এদিকে রিদ বাড়িতে সবটা জেনে প্রচন্ড রেগে যায় ৷ রাগে থরথর করে কাঁপছে রিদ ৷ চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলে রাগ টা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে রিদ আর সামনে দারিয়ে আছে প্রিয়ন্তি ৷ ভয়ে দাঁত দিয়ে নখ কেটে যাচ্ছে ৷
"" বাবা এখন কোথায়?""
"" রিমা খালার রুমে দরজা বন্ধ করে ভিতরে আছে..""
রিদ আর দারালো না রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেল রিদের পিছু পিছু প্রিয়ন্তি ছুটলো ৷ রিদ তার গেস্ট রুমে সামনে গিয়ে দেখে রিয়ানা বেগম শুয়ে আছে ৷ মা কে গেস্ট রুমে দেখে রিদের রাগ আরো বেরে গেল ৷ রিদ ওর বাবার রুমের সামনে গিয়ে জোড়ে জোড়ে নক করতে থাকে ৷ রায়হান আহাম্মেদ এতোক্ষন রুমে বসে রিদের জন্য অপেক্ষা করছিলো যখনি দরজায় নক করলো রায়হান আহাম্মেদ এর বুজতে অসুবিধা হয়না রিদ বাইরে দারিয়ে নক করতে ৷
রায়হান আহাম্মেদ একটু দম নিয়ে মাথা উচু করে দরজা খুলে দেয় রিদ হুর মুর করে ভিতরে ঢুকে গিয়ে দেখে তার মায়ের মামাতো বোন নতুন বউয়ের মতো বিছানায় বসে আছে ৷ রিদ রক্তিম চোখে তাকায় রায়হান আহাম্মেদ এর দিকে....
"" এই সবের মানে কি বাবা ? মা থাকতে তুমি অন্য মহিলার সাথে ... বাকিটা বললো না রিদ কারন তার বাবার সামনে এই ধরনের কথা বলতে রুচিতে বাদছে ...
"" কি হলো রিদ কথাটা সম্পূর্ন করো ""
"" মায়ের সাথে এমনটা কেন করলে বাবা?""
"" শোন রিদ তুমি বড় হয়েছো ৷ ভালো মন্দ বিচার বিবেচনা করতে জানো ৷ আর আমি প্রাপ্ত বয়স্ক আমার যা ইচ্ছে আমি করতে পারি ৷ তোমার বা তোমার মায়ের অনুমতি নিশ্চয় আমি নিবো না?""
"" বাবা ভূলে যাবে না মা তোদার স্ত্রী আর আমি তোমার ছেলে ৷ তোমার স্ত্রী থাকতে তুমি অন্য মহিলার সাথে কি করে সম্পর্ক করো তুমি..??""
"" ঠিক তুমি যেভাবে করতে পেরেছিলে ঠিক সে ভাবে...""
রিদ চুপ হয়ে যায় ৷ কারন রিদ তার বাবার কথা গুলো বলার মানে খুব ভালো মতো বুজতে পারছে ৷
"" বাবা মা তোমার স্ত্রী ""
"" ভূল তোমার মায়ের সাথে গতকাল রাতে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে রিদ..""
রায়হান আহাম্মেদ এর কথা শুনে রিদ চমকে যায়......
"" ম,,মানে কি বলছো বাবা?""
"" আমি ঠিক কথা-ই বলছি রিদ ৷ তোমার বিশ্বাস না হলে যাও তোমার মায়ের কাছে জ্বিগাসা করো৷""
রিদ এক ঝলক তার রিমা খালার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেস্ট রুমের দিকে ছুটলো....
"" মা..!""
রিয়ানা বেগম ছেলের গলা শুনে উঠে বসে.. রিদ তার মা কে দেখে যেন তার কলিজা ফেটে যাচ্ছে ৷ একদিনে চেহারার কি হাল হয়েছে ৷ শুকনো মুখ চোখ মুখ বসে গেছে ৷ চোখে নিচে কালি পরে গেছে ৷ এলোমেলো চুল ৷
"" কেমন আছো মা?""
রিয়ানা বেগম আর কিছু বললো না রিদ কে জরিয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে লাগলো... রিদ তার মাকে কাঁদতে বারন করলো না ৷ কাদুক মন খুলে কাদুক ৷ কাঁদলে মন হালকা হবে৷
প্রিয়ন্তি কিছুক্ষন পর প্লেটে খাবার নিয়ে আসে ৷
"" রিদ ভাইয়া খালামনি সকাল থেকে কিছু খায়নি এই খাবার টা খাইয়ে দেও খালামনি কে..""
রিদ খাবার টা নিয়ে ভাত মেখে এক লোকমা রিয়ানা বেগমের মুখের সামনে ধরতে রিদের হাত কেউ ধরে ফেলে , তাকিয়ে দেখে রায়হান আহাম্মেদ ...
"" তোমার সাহস কি করে হয় রিদ আমার অনুমতি না নিয়ে রিয়ানা কে খাবার দেওয়ার..?""
"" বাবা তুমি এমন ভাবে মায়ের পর অর্তাচার করতে পারো না ৷ মা সকাল থেকে এতো রান্না করলো কিন্তু তুমি মাকে খেতে দিলে না.? কেন বাবা?""
"" তোমার মা যখন মুন কে সারাদিন খাটিয়ে খাবার টুকু দিতো না তখন কথায় ছিলে তুমি? আর কোন সাহসে আমাকে তুমি প্রশ্ন করো ? বাড়ি আমার আর এবাড়ির সব খরচ আমি দি তুমি এক টাকাও দেও না ৷ নিজে যা আয় করো তা তুমি খরচ করো সংসারে এক টাকা ও দেও না তো কোন অধিকারে আমার কে প্রশ্ন করো?""
রিদের মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে ৷ রায়হান আহাম্মেদ খাবারের প্লেট টা নিয়ে রিয়ানা বেগমের সামনে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় পিছুনে ফিরে রিয়ানা কে উদ্দেশ্যে করে বলে"" পনেরো মিনিটের মধ্যে সন্ধার নাস্তা যেন রেডি থাকে নাহলে..... বাকি টা আর বললো না প্লেট হাতে বেরিয়ে গেল৷
রিয়ানা বেগম বির বির করে বলে উঠলেন"" পাপ সব আমার পাপের ফল ...""
রিদ ওয়াশরুমে ঢুকে হাত ধুয়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে ৷ রিয়ানা বেগম রান্না ঘরে গিয়ে পেয়াজ মরিচ কেটে নিয়ে নুডুলস রান্না করে নিয়ে টেবিলে রাখে ৷
কিছুক্ষন পর রিদ দুইটা পেকেট নিয়ে এসে টেবিলের উপর রাখে তারপর রান্না ঘর থেকে দুটো প্লেট নিয়ে এসে পেকেট থেকে বিরয়ানি বের করে প্লেটে ঢেলে আবার এক লোকমা নিয়ে রিয়ানা বেগমের মুখের সামনে ধরে , ছেলের এই ভালোবাসা দেখে রিয়ানা বেগমের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে ৷
"" মা খাওয়ার সময় কাঁদতে নেই জানো না? চুপ চাপ খেয়ে নেও""
রিয়ানা বেগম চুপচাপ ছেলের হাতে পুরো খাবার টা খেয়ে নেয় ৷ দরজার কাছে দারিয়ে প্রিয়ন্তি রায়হান আহাম্মেদ রিমা দারিয়ে দেখছে মা ছেলের ভালোবাসা...
"" রায়হান ভাই দেখলেন তো বুবু আর রিদ বাবাকে ..""
"" হুম দেখছি৷ ছেলেটা ও এবার মানুষ হবে আর রিয়ানাও তার ভূল গুলো বুজতে পারবে৷""
.
.
.
.
.
মুন বোরকা খুলে ফ্রেস হয়ে নিয়ে চা খেতে থাকে৷ বাড়ি এসে জানতে পারে আবিদ নিরব দুজনে বেরিয়েছে ৷ মুন চা খেয়ে রান্না ঘরে যায় ৷ কিন্তু সারবেন্টদের জন্য কোন কাজ করতে পারে না মুন ৷ ফারিহার কড়া নির্ষেধ মুন কে যেন আগুনের সামনে না আসে ৷
"" ম্যাম প্লিজ আপনি রুমে যান আর কি দরকার আমাকে বলুন আমি করে দিচ্ছি ৷ ""(সারবেন্ট)
"" আপু আপনি ব্যাস্ত হবেন না আমি যাস্ট রাতের জন্য কিছু রান্না করবো "" মুন
"" ম্যাম আপনাকে কিছু করতে হবে আমি অলরেডি সব রান্না করে রেখেছি৷ দেখুন..""
মুন ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে অনেক রকম পদ রান্না করা ..গরুর মাংস ভূনা, রুই মাছের কালিয়া, টমেটোর চাটনি, ডিমের কোরমা, রোস্ট, পোলাও, সাদা ভাত, পাবদা মাছের ভূনা, আর ছোট চিংড়ি মাছ আর ডালের বড়া...
"" আল্লাহ এতো কিছু রান্না করে ফেলেছো তুমি..??""(মুন)
"" জ্বি ম্যাম, আর কিছু করতে হবে ?""
"" নো নো আর কিচ্ছু তোমাকে করতে হবে না কারন আমি এখন পায়েস রান্না করবো....""
""ম্যাম...""
"" নো মোর ওয়ার্ড , যাও রেস্ট করো বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি""
"" ওকে ম্যাম""
মুন নিজের মতো করে পায়েশ রান্না করে হাত ধুয়ে আবিদ আর নিরবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো৷ ফারিহার বাবা ফারুক খান কাজের জন্য ঢাকা চলে যায় ৷ আর ফারিহা আয়ানকে নিয়ে দেশের বাইরে গেছে ঘুরতে ৷ মূলত আবিদ আর মুন কে একা ছাড়ার জন্য ফারিহার এই ডিসিশন ৷
রাত আটটায় নিরব আবিদ দুজনে ফিরে আসে ৷
"" বনু কেমন আছো?""
"" আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া , আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি কেমন আছেন? আর মামা মামি সামির সামিরা কেমন আছে?""
"" ওয়ালাইকুম আসসালাম , আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে৷""
" ভাইয়া আর আবিদ তোমরা ফ্রেস হয়ে আসো আমি খাবার সার্ব করছি ৷""
"" ওকে বনু..""
দুজনে রুমে চলে যায় ৷ ফ্রেস হয়ে নিচে আসে মুন আবিদ নিরব তিন মিলে ডিনার করে রাত বারটা পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে যায়৷ দেখতে দেখতে তিন তিনটে মাস কেটে যায় এর মাঝে আবিদের বাবা আবিদের বরিশালের ঠিকানা পেয়ে সেখানে এসে সিন ক্রিয়েট করে কিন্তু আবিদ বা মুন কে কেউ আলাদা করতে পারেনি শুধুমাত্র ফারিহা আর আয়ানের জন্য ওরাই সবটা সামলেছে ৷ ফারিহার ক্ষমতার কাছে আফজাল সাহেবের ক্ষমতা ফিকে হয়ে গেছে৷ ফারিহার ক্ষমতার সাথে না পেরে আফজাল সাহেব বাধ্য হয় খুলনা চলে যায়৷
প্রিয়ন্তির বিয়ে হয়ে গেছে দুমাস আগে .. রায়হান আহাম্মেদ এখনো রিয়ানা বেগম কে ক্ষমা করে নি বরং আরো জ্বালিয়ে যাচ্ছে রিমা কে দেখিয়ে,, রিদ আর আগের মতো নেই ৷ মুন কে দেখে এখন আর রিদের তেমন কষ্ট হয়না কিন্তু মাঝে মাঝে আবিদ আর মুন কে এক সাথে দেখলে বুকের ভিতর চিন চিনে ব্যাথা অনুভব করে রিদ৷ তবে প্রিয়ন্তির বিয়ের এক সপ্তাহ পর নিরব আর আবিদ মুখে মাক্স পরে দুজন মিলে রিদ কে পিটিয়েছে৷ প্রায় দু সপ্তাহ রিদ হাসপাতালে ভর্তি ছিলো৷ রিদ জানে কে তাকে মেরেছে কিন্তু কোন প্রতিবাদ করে না ৷ সুস্থ হয়ে আবার ও অফিস যাওয়া শুরু করে তবে এখন আর মুন বা আবিদ তেমন রিদ কে শাস্তি দেয় না তবে দুপুরে লান্চ করার সময় রিদ কে সামনে দার করিয়ে রাখে ৷
মুনের ইদ্দত শেষ হতে আর মাত্র পাঁচদিন বাকি খান বাড়িতে উৎসব লেগে গেছে৷ পুরো বাড়ি বিয়ে বাড়ির মতো করে সাজানো৷ নিরবের মামা মামি সামির সামিরা মৃন্ময় আবিদের মেজ ভাই আবির সবাই এসেছে আবিদ আর মুনের বিয়ে উপলক্ষে ৷ হ্যা আবিদ আর মুনের আবার বিয়ে হবে ৷
"" আপুউউউ ..."" জোড়ে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো মৃন্ময় মুনকে...
"" উফফ কানের তালা ফাটিয়ে দিলি ভাই , কি হয়েছে বল এভাবে চিৎকার করছিস কেন?"" (মুন)
"" আপু তোর মেহেন্দি হলুদ আর বিয়েতে কি পরবো আমি ! বাড়ি থেকে আসার সময় তো ভালো কোন জামা কাপড় নিয়ে আসেনি""
"" কোন বেপার না সালাবাবু এই নেও তোমার ড্রেস ...."" রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো আবিদ....
"" জিজু আপনি..""
"" হ্যা এই নেও তোমার জন্য এখানে পান্জাবি আর কিছু ড্রেস আছে ৷৷এখানে চার পাঁচ সেট জামা কাপড় আছে সব ফাংশনে পরতে পারবে তুমি ৷ ""
"" থ্যাংকিউ জিজু ,""
"" ওয়েলকাম আর শোন এটাতে সামির আর সামিরার জন্য ড্রেস আছে তুমি ওদের দিয়ে দিও ""
"" ওকে জিজু"" মৃন্ময় চলে যেতে আবিদ মুনের দিকে এগোতে এগোতে বলতে লাগলো...
"" মনপাখি আর মাত্র পাঁচদিন তারপর তুমি চিরদিনের জন্য আমার হয়ে যাবে""
"" কেন এখনও কি আমি তোমার না..??""
"" উহু ভূল বললে তুমি আগে ও আমার ছিলে আর এখনো আমার আছো আর ভবিষ্যৎতে ও তুমি আমার থাকবে ৷ ""
আবিদ মুন কে জরিয়ে ধরে ঠোটে ঠোট ছুইয়ে দিয়ে বললো আবিদ ৷ মুন লজ্জা পেয়ে আবিদের বুকে মুখ লুকায়... তখনি দরজার দারিয়ে কেউ কাশি দিলো সাথে সাথে মুন আবিদ দুজনে দু দিকে ছিটে গেল...
"" ওয়াও জিজু কি রোমান্টিক সিন দেখলাম ৷ আর এই যে আমার বর টা রোমান্সের র ও জানে না "" মুখ ভাঙিয়ে বললো ফারিহা...
ফারিহার কথা শুনে আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে ফারিহার কানে কানে বলে উঠলো "" রোমান্স কাকে বলে সেটা তোমাকে রাতে আমি বুঝাবো সুইটহার্ট..."" কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আয়ান...
এদিকে আয়ানের ঠান্ডা হুমকি শুনে ফারিহা শুকনো ঢোক গিলে আবিদ আর মুনের দিকে তাকাতে দেখে আবিদ মুন দুজনে ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে৷ ফারিহা পরলো মহা বিপাকে আবিদ মুন কে জ্বালাতে এসে আয়ানকে রাগিয়ে দিলো এখন রাতে ওর কপালে কি নাচছে সেটা একমাত্র আল্লাহ জানে.... আবিদ ব্রু কুচকে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো "" আব তোমহারা ক্যা হোগা সালিকা ?"
"" ঠিক হয়েছে আমাদের জ্বালাতে এসে এখন নিজে জ্বলছিস কেমন লাগছে বল ফারিহা,""
"" ডাইনি তোর খবর আছে ৷"" রাগে ফোস ফোস করতে করতে ফারিহা বেরিয়ে যায়.. ফারিহা যেতে আবিদ মুন দুজনে হেসে ওঠে ৷ অন্যদিকে.....