বকুল ফুলের মালা - পর্ব ১০ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


১৯!! 

-তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।

আরিশা বাইরের দিকে মুখ ফিরিয়ে ব্যস্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ তাওহীদের কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরিশা। তাওহীদ আরিশার দিকে না তাকিয়েই একটা হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে রেখে গাড়ি চালাচ্ছে। আরিশা তাওহীদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকালো। তাওহীদ এক হাত বাড়িয়ে আরিশার চুল ছুঁয়ে দিলো।

-আরু? মন খারাপ বউটা?

-এ কথাটা কেন বললে?

-কি বলো তো আরু মন থেকে একটা মানুষকে চাইলে তাকে ভুলে যাওয়ার চেয়ে হয়তো মরে যাওয়া সহজ হয়।

-আমি বিয়েতে রাজি না হলে বুঝি তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে না? জানো তাওহীদ? হয়তো কাউকে ভুলে যাওয়া কঠিন কিন্তু নতুন করে শুরু করার অধিকার তো সবার আছে। সব ভুলে নিজের মতো করে বাঁচার---।

তাওহীদ গাড়িটা ব্রেক করে আরিশাকে টেনে নিজের দিকে ফিরালো। আরিশার কান্নাভেজা মুখটা মুছে দিয়ে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো তাওহীদ।

-আরু? তোমাকে না পেলে মরে যেতাম কি না জানি না। তবে তোমাকে পেয়ে বেঁচে আছে তোমার তাওহীদ। আর অন্য কাউকে বিয়ে? যে মানুষটা তোমাকে ছাড়া একদম অসম্পূর্ণ সে আরেকজনকে বিয়ে করেই বা কি করে পূর্ণতা পাবে বলো? তোমাকে পেয়েছি বলে পূর্ণতা পেয়েছি। তোমাকে পেয়েছি বলে হয়তো বেঁচে আছি--।

-তাওহীদ? 

-আয়ানকে তুমি বুঝিয়ে ভালো করেছ আরু। ছেলেটা অন্তত উল্টোপাল্টা কিছু করে বসবে না।

-কিন্তু ওকে নিয়ে আমার সত্যি টেনশন হচ্ছে--। ও কি আসলেই মুভ অন করতে পারবে? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না---।

-আরু? ওর মুড ফ্রেশ করার জন্য কিছু প্ল্যান করি চলো। ও সবসময় যেমন আমাদেরকে সারপ্রাইজ দেয়, সেরকম?

-উমম। ওকে--। কি করা যায়?

-সেটা ভাবা তো আপনার কাজ ম্যাডাম--। নিজের বেস্টফ্রেন্ডের মুড ফ্রেশ হয় কি করলে সেটা আপনি ভাবুন। আমি আপনার সাথে আছি---।

-হুমমম---। ওকে ডান। আয়ানকে রাতে বাসায় আসতে বলো---।

-প্ল্যান কি?

-সারপ্রাইজ।

-আরু? এসব কিন্তু ঠিক না। আমাকে বলতে কি সমস্যা? এই? বলো না প্লিজ?

-বললে তো আয়ানের আগে তুমি হার্টফেল করবা--। 

-এই কি বললা? কি প্ল্যান করছো বলো তো?

-আমম--। কিছু না তো। কাজ করতে দাও। আর বাসায় চলো--।

-ধ্যাত--।

আরিশা নিজের মতো মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তাওহীদও বিরক্ত হয়ে গাড়ি চালানোয় মন দিলো। এখন এই মেয়ের সাথে কথা বলা আর পুতুলের সাথে কথা বলা সমান। তাই আপাতত তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরায় মন দিলো। সকাল থেকেই মেয়েটা না খেয়ে আছে। সব চিন্তা বাদ দিয়ে সেটাই তাওহীদের মাথায় আগে ঘুরছে। 

এদিকে দুপুরে সীমান্ত রাতে সামি আর আভার সাথে খেতে বসেছে। হালকা গলায় কিছুক্ষণ কথা বলার পর আবার সবাই চুপচাপ খাওয়ায় মন দিয়েছে। সীমান্ত নিজের মনে খেতে খেতে ভাবছে সামি আর আভা কখন বিদায় হবে। সামি সীমান্তের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে আবার খাওয়া শুরু করলো।

-সীমান্ত তোমার কাজ কেমন চলছে?

-জি মামা ভালো। 

-আমরা চাইছিলাম মায়রা আর তুমি কিছুদিনের জন্য আমাদের বাসায় গিয়ে থাকো। বিয়েতেও আসতে পারি নি। তোমরা গিয়ে থাকলে ভালো লাগবে আমাদের। বাঁধনও অনেক খুশি হবে---।

-উমম। মামা--আসলে এই মূহুর্তে ছুটি পাওয়া পসিবল না--। 

-ওকে--। এক কাজ করা যায়। মায়রা আমাদের সাথে যাক। কিছুদিন বেড়াক চট্টগ্রাম। তুমি সময় করে ছুটি নিয়ে ওকে নিয়ে এসো না হয়---।

সীমান্ত একবার মুখ তুলে ঝট করে মায়রার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার নিজেকে সামলে নিলো। আবার চুপচাপ খাওয়ার মন দিলো সীমান্ত।

-মায়রা যেতে চাইলে যাবে--। সেটা ওর ব্যাপার---।

-ওকে ডান। তাহলে তো সব ঠিকই আছে। মায়রা ব্যাগ গোছানো শুরু করে দে--। সীমান্ত আমরা তাহলে কালই রওনা দিই, কি বলো?

-আপনারা যেমন ভালো বুঝেন। 

সীমান্ত আরেকবার মায়রার মুখের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ খেয়ে উঠে গেল। মায়রা সীমান্তের দিকে একবারও তাকালো না। সীমান্ত কাজ আছে বলে বেরিয়ে গেল। বেশ রাত করেই বাসায় ফিরলো সীমান্ত৷ ততক্ষণে সামি আর আভা খেয়ে শুয়ে পড়েছে। সীমান্ত কিছু না বলে রুমে চলে গেল। মায়রা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রুমে এলো সীমান্তকে ডাকতে। রুমে আসতেই সীমান্ত মায়রার হাত টেনে রুমে ঢুকিয়ে নিয়ে ধুম করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। তারপর মায়রাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে মায়রা ভয় পেয়ে গেল। 

-কি করছো? লাগছে আমার। 

-কি দেখতে এসেছ এখন? হুম? কি দেখতে এসেছ? জাস্ট স্পিক আপ।

-আমি তো তোমাকে ডাকতে এলাম। তুমি খেতে আসছ না দেখে----।

-ওহ! তা আমাকে নিয়ে আপনার আসলেই চিন্তা হয় তাহলে? নাকি এটা লোক দেখানোর জন্য।

-মানে?

-মানে বোঝো না তুমি? মানে বোঝো না? তো তুমি তাহলে কাল যাচ্ছো তোমার মামা মামির সাথে?

-মামা মামিকে না করার ক্ষমতা আমার নেই।

-আমাকে ডিনাই করার সাহস, ক্ষমতা তাহলে তোমার আছে তাই তো?

-মানে?

-তুমি কি একবারও আমার কাছে পারমিশন চেয়েছ? একবারও জানতে চেয়েছ আমি চাই কিনা তুমি যাও? বা তুমি গেলে আমার কি হবে?

-------------------------

-কি হলো কথা বলো? জিজ্ঞেস করেছিলে একবারও? 

-জিজ্ঞেস করার কি কোনো প্রয়োজন ছিল? তুমি মামাকে বলেছিলে আমি যেতে চাইলে---।

-মামা মামিকে দেখে বুলি ফুটেছে মুখে না তোমার? সাহস বেড়েছে বেশি?

-আহ! সীমান্ত লাগছে আমার---।

-লাগুক--। তোমার মতো অবাধ্য মেয়েকে আরো বেশি শাস্তি দেয়া উচিত--। 

-----------------------

সীমান্ত মায়রার মুখটা চেপে ধরে চোখের দিকে তাকালো। মায়রা ব্যথা পেয়ে ককিয়ে উঠলো। 

-তোমার গাধামি দেখে আমি অবাক হই মায়রা। ভিষণ অভাব হই। তুমি কি বলো তো? দুদিন পর পর কেন তুমি আমাকে ভায়োলেন্ট হতে বাধ্য করো? আমাকে কেন শান্তিতে তোমাকে নিয়ে ভালো থাকতে দাও না তুমি? কি চাও কি তুমি বলো তো? কি চাও?

-আমি বুঝতে চাই আমি কেন আমার নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী কিছু করতে পারবো না? কোন আমাকেই সবসময় সবার চোখে খারাপ হতে হবে? কেন----?

-জাস্ট শাট আপ--। তোমাকে মুখে মুখে তর্ক করার জন্য বিয়ে করিনি।

-তাহলে কি জন্য বিয়ে করেছ? সবার কাছে আমাকে কালার করে নিজের ক্লিয়ার ইমেজ তৈরি করতে?

সীমান্ত কষিয়ে মায়রার গালে একটা চড় দিলো। মায়রা ছিটকে ফ্লোরে পড়লো। সীমান্ত মায়রার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। মায়রার চোখ থেকে ঝড়া অশ্রুবিন্দুগুলো সীমান্তের মনে বিন্দুমাত্র দয়া তৈরি করতে পারলো না।

-বিয়ে কেন করেছি না? তোমার বোন ওই তাথৈকে বাবা মা যখন পছন্দ করলো তখন ভেবেছিলাম জীবনেও সুখী হবো না-। ওর চেয়ে তোমাকেই বেশি ভালো লেগেছিলো। শান্ত, চুপচাপ, বাধ্য একটা লক্ষী মেয়ে। কিন্তু বাবা মায়ের কথার বাইরে যাবো সেটাও সম্ভব ছিল না। তাথৈ নিজেই সরে যাওয়ায় আমি খুশিই হয়েছিলাম--। বাবা মাকে কনভেন্স করেছি তোমাকে বিয়ে করবো বলে--৷ কজ মনে হয়েছিল তুমি আমার সব কথা মানবে-। লক্ষী বউ হয়ে থাকবে----।

-তুমি আমাকে বউ নয় পুতুল বানিয়ে রাখতে চাইছ--। যে কিনা তোমার ইচ্ছেয় উঠবে, বসবে, খাবে, শোবে---।

-হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ---। পুতুল হিসেবেই চাই তোমাকে--। কিন্তু তোমার মতো মেয়ে কারো ওয়াইফ হওয়ার যোগ্যই না। স্বামীর কথায় চলতে পারো না, তার সামান্য রেসপেক্টটুকু করতে পারো না--। তুমি হবে বউ! ফানি!

-তুমি রেসপেক্ট করো? আমাকে? একটা মেয়ে হিসেবেও সামান্যতম রেসপেক্ট করো? 

-রেসপেক্ট? সিরিয়াসলি? মেয়েদের কাজই হলো স্বামীর সেবা করা, তার সব চাওয়া পূরণ করা। এই ধরো দাসীর রোল প্লে করা৷ এবার তুমিই বলো ঘরের দাসীকে কি এর চেয়ে বেশি রেসপেক্ট দিতে হয়?

-তোমার মতো অমানুষের পক্ষেই এমন কথা বলা সম্ভব---।

-অমানুষ? ইয়া রাইট--। তকমাটা যখন পেয়েছি তাহলে তার সদব্যবহারটাও তো করতে হয়। কি বলো?

-মানে----?

সীমান্ত ঠোঁটের কোণে একটা ক্রুর হাসি ফুটিয়ে মায়রার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে টেনে তুললো। সীমান্তের দিকে চোখ পড়তেই মায়রা ভয় পেল। লোকটার চোখে মুখে একটা হিংস্র আক্রোশ ফুটে আছে। আজকে কোন শনি অপেক্ষা করছে ওর কপালে সেটা ভেবেই আঁতকে উঠে সরার চেষ্টা করলো মায়রা। কিন্তু ততক্ষণে সীমান্তের বজ্রমুষ্ঠি মায়রার চুখের মুঠি চেপে ধরে ফ্লোর থেকে টেনে হিঁচড়ে বিছানার দিকে নিয়ে চলেছে। 

২০!! 

সীমান্ত মায়রাকে এতো জোরে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলেছে যে মায়রা ব্যালেন্স রাখতে না পেরে সোজা খাটের কিনারায় গিয়ে পড়লো। এক মূহুর্তের জন্য মায়রার মনে হলো চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেছে। ব্যথায় গলা দিয়ে অজান্তেই একটা অস্ফুট স্বরে চিৎকার বেরিয়ে গেল। মায়রার আর্তনাদ গলা ফুটে বের হওয়ার আগেই সীমান্ত মায়রার গাল টিপে ধরলো। মায়রা ভয়ে নিজের হাত চেপে ধরে ভয়ার্ত চোখে সীমান্তের মুখের দিকে তাকালো। সীমান্তের চোখ মুখ অন্য দিনের চেয়েও বেশি লাল হয়ে উঠেছে। লোকটা আজ কি করবে সেটা ভেবেই মায়রার বুকটা ধ্বক করে উঠলো। সীমান্ত ঠাস করে মায়রার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো। 

-কি চাইছিস তুই? হ্যাঁ? রাত বিরেতে তোর কান্নাকাটি শুনে তোর মামা মামি এখানে আসুক? তারপর তারা আমাকে চোখে নিচ, কুৎসিত, কুলাঙ্গার একজন স্বামী হিসেবে দেখুক! বাহ!

-আমি---। আমি তেমন কিছু করতে চাই নি---।

-তাহলে কি করতে চাইছিস তুই? কি করতে চাইছিস তুই বল আমাকে?

সীমান্ত মায়রার দু হাত ধরে টেনে তুলে ধরে শক্ত করে চেপে ধরে কথাগুলো বলছে। মায়রা ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে সরার চেষ্টা করতেই সীমান্ত মায়রার গাল চেপে ধরে নিজের দিকে ফিরালো। 

-আহ--। লাগছে আমার--। ছাড়ো প্লিজ--।

-আমি ধরলেই তোর লাগে তাই না? আমার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেও তোর সমস্যা। আমি যাই করি তাতেই তোর সমস্যা। ভালোবাসতে চাইলেও সমস্যা, কাছে টানতে চাইলেও সমস্যা, নিজের বুকে জড়িয়ে রাখলেও সমস্যা। এই? তুই কি চাস বল তো? থাকতে চাস না তাই না? হ্যাঁ?

-------------------------

সীমান্ত মায়রাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে জোরে একটা ঘুষি মারলো দেয়ালে। তারপর নিজের মাথা চেপে ধরে বসে পড়লো ফ্লোরে। মায়রা ভয়ে চুপ করে রইলো। একটু পরে সীমান্ত আবার উঠে এসে মায়রার পাশে বসলো। মায়রা চমকে একটু সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে সীমান্ত মায়রার হাত টেনে নিজের কাছে টেনে নিলো। এবারে ব্যথায় চোখের পানি গড়িয়ে পড়লেও একটা টু শব্দও করলো না মায়রা৷ 

-কি চাও তুমি? বলো বলো? কি চাও? আমার সাথে থাকতে চাও? নাকি মামা মামির সাথে চলে যেতে চাও?

-----------------------

-জাস্ট আনসার মি মায়রা৷ স্পিক আপ স্পিক আপ স্পিক আপ ড্যাম ইট।

-আমি-----।

-একটা কথা মাথায় রেখো মায়রা। কাল যদি তুমি মামা মামির সাথে যাও তবে কালই হবে এই বাড়িতে আর আমার জীবনে শেষ দিন। কথাটা মাথায় রাখবা---। 

-শেষ দিন বলতে কি বলতে চাইছো তুমি? আমার মামা আর মামনির সাথে যাওয়ার সাথে তোমার জীবনে থাকা না থাকার কি সম্পর্ক?

-ওহ! বুঝতে পারছো না কি সম্পর্ক? অবশ্য বুঝতে না পারারই কথা। তোমার আমাকে নিয়ে না কোনো রকমের মাথা ব্যথা আছে, না কোনো আগ্রহ। সেটা বুঝার জন্য বিশাল কোনো ডিটেকটিভ হতে হয় না। যে কেউই তোমার মুখের ভাবটা দেখেই বলে দিতে পারে। ইভেন মাহিমের মতো গাধাও সেটা বুঝতে পারে--। শাহ---।

-মানে? মাহিম ভাই---?

-আচ্ছা তুমিই বলো তো? তুমি মাহিম আর তিয়ার সাথে যতটা ফ্রি, যতটা হাসিমুখে কথা বলো তার একভাগও আমার সাথে কমফোর্টেবল? তুমি সত্যি করে বলো তো মায়রা? আর ইউ ড্যাম কমফোর্টেবল উইথ মি? 

-----------------------

-ইউ সি মায়রা? তোমার নিরবতাই সবটা পরিষ্কার করে দিচ্ছে--। তুমি মানো আর না মানো, স্বীকার করো আর না করো-তুমি কখনোই আমাকে মন থেকে মানতেই পারো নি। হাহ--।

-------------------------

-মাহিম যেদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলো তোমার সাথে কিছু নিয়ে ঝামেলা চলছে কিনা তখন মনে হচ্ছিল মরে যাই। ছি! নিজের বন্ধুর মুখ থেকে----! আহহহ। আমাকে কি মনে হয় তোমার? আমার মান সম্মান বলে কিছু নেই? তবু আমি মাহিমের কথা চুপচাপ শুনেছি। শুধুমাত্র ওর কথায় তোমার সাথে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক মেনটেইন করার চেষ্টা করেছি। তুমি একা একা বোর হয়ে যাও তাই নিজের ফ্রি সময়টুকু তোমাকে দেয়ার চেষ্টা করেছি। মাহিমের কথায় তোমাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে গেছি, ডিনার করেছি, শপিং----।

-সবটা মাহিম ভাইয়ার কথায়? তুমি নিজের মন থেকে কিছু---।

-হ্যাঁ। এখন এটাকেও ইস্যু ধরে বসে যাও--। ডিজগাস্টিং---।

সীমান্ত মায়রাকে ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। মায়রা গুটিশুটি হয়ে বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না চাপার চেষ্টা করলো। সীমান্ত বিরক্ত হয়ে একটা শব্দ করে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।

-শোনো মায়রা। এতো রাতে ফ্যাঁসফ্যাঁস করে কেঁদে ঘুমের ডিস্টার্ব করবে না একদম। আর সারা রাতটা সময়। ভেবে নাও কি করবে--। যেতে চাইলে যেতেই পারো--। তবে তাহলে ফিরে আসার কষ্ট আর করতে হবে না--। অবশ্য ফিরার দরকার যে তোমার নেই সেটা বুঝার মতো বয়স আমার হয়েছে-। তবু অন্তত এতোটুকু আশা করি যে নিজের বাবা মায়ের সম্মানের কথা ভেবে হলেও ভুল ভাল কিছু করবে না। তোমার বোন অলরেডি যা করেছে তারপর তুমিও যদি কিছু করো তাহলে কি হতে পারে সেটা আশা করি তোমাকে বলে দিতে হবে না--। নাউ গুড নাইট--। 

এদিকে রাতে আয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে তাওহীদ আর আরিশা। আজকে ওদের বাসায় আয়ানের ডিনারের দাওয়াত। আর তাওহীদ ইতোমধ্যেই কয়েকবার আয়ানকে কল করে ফেলেছে কতোটুকু এসেছে সেটা জানতে। আয়ানের আসার অপেক্ষায় আরিশাও না খেয়ে বসে আছে সেটাই তাওহীদের এতো উদ্বিগ্নতার কারণ। তাই একটু পরেই কলিংবেলের শব্দ শুনে সম্ভবত আরিশার চেয়ে তাওহীদই বেশি খুশি হলো। তাওহীদ দরজা খুলে দিলে আয়ান একটা হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে বাসায় ঢুকলো। তাওহীদ আয়ানের কাঁধে হাত চাপড়ে দিলো খুশিতে।

-ওয়েলকাম আয়ান। আর ইউ অল ওকে?

-ইয়া আম ফাইন। আরিশা কি করছে? 

-তোমার আসার অপেক্ষা করছে বসে বসে--।

-ওহ শিট। চলুন। এই মেয়ে নইলে মিনি ড্রামা শুরু করে দিবে দেরি করে আসায়--।

-হা হা হা--। এসো এসো? আরু? দেখো আয়ান চলে এসেছে---।

আরিশাকে এক বক্স আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লো আয়ান। আরিশা ভ্রু কুঁচকে আয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে আয়ান আর তাওহীদকে সার্ভ করলো। তারপর নিজের প্লেটে খাবার নিলো।

-হঠাৎ ঘুষ দিচ্ছিস কি মনে করে?

-ঘুষের কি দেখলি? তুই আইসক্রিম খেতে ভালোবাসিস তাই আনলাম। এখন খাবি না বললে বল। আমি নিজেই নাহয় সাবাড় করবো পুরো বক্স--।

-এই না খবরদার--।

আরিশা এমনভাবে কথাটা বললো যে তাওহীদ আর আয়ান দুজনেই হেসে ফেললো।

-এই? না ভেটকাই খা তো চুপচাপ। আর ওই? তুমি হাসো কেন হ্যাঁ? হাসো কেন?

-আরে বাবা। এখন আবার ভাইয়ার সাথে লাগছিস কেন? 

-তুই একটা কথাও বলবি না। চুপ করে আমার কথা শোন।

-হুম। বল না।

-আমি একটা প্ল্যান করেছি। তুই রাজি কিনা বল।

-মানে কি? কি প্ল্যান শুনলামই না। বলে রাজি কিনা বল--। 

-এ্যাঁ---। তুই আগে আমার এক কথায় রাজি হয়ে যেতি--। আর এখন তুই আর আমাকে বিশ্বাস করিস না। আমি কি তোর কাছে তোর প্রপার্টি দাবি করবো নাকি! এ্যাঁ।

-আরু? ম্যাডাম মেলোড্রামা। আপনি কোথাকার কথা কোথায় নিচ্ছেন?

-আআআআআ। আমি জানি তো। এখন এসব বলবি--। তুই ভিষণ খারাপ। খুব খুব খারাপ।

-ওফ বাবা!! আচ্ছা বল মেরি মা। কি করবো? তোর সব প্ল্যান চোখ বন্ধ করে মেনে নিলাম--।

-গুড--। এখন তাওহীদ? তুমি বলো?

-এই এই? আরু ওয়েট ওয়েট--। কি চলছে বল তো? আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে রাজি করালি-। এখন নিজের বরের উপরে খড়গ ধরছিস। কাহিনী তো সিরিয়াস মনে হচ্ছে--। কি চলছে তোর মাথায় বল।

-আআআআআআ। তাওহীদ এটাকে এক্ষুণি বের করো বের করো বের করো--।

-আরে বাবা। আচ্ছা বল। তাওহীদ ভাইও রাজি--। কি ভাই?

তাওহীদ আয়ানের দিকে একবার অসহায়ভাবে তাকিয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও আরিশার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সায় জানালো। রাজি না হয়ে যে লাভ নেই সেটাও বেশ টের পাচ্ছে তাওহীদ। তাই আপাতত বাম হাতের ফিঙ্গার ক্রস করে বসে আরিশার পরবর্তী ধামাকার জন্য অপেক্ষা করছে। এই মেয়ের কথায় আয়ান আর ওর নিজের হাল যে কি হতে পারে সেটাই ভেবে একবার ঢোক গিললো। আপাতত বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন