় মারতে পারতাম চাচু কিন্তু বাবার জায়গায় বসিয়েছি। তাই পারলাম না। তোমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে জানে মেরে দিতাম।
মামাকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে। ইউসুফ তখন কুহুর রুমের দিক পা বাড়ায়। তখনি পিছন থেকে গুলির শব্দ আসে। পিছনে ফিরতেই ইউসুফ তার চাচু নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পরতে দেখে। সুইসাইড করেছেন তিনি। সবার কর্মের ফল এই দুনিয়ায় পেতেই হয়।ছোট শ্বাস নিয়ে হাটা ধরে উপরের দিক।
-----------------------------
নিচে থেকে সোরগোলের আওয়াজ পেয়ে আশিক কুহুর রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। নিচে কুহুর মামাকে পরে থাকতে দেখে বুঝতে বাকি নেই যে, তাদের খেল খতম। এর মাঝে ইউসুফকে উপরে আসতে দেখে ভয়ে পালিয়ে যায় সে। বেঁচে থাকলে কুহুকে পাওয়ার সুযোগ আবার পাবে সে।
----------------------------
কুহু সেই একি অবস্থা বসে আছে খাটের সাথে হেলে। চোখ থেকে পানি পরছে তার। তার কাছের মানুষ গুলোকে দূরে শরীয়ে দিয়েছে মামা। আর যে আছে সে অন্যের আইডেন্টিটি নিয়ে। সে তারে কখনো চিনবে?
কুহুর ভাবায় ছেদ পরে কারো আসাতে। কুহু সামনে তাকিয়ে দেখে বারিশ দাড়িয়ে, মাথায় তার সাদা ব্যান্ডেজ। কুহু ছল ছল চোখে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।ইউসুফ কাছে এসে ঝাপটে ধরে কুহুকে আর বলতে লাগে,,
-----বাবুইপাখি কাঁদিস না তোর ইউসুফ তোরে আর কাঁদতে দিবে না।
কুহু চমকে উঠে তাকালো তার দিক। ইউসুফ শিকল খুলতে খুলতে বলল,,
-----আমার মনে পরেছে সব বাবুইপাখি।
কুহু এবার জোরে ঝাপটে ধরে হু হু করে কান্না করতে লাগলো। আর যাই হোক একটা জিনিস তো ভাল হলো। ইউসুফ তার স্মৃতি শক্তি খুঁজে পেল।
-----আর কান্না করিস না..! কান্না করলে তোরে পেত্নীর মতো লাগে,, চোখ মুছে দিতে দিতে বলল ইউসুফ।
কুহু চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,,
-----শুরু হয়ে গেছে তোমার? যাও কথা বলবো না!
-----আরে বাবুইপাখি রাগ কেন করিস, তুইতো আমার সব। আর ভালবাসা, ভাললাগা,ভুত, পেত্নী সব। কঁপালে কঁপাল থেকিয়ে বলল ইউসুফ।
কুহু চোখ মুখ শক্ত করে চেয়ে থেকে হেসে ফেলে।
-----যা ইচ্ছা বল আজ আমি অনেক খুশি...! কুহু ইউসুফের বুকে মাথা রেখে বলে।
----আমিও আজ অনেক অনেক খুশি। এবার তোরে ঘরে তুলবো ধুম ধাম করে বিয়ে করে।
কুহু ভেঙ্গচি কেঁটে সরে আসলো আর বলল,,
-----আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। ডিভোর্স চাই।
ইউসুফের ধমকের সুরে বলে,,
----ফাজলামি করিস?
----নাহ্ সিরিয়াস। তুমি আমাকে বিলিভ করো না। এক দন্ডও না। নয় তো আশিকের কথা বিলিভ করতে না।
----আম সরি বাবুইপাখি আমার ভুল হয়েছে। এই যে কানে ধরছি দেখ।
কুহু অন্য দিক তাকালো হাসি পাচ্ছে তার। ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকাচ্ছে সে।ইউসুফ বলল,
----ভাব দেখাচ্ছিস আমার সাথে দাড়া দেখাচ্ছি মজা। বলে সাথে সাথে খাটের সাথে চেপে গলা কামড় বসিয়ে দিতে থাকে। কুহু ছুটাছুটি করতে করতে বলল,,
-----আমি মাফ করেছি তো তোমাকে। উফ ছাড়ো তো ব্যথা পাচ্ছি।
উঠে বসে ইউসুফ। কুহুও উঠে। তখন ইউসুফ বলে উঠে,,
-----তোর আশিক দিবানা কই গেল?
-----আমার আশিক দিবানা কেন বলছো? খানিকটা চিল্লিয়ে বলল।
ইউসুফ কানে হাত দিয়ে বলল,,
-----কানের পর্দা ফাটিয়ে দিলি। আচ্ছা সরি। বাট বেটা কই?
কুহু হেসে বলল,,
----সাইকোর পা পড়তেই সে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে।
----কুহু এটা ঠিক না সব সময় আমায় সাইকো বলিস?
-----১০০ বার বলব তুমি তো সাইকোই। কি আমি সাইকো?? দাড়া তুই।
বলে ছুটা ছুটি করতে লাগলো দুজন দিলে। এদিক ওদিক।
—————
এসো, এসো আমার আরো কাছে,
ভিজাও তোমার বর্ষায়
রাঙ্গাও তোমার রোদে
হারাতে দাও তোমার চুলে।
ডুবতে দাও তোমার চোখ
আর একটু, ভালবাসা দাও...!
ছাদের মাঝে দুজন দিকে শুয়ে আছে ইউসুফের মাথা কুহুর কাঁধে, কুহুর মাথা ইউসুফের কাঁধে।শুয়ে শুয়ে পূর্ণিমার এই বড় আলো কিত চাঁদটি দেখে যাচ্ছে তারা। তার সাথে তাল মিলিয়ে ছন্দ বানিয়ে বলছে ইউসুফ।কুহু চুপ করে শুয়ে শুনচ্ছে।কি যে ভাল লাগচ্ছে তার।মাঝে মাঝে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে সে।আজ আবার তাদের বিয়ে হয়েছে। ধুমধাম করে। পুরো ময়মনসিংহের মানুষকে দাওয়াত করে খাইয়েছে তারা।বারিশের দাদুকে নিয়ে এসেছে তারা।দাদু এখন শয্যাশায়ী।টিনার সাথে রিয়ানের বিয়ে হয়ে গেছে।বারিশের সব রিয়ানের নামে করে দিছে ইউসুফ। আশিককে জেলে দেয়া হয়েছে। রাহুল তার ওয়াইফ কে নিয়ে আমেরিকা চলে গেছে। মুনতানিছা মা হয়েছে। তার ফুট ফুটে ছেলে, মেয়ে হয়েছে।নাম দিয়েছে, ফারিন, আর ফারহান। তারা খুব খুশি। কুহুর মামীকে তাদের সাথতে রেখেছে। রাহুল নিতে চাইছিল কিন্তু দেয় নি। সব মিলিয়ে শান্তি নেমে এসেছে এই দুজনের জীবনে।
দুজনের মধ্য বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা চলছে। নিরবতা ভেঙ্গে ইউসুফ বলল,
-----কুহু দেখ চাঁদটা কি সুন্দর তাই না!
কুহু অস্পষ্ট শব্দে বলে,
-----হুম।
ইউসুফ আবার বলে,
-----তোর সাথে অনেক অন্যয় করেছি মাফ করেছিস তো?
কুহু সেই একি ভাবে বলল,
----হুম।
ইউসুফ বুঝলো কুহু অন্য কুছি নিয়ে ভাবনায় মগ্ন।
সে হালকা উঠে কুহুর মুখের দিক ঝুকে বলে উঠে,
-----কুহু! আই নিড ইউ...! কেন আই?
কুহু সেই একি ভাবে বলল,,
----হুম।।
ইউসুফ এবার হেসে দিল।হাসার শব্দে ধেয়ান ভাঙ্গে কুহুর। পরক্ষনেই মনে পরে কি বলল, ভেবে সাথে সাথে উঠে বসে জিব কাটে। ইউসুফও উঠে বসে এবার ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,,
----আমি সিরিয়াস!
কুহু লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়। ইউসুফ এবার গা ঘেসে বসে কুহুর।কুহু কেঁপে উঠে। ইউসুফ এবার কুহুর দু হাত তার হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,
-----ভালই হয়েছে আগে কিছু করতে দাও নি..! এখন সব ডাবল হবে।
কুহুর যেন লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। এই লোকটা আজ তাকে কত লজ্জা দিচ্ছে..! কিন্তু আজ লজ্জা পেতেও ভাল লাগচ্ছে। এই লজ্জায় আজ সে মরতেও যে রাজি।ইউসুফ এবার কুহুর ধরে রাখা হাতে হালকা চাপ দিল।আর বলল,,
-----আজও কি দূরে শরিয়ে রাখবে?
কুহু চুপ করে মাথা নত করে রাখলো। ইউসুফ বুঝলো নাহ্ লাভ নেই। সে আজও তার কুহুতে আপন করে পাবে না। কষ্ট লাগলো ইউসুফের। খুব কষ্ট। কুহু তেন বুঝে না তাকে? সেই ছোট থেকেই কতটা কন্ট্রোল করেছে শুধু সে জানে।ইউসুফ ছোট শ্বাস নিয়ে বলল,
----ওকে। বলে উঠে যেতে নিল।
কুহুর জানি কি হলো, সে টান মেরে ইউসুফের বুকে লেপ্টে গেল। ইউসুফ তার উত্তর পেয়ে গেল।সে হেসে কুহুর ঘারে চুমু খেল। তারপর কোলে তুলে হাটা ধরলো তাদের ঘরের দিক।কুহু ইউসুফের গলায় দু হাত ভাল করে বেদ্ধে বুকে মাথা ঠেকিয় চেয়ে রইলো ইউসুফের দিক। লোকটি কত সুন্দর। ২ চেহারেয় যেন মানায় তাকে। নাহ্। আগের চেহেরা বেশী সুন্দর ছিল। যাই হোক মানুষ তো তারি আছে। ভেবে আনমনে হাসলো। কুহুর হাসি দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো ইউসুফ। কুহু ইউসুফকে অবাক করে দিয়ে গালে চুমু খেল। ইউসুফ হা হয়ে গেল। থমকে গেল কদম। কুহু যেন আরো লজ্জা পেল। সাথে সাথে মুখ লুকিয়ে ফললো ইউসুফের বুকে।
ইউসুফ মুচকি হেসে বলল,,
-----আজ তো আমাকে পাগল করে দিচ্ছো তুমি। আজ সত্যি ছাড়াছাড়ি নাই।
বলে বড় বড় পায়ে হাটা ধরলো।কুহু আবার সেই লজ্জা জেকে বসলো।
ইউসুফ রুমে ঢুকে কুহুকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিল।তারপর আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ালো। কুহু চোখ বন্ধ করে আছে। মনের মাঝে রংবেরঙের প্রজাপতি উড়ছে। ইউসুফ এবার কুহুর গহনা খুলতে ব্যস্ত। প্রথমে ডান কানের কানের দুল খুলল। এবং সেখানে ঠোঁট ছোয়ালো। কুহু চোখ বন্ধ করে কেঁপে উঠলো। যা ইউসুফ আয়নায় দেখছে। তার পর বাম কানে দিল। কুহু আবার কেঁপে উঠলো। ইউসুফ মুচকি আসলো।তারপর হাত দিয়ে গলায় স্লাইড করে গলার গহনা খুলে দিল। কুহু এবার তার লেহেঙ্গার কাপর মুঠ করে ধরলো।ইউসুফ আবার কোলে তুলে নিল কুহুকে। এবং বেডে বসালো। তারপর পিঠের দিক কুহুর ব্লাউজের ফিতা খুললো। সেখানে চুমু দিল।কুহু শক্ত হয়ে চাঁদরে হাত দিয়ে বসে রইল। ধীরে ধীরে কুহুর পায়ের কাছে নেমে এলো পকেট থেকে দুটো নুপু বের করে পরিয়ে দিল। এবং দু পায়ে চুমু খেল। কুহু আর নিতে পারলো না সটান করে শুয়ে পরলো সে। এ কেমন অনুভতির সাথে পরিচয় করাচ্ছে তাকে ইউসুফ। এই অনুভতি গুলো যে মেরে দিবে তাকে। একে বারে মেরে দিবে।
ইউসুফ এবার নিজের পাঞ্জাবি খুলে ফেলল। কুহু তাকিয়ে আছে ইউসুফের বুকে সে লুকিয়ে কত দেখেছে এই বুকটা। ইউসুফ কুহুর লেহেঙ্গা পা পর্যন্ত উঠালো। কুহুর সেই পায়ের তিলে গাড় চুমু দিলো। কুহুর যেন দম আটকে আসচ্ছে মরেই যাবে সে আজ।
ইউসুফ এবার উঠে এসে কুহুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো। গভীর চুম্বুনে লিপ্ত হলো। এবার কুহুও সাথ দিল তার।ইউসুফ ঠোঁট ছেড়ে নেমে এলো গলায়।প্রথমে ঠোট দিয়ে চুমু দিল। তারপর জিব্বা দিয়ে আদর করতে লাগলো।কুহু যেন শ্বাস নিতে ভুল যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ইউসুফ নেমে এল বুকে। তার পেটে। পেটের দিকে কুহু একটি লাল তীল। ইুসুফের লোভ বাড়লো কামোর বসালো তাতে। এতে কুহু মুখ থেকে অাহ্ শব্দ বের হয়ে আসলো। ইউসুফ তখন মাথা তুলে কুহুর দিক দাঁত কেলিয়ে বলল,,
-----নতুন বউয়ের শরীরে লাভ বাইট না হলে কেমন দেখায় না তাই দিলাম।
কুহু বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে রইলো। লোকটি হাসলেই পাগল। কুহু সবাইকে লাভ বািট দেখিয়ে ঘুরবে নাকি।
ইউসুফ আবার তার কাজে মন দিল। পেটে কিস করতে আবার উপরে উঠে কুহুকে চুমু দিল। তারপর জড়িয়ে ধরে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর আবার মেতে উঠলো আদিম খেলায়। দুজনে তলিয়ে গেল। ভালবাসার গহীন অতলে...!
এটাই যেন তাদের নতুন জীবনের শুরু। সকল বাঁধা বিপত্তি এক পার করে আজ কুহু তার সাইকো কে পেয়ে গেল। আর ইউসুফ তার বাবুইপাখিকে...!
***(সমাপ্ত)***