বকুল ফুলের মালা - পর্ব ০২ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


০৩!! 

চোখ বুজে থেকেও সীমান্তের স্পর্শগুলো টের পাচ্ছে মায়রা। লোকটা যেন ইচ্ছে করেই মায়রাকে আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে। গয়না খোলা হতেই হঠাৎ মুখে কিছুর স্পর্শ পেল মায়রা৷ চমকে চোখ খুলতেই দেখলো সীমান্ত আস্তে আস্তে মায়রার ভারি মেকাপটা তোলায় মন দিয়েছে। মায়রা একটু উসখুস করে সরার চেষ্টা করতেই মানুষটা মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে ধরলো শক্ত করে। ভ্রু কুঁচকে একবার মায়রার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো। 

-কি সমস্যা ম্যাডাম? এতো নড়াচড়া করেন কেন? কাজ করছি দেখছেন না?

-আমি-আমি পারবো---।

-শশশশ। আমার স্পর্শ কি খারাপ লাগছে? অন্য কারো স্পর্শ হলে ভালো লাগতো বুঝি?

সীমান্তর কথাটা শুনেই মায়রা চমকে গেল। লোকটার চোখ জোড়া লাল হয়ে গেছে৷ কণ্ঠস্বরে এতোক্ষণের সেই আধো আধো কোমলতাটা আর নেই। মায়রার দিকে একবার চোখ গরম করে তাকিয়ে আবার শান্ত হয়ে নিজের কাজ করছে সীমান্ত। মায়রা নিজের মনে ভাবার চেষ্টা করছে। যে মানুষটার স্পর্শ ও পেতে চেয়েছিল সেই মানুষটাই আর ওর জীবনে নেই। আর যে মানুষটা ওর জীবনে আছে সেই মানুষটার স্পর্শগুলো বিষের মতো লাগছপ ওর কাছে। কেন এমন হয় যে চাইলেও প্রিয় মানুষটাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচা যায় না? কেন প্রতিনিয়ত নিজের ভাগ্য আর মনের সাথে সমঝোতা করে চলতে হয়?

মায়রা একমনে নিজের ভাগ্যের কথা চিন্তা করছিল। এমন সময় শাড়ির আঁচলটা গায়ের উপর থেকে সরে যাচ্ছে টের পেতেই আবার আঁতকে উঠে গায়ে আঁচলটা চেপে ধরে সীমান্তর দিকে তাকালো। সীমান্তর চোখেমুখে আগের সেই ক্রোধ আর বিরক্তি কোনটাই নেই। সে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে মায়রাকে দেখছে।

-এমন ভাবে ভয় পেলে যেন আমি না অন্য কেউ তোমার গায়ে হাত দিচ্ছে?

-আপনি! আপনি কি করছেন?

-শাওয়ার নিবা না? তো শাড়িটা তো অন্তত খুলে রাখো--। এতো দামি বেনারসি ভেজাবে নাকি! এটাও বলে দিতে হবে! উফফ---।

-আমি------।

-বড্ড বেশি কথা বলো বাবা তুমি--৷ হাত সরাও--। আর শোনো অহেতুক কাজের মাঝে ডিস্টার্ব করা আমি পছন্দ করি না---। তাই যা করছি চুপচাপ করতে দাও---। ওকে?

----------------------

মায়রা আর কিছু না বলে সীমান্তর কাজগুলো সহ্য করতে লাগলো। হঠাৎ করেই গায়ের বেনারসিটার আঁচলে টান পড়তেই মায়রা আবার আঁচলটা ধরে ফেললো শক্ত করে। তারপর চোখ বুজে ফেললো। ভয়ে আবার মায়রার হাত পা কাঁপছে মেয়েটার৷ একটু পরেই সীমান্ত মায়রার হাত থেকে আস্তে করে শাড়ির আঁচল টা ছাড়িয়ে নিয়ে বেনারসিটা খুলে নিলো। একটু পরেই মাথার উপরে ঝিরিঝিরি পানি এসে পড়ায় চোখ খুলে তাকালো মায়রা৷ সীমান্ত মায়রার দু পাশের দেয়াল হাত দিয়ে অপলকে তাকিয়ে আছে মায়রার দিকে। শাওয়ার পানি বারবার চোখে মুখে এসে পড়ায় ভালো করে চোখ মেলতে পারছে না মায়রা। সীমান্ত আরো একটু এগিয়ে এসে মায়রার মুখের দিকে মুখ বাড়ালো।

-আপনি? আপনি--। আপনি তো ভিজে যাচ্ছেন?

-তাতে কি? একসাথে নাহয় ভিজলাম দুজনে। খুব কি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে আমার সাথে থাকতে?

-আপনি----। 

-শশশশশ। লেট মি ফিল ইওর বিউটি----।

-----------------------

-কি হলো? কিছু তো বলো?

-দেখুন---। আমি---। আমি রেডি না এখনো---। আমার সময় লাগবে--।

-সেটার কোনো দরকার নেই--। যা সময় নেয়ার অলরেডি নিয়ে ফেলেছো--। 

মায়রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে দিয়ে বাধা দিলো সীমান্ত। মায়রা কেঁপে উঠে চোখ বুজতেই কাঁধ বরাবর সীমান্তর ঠোঁটের ছোঁয়া অনুভব করলো। তার পরেই গলায়, ঘাড়ে, ঠোঁটে ঠোঁট জোড়া দিয়ে আক্রমণ করলো লোকটা। মায়রার গা থেকে ভিজে কাপড়গুলো খুলে নিয়ে একটা টাওয়াল জড়িয়ে দিলো সীমান্ত। তারপর নিজে ভিজে কাপড় বদলে টাওয়াল পেঁচিয়ে মায়রাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো।

-মিসেস সীমান্ত-আপনি তো দেখছি একেবারে পাটকাঠি---। ফুঁ দিলেই উড়ে যাবেন--। আমার বাচ্চা কাচ্চাগুলোকে ক্যারি করার জন্য হলেও তো খেয়ে দেয়ে একটু মোটা তাজা হতে হবে-----।

মায়রাকে এসব বলতে বলতে বিছানার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সীমান্ত। আর মায়রা নিজের শরীরটা শক্ত করে চোখ বুজে আছে। একটু পরেই সীমান্ত ধপ করে মায়রাকে বিছানার উপরে বসিয়ে দিলো। মায়রা ভয়ে ভয়ে চোখ খুলতেই চোখাচোখি হয়ে গেল সীমান্তের সাথে। তার চোখে মুখে আবার বিরক্ত ভাব ফুটে উঠেছে। বিরক্ত হয়েই মায়রার পাশে বসে পড়লো সে।

-কি ব্যাপার বলো তো? কোন সমস্যা? যাই বলছি কিছুতেই রেসপন্স করছ না! আজব?

-----------------------

-বলবে তো তোমার সমস্যাটা কি! কি প্রেমিক ট্রেমিক ছিল? তাকে ভুলতে পারছ না?

----------------------

-আচ্ছা--। সরি---। তাকাও আমার দিকে?

মায়রা মুখ তুলে সীমান্তর দিকে তাকাতেই লোকটার চোখেমুখে আবার একটা দুষ্টু হাসি দেখতে পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো৷ সীমান্ত হেসে মায়রাকে টেনে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। মায়রার গা থেকে টাওয়ালটা সরিয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবালো।

-লজ্জা পাওয়া হচ্ছে? প্রথম প্রথম সবারই হয়--। ব্যাপার না---।

ধীরে ধীরে সীমান্তর স্পর্শগুলো আরো গভীর হচ্ছে। আর মায়রা বিছানার চাদরটা চেপে ধরে দু চোখের পানি ফেলছে। আজ থেকে এই লোকটা ওর স্বামী। যখন তখন ওর শরীরটার উপরে অধিকার দাবি করার সার্টিফিকেট এখন তার আছে। সেটা হোক মায়রার ইচ্ছেয় বর অনিচ্ছায়। 

সকাল বেলা মায়রার ঘুম ভাঙতে একটু দেরিই হলো। ঘুম ভেঙেছে বললে ভুলে হবে বিছানায় কিছু একটা পড়ায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে ওর। কোনমতে ঘুমঘুম চোখে তাকাতেই সীমান্তকে দেখে তাড়াতাড়ি গায়ে বিছানার চাদরটা জড়িয়ে নিয়ে উঠে বসলো মায়রা। সীমান্ত হাসি হাসি মুখ করে মায়রাকে দেখে আবার নিজের কাজে মন দিলো।

-গুড মর্নিং বউ--। ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেসটা করে নাও--। আজকের পর থেকে আমার আর নিজের নাস্তা কিন্তু তোমাকেই রেডি করতে হবে---। 

-জি----। আম আপনি কি করছেন?

-আমি? ব্যাগ প্যাক করছি--। আজ দূপুরে বউ ভাতের ফাংশনটা শেষ হলে বিকেলেই আমরা ঢাকা চলে যাবো----।

-আজই!?

-হ্যাঁ তো? বিয়ের জন্য অফিসের কাজকর্ম কি সব বসে থাকবে? আরে? বসে আছো কেন? যাও শাওয়ার নাও---। মা ডাকছে কখন থেকে---। 

-হুম----। জি যাচ্ছি----।

-এই মায়রা শোনো?

-জি? 

-তোমার কাঁধের লাল তিলটা না খুব সুন্দর----। একেবারে ঘোর লেগে--।

মায়রা আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে চাদর পেঁচিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো৷ আয়নায় নিজের নিজের প্রতিবিম্বটা দেখে একবার কেঁপে উঠলো মায়রা নিজেই। স্বামী নামের লোকটা নিজের স্বামীত্ব ফলিয়েছে কাল রাতেই। আর সেটার ছাপ ওর শরীর জুড়ে ভেসে আছে এখনো৷ বিশেষ করে কাঁধের লাল তিলটায় তার হিংস্র দাঁতের দাগটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে ফুলে উঠেছে। শাওয়ার নিয়ে গতকাল রাতের রাখা ড্রেসটা পড়েই বের হলো মায়রা৷ লোকটা রুমে নেই দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মায়রা। তারপর ধীরে সুস্থে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হলো। বসার ঘরেই শ্বশুর, শাশুড়ি, সীমান্ত সবাই বসে কথা বলছিল। ওকে দেখেই চুপ করে গেল সবাই। হুট করে একটা জিনিস খেয়াল করলো মায়রা৷ শাশুড়ি খুব বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মায়রা বুঝতে পারলো না ও কি এমন করেছে যাতে উনি বিরক্ত হলো এমন। 

০৪!! 

সন্ধ্যা থেকেই আয়ান রাস্তার ধারে বসে আছে। ধীরে ধীরে রাত বাড়ছে সেদিকে আয়ানের হুঁশ নেই। হাতে ধরা জ্বলন্ত সিগারেটটাও একসময় জ্বলে ছাই হয়ে গেছে সেদিকেও খেয়াল নেই আয়ানের। চোখের সামনে মায়রার চলে যাওয়ার দৃশ্যটা ফুটে উঠছে বারবার। সেদিন মায়রা বাড়িতে যাওয়ার পর অনেকবার কল করেও কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছিল না। তাই নিজেই মায়রার মামার থেকে বাড়ির ঠিকানা নিয়ে সোজা মায়রাদের বাড়িতেই গিয়ে হাজির হয় আয়ান। মায়রার মামাকে কল করে সেটা জানাতেই পাঁচ সাত মিনিট পর মায়রার সাথে আয়ানের দেখা হয় মায়রাদের বাড়ির পিছনে বাগানটায়। মায়রার কান্না ভেজা চোখমুখ দেখেই মায়রার দিকে এগিয়ে আসে আয়ান। দুহাতে মুখটা তুলে ধরতেই মায়রা কেঁদে ফেলে।

-মায়রু? কাঁদছ কেন এভাবে? আর তোমাকে কল করেও পাচ্ছি না--। কি হয়েছে বলো না?

-আয়ান---। দুদিন পরে আমার বিয়ে----।

-মানে! কি সব বলছ এসব? বিয়ে মানে?

-বাবা-মা সব ঠিক করে ফেলেছে আয়ান---। আমি কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না----।

-তুমি বাসায় আমাদের সম্পর্কটার কথা বলো নি? আমি বাবা মাকে আসতে বলছি এক্ষুণি--। ওয়েট-।

-না আয়ান--। এখন আর কিছুই করার নেই---।

-মানে! কি হয়েছে বলো? 

-মাকে তোমার কথা বলেছি আমি। মা বলেছে সব কথা হয়ে গেছে। এখন আর কিছু হবে না---। বাবা ওদের কথা দিয়ে ফেলেছে----। আর কিছু হবার নেই আয়ান---। 

-মায়রা? কিসব বলছ? আর যাই হোক--। কোন কিছুই করার না থাকলে তুমি আমার সাথে এখনি চলো। কেউ যদি আমাদের সম্পর্কটা মেনেই না নেয় তবে আমরা নিজেরাই নিজেদের ছোট্ট একটা দুনিয়া সাজাবো--। সেখানে আর যাই হোক তোমাকে হারানোর ভয়টা থাকবে না।

-সেটা সম্ভব নয় আয়ান---। আমি তাথৈ আপুর মতো একই কাজ করতে পারবো না।

-মায়রা? কিসব বলছ? তুমি পারবে অন্য কাউকে নিজের জীবনে জায়গা দিতে?

-আমি জানি না আয়ান--। কিন্তু পালিয়ে গেলে বাবা এবার মরেই যাবে আয়ান---। আমি পারবো না--।

-মায়রা? কিসব বলছ তুমি এসব?

-আমি পারবো না আয়ান--। তুমি  চলে যাও----।

-তার মানে তুমি আমার সাথে যাবে না এই তো?

-সেটা সম্ভব----।

-ও আচ্ছা---। তার মানে এটা দাঁড়ায় বিয়েটা তুমি করতে চাইছ লোকটাকে? তাই তো মায়রা?

-আয়ান?

-মায়রা? ঠিক করে বলো? তুমি কি চাইছ? ওই লোকটাকে বিয়ে করতে চাইছ তুমি? তাই যেতে চাচ্ছো না আমার সাথে? কথা বলো---।

-আয়ান? কি বলছ?

-আর দশটা মেয়ের মতো তুমিও নিজের রঙ দেখিয়েই দিলে কি বলো? তা ছেলেটা কি করে বলো তো? স্যালারি কত? 

-আয়ান! কি বলছ এসব?

-ঠিকই বলছি---। শেষ বারের মতো জিজ্ঞেস করছি মায়রা৷ তুমি আমার সাথে যাবে কি না---।

----------------------

-বাহ! তোমার এই নিরবতা আমাকে আমার জবাবটা দিয়ে দিয়েছে। আসলে তোমরা মেয়েরা সত্যি সত্যিই নিজেদের রঙ দেখাতে ওস্তাদ৷ ভালোবাসবে একজনকে আর আরেকজনকে বিয়ে করে সেটেল্ড হবে। আর বলবে ফ্যামেলি মানবে না। বাহ!

-আয়ান?

-জাস্ট শাট আপ মায়রা৷ তোমার আর কোন কথা আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না মায়রা৷ আর একটাও নাটক করবে না। হয় তুমি আমার সাথে যাবে, নয়তো আজই তোমার সাথে আমার শেষ কথা--। তোমার সাথে কথা হচ্ছে না বলে পাগলের মতো ছুটে এসেছি। সেটা তোমার বিয়ের সুখবরটা শোনার জন্য নিশ্চয়ই নয় মায়রা৷ তোমাকে ভালোবাসি--। তাই তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখা আমার পক্ষে---।

-আয়ান?

-তুমি কি আমার সাথে আসছো মায়রা?

মায়রা শেষ পর্যন্ত চুপ করে আছে দেখে আয়ান রেগে গিয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে মায়রাকে সরিয়ে দিয়েই চলে এসেছে। একবারও ফিরে তাকায় নি মায়রার দিকে। গতকালই নিশ্চয়ই মায়রার বিয়েটা হয়ে গেছে। কথাটা ভাবতেই আয়ানের বুকের ভিতরটা ছাঁৎ করে উঠলো। কি এমন চেয়েছিল সে জীবন থেকে? তার পাগলিটাকে নিয়ে, পরিবারের সবার সাথে মিলেমিশে একটা সুখের সংসারই তো সাজাতে চেয়েছিল। যে সংসারটা হাসিতে মাতিয়ে রাখবে তার লাজুক মায়রাটা৷ কিন্তু হঠাৎ একটা দমকা ঝড় এসে ওর সমস্ত সুখের স্বপ্নগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল। রেখে গেল শুধু এক বুকভর্তি হাহাকার। 

বেশ অনেকবার কলিংবেল বাজার শব্দ পেয়ে আরিশার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। পাশেই টেবিল ক্লকটার দিকে তাকিয়ে দেখলো বেশ অনেক রাত হয়ে গেছে। এতো রাতে কে আসতে পারে সেটা ভেবে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করলো। কিন্তু তার আগেই হাতটা টেনে ধরলো পাশের মানুষটা। আরিশাকে উঠতে না দিয়েই আলতো করে বিছানায় বালিশটাকে ঠিক করে দিয়ে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো। 

-তাওহীদ? কে যেন এসেছে--। কখন থেকে কলিংবেল বাজাচ্ছে--। দেখে আসি----।

-তোমারই কেন যেতে হবে ম্যাডাম? চুপচাপ বসে থাকো--৷ আমি দেখছি কে এলো--। আর কথা শোনো না কেন? এই অবস্থায় একা একা কোথাও যেতে মানা করেছি না কতোবার? তুমি কি কখনো আমার কথা শুনবা না আরু?

-উফফ। আচ্ছা বাবা সরি--। কে এসেছে দেখো না? আবার বেল বাজাচ্ছে তো---।

-আচ্ছা বউটা--। দেখছি আমি--।

তাওহীদ রুম থেকে বেরিয়ে এসে ড্রইংরুমের লাইটা জ্বেলে দিয়ে বাসার মেইন ডোরটা খুলে আয়ানকে দেখে চমকে গেল৷ চোখমুখে কেমন একটা উদ্ভ্রান্ত ভাব ফুটে উঠেছে ছেলেটার৷ আয়ানও মুখ তুলে তাওহীকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো হাউমাউ করে। 

-তাওহীদ ভাই-----।

-আয়ান? কি হয়েছে তোমার? এমন করছ কেন? এসো ভিতরে এসো? ভিতরে গিয়ে বসবে চলো। আর বলো কি হয়েছে? কোন সমস্যা হয়েছে?

তাওহীদ কোনমতে আয়ানকে ধরে নিয়ে ড্রইং রুমে সোফায় বসিয়ে দিলো। আয়ান দু হাতে মাথা চেপে ধরে কাঁদছো। তাওহীদ বুঝতে পারছে না এই সবসময় হাসিখুশি থাকা ছেলেটার আজ কি এমন হয়েছে যাতে এতোটা ভেঙ্গে পড়েছে ছেলেটা। তাওহীদ অনেকবার জিজ্ঞেস করছে 'কি হয়েছে, আয়ান এমন করছে কেন'। কিন্তু আয়ান একটা কথারও উত্তর দিচ্ছে না। উঠে আরিশাকে খবর দিবে যে সেটাও করতে পারছে না ও। আয়ানের যা মনের অবস্থা তাতে একা ফেলে যেতেও ভয় করছে তাওহীদের। 

আরিশা কিছুক্ষণ পেটে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে তাওহীদের অপেক্ষা করলো। শেষে বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে ধীরে ধীরে পা নামালো।

-বাবুই? তোর বাবা এতো পচা কেন বল তো? গেছে তো গেছেই-। আসছেই না এখন। কে এলো এতোরাতে! উফফফ। চল আমরা গিয়ে দেখে আসি--। আমাদেরকে একা একা রেখে যাওয়া আজকে দেখাচ্ছি উনাকে-। দাঁড়া---।

আরিশা গুটিগুটি পায়ে ড্রইংরুমে এসে আয়ানকে দেখে বেশ অবাক হলো। তাড়াতাড়ি আয়ান আর তাওহীদের দিকে এগিয়ে এলো। তাওহীদ আরিশাকে দেখে নিজে উঠে সোফায় বসিয়ে দিলো। আরিশা তাওহীদকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। তাওহীদও ইশারায় জানালো যে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। আরিশা আয়ানের দিকে তাকিয়ে আলতো করে আয়ানের কাঁধে হাত রাখলো। ছেলেটা তখনো মাথা চেপে ধরে বসে আছে। ওর শরীরটা একটু পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছে। 

-আয়ান? কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন? বল না? কি হয়েছে?

-ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আরু৷ একেবারের জন্য চলে গেছে----।

-মায়রা? কোথায় গেছে? ঠিক করে বলবি তো কি হয়েছে?

-গতকাল মায়রার বিয়ে হয়ে গেছে আরু--। ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না আরু--। মরে যাবো--।

-হোয়াট!!

আরিশা আর তাওহীদ দুজনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো একে অন্যের। আয়ান মায়রাকে কতোটা ভালোবাসে সেটা আর কেউ না জানলেও আরিশা খুব ভালো করেই জানে। মায়রার সাথে প্রথম দিন কথা থেকে শুরু করে ওদের রিলেশনের সমস্ত খুঁটিনাটি কথাই আয়ান আরিশার সাথে শেয়ার করে। এই ছেলেটা যে পাগলের মতো ভালোবাসে মায়রাকে। এখন মায়রাকে ছাড়া ও কি করবে সেটা ভাবতেই ভয় করছে আরিশার। প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। ছেলেটা উল্টোপাল্টা কিছু করে বসবে না তো?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন