অচেনা অতিথি - পর্ব ২২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


বাতাসি কামু বলে চিৎকার দিয়ে ডাকতে ডাকতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো.......... বাপ জমির দলিল বার করতো। আজ বুদুনরে ভিটা ছাড়া করুম। 
কামু ও বাবা কামু, তুই কই বাপ বলে চিক্কুর দিতে দিতে কামরান সাহেবের রুমে চলে গেল বাতাসি।


মাহাদ ঝটপট উঠে বললো," আমার ঘুমটাই নষ্ট করে দিল। ঠেলায় পড়লে ছেলের কথা মনে পরে। যাও এবার বুদুনের সাথে গিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধর আয়োজন করো। "
মাহাদ ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে গেল।


কামরান সাহেব তার  মাকে কিছুতেই বুঝাতে পারছেনা যে, তিনি যা করতে চাচ্ছেন তা সম্পূর্ন ভুল।
কিন্তু তার বাতাসি মা এক কথার মানুষ। নিজের জেদ বহাল রাখার জন্য যা করার দরকার সব করবে।


দেখ কামু, আর সিন্ধান্তে তুই  কিছু কইবার পারবিনা। তাহলে কিন্তু তোর পিঠের ছ্যাল তুলে ফেলমু । তাই বুইড়া বয়সে মাইর না খাইতে চাইলে আর বিরোধিতা করা বাদ দে। পরে পিঠে ছালা বান্দেও পার পাবিনা।  


মায়ের মুখে এমন ভয়ানক কথা শুনে কামরান সাহেব আর কথা বলেনা। এই বয়সে এসে যদি মায়ের হাতে মাইর খাইতে হয় তাহলে সম্মানের আর ছিটাফোঁটাও থাকবেনা। 


লাবীবা রুমে এসে দেখলো, স্বামী তার লক্ষী ছেলের মত বসে আছে আর শাশুড়ী তর্জন গর্জন করে ছেলেকে শাসন করছে। 
লাবীবা কামরান সাহেবের সামনে গিয়ে বললো," আপনার অফিস থেকে একজন ভদ্রলোক এসেছেন। আমি নিচে বসতে বলেছি। আপনি নিচে যানতো!


 নাহ্ কামরান সাহেব সেখানেও যেতে রাজি নন। মাথাটা নাড়িয়ে না করে দিল কিন্তু মুখ দিয়ে একটি কথাও বললো না। কামরান সাহেব ভয়ঙ্করী এক সাইক্লোনের সামনে বসে আছেন। তাই তিনি কথা বলতে নারাজ। একটু আগে বাতাসি যে থ্রের্ড দিয়েছে তাতে কামরান সাহেবের জিবন যায় আসা অবস্থা।


লাবীবার আর শিক্ষা হলোনা। দেখছে তার শাশুড়ী গম্ভীর মুখে বসে আছে তারপরও কামরান সাহেবকে নিচে পাঠানোর জন্য ঠেলতেছে। আপনি যানতো! কতক্ষন লোকটা বসে থাকবে?


বাতাসি চিক্কুর দিয়ে উঠলো। লাবীবা তুমি মা- ব্যাটার মধ্য হট্টোগল করতেছো কিয়ের লায়? তোমার সোয়ামী যাইবোনা। পারলে তোমার ১৪ গোষ্ঠীরে লইয়া ঐ ব্যাডার সাথে মিটিং বসাও। এই হানে থেকে যাও।
বুঝছোস কামু! তোরে ছোড মাইয়ার সাথে বিয়া দিয়েই ভুল করছি। সারা জিন্দেগী বুঝাইতে বুঝাইতে জিবনডা আর কয়লা হইয়া গেল। বড় মাইয়া হলে কবেই বুঝত কোন হানে কি কইতে হয়?


লাবীবা তার শাশুড়ীর কথা শুনে অত্যান্ত কষ্ট পাইলো। রাগে অভিমানে দুজনের মুখের উপর বললো," আমাকে নিয়ে যখন আপনাদের মা ছেলের এত সমস্যা তাহলে আমি আজই বাবার বাসায় চলে যাচ্ছি। আপনারাই সুখে থাকেন। "


এবার কামরান সাহেব পড়লো বিশাল মসিবতে। সে কোন দিকে যাবে। মা গাছে তুলে দিলে বউ গাছ থেকে মই টান দেয়। এ এক উভয় সংকটের মধ্য পড়লো কামরান সাহেব।


দেখছোস তোর বউয়ের বাক্কেলি মার্কা কথা বার্তা! 

শোন, বউ গেলে তোরে আবার বিয়া দেওয়া যাইবো কিন্তু আই গেলে তুই আর ইমতিয়াজ চেয়ারম্যান রে কব্বোর থাইকা তুলে আর বিয়া দিবার পারবুনা। তাই আর পুরাতন -নতুন কোন মা পাবিনা।

এবার বাতাসি কপাল জড়িয়ে লাবীবাকে বললো,"  যাও যাও রাস্তা ফাঁকা আছে। যাও, গিয়ে দু'দিন থাহো বাপের বাড়িত তারপর ভাইদের বউয়ের হাতে ঠাঙ্গানি খাইয়া ঠিকি আর মত চলে আইবা।"

 কথাটি বলেই বাতাসি বিবি নিজের মুখে হাত দিল। কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেললো।


লাবীবা এবার ঘোড় চখে তাকিয়ে বলল," আম্মা! এর জন্য আপনি বুদুন মামাকে ভিটা ছাড়া করার জন্য উঠে পড়ে লাগছেন তাইনা! 
তাইতো বলি আপনার মত মানুষ এতবড় অন্যায় কাজ কিভাবে করে!"


লাবীবার কথাটি বাতাসির আত্ত্ব-সম্মানে গিয়ে লাগলো। কে কইছে আই ভিটার ভাগ নিমু! আই কামুরে শুধু কইছি জমি কতগুলা আছে আর বাপের বাড়িতে! আর তাছাড়া আমার কিয়ের অভাব তাই জমি নিমু!

শোন বউ! তুমি হয়তো জানো না আরা বড়মনের মানুষ। আর শশুড়ের কি কম জমি-জমাত আছে তাই ভাগ নিবার যামু। বাতাসি বিবি এবার উঠে বললো, কামু দলিল তুইলা রাখ।
কথাটা বলেই লাবীবার দিকে চাইয়া একটু মুখটা বাকা করেই বাতাসি গট গট করে চলে যায় রুম থেকে।


এবার কামরান সাহেবরে পায় কে। লাফ দিয়ে উঠেই লাবীবাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেই কয়েকটা চুমা খেয়ে বললো, তুমি আমারে আজ বেইজ্জতির হাত থেকে বাচিয়েছো লাবীবা। তোমার উপর আমি খুব খুশি। কাল দুপুরের পুরো সময়টা আমি তোমাকে দিব। কাল আমরা বাহিরে স্পেশাল লান্স করবো একসাথে বলে কামরান সাহেব চলে গেল।


কামরান সাহেবের এই অফারটা লাবীবার খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু তবুও কামরানের এমন ব্যবহারে লাবীবা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। বুড়ো বয়সে  তার স্বামীর এত রুমান্টিকতা আসে কোথা হতে। যাই হোক লাবীবা খুব খুশি। আজ তার শাশুড়িকে উচিত জবাব দিয়েছে। তার জন্য হয়ত অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে।

♦♦♦♦♦

একটা সুন্দর মিউজিকে তিতিরের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। কিছুক্ষন বোঝার চেষ্টা করলো কোথা হতে সুর গুলো ভেসে আসছিলো। মিউজিক থেমে গেল। তারপর আবার বাজলো। শিয়রে দেখলো একটা ফোনের বক্স।  বক্সটি খুলে দেখলো ভিডিও কল এসেছে। হ্যাসব্যান্ড দিয়ে নাম সেভ করা। তিতির নাম্বারটা চিনেনা কিন্তু বুঝতে পারলো এটা মাহাদ ছাড়া কেউ নয়। ফোনটা রিসিভ করতেই দেখলো মাহাদ বালিশটা বুকের নিচে রেখে উপর হয়ে সুয়ে আছে। মুখে চমৎকার হাসি। হাসির জন্য তার কিউটনেস আরো বেড়ে গেছে। মাহাদের গালে  হাসলে টোল পড়ে  যেটা ওর সৌন্দর্যকে বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। তিতির বার বার এই টোল পড়া হাসিটার প্রেমে পড়ে।

" তিতির তুমি এখনো ঘুম থেকে ওঠোনি? চোখ মুখতো ফুলাই ফেলছো। যাও ফ্রেস হয়ে আসো। হাটতে পারবে তো! না আমি যাবো?"

ঃ- "নাহ্ আমি পারবো। আপনি একটু ওয়েট করেন আমি আসছি।"

ঃ- "ফোনটা ভালো করে সেট করে রাখ যাতে তোমাকে আমি দেখতে পারি। একদম ওয়াসরুমের গেট পর্যন্ত যেন দেখা যায়।"

তিতির ফোনটা বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠতেই মাথাটা ঘুরে এলো। তারপর একটু দাড়িয়ে থাকলো।

ঃ- " তিতির তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে! আমি কাউকে পাঠাবো?"

ঃ- " নাহ্ আমি ঠিক আছি। তিতির ধীরে ধীরে ওয়াসরুমের সামনে গিয়ে দরজা ধরে দাড়িয়ে পড়ে। চলার শক্তি আর পাচ্ছেনা।"


মাহাদ আর দেরী করেনা। কলটা কেটে দিয়েই দ্রুত রুম হতে বের হয়।
লাবীবা তখন কেবল রুম থেকে বের হয়েছে। এমন সময় দেখলো মাহাদ ছুটে তিতিরের রুমে ঢুকছে। লাবীবা অবাক হয়ে যায়। মাহাদ এভাবে ছুটে তিতিরের রুমে কেন গেল। এটা যদি বাসার অন্য কেউ দেখে তাহলে ছেলেটার তো মান সম্মান যাবে আর সাথে তাদেরও সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়বে। লাবীবাও তিতিরের রুমে চলে গেল।


মাহাদ এসে দেখলো তিতির পরে আছে ফ্লোরে আর ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। মাহাদ জলদি গিয়ে তিতিরকে তুলে বললো, " আমি বার বার বলছি আমি আসি। কেনো আসতে নিষেধ করলা! নিজেও কষ্ট পাও আমাকেও কষ্ট দাও।"

মাহাদ তিতিরকে নিয়ে আসতেই তিতির বমি করতে শুরু করলো। মাহাদ ওকে নিয়ে আবার বাথরুমে গেল। মেয়েটা বমি করতে করতে অস্থির হয়ে পড়ছে। শেষে মাহাদ ওর বাম হাতটি তিতিরের নাভিতে রেখে একটু চেপে ধরলো। তিতির আস্তে আস্তে ঠিক হতে শুরু করলো। তিতিরের চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছে। তিতির মাহাদ করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলো।


মাহাদও কিছুক্ষন তিতিরকে ওভাবে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রইলো। তারপর তিতিরকে বেসিনের সামনে নিয়ে গেল। তিতিরের চোখেমুখে পানি দিয়ে মাহাদ বললো, " আমি তোমার ড্রেস নিয়ে আসছি তার ভিতর তুমি আস্তে আস্তে ফ্রেস হয়ে নাও।" তিতিরের পুরো ড্রেস নষ্ট হয়ে গেছে।


তিতির শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। তারপর বেসিনটা ধরে দাড়িয়ে রইলো।


মাহাদ বাথরুম থেকে বের হতেই দেখলো দরজার সামনে ওর মা দাড়িয়ে রইছে।  কিন্তু দরজা সামান্যই ফাঁকা রয়েছে সেটা দিয়ে হয়ত ওর মা লুকিয়ে সব কিছু দেখেছে। মাহাদের কিছুটা টেনশন হল। 
কিন্তু সব টেনশন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ওর মাকে দেখেও না দেখার ভান করে দরজার কাছে এগিয়ে গেল।


লাবীবা ভাবলো মাহাদ ওকে দেখতে পেয়েছে তাই সে দ্রুত সটকে গেল কিছুটা দুরে।  এর মধ্য মাহাদ এসে দরজা বন্ধ করে দিল। মা দেখেছে তাও মাকে বোঝানো যাবে কিন্তু অন্যকেউ দেখলে ওর কিছু না হলেও তিতিরের উপর খুব ভার পরতো। 

মাহাদ আলমারি থেকে ড্রেস বের করে তিতিরের কাছে নিয়ে গেল। 


তিতির ততোক্ষণে সম্পূর্ন ফ্রেস হয়ে দাড়িয়ে আছে। মাহাদ দেখলো তিতির শুধু টাওয়াল পরে আছে। 

ঃ-" তিতির তুমি এই টুকু সময়ে গোসল করে নিয়েছো?"

ঃ- " গোসল করিনি তো। শুধু গায়ে পানি দিছি। কাপড়গুলো দেন। আমি পরে নেই।"

ঃ- " এখানে চেন্জ করতে হবেনা রুমে আসো। এখানে চেন্জ করার সময় কাপড়গুলো ভিজে যাবে।"

ঃ-" এবার তিতির ছোট বাচ্চাদের মত হাত বাড়িয়ে দিল মাহাদের দিকে।"

মাহাদ ভ্রু কুচকে বললো," কী।"

ঃ-" আমাকে রুমে নিয়ে যান। আমার পা খুব ব্যাথা করছে। দেখলেনতো আমি পড়ে গিয়েছিলাম।"

ঃ-" নো চিটিং তিতির। আমি ভালো করেই জানি এখন তুমি রুম অবদি হেঁটে যেতে পারবা এখনো। একটু কষ্ট হবে কিন্তু তুমি চাইলেই পারবা।"

তিতির ঠোট ফুলিয়ে বললো," যান আপনাকে লাগবেনা আমার। এখন আমি যদি হাঁটতে গিয়ে উষ্ঠা খেয়ে পড়ে যাই!  আর পড়ে গিয়ে যদি টাওয়ালটা খুলে যায় তাহলে কিন্তু আমার দোষ নাই। "

ঃ-" সেই সুযোগ দিচ্ছিনা তিতির। আমি চলে গেলাম। সাবিনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। যদি সাবিনাকে তোমার ইজ্জত দেখাও তাতে আমার কিছু করার নাই। আমি গেলাম বলে মাহাদ রুম থেকে বের হয়ে গেল।"

তিতির রাগে চোখমুখ লাল করে ফেললো। আমি যাই বলিনা কেনো ওনার সেটা ভালো লাগেনা। উফ্ তিতির তোর বরটা প্রচন্ড আনরুমান্টিক একটা মানুষ। সে সব পারে কিন্তু রুমান্টিক করতে জানেনা। তিতির আস্তে আস্তে রুমে এসে চেন্জ করে বিছানায় বসে পড়লো। 

এতক্ষন পর তিতির বুঝতে পারলো ওর প্রচন্ড খুদা পেয়েছে। 


মাহাদ কিছুক্ষন পরে সাবিনাকে নিয়ে রুমে ঢুকলো। মাহাদের আর কিছু বলতে হলোনা। সাবিনা বললো," আপা আন্নের এক্সিডেন্ট হইলো ক্যামনে?
দাদিরে আন্নের কথা কইতেই দাদি হাত তালি দিয়ে  হাতে পাঁচ টাকার নোট ধরে দিল।  বুঝলেন আপা, এতিমের কোন দাম নাই। যেমনটা আর দাম কারো কাছে নাই।
ছোড বেলায় বাপ-মারে হারাইয়া মামার কাছে মানুষ হইলাম। তারপর এহানে আইলাম।


এমন সময় সাবিনার ডাক পড়লো। বাতাসি চিক্কুর পেরে সাবিনারে ডাকছে। সাবিনা চলে যেতেই তিতির বললো আপনি একটু আমার কাছে আসবেন?


মাহাদ তিতিরের কাছে খাবার নিয়ে গিয়ে বললো। কোন কথা না বলে ঝটপট খাবারগুলো খেয়ে নাও। আর কোন ব্যাড কথা বলবানা।


আমি না থাকলে সেদিন বুঝবেন।  আর আমার এই ব্যাড কথাগুলো কে মিস করবেন। এখন তো আপনার আমাকে সহ্য হবেইনা।


বাজে কথা বলা বাদ দিয়ে খাবারগুলো কমপ্লিট করো। আমার এত সময় নাই। আমার আরো কাজ আছে।


মাহাদের কথা শুনে তিতির চটে গেল। কাজ কাজ আর কাজ। আপনি কি এমন কাজ করেন হুম! এত বড় হয়ে গেছেন কিন্তু আপনার নিজের কোন ইনকাম সোর্স নাই। বাবার টাকাই খান কিন্তু বাবার সাথে কথা বলেন না। আপনি কেমন মানুষ! আপনার কোন বিবেক আছে! 
আমি আপনার স্ত্রী। আমি হটপিটালে ছিলাম তার বিল কে দিল! বাবা দিল। বাবা কেন দিবে? আপনি দিতে পারেননা?


তিতির আস্তে কথা বল। তোমার কি হয়েছে এমন করছো কেন? তুমি সব কিছু জেনেও এমন ব্যবহার কেন করছো আমার সাথে।


কিসের আস্তে কথা বলা! আপনি বরাবরই ভূল করে যাবেন।  আর আমি সেটাকে সার্পোট করবো!
শুনেছি আপনার রেজাল্ট অত্যান্ত চমৎকার। আপনি তো পারলে বিসিএস টা দিতে পারতেন।  সেটা না দিয়ে উল্টো বাবার ঘারে চেঁপে খাচ্ছেন। 
আর বাবার সাথে কথা যদি নাই বলেন তাহলে  তার উপার্জন করা টাকার খাবার খাইতে আমাকে বলবেন না। আপনার গলা দিয়ে ঐ খাবার নামলেও আমার খাবার গুলো লজ্জায় গলা দিয়ে নামছেনা।
আপনার এসব বেহুদা কর্মকান্ড যদি চালিয়ে যান তাহলে আমি এই বাসায় আর থাকতে পারছিনা। আমি সুস্থ হলেই যেদিকে মন চায় চলে যাব। তবুও আপনার কাছে থাকবোনা।


কথাগুলো শুনে আর একমুহুত্বও দেরী করলোনা মাহাদ। সোজা তিতিরের রুম থেকে চলে যায়। আর তিতির অন্য দিক হয়ে চোখের পানি ফেলছে। মনে হয় দুজনের ভিতর সম্পর্কটাই শেষ করে ফেলেছে তিতির। 

♦♦♦♦♦

আজ তিন দিন হল মাহাদ তিতিরের সামনে আসেনি। এমন কি তিতিরকে একটা কলও দেয়নি। তিতির অনেকটা সুস্থ। চলাফিরা করতে পারে। কিন্তু সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে পারেনা। বাসায় আর একটা কাজের মেয়ে এসেছে। তিতিরের পরিচর্যার দায়িত্ব এই মেয়েটাই নিয়েছে।

এদিকে বাসায় এতবড় একটা এক্সিডেন্ট হওয়ার জন্য রুমকির বিয়ে আরো কয়েকদিন পিছিয়ে গিয়েছিল। 

দুদিন পর রুমকির বিয়ে। তাই বাসাতে আত্বীয়-স্বজন আসা শুরু করে দিয়েছে। রেজওয়ান আহনাফ বোনের বিয়ের খরচের কোন কমতি রাখেনি। অজস্র টাকা খরচ করা হয়েছে এই রিসেপশনে। বাসা ভর্তি মেহমান। এতগুলো মানুষের মাঝে তিতিরকে বড্ড একা লাগে। রুমকির বিয়ে উপলক্ষে মৌয়ের পরিবারও এসেছে। শুধু তার বাবা ছাড়া।


মাহাদের বড় ফুফু রজনীও অনেক দিন পর এসেছে বিয়ে উপলক্ষ্যে। বাতাসিরে পায় কে। দুই কন্যা আর পুত্রকে নিয়ে  রোজ ৩/৪ বার আসর বসে তার রুমে।


সন্ধার পর মাহাদ ওর রুমের ব্যালকুনিতে বসে সিগারেট টানছে। মনটা ভিষন খারাপ। নিজের জেদ আর রাগ দুটাই ভিতরে কাজ করছে ওর। তিতির ভালো করে কথাগুলো বললেও পারতো।

ঃ-" মাহাদ আসবো!"

একটা মেয়ের কন্ঠে মাহাদ পিছু ফিরে চেয়ে দেখলো ওর রজনী ফুফুর মেয়ে "রূপসা" দাড়িয়ে আছে। মাহাদের সমবয়সী সে।

মাহাদ সিগারেটে আরো দুটা টান দিয়ে সিগেরেটটা এসট্রেতে রেখে  বললো," চলেই তো এসেছিস, আবার অনুমতি নেওয়ার কি প্রয়োজন?"


রূপসা ব্যালকুনিতে এসে বললো," তুই এখনো বদলাসনি মাহাদ, ঠিক আগের মতই রয়ে গেলি।"


কেন বদলে গেলে কি তোর সুবিধা হতো! 

ঃ-" হুম সুবিধা হত। যতি তুই আমার জন্য বদলে যেতি তাহলে সুবিধা হত।  আসলে আমি এই বাসাতে আসতে চাইনি। কিন্তু তোকে দেখার লোভ সামলাতে পারলামনা। তাই ইচ্ছে না থাকার সত্ত্বেও এই মনটাকে বোঝাতে পারলামনা। সেই তোর কাছেই ছুটে আসতে হল।

ঃ-" রূপসা, এতদিন পর আসলি। এগুলো কথা ছাড়না? বল কেমন আছিস তুই!

ঃ-" তোকে ছাড়া আমি ভালো নেই মাহাদ। এতদিন তোকে ভোলার কত চেষ্টা করেছি তারপরও ভুলতে পারিনা রে। একটা রিলেশনেও জড়িয়েছিলাম কিন্তু আমি তোকে কিছুতেই ভুলতে পারছিলামনা তাই আমি নিজেই ব্রেকআপ করে দিছি বলে কেঁদে উঠলো রূপসা।

ঃ-" মাহাদ চুপ করে দাড়িয়ে আছে কিন্তু কিছু বলছেনা। কারন বলার মত তার কিছুই নাই।

♦♦♦♦

তিতির আর থাকতে পারছেনা মাহাদকে না দেখতে পেয়ে। তিতির যে প্লান করেছিলো সেটা যে এভাবে ভেস্তে যাবে তা কোনদিনও ভাবতে পারেনি তিতির। প্রিয় মানুষটাকে ছেড়ে সে কতক্ষন এভাবে থাকবে। তাই তিতির ডিসিশন নিলো যে ভাবেই হোক মাহাদের রুমে ও যাবে। কেউ কিছু বললে বলবে ওর মেডিসিন শেষ হয়ে গেছে তাই বলতে এসেছিল মাহাদকে মেডিসিনের ব্যাপারে। 

যেই ভাবা সেই কাজ।  নিজের রুম থেকে বের হয়ে মাহাদের রুমের কাছে গিয়ে দেখলো মাহাদের রুমের দরজা খোলা আর রুমটা অন্ধকার। 

তিতির কোন কিছু না ভেবেই মাহাদের রুমে ঢুকলো। কিন্তু ব্যালকুনির ড্রিম লাইটে ও যা দেখলো তাতে ওর হুস উড়িয়ে গেল।

❝একটা মেয়ে মাহাদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে, তোকে আবার দেখার সুযোগটা আর মিস করতে পারলামনা। মাহাদ আমাকে যেভাবে রাখবি রাখ আমি কোনদিনও অভিযোগ করবোনা। আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারিনারে। প্রয়োজনে তুই আমাকে দাসী করে রাখ তবুও আমাকে ছেড়ে যাসনা মাহাদ। আমি তোকে ছাড়া বাঁচবোনা। আমায় আর ফিরে দেসনা মাহাদ।❞

দৃশ্যটা তিতিরের জন্য আগুনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে জ্বলার মত। তিতিরের চোখ ছাপিয়ে চোখের জল গড়ে পড়লো ওর গাল বেয়ে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন