অচেনা অতিথি - পর্ব ২৮ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


মাহাদ এমন কথা শুনে ভ্রু কুচকে বাহিরে চলে এলো। তারপর গলা খোলসা করে ঠান্ডা মেজাজে বলল-

~" মেন পয়েন্টে আয়। তুই কি কি করতে পারিস আর আমি কি কি করতে পারি সেটা আমাকে কিংবা তোকে নতুন করে জানাতে হবেনা। আমরা দু'জনেই জাতের কাল সাপ । কারো ছোবল কোনদিনও মিস যায় না। কি বলতে চাস সেটা বল।"

অপর পাশ থেকে একটা অট্টোহাসিতে যেন ফেটে পড়লো কেউ। আরে বাবা এত ছটপট করছিস কেন? তাছাড়া তুই এত সহজে আমার কথাগুলে যে ভুলে যাবি সেটা আমি বুঝতেই পারিনি। কেন ভুলে গেলি! সেদিন মিটিং এ কি নিয়ে আমার সাথে তোর ঝামেলা হয়েছিল?

মাহাদ কিছুক্ষন ভেবেই ছাদের দিকে চাইলো। হঠাৎ ছাদে তিতিরকে দেখে থমকে গেল। মাহাদ ঐ অবস্থায় বাসার ভিতর ঢুকেই ছাদের দিকে দৌড় দিলো। ছাদে এসেই খপ করে তিতিরকে ধরেই বুকে টেনে নিল। মাহাদের দম যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। খানিকটা দম নিয়ে শান্ত স্বভাবে বলে উঠলো-

~" ছাদে কেন এসেছ বউ! আর এত কিনারায় কেউ যায়! যদি কিছু হয়ে যেত?"

মাহাদের কথা শুনে তিতির বিরবির করে বলল-

~" আমিতো এখানে আপনাকে খুঁজতে এসেছি।"

~" আমাকে এখানে খুঁজলে তুমি আমায় পাবে? আমাদের ছেলের আজ একটা কাজ আছে আর তুমি তাকে ফেলে এখানে এসেছ। তুমি জানোনা, তোমাকে ছাড়া সে থাকতে পারেনা!"

তিতির মাহাদের দিকে চেয়ে কি যেন ভাবলো, তারপর  ক্লান্ত স্বরে মুখ ফসকে বের করেই ফেলল, আপনি আমায় কথায় কথায় জড়িয়ে ধরেন কেন? আমার কাছে এটা বিরক্ত লাগে। এভাবে আর ধরবেন না তো! 

মাহাদ ওর কথা শুনে খানিকটা বিশ্মিত হয়ে সাথে সাথে ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল-

~" আচ্ছা আর ধরবো না। এবার সাদের কাছে যাও।"

তিতির মাথা নেড়ে চলে যেতেই মাহাদ হাতের ফোনের দিকে চাইলো। কল কেটে দিয়েছে সে। মাহাদ আর ব্যাক না করে তিতির যেখানে এতক্ষন দাড়িয়ে ছিল সেখানে এসে দাড়িয়ে কিছু ভাবতেই তিতির দৌড়ে এসে মাহাদের গালে টুপুস করে একটা কিস করেই দৌড় দিল। তিতিরের এমন কান্ডে মাহাদ বেশ অবাক হল। কিন্তু মনের ভিতর প্রশান্তির একটা বাতাস বয়ে গেল যেন। মুচকি মেরে হাসতেই আবার সেই কল আসলো।
মাহাদ গম্ভীরমুখে কল রিসিভ করেই বলল-

~" দেখ তোর সাথে আমার কোন রকম ভেজাল হোক সেটা আমি মোটেও চাই না। সমস্যা কি সেটা খুলে বল।"

~" এইতো বিজনেস ম্যানের মত কথা। ঢাকা সাউথ সিটির টেন্ডারটা আমার চাই। এটা আমার সম্মানের প্রশ্ন! আমি সব বিষয়ে ছাড় দেই কিন্তু সম্মানের বিষয়ে এক চুল পরিমানও ছাড় দেই না। তাই এখান থেকে সরে দাড়ান।"

~" যোগ্যতা বলে দিবে টেন্ডারটা কার প্রাপ্য। আমারও নতুন কম্পানির জন্য সেটা অত্যন্ত জরুরি। আপনার যদি যোগ্যতা থাকে তাহলে নিশ্চয় আপনি পাবেন।"

~" যোগ্যতা মাই ফুট। বাবার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সেটা নিজের নামে করে নিবি আর আমি বসে বসে আঙ্গুল চোষব? ক্ষমতা থাকলে বাপকে সামনে থেকে সরিয়ে মাঠে নাম। আর আমি যদি আদা-জল খেয়ে মাঠে নামি তাহলে তোর বংশ নির্বংশ করে ছাড়ব। আমি কি জিনিস এবার তোরে আমার জাত চিনিয়েই ছাড়ব।"

~" ভাষা মার্জিত করুন। আমি মাহাদ কোনদিনও বাবার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলি না। আমার মেয়ের নামে প্রথম কোন কম্পানি করার চিন্তা করেছি। তাই টেন্ডারটা আমার দরকার। আমি সৎ চিন্তায় মাঠে নামি। অসৎ চিন্তা আপনার মধ্য থাকতে পারে আমার না। আপনার কাছে আপনার সম্মান বড় হতে পারে কিন্তু আপনার থেকে কয়েকগুন বড় আমার কাছে আমার মেয়ে। তাই আমিও সেটা ছাড়তে মোটেও রাজি না।"

~" তারমানে তুই সরবি না সেখান থেকে!"

~" আমি অতিব ভদ্র ভাষায় কথা বলছি, যোগ্যতা দিয়ে ইনশাআল্লাহ্ সেটা নিব। আর আমি যদি একবার অসভ্য হই তাহলে আপনাকে ঐ সম্মানের চেয়ার থেকে টেনে হিচড়ে নামাবো।"

কথাগুলো বলেই কল কেটে দিল মাহাদ। কিছুদিন ধরে এই লোকটা মাহাদের পিছনে লাগছে কিন্তু সামনে আসছেনা। অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়াই করা খুব মুশকিল। কে যে শত্রু আর কে যে মিত্র তা বোঝা বড় দায়। আপাতত এগুলো না ভাবলেও চলবে। মাহাদ দ্রুত নিচে নামতেই সিড়িতে তিতিরের সাথে ধাক্কা খেল। পড়তে পড়তেই মাহাদ ওকে শক্ত করে ধরেই বলল-

~" কি ব্যাপার তুমি এখানে! এতক্ষন ধরে এখানে কি করছিলে?"

মাহাদের কথা শুনে তিতির মুখ ছোট করে মিনমিন করে বলল-

~" আমার পা ব্যাথা করছে। আমাকে একটু নিচে নিয়ে চলেন না!"

~" একদমই না, আমি ভালো করেই জানি তুমি মিথ্যা বলছো। তাই নো চিটিং। "

মাহাদ কথাগুলো বলে এক সিড়ি নামতেই তিতির পিছন থেকে মাহাদের গলা জড়িয়ে ধরে পুরো শরীরের ভার মাহাদের উপর ছেড়ে দিয়ে ছোট বাচ্চাদের মত করে বলল-

~" আমার সত্যি পায়ে ব্যাথা। আমি নামতে পারছিনা।"

মাহাদ পিছন ফিরতেই তিতির সোজা হয়ে দাড়ালো। মাহাদ কিছু বলতে যাবে অমনি তিতির ওর প্লাজু হাটুর উপরে তুলে বলল-

~" দেখেন, এখানে লাগছে।"

মাহাদ সাথে সাথে কাপড় নিচে নামিয়ে দিয়ে কঠোর চোখে তিতিরের দিকে চেয়ে বলল-

~" আমি কি তোমার হাটু দেখতে চেয়েছি? এমন খোলা প্লেসে যেন কখনো দেখি না তুমি এই ব্যবহারগুলো করছো।"

~"আপনি আমাকে সব সময় বকা দেন। আবার সময় পেলে গায়েও হাত তোলেন। আপনি আমায় একটুও ভালোবাসেন না। ভাবী ভাইয়ার উপর রাগ করলে বাবার বাসায় চলে যায়। আমিও বাবার বাসায় যাব। আমাকে আমার বাবার বাসায় রেখে আসেন। আমারে কেউই পছন্দ করে না। সবাই শুধু বকে।" 

বাব্বাহ্ এত্ত অভিযোগ আমার বউয়ের! কে বলেছে আমি তাহারে ভালোবাসি না, আমার জিবনটাই যে তাকে ছাড়া শূন্য বলেই ওকে পাজাকোলা করে নিচে নামতে লাগলো। শেষ সিড়িতে নামতেই সাদের মা বলে চিৎকার ময় ডাক শুনেই তিতির কেঁপে উঠে বলল-

~" আমাকে ছেড়ে দিন, ছেড়ে দিন। আমার ছেলে আমাকে ডাকছে।"

মাহাদ ওরে নিচে নামিয়ে দিতেই তিতির এক দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল। তিতিরের দৌড় দেখে মাহাদ আক্কেলগুডুম হয়ে গেল। এই না বলল, তার পায়ে নাকি ব্যাথা! আমার বউ এত মিথ্যা কথা কবে থেকে বলতে শিখলো। মাহাদও তিতিরকে অনুসরণ করে চলে গেল।


সাদের প্যান্ট কেউ খুলতে পারছেনা। ডাক্তার যতই সেটা টেনে খুলার চেষ্টা করছে ততই ও সেটা উপরে তুলছে। এমন কাজ বার বার করায় ডাক্তার ক্ষেপে গিয়ে স্থান কাল পাত্র সব কিছু ভুলে গিয়ে প্রায় চিৎকার দিয়েই বলল-

~" এরা কোন বিচ্ছুটির দলরে বাবা। একজন বের করতে চায় না আর অন্যজন না দেখলে নাকি বিশ্বাসই করবেনা। আমি এসব আর করতে পারবো না। সম্রাট অন্য ডাক্তাররে ডাক। এমন মহান কাজ আমাকে দিয়ে আর হবেনা।"

ডাক্তার শামীমের কথা শুনে সম্রাট ঘেমে নেয়ে একাকার। কত পটিয়ে বন্ধুকে শেষ বারের কথা বলে এখানে এনেছে। কিন্তু শিহাব আর সাদ যা শুরু করেছে তাতে বন্ধুর কথার মাইর যে তাকে কত খেতে হবে সেটা আল্লাহ্ ভালো জানেন। এদিকে শিহাব সাদের কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিয়ে বলল-

~" ভাই এটা নাকি করতে হয়। এমন করছিস কেন? প্যান্ট খোল। 
এরা আমাদের উপর যে ষড়যন্ত্র শুরু করছে তাতে আমরা এমনি এমনি তো আর বিশ্বাস করবোনা। আগে দেখবো তারপর এটাতে হাত দিতে দিবো।"

শিহাব সাদের থেকে দু'বছরের বড়। সব জায়গায় বাদরামি করলেও সাদকে সে খুবই পছন্দ করে। পারে না যে বুকে আগলে রাখে। তাই সাদের হাত ধরে আরও কিছু কৌতুক দেখাইতে তার মাথা এখন ব্যস্ত। 
সম্রাট ছেলেকে যেই ধরতে গেল তখনই শিহাব চিৎকার করে বলল-

~" না না আমি কিছুতেই মুসলমানি করবো না। আগে দেখাও যে, সবাই করে তাহলেই আমি করবো। মিথ্যা বলে শুধু আমাকে কষ্ট দিবে! সেটা আমি হতে দিবো না।"

শিহাবের জেদ আর কান্না দেখে সম্রাট শামীমকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বলল-

~" ভাই রাগ করিস না। একটু তোর টাই আমার ছেলেকে দেখা। তাছাড়া আমার ছেলে যা, সবকিছু লন্ডভন্ড করে ফেলবে।"

শামীমের মাথায় চড় চড় করে রক্ত উঠে গেল।এই শালা আমার ইজ্জতের কি মায়া দয়া নেই! তোর ছেলে তুই দেখাবি না দেখাবিনা সেটা তোর ব্যাপার। এর মধ্য আমারে ডাকিস কেন? সর এখান থেকে! আমি এখানে থাকবোই না। কথাগুলো বলে রেগে সবার সামনে আসতেই শিহাব চিৎকার দিয়ে বলল-

~" আঙ্কেল আসেন, আমি মুসলমানি করাইবো।"

ছেলের আমূল পরিবর্তন দেখে সম্রাট সহ শামীম কিছুটা অবাক হয়ে গেল। এই গিরগিটি টা এত জলদি রং পাল্টাইলো! শিহাব নিজেই প্যান্ট খুলে চেয়ারে বসে রইলো। 
শামীম যখন ওর ব্যাগ থেকে ব্লেড বের করলো তখন শিহাব চিৎকার দিয়ে বলল-

~" আম্মু আমার এটা কেটে ফেললো। বাচাও আম্মু বাচাও।"

রুমকি এসে ছেলেকে ধমক দিয়ে ভালো করে চেপে ধরলো। এমন সময় সেখানে গোলাব এসে দাড়াতেই বাতাসি বিবি শিহাবকে সাহস দিয়ে বলল-

~" দেখ শিহাব দেখ, আমাগো গোলাবও মুসলমানি করতে আইছে। তগো থেকে হের সাহস বেশি। ভালো করছোস গোলাব। খালি ঠাংটা তুলে দাড়ালেই চলবে।"

~" আম্মু তোমার নানীরে চুপ করতে বলোনা। সে শুধু বেশি কথা বলে। এই গোলাব যা এখান থেকে?"

শিহাবের কথা শুনে বাতাসি ক্ষেপে গিয়ে বলল-

~" ওরে যাইতে কস ক্যান! তুই মরদ গোলাবও মরদ। তোরও যা আছে গোলাবেরও তাই আছে। তাইলে ওর ডিমান্ড কোন দিক থাইকা কম হল হুঁ! ওর জন্যও কত্ত মাইয়া কুত্তা বাড়ির দরজায় লাইন দিয়া থাকে হেইডা তুই জানোস!"

এসব কথার মাঝেই সাদ ওর মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে  কাঁদতে কাঁদতে বলল-

~" মা আমি প্যান্ট খুলবো না। দেখেন ভাইয়া কেমন করে কাঁদছে। আমার কষ্ট হবে তো?"

তাহলে দরকার নেই বাবা। চলো আমার সাথে বলে তিতির সাদকে কোলে নিয়ে চলে যেতেই মাহাদ ওর হাত চেপে ধরে বলল-

~" ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো!"

~" আমার ছেলে কষ্ট পাবে। দরকার নেই এসব করা।"

মাহাদ সাদকে এক প্রকার জোড় করে কেড়েই নিলো তিতিরের কাছ থেকে। তারপর ওকে নিয়ে শামীমের কাছে গিয়ে বলল-

~" শামীম আমার ছেলেটাকে আগে করে দাওতো!"

শামীমকে নিয়ে অন্য রুমে চলে গেল মাহাদ। আর এদিকে তিতির রেগে গিয়ে অন্যদিকে চলে গেল।
অবশেষে অনেক কাহিনী করে ওদের দু'জনকে মুসলমানি করানো হলো। শিহাবের মুখে তো শামীমের জন্য গালি ফুল ঝড়লো। এমন সব উদ্ভট গালি যে কই থেকে শিখেছে আল্লাহ্ মালুম।


৩দিন পর,
আজ ৩ দিন হলো নিসা বাবার বাসায় চলে গেছে। সেদিনের কাহিনীর পর, পরেরদিন ছোট মেয়েটাকে নিয়ে বাসা ছেড়ে চলে গেছে। ফুয়াদও নিতে যায়নি। এমনকি বাসার কেউ তার সাথে যোগাযোগও করেনি।

তিতির সুযোগ খুজে গেছে এতোদিন ধরে, কিভাবে লাবীবাকে হেনেস্ত করা যায়। আজ পেয়েও গেছে। লাবীবা কেবল চায়ের কাপ মুখে তুলবে এমন সময় কল আসছে বাসার ল্যান্ড লাইনে। চায়ের কাপ রেখে উঠে গেল সে। ডাইনিংরুমে কুসুম ছাড়া কেউ ছিলোনা। তিতির চট করে উঠে গিয়ে লবনের পট উপর করে লবন ঢেলে দিয়ে দ্রুত উপরে উঠে চলে গেল।

কুসুম তো এমন কাহিনী দেখে তাজ্জব বনে গেল। এদিকে তিতির রুমে এসে দেখলো, শিহাব ওর ছোট্ট লুঙ্গিটা উপরে তুলে সাদের কাছে এসে বসে আছে। নিধিও এসেছে সাদের কাছে। হঠাৎ নিধি বলে উঠলো-

~" শিহাব দেখি তোর ওটা! শুকিয়ে গেছে?"

শিহাব সাথে সাথে নিধিকে একটা ধমক দিয়ে বলল-

~" তোর তো কাটতে হবেনা তাই বুঝবি না এর কত জ্বালা। ভাগ এখান থেকে!"

~" তোর মত বুড়ো বয়সে নুনু কাটলে ওমনই হবে।"

শিহাব আর নিধির মধ্য তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেল এ নিয়ে। শেষে নিধিতো শিহাবের লুঙ্গি ধরে টানই দিল। শিহাবের ওখানে হয়ত লেগেছে তাই চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলো। নাতীর কান্নার শব্দ শুনে রুপালী এসে সব শুনে তিতির আর নিসা উভয়কেই বকাবকি করলো। তিতির উপস্থিত থাকা সত্বেও কেন ঝগড়া বাধলো! আর নিসা যেমন ওর মেয়েও তেমন। যেমন মা তেমন মেয়ে। নিধিতো ভয়ে তিতিরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। এত কথাতেও তিতির কিছু বললোনা। শুধু চুপ করে শুনে গেলো।

রুপালী শিহাবকে নিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু শিহাব গেলোনা। রুপালী নাতীর সাথে না পেরে যখন চলে গেল রুম থেকে তখন তিতির গিয়ে ফাষ্টফুড খাবারের প্যাকেট বের করে ৩ জনকে দিয়ে বলল -

~" আর কিন্তু ঝগড়া করবা না তোমরা। দেখছোনা কেমন বকে গেল?"

৩জন আবার এক হয়ে গেল খাবার পেয়ে। তিতির আবার নিচে চলে গেলো। এসে কেবল সোফায় বসেছে এমন সময় রাগী চেহারা নিয়ে লাবীবা বেগম সোজা তিতিরকে ধরলো। তিতির, আমার চায়ে তুমি লবণ মিশিয়েছ? 

শাশুড়ীর মুখে এমন কথা শুনে সোজা কুসুমের দিকে চাইলো তিতির। তিতিরের চাহোনি দেখে কুসুম ভয় পেয়ে মা ঝাকিয়ে না বলে জানিয়ে দিল সে এই কথা লাবীবাকে বলেনি। এমন সময় বাতাসি এসে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসেই বলল-

~" কি হইছে লাবীবা!"

শাশুড়ীর কথার জবাব দিলোনা লাবীবা। কিন্তু তিতিরকে বেশ জোড়ে ধমক দিল। কি হলো তিতির! কথা বলছো না কেন? তুমি কেন চায়ে লবন মিশিয়েছ! তোমার এত সাহস হয় কই থেকে বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো লাবীবা।

তিতির মাথা নিচু করে শুধু নখ খুটিয়ে চলছে। এদিকে বাতাসি চোখ গরম করে বলল-

~" তুমি হইয়া চুপ কইরা আছো। আই হলে এতক্ষনে ওরে সপাট করে ফেলতুম। সব জায়গায় খাম খেয়ালি?"

আমিও এমনি বলি! আপনার নাম বাতাসি না হয়ে কাউয়াতাসি হলে ভালো হইতো। কথাগুলো বলে দাঁত কটমট করে তাকালো বাতাসির দিকে তিতির।

দেখছো মেয়ের কথা! এ যে এত্ত বিয়াদপ, তা এর আগে আমরা জানতেই পারিনি। মুখে বুলি দেখছ বলে রুপালী ওর মায়ের কাছে আসলো।

এদের এমন কথা শুনে তিতির সোজা উপরে গিয়ে মাহাদের কাছে কল দিল। মাহাদ কল রিসিভ করতেই তিতির সব কথা বলে কাঁদতে লাগলো।
মাহাদ সব কিছু শুনে তিতিরকে বলল-

~" এত কিছু তোমায় বলেছে আর তুমি চুপ করে ছিলে?"

~" আমিতো বলতেই চাইছিলাম। কিন্তু আপনিই তো কারো সাথে ঝগড়া করতে আমাকে নিষেধ করেছেন, তাই কিছু বলিনি।"

~" তো বসে আছো কেন! যাও লেগে পড়ো। সব কটারে উচিত শিক্ষা দাও। পরে যা হবে সব আমি দেখবো! তোমাকে কি আমি খাবার কম খাওয়াই, তাই সবসময় চুপ করে থাকো? আমাকে এতো কিছু তোমাকে শিখিয়ে দিতে হবে কেন! "

ব্যাস হয়ে গেল! বরকে ফোনে এত্তগুলো কিসি করে কোমড়ে ওড়না পেচিয়ে তিতির নিচে নামলো। কিন্তু এসেই দেখলো, নিসা এসেছে বাসায়। নিসাকে বড্ড ভয় পায় তিতির। তাই কিছু না বলে আবার সোফায় এসে বসলো। 

~"ঐ দেখ আবার আইছে বেহুদা মাইয়া। ঐ তোর কি লজ্জা নাই?"

বাতাসির কথা শুনে তিতির একদম বাতাসির কাছে গিয়ে বসে স্থির কন্ঠে বলল-

~" দাদী একখান ছড়া শুনবেন?"

তিতিরের নরমাল কথা শুনে বাতাসি স্বাভাবিক হয়ে বলল-

~" উল্টা পাল্টা কিছু কইবি না তো!"

~" শুনবেন?"

~" ক তাইলে.....।"

~"পরে না ডাবের পানি, আমি তো তিতির রানী
ঢাকায় যাবো ইমতিয়াজ হবো, বাতাসির লগে ছবি করবো।
বাতাসীর শাড়ীটা এত্ত পাতলা, মনে হয় পাছায় মারি ধাক্কা।"

এইটুকু শুনেই বাতাসি চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠে তিতিরের মুখ চেপে ধরলো। ঐ মাইয়া চুপ চুপ! অ্যার মান-ইজ্জত তো দেকচি তুই খাইয়া ছাড়বি। 

উমহ্ ছাড়েন বলে বাতাসির হাত ঝিটকান দিয়ে তিতির উচ্চস্বরে বলে উঠলো-

~" আপনি আমার প্রতিভা নষ্ট করতে চান কেন! আরও কিছু বক্তব্য শুনায়?"

~" না আম্মা, শোনার সখ অ্যার জন্মের মত মিটছে। অ্যার সম্মান আর খাসনা। কুসুম সব সময় অ্যারে ক্ষেপাবে। আই আর তোর পিছে লাগুমনা। চুপ থাক আম্মা?"

মায়ের এমন কাকুতি মিনতি দেখে রুপালী এসে তিতিরের হাত ধরে জোড়ে একটা থাপ্পড় উঠাতেই তিতির রুপালীকে ঝিটকানি দিয়ে সরে গেল। রুপালীর হাত এসে চেয়ারের সাথে বাড়ী খেল। ও মাগো বলে একটা চিৎকার দিতেই উপর থেকে রুমকি এসে দেখলো ওর মা ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। ও দৌড়ে এসে মায়ের হাত ধরেই বলল-

~" মা কি হয়েছে তোমার?"

~" আমাকে মারতে গিয়ে নিজেই চেয়ারের সাথে হাতটাকে উষ্ঠা খাওয়াইছে। ফুফু আর কি উষ্ঠা খাওয়াইতে হবে?"

নানী, তুমি থাকা স্বত্তেও এত কিছু ঘটলো কিভাবে? আমার বেলায় তো একেবারে ধুয়ে দিতে। এখন চুপ কেন? কথা বলছোনা কেন? কথাগুলো বলতেই বাতাসি মুখে আঙ্গুল পুরে বলল-

~" আই কিছু কমুনা। অ্যারে যে হারে ধুয়ে দিছে আই কোন কতা কইতে পারুম না। তুইও চুপ থাক। না হলে ও এমন কতার ছন্দ বানাইবো হেইডা শুনে তোরে মানের গাছের সাথে গলাত দড়ি দিবার মন চাইবে। চুপ থাক বোন। দেখছোস না! অ্যার মত বাতাসি ওর ঠেলায় গাছোত চড়ে বইয়া আছি।"

এই তোমাদের আস্কারা পেয়ে পেয়ে ও আজ এতদুরে আসছে। আগেই যদি সোজা করতে তাহলে এমন কাজ কখনো করতো না। কথা গুলো শেষ না হতেই রুমকি এমন কথা শুনলো তিতিরে মুখ থেকে, যা শুনে ওকে মান সম্মানের ভয়ে চুপ হতে বাধ্য হতে হলো। এমন সময় কামরান সাহেবও দরজায় এসে উপস্থিত হল।

এদিকে তিতির চেয়ারে উঠে একটা গ্লাস মুখে নিয়ে মাইক্রোফোন বানিয়ে উচ্চ স্বরে বলতে লাগলো-

~" একটি শোক সংবাদ, একটি শোক সংবাদ। আমাদের রুমকি খাতুনের একটা ঢিলে ঢালা জাঙ্গিয়া হারিয়া গিয়াছে। সে খুঁজিয়া খুঁজিয়া হয়রান হয়ে গিয়াছে। কোন সৎ হৃদয়বান ব্যাক্তি যদি তাহা পাইয়া থাকে, তাহলে উহা যেন তাহার নিকট ফিরিয়া দেন। এর জন্য উপযুক্ত পুরষ্কার তাহাকে দেওয়া হবে।
ঘোষনায় উক্ত পরিবারে একজন।"

এমন ভাষন রুমকির জন্য অত্যান্ত লজ্জাজনক। ও শুধু করুন মুখে কামরান সাহেবের দিকে চেয়ে মামা বলে একটা হাঁক ছাড়লো। বাতাসি বিবিতো ভয়ে পারেনা চেয়ারের মধ্য সেন্ধে যেতে।

কিন্তু তিতির মহারানীর এসবে কোন পরোয়া নেই। বর বলেছে এদের শায়েস্তা করতে, তাহলে তিতিরকে আর থামায় কে! এদের না সে ব্যান্ড বাজিয়েই ছাড়বে? তাই তিতির লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে নেমেই কাউকে তোয়াক্কা না করে মুখে সুর তুলে স্বামীকে কল করে সব জানাতে উপরে চলে গেল।
নিরবতার মাঝে তিতিরের মুখে শুধু কয়েকটা বাক্যই শোনা গেল,

পূর্ব দিগন্তে বান্দর উঠেছে,
রপালী তাল, রপালী তাল,রপালী তাল
জোয়ার এসেছে, পূর্ব মুহুত্ত্বে
নিসা ছাল, নিসা ছাল, নিসা ছাল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন