বকুল ফুলের মালা - পর্ব ০৩ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


০৫!! 

আয়ানের এমন ভেঙে পড়া দেখে আরিশা আর তাওহীদ দুজনেই কষ্ট পেল। ছেলেটাকে সবসময় হাসিখুশি থাকতেই দেখেছে ওরা। আয়ানের সদা হাসোজ্জ্বল মুখটায় এমন দুঃখের ঘনঘটা দেখতে তাই একেবারেই ভালো লাগছে না ওদের দুজনেরই৷ আয়ান আবারও মাথা চেপে ধরে বসে আছে দেখে আরিশা ভাবার চেষ্টা করলো। মায়রাকে দু একবার দেখেছে ও। মেয়েটাকে দেখে ভিষণ ভালো আর লক্ষী একটা মেয়ে মনে হয়েছে ওর কাছে৷ কিছু একটা তো হয়েছে যাতে মেয়েটা বাধ্য হয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছে। হয়তো পরিবারের কথায় বা অন্য কিছু। কিন্তু এই ছেলেটাকে এখন এসব কি করে বুঝাবে আরিশা। ছেলেটা তো পাগলের মতো ভালোবাসত। 

আরিশা তাওহীদের দিকে তাকালো একবার৷ তাওহীদও বেচারা থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যে ছেলেটা ওর ভালোবাসাটা পূরণ করতে এতোটা সাহায্য করেছে তার নিজের ভালোবাসাটাই তার থেকে দূরে চলে গেছে। কথাটা ভাবতেই খারাপ লাগলো ভিষণ তাওহীদের। আরিশাও ওর দিকে তাকিয়েছে দেখে একটু সাহস দেয়ার জন্য হাসল তাওহীদ। তারপর আয়ানের পাশে বসে কাঁধে হাত রাখলো।

-আয়ান? এভাবে ভেঙে পড়ো না ভাই। ধৈর্য্য ধরো। সব ঠিক হয়ে যাবে--।

-কিচ্ছু ঠিক হবে না তাওহীদ ভাই। আর ঠিক হওয়ার মতো কিছু নেই--। আর এতো রাতে এসে আপনাদের দুজনকে বিরক্ত করলাম--। সরি--। সরি রে আরু--। 

আরিশা বিরক্ত হয়ে আয়ানের দিকে চোখ রাঙালো।

-একটা লাগাবো ধরে আয়ান। কি খারাপ একটা ছেলে রে তুই--। আমার বাসায় আসতে তোর হিসেব করে আসতে হবে নাকি!

-তাও-। এতো রাতে আসাটা ঠিক হয়নি৷ তোর রেস্ট করা উচিত--। আর আমি এদিকে আরো টেনশন দিচ্ছি--। সরি--।

-থাপ্পড় লাগাবো বেদ্দপ ছেলে--। রাত অনেক হয়েছে---। চুপচাপ ঘুমা--। কিছু খা আগে-। মুখটা কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে---।

-আমি থাকবো না আরু----।

-তোর থাকা না থাকার এপ্রুভাল চাই নি--। আমার পিচ্চি বাবুটাও চাইছে তুই আজ আমাদের বাসায় থাক--। একটা মাত্র পিচ্চি ভাগ্নির কথাও মানবি না?

-তুই এতো ড্রামা করিস কি করে আরু? বাবা! আচ্ছা--। আছি আমি। যা তুই--। তাওহীদ ভাই। আপনারা যান। ঘুমান----।

-এখানেই থাকবি মানে কি! তোর জন্য রুম খুলে দিচ্ছি---। এই তাওহীদ----?

-আরু---। তার দরকার নেই। ওই রুমটায় থাকা হবে না রে--। কথা ছিল বিয়ের পরে তোদের বাসায় মাসখানেক থাকবো---। ওই রুমটায় থাকবো---। আরো কতো প্ল্যানিং--। ধোঁকাবাজটাকে আবার মিস করবো রে আরু---। ওই রুমটায় থাকবো না-। কখনোই না-।

-আয়ান? রিল্যাক্স। আচ্ছা--। অন্য কোন রুমে---।

-দরকার নেই রে--। তুই যা৷ আমার এমনিতেও ঘুম আসবে না। একটা অমানুষের স্মৃতিগুলো কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে সারাটা রাত। ঘুম আসতে দিবে না--।

-এতোটা ঘৃণা করিস এখন ওকে?

-সেটাই তো পারছি না রে। ওকে এতোটা ভালোবাসি, ও আমার হৃদয়ের এতোটা জুড়ে আছে যে ঘৃণাটাও করতে পারছি না। চোখের সামনে ওর হাসিমাখা মুখা ঘুরে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ---। না ওকে ছাড়া বাঁচতে পারছি, না শান্তিতে মরতে পারছি---।

-এতো ভাবিস না আয়ান---। ওর ও হয়তো কোন সমস্যা হয়েছিল--। হয়তো কোন কারণে বাধ্য হয়েই---।

-হাসালি আরু---। ওকে বলেছিলাম ও যেন আমার সাথে চলে আসে--। কিন্তু মেয়েটা কি করলো! আসলো না। আসলে ও চায়ই নি--।

-পরিবারকে ছেড়ে দিয়ে ভালোবাসার হাত ধরে বেরিয়ে আসতে পারে না সব মেয়েরা---।

-মায়রার পক্ষ নিয়ে আজাইরা লজিক দেখাবি না আরু---। 

-লজিক দেখাচ্ছি না--। কিন্তু তবু যদি তোর মনে হয় ও ইচ্ছে করেই নিজের মতে বিয়ে করেছে, তাহলে তুই ওর কথা মনে করে কাঁদছিস কেন?

-আমি ওকে ভুলতে পারছি না---।

-কেন? মায়রা না ধোঁকাবাজ? ও তো ওকে ঠকিয়েছে তাই না? তাহলে ওর জন্য কেন নিজের জীবনটা নষ্ট করবি? তুই নিজের জীবনটায় মন দে আয়ান---।

-দিব---। কার জন্য কষ্ট পাব? ওর মতো একটা ঠগ----। নো--নেভার। কখনো না---। আমি ভালো থাকবো আরু---। ওকে ছাড়াই ভালো থাকবো---। তুই যা। 

আয়ান চুপ করে বসে আছে। তাওহীদ আরিশাকে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলো বিছানায়। তারপর পাশে শুয়ে আরিশাকে বুকে টেনে নিলো। মেয়েটা এখন মনটা খারাপ করে না ঘুমিয়ে রাত কাটাবে কিনা সেই চিন্তায় পড়ছে তাওহীদ। তাওহীদ আলতো করে আরিশার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। 

-এমন কেন হলো বলো তো তাওহীদ? আয়ান তো কতো ভালো ছেলে বলো? ওর সাথেই কেন এমন হলো?

-মন খারাপ করো না প্লিজ---। 

তাওহীদ আলতো করে আরিশার মুখটা তুলে ধরে চোখে চোখ রাখলো। আরিশাও মুখ তুলে তাকালো তাওহীদের দিকে।

-আয়ান না থাকলে হয়তো তোমাকে কখনো পাওয়া হতো না আরু--। পাগলটা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তোমাকে রাজি না করলে হয়তো আজকের এই সুন্দর দিনটা আমার জীবনে আসতোও না---। তোমাকে পাওয়া হতো না--। আমাদের ছোট্ট সংসারটা পরিপূর্ণ করতে হয়তো আজ নতুন অতিথিটাও আসতো না---। যে মানুষটা আমার ভালোবাসার ছোট্ট পরীটাকে পেতে সাহায্য করলো, সেই মানুষটার ভালোবাসাটাই তার থেকে দূরে চলে গেল---। অথচ দেখো আমরা কিছুই করতে পারছি না---।

-কি হবে বলো তো আয়ানের? ও তো মায়রাকে খুব ভালোবাসতো---।

-আমি দেখি---। কি করা যায়-। তুমি এতো টেনশন করো না। ঘুমাও। শরীর খারাপ করবে না হয়--।

-হুম----।

এদিকে, মায়রার বৌভাতের অনুষ্ঠানে বেশ অনেক মানুষই এসেছে৷ সীমান্তর মা মুখ ভার করে মেহমানদের সাথে কথা বলছেন। সবার সাথে খেতে বসেও মায়রা শাশুড়ির থমথমে মুখটা দেখে চমকে গেল। ও কিছু বলার আগেই পাশে থেকে একজন মেহমান সীমান্তের মায়ের কথা শুনতে পেল মায়রা৷ আর খাওয়া ছেড়ে অবাক হয়ে তাদের কথাই শুনতে লাগলো।

-কি গো ভাবি? ছেলের জন্য এতো লক্ষী বউ নিয়ে এলে, তবুও মুখটা এতো ভার করে রেখেছ কেন?

-কি আর বলবো ভাবি? ভেবেছিলাম ছেলের বউ নয়, মেয়ে এনেছি নিজের জন্য--। জানোই তো একটা মেয়ের কতো শখ ছিল আমার---। কিন্তু ছেলের বউ তো আর মেয়ের জায়গা নিতে পারে না---। সে কথাটা আর মনে ছিল না---।

-কেন গো ভাবি? এরকম করে কেন বলছো? কতো লক্ষীমন্ত মেয়েটা--।

-আর লক্ষীমন্ত---। আসতে না আসতে ছেলেটাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে --। কি দোষ করেছিলাম গো ভাবি-। আমার এমন কপাল যে এই মেয়েকে----।

মায়রা খাওয়া ছেড়ে উঠে শাশুড়ির দিকে যাওয়ার আগেই কেউ একজন এসে ওর হাত চেপে ধরলো। মায়রা পিছনে ফিরতেই সীমান্তকে দেখে চমকে উঠলো। 

-মায়রা? কই যাও? আর খাওয়া দাওয়া করতে এতোক্ষণ লাগে! উফফ! তোমাকে নিয়ে যে কি করবো আমি! 

----------------------

-কথা বলো না কেন? কোথায় যাচ্ছিলে?

-মায়ের সাথে কথা বলতে--। মা কি যেন বলছে ওই আন্টিটাকে----।

-কোথাও যেতে হবে না। এখন রুমে চলো। ব্যাগ গোছাতে হবে-----।

-আরে! আজই কেন যেতে হবে? আজ যাবো না----।

-মায়রা? তোমার কাছে পারমিশন চাই নি আমি---। তুমি যাচ্ছো আমার সাথে এটাই আমার শেষ কথা--। বুঝতে পেরেছ? চলো এখন---।

সীমান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে মায়রা থতমত খেয়েই তাকিয়ে রইলো। রাতের মত আবার লাল হয়ে উঠছে সীমান্তর চোখ জোড়া৷ লোকটার এতোটা রেগে যাওয়ার কারণ স্পষ্ট নয় মায়রার কাছে৷ আর শাশুড়ির কথাগুলোর মানেও মাথায় ঢুকছে না মায়রার৷ মায়রা চুপ করে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে দেখে সীমান্ত মায়রার হাত ধরে টেনে নিয়ে চললো। আর মায়রা সব ভুলে সীমান্তের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের মনে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই হিসাব মিলছে না মায়রার৷ কি হতে চলেছে ওর জীবনে কে জানে!

০৬!! 

দেখতে দেখতে মায়রা আর সীমান্তের বিয়ের ১৫ টা দিন কেটে গেছে। এই ১৫ টা দিনে সীমান্তের প্রায় সব কটা রঙই দেখা হয়ে গেছে মায়রার৷ বিশেষ করে ঢাকায় আসার ঠিক সাত দিন পর যখন সীমান্তের বন্ধুরা বাসায় এলো সেদিনের আগ পর্যন্ত সীমান্তকে বেশ ভালো একজন মানুষ হিসেবেই জানতো। সেদিন দুপুরে সীমান্তের প্রায় ছয় সাতজন বন্ধু লাঞ্চে আসবে। তাই মায়রা রান্নাঘরে কাজ করছিল। কি রান্না করবে বুঝতে পারছিল না৷ তেমন একটা রান্না করতে পারে না। ঠিক পারে না বললে ভুল হবে। রান্নাঘরে যাওয়ারও কখনো তেমন প্রয়োজন হয়নি মায়রার কখনো। এখন এতোজন মানুষের রান্না করতে হবে চিন্তা করতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। 

-এমন গাধার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন মায়রা? অদ্ভুত? ওরা এসে কি না খেয়েই চলে যাবে নাকি?

-না আসলে--- কি রান্না করবো-।

-কি রান্না করবে মানে কি? বাসায় মেহমান আসলে যা করে তাই রান্না করবা--!

-আমমম---। আসলে---। আসলে আমি তেমন কিছু রান্না করতে পারি না----।

-বাহ! কপাল করে একটা বউ পেলাম। রান্না করতে পারো না৷ তা ছোটবেলা থেকে মামা মামির কাছে থেকে করলে টা কি বলো তো? অবশ্য তারা নাকি তোমাকে একেবারে লাই দিয়ে মাথায় তুলে রেখেছিল---। সত্যিই নাকি? রান্না করা, ঘরকন্না জিনিসগুলো শেখায় নি তোমার মামি?

-না মানে----। মামি কখনো রান্না করতে দেয় নি----।

-বাহ! তাহলে তো হয়েই গেল। 

-আমি-----।

-বাদ দাও---। কি আর করা! বিয়ে যখন করেছি তাহলে---। তাহলে ভার তো বইতেই হবে---। কি বলো? আমি খাবার অর্ডার করে দিচ্ছি--। তুমি অন্তত বসার রুমটা গুছিয়ে রাখো ওরা আসতে আসতে--। নাকি সেটাও শিখায় নি তোমার মামি?

-------ভার বইতে হবে মানে?

-মানে কিছুই না মায়রা---। নিজের কাজ করো যাও। আমাকে খাবারগুলো অর্ডার করতে দিবা? নাকি ওদের সবাইকে না খেয়েই চলে যেতে হবে? সেরকম হলে বলো ওদেরকে নিয়ে কোন রেস্টুরেন্টেই দেখা করি----।

-----আমি যাচ্ছি।

দুপুরবেলা মায়রা সবাইকে খাবার সার্ভ করছে আর সীমান্তের বন্ধুরা হাসাহাসি করতে করতেই গল্প করছে মায়রার সাথে। মায়রা একটু রান্নাঘরের দিকে গিয়েছিল। ফেরার সময় বসার রুমটার বাইরে থেকেই সীমান্তের কোন এক বন্ধুর প্রশ্নটা কানে এসে লাগায় দাঁড়িয়ে গেল। ওদের এমন কথোপকথনের মাঝে সেখানে যেতে বড্ড লজ্জা করছে মায়রার। তাই চুপ করে আবার রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতে গিয়েও থমকে গেল। 

-কি রে ব্যাটা? বিয়ে করে একেবারে সংসারী হয়ে গেলি! তা ফ্যামেলি প্ল্যানিং কদ্দূর! ভাবিকে যেমন লাজুক দেখলাম---। মনে তো হচ্ছে জুনিয়ার না আসা পর্যন্ত লাজুক ভাবটা কাটবে না----।

-আরে ধ্যাত ব্যাটা---। ফ্যামেলি শুরু করার জন্য এখনো অনেক সময় বাকি--। এরেঞ্জ ম্যারেজ-। কম্পফোর্টেবল হতে কিছু তো সময় লাগবে---। তোরাও না? সত্যি ভাই!

-তো? ভাবি একা একা বাসায় বসে থেকে কি করে সারাদিন? তুই তো বেশিরভাগ সময়টাই অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকিস---।

-হুম সেটাই ভাবছি---। দেখি ও একটা মাস্টার্সের কোর্সে এডমিট হতে চায় কিনা---। অন্তত কয়েকটা ঘন্টা সেসব নিয়েই ব্যস্ত থাকবে---।

-এই আইডিয়াটা জোস--। 

-হুম-----। আরে? মায়রা? কোথায় গেলে? খাবার ঠান্ডা হচ্ছে-। এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেল না---। এই মায়রা?

সীমান্তের কথাগুলো শুনে মায়রা একদম থ হয়ে গেল। খেতে বসেও চুপচাপ কথাগুলো মনে মনে আওড়াতে লাগলো। সীমান্তের কথাগুলোর সাথে কোন মিলই পাচ্ছে না মায়রা। লোকটাকে ঘিরে একটা সংশয়ের মেঘ তৈরি হওয়ার সেটাই শুরু মায়রার মনে। সেদিন রাতেই সীমান্তের সাথে কথাটা বলার সাথে সাথেই সীমান্তের মুখটা লাল হয়ে গেল। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো মায়রাকে। 

-কি বলতে চাইছো তুমি? তুমি লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছিলে? বাহ!

-না মানে--। আপনারা কথা বলছিলেন তাই---। 

-হ্যাঁ তো? এখন কি বলতে চাও তুমি?

-না মানে---। আসলে------।

-কিছু বলতে চাইলে বলো--। অহেতুক সময় নষ্ট করো না আমার। সকালে অফিস আছে আমার---।

-না মানে---। আসলে মাস্টার্সে এডমিশনের কথাটা নিয়ে একটু কথা---।

-মায়রা? মাস্টার্স করে কি করবা বলো? তোমার তো কোনো জব করারও দরকার দেখছি না যে অহেতুক এক দেড় বছর সময় নষ্ট করবা। আর তাছাড়াও আমি অন্তত সংসার সামলানোর মতো ভালোই ইনকাম করি-। তাই ফ্যামেলিতে কন্টিবিউশনের জন্য নিশ্চয়ই জব দরকার নেই তোমার-----।

-কিন্তু-----?

-অতিরিক্ত কথা আমি পছন্দ করি না, আগেই বলেছি----।

-আমি-----।

-চুপ করো তো। অলটাইম এতো কথা কিসের তোমার? আশ্চর্য!

মায়রা চুপ করে গেল এবার। লোকটার বন্ধুদের সামনে বলা কথাগুলোর সাথে এখনকার কথার একটুও মিল নেই। একটু পরে মায়রা টের পেল সীমান্ত শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরেছে পিছন থেকে৷ তারপর  মায়রার কাঁধে নাক ডুবিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। মায়রাই শুধু জেগে রইলো সারারাত। ওর চোখের ঝরা পানিতে বালিশের এক কোণা ভিজে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। 

আজ একা শুয়ে শুয়ে সেইসব কথাগুলো মনে করে চোখের পানি ফেলছে মায়রা। দুপুর থেকে খুব করে পেটে ব্যথা করছে মায়রার। মেয়েলি সমস্যাটা শুরু হয়েছে সেটা বেশ টের পাচ্ছে মায়রা৷ দুপুরেও কিছু খায় নি মেয়েটা। ধীরে ধীরে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে, আর বিকেল গড়িয়ে রাত৷ কোনমতে ব্যথা নিয়েই উঠে ধীরে ধীরে আলু ভাজা আর ডাল ভাত রান্না করে রেখেছে সীমান্তের জন্য। রান্না শেষ করে এসে বসার রুমে আসতেই কলিংবেলের শব্দ পেল মায়রা। তড়িঘড়ি পায়ে এসে দরজাটা খুলে দিলো মায়রা। আর দরজা খুলতেই সীমান্তকে দেখতে পেল। 

-তুমি কি করো বলো তো সারাদিন? দরজাটা খুলতে এতোক্ষণ লাগে? অদ্ভুত! কি করছিলে?

-আমি-----।

-সরো তো---। টায়ার্ড লাগছে--। শাওয়ার নিবো----।

-শোনো না? একটা কথা বলার ছিল।

-এখনই তোমার জরুরি কথা বলতে হবে? আমি সারাদিন অফিস করে ফিরে টায়ার্ড দেখছ--। তবুও তোমার---। উফফ। বলো কি বলবা। কি এমন জরুরি কথা তোমার?

-না মানে আসলে---। আসলে আমার এক প্যাকেট স্যানেটারি নেপকিন লাগতো----। আসলে-।

-এখন তোমার এসব---জিনিসের জন্যও আমাকেই দরকার?

-আসলে আমি তো কোথাও বের হই নি--। কিছুই চিনি না---।

-ও হ্যাঁ---। সেটাই--। এখানেও আমারই দোষ--৷ তোমাকে বাসায় বন্দি করে রেখেছি---।

-আমি সেটা বলি নি---।

-কি বলেছ সেটা তো বুঝতেই পারছি। 

-আসলে--আমি সত্যিই- ওভাবে মিন করিনি কথাটা----।

-আমি শাওয়ার নিয়ে তারপর বের হচ্ছি---। সেই সময়টুকু হবে ম্যাডাম? এই অধমকে পাঁচটা মিনিট সময় দিবেন শাওয়ার নেয়ার জন্য? প্লিজ?

-জি----।

সীমান্ত বিরক্তভরা মুখ নিয়ে মায়রাকে নিজের ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেল। আর মায়রা সীমান্তের ব্যাগটা রুমে রেখে এলো। আধা ঘণ্টা পার হয়ে যাবার পর সীমান্ত রেডি হয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে এলো। মায়রা সীমান্তের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর আবার ব্যথায় একবার কঁকিয়ে উঠে সোফায় গিয়ে বসলো। কতোক্ষণে আসবে লোকটা কে জানে!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন