অস্পষ্ট প্রেমাবেগ - পর্ব ১০ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


১৯!! 

বড় আপা এতোক্ষণ ধরে সুপ্তিকে দেখছিলেন। মেয়েটা কান্নাকাটি করে পুরো কেইসের ফোকাস নিজের দিকে টানার চেষ্টা করছে দেখে কিছুটা বিরক্তই হলেন। পর মূহুর্তেই উনার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। মুখে মুচকি একটা হাসির রেখা টেনে জজের দিকে তাকিয়ে সুপ্তিকেই কাঠগড়ায় ডাকার অনুমতি চাইলেন তিনি৷ অনুমতিও পাওয়া গেল সহজেই। সুপ্তিও থতমত খেয়ে কান্না করে হেঁচকি তুলতে তুলতে কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ালো। 

-তা মিসেস সুপ্তি চৌধুরী? আপনি এতোক্ষণ কি বলছিলেন? আপনার হাসবেন্ড আপনাকে ডিভোর্স না করে অন্য একজনকে নিয়ে খুব সুখে খুশিতে আছে তাই তো? 

-জি--। সেটা কি সত্যি নয়? নাকি চোখের সামনে সত্যিটা দেখেও আপনি----?

-কি সত্যি না সত্যি সেটা ছয় বছর পর হুট করে এসে তো বোঝা যাবে না মিসেস চৌধুরী--। সে সব বাদ দিন। আপনার কি মনে হয়? আপনার হাসবেন্ড আপনাকে ডিভোর্স না দিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করে--।

-জি জি জি। কিশোর--। ওই তামান্না না কি--। আমার কাছ থেকে আমার স্বামী সংসার সব কেড়ে নিয়েছে। আর এখন আমার মেয়েটাকেও----।

-ভুল বললেন--। আবার নিজের ইচ্ছে মতো কাহিনী বানাচ্ছেন আপনি। তামান্নাকে কিশোর কোনদিনই বিয়ে করে নি---। ইওর অনার। মিস তামান্না হলো দীপ্তির গর্ভনেস।

-কিন্তু কিন্তু-----।

-আর রইলো দীপ্তির কথা---। ইওর অনার। এই অমূলক একটা কেইসের জন্য একটা ছ বছরের ফুটফুটে একটা বাচ্চাকে কেন প্রতিদিন এই আদালতে ভিড় ঠেলে আসতে হবে? এই ছোট্ট শিশুটি কার কাছে থাকতে চায় সেটা জানলেই আশা করি এই কেইসটার একটা মিমাংসা হয়ে যাবে----।

-দীপু আমার মেয়ে। ও মায়ের কাছেই থাকবে---।

-সেই সিদ্ধান্ত আদালত আর দীপ্তিকেই নিতে দিন মিসেস সুপ্তি। আপনার এখানে কোন কথা বলারই দরকার দেখছি না---।

জজের অনুমতি নিয়ে বড় আপা কিশোরের চেয়ারের সামনে এসে দীপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তারপর মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে দীপ্তির সাথে কথা শুরু করলেন বড় আপা।

-দীপ্তি মামনি? তুমি কার কাছে থাকতে চাও? বাবা? নাকি মা? বলো? 

-আমি মামনির কাছে থাকবো---।

দীপ্তির কথাটা শুনে কিশোর আর তামান্না দুজনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো৷ তামান্না শেষের দিকে একটা চেয়ারে বসে ছিল। দীপ্তি ওর মামনির কাছে থাকতে চায় শুনে থ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেল তামান্না। অস্ফুটে শুধু দীপ্তির নামটাই গলা দিয়ে বের হলো তামান্নার। তামান্নার কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েই দীপ্তি কিশোরের কোল থেকে নেমে ছুট লাগালো তামান্নার কাছে। কিশোর দীপ্তিকে আটকানোর মতো শক্তিই যেন পেল না হাত দুটোয়। অবাক বিস্ময়ে মেয়ের দিকে আর একবার বড় আপার দিকে তাকাচ্ছে কিশোর। বড় আপাও দীপ্তির এমন উত্তর শুনে চমকে উঠে কি বলবে বুঝতেই পারছে না৷ ততক্ষণে সুপ্তির উকিল সুযোগ পেয়ে নিজের মতো করে বলা শুরু করেছে যে দীপ্তি চায় তার মায়ের সাথে থাকতে। এবং মাননীয় আদালতের উচিত এই অবুঝ শিশুর মতামতের গুরুত্ব দেয়া। 

এতো কিছুর মাঝে ভিড় ঠেলে দীপ্তি তামান্নার কাছে পৌঁছে তামান্নাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। তামান্নাও কিছু একটা হারানোর ভয়ে দীপ্তিকে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে কোর্টরুমের সামনের দিকে আসতে শুরু করেছে। কিশোর, বড় আপা, সুপ্তি সবার দিকে এক নজর করে তাকিয়েছে তামান্না। সুপ্তির মুখে যুদ্ধ জয়ের হাসি। আর কিশোর? পরাজিত সৈনিকের মতো পাথরের মূর্তি হয়ে চেয়ারে বসে আছে। দীপ্তি তামান্নার হাত ধরে গুটিগুটি পায়ে সামনের দিকে এসে বড় আপার সামনে এসে দাঁড়ালো। 

-দিদুন? আমি বাবাই আর আমার মামনির সাথে থাকবো কেমন? আমরা যাই এখন? কাল আবার স্কুল আছে তো আমার---।

কথাটা শুনে সবাই একবার দীপ্তির দিকে তাকালো। জজ নিজেও বেশ অবাক হয়ে দীপ্তির মুখের দিকে তাকালো। তারপর হাসিহাসি মুখে দীপ্তিকে প্রশ্ন করলেন। 

-কার সাথে থাকবে তুমি বাবু?

-বাবাই আর মামনির সাথে---।

-আমি তো চিনি না তোমার বাবাই আর মামনি কে। একটু দেখিয়ে দাও দাদুকে?

-আচ্ছা---। 

দীপ্তি গুটিগুটি পায়ে তামান্নার হাত ধরে টানতে টানতে কিশোরের সামনে চলে এলে৷ তারপর একহাতে তামান্নার হাত ধরে রেখেই কিশোরকেও অন্য জড়িয়ে ধরলো দীপ্তি।

-এটা আমার বাবাই। আর এইটা আমার মামনি---।

কিশোর আর তামান্না দুজনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। দীপ্তি কি বলছে, কেন বলছে তার কিছুই মাথায় ঢুকছে না। তবে এইটুকু বুঝতে পেরেছে দীপ্তি সুপ্তির কাছে যাওয়ার কথা বলে নি।

 কেউ কিছু বলার আগেই পিছন থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে এলো।

-তামান্না দীপ্তির গভর্নেস হিসেবে জয়েন করলেও দীপ্তি ওকে নিজের মায়ের আসনেই বসিয়ে ফেলেছে। আর আমাদের সংসারটা তামান্নার উপরে এতোটা ডিপেন্ডেন্ট হয়ে গেছে যে আমি ভেবে রেখেছিলাম কিছুদিন পর কিশোরের সাথে তামান্নার বিয়েটা দিয়ে দিব। দীপ্তি তাই আগে থেকেই ওকে মামনি ডাকা শুরু করে দিয়েছে----।

কিশোর আর তামান্না পিছনে ফিরতেই দেখলো ফালেহা চৌধুরী কথাগুলো বলেছেন। কিশোর কিছু বলার আগেই কোর্টে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে মৃদু গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। জজসাহেব আরেকবার টেবিলে হাতুড়ি পেটা করে 'অর্ডার অর্ডার' বলে সবাইকে চুপ থাকার আদেশ দিলেন।

-মিস্টার কিশোর। আপনি একজন সিংগেল ফাদার হিসেবে দীপ্তির কাস্টাডি পাবেন না। আর ২য় বিয়ে করার পরও দীপ্তির কাস্টাডি নিয়ে অনেক ফর্মালিটি থাকবে--। তবে সেক্ষেত্রে মিস তামান্নার সাথে দীপ্তির বন্ডিং দেখে মনে হচ্ছে তিনি বেশ ভালোই দীপ্তির খেয়াল রাখতে পারবেন। এখন প্রশ্ন হলো আপনার মতামত কি? 

-জি? আমি----??

-আপনি কি মিস তামান্নাকে বিয়ে করে দীপ্তির লিগ্যাল কাস্টাডি পেতে চান? যদি সিংগেল প্যারেন্ট হয়ে মেয়ের কাস্টাডি চান তবে সেক্ষেত্রে আমরা দীপ্তির মাকেই দীপ্তির কাস্টাডির ব্যাপারে প্রেফার করবো--।

-না না। আমি এই উইকেই তামান্নাকে বিয়ে করবো। 

-ওকে---। তাহলে দীপ্তির কাস্টাডি পাচ্ছে তার বাবা কিশোর চৌধুরী এবং তামান্না। এক সপ্তাহ পর উনাদের ম্যারেজ সার্টিফিকেট সো করে কাস্টাডির লিগাল পেপার উনাদের হাতে বুঝিয়ে দেয়া হবে--।

জজ রায় শুনিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। সুপ্তি রাগে উকিলকে যাচ্ছেতাই বলে শাসিয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে গেছে। আর কিশোর আর তামান্না থ হয়ে পুরো ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করছে। একটু আগের জজের দেয়া সিদ্ধান্ত ঠিক কি পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ওদের জীবনে কে জানে?

২০!! 

এক সপ্তাহের পর।
কিশোরের রুমের ফুলে ফুলে সাজানো বিছানার উপরে টুকটুকে লাল বেনারসি পড়ে বসে আছে তামান্না। বেশ অনেকটাই রাত হয়ে গেছে। তামান্নার কোলে মাথা রেখে বকবক করতে করতেই একসময় ঘুমিয়ে গেছে দীপ্তি। আর তামান্না নিজের কোলে দীপ্তির মাথাটা টেনে নিয়ে বসে আছে চুপচাপ। কোথা থেকে ঠিক কি হয়ে গেল সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে তামান্না। আজ সন্ধ্যায় বেশ ঘটা করে অনুষ্ঠান করেই কিশোরের সাথে বিয়ে হয়েছে তামান্নার। ফালেহা চৌধুরী বা কিশোর কেউই তামান্নাকে বিয়ের ব্যাপারে জোর করে নি। উল্টো তামান্না নিজে থেকেই বিয়ের সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। সুপ্তির মতো একজন মহিলা ওর ছোট্ট ফুলের মতো দীপ্তির কাস্টাডি পাবে সেটা কিছুতেই মানতে পারে নি তামান্না। 

আরো বেশ খানিকটা দেরি করেই রুমে এসেছে কিশোর। কোথায় একটা অস্বস্তি লাগছে তামান্নার সামনে আসতে। তাই ইচ্ছে করেই দেরি করে আসা। ভেবেছিল তামান্না আর দীপ্তি দুজনেই ঘুমিয়ে গেলে তারপর রুমে ফিরবে৷ কিন্তু রুমে এসে বেশ চমকেই গেল কিশোর। রুমে ঢুকতেই এই চমকটা ওর জন্য অপেক্ষা করছিল সেটা কল্পনারও বাইরে ছিল কিশোরের। দীপ্তি গুটিগুটি হয়ে তামান্নার কোলে ঘুমিয়ে আছে। তামান্নাও ক্লান্ত হয়ে মুখ নামিয়ে বসে আছে। কিশোর বেশ খানিকটা হতভম্ব হয়ে তামান্নার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে একটু গলা খেঁকারি দিয়ে পিছনে ফিরে দরজাটা বন্ধ করলো।

লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে আবার তামান্নার দিকে ঘুরে তাকালো কিশোর। তামান্নাও মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়েছে। আর এতোক্ষণে তামান্নার নতুন বউয়ের মুখটা দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য কিশোরের যেন হার্ট বিট থেমে গেল। একটা সংকোচ বোধের কারণে বিয়ের পুরোটা সময় একবারের জন্যও তামান্নার দিকে তাকাতে পারে নি কিশোর। কিন্তু এখন তামান্নাকে দেখে চোখ সরিয়ে নিতে রীতিমতো নিজের সাথেই যেন যুদ্ধ করতে হয়েছে কিশোরকে। সদা সাদামাটা তামান্নার সাজহীন মুখটায় ভারি মেকাপ, পড়নে নতুন বউয়ের টুকটুকে লাল বেনারসি, গা ভর্তি গয়না সবটাই একেবারে ফুটে উঠেছে। যেন এই সমস্ত জিনিস শুধুমাত্র তামান্নার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। চোখের আইলাইনার থেকে শুরু করে পায়ের লাল আলতা, বা মাথার বউয়ের ওড়না থেকে শুরু করে হাতের টকটকে রাঙা মেহেদী, সবটাই যেন আজ তামান্নার স্পর্শে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে। 

আর কিছু চিন্তা করতে পারলো না কিশোর। নিজের সমস্ত মনের জোর এক করে চোখটা বন্ধ করে নিল। তামান্না এভাবে দেখতে দেখতে কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছিল ওর। আবার যদি সেদিনের মতো ভুলভাল কিছু করে ফেলে! এখন যদিও সম্পর্কের একই বাঁধনে বাঁধা পড়েছে ওরা। তবু যে সূক্ষ্ম দ্বিধা দ্বন্দ্ব মনের কোণে আছে সেটা কাটানো কি এতোই সহজ! মেয়েটা নিজের ভবিষ্যতের কোন তোয়াক্কা না করেই শুধু দীপ্তির জন্য বিয়েটায় রাজি হয়েছে এবং বিয়ে করেছে ও। অন্তত সেই কৃতজ্ঞতা থেকে হলেও মেয়েটার মতামতের সম্মান করবে কিশোর। অন্তত এই মূহুর্তে এসব ভেবেই নিজের অশান্ত মনকে শান্তনা দিলো কিশোর। তারপর ঘুরে বারান্দার দিকে পা বাড়ালো।

-তামান্না? দীপু তো ঘুমিয়ে গেছে--। কিছু কথা ছিল। যদি একবার বারান্দায় আসতেন---?

এদিকে কিশোর এসেছে টের পেয়ে মুখ তুলে তামান্না নিজেও চমকে গেছে। লোকটাকে ডিপ ব্রাউন কালারের শেরওয়ানিতে একেবারে কল্পলোকের রাজকুমারের মতো লাগছিল। তামান্নার এক মিনিটের জন্য মনে হলো ওর এই দুঃখঢাকা জীবনটা থেকে মুক্তি দিতে রূপকথার কোন একটা গল্প থেকে কোন এক জাদুবলে বেরিয়ে এসেছে লোকটা। কিন্তু তামান্নার স্বপ্নের দুনিয়া থেকে বাস্তবে ফিরে এলো যখন কিশোর ওর দিকে তাকানো থেকে হুট করে চোখ বুজে নিয়েছে তখন। নিজেকে সামলে নিয়েছে তামান্নাও। 

কিশোর কিছু বলতে চায় বলায় দীপ্তিকে আস্তে করে বালিশে শুইয়ে দিয়ে গুটিগুটি পায়ে বারান্দায় এসে কিশোরের পাশে এসে দাঁড়ায় তামান্না। লোকটা কিছু একটা ভাবছে। কি এতো ভাবছে! বিয়েটা করে তার মনে কোন দ্বিধা নেই তো!!

-তামান্না? একটা কথা বলার ছিল---।

-জি বলুন? 

-না মানে!! তুমি কি খুব টায়ার্ড? তাহলে চেইঞ্জ করে ঘুমিয়ে যাও--। কাল নাহয় বলবো??

-নাহ নাহ। বলুন না? তেমন টায়ার্ডও না যে কিছুক্ষণ কথা শুনতে পারবো না--।

-আম---। না মানে--। কাল আমাদের ম্যারেজ সার্টিফিকেটটা আদালতে জমা দিতে হবে--। তোমাকেও সাথে যেতে হবে--। তাই ভাবলাম----।

-জি আচ্ছা---।

-আম---। তামান্না?

-জি??

-না মানে? বলছিলাম যে-----।

-ভয় পাবেন না কিশোর সাহেব। এই বিয়েটা আপনি শুধু দীপ্তির কাস্টাডির জন্যই করতে রাজি হয়েছেন-সেটা আমি জানি। আর আমিও---। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে দীপ্তির গর্ভনেসের জবটা ভালো করে করতে পারি--। ভয় নেই। এর বিনিময়ে কিছুই চাইব না কখনোই---। আপনি শুধু দেখবেন আগের মতো যেন প্রতিমাসে আমার সেলারিটা দীপশিখায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। 

তামান্নার কথাটা একেবারে বুকে এসে লাগলো যেন কিশোরের। চমকে তামান্নার মুখের দিকে একবার চাইলো সে। তামান্না বারান্দার গ্রিল ধরে নিকষ অন্ধকারে ঢাকা বাইরের শূন্যতা দেখছে। কেমন একটা বিমর্ষতা এসে ভর করেছে মেয়েটার চোখেমুখে। কিশোরের ইচ্ছে করছে একবার শক্ত করে এই মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে। অন্তত একটু উষ্ণতার স্পর্শ পেয়ে যদি মেয়েটার মনটা একটু হালকা হয়। কিশোর হাত বাড়িয়ে তামান্নার কাঁধে হাত দিতে গিয়েও থেমে গেল। তামান্নাও সেটা টের পেল। আর সাথেসাথেই টুপ করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো তামান্নার চোখ বেয়ে।

-কাউকে কাছে টানতে গেলে অধিকার নিয়ে হাত বাড়াতে হয় মিস্টার কিশোর। আপনি দয়া করে এসব নিয়েও চিন্তা করবেন না। ভাববেন না আমি কষ্ট পাচ্ছি বা---। নিজের জায়গাটা আমি খুব ভালো করেই জানি কিশোর সাহেব। তাই আকাশ কুসুম স্বপ্ন বুনতে চাই না---। দীপ্তির মামনি হয়ে উঠতে পারি না পারি- আপনার স্ত্রী হয়ে ওঠার চেষ্টা করার মতো দুঃসাহসটা কখনোই দেখাবো না। সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন---।

----------------------

-আর একটা অনুরোধ। যে গেছে তার জন্য নিজের জীবনটা নষ্ট না করে আবার নতুন করে শুরু করুন--। আপনার কোন সিদ্ধান্তেই আমি বাঁধা হবো না কখনোই--। তেমন যদি হয়----। আমি-আমি নাহয় আজীবন দীপ্তির গর্ভনেস হয়েই থাকবো---। সেসব নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না। আপনি আপনার মতো করে নিজের জীবনটা শুরু করুন---। প্লিজ।---। কাল সকালেই তো যেতে হবে আবার--। ঘুমিয়ে পড়ুন। অনেক রাত হলো--। 

কথাগুলো বলে আর দাঁড়ালো না তামান্না। এক ছুটে রুমে চলে গেল৷ আর কিশোর তামান্নার ওর যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। কিশোর ভাবার চেষ্টা করছে। এই মেয়েটা কি দিয়ে তৈরি সেটাও হয়তো জীবনে কোনদিন বুঝতে পারবে না ও। আসলেই নারী মনে কি চলে সেসব বোঝা পুরুষের অসাধ্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন