অচেনা অতিথি - পর্ব ৩১ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


মাহাদ গাড়ীর স্পীড এত বাড়িয়ে দিল যে কারো সাথে একবার ধাকা লাগলেই কোন কৈফিয়ত ছাড়াই স্পর্টেই ডেড........

৪৫ মিনিটের রাস্তা ৭ মিনিটে শেষ করেছে মাহাদ। গভীর রাত তার ভিতর বৃষ্টির রাত ছিল  তাই রাস্তায় গাড়ি চলাচল ছিলনা বললেই চলে।

রেস্টুরেন্টের সামনে আসতেই বৃষ্টি অনেকটা কমে গেল। তারপর দ্রুত গাড়ী থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালো। রেস্টুরেন্ট সহ আসে-পাশের সব দোকান-পাট বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। মাহাদ আশে পাশে অনেক খুঁজলো কিন্তু তিতিরের কোন খোঁজ পেলনা। শেষে মাহাদ তিতির বলে পরপর কয়েকবার ডাক দিল।

মাহাদের এমন চিৎকারে তিতিরের ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে দেখলো মাহাদ নিচে দাড়িয়ে আছে। ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিতে  ভিজে পুরো শরীর কাঁপুনি ধরে গেছে। তিতির ঠকঠক করে কাঁপছে। মাহাদ বলে ডাক দিতেই মাহাদ উপরের দিকে তাকালো। রোড লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেল একটা বোরখা পড়া মেয়ে গাছের ডাল শক্ত করে ধরে বসে আছে। 

" তিতির.......?"

" উমমম্...."

" তুমি ওখানে কি করছো?"

" তিতির অস্পষ্ট স্বরে বলল," আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।"

" তিতিরে ঐ অস্পষ্ট কথাগুলোই মাহাদের মন ঠান্ডা করার জন্য যথেষ্ট ছিল। দুহাতে চোখের পানি মুছে মাহাদ বলল, " এই  বৃষ্টিতে গাছ ভিজে  পিচ্ছিল হয়ে গেছে। তাই একদম একা নামার চেষ্টা কিন্তু মোটেও করবা না। একটু ওয়েট করো, আমি এখুনি তোমার কাছে আসছি...."

মাহাদ নিজে গাছে উঠে তিতিরের কাছে গেল। তারপর তিতিরের হাত ধরে নামাতে গিয়ে একটা ভাঙ্গা ডালের সাথে তিতিরের বোরখা বেঁধে গেল।"

" আমার বোরখা আটকে গেছে। হাত ছেড়ে দেন। আমি ওটা ডাল থেকে  ছাড়ায়।"

" ওটা ছাড়াতে হবেনা। মাহাদ জোড়ে একটা টান দিতেই বোরখা চিরচির করে ছিড়ে গেল। তারপর তিতিরকে অতি সাবধানে গাছ থেকে নামিয়ে গাড়ীর পাশে এনে দাড় করিয়েই জড়িয়ে ধরে বলল," আমি তোমাকে অপেক্ষা করতে বলেছি বলে এত রাত পর্যন্ত তুমি এখানেই থাকবে? তোমার কি নিজেই নিজের প্রতি দায়িত্ব নেই! তুমি যানো না তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি অবস্থা হত!"

" আমিতো শয়তান হয়ে গেছি। বরের কথা শুনিনা তাই  আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। "

" মাহাদ চোখের পানি মুছে বলল," তুমি জানোনা দিনকাল কত খারাপ! আমি নানা চিন্তায় সবসময় ব্যস্ত থাকি। সব কথাতো আমার স্মরনে থাকেনা। আমি যদি না আসতাম! যদি আসমা  আমাকে না জানাতো! তাহলে কি হত?"

" তিতির দু'হাতে মাহাদের পিঠ খামচে ধরে বলল," পবিত্র ভালোবাসার  দায়িত্ব গুলো  আল্লাহ্ সুবহানাতালা স্বয়ং নিজে নেন। আপনি আমার কথা ভুলে গেছেন, আমার  উপায়ও ছিলনা আপনাকে কোন মাসেজ করার। কিন্তু দেখেন, ঠিকি আল্লাহ্ সুবহানাতালা আপনাকে এই রাতেই কারো হাত দ্বারা আমার কাছে হাযির করেছেন। তিতির কথাগুলো বলছিল আর ঠকঠক করে কাঁপছিল।"

মাহাদ তিতিরের নেকাব সহ বোরখা খুলে দিয়ে গাড়ীতে নিয়ে গিয়ে বসাতেই তিতির বলল," আমার বোরখাটা ছিড়ে গেল! আমাকে একটু সময় দিলে আমি ওটা ঠিকি খুলে নিতাম।"

" আবার কিনে দিব বলে মাহাদ গাড়ীতে উঠে ডোরটা লাগিয়ে দিয়ে তিতিরকে বলল, " হাতটা উপরে ওঠাও তো! তোমার কামিজটা খুলতে হবে।"

" তিতির কোন কথা না বলে ওর কামিজটা খুলে ফেলতেই মাহাদ ওর শার্ট আর গেঞ্জি খুলে তিতিরকে শুকনো শার্টটা পড়িয়ে দিয়ে গেঞ্জি দিয়ে অতি সাবধানে  চুলগুলো মুছে দিতে লাগল।"

" তিতির ঐ অবস্থায়  মাহাদকে জড়িয়ে ধরে বলল," জানেন, আজ আমার খুব ভয় করছিল। বার বার মনে হচ্ছিল আপনি এই বুঝি আসলেন কিন্তু আমার আশাগুলো বার বার ভেঙ্গে যাচ্ছিল। তবুও আমি আল্লাহ্ সুবহানাতালার উপর থেকে বিশ্বাস হারায়নি। তিতির বির বির করে কথাগুলো বলছিল।"

" মাহাদ একের পর পর কিস♥ করছে তিতিরকে আর ওর চোখদিয়ে পানি পড়ে যাচ্ছে। তিতির তোমার এই বিশ্বাস আর ভরসার জন্য না জানি আমার কারনেই তোমাকে বিপদে না ফেলে দেয়।"

তিতিরের পুরো শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। কথাগুলো অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একসময় মাহাদের বুকে ঢলে পড়লো তিতির। তারপর মাহাদকে আকড়ে ধরে নানা ভুলভাল কথা বলতে লাগলো। যা মুখে আসছে তাই বলছে। 

মাহাদ আসমাকে কল দিয়ে বললো গরম পানি করতে। আর তিতিরের রুম রেডী করে রাখতে। তারপর গেঞ্জিটা পড়ে নিয়ে মাহাদ তিতিরকে নিয়ে বাসার পথে রওনা দিল। পুরো রাস্তায় মাহাদ নিশব্দে কেঁদেছে। 
বাসায় এসে গাড়ীর হর্ন না বাজিয়ে গাড়ী থেকে নেমে গেটের কাছে গিয়ে দাড়োয়ান কে ডাকতেই দাড়োয়ান বলল, " কে...?

" চাচা একটু শব্দ কম করেন। শব্দ করার হলে আমি নিজেই গাড়ীর হর্ন বাজাতাম। আমি মাহাদ, চুপচাপ নিশব্দে গেট খুলে দেন।"

" দাড়োয়ান পকেট গেট দিয়ে মাহাদকে দেখে গেট খুলে দিয়ে বলল," তুমি এত রাতে কই থেকে আইলা? তাও এই খালি গায়ে!"

" কাজ ছিল চাচা বলে গাড়ীতে উঠে গাড়ী নিয়ে বাসার ভিতর ঢুকল মাহাদ। তারপর বোরখা আর কামিজ সহকারে তিতিরকে কোলে নিয়ে দরজার সামনে আসতেই দেখলো, আসমা দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে।"

" আসমা, সবাই কি ঘুমিয়ে গেছে!"

" জ্বী ভাইজান সবাই ঘুমিয়েছে। চিন্তা করেননা, সবার রুমের দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে দিছি। কেউতো বের হবেই না তারপরও কেউ চাইলেও বের হতে পারবেনা। আপার কি হইছে ভাইজান! কই পাইলেন আপারে?"

"  মাহাদ কোন কথার জবাব না দিয়ে তিতিরকে নিয়ে উপরে চলে গেল। তারপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে তিতিরকে ওয়াসরুমে নিয়ে গেল।  সব কিছু খুলে দিয়ে তিতিরকে কয়েকবার ঝাকিয়ে তুলে বলল," তিতির আমরা বাসায় চলে আসছি। তুমি ফ্রেস হয়ে নাও। তারপর টাওয়াল পড়ে বের হইয়ো। না হয় আমাকে ডাক দিও। আমি সামনেই দাড়িয়ে আছি।"

" তিতির পিটপিট করে মাহাদের দিকে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই মাহাদ বের হয়ে গেল ওয়াশরুম হতে। তারপর এসে আলমারী খুলতেই দেখলো, সেদিনের মাহাদের সব কাপড়গুলো খুব সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে তিতির। এত দুঃশ্চিন্তা আর কষ্টের ভিতরও মাহাদের মুখে একটু হাঁসির রেখা ফুটে উঠলো। মাহাদ, নিজের আর তিতিরের ড্রেস বের করে বেডে রেখে টাওয়াল নিয়ে ফুয়াদকে কল দিয়ে বললো তিতিরকে নিয়ে একটু আগেই বাসায় এসেছে। তারপর  দরজাটা খুলে দেখলো আসমা গরম পানির গামলা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মাহাদ সেটা নিয়ে আসমাকে বলল, ওর জন্য খাবার নিয়ে আসো।

আসমা চলে যেতেই মাহাদ দরজা বন্ধ করে দিয়ে ওয়াশরুমের সামনে এসে বলল," তিতির তোমার হয়েছে!"

" তিতিরের  কথার কোন জবাব আসেনা।"

মাহাদ এবার দরজা খুলে দেখে তিতির বেসিন ধরে দাড়িয়ে আছে। তিতিরকে ধরে রুমে এনে দাড় করিয়ে ড্রেস নিয়ে এসে কেবল টাওয়ালটা খুলে দিয়েছে এমন সময় আয়নায় চোখ পড়ল মাহাদের। যা দেখলো তাতে মাহাদের মাথা ঘুরে গেল।
তিতিরের সাদা ধবধবে পিঠে অজস্র দাগ। মাহাদ তিতিরকে ছেড়ে দিয়ে তিতিরের পিছে গিয়ে দাড়ালো। পিঠে হাত দিয়ে বুঝলো এগুলো কারো দেওয়া ইচ্ছাকৃত দাগ। 

মাহাদ আর কোন কথা না বলে  তিতিরকে চেঞ্জ করে দিয়ে সোফায় বসিয়ে  গরম পানির  ভিতরে ওর দু'টি পা রেখে বলল," এভাবেই বসে থাকো।"

মাহাদ উঠে গিয়ে দরজা খুল বের হতেই দেখলো আসমা খাবার নিয়ে আসছে। মাহাদ দ্রুত ওর রুমে গিয়ে মেডিসিনের বক্সটা নিয়ে আবার রুমে আসল। তারপর তিতিরের বুকের উপর ভালো করে টাওয়াল বিছিয়ে দিয়ে বলল," তিতির এখন তোমার ভালো লাগছে?"

" কুসুম গরম পানিতে পা রাখার ফলে তিতির অনেক আরাম পাচ্ছে। তাই মাথা নাড়িয়ে হুম বললো।"

 মাহাদ খাবারগুলো নিয়ে তিতিরের পাশে টুলটা টেনে এনে বসে ভাত মেখে নিজে এক লোকমা ভাত মুখে পুরে তারপর তিতিরের মুখে তুলে দিল।

আসমা দরজার সামনে দাড়িয়ে এদের স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসা দেখছে।

মাহাদ আর এক লোকমা খাবার তুলে দিতেই তিতির না করে ওটা মাহাদকে খেতে বললো।

"তিতির তুমি পুরোদিন না খেয়ে ছিলে। আমি ভাইয়ার বাসায় খেয়েছি। শেষে অতিরিক্ত খাবার খেলে আমার পেট খারাপ হবে। এগুলো শুধু তোমার জন্য। 
মাহাদ খাবার তুলে দিচ্ছে আর তিতির বাধ্য মেয়ের মত আস্তে আস্তে খাবার খাচ্ছে।"

"তিতির.....?"

" হুমমম....।"

" তোমার পিঠে ওগুলো কিসের দাগ?"

""""""""""""""""""""""""""""""""?

" আমি কিছু বলছি তিতির! তুমি কি জবাব দিবেনা?"

" তিতির একটু চুপ থেকে বলল, "আপনার কাছে আসার আগ পর্যন্ত মা আর বাবার দেওয়া ওগুলো ভালোবাসার চিহ্ন।"

মাহাদের সমস্ত কথা হারিয়ে গেল। কোনো ভাষায় আর খুজে পাচ্ছে। এ কেমন বাবা-মার ভালোবাসার চিহ্ন! 

" মাহাদ, আমি আপনার সৌন্দর্যতা, নাম,যশ,টাকা,পয়সা এগুলো দেখে কখনও ভালোবাসিনি। আপনার আমার প্রতি ভালোবাসা ও কেয়ার দেখে ভালোবেসেছি। আপনজনের ভালোবাসা কি জিনিস আমি তা জানিনা কিন্তু আপনার মত করে আমাকে এত গুরুত্ব আর ভালোবাসা কেউ দেয়নি। 

মা কখনো ভালো হয়না মাহাদ। বাবাও ভালো হয়না। আমি কখনো দেখিনাই এদের ভালো হতে। যেদিন আপনার কথা বাসায় জানতে পেরেছিল সেদিন ওরা আমায় খুব মেরেছিল। মা আমাকে এখানে লাথি মেরেছিল বলে হাত দিয়ে তিতির জায়গাটা দেখিয়ে দিল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল," আমার বাবাও সেদিন আমাকে মেরেছিল। মাহাদ, আমার মা তো সৎমা কিন্তু আমার বাবাতো সৎবাবা নয়! তাহলে বাবা আমার সাথে কেন এমন ব্যবহার করতো!"
তিতির আর কিছু বলতে পারেনা। শুধু অঝোড়ে চোখের পানি পড়ে যাচ্ছিল।

তিতিরের বলা কথাগুলো শুনে আসমার চোখ ছাপিয়ে পানি পড়তে লাগলো। আসমা ভাবত সে সব থেকে দুঃখী ছিল কিন্তু চোখের সামনে যা শুনলো তার কাছে আসমার দুঃখ-কষ্ট কিছুই না। কথায় আছেনা, যে মেয়ে বাবার ভালোবাসা পায়না সে স্বামীর অফুরন্ত ভালোবাসা পায়। আজ মাহাদ ভাইজানকে দেখে তাই প্রমানিত হল।

" তিতির, খাবারগুলো শেষ করো বলতেই তিতির গামলা থেকে পা দুটি সরিয়ে ওখানেই বমি করতে লাগলো। যা খেয়েছিল সব বের করে দিল।"

তিতিরের চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। কপালের লীল রগগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। আসমা দৌড়ে এসে বলল, ভাইজান সরেন আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।

মাহাদ আসমাকে নিষেধ করে বলল," অনেক রাত হয়ে গেছে। বাহির থেকে খুব সাবধানে  সবার রুমের দরজার লক খুলে দিয়ে তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। বাঁকিটা আমি সামলিয়ে নিব।

মাহাদের উপর আর একটা কথাও বলতে পারলোনা। আসমা রুম থেকে চলে গেল।

মাহাদ তিতিরে মুখ মুছে দিয়ে বলল,"সব তো বের হয়ে গেল। মেডিসিন নিতে হবে। আর একটু খাওয়ার ট্রাই করো।"

" উমহু... পারবোনা।"

" পারতেই হবে। কিছুতো খাও!"

" আপনার ঠোটগুলো দেন সেগুলো খেয়ে মেডিসিন খাব।"

" সব জায়গায় ঠাট্টা ভালো লাগেনা তিতির। একটু খাও...."

অনেক জোড় করে একটু খাওয়ায় দিয়ে মেডিসিন দিয়ে তিতিরকে বিছানায় সুয়ে দিতেই তিতির বলল," কই যান! এখানে আমার কাছে থাকেন।"

" চিন্তা করোনা তিতির! আজ তোমার সাথে ঘুমাবো।"

" তিতির আর কিছু না বলে চোখটা বন্ধ করে চুপ হয়ে রইলো।"

মাহাদ সব কিছু পরিষ্কার করে শাওয়ার নিতে চলে গেল ওয়াসরুমে। 

এর মধ্য তিতির চোখ খুলে দেখলো মাহাদ ওর কাছে এখনো আসেনি। ও ভাবলো মাহাদ হয়ত ওর রুমে চলে গেছে। তিতির চট করে উঠে বুঝতে পারলো মাহাদ শাওয়ার নিচ্ছে।  তিতির ওয়াসরুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে দেখলো মাহাদ চোখ বন্ধ করে শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে আছে। তিতির ওয়ালে মাথাটা লাগিয়ে একটু হেলান দিয়ে মাহাদের দিকে চেয়ে রইলো।

মাহাদ চোখ খুলেই দেখলো তিতির দাড়িয়ে আছে। মাহাদ মুঁচকি হাসি দিয়ে বলল, " তিতির, আমার সাথে ভিজবে!

তিতির কোন কথা না বলে কেবল ওয়াসরুমে ঢুকতে যাবে এমন সময় ঠাশ্ করে তিতিরের মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বলল," আমি যেন বের হয়ে  দেখি তুমি বিছানায় আছো।"

তিতির গাল ফুলিয়ে বেডে এসে চুপটি মেরে বসে রইলো। তার কিছুক্ষন পর মাহাদের দরজা খোলার শব্দে চট করে কম্বলের নিচে সুয়ে পড়লো।

মাহাদ এসে দেখলো তার বৌ বাধ্য মেয়ের মত চুপটি করে সুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। মাহাদ চেঞ্জ করে এসে বিছানায় সুয়ে পড়লো। তারপর লাইটটা অফ করে দিতেই তিতির এসে জড়িয়ে ধরলো মাহাদকে।

"এ বাব্বাহ্ আমার বৌ তো দেখছি এখনো ঘুমাইনি। জেগে আছো কেন?"

" আপনি সত্যি আমার কাছে থাকবেন তো! ঘুম থেকে উঠেও দেখবো আপনি আছেন!"

" কাল শক্রুবার, তাই সমস্যা হবেনা। তুমি চিন্তা করোনা আমি আছিতো!"

এমন সময় মাহাদের ফোনে কল আসলো। মাহাদ ট্রী টেবিলে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু তিতির আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। মাহাদকে তিতিরের ছাড়ার কোন নামই নাই। তাই বাধ্য হয়ে মাহাদ বলল, "তিতির ছাড়ো আমায়!"

" নাহ্"

" মাহাদ বাধ্য হয়ে তিতিরকে সহকারে একটু উচু হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল ওর ভাইয়া কল দিয়েছে। মাহাদ সাথে সাথে রিসিভ করতেই নিসার কন্ঠ ভেঁসে আসলো।"

" তুই কি সত্যি বাসায় গেছিস!"

" হুম, কেনো! কিছু বলবি?"

" তোর বউকে ফোন দে তো!"

মাহাদ তিতিরের কপালে কিস করে  বলল," ওকে তোর কি দরকার ?"

" দিতে বলেছি দে!"

নিসা, তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই খুব রেগে আছিস। আমি যদি জানতাম ভাইয়া না তুই ফোন দিয়েছিস তাহলে কল রিসিভই করতামনা। দেখ, অনেক রাত হয়েছে। যা বলবি কাল বলিস।  আজ আর জ্বালাসনা তো! তুইও ঘুমা আমাকেও ঘুমাতে দে...........
মাহাদ কলটা কেটে দিল। তারপর তিতিরকে নিয়ে সুয়ে পড়ল।

তিতির মাহাদের বুকে একটা কিস করে বলল," ভাবী কল দিয়েছিল!"

" মাহাদ পাল্টা তিতিরকে কিস করে বলল," হুম।"

" আমাকে বকা দিত!"

" হুম, আজ না পারলেও কাল ঠিকি দিবে।"

" তিতির কথাগুলোকে পাত্তা না দিয়ে মাহাদের সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠলো।"

" তিতির, তুমি কিছুক্ষনের মধ্য ঘুমিয়ে পড়বা। তখন কি হবে বলতো! আমার আর কোন আদরই উপভোগ করতে পারবেনা। তার থেকে ভালো হয়না, চুপ করে থাকা!"

" নাহ্, এর থেকে ভালো আর কিছু আমার চোখে দেখছিনা বলেই তিতির একটু উঠতেই  মাহাদ পিছন দিক থেকে ওর হাত দু'টি একসাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।"

তিতির কই মাছের মত ছটপট করতে করতে বলল," আপনি জানেন, আমি আপনাকে কত ভালোবাসি!"

" হুম জানিতো! আর এত ছটপট করোনা, হাতে কিন্তু লাগবে।"

" উমহ্... হাত ছেড়ে দিলেই তো হয়। ছাড়েন আমাকে। আমিতো আপনার সাথে এমনি মজা করছিলাম। আচ্ছা বলেন তো! আপনি গাছে উঠলেন কিভাবে?"

" মাহাদ তিতিরের হাত ছেড়ে দিয়ে বলল," আমি সবই পারি কিন্তু তোমার মত সেটা বলে বেড়াইনা। আর তাছাড়া সবাই যদি জানে আমি গাছে চড়তে জানি তাহলে বাতাসি কিংবা বন্ধুরা, তারা কেউই আমাকে শান্তি দিবেনা। সব সময় ঐ কাজেই বিজি রাখবে। তাই সবার সামনে কাবলা বাবা সেজে থাকাই বেটার।"

তিতির আরো কিছু কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো। মাহাদ শুধু তিতিরের জন্যই এতক্ষন কষ্ট করে জেগে ছিল। পুরো দিনের দুঃশ্চিন্তা, আর ক্লান্তি ওকে এতক্ষন চেঁপে ধরে ছিল। অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকায়  মাহাদও তিতিরকে বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।

♦♦♦♦

পরদিন সকাল সাতটায় অ্যার্লামের শব্দে তিতিরের ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে দেখলো মাহাদ নেই। চট করে পাশ ফিরে দেখলো, মাহাদ ওর পাশে বসে আছে। তিতির মাহাদের কোমড়টা জড়িয়ে ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো,  " উফ্ আমি তো ভাবছি আপনি চলে গেছেন।"

" এতক্ষন যাইনি কিন্তু এখন যাব। তুমি ফ্রেস হয়ে নাও। আমি আসমাকে দিয়ে নাস্তা পাঠাচ্ছি। খেয়ে তারপর আবার একটা লম্বা ঘুম দিবে।"

মাহাদ রুম থেকে বের হতেই দেখলো সাবিনা আর আসমা নিচে কাজ করছে।
মাহাদ দ্রুত ওর রুমে চলে গেল।

" আসমা বুবু,  মাহাদ ভাইজানরে দেখলাম ওদিক থেকে আইতে। এই সাত সকালে ভাইজানের তো কখনো নিন ভাঙ্গেনা!"

" সাবিনা, আমার মনে হয় দিন দিন তোমার চোখের পাওয়ার কমে যাচ্ছে। আমি দেখতে পেলামনা আর তুমি ঠিকিই দেখতে পেলে!"

" সাবিনা মাথা চুলকিয়ে বলল," হতে পারে। ভাইজানরে তো আর দেখতাছিনা।"

" আসমা কিছু খাবার নিয়ে তিতিরের রুমে চলে গেল।"

♦♦♦♦

সব কিছু যাচাই করে ফুয়াদকে সেই রাতেই অন্য এলাকায় ট্রান্সফার করা হয়। দু'দিন ছুটি থাকায় বাসাও চেঞ্জ করা হয়। আর সব প্রমান হাতে থাকায় ঐ নেতা সহ আরো কয়েকজন কে গ্রেফতার করা হয় পরেরদিন।

এভাবে আরো কয়েকদিন কেটে গেল।

মাগরিবের নামায পড়ে ছাদে বসে ফোনে কথা বলছিল মাহাদ। এমন সময় সাবিনা দৌড়ে এসে একখান টাটকা খবর দিল মাহাদকে। ভাইজান তিতির আপার বিয়ে। আপাকে নাকি ক'দিন আগে রেস্টুরেন্টে দেখেই পছন্দ হয়েছে তাদের। বাসায় অনেকগুলো মানুষ এসেছে।

" কিহ্ বলেই মাহাদ ফোনটা কেটে দিয়ে দ্রুত নিচে নামলো........."

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন