প্রিয়তা (পর্ব ১২)


গভীর রাত।চারদিকে বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা।পাশ থেকেই ভেসে আসছে ঝি ঝি পোকার ডাক।সবাই ঘুমে বেঘোর থাকলেও ঘুম নেই আরশির চোখে।হাজার চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারে নি সে।অজানা এক সাহসিকতা ঘিরে ধরেছে তার মন কে।শত চেষ্টা করেও প্রতিবাদী হয়ে ওঠা মনটাকে থামাতে পারছে না আরশি।একদিকে ভালোবাসা অন্যদিকে মাথায় চেপে থাকা প্রতিশোধ। সে কোনো ভুল করছে নাতো?না ভুল করে নি সে।চোখের সামনে ভেসে উঠা সত্য কখনও মিথ্যা হতে পারে না।তবুও নিজের মন কে মানাতে পারছে না আরশি এতো বড় পদক্ষেপ নিতে।যেই মানুষটাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে কিভাবে হারাবে আরশি তাকে!!!কিভাবে বাঁচবে তাকে ছাড়া?আত্মহত্যা মহাপাপ।যখন চাচা-চাচির বাসায় শত কষ্ট নিয়ে থেকেছে তখন তো আত্মহত্যা করে নি তবে এখন কেন করবে?না সম্ভব না আরশির কাছে।প্রিয় মানুষটা কে ছাড়া বাঁচাও সম্ভব না আরশির কাছে।কিন্তু প্রিয় মানুষ টা যে কেঁড়ে নিয়েছে নিজের  কাছের একজন মানুষ কে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠার চেষ্টা করল আরশি।আয়াজ তাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে।আস্তে করে পেটের উপর থেকে হাতটা সরিয়ে উঠল আরশি।আয়াজ কিছুটা নড়ে উঠলে ভয় পেয়ে স্তব্ধ হয়ে রইল।একটু নড়ে আবারও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল আয়াজ।তপ্ত একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে টেবিলের উপরে রাখা ব্যাগ থেকে ছুড়ি বের করে নিল আরশি।ছুড়িটার দিকে এক পলক তাকিয়ে এগিয়ে গেল আয়াজের দিকে।ঘুমন্ত আয়াজ কে দেখে বুকটা ধুক করে উঠল আরশির। কি সুন্দর করে ঘুমোচ্ছে আয়াজ!!ঘুমন্ত আয়াজ কে আরো বেশি সুন্দর লাগছে আরশির।ঠোঁট দুটো কেমন লাল হয়ে আছে!সিল্কি চুলগুলো কপালে এসে পড়ছে।এলোমেলো আয়াজ কেই আরশির কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ মনে হচ্ছে। নিঃসন্দেহে আয়াজ একজন সুপুরুষ। যার জন্য পাগল কতো রূপসী মেয়েরা। অথচ আরশির মতো শ্যামলা অতি সাধারণ একটা মেয়ে এই ছেলের প্রাণ। আয়াজের দিকে ঝুঁকে কপালের চুল গুলো সরিয়ে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ দিল আরশি।চোখ দুটো ছলছল করে উঠল তার। 

হাতে রাখা ছুরি টা নিয়েই দৌড়ে বেলকনিতে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল ।ছুরি টা হাতে চেপে ধরে কেঁদে দিল আরশি। যেই কান্নার কোনো শব্দ নেই কিন্তু অঝোর ধারায় গড়িয়ে পড়ছে জল।ভিজে যাচ্ছে আরশির গলার কাছটা।সেই সাথে রক্ত ফোটা ফোঁটা করে ঝরে পড়ছে ফ্লোরে।

পারব না আমি। পারব না নায়ক সাহেব।নিজের জীবন নিজে নিতে পারব না।আপনি আমার জীবন হয়ে উঠেছেন।যাকে ছাড়া নিজেকে আর ভাবতেই পারি না।কেন আপনি এমন করলেন নায়ক সাহেব?কেন এই অজানা সত্য টা জানলাম আমি।না জানলে কত ভালো হতো।সুখেই তো ছিলাম আমরা।জীবনে আপনাকে পেয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মনে করতাম নিজেকে।হে,,,আমি ভাগ্যবতী আপনাকে পেয়ে তবে বছর খানেক আগে কেন আমাদের জীবনটা নষ্ট করে দিলেন আপনি?কেন কেঁড়ে নিয়েছিলেন আমাদের সুখগুলো কে?না পারছি প্রতিনিয়ত এই বিষাক্ত সত্যি নিয়ে আপনার সাথে বাঁচতে আর না পারছি আপনাকে শেষ করে দিতে। আপনার ভালোবাসা আমায় বাঁধা দিচ্ছে। খুব করে বাঁধা দিচ্ছে। ---কথাগুলো বলে কেঁদে উঠল আরশি।

হাতটা কারো হাতে বুঝতে পেরেই ব্যাথায় নড়ে উঠল আরশি।আয়াজ কে দেখেই পিলে চমকে উঠল তার।কি জবাব দিবে সে?কেন কাঁদছিল? তার হাতে ছুড়িই বা কেন?খুবি বিচক্ষণ মানুষ আয়াজ।সন্দেহ নিশ্চয়ই করে ফেলেছে। তা আয়াজের তাকানো তেই বুঝতে পারছে আরশি।এতোদিন খুব সতর্ক ভাবে সব করেছিল আরশি।এতোকিছু শিখে এতো সাহস যুগিয়ে লাভ হয়নি তার।অথচ আজ ভালোবাসার কাছে দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়ল আরশি।এমন কেন ভালোবাসা? মানুষ এতো কাঙাল কেন হয় ভালোবাসার?কেন ভালোবাসার কাছে হেরে যায় ঘৃণা, প্রতিশোধ????আরশিও হেরে গেছে।খুব বাজে ভাবে হেরে গেছে।  জীবনের দুটানায় ভুগছে।না পারছে মরতে না পারছে মারতে।আর না পারছে ভালোবাসা নিয়ে সুন্দর জীবন কাটাতে।
আরশি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়াজ কোলে তুলে রুমে নিয়ে আসল তাকে।ফাস্ট এইড বক্স এনে বসল আরশির পাশে।হাতটা টেনে নিয়ে নিজের কোলে রাখল আয়াজ।অবাক হল আরশি।এতো নীরব কেন আয়াজ?কোনো রিয়েক্ট নেই।হাতে তুলো লাগতেই আহহ বলে চিতকার করে উঠল আরশি।কিছু বলল না আয়াজ।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।আরশি হাত সরাতেই নিজের আরো কাছে টেনে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল আয়াজ।পেইন কিলার আরশির হাতে দিয়ে ইশারা করল খেয়ে নিতে।আয়াজের মুখের দিকে তাকিয়ে ঔষধ টা খেয়ে নিল আরশি।তার কেমন যেন লাগছে আয়াজ কে?চোখ দুটো এতো লাল হয়ে আছে।কিন্তু উপর দিয়ে এতো শান্ত! আরশির হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে টেবিলে রাখল আয়াজ।

-মারতেই যখন পারবে না তবে কেন এতো পরিশ্রম তোমার?আমায় যখন মারার উদ্দেশ্য নিজেকে কেন রক্তাক্ত করলে প্রিয়তা?
(হালকা হেসে।যেই হাসির মাঝে লুকায়িত আছে অসীম কষ্ট।) 

বিছানায় শুতে শুতে কথাটা বলল আয়াজ।থমকে গেল আরশি।ভয়ে ভীতি সব ঘিরে ধরল তাকে।বুকটা কাঁপতে লাগল প্রচন্ড গতিতে।পা দুটোও অসাড় হয়ে আসছে।কিছুই বলতে পারছে না সে।মনে হচ্ছে গলাটা জমে গেছে।

আয়াজ জানত আরশি তাকে মারার চেষ্টা করছে তবুও সুযোগ দিয়ে রেখেছে তাকে।আগলে রেখেছে নিজের মাঝে।একটা বারও কিছু বলে নি।বুকে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে আরশির।কতটা ভালোবাসলে  ভালোবাসার মানুষ টা তাকে মারার প্লেন করছে বুঝতে পেরেও  মানুষটাকে  ভালোবেসে নিজের মাঝে আগলে রাখে!!!
কাঁপা কাঁপা পায়ে আরশি আয়াজের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। শোয়া থেকে উঠে বসল আয়াজ।পাশের ড্রয়ার থেকে বন্দুক টা বের করে এগিয়ে দিল আরশির দিকে।নিল না আরশি।অবাক চোখে তাকাল আয়াজের দিকে।এখনও আয়াজের চোখ দুটো রক্তিম।আবারও ইশারা করল আয়াজ বন্ধুক টা নিতে।নিল না।
---রিভলবার টা নিতে বলেছি তোকে।-কথাটা ধমকের সুরে বলল আয়াজ।
আয়াজের ধমকে কাঁপা কাঁপা হাতে রিভলবার টা তুলে নিল আরশি।রাগী সুরে বলে উঠল আয়াজ,,,

---শুট মি.......

আয়াজের কথায় কেঁপে উঠল আরশি।বন্দুক টা ফেলে দিল হাত থেকে।আচমকাই ঝরের বেগে আয়াজ দেয়ালের সাথে চেপে ধরল আরশি কে।হাতের ব্যাথায় ককিয়ে উঠল আরশি।

----লেগেছে না?আমারও লেগেছে। কোথায় জানিস?এখানে।(বুকে হাত দিয়ে দেখাল আয়াজ)।খুব লেগেছে আমার প্রিয়তা।আমায় মারতে গিয়ে নিজের হাত কেটেছিস কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার।আমায় মেরে ফেললেও ততটা কষ্ট হত না আমার।যেদিন জানতে পেরেছি আমায় মারার জন্য ইফাজের সাথে প্ল্যানিং করছিস সেদিনই মরে গেছি আমি।তুই চাইলে তো এমনিতেই নিজের জীবন দিয়ে দিতাম আমার পিছনে ছুরি মারার কাঠখড় পুড়িয়ে এতো প্ল্যান করার কোনো প্রয়োজন ছিল না তোর প্রিয়তা।

আয়াজের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে।ঠোঁট চেপে কাঁদতে লাগল আরশি।হাতের ব্যাথা আর প্রিয়তমের কান্না কোনোটাই সহ্য হচ্ছে না তার।কান্না সহ্য করতে পারছে না অথচ মানুষটা কে মারতে চাইছিল সে।ভাবতেই অনেক যন্ত্রণা অনুভব  হচ্ছে তার।

মাথার চুল গুলো টেনে আরশির দিকে তাকাল আয়াজ। কান্নার জন্য চোখ দুটো ভীষণ লাল হয়ে গেছে তার। আরশির দিকে ঝুঁকে রাগী কন্ঠে চিতকার করে বলে উঠল আয়াজ,,

-আমাকে মারতে চাওয়ার  কারণ ?(রাগী কন্ঠে) 

মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল আরশি।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল,,

--ক...কার..ণ  আপনি আ...মার বাবা কে খুন করেছেন।

—————

গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে আরশি।ব্যাথায় টনটন করছে তার গাল টা।হাতের অসহ্য ব্যাথা তার ওপর আয়াজের শক্ত হাতের থাপ্পড়। তখন আপনি আমার বাবার খুন করেছেন কথাটা বলার সাথে সাথেই থাপ্পড় টা দেয় আয়াজ।ভয়ে একদম দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল আরশি। কোথায় গেল তার এতদিনের সাহস?সাহস আছে তবে তার নায়ক সাহেবের ভালোবাসা, কষ্ট, রাগের কারণে সব সাহস  হাওয়া হয়ে উড়ে গেল।রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলাল আরশি।সবকিছু এলোমেলো হয়ে আছে।মনে হচ্ছে ভীষণ বড় ঝড় বয়ে গেছে রুমে আর লন্ড ভন্ড  করে দিয়ে গেছে সবকিছু।ড্রেসিং টেবিলের আয়না টা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে ফ্লোরে।বিছানায় মাথা নিচু করে বসে থাকা আয়াজের হাত থেকে রক্ত চুইয়ে চুইয়ে  পড়ছে ফ্লোরে। আঁতকে উঠল আরশি।

আয়াজের কাছে যেতেই রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকাল আরশির দিকে।ভয় পেল আরশি। তবুও দমে গেল না।কাঁপা কাঁপা হাতে আয়াজের হাতটা স্পর্শ করতেই ছিটকে সরিয়ে দিল আয়াজ।কষ্ট পেল আরশি।তবুও আবারও হাতটা ধরতে নিলে  রাগী কন্ঠে বলে উঠল আয়াজ,,

---মারতেই তো চাইছিস।সামান্য হাত কেটে গেছে তাতে এতো দরদ দেখানোর প্রয়োজন নেই তোর। তোর বাবার খুনীর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে এতে তো তোর আরো খুশি হওয়া উচিত।সুযোগ আছে মেরে ফেল আমায়।রিভলবার চালানো তো শিখেই গেছিস।সুযোগ থাকতেই মেরে দে।নয়তো পরে সারাজীবন আমার বন্দীনি হয়ে কাটাতে হবে তোর।এই খুনীর সাথেই তোর থাকতে হবে।

ঝড় বয়ে যাচ্ছে আয়াজের মনে।ভালোবাসা,, সংসার সবকিছুই টিকে বিশ্বাসের উপরে। যেই মেয়েটা কে সবসময় বলে এসেছে তার উপর বিশ্বাস রাখতে পরিস্থিতি যেমনই হোক, সেই মেয়েটা তাকে মারতে চাইছে আজ।ছুরি চালিয়েছে তার পিছনে।অবিশ্বাস করেছে তাকে।এই মেয়ে কখনও ভালোবাসতে পারে না আমায় পারে না।----কথাগুলো বলে হাতটা মুঠো করে বসে রইল আয়াজ।আর কতটা কষ্ট পেতে হবে জীবনে জানা নেই তার।

আয়াজের কথাগুলো শুনে ফু্ঁপিয়ে কেঁদে উঠল আরশি।হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ল আয়াজের সামনে। 

-আমার ভালোবাসা সত্য নায়ক সাহেব।আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। দয়া করে আমার ভালোবাসা কে অস্বীকার করবেন না আপনি।---কাদতে কাঁদতে বলল আরশি।

-ভালোবাসা নিয়ে ছলনা করা বন্ধ করুন মিস আরশি।আপনার মুখে আর এইটা মানায় না।ভালোবেসে সামান্য বিশ্বাস টুকু আমার উপর রাখতে পারেন নি আপনি অথচ ভালোবাসার দাবি করছেন?ভালোবাসলে আমায় খুন করার চিন্তাটা ও আপনার মাথায় আসত না।একবার শুধু একবার আমার কাছে জিজ্ঞেস করতে পারতেন। আমি আপনায় মেরে ফেলতাম না কারণ আপনার হাতে মরতেও আমি রাজি আছি।----রাগী কন্ঠে অন্যদিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল আয়াজ। 

চোখ থেকে ঝরে পড়ছে জল।জীবনে কষ্ট পেতে পেতে ভেঙে পড়েছে সে।যাকে আঁকড়ে ধরে সুখের একটা জীবন চেয়েছিল সেই মানুষটাই এখন হয়ে উঠেছে তার প্রাণের শত্রু।
একহাত দিয়ে চোখ মুছে উঠে দাঁড়াল আরশি।আয়াজের মুখে আরশি ডাক শুনে বুকটা ধুক করে উঠল তার।এ কেমন ঝড় এল তাদের সুখের সংসারে। সব কেমন তছনছ হয়ে গেছে।

---আপনি কি একজন মাফিয়া নন?আপনি কি ইফাজ ভাইয়া কে মারতে চান না?আপনি মাফিয়া তা আমার বাবা জেনে গিয়েছিল বলে আপনি কি আমার বাবা কে খুন করেন নি?(কেঁদে কেঁদে) 

অবাক চোখে তাকাল আয়াজ।এখনো আরশির মুখে তার বাবার খুনী কথাটা শুনে মাথা গরম হয়ে গেল আয়াজের।

---আমি মাফিয়া তা সত্য। মানুষ খুন করি তাও সত্য।ইফাজ জানো****বাচ্চা কে খুন করব তাও সত্য। খুনী আমি।বুঝেছিস তুই????(রাগী কন্ঠে চিল্লিয়ে)

কেঁপে উঠল আরশি।

---আমি আপনাকে কাউকে খুন করতে দিব না।ইফাজ ভাইয়া কে ও ঠিক বাঁচিয়ে নিব আমি।

আরশির কথায় তাচ্ছিল্য করে হাসল আয়াজ।রিভলবার টা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নিল।আরশির একদম কাছে এসে দাঁড়াল। 

---ঐ জানোয়ার কে আল্লাহ ব্যতীত কারো ক্ষমতা নেই আমার হাত থেকে বাঁচানোর।তোর ও না।জানোয়ার দের শাস্তি দেওয়ার জন্যই আমার মাফিয়া হয়ে উঠা।

----আপনি এমন করতে পারেন না নায়ক সাহেব!

---আমার নাম আয়াজ বিন সাদ।কখনও যেন আর তোর মুখে নায়ক সাহেব না শুনি।তোর কোনো যোগ্যতা নেই আমায় নায়ক সাহেব ডাকার।আর আমি কি কি করতে পারি তোর  একটু হলেও ধারণা হয়েছে। তো এইবার চিন্তা কর আমার বোনের রেপিস্টদের আমি কি কি করতে পারি!!!

---মানে?

আরশির প্রশ্নে জবাব না দিয়ে আয়াজ কাভার্ড থেকে কিছু বের করে ছুরে মারল আরশির মুখের উপর। ছবিগুলো কুড়িয়ে নিল আরশি।একের পর এক ছবি দেখে চোখ দুটোতে পানি টলমল করে উঠল। এমন এক সত্য ও কখনও তার জানতে হবে ভাবে নি সে। মানুষটা একের পর এক মেয়ে নিয়ে ঘুরত সেটা আরশি জানলেও কখনো ভাবে নি যে এই মানুষ এতো জঘন্য। নিজেকে ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করছে আরশির যে এত নিকৃষ্ট এক জানোয়ারের কথায় আর কিছু দেখা প্রমাণে বিশ্বাস করে নিজের স্বামীকে মারতে যাচ্ছিল।প্রমাণ গুলোও হয়ত ধোঁয়াশা ছিল।আড়ালে সত্য ছিল অন্যকিছু।চোখ উঠিয়ে আয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,,

---ই..ইফাজ ভাইয়া আ,,আরোহী আপুর ভালোবাসার মানুষ ছিল!!(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে) 

---হুম।

----আরোহী আপুর মৃত্যুর জন্য দায়ী ওই জানোয়ার টা ইফাজ!!

কথাটা বলেই আচমকা ফ্লোরে বসে পড়ল আরশি।ভুল করে ফেলেছে সে।অনেক বড় ভুল।আয়াজের হাতের রক্ত পড়া এখনও থামে নি।রুমাল দিয়ে হাত টা বেঁধে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে।আরশি চেয়ে রইল আয়াজের যাওয়ার পানে।
কিভাবে সবকিছু ঠিক করবে সে?কে তার বাবার খুনী? নিজের স্বামী কে কিভাবে ভুল বুঝে মারার কথা ভাবল সে?মাফ চাওয়ার আর কোনো রাস্তাই যে নেই। আবারও ভেঙে দিয়েছে সে আয়াজের মন।

--আমি আপনাকে অবিশ্বাস করেছি নায়ক সাহেব।আমিও আপনাকে কষ্ট দিয়েছি।এতো কষ্ট নিয়ে আপনি কিভাবে বেঁচে আছেন আমায় আঁকড়ে ধরে তা ভুলে গিয়ে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম আমি।--কথাটা বলে ডুকরে কেঁদে উঠল আরশি।কাঁদতে কাঁদতে একসময় চোখ দুটো লেগে গেল তার।
সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে ফ্লোরেই আবিষ্কার করল আরশি। তার মানে আয়াজ আর আসে নি।হাতটা ব্যাথায় টনটন করে উঠল। কোনোমতে উঠে ওড়না টা গায়ে পেচিয়ে মায়ের রুমের উদ্দেশ্যে ছুটে গেল সে।
দুই টা ছেলের হাতে ছুরি দিয়ে একের পর এক পুছ দিয়ে যাচ্ছে আয়াজ।ছেলেগুলো চিতকার করে উঠছে বার বার।কিন্তু তাদের আর্তনাদ কারো কানেই পৌঁছাচ্ছে না।ছেলেগুলোর আর্তনাদ আয়াজের কানে যতবার পৌঁছাচ্ছে তৃপ্ততার হাসি হেসে আয়াজ তত বেশি আঘাত করছে।ছেলেগুলো বার বার ক্ষমা চাইছে। নিশাদ হাতে করে মরিচ আর একটা কৌটা তে ভরে পিঁপড়া নিয়ে আসতেই হাত থেকে ছুরি টা রেখে দুজন গার্ড কে ইশারা করল কাছে আসতে।আয়াজ ছুরি রাখতেই ছেলেগুলোর মনে হচ্ছে ওরা যেন নিজের জান ফিরে পেল।কিন্ত তাদের সাথে যন্ত্রণাদায়ক আরো কত কি হতে যাচ্ছে ধারণা নেই তাদের।গার্ডরা এগিয়ে আসতেই আয়াজ কিছু একটা ইশারা করতেই হাতে মরিচ নিয়ে এগিয়ে গেল ছেলে দুটোর দিকে।আঁতকে উঠল  ছেলে দুটো।আর্তনাদের স্বরে বলল

,,--আমাদের ক্ষমা করে দে আয়াজ।মেরে ফেল তবুও এমন যন্ত্রণা দিস না।"

তাদের কথা কে তোয়াক্কা না করে গার্ড দুটো মরিচ লেপ্টে দিল কাটা হাতে।চিত্কার দিয়ে উঠল দুজন।কৌটা খুলে পিপঁড়া গুলো ঢেলে দিল প্যান্টের ভিতর।যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগল দুজন।ভয়ে ঢুক গিলল নিশাদ।আয়াজের ইশারা পেতেই মুখ বেধে দিল দুজনের।।শোনা যাচ্ছে না তাদের যন্ত্রণাদায়ক চিতকার তবে আয়াজ বেশ উপভোগ করছে তাদের ছটফটানো। বাঁকা হেসে ছুরি টা হাতে নিয়ে একটা ছেলের হাতের ২টা আঙুল কেটে দিল আয়াজ।আড়চোখে অন্য চেয়ারে বেঁধে রাখা ইফাজের দিকে তাকাল সে।এমন ভয়ংকর দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারাল ইফাজ,,,,,,!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন