- বারিকের কথা শুনে আদরী সহ সবাই অবাক হয়ে তিতিরের দিকে তাকালো। এই তিতির উনি কি বলছে কথাটি হাবিব সবার মাঝে বলে ফেলল।
|
- বড় আব্বু আমি জানিনা। কে উনি আর কেনই বা আমাকে এমন প্রশ্ন বিদ্ধ করছে বলে কেঁদে উঠল তিতির।
|
- এবার বারিক থতমত খেয়ে বলল ভুল ঠিকানায় আসিনি তো? বারিক এবার এসআই কে কল দিতেই উনি রিসিভ করলেন?
|
- হ্যাঁ মেয়র সাহেব বলেন। ম্যাডামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন! ম্যাডাম ছাড়া আমরা আপনার ছেলেকে ছেড়ে দিবনা কিন্তু!
|
- আপনি যাকে ম্যাডাম বলছেন সেতো ১৮/১৯ বছরের মেয়ে। নাম তিতির। যার বাবা এরশাদের চাউলের আরত আছে। এরাই তারা?
|
- জ্বী তারাই। ম্যাডাম কে ফোন দেন আমি কথা বলছি।
|
- বারিক লাউডস্পীকারে ফোন রেখে তিতিরকে ফোন দিল। মা কথা বলো।
তিতির চোখের পানি মুছে কাঁপা কন্ঠে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে এসআই বলল ম্যাডাম এত ভয় পাচ্ছেন কেন! আমরা কেন আছি তাহলে?
শুধু একবার বলেন কুত্তার বাচ্চাটার কি হাল করি। জিবনেও ১৪ শিকের এই ঘর থেকে বের হতে পারবেনা। আর ওর বাপেরও কি ব্যবস্থা করবো সেটা দেখলেই ওরা শিউরে যাবে। সামান্য মেয়রের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আপনার গায়ে হাত দেওয়া! ওরা জানেনা কার গায়ে হাত দিয়েছে। ওদের গুম করে দিব। বারিক সিদ্দিক নামে যে কারো রাজনিতিতে জন্ম হয়েছিলা সেটার নাম ও নিশানা মিটে দিব।
|
- কথাগুলো শুনে বারিক সিদ্দিকের গলা শুকিয়ে গেল। কারন ইতিমধ্য অনেক কিছু ঘটেছে। ওদের ক্ষমতা ও দেখেছে যাদের কাছে বারিক হাতের পুতুলের সমানও যোগ্যতা রাখেনা।
মা আমি দু'হাত জোড় করে বলছি এত বড় বিপদে আমাকে ফেলনা। আমার ছেলে যা অপরাধ করেছে তার শাস্তি আমি নিজে হাতে দিব। আর তাছাড়া এমনি অনেক শাস্তি পাইছে ও বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল বারিক।
|
- তিতির অবাক হয়ে এরশাদের দিকে তাকাতেই এরশাদ অনুমতি দিল চোখের ইশারায়।
স্যার ছেলেটারে ছেড়ে দেন। আমি ওকে ক্ষমা করে দিছি বলে এসআই কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিল তিতির। তারপর ফোন বারিকের হাতে দিয়ে বলল আপনার ছেলেকে ওনারা ছেড়ে দিবে। আপনি ওরে নিয়ে বাসায় যান বলে তিতির ওর রুমে গেল।
|
- অনেক শুকরিয়া জানিয়ে ওরা সবাই চলে গেল। খায়রুল মেম্বার টাস্কি মেরে তখনও বসে আছে। হা রে এরশাদ তোর মেয়ের পাওয়ার এত বেশি আগে জানতাম না তো? শেষে কিনা মেয়র তোর মেয়ের পায়ে পড়ল। মাথায় কিচ্ছু ঢুকছেনা। তোর মেয়ে দেখতে খুবই সুন্দর সাবধানে রাখিস ভাই বলে খায়রুল ও চলে গেল।
|
- এবার এরশাদের বেশ চিন্তা হতে লাগল। এমন ঘটনা কেন ঘটল কিছুই বুঝছেনা।
হাবিবও কিছু বলতে গিয়ে আর বলতে পারল না।
|
- মাইয়া আমার বোরখা পরে যাতায়াত করে কিন্তু তলে তলে ঠিকি সব কাজ করে বেরায়। আদরী কথাগুলো বলতেই হাবিব চলে যায়। কারন হাবিব ভাসুর হয়ে এসব কথাবার্তায় কতক্ষণ থাকবে! আদরীর যা মুখ?
|
- আদরী চুপ কর। মানুষকে শুনানোর কোন দরকার আছে? তোর জন্য দেখছি আরও মানসম্মান যাবে।
|
- চুপ করে কেন থাকবো! ঐ মাইয়ার জন্য তুমি আমার গায়ে হাত তুলছো এখন বোঝ তলে তলে কি করে। ঐ ছুরত দিয়ে কোন বড়লোকের ছেলেরে মজাইছে। বড়লোকদের চিনো না! আজ একটা মেয়ে কাল আর একটা মেয়েদের ব্যবহার করে। ক্ষমতার দাপটে সবাইকে চুপ করে রাখে।
আদরীর কথায় এরশাদ আর কিছু বলে না। মনে মনে তিতিরেরই দোষ দেই। অল্প বয়স তাই এমন একটা ভুল হয়ত করেছে।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
- তিতির রুমের ভিতর বসে আছে মাথা নিচু করে। কোথা থেকে কি হয়ে গেল। যার সাথে এতদিন চিঠির মাধ্যমে কথা হত সে আর যাই হোকনা কেন কোন সাধারন মানুষ না।
সেকি আমাকে ব্যবহার করছে না করুনা করছে? আমি যে খুব ভালবেসে ফেলেছি। কি করি এখন আমি। আবার আমার ভাগ্য নিয়ে খেলতে শুরু করছে আল্লাহ্।
কে সে কে সে মনে করতে করতে তিতিরের মনে পড়ল সেই আক্সিডেন্টের পর থেকে আমার কাছে নিয়মিত চিঠি আসে। যে আমাকে বাঁচিয়েছে যার কথা নার্সরা বলছিল এই ব্যাক্তিটি সেই নয়তো? একবার খোঁজ নিলে কেমন হয়!
এতদিনের কথা কি তাদের মনে আছে? হয়তবা সেই নার্স ই নেই। সে নিয়মিত আমার খোঁজ রাখে কিন্তু আমি তাকে খুঁজে পাইনা। অহ্ আল্লাহ্ সাহার্য্য করো আমায়।
|
- সেই দিনের পর থেকে তিতিরকে আর বাহিরে যেতে দেয়না। এরশাদও অনেক বকা ঝকা করে তিতিরকে। তিতিরের কষ্ট গুলো যেন বেড়েই গেল। বাসার সমস্ত কাজ সামলানো থেকে আরও অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়।
কথা গুলো আর থেমে থাকলো না। পুরো পাড়া সহ গ্রামে রটে গেল। তিতির কারো সাথে রিলেশন করে সে অনেক ক্ষমতাধর ব্যাক্তি। তিতিরকে মারার জন্য যেই মুরব্বি একদিন আদরীকে গালি দিয়েছিল সে পর্যন্ত বলল তোরে ভাল ভাবছিলাম কিন্তু তুই তলে তলে এত কিছু করে বেরাস সেটা জানতাম নারে। আদরী আর তোরে এমনি এমনি ধরে মারেনা। তুইও শেষ পর্যন্ত তোর মায়ের মত হইলি! আমের গাছ থেকে আমই ধরে কোন দিন আর কাঁঠাল ধরে না বলে অনেক বকাঝকা করল তিতিরকে। আদরী হয়ে তোরে বাড়িতে রাখছে অন্য কেউ হলে খেঁদাইয়া বাড়িত থেকে বাড়ই কইরা দিত। তোর সাথে যেই মিশবে তাই খারাপ হয়ে যাবে।
|
- রবিন তিতিরের সাথে একদম মিশবিনা বলে জোড়ে ধমক দিল মর্জিনা। ও তলে তলে এত কিছু করছে তুই কি কিছুই জানিস না?
|
- মা বাদ দাও তো ওসব কথা। নিজের মা না থাকলে জিবনটা যে কতটা খারাপ হয় সেটা তিতিরকে দেখে আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। ও কি কম নির্যাতন সইছে আদরী চাচীর কাছ থেকে?
আর তুমি সেইদিন ঝগড়া লেগে তিতিরকে কতগুলো মাইর খাওয়ায় নিছ। সবাইকে চেনা হয়ে গেছে। এই জন্য আল্লাহ্ তোমাকে কোন মেয়ে দেয়নাই। ৩ টা ছেলে নিয়ে কতটা রাজত্ব করবা করো বলে রবিন বাড়ির থেকে বের হয়ে এল।
|
- তিতির পুকুরে কাপড় কাঁচতেছিল এমন সময় আবার সেই তমাল এসে তিতির বলেই পুকুরে ঝাঁপ দিল।
|
- জুতা দিয়ে ম্যার খাওয়ার জন্য আমার পিছে লাগিস তমাল! দেখছিসতো আমি কাপড় কাঁচছি তাহলে তুই এভাবে পানি গুলো ঘোলা করে দিলি কেন বলে তিতির আরও কয়েকটা বকা দিল তমালকে।
|
- সবাই যা বলছে সব কি সত্যি তিতির! আমি তোকে খুব ভালবাসি। তুই রাজি থাকলে কারো কথা মানবোনা তোকে বিয়ে করেই ঘরে তুলে নিব। আমি বাবার একটাই ছেলে তাই ফেলে দিতে পারবেনা।
|
- সবার মুখে শুনতে পাসনা আমার প্রেম আছে! তাহলে কোন সাহসে আবার বিয়ের প্রস্তাব দিস কুত্তা। বাবারে ডাকবো?
|
- ডাক,,,,, তাতে আমার কি! আমি ব্যাটা ছেলে আমার কিছুই হবেনা যা হবার তোরই হবে। তবে ভালয় হবে তোরে বিয়ে করার জন্য ১ ধাপ এগিয়ে যাবে বলেই তমাল ডুব দিল।
তমাল পানি থেকে উঠেই সামনে রবিন কে দেখতে পেয়ে কিছুটা থমকে গেল। তমাল রবিনকে দেখে যমের মত ভয় পায়। একদিন রবিনের হাতে সেই ম্যার খাইছে।
|
- কিরে তমাল তখন কি বললি তিতিরকে! আর একবার বলে দেখ তোরে এই পুকুর থেকে জিবনে আর উঠতে দিব না। বল একবার বল বলেই রবিন পানিতে নামল।
|
- তিতির মুচকি হাঁসি দিয়ে বলল রবিন তমাল নাকি আমাকে বিয়ে করতে চায়। বাপের অনেক সম্পত্তি আর একটাই ব্যাটা বলে আমাকে খুব সুখে রাখবে। কি তমাল এগুলোই বলছিলি তাই না?
|
- তোর বাপের সম্পত্তির গোষ্ঠী কিলায় বলেই রবিন তমালের কাছে চলে গেল। এবার তমাল বলল কই আমি কিছু বলি নাইতো। তিতির বোন আমার কি যা তা বলছিস! তুই তো আমার বোনের মত। আমিতো এমনি গোসল করতে আসছি বলতেই রবিন তমালের ঘাড় ধরেই পানিতে ঠাসিয়ে ধরে।
আর তিতিরের পিছে লাগবি বল বলেই পানি থেকে মুখ তুলল তমালের।
|
- দ্বারা বাবারে বলে দিব বলেই তমাল রবিনকে ধাক্কা দিতেই রবিন আবার তমালকে পানিতে ঠেসে ধরে। আমার গায়ে হাত তুলিস! আগের ম্যারের কথা ভুলে গেছিস? চল তোর বাপের কাছেই যাবো। তারপর যা বলার বলছি। তোর বাপই তোরে ঘাড় ধরে বাসা থেকে বের করে দিবে।
|
- রবিন ছাড় ওকে। মা দেখলে শেষে ঝামেলা হবে। তিতিরের কথা শুনে রবিন তমালকে ছেড়ে দিয়ে বলল যা ওঠ। যদি এদিক ওদিক তাকাইছিস তাহলে আবার চুবাবো।
|
- তমাল কাঁশতে কাঁশতে উঠে গেল। চোখ লাল করে তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল ভাল করে বলছি বলে এরকম ব্যবহার করলি! আমার সময় আসুক তারপর তোর কি অবস্থা করি তখন কান্দে কুল পাবিনা।
|
- ঐ খাড়া লুচ্চা তমাল এখনো দাড়িয়ে আছিস বলেই রবিন উঠতেই তমাল চলে গেল। রবিন তিতিরে কাঁচা কাপড় গুলো একটু দুরে গিয়ে ধুতে লাগল। এত কাজ কিভাবে করিস তিতির?
|
- সাবধানে ধো রবিন। একটা কাপড়ও যেন হারিয়ে না যায়। তাছাড়া মা আমায় আস্ত রাখবেনা।
আর আমার এসব ধুয়ে অভ্যাস হয়ে গেছে। এমনি অনেক দেরি হয়ে গেছে বাসায় যেতে হবে। এখনো অনেক কাজ বাঁকি আছে। ওগুলো নিয়ে আয়।
|
- রবিন সব কাপড় ধুয়ে দিয়ে বলল তিতির চাচার মনে কিছু একটা চলছে। যানিনা তোর কপালে কি আছে। আমার নাম্বারটা মুখস্ত করে রাখছিস তো? কিছু হলেই আমাকে কল দিস বলে তিতিরকে ওদের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে রবিন চলে গেল।
|
- তিতির খুব চিন্তিত মনে বাসায় ঢুকল। আদরী যেন তিতিরের অপেক্ষায় করছিল।
কোন কথা না বলে কাপরের গামলা টা রেখে দিয়েই তিতিরের ভিজা গায়ে কয়েকটা মুটকি মেরে বলল আরও কয়জনরে তোর রুপে ফাশাইছোস? তমালের যদি কিছু হয়ে যেত তার দায় ভার তুই নিতি বলে আরও কয়েকটা থাপ্পর মাড়ল। আমার জিয়ের যম হয়ে গেছে। ঐ কবে ঘাড় থেকে নামবি বল বলেই আবার একটা থাপ্পড় মারল আদরী।
|
- তিতির ম্যার খেয়ে কাপড় নিয়ে সোজা ছাদে গিয়ে শুকাইতে দেয়। সব কিছু সয়ে গেছে যেন ওর। তাই কথায় কথায় আর কান্না করে না আদরীর সামনে। আজ ভিজা গায়ে মারার জন্য কষ্টটা একটু বেশিই হচ্ছে। তবুও নিচে এসে গোসল সেরে রান্নার কাজে লেগে গেল। তিতির দেখল আদরী ওর রুমে গেল এবং রুম তল্লাসি করতে লাগল। কেন গেল বুঝতে না পেরে তরকারিটা তুলে দিতেই ওর মনে পড়ল যদি চিঠি গুলো পেয়ে যায় তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। কথা গুলো ভেবেই তিতিরে হাত-পা কাঁপতে লাগল। এখন রুমেও যাওয়া যাবেনা। আল্লাহ্ চিঠি গুলো যেন খুঁজে না পায়। দয়া করো আল্লাহ্।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
- বিকেলে তিতির বসে আছে ইভাকে নিয়ে। মনে অনেক ভয়। একটু পড়েই হয়ত বড় রকমের ঝড় উঠবে। কারন আদরী তিতিরের সব চিঠি পেয়ে গেছে। কি হবে জানে না। নিজের কয়েকটা জামার ভাজের ভিতর ছাড়া আরও কিছু জায়গায় ও গুলো লুকিয়ে রাখছিল। কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা। তারমানে মা ওগুলো পেয়ে সরিয়েছে। কি করবে বুঝিয়ে উঠতে পারছেনা তিতির।
|
- আজ জলদিই এরশাদ বাসায় চলে এসেছে। হয়ত আদরী কল দিয়ে ডাকিয়ে এনেছে তাড়াতাড়ি।
ফ্রেস হয়েই এরশাদকে ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করেদিল আদরী। কেন দিল সেটা তিতির বেশ ভালো করেই বুঝল।
|
- তিতির ভয়ে ভয়ে আল্লাহর নাম নিচ্ছে। এমন সময় এরশাদ রুমে এসে বলল তিতির ছেলেটার নাম কি আর সে কোথায় থাকে।
|
- যা আশংকা করেছিল তাই হল। বাবা কার কথা বলছো?
|
- কার কথা বলছি তুই বুঝতে পারছিস না! আর কত ন্যাকামি করবি বলেই ঠাশশশ্ করে চড় বসিয়ে দিল ওর গালে।
এইসব করার জন্য তোকে লেখাপড়া শিখিয়েছি? তোরে লেখাপড়া না শিখিয়ে মূর্খ বানিয়ে ঘরে বসিয়ে রাখাই ভালো ছিল। তোর জন্য বাহিরে মুখ দেখাতেও পারিনা। এই সহজসরল চেহারার মাঝে এত প্যাঁচ তোর!
|
- তিতির চুপকরে দাড়িয়ে থাকল। কি বলবে আর। বাবা যে ওর আর আপন নাই। বাবা আমার কথা একবার শোন.....
|
- কথাটি শেষ করতে পারেনা তিতির। আদরী এসেই চুলের মুঠি ধরে বলল তাহলে এগুলো কি বলেই ধাক্কা মারল তিতির কে।
তিতির গিয়ে পড়ল একটা চিয়ারের উপর। চিয়ারের কোনা তিতিরের পেটে এসে লাগল। ওখানেই তিতির বসে পড়ল হাতটা পেটে দিয়ে। মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কথা বলার আর ক্ষমতা থাকেনা তিতিরের।
ঐ ন্যাকামি করোস বলেই হাত ধরে টেনে আনল আদরী।
তুমি যাও তোমার মা সহ ওদের ডেকে আনো। আমি নাকি ওকে নির্যাতন করি শুধু! কেন করি সবাই একটু দেখুক।
|
- এরশাদ ওখানে যাওয়ার আগে ইভান চলে গেছে দাদীরে ডাকতে। ও দাদী মা তিতির আপুকে মেরেই ফেলল বলে ইভান কাঁদতে লাগল।
|
- আজ যা হয় হবো আদরীরে আজ আর ছাড়ছিনা বলেই হাবিব আর শামীমকে ডেকে নিয়ে গেল মনুজান। সাথে চাচী দুইটাও গেল ওদের সাথে। ওদের বাড়ীর কাছে যেতেই এরশাদকেও দেখল এদিকেই আসতে।
|
- কিরে এরশাদ আদরী আবার তিতিরকে মারছে?
|
- আদরীর কোন দোষ নাই মা। আমিই আমার মেয়েকে মানুষ করতে পারিনি বলে ওদেরকে বাসায় নিয়ে গেল এরশাদ।
|
- মনুজান আধা দৌড় দিয়ে তিতিরের কাছে এসে দেখে আদরী ওকে মারছে। মনুজান আদরীর হাত ধরে টেনে এনে তিতিরকে জড়িয়ে ধরে বলল ওকে মেরে ফেলবি নাকি! কোন সাহসে ওকে গরু পিটা করছিস! তোর মনে একটুও দয়া হবেনা?
|
- আদরী ঘর থেকে চলে গেল। ততক্ষনে সবাই ঘরে চলে এসেছে। তিতিরের কনুই দিয়ে রক্ত পড়ছিল। মেয়েটারে বিয়ে দিয়ে দে আর চোখের সামনে নির্যাতন সহ্য করতে পারছিনা। এরশাদ তোর মত এতবড় কুসন্তান জন্ম দিছি এখন আমার আফসোস হচ্ছে।
|
- আম্মা আপনি একটু বেশিই কথা বলেন। কুসন্তান আপনি জন্ম দেননি জন্ম দিছে আপনার ছেলে। আপনার তিতির কি করেছে দেখেন বলে সব চিঠি ছুড়ে মারল মনুজান আর তিতিরের গায়ে। পড়েন এগুলো আপনার নাতনীর রঙ্গতামাশা। তিতির এবার চুপ করে ঝুপ ঝুপ করে কেঁদেই চলছে। ওর চাচা-চাচী ও চিঠি দেখে চুপ করে গেল। এটা কি ছিল। তিতির তুই এত নিচে নেমে গেছিস!
|
- ওর একাই দোষ! আমারতো মনে হয় আপনার ছেলেও সব কিছু জানে। তিতির এতটা চালাক না এতে আপনার ছেলেরও মদত আছে। মর্জিনা আর আদরীর মধ্য টুকটাকি কথা শুরু হল।
অনেক রাত পর্যন্ত ওদের বাসায় মিটিং চলল। এরশাদ কোথায় কোথায় যেন ফোন দিল। ফযরের আযানের আগেই চলে আসতে বলল। একটু পরে যে যার বাসায় চলে গেল।
|
- তিতিরের চোখে ঘুম নেই আর। সারারাত চিন্তায় চিন্তায় কেটে দিল। রবিন অনেক বার ফোন দিল তিতিরকে। শেষে বাধ্য হয়ে তিতির রিসিভ করে বলল কি হয়েছে এতবার ফোন দিচ্ছিস কেন?
|
- তিতির ভাল করে আমার কথা শোন বোন। এদের মতলব ভালো ঠেকছেনা। তুই যাবি আমার সাথে! যেখানে দু-চোখ যায় সেখানেই যাবো। এরা তোকে মনে হয় আর বাঁচতে দিবেনা। মা ও তোকে খুব গালি দিচ্ছে। আসল ঘটনা কি হইছে বুঝতেও পারছিনা। আগে কখনো দেখিনি মা তোর উপর এত রাগতে।
|
- কই যাবো রবিন বলে ডুকরে কেঁদে উঠল তিতির। বাহিরের জগৎ যে আরো কঠিন। আমার জন্য আর কেউ কষ্ট পাক এটা চাইনা আমি। যদি কোথাও নিয়েও যায় চলে যাবো। এমনি আমার জন্য চাচী-চাচা হয়ত তোকে অনেক বকা দিয়েছে।
|
- তিতিরের কথা শুনে রবিনের চোখে পানি চলে আসল। তিতির চিন্তা করিসনা আমি তো তোর ভাই হই। হোকনা চাচাতো ভাই কিন্তু তোকে আমি বোন এবং প্রিয় বন্ধু হিসাবেই ভাবি। আমি কিন্তু তোর ৮ মাসের বড় তাই বড় ভাইয়ের কথা শুনতে হয়।
আমার নাম্বারটা লিখে নে না হয় মুখস্ত করে রাখিস।
দু-ভাই বোনে ফোনের এপারে আর ওপাড়ে কান্না করেই চলছে। রবিন এখনো জানেনা এটাই তিতিরের সাথে তার শেষ কথা হচ্ছে।
|
- তিতির দ্রুত ফোনটা বন্ধ করে সিম খুলে নিয়ে অন্য সিম ঢুকিয়ে রাখল তারপর ফোন টেবিলে রেখে দিয়ে বসে পড়ল।
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦
- এখনো ফজরের আযান দেয়নি এমন সময় এরশাদ এসে তিতিরকে ডেকে তুলল। তিতির যা রেডী হয়ে নে। তোর ফোনটা দেখি বলেই টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে নিল এরশাদ।
যা জলদি রেডী হ বলেই এরশাদ আদরীকে ডেকে চলে গেল।
|
- তিতির আদরীর ভয়ে ফ্রেস হয়ে দ্রুত রেডী হতেই আদরী ব্যাগ নিয়ে এসে তিতিরের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল বাহিরে। বাহিরে একটা কার দাড়ানো আছে সেখানে তুলতেই তিতির বলল বাবা আমরা কই যাচ্ছি!
এতেও এরশাদের কোন রিপ্লাই আসেনা। কারের ভিতর ঢুকে দেখে দুই চাচাও আছে। তিতির খানিকটা সাহস পেয়ে কারে গিয়ে বসে পড়ল। এরশাদ উঠতেই গাড়ী ছেড়ে দিল এবং খুব দ্রুত চলতে লাগল।
|
- বাবা আমরা কই যাচ্ছি। কোন জবাব না পেয়ে হাবিবকে জিঙ্গাসা করল বড় আব্বু আমরা কই যাচ্ছি। আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো বলতেই এরশাদ ঠাশঠাশ করে গাড়ীর মধ্যই তিতিরকে চড়াইতে লাগল। তোকে জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছি পাপ মোচন করতে...............।