০১!!
-What do you mean you are marrying someone else? Just Answer me Julie.
-দেখো রাহাত। আমি তোমাকে এখানে আমার আর সোহানের বিয়ের খবরটা দিতেই এসেছি। তাই প্লিজ সিনক্রিয়েট করো না।
-সিনক্রিয়েট করবো না? আচ্ছা ঠিক আছে। তো বল? কি বলবি? সোহানকে বিয়ে? সিরিয়াসলি? তোর এতোদিন ধরে আমাকে ভালোবাসাটা তাহলে কি ছিল? ইউ লাভড কি? রাইট?
-হ্যাঁ রাহাত--। আই লাভড ইউ। আমি ভালোবাসতাম তোমাকে। খুব ভালোবাসতাম। যতবার তোমাকে ভালোবেসে পেতে চেয়েছি ততবার তুমি ফিরিয়ে দিয়েছ আমাকে। আর--সোহান? ও আমাকে বড্ড ভালোবাসে জানোই তো? তুমি যতবার আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছ, ততবারই ও আমাকে সামলেছে। আমার যখন খুব করে মন খারাপ হতো, তখন ঢুকরে কান্না করার জন্য ওর কাঁধটা সবসময় পেয়েছি একমাত্র সম্বল হিসেবে৷ এক তরফা ভালোবাসা নিয়ে হয়তো সংসার করতে পারতাম তোমার সাথে, কিন্তু সেটা কি সুখের হতো? তুমিই বলো?
-বাহ! তা এখন এক তরফা হবে না তোর সাথে সোহানের ভালোবাসাটা? তোদের দুজনের সংসারটা? তুইও তো ওকে ভালোবেসে বিয়ে করবি না?
-হয়তো হবে---। এক তরফা ভালোবাসার সংসার৷ কিন্তু কি জানো তো? সোহান আমাকে ভালোবাসে, সেটা আমি বুঝতে পারি। আমি তোমাকে ভালোবাসি সেটাও সোহান জানে, আমিও জানি। তাই কোন লুকোচুরি নেই আমাদের সম্পর্কটায়৷ আর আমিও ধীরে ধীরে হয়তো ওর ভালোবাসার অভ্যস্থ হয়ে যাবো---।
-মানে? আমার সাথে তোর সম্পর্কে তাহলে লুকোচুরি ছিল? আমি জানতাম না তুই যে আমাকে ভালোবাসিস?
-হয়তো তুমি জানতে আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু কখনো অনুভব করেছ আমার ভালোবাসা? তুমি জানো রাহাত ভালোবাসা কাকে বলে? কখনো কারো কষ্টটা তোমার নিজের বলে বুকে লেগেছে তোমার? আমার না হোক অন্য কারো? তাকে এক নজর দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে সকালের অপেক্ষা করেছ কখনো? তাকে দেখতে পাও নি বলে বুকের ভিতরে অজানা একটা ভয়, শূন্যতার খেলা অনুভব করেছ কখনো? করো নি রাহাত। তুমি আসলে জানোই না ভালোবাসা আসলে জিনিসটা কি---।
-------------------------------
জুলি নামের মেয়েটা চেয়ার ছেড়ে উঠে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। আবার কি মনে হতে ফিরে এসে রাহাতের সামনে এসে দাঁড়ালো।
-রাহাত? একটা কথা সবসময় মনে রেখো। কাউকে ভালোবাসলে তাকে নিজের মাঝে আঁকড়ে ধরা জানতে হয়। যদি সেই মানুষটা তোমাকে ভালো না বাসে, তাকে তো আর জোর করে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু যদি সেও তোমাকে ভালোবাসে তাহলে তার হাজার মান অভিমান ভাঙিয়ে তাকে নিজের করে নিতে জানতে হয়।
-তোর লেকচার দেওয়া শেষ? এখন যা জুলি। সুখে থাকিস তুই আর সোহান। আর ভালোই বন্ধুত্বের পরিচয় দিলি দুজনেই। আজীবন মনে থাকবে আমার---।
-রাহাত? তুমি কি জানো? তোমার পথ থেকে আমি কেন সরে যাচ্ছি?
-আরো কিছু জানার বাকি আছে কি?
-হা হা হা। আমি এজন্য সরে যাচ্ছি না যে আমি সোহানের সাথে সংসার করতে চাই বলে। আমি সরে যাচ্ছি কারণ তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো।
-হোয়াট রাবিশ আর ইউ টকিং এবাউট?
-হাহ। তুমি হয়তো এখনো মানবে না রাহাত সে তোমার জীবনের সাথে কতটা মিশে গেছে৷ সবে তো মাত্র দুটো দিন কাটলো। তাই হয়তো টের পাও নি এখনো। তবে টের পাবে তুমিও রাহাত। তার শূন্যতা তোমাকেও পোড়াবে প্রতিনিয়ত। তাকে পাগলের মতো খুঁজবে। কাছে পেতে চাইবে সারাক্ষণ। কিন্তু আফসোস ততক্ষণে হয়তো এতোটা দেরি হয়ে যাবে যে -----। হারিয়ে ফেলার পর খুঁজে লাভ হবে না রাহাত। সময় থাকতে তাকে আটকাও। তুমি একবার ডাকলেই সে এখনো ফিরে আসবে তোমার কাছে---।
-কার কথা বলছিস? মায়ার?
রাহাত জুলির মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নটা করতেই জুলি আর কিছু না বলে মুচকি হাসলো। তারপর হাঁটা ধরলো সামনের দিকে। বাইরেই গাড়িতে ওর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে সোহান৷ নতুন জীবনের দিকে পা বাড়িয়ে আর তাই পিছনে ফিরে তাকাতে চায় না জুলি। আর রাহাতকে নিয়েও আর কোন দ্বিধা নেই এখন জুলির মনে। সেও হয়তো কোন একদিন নিজের ভুলটা বুঝতে পারবে। সেদিন হয়তো আজকের জুলির বলা কথাগুলোর আর কাজের জন্য ধন্যবাদও জানাবে।
জুলি চলে যাওয়ার বেশ অনেকক্ষণ পরও রাহাত থমকে রেস্টুরেন্টে বসে রয়েছে। কি হয়েছে বা কেন হয়েছে তার কিছুই রাহাতের মাথায় ঢুকছে না। যদিও জুলিকে নিয়ে সে ভাবছেও না। না সে সোহানকে নিয়ে চিন্তিত। ওরা দুজনেই রাহাতের বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড ভালোবেসে বিয়ে করছে তাতে রাহাত খুশিই। কিন্তু তার মাথায় অন্য একটা নাম চলছে৷ মায়া। একজন মিষ্টিভাষী মিষ্টি মেয়ে মায়াবতী। আসলেই কি মায়াবতীটাকে ভালোবাসে রাহাত? অসম্ভব! অফিসের স্টাফকে ভালোবাসা! না। কখনোই না৷ আর পাঁচজন ইয়াং বিজনেস ম্যাগনেটের মতো সুন্দরী পি এর সাথে চুটিয়ে প্রেম করে বিয়ে বা এফেয়ার করে কেরিয়ারের গায়ে কালি মাখার শখ নেই রাহাতের মোটেও। তাছাড়া কমার্শিয়াল লাইফ নিয়েই ব্যস্ত সে। এসব নিয়ে ভাবার সময়ই নেই রাহাতের।
একরাশ বিরক্তি মুখে ফুটিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো রাহাত। ড্রাইভারকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলে গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিয়ে ভাবনার জগতে পাড়ি জমালো রাহাত। চোখের সামনে দিনটার প্রতিটা মূহুর্তের ছবি যেন এখনো রাহাতের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ফুটে আছে। সেদিন রাহাত অফিসে নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আর জুলি পাশেই একটা চেয়ারে বসে ওর দিকে এক টুকরো স্যান্ডুইচ তুলে ধরে আছে। রাহাতের সেদিকে হুঁশ নেই। সে একমনে নিজের প্রজেক্টের প্রপোজাল রেডি করছে।
-রাহাত? খাও না? এভাবে না খেয়ে কাজ করার কি দরকার বুঝি না আমি। খাওয়া শেষ করেও তো কাজটা করতে পারো----?
-উফফ জুলি? প্যান প্যান থামাবি তোর? ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজ করছি। দেখছিস না?
-তুমি হা করো না? একটা স্যান্ডুইচ অন্তত খাও?
-ওফ! তুই থামবি জুলি------?
রাহাত জুলিকে ধমক দেয়ার জন্য মুখ খুলতেই জুলি ওর মুখে স্যান্ডুইচ পুরে দিলো। রাহাত চোখ লাল করে স্যান্ডুইচে কামড় বসিয়ে আবার কাজে মন দিলো। আর রাহাতের লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে জুলি হাসছে। তাতে রাহাত আরো বিরক্ত হয়ে কাজে মন দেয়ার চেষ্টা করছে। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে রাহাত মুখ তুলে সামনের দিকে তাকালো। অনুমতি না নিয়ে ওর রুমে সাধারণত কেউ আসে না। আসলে সেটা হয় জুলি, হয়তো সোহান আর নয়তো বাবা। মুখ তুলেই তাই বাবার পিছনে একটা মেয়েকে দাঁড়ানো দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল রাহাতের। একদম সাদামাটা একটা মেয়ে। পড়নে হালকা নীল আর সাদা কম্বিনেশনের একটা থ্রিপিস জামা। সাজহীন এই সাদামাটা মুখটায় যেন রাজ্যের মায়া উপচে পড়ছে৷ কিন্তু মেয়েটা এখানে অফিসে কি করছে সেটাই বুঝতে পারলো না রাহাত৷
-ড্যাড? তুমি হঠাৎ এখানে?
-তোমার নতুন পি.এ এপয়েন্ট করেছি৷ ওর সাথেই পরিচয় করিয়ে দিতে নিয়ে এলাম----।
-ড্যাড? আমার পি. এ লাগবে না৷ উফফ। উটকো ঝামেলা চাই না প্লিজ। নিজের মতো কাজ করছি সেই বেশ। আর এক জুলির অত্যাচারেই অলরেডি হিমশিম খাচ্ছি----। আবার পি.এ? নো নিড ড্যাড। প্লিজ?
-তোমার পারমিশন চাই নি আমি রাহাত৷ আমি তোমাকে আমার এপয়েন্ট করা নতুন পি. এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এসেছি।
-ড্যাড? প্লিজ?
-এটা আজীজ মাহমুদ চৌধুরীর অর্ডার মিস্টার রাহাত মাহবুব চৌধুরী। যদি তুমি নিজের নতুন প্রজেক্টে কাজ করতে চাও তাহলে মায়াকে নিজের পি.এ হিসেবে মেনে নিতে হবেই---।
-অদ্ভুত তো ড্যাড! এই মেয়ে কাজের আগামাথা কিছু জানে কি জানে না তা না জেনেই ওকে আমি নিজের ড্রিম প্রজেক্টে কাজ করতে এলাউ করবো? সিরিয়াসলি--?
-আমি ওর কোয়ালিফিকেশন না দেখেই এপয়েন্ট করি নি নিশ্চয়ই রাহাত? আশা করি এটা ভাবছো না তুমি?
-কিন্তু? ওকে দেখে তো মনে হচ্ছে না পি.এর কাজ করতে পারবে--৷ ড্রেসআসের এই অবস্থা! আর ও হবে আমার পি.এ? ও গড! বাবা! আমার কাজগুলো দেখার জন্য জুলি আছে তো ড্যাড---? আর কাউকে নতুন করে এপয়েন্ট করা লাগবে না----।
-শি ইজ ইওর পি. এ রাহাত। রিসেপশনিস্ট না যে ওর ড্রেসআপ নিয়ে তোমার মাথাব্যথা দেখাতে হবে--।
-ড্যাড? একটু তো বোঝার চেষ্টা করো?
-এন্ড মিস্টার রাহাত? তোমার ফ্রেন্ড জুলি নিশ্চয়ই তোমাকে তোমার প্রজেক্টের কাজে হেল্প করতে পারবে না?
-তা না পারলেও-----।
-আর হ্যাঁ--। কালকে থেকে অফিসের স্টাফ বাদে বাকি কারো অফিসরুমে ঢুকতে দেয়া হবে না।
-হোয়াট?
-রিলেটিভস, ফ্রেন্ডস সবাই বাসায় আসবে৷ কাজের জায়গায় নয়---। মা জুলি বুঝতেই পারছো? নতুন রুলস। আর চৌধুরী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি নিজেদের রুলসের ব্যাপারে অনেক স্ট্রিক্ট---। জানোই তো? তাই গেট টুগেদার বাসায় হবে এবার থেকে। কেমন মা?
জুলি আর রাহাত দুজনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো একবার৷ আর আজীজ মাহমুদ চৌধুরীর পিছনে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে রাগী চোখে তাকালো রাহাত। মেয়েটার মায়াবী মুখটা এখন আর রাহাতের মনটা গলাতে পারলো না। এই মূহুর্তে এই উটকো ঝামেলা মেয়েটার উপরে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রাহাতের। কোথাকার একটা মেয়ে হুট করে এসে এভাবে ওর সমস্ত স্বাধীনতার দফারফা করে দিলো! আর রাহাতকে সেটা চুপচাপ হজম করতে হবে? রাহাত দাঁতে দাঁত চেপে মেয়েটার মুখের দিকে তাকালো। আর মনে মনে একটা কথাই আওড়ালো।
"তুমি আমার পি.এর কাজটা কি করে করো সেটাও আমি দেখে নিব মিস ঝামেলা। নিজেই যদি কাজ ছেড়ে দিয়ে না পালিয়েছ তবে আমারও নাম রাহাত নয়। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ মিস মায়াবতী। এমন টর্চার করবো বুঝবে রাহাত মাহবুব চৌধুরী কি জিনিস। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।"
০২!!
সেদিনের পর থেকে রাহাতের হাজার ইচ্ছে সত্ত্বেও রাহাতের পি. এর পদে বহাল হলো মায়া। মেয়েটাকে একদম প্রথম দিন থেকেই প্রতিটা মিনিটে দৌঁড়ের উপরে রেখেছে রাহাত। একটা কাজ এদিক ওদিক হলেই ধমক। আর ধমক খেয়ে বেচারির মুখটা একেবারে শুকিয়ে ছোট্ট বাচ্চাদের মতো কাঁদোকাঁদো হয়ে গেলে রাহাত আর চাইলেও কিছু বলতে পারে। মেয়েটার মুখের মায়ার কাছে হার মানতেই হয় তাকে। আর মায়াও সেদিনের মতো বেঁচে যায়। এভাবে কিছুদিন কাটলো। রাহাতও মনে মনে প্রতিদিন পণ করে আজ সে মায়াকে ছাটাই করবেই করবে৷
আজও সকালে অফিসে আসতেই মায়ার ডাক পড়লো রাহাতের রুমে। মায়া একটু ভয়ে ভয়েই এসে রাহাতের রুমের দরজায় নক করে রুমে ঢুকলো। আর রাহাতও ওর দিকে না তাকিয়ে এক গাট্টি ফাইল ধরিয়ে দিলো মায়াকে।
-এই ফাইলগুলো চেক করো।
-জি স্যার---।
মায়া বাইরের দিকে পা বাড়াতেই রাহাত ভ্রু কুঁচকে মায়ার দিকে তাকালো।
-তোমাকে কি রুম থেকে বাইরে যেতে বলেছি আমি মিস মায়াবতী?
-স্যার?
-এখানে বসেই চেক করো--। অন্য রুমে গিয়ে চেক না করেই এসে বলবে ঠিক আছে সব--। এই প্ল্যান করেছ না?
-না স্যার---।
-তো যেটা বলছি সেটাই করো---। চুপচাপ এখানে বসেই চেক করো?
-জি-----।
মায়া রাহাতের মুখোমুখি একটা চেয়ার টেনে বসে মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখায় মন দিল। আর রাহাত একটু পর পর মুখ তুলে মায়াকে দেখছে। মেয়েটা নিজের কাজ এমন মগ্ন হয়ে করছে যে রুমে রাহাতও বসে আছে সেদিকে একেবারেই খেয়াল নেই ওর। মায়া নিজের কাজে মগ্ন। অথচ রাহাত নিজের কাজটাই করতে পারছে না। একটু পর পর মুখ তুলে দেখছে সামনে বসা মায়া পরীটাকে। কেন জানি ভিষণ বিরক্ত লাগছে রাহাতের। মনের মধ্যে কেউ একজন খুব করে চাইছে মেয়েটা একবার মুখ তুলে ওর দিকে তাকাক। একবার চোখাচোখি হোক দুজনের৷ নিজের এমন অযাচিত ইচ্ছেয় নিজেই একটু বিব্রত হলো রাহাত। ওর মনের কথাটা মায়া জেনে গেলে কি ভাববে সেটাই ভাবছে রাহাত। পরক্ষণেই আবার নিজেই একটু হাসলো রাহাত। ও কি ভাবছে সেটা মায়াবতীটা জানবে কি করে!
রাহাত মায়াকে দেখা বন্ধ করে নিজের কাজে মন দেয়ার চেষ্টা করলো। মায়া সবগুলো ফাইল এক বসায় চেক করা শেষ করে মুখ তুলে তাকাতেই রাহাতের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। আর চোখাচোখি হতেই মায়ার মুখে লাল একটা আভা ফুটে উঠলো। মায়া খানিকটা বিব্রত হয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।
-স্যার? ফাইল চেক করা হয়ে গেছে। এই ফাইল দুটোয় একটু সমস্যা আছে। বাকিগুলো সব ঠিক আছে।
-গুড----। তুমি যাও--। অনেক সময় হয়ে গেছে--। হাফ এন আওয়ার পরে আমার বি. এস. এম কোম্পানির সাথে একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে--। কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করো--। না খেয়ে আছি সকাল থেকে---।
-সরি সরি স্যার---। আমি এক্ষুণি দেখছি---।
-বাদ দাও। এখন খাওয়ার সময় নেই একদমই। তুমি এক কাপ কফি করে আনো---। হা করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও?
-জি? জি স্যার---।
রাহাতের ধমক খেয়েই মায়া ছুটে পালালো রুম থেকে। বাইরে এসেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো মেয়েটা। বজ্জাত লোকটা এতো ধমকায় কেন সারাদিন কে জানে? নিজেকে কি একেবারে রাজা মহারাজা কিছু মনে করে নাকি? হুহ। মায়া বিরক্ত হয়ে নিজের মনেই বিড়বিড় করতে করতে পিয়নকে খুঁজতে গেল। জনাবের হুকুম হয়েছে কফি খাবেন এখন। আর সেটা মায়াকেই জোগাড় করতে হবে। অদ্ভুত লোক একটা! এতো তিতা তিতা কথা বলে যে ইচ্ছে করে করলার জুস খাওয়াতে। অবশ্য তাতে তো মায়ার নিজেরই লস। তাই সেই চিন্তাটা আপাতত বাদ দিয়ে কফির ব্যবস্থা করতে চলে গেল।
আরো কিছুক্ষণ পর পিয়নকে খুঁজে বের করে কফির কথা বলতেই পিয়ন কয়েক মিনিটের মধ্যেই এক মগ কফি এনে মায়াকে দিলেই মায়া প্রায় ছুটে রাহাতের রুমে এলো। রাহাতের সামনে কফির মগটা রেখে মায়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
-মিস মায়াবতী? এটা কি?
-জি স্যার--? আপনার ক-ক-কফি---।
-আমি কি আপনাকে লাইট কফি আনতে বলেছিলাম মিস মায়াবতী?
-জি স্যার? কফি আবার লাইট হয় কি করে?
-মায়া? ফাইজলামি করো তুমি আমার সাথে? আমি স্ট্রং কফি খাই। এতোদিন আমার পি. এ হয়ে আছো অথচ এই সামান্য ব্যাপারটা জানো না? সামান্য একটা কফি বানাতে পারো না, ইভেন জানোও না এখন পর্যন্ত আমি কি কফি খাই-এই তুমি আমার পি.এর কাজ করবে? হ্যাঁ? লাইক সিরিয়াসলি?
রাহাতের বকা খেয়ে মায়ার ঠোঁট জোড়া একবার কেঁপে উঠলো। তারপর মেয়েটার মায়াবী চোখ জোড়া বেয়ে অশ্রুর ঢল নামলো। রাহাত এতোক্ষণ মায়ার মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিল। মায়ার কান্নাভেজা মুখটা দেখে রাহাত চোখ ফিরিয়ে নিলো। বিরক্ত ভঙ্গিতে টেবিলে একটা চাপড় দিলো।
-ব্যাস হয়ে গেল। কান্না করে কি মজা পাও বলো তো তুমি? উফ! কান্না করলেই কি তোমার সব দোষ মাফ হয়ে যাবে?
-স্যার---। আমি কি করে জানবো আপনি কফি লাইট নাকি স্ট্রং খান? শফিক ভাই তো কফি বানিয়ে দিলো?
-এই মেয়ে? কান্না বন্ধ করো?
-আপনি আমাকে কাজে রাখতেই চাইছেন না তাই এমন করছেন। এখন আমি আপনার ওই তিতা তিতা কফি এনে দিলেও আপনি আমাকে বকা দিতেন--। আমি কাল থেকে আর আসবোই না আর অফিসে-। না। কাল থেকে না। আমি এখনই চলে যাবো--। আর আসবোই না। আপনারও আর বিরক্ত হতে হবে না----।
মায়া পিছনে ঘুরে দরজার দিকে এগোতেই রাহাত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
-মিস মায়াবতী? দাঁড়ান---।
-স্যার আমার নাম মায়া।
মায়া কোনমতে ফোঁপাতে ফোপাঁতে কথাটা বলে রাহাতের দিকে তাকালো। রাহাত কফির মগটায় ততক্ষণে চুমুক দিয়েছে৷ আর মায়ার কান্নাভেজা মুখটা দেখছে এক দৃষ্টিতে।
-তোমাকে কি আমি বলেছি যেতে? যাচ্ছো কোথায়?
-আমি কি করবো? আপনি সবসময় শুধুশুধুই আমাকে--।
-আমি কি?
-না না স্যার--। কিচ্ছু-কিছু না।
-গুড। কান্নাকাটি করে মুখের কি হাল করেছেন বলুন তো? আপনি নাকি আমার সাথে মিটিংয়ে যাবেন এখন? এই ফেইস নিয়ে? হয়ে গেল তাহলে আমার মিটিং আজকে---।
-------------------------------
-পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ এনাফ হয়ে আসুন মিস মায়াবতী। আর হ্যাঁ একটা কথা। কাল থেকে কফিটা যেন শফিকের না বানাতে হয়। সকালের কফিটা যেন অফিসে আসার সাথে সাথেই পাই। বুঝা গেল? আর আজই প্রথম আর শেষবার এই লাইট কফি খাচ্ছি--। কাল থেকে কি করে আমাকে আমার স্ট্রং কফি দিবেন আমি জানি না--। তবে কালও আজকের মতো লাইট কফি পেলে--।
-জি -জি স্যার---। না স্যার-। কোন ভুল হবে না কাল থেকে--। সত্যি স্যার। প্রমিস--।
-এখন ফ্রেশ হয়ে আসো। ফাস্ট। আমরা বের হবো এক্ষুণি--। পাঁচ মিনিট টাইম---।
-জি স্যার---।
মায়া আবার ছুটে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। মায়া রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই রাহাত পিয়নকে আসার জন্য বেল বাজালো। পিয়ন শফিক এসে রাহাতকে সালাম করে রুমে ঢুকলো। রাহাত একটা পাঁচশ টাকার নোট এগিয়ে দিলো শফিকের দিকে। শফিক ইতস্তত করে তাকালো রাহাতের বাড়িয়ে দেয়া নোটটার দিকে। রাহাত হাত বাড়িয়ে টাকাটা শফিকের হাতে গুঁজে দিলো।
-আরে রাখো শফিক। তুমি তোমার কাজটা ঠিকমতো করেছ। এটা তোমার প্রাপ্য--।
-স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-হুম। করো---।
-স্যার মায়া ম্যাডাম কি আর আসবে না অফিসে? আজকেই কি---?
-আসবে--। আমি নিজের কাজটা করতে পারি নি---।
-জি স্যার?
-কিছু না শফিক। তুমি যাও এখন। কাজ করো। আর শোনো কথাটা যেন আর কেউ না জানে--। বিশেষ করে যেন ড্যাড না জানে--। তাহলে কিন্তু --।
-জি স্যার--। আপনি চিন্তা করবেন না। কেউ জানবে না।
-হুম--। গুড।
শফিক বেরিয়ে যেতেই রাহাত টেবিলে একটা জোরে ঘুষি দিয়ে নিজের চেয়ারে হেলান দিলো। মেয়েটার কান্নাভেজা মুখটা দেখে ওর বুকের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু কেন? কি আছে মেয়েটার এই কান্না ভেজা চোখে? অবশ্য সেসব না ভেবে অন্য কথায় মন দিলো রাহাত। মায়াকে কি করে বিদায় করা যায়! কি দিনকাল এসেছে তার। নিজের অফিসের পিয়নকে টাকা দিয়ে কাজে গন্ডগোল করাতে হচ্ছে। তাও কি জন্য! এই একটা মেয়েকে বিদায় করার জন্য! অথচ যখন মেয়েটা নিজেই চলে যেতে চাচ্ছে তখন সে নিজে গাধার মতো আটকাচ্ছে মেয়েটাকে। কি যে করছে আর কেনই বা করছে সেটা রাহাতের নিজের কাছেই পরিষ্কার নয়৷ নিজের মনে এসব ভেবে নিজেকেই কিছুক্ষণ গালাগাল করলো রাহাত। পরে আবার সামলে নিলো নিজেকে। মেয়েটাকে তাড়ানোর জন্য অন্য কোন প্ল্যান করতে হবে। আরো ইফেক্টিভ কোন প্ল্যান লাগবে। সব ছেড়ে মায়াকে তাড়াতে কি করা যায় সেটা ভাবায় মন দিলো আবার রাহাত।