রূপসার সাথে বাতাসি বিবির ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। কিছু একটা শব্দে মাহাদ চট করে চোখ খোলে। চোখ খুলে যা দেখলো, তাতে মাহাদ চমকে উঠলো। কি হচ্ছে এসব বলেই দ্রুত বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠেই রূপসাকে একটা ধাক্কা দিয়ে বাতাসীকে ওর থেকে আলাদা করে ফেলল। বাতাসি মাহাদকে জড়িয়ে ধরেই বলল-
~" অ্যারে বাঁচা ভাই। ও অ্যারে মাইরা ফেললো।"
বাতাসি এতটা ভয় জিবনেও পায়নি। মাহাদকে জড়িয়ে ধরে কাপতে লাগলো। দাদীর এমন অবস্থা দেখে মাহাদ রূপসার দিকে কঠিন চোখে চেয়ে বাতাসিকে বলল-
~" দাদী, আমি আছিতো! কাকে এত ভয় পাচ্ছো! কি হয়েছে তোমার, আমায় খুলে বলো?"
রুপসা রাগে কেঁপেই চলছে। মাহাদ ওর চাহোনি দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা। বাতাসিকে ছেড়ে দিয়েই কষে একটা থাপ্পড় মাড়লো রূপসার গালে। নাহ একটা মেরে ও ক্ষান্ত হলোনা। পরপর কয়েকটা চড় মারলো রূপসাকে। তারপর চিৎকার দিয়ে বলল-
~ " চোখ নামা। এতবড় অপরাধ করে আবার ঐ চোখের দাপট দেখাস কিভাবে? আর তুই দাদীর গায়ে হাত তুলিস কোন সাহসে! তোর এত সাহস কবে থেকে হল! এত নিচে নেমে গেলি কিভাবে! অারে তুই তো মানুষ নামে একটা দু'পায়া পশু! পশুদেরও তো দয়ামায়া আছে, তোর তো দেখছি সেটাও নেই। এত অধঃপতন তোর! এই জন্য, শুধু এই জন্য আমাদের ইনভাইট করেছিস?
আজ যদি তোর বাবা-মা তোর বিচার না করে তাহলে আমি নিজেই তোর বিচার করবো।"
মাহাদ আর একমুহুত্ত্বও দেরী না করে ফুয়াদ কে কল দিয়ে রুমে আসতে বলল। আসার সময় ফুফু,ফুফা আর বাবাকেও নিয়ে আসতে বলল। কিছুক্ষনের মধ্য সবাই এসে হাজিরও হল। সাথে নিসাও চলে আসলো।
মাহাদ ওর বাবাকে লক্ষ্য করে চিৎকার দিয়ে বলল-
~ " আমি এখানে আসতে চাইনি। শুধুমাত্র আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন এখানে আসতে। এখানে আসার ফল দেখছেন তো! আমার কথা যদি একবার শুনতেন তাহলে এমন দিন দেখতে হতোনা আর এভাবে বেইজ্জতিও হতে হতোনা।
সে নিজ কার্য সিদ্ধি করার জন্য দাদীকে তো প্রায় মেরেই ফেলছিল।"
মাহাদের কন্ঠে ক্রোধ যেন ফেটে পড়ছে। মাহাদের কথা শুনে কামড়ান সাহেব থো মেরে মাথা নিচু করে রইলো। মহাদতো সত্যিই এখানে আসতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু আমিই ওকে এখানে আসার জন্য একপ্রকার জোড় করেছিলাম। যার ফলাফল হাতের সামনেই রয়েছে। ছেলের সামনে কথা বলার মুখ আর রইলোনা তার। মায়ের জন্য অত্যন্ত কষ্ট হচ্ছে তার। তিনি নিজের মায়ের খেয়ালও রাখতে পারেননি। ওদিকে বাতাসি বিবি গুন গুন করে কান্না জুড়ে দিসে।
ফুয়াদ মাহাদের কাছে গিয়ে অনুরোধের স্বরে বলল-
~" দেখ, এমন করে চিৎকার চেচামিচি করিসনা ভাই। বাসা ভর্তি মেহমান। তাছাড়া এটা ওর শশুড়বাড়ী। একবার যদি জানাজানি হয়ে যায় তাহলে ওর অবস্থা কি হবে ভেবে দেখেছিস? এটা কোন পাশ্চাত্য দেশ নয় যে কারো কিছু যায় আসবেনা। বাংলাদেশে এর প্রভাব মারাত্বক। তাই সব কিছু জেনেও আমাদের চুপ থাকতে হয়।"
মাহাদের আর ধৈর্য্য রইলোনা। রূপসার দিকে চেয়েই হুংকার দিয়ে বলল-
~" চুপ থাকবো! আমি চুপ থাকবো, চুপ মাই ফুট! ওর কোন লজ্জা আছে? দেখ, দেখ! ওর ভিতর কোন অনুশোচনাই নেই। বরং ওর কাজে ও সফল হতে পারেনি তাই রাগে কেমন করে কাপছে !"
রুমে সবার চিৎকার চেচামেচিতে অতীথীর ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভেঙ্গেই ও কেঁদে উঠলো। নিসা দ্রুত অতিথীকে কোলে নিয়ে বাহিরে চলে আসলো। এসেই লাবীবার কোলে অতিথীকে দিয়ে বলল-
~" মা ওকে তিতিরের কাছে নিয়ে যানতো! হয়ত খুদা লাগছে ওর।"
নিসা আর শাশুড়িকে কিছু না বলে দ্রুত আবার রুমে চলে আসলো। এসে দেখলো, ফুয়াদ সহ রজনী ফুফু মাহাদকে বুঝিয়েই চলছে কথাটা না বাড়ানোর জন্য। এবার নিসাই রেগে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে সবার কাছে এসে বলল-
~" আজবতো! আপনার মেয়ে এতবড় নোংরা খেলায় মেতে উঠলো, কোথায় তাকে শাসন করবেন, তা না করে মাহাদকে বুঝাইতে আসছেন? দোষতো দেখছি আপনার মেয়ের একার না, দোষ আপনাদের শিক্ষার ভিতরও রয়েছে।"
নিসার কথা শুনে ফুয়াদ ওর দিকে চেয়ে চোখ গরম করে তাকাতেই নিসা চুপ হয়ে যায়। আর কোন কথায় বলতে পারেনা নিসা।
এবার বাতাসির মুখ ছুটলো। ফকিরের বাচ্চা ফকিন্নি! ওর ১৪ গোষ্ঠী খারাপ। ওর আবার জাত-পাত আছে নাকি! বাপ যেমন মাইয়াডাও তেমন। ও কামু, কামুরে... আজতো তুই অ্যারে খাটিয়াতে তুলতি বাপ! তোর কি মায়ের উপর দরদ হইতেছেনা? আই মরলে কি তুই সুখ পাইতি!
আহ্ দাদী, চুপ করবে! কথাটি ফুয়াদ বলতেই বাতাসি কান কর্তাল ফাটিয়ে বলল-
~" হ্যালার পুত মাগীর ভ্যাড়া, অ্যারে চুপ থাকতে কইস? বউ চিল্লালেতো কোনদিন তোর মুখ থাইকা কতা বাড় হয়না! অার অ্যারে শাসাইতাছোস? চোপা কি ভাঙ্গনের দরকার?"
আম্মা জামাইয়ের সামনে কি সব বলছেন বলে রজনী কেঁদে উঠলো। আপনি একটু থামবেন? আমার সম্মানটা আর শেষ করে দিবেননা। এর সমস্ত প্রভাব আমার উপর এসে পড়বে।
এবার রুপসার বাবা গলা চওড়া করে বললেন-
~" এখানে হচ্ছেটা কি! রজনী তোমার পরিবারের নাটক করতে বন্ধ করো। এটা ওদের আলোচনার ড্রয়িংরুম নয় যে, যা ইচ্ছা তাই বলবে। এটা আমার মেয়ের শশুড়বাড়ী। তাদের স্ব-সম্মানে দাওয়াত করা হয়েছে, তারা যেন সেই সম্মানটা রাখে।"
~" বহু বছর আগে অ্যার চড়ের কথা মনে হয় ভুইলা গেছে মজিদের পোলা? হেইডা কি মনে করন দেওয়া লাগবো!"
বাতাসির কথা শুনে রূপসার বাবা কটমট করে রজনীর দিকে চাইলো। সেটা দেখে কামরান সাহেব ওনার মায়ের কাছে এসে অনুরোধের স্বরে বলল-
~" আম্মাজান, এসব কি বলেন! মেয়ের সংসার কি ভাঙ্গতে চান? কেন এসব পুরনো কথা তুলছেন?"
হ্যা কামরান, তোমার মাকে বুঝাও। এসব কথা যেন আর বলতে না শুনি। বৃদ্ধ বয়সে এত মুখ আমি কারো দেখিনি। নিজেরতো সম্মান নেই, এবার দেখছি ছেলের সম্মানও মাটিতে মিশিয়ে দিতে চান।
জামাইয়ের কথা শুনে বাতাসি ক্ষেপে গিয়ে বলল-
~" হারাম খোরের দল সগ্গোলা। প্যাটে শত্রু রাখছি শত্রু। অ্যারে যে এতক্ষনে কব্বরের ভিতর ঢুকাইতো তার কোন বিচার নাই। সব কটা ইমতিয়াজ চেয়ারম্যানের মত হইছে। রক্ত, রক্ত! একই রক্ত যে সগ্গলের শরীরে বইতাছে। কব্বরের ভিতর ঢুইকাও ইমতিয়াজ চেয়ারম্যান তার স্বভাবখান পোলা মাইয়াগোরে বাইটা দিয়া গেছে।
আই মরলে সগ্গলে খুশি হইয়া চল্লিশা বাইর করবো। তুই কিছু একটা ক মাহাদ। তুই ছাড়া অ্যার কেউ নাই।"
বাবা আমি কিছু করিনি। নানী আমাকে আগে থেকেই দেখতো পারতোনা। আর এখন এসে নাটক করছে। আপনি জানেনা, তার স্বভাব কেমন? আর তাকে আস্কারা দেওয়াতো মাহাদের কাজ। (রূপসা)
রূপসা আর ওর বাবার সাথে বেদম ঝগড়া লেগে গেল বাতাসির। কেউ কাউকে থামাতে পারছেনা। মনে হচ্ছে তারা বাবা-মেয়ে মিলে সব দোষ মাহাদ আর বাতাসির উপর চেপে দিয়ে মুক্তি পেতে চাচ্ছে।
রূপসা তো এমনি এমনি কাজ করার মত মেয়ে নয়! কথাটি মাথায় আসতেই মাহাদ এদিক ওদিক চোখ বুলাতে লাগলো। হ্যা অদুরে ক্যামেরা সেটিং দেখতে পেল। দ্রুত ওটা নিয়ে সব দেখে ওর ফুফার হাতে তুলে দিয়ে বলল-
~" নিজ মেয়ের নাটক দর্শন করেন। এর পরেও যদি দাদীকে কটু কথা বলেছেন তো আমি ভুলে যাবো আপনি আমার কে হোন!"
রূপসার বাবা সব দেখে আর কোন কথা বলতে পারলোনা। চুপ করে নিজের হাত নিজেই মোচরাতে লাগল। কিন্তু রজনী এসে কাঁদতে লাগলো। কারন ও ভালো করে জানে মাহাদ ক্ষেপে গেলে ও কি কি করতে পারে। তাই মাহাদের হাত ধরে অনুরোধ করে বলল-
~" বাবা ওর হয়ে আমি তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তুই জানিসতো ও কেমন পাগলাটে মেয়ে। ওকে ক্ষমা করে দে। যা হবার হয়ে গেছে, সব ভুলে যা মাহাদ?"
~" ভুলে যাবো! আপনি আমাকে বলছেন ভুলে যেতে!
এত কিছু ঘটে গেল, সেগুলো দেখেও আপনি কিভাবে এমন কথা বলতে পারেন?
নিজের মায়ের কথাতো একবার ভাববেন নাকি! সন্তান প্রীতি এত ভালো নয়। সে তো আমাকে প্রায় শেষ করেই ফেলে দিয়েছিল। আমার লাইফ সহ সংসার সব কিছু ধংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সে আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে নোংরা খেলায় মেতে উঠেছিল আর তাকে আমি ক্ষমা করবো! ও কি জানতো না আমার স্ত্রী সন্তান রয়েছে! তারপরও এটা কিভাবে করতে পারলো!
আর দাদীর কথাতো বাদই দিলাম। যা করেছে নিকৃষ্ট কাজ করেছে। মেয়ে যদি পাগল হয় তাহলে তাকে পায়ে বেড়ী দিয়ে ঘরে আটকিয়ে রাখুন। তাহলে অন্তত কিছু মানুষের সংসার বাঁচবে। অসভ্য মেয়ে কোথাকার।"
মাহাদ কথাগুলো বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু! কথাগুলো বলে রূপসা রাগী লুকে মাহাদের দিকে চাইলো।
~" তুই আবার কথা বলছিস নিলজ্জ, বেহায়া মেয়ে কোথাকার! বাড়াবাড়ির দেখেছিস কি! বেশি কথা বললে আমি ভুলে যাবো তুই আমার কাজিন হস। একদম সোজা থানায় তুলবো। তখন তোর এত বড়বড় কথা কোথা থেকে আসে সব কিছু দেখে ছাড়বো। সম্মান নিয়ে টানা হিচড়া করলে ভুক্তভোগীর কতটা কষ্ট হয় তা বুঝিয়ে ছাড়বো। সব জায়গায় পাগলামো! তোকে আমার চোখের সামনে যেন আর না দেখি।"
মাহাদ........! বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিল রূপসা। এত তোর অহংকার বেড়ে গেছে! আমি বলছি তোর কথা তুই সংযত কর। এবার কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে!
~" Just shut up. I don't want to talk to dirty girl like you. I can't even bear your face. Get out of front of my eyes."
মাহাদ কথাগুলো এত জোড়ে ধমকের সাথে বলল যে, রূপসা সহ ওর বাবা পর্যন্ত কেঁপে উঠলো। কামরান সাহেবের মুখ থেকে মাহাদ নামটি উচ্চারন হতেই...
আমি যদি এখানে আর এক মুহুত্বও থাকি তাহলে ওকে নির্ঘাত খুন করবো। তাই আপনারা ওর বিচার করেন। আর যদি আমি বিচার করি তাহলে আপনাদের বাপ-মেয়ের মান-সম্মান ধুলিসাৎ করে ছাড়বো। কথাগুলো বলে মাহাদ রাগে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
♥
তিতির অতিথীকে কোলে নিয়ে কয়েকজন মহিলার সাথে কথা বলছিল। এমন সময় মাহাদ প্রায় ছুটেই বের হয়ে গেল বাসার বাহিরে । দুর থেকে মাহাদের এমন ছুটে চলে যাওয়াটা স্বাভাবিক লাগলোনা তিতিরের। তিতির মহিলাদের সাথে দ্রুত কথা শেষ করে ওদের কাছ থেকে সরে এল।
একটু দুরে সাদের কাছে গোলাব দাড়িয়ে ছিল। সেও মাহাদের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।
তিতির দ্রুত Go শব্দটি উচ্চারন করতেই গোলাব বুঝে ফেলল তাকে কি করতে হবে। গোলাব মোটেও বিলম্ব করে না, এক দৌড়ে মাহাদের পিছে ছুটে বাহিরে চলে গেল।
কিছুতো একটা হয়েছে। মাহাদকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল না। তিতির সাবিনাকে ডেকে ওর কোলে অতিথীকে দিয়ে বলল-
~" বোন, ওর খেয়াল রেখ। দাদী আসলে না হয়ে ওকে তার কাছে দিও।"
~" আপা চিন্তা করেন না। আই ওরে সামলাইতে পারুম। আপনি যান।"
ওকে বলে সাদকে কাছে ডাকলো তিতির। সাদ ওর মায়ের কাছে এসে গা ঘেষে দাড়াতেই ওকে নিয়ে শাশুড়ীর কাছে গিয়ে বলল-
~" মা সাদকে একটু দেখে রাখবেন আমি না আসা পর্যন্ত।"
লাবীবা অবাক হয়ে বলল-
~" কোথায় যাচ্ছো তুমি?"
এইতো সামনে বলেই তিতির সাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-
~" বাবা, আমি একটা কাজে বাহিরে যাচ্ছি। আশা করি তুমি আমাকে কারো কাছে লজ্জিত করবেনা। অতিথীর খেয়াল রেখ সোনা। আর দাদাজান আসলে সবসময় তার কাছে থাকবে।"
তিতির ছেলেকে উপদেশ দিয়েই ঐ অবস্থায় মাহাদকে অনুসরন করে দ্রুত চলে গেল। বাহিরে আসতেই দেখলো, ডাইভারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে মাহাদ গাড়ীতে উঠে পড়েছে। গোলাবও সেই সুযোগে গাড়ীতে উঠে পড়লো। মাহাদ গোলাবকে বার বার চলে যেতে বলছে। কিন্তু ও একটুও নড়াচড়া করলোনা। বরং মাহাদের পেটের সাথে ওর মাথাটা ঘসিয়ে করুন সুরে ডাকতে লাগলো। ভিষন বিপদ আসলে প্রানীরা হয়ত আগে থেকেই বুঝতে পারে। গোলাবের আচরন দেখেও এমনটাই লাগছে........
তিতির দ্রুত এসে গাড়ীতে বসে বলল-
~" গোলাবতো আপনার কথায় যাবে না! কারন ওর মায়ের হুকুম আছে তার বাবাকে ছাড়া যেন এক চুল পরিমানও না নড়ে।"
মাহাদ তিতিরকে দেখে অবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইল। মেয়েটাকে বলতে হয়না আমার যন্ত্রনার কথা। সব সমস্যা তার কাছে ধরা পরবেই। নিজেকে সংযত করে মাহাদ গলা ঝেড়ে বলল-
~" বাচ্চাদের কার কাছে রেখে এসেছ? আর তুমি ওদের ছেড়ে কেন এসেছ? এখুনি চলে যাও। "
স্বামীর কথা শোনা প্রতিটি স্ত্রীর জন্য ফরয। কিন্তু তিতির আজ কোন কথা শুনলোনা। বরং একরোখা হয়ে বসে থাকলো। দেখেন, আপনি যেখানে যাবেন আমাকেও সেখানে নিয়ে যান। আল্লাহ্ সুবহানাতালার পরে যদি আপনার কারো সঙ্গ দরকার সেটা হল আমি। যদি আপনি আপনার সমস্যার কথা আমাকে নির্দিধায় না বলতে পারেন তাহলে আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে ব্যার্থ। এখন বলেন, আমি কি চলে যাব, না আপনার কাছে থাকবো! প্লিজ আমাকে ব্যর্থ প্রমানিত করবেন না।
তিতিরের এমন কথা শুনে মাহাদ তিতিরকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলল-
~ " সাদ, অতিথীকে কার দায়িত্বে রেখে এসেছ?"
~" সাদকে মার কাছে আর অতিথীকে সাবিনার কাছে রেখে এসেছি। ওদের নিয়ে সমস্যা নেই। গোলাবকেও পাঠিয়ে দিব ওদের কাছে। কিন্তু আমাকে আপনার সাথে নিয়ে চলুন।"
হুম বলেই তিতিরকে ছেড়ে দিল মাহাদ। আর এই সুযোগে তিতির গোলাবকে নেমে দিল। গোলাব চলে যেতেই মাহাদ গাড়ী স্টার্ট দিল। কিছুদুর যেতে তিতির গাড়ীর মিররে দেখলো, গোলাব ছুটে আসছে তাদের দিকে। এমন দৃশ্য দেখে তিতির গাড়ী থামাতে বলল। গাড়ী থামাতেই গোলাব দৌড়ে এসে গাড়ীর কাঁচে দু'পা তুলে ভুগ ভুগ করতে লাগলো। মাহাদ গ্লাসটা নামাতেই গোলাপ জানালা দিয়েই ভিতরে ঢুকে মাহাদের কাছে এসে ছটপট করতে লাগলো। আও আও বলে করুন সুরে ডেকে বারবার মাহাদের বুকের ভিতর জায়গা করে নিতে চাচ্ছে। তিতিরের হঠাৎ মনে পড়লো চার বছরের আগের কথা। সেদিনও তিতির বাহিরে বের হওয়ার সময় গোলাব এমন আচরন করেছিল। গোলাবকে রুমে বন্দী করে রেখে যেতে হয়েছিল। যার ফলাফল তিতিরের উপর আক্রমন হয়। তিনটা বছর সে মাহাদের কাছ থেকে দুরে থেকে অসহ্য কষ্ট উপভোগ করেছিল। তাহলে আজও এমন খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে? বুকের ভিতর তুলপার করতে শুরু করলো তিতিরের। সে বলেই ফেলল, মাহাদ চলেননা আমরা বাসায় ফিরে যাই। আমার সত্যিই কিছু ভালো লাগছে না।
কিন্তু মাহাদ তিতিরের কথার তোয়াক্কা না করে ড্রাইভ করতে লাগলো। মাহাদ ড্রাইভ করতে করতে সমস্ত ঘটনা তিতিরকে খুলে বলল। তিতির সব শুনে চুপ হয়ে গেল। কিছু একটা ঘটবে কিন্তু এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটবে সেটা তিতির কল্পনাও করেনি। এবার তিতির মাহাদের বাম হাতে চুমু খেয়ে মাহাদকে জড়িয়ে ধরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-
~" আমাদের এমন একটা ধাক্কা খাওয়ার দরকার ছিল মাহাদ। আল্লাহ্ যা করবেন তা আমাদের ভালোর জন্যই করবেন। দাদী আপনাকে ফেরেস্তার মত বাঁচাইছে। যদিও সমস্ত ক্রেডিট আল্লাহ্ সুবহানাতালার। বড় কিছু হওয়ার আগে আল্লাহ্ আমাদের সাবধান করে দিল তার ব্যাপারে। এখন ওনাকে আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। আল্লাহ্ ওনাকে হেদায়াত দান করুন। আমীন."
তিতিরের কথা শুনে মাহাদের মনে প্রশান্তির বাতাস বয়ে চলল। এ কথা সে কথায় তারা অনেকদুরে চলে এসেছে। চারদিকে মাগরিবের আযান হচ্ছে। হঠাৎ গাড়ীটা থামিয়ে মাহাদ তিতিরকে জিঙ্গাসা করলো, তার অযু আছে কিনা। তিতির হ্যাঁ বলতেই মাহাদ ওকে গাড়ীতে সালাত আদায় করতে বলে গাড়ী থেকে নেমে গেল। পিছুপিছু গোলাবও নেমে গেল। মাহাদ অযু করে সামনের খোলা মাঠে এল। আল্লাহ্ সুবহানাতালা তার সমস্ত জমিনকে সিজদাহ্ করার জন্য জায়গা বানিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর পুরো জমিনই নামাযের জন্য জায়নামায সরুপ।
তাই মাহাদ নির্দিধায় ঘাসের উপর দাড়িয়ে মাগরিবের সালাত আদায় করে নিল। তারপর মাহাদ এসে গাড়ীতে উঠেই বলল-
~" তিতির তোমার মনে পড়ে, আমরা কিছু বছর আগে এখানে এসেছিলাম! এখানেই আমরা সাদের আগমনের জন্য আল্লাহ সুবহানাতালার কাছে প্রার্থনায় মসগুল হয়ে পড়েছিলাম। আল্লাহ্ আমাদের নিঃসন্তান করে রাখেননি। একটার জায়গা দু'টো দান করেছেন। তিনি কতইনা উত্তম প্রভু আমাদের।"
জ্বী মনে আছে আমার বলে অপার মহিয়াময় আল্লাহ্ সুবহানাতালার শুকরিয়া আদায় করলো তিতির। তিনি কতইনা উত্তম প্রভু। তার মহিমার কোন তুলনা হয়না।
মাহাদের এখন খুব ভালো লাগছে। মাহাদ মুচকি হেঁসে তিতিরের কথার সায় দিয়ে তারপর আবার ড্রাইভ করতে লাগলো। আরো খানিকটা দুরে এসে তিতির বলল-
~ " বাসায় চলেন। জানিনা মেয়েটা কি করছে। অনেকক্ষন হলো তাকে ছেড়ে এসেছি।"
হুম বলে গাড়ী ঘুরাতেই, সামনের কাঁচ ভেদ করে একটা গুলি এসে মাহাদের ডানদিকে গলার একটু নিচে লাগলো। উপ বলেই মাহাদ বাম হাতে ক্ষতের জায়গায় হাত দিল। সাথে সাথে মাহাদের হাত বেয়ে রক্ত ঝড়তে লাগলো.........