অচেনা অতিথি - পর্ব ৩১ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


স্নিগ্ধ সকালের আলোক রশ্মি এসে ঘুমন্ত রমনীর মুখ আলিঙ্গল করছে। ঘুমের ভিতরই নারীটি নড়েচড়ে ওঠে। এসির ঠান্ডা হাওয়ায় বেশ গুটিশুটি মেরে পড়ে রইলো ঘুমকারত নারীটি। 

মাহাদ ওয়াসরুম থেকে এসে এমন অবস্থায় তিতিরকে দেখে খানিকক্ষণ চুপ করে ওর পাশে বসে রইল। গতরাতের কথাগুলো ভাবতে লাগলো মাহাদ।

বেশ রাত করেই সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তিতির যে কখন উঠে ব্যালকুনিতে গিয়ে দাড়িয়ে ছিল সেটা মাহাদ জানতেই পারেনি। 
মাথায় হঠাৎ করেই প্রচুর ব্যাথা করতে শুরু হলে  ও নিচে বসে কাতরাতে থাকে। তিতিরের হালকা মৃদু শব্দ কারো কর্ন কুহুরে না পৌছালেও গোলাবের কানে তা পৌছে যায়। চোখের নিমিষেই সে তিতিরের কাছে গিয়ে হাজির হয়। তারপর গলার রব তুলে শব্দ করতেই মাহাদ জেগে যায়। নিজের কাছে তিতিরকে না দেখে ধড়পড় করে উঠে ব্যালকুনিতে গিয়ে তিতিরকে ঐ অবস্থায় দেখে। ওকে ওখান থেকে তুলে এনে মেডিসিন খাওয়ায়। তারপর কপালে মাসেজ করতে থাকে। শেষ রাতের দিকে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু মাহাদ আর ঘুমাতে পারেনি। 
সাদ ফজরে উঠে  বাবার সাথে সালাত আদায় করে রুম থেকে বের হয়ে গেছে। তার টিউশন আছে তাই চলে যেতে হয়েছে।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই তিতিরের পাশে সুয়ে কেবল চোখ দু'টি বন্ধ করেছে আর এমন সময় তিতির মাথার যন্ত্রনায় চিৎকার দিয়ে ওঠে।

মাহাদ চোখ খুলেই দেখে তিতির কৈ মাছের মত ছট পটাচ্ছে মাথার যন্ত্রনায় । এই তিতির কি হলো তোমার! আবার মাথা ব্যাথা করছে বলেই মাহাদ তিতিরের কপালে মাসেজ করে দিতে লাগলো। না তাতেও কিছু হয়না। মাহাদ ফোনটা হাতে নিয়ে দ্রুত ডাক্তারকে কল দিয়ে বলল, এক্ষুনি বাসায় আসতে। 

তিতিরের মাথার যন্ত্রনা বেড়েই চললো। বাসার প্রায় সবাই রুমে এসে ভিড় জমিয়েছে। তিতিরের অবস্থা খারাপের দিকে চলে গেল। 
প্রায় ১৫ মিনিট পর ডাক্তার এসেই তিতিরকে চেকাপ করতে লাগলো। তারপর দেরি না করেই একটা ইনজেকশন পুশ করলো। পরিস্থিতি অনেকটা সামাল দিয়ে ডাক্তার বলল-

~" কয়েক মিনিট পর ও ঘুমিয়ে পড়বে। তারপর মেডিসিন ওর কাজ করতে শুরু করবে।"

ডাক্তারে কথা শুনে হাফ ছেড়ে রুম থেকে অনেকে বের হয়ে গেল। এবার ডাক্তার খুব কঠিন কথা বললেন। মাহাদ তোমার স্ত্রীর অবস্থা আগের থেকে জটিল হয়ে পড়ছে। তার বাঁচার কোন আশায় ছিলোনা। হায়াত আছে বলেই হয়ত এত কঠিন পরিস্থিতিতেও সে টিকে আছে। তুমি যদি পারো ওকে দেশের বাহিরে নিয়ে যাও। আর দেশের বাহিরে নিয়ে গিয়েও হয়ত কিছু হবেনা। আমার মাথাতেই আসছেনা কি করবো তার চিকিৎসা। এখুনি মেডিসিন বেশ কাজে লাগছে আবার একটু পর বিপরীত প্রকিয়া শুরু করে দিচ্ছে।

মাহাদ ডাক্তারের কথায় কঠিন হয়ে দাড়িয়ে রইল। মুখ দিয়ে আর একটি কখাও বের হলোনা। ডাক্তার আরো ঘন্টা খানেক দেরি করে চলে গেল। মাহাদের অার অফিসে যাওয়া হলোনা। সারাদিন তিতিরের পাশেই কাটিয়ে দিলো।


৭ দিন পর,
ডক্টর ওয়াহিদ তার স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে কয়েক ঘন্টা আগে। আসমা গত ৮ দিন ধরে ভেবেই গেছে, আপা খুব অসুস্থ সেটা বাবা ওয়াহিদকে জানায়নি। তাহলে কে আপার খবর ওয়াহিদকে দিয়েছে। অনেক আকার ইঙ্গিতে স্বামীর কাছে কথাটি তুলেছে কিন্তু বারবারই কথার প্রসঙ্গ পাল্টিয়েছে ওয়াহিদ। 

আপার অপারেশনের পর ভাইজান জানিয়েছিলো আপা নাকি ঠিক আছে। তাহলে এমন কি হলো যার জন্য এত দ্রুত দেশে আসতে হল! একমাত্র আপার সাথেই আসমার যোগাযোগ হত। ভাইজানের নাম্বারে কল দিতে ওর অস্বস্তি হয়। তাই আর কখনো কল দেওয়া হয়ে ওঠেনা।  আপার নাম্বারটাও বন্ধ দেখায়।
এসব কথা ভাবতেই ওয়াহিদ আবার রেডী হয়ে কোথায় জানি বের হয়ে গেল। এদেশে আগে কয়েকবার এসেছিল বিভিন্ন কাজে তাই ঢাকা শহর খুব ভালো করেই চিনে ওয়াহিদ। তাই আসমা কিছু না বলে মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।
.

তিতির এখন মোটামুটি ঠিক আছে তবে ওর জেদটা বেড়ে গেছে। কোন জিনিস যদি চায় তাহলে সেটা না পাওয়া পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয় না। আজও তেমন এক ঘটনা ঘটে ফেলেছে। রুমকি আজ বাসায় চলে যাচ্ছে। তাই ও রেডী হচ্ছিল আর ওর মেয়েকে নিয়ে রুপালী দাড়িয়ে ছিল। বাবুটা মায়ের কাছে যাবে বলে চিৎকার দিয়ে কাঁদছিলো। রুপালী থামাতে পারছেনা। সেটা দেখে তিতির কাছে গিয়ে শুধু বলেছে বাবুটাকে আমাকে দিবেন ফুফু! 

রুপালী এমনিতেই তিতিরের উপর বেশ বিরক্ত। তারমধ্যে তিতিরের এমন বায়না শুনে খুব কড়া ভাষায় কথা বলল রুপালী। বাসার প্রায় সবাই শুনেছে কথাগুলো। কিন্তু কেউ কিছু বলেনি। কারন রুপালীও রেজওয়ানকে নিয়ে খুব চিন্তার ভিতর ছিলো। তবে রুমকি অপায়া মেয়ে বলে নানান কথা শুনাইছে তিতিরকে। তিতির সেখান থেকে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসতেই লাবীবা ওর হাত ধরে বলল-

~" কই যাও তুমি!"

তিতির কোন কথা না বলে এত জোড়ে একটা ঝটকানি দিয়েছে যে, লাবীবা পড়তে পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। তিতির দরজাতে যেতেই দুটো গার্ড ওকে আটকালো। কিন্তু তারা ভয়ে তিতিরের গায়ে হাত দিয়ে আটকাতে পারলোনা। সেই সুযোগে ও বাহিরে চলে এসে মেয়ের কবরের পাশে বসে পড়লো। লাবীবাও পিছু পিছু এসে খানিকটা দুরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে রইলো। ঘন্টার পর ঘন্টা তিতির সেখানে বসে থাকে আর একটু পরপর চোখের পানি ফেলে। এমন দৃশ্য দেখে লাবীবাও ওকে ফেলে বাসায় আসতে পারেনি। রোদে  দাড়িয়ে তিতিরের ফেরার অপেক্ষায় থাকে। কয়েকবার ওকে ডাক দিয়েছে কিন্তু তিতির সেখান থেকে ফিরেনি। দুপুর গড়িয়ে বিকাল তারপর সন্ধ্যাও পেরিয়ে গেছে তবুও ওকে কেউ ওঠাতে পাড়েনি। এর মধ্যে লাবীবা কয়েকবার বাসায় গিয়ে আবার ফিরে এসেছে। ছেলেকেও সে জানায়নি। এমনি টেনশনে থাকে ছেলে। তারথেকে ও এলেই না হয় ওকে নিয়ে ঘরে ফিরবে।


মাহাদের অফিসে আজ বেশ ঝামেলা। কারন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও খুজে পাচ্ছেনা। নিজের হাতে সব লকারে রেখেছে সেখান থেকে ফাইল কিভাবে উধাও হয়। তাই বাসায় সে কলও করতে পারেনি।

ফুয়াদ বাসায় ফিরেছে এশার নামাযের ওয়াক্তে। এসে শরীর থেকে পোষাক খুলতেই নিধি এসে বলল-

~" বাবা জানো, সেই দুপুর থেকে চাচী অতিথীর কবরের পাশে বসে আছে। একবারে জন্যও বাসায় আসেনি। দাদী সাদকে নিয়ে এখনো সেখানেই বসে আছে।"

ফুয়াদ প্রথমে কথাটি বিশ্বাস করলোনা। নিসা রুমে আসতেই নিসাকে জিঙ্গাসা করলো ঘটনা কি সত্যি না মিথ্যা?

পাগলের আবার দিন রাত বলে নিসা তাচ্ছিল্যর সাথে কথাটি বলল। মায়ের বয়স হয়েছে। এই রাত অবদি উনি ওখানেই দাড়িয়ে আছে। ও নাটক করে না আসলেই পাগল সেটা ভাবতে ভাবতে আমি শেষ। নিসার কথা শুনে ফুয়াদ দেরী না করে ঐ অবস্থায় বাসার বাহিরে এসে দেখলো, ওর মা সাদকে কোলে নিয়ে চেয়ারে বসে আছে। ফুয়াদ কাছে গিয়ে ওর মাকে বলল-

~" ও কখন থেকে এখানে বসে আছে?"

লাবীবা চোখের পানি মুছে বলল-

~" আমার এগুলো আর সহ্য হয়না। কেউ কাছে গেলেই তেড়ে উঠছে। আম্মা গিয়েছিল ডাকতে কিন্তু কোন কথায় বলেনি।"

ফুয়াদ আর দেরী না করে তিতিরের কাছে গিয়ে দাড়ালো। তিতির এখানে কি করছো?
তবুও তিতির কোন কথা বলেনা। ওভাবেই বসে আছে। পাশে গোলাবও বসে আছে তিতিরের কোমড় ঘেষে। ফুয়াদ লক্ষ্য করলো তিতিরের পাশে কয়েল জ্বলছে। মশা যাতে ওকে কামড় না দেয় তাই হয়ত মা এটার বব্যবস্থা করেছে। ফুয়াদ কেবল মুখ দিয়ে কথা বের করেছে এমন সময় তিতির চিৎকার দিয়ে বলল-

~" আমি এখান থেকে যাবোনা বলেছিনা! কেন এক কথা বার বার বলতে আসেন?"

তিতিরের এমন কন্ঠ শুনে ফুয়াদ আর দেরী না করে মায়ের কাছে এসে সাদকে কোলে নিয়ে বলল-

~" বাবা কিছু খেয়েছ?"

সাদ আর কোন কথা বলতে পারেনা। ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে ফিকরে কেঁদে উঠে। ফুয়াদও কিছু বলতে পারেনা। এমন সময় মাহাদের গাড়ী বাসায় ঢুকলো। তড়িঘড়ি করে গাড়ী থেকে বের হতেই সাদ গলা ফাটিয়ে বাবা বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। মাহাদ সাদের কন্ঠ শুনে পিছন ফিরতেই দেখলো ওর মা চেয়ারে বসে আছে আর ফুয়াদ সাদকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মাহাদ দ্রুত ছেলের কাছে এসেই ভ্রু কুচকে বলল-

~" তোমরা এই সময় এখানে কি করছো?"

লাবীবা তিতিরের নাম উচ্চারন করতেই মাহাদকে আর কিছু বলতে হয়নি। মাহাদ ওর মেয়ের কবরের দিকে চেয়ে দেখলো, তিতির ওখানে বসে আছে। আল্লাহ্ বলেই মাহাদ তিতিরের কাছে ছুটে গেল। তারপর প্রচন্ড জোড়ে একটা ধমক দিয়ে বলল-

~" এই তুমি এখানে কি করছো! আর কার হুকুমে তুমি এখানে এসে বসে আছো?"

মাহাদের চিৎকারে গোলাব সহ তিতির কেঁপে ওঠে। একবার শুধু মাহাদের দিকে চাইলো তারপর আবার মাটির দিকে চেয়ে ওভাবেই বসে রইলো তিতির। এত জেদ ভালো নয় বলেই মাহাদ ওর হাত ধরে জোড়ে টান দিয়েই ওকে তোলে। এমন দৃশ্য দেখে সাদকে নিয়ে ফুয়াদ বাসায় চলে গেল। লাবীবা বেগমও যেন শান্তি পেল মনে। এখন মাহাদ সব সামলিয়ে নিবে। কিন্তু শেষে ওর গায়ে হাত তুলবে না তো?
নানান দুঃশ্চিন্তা নিয়ে সেও বাসায় চলে গেল।

এমনি অফিসের ঝামেলায় ও পাগল হয়ে গেছে। ওর ৩টা ফাইল চুরি হয়ে গেছে। সিসি ক্যামেরা দেখেও কোন সমাধান হয়নি। তার ভিতর বাসায় এসে আবার এমন দৃশ্য। মনে হচ্ছে চোখের সামনে যা আছে সব কিছু ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। শেষে তিতির আর মাহাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। মাহাদ শক্ত করে তিতিরের গলা চেঁপে ধরে। তিতিরের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতেই ও গলা ছেড়ে দিল। গোলাব কখনো মাহাদের উপর কিছু বলেনা কিন্তু আজ সেও মাহাদের হাটুর উপর পা তুলে কিছু বোঝাতে চাইলো। তিতির মাহাদের জিবনে আসার আগে যেমন ও উন্মাদ ছিলো ঠিক সেই রুপটা মাহাদের ভিতরে চলে এসেছে। 

তিতিরকে টেনে হিচড়ে বাসায় আনতেই নিসার সম্মুখীন হয় মাহাদ। নিসা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-

~" এভাবে আর কত।"

নিসার তাচ্ছিল্যর হাসি দেখে মাহাদ কিছু না বলে তিতিরকে নিয়ে ওর রুমে ঢোকে। এদিকে মাহাদের শরীরে কত যে কিল,ঘুতা, খামচি, আর আচরের আঘাত পড়লো সেটা বলা মুশকিল। তিতিরকে ফ্লোরে ধাক্কা দিয়ে মাহাদ বলল-

~" আমি মরলে কি তুই শান্তি পাবি! কেন এমন করছিস? তোকে কতবার বোঝাব বল!, আমার নিঃস্ব এই জিবনে তুই একমাত্র সম্বল। তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো! "

~" আমি এখানে থাকবোনা। আমি এখানে থাকবোনা। অতিথী যাবো। কতক্ষণ আমাকে এভাবে রাখবেন? ১ ঘন্টা, ২ঘন্টা, ৩ঘন্ট! এবার গেলে আর ফিরবোনা।"

তিতিরের কথাকে পাত্তা না দিয়ে মাহাদ দরজায় লক করে তিতিরকে নিয়ে ওয়াশরুমে গেল। তিতিরকে ফ্রেস করে দিয়ে নিজেও ফ্রেস হয়ে এসে চেঞ্জ করে চুপ করে তিতিরের দিকে চেয়ে রইলো। তারপর কি যেন ভাবলো। একে একদমই বিশ্বাস নেই। মাহাদ আর দেরী না করে ড্রয়ার খুলে কিছু ব্রেসলেট আর একটা চাবি বের করলো। বিয়ের আগে এসব অনেক পড়তো মাহাদ। আজ এতদিন পর সেগুলো কাজে লাগবে হয়ত। হাতে ব্রেসলেট পড়েই তিতিরের বালার সাথে নিজের হাতের ব্রেসলেটে একদম চাবি মেরে দিয়ে বলল-

~" এবার কোথায় যাবি যা।"

তিতির বার বার চাবি খোলার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা। শেষে ও মাহাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। মাহাদ যেন সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। 

আর তিতির কোন কথা বলেনি। এমনকি রাতের কোন খাবারও খায়নি। একটু রাত হলে কামরান সাহেব রুমে এসে দেখলো মাহাদ তিতিরকে ওভাবে নিজের সাথে বেধে রেখেছে। মাহাদের সাথে কিছু কথা বলে তিনি চলে গেলেন। আবার ফিরে এসে বললেন, সাদকে আমার কাছে নিয়ে গেলাম। মাহাদ শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

সারা দিনের ক্লান্তি এসে মাহাদের শরীরে ভিড় জমালো। মাহাদ আবার কি যেন ভেবেই তিতিরের ওড়না চাবির উপর দিয়েই শক্ত করে গিট দিল। তারপর নিশ্চিতে শুয়ে পড়তেই ঘুমের সাগরে ডুব দিল। আর তিতির ওভাবেই বসে রইল। 

বিছু সময় চলে যাওয়ার পর তিতির এদিক ওদিক তাকাতেই ফ্লোরের এক কোনায় কাচের টুকরো দেখতে পেল। সেদিন জিনিস পত্র ভেঙ্গেছিল। সেটার অংশই হয়ত এখনো পড়ে আছে। হাত না নড়িয়ে পা দুটো নেমে দিয়ে কাচের টুকরোটি কাছে টেনে এনে ওটা হাতে নিয়ে ওড়না কাটতে লাগলো আসতে আসতে। কিন্তু অসাবধনতায় একটি ফোচ গিয়ে লাগে মাহাদের হাতে। সাথে সাথে মাহাদ চোখ মেলে তাকায়।  তিতির নিজেও ভয় পায়। মাহাদ উঠে বসতেই দেখতে পেল ওর হাত দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এই তুই আবার এটা খুলতে ট্রাই করছিস? তোর হাতে ওটা কি! দেখা বলছি?

তিতির সাথে সাথে ওটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে ভয়ে চুপসে গেল। মাহাদের এত রাগ উঠলো যে নিজেই বাধন খুলল। তারপর চাবি দিয়ে তালা খুলেই বলল-

~" যা খুলে দিয়েছি। এখন আমার চোখের সামনে থেকে সর। সকালে ঘুম থেকে উঠে যেন তোকে আর আমার বাসায় না দেখি।"

মাহাদের রাগী লুক দেখে তিতির ভয়ে ভয়ে উঠতেই মাহাদ তিতিরের হাত খপ করে ধরেই এক হেচকা টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল। তারপর শক্ত করে তিতিরের হাত দু'টি ধরেই বলল-

~" আমি চুপ থাকি বলে ভাবিস আমি খুব সহজ সরল? আমার সম্পর্কে তোর ধারনাই নেই। এই হাত দিয়ে বিভিন্ন অপারেশনে ১৩ জনকে ক্রসফায়ার করেছি। আর সেগুলো নিখুত হত্যা ছিলো। যার জন্য আমার ঝুলিতে মেডেল উঠেছিল। আর সেই মানুষকে তুই তাচ্ছিল্য করিস? হুমহ্ এত সহজে তোকে ছেড়ে দিব!"

তিতির ভয়ে কোন কথা বলতে পারেনি। কিন্তু নিজের জায়গা থেকে মাহাদকে সরানোর বার বার চেষ্টা করতে লাগলো। মাহাদ তিতিরকে আর সেই সুযোগ না দিয়ে তিতিরকে নিয়ে মেতে উঠলো আদিম খেলায়। মাহাদের কাটা অংশ থেকে রক্ত পড়ে তিতিরে শরীরে লেপ্টে যাচ্ছে। সেদিকে মাহাদের কোন খেয়াল নেই। সারা দিনের কষ্ট নিজ স্ত্রীর মাধ্যমে ভুলতে মেতে উঠলো। যতটা আঘাত তিতিরকে করেছে এতক্ষনে তার থেকে শতগুন আদরে ভরে তুলল তিতিরকে। মাহাদের আচরন জানান দিলো, তিতির ছাড়া সত্যিই সে অসম্পূর্ন। মাহাদের প্রতিটা স্পর্শে তিতির যন্ত্রনাময় সুখ পেতে অস্থির হয়ে উঠলো। সেও মাহাদের মাঝে নিজের সুখ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। দু'জন না চাইতেও এমন মধুময় কাজে মগ্ন হয়ে উঠলো।


সকাল ১০টা বাজে।
তিতিরকে এক প্রকার জোড় করেই রেডী করেছে মাহাদ। বাঁকি রাতটুকু তিতির আর ওকে শান্তিতে রাখেনি। ওকে আঘাত করেছে আর কেঁদেছে। মাহাদের সাথে এখনো কথা বলেনি। ওয়াহিদের সাথে দেখা করার জন্য মাহাদ তিতিরকে রেডী করছে।  কাল থেকে ওয়াহিদ কয়েকবার যোগাযোগ করেছে।

মাহাদ সাদকে ডেকে ওকেও রেডী করালো। এর মধ্য তিতির রুম থেকে বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতেই নিসাও ওর সাথে নামতে লাগলো। হঠাৎ গলা খেকারি দিয়ে নিসা বলল-

~" শুনলাম মাহাদের সাথে নাকি অনেক মেয়ের অাফেয়ার আছে। এভাবে পাগলের সাথে আর কতদিন সংসার করবে বেচারা। পাগলের থেকে তো আর কম কষ্ট পাচ্ছেনা!"

তিতির কথাগুলো শুধু শুনলো কিন্তু কিছু না বলে বাসার বাহিরে এসে মাহাদের জন্য ওয়েট করতে লাগলো। একটু পর সাদ আর মাহাদ আসতেই তিতির আগে গিয়ে গাড়ীর ডোর খুলতেই মনে হয় শতশত বেলুন এক সাথে এসে ওকে আলিঙ্গন করে উপরে উড়ে যেতে লাগলো। আসে পাশে শুধু বেলুন আর বেলুন। এমন দৃশ্য দেখলে কার না ভালো লাগে! তিতিরও ব্যাতিক্রম হলো না এমন খুঁশি উপভোগ করার জন্য। খুঁশিতে লাফিয়ে উঠে ভেসে যাওয়া বেলুনগুলোকে ছোয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। মায়ের এমন আনন্দ দেখে সাদও দৌড়ে গিয়ে বেলুনের মাঝে হারিয়ে গেল। আর মাহাদ এমন দৃশ্য কামেরায় বন্দি করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এ যেন একমুঠো ছুয়ে যাওয়া সুখের বৃষ্টি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন