মায়াবতী (পর্ব ১১)


২১!! 

মায়া নিস্তেজ হাতটা বাড়িয়ে একবার গাড়ির স্টিয়ারিংটা ধরার চেষ্টা করতেই দ্বীপ মায়ার হাতটা চেপে ধরে মায়ার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। মায়া নিজের সব শক্তি দিয়ে দ্বীপের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করেও কোনো লাভ হলো না। গাড়িটা হঠাৎ করেই মেইন রোড থেকে ডান দিকে টার্ন করতেই মায়া বাইরের দিকে তাকিয়েই চমকে আবার দ্বীপের দিকে তাকালো। দ্বীপ মুখ শক্ত করে সামনের দিকে তাকিয়ে এক হাতেই ড্রাইভ করছে। মায়ার হাতটা অন্য হাতে শক্ত করে চেপে ধরে আছে এখনো। মায়া হাত মুচড়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই দ্বীপ আবার চোখ গরম করে মায়াকে ধমক দিয়ে চুপ করে বসে থাকতে বললো ঠিকই কিন্তু মায়া তো সেসব শুনবে না। সেদিন এই নির্জন রাস্তাটায় রাহাত ওকে বিপদের কথা বললেও মায়া ততটা পাত্তা দেয় নি। কিন্তু আজ প্রচন্ড ভয় করছে মায়ার। এই ভয়ের কাছে হাতের কাটার ব্যথাটা হয়তো কিছুই নয়। তাই হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় হাতে বাঁধা ব্যান্ডেজটা যে রক্তে ভিজে গেছে সেটাও খেয়াল হলো না মায়ার। মায়া ছোটার চেষ্টা করে সফল না হয়ে অন্য হাতে মোবাইলে রাহাতের নাম্বার ডায়েল করার চেষ্টা করলো। সেটা চোখে পড়তেই দ্বীপ গাড়িটা হঠাৎ ব্রেক করে মায়াট হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ফেললো। স্ক্রিনে রাহাতের নামটা দেখেই রাগে মাথা আরো খারাপ হয়ে গেল দ্বীপের। মায়ার হাত দুটো গাড়ির সিটে চেপে ধরে মুখের দিকে তাকালো দ্বীপ। মায়া ভয় পেয়ে গেল দ্বীপের এমন আচমকা হামলায়।

-ছাড়ুন আমাকে। কি করতে চাইছেন কি আপনি? আর মোবাইলটা নিলেন কেন আপনি? আমার মোবাইলটা দিন দ্বীপ।

-তোমার খুব সাহস বেড়েছে তাই না মায়া? আমার পাশে বসে থেকেও তুমি তোমার ওই পেয়ারের রাহাতকেই কল করছ? এই রাস্তায় তো সেদিন রাতে রাহাতের সাথেও গিয়েছিলে না? কই সেদিন তো এমন করো নি? আজ আমার সাথে যেতেই তোমার যত নাচানাচি শুরু হয়ে গেল? কেন? কি এমন আছে তোমার ওই রাহাতের মাঝে যা আমার নেই? 

-আমার হাতে লাগছে দ্বীপ। ছাড়ুন প্লিজ?

-ছাড়বো কেন? হ্যাঁ? ছাড়বো কেন? আমি ধরলেই তোমার যত ন্যাকামি করতে মন চায় না? আর রাহাতের বেলায়? ওর স্পর্শগুলো অমৃতের মতো লাগে না তোমার কাছে? আর আমি ধরলেই ঘৃণা হয়? ঘৃণা হয় তোমার? 

-ছাড়ুন দ্বীপ।

-ছাড়বো না। রাহাত তোমাকে কি এমন সুখ দিয়েছে যেটা আমি দিতে পারছি না সেটাও আমি দেখতে চাই। 

-মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ মিস্টার দ্বীপ। একটা ফালতু কথাও বলবেন না বলে দিচ্ছি।

-সে তুমি ফালতু বলো আর যাই বলো। আমি আজ তোমাকে চাই ই চাই। তোমার রাহাত তোমার মাঝে কি এমন মধু পেয়েছে সেটাও আমি জানবো আজ। 

মায়া সজোরে ধাক্কা দিয়ে দ্বীপের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্বীপের গালে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো। চড়টা এতো জোরে ছিল যে দ্বীপ প্রায় ছিটকে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের উপরে গিয়ে পড়লো। মায়া নিজেও জানে না হঠাৎ করে এতো শক্তি কোথা থেকে এলো ওর গায়ে। মায়া আর কিছু ভাবার সময় নিলো না। রাগে পুরো মাথাই যেন এলোমেলো হয়ে গেছে মেয়েটার। দ্বীপের গাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করার বদলে উল্টো দ্বীপের মাথাটা স্টিয়ারিংয়ের উপরে চেপে ধরেছে মায়া। মায়া এতো জোরে দ্বীপের ঘাড় চেপে ধরে আছে যে দ্বীপ তিল পরিমাণ নড়াচড়াও করতে পারছে না। দ্বীপ তবু শেষ একবার মাথা তোলার চেষ্টা করতেই মায়া দ্বীপের মাথাটাকে আরো সেধিঁয়ে ধরলো স্টিয়ারিং এর সাথে। রাহাতের রুম থেকে বেরিয়েই তখন লিজার সাথে দেখা হয়েছিল মায়ার। মেয়েটা রাহাতের কাছে সাহস করে কিছু বলতে না পারলেও মায়াকে দেখে কেঁদেই ফেলেছিল। মায়াও সবটা শুনে লিজাকে শান্ত করে রাহাতকে ঘটনাটা জানানোর জন্য ছুটে গিয়েছিল। কিন্তু রাহাতের হাতের কাটার চক্করে ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে গেলেও এবারে দ্বীপকে দেখে লিজার কান্না ভেজা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো মায়ার। তাই হয়তো অজান্তেই এতোটা হিংস্র হয়ে উঠেছে মায়া। মায়ার এই রূপটা সম্পর্কে দ্বীপ বিন্দুমাত্রও আশা করে নি। তাই সে ও কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে চুপ করে রইলো। 

-মেয়েদেরকে দুর্বল মনে হয় না তোদের? যখন যা ইচ্ছে হয় বলবি, যা ইচ্ছে হয় করবি আর মেয়ে হওয়ার অপরাধে তাকে চুপ করে থাকতে হবে? এই নির্জন রাস্তায় এনে কি করতে চেয়েছিলি? রেইপ করে ফেলে চলে যাবি আর কেউ টেরও পাবে না এইটাই ভেবেছিলি না?

-মায়া? আমি?

-শাট আপ। ওই নোংরা মুখে আমার নামটা উচ্চারণ করলেও তোকে খুন করে ফেলবো আমি। এখন যদি তোকে আমি এখানে খুন করে ফেলে দিয়ে যাই? তখন কি হবে বল তো?

-মায়া প্লিজ আম সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন করবো না। 

-হাহ! এর আগেও এমন অমানুষের কথায় বিশ্বাস করে ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে সে হারামজাদা ভালো তো হলোই না উল্টো আমার উপরেই এ্যাটাক করলো। তাকে কি শাস্তি দিয়েছিলাম তখন জানতে চাস?

-ক-ক-কি? কি শাস্তি?

ভয়ে দ্বীপের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে এতোক্ষণে। মায়া এবারে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি একটা হাসি ফুটিয়ে আরেকটু গলার স্বরটা পাথরের মতো কঠিন করে বলা শুরু করলো।

-তেমন কিছুই না। শুধু পরেরদিন সকালে কবরস্থানে সেই লোকের রক্তাক্ত লাশটা পাওয়া গেল। চোখ দুটো উপড়ানো, হাতের দশটা আঙ্গুল কেউ যেন তার শরীর থেকে টেনে ছিঁড়ে নিয়েছে। আর তার হাতের এই যে এখানে--বড় বড় করে লেখা ছিল 'রেপিস্ট'। শুয়োরের বাচ্চাটা কয়দিন আগেই এলাকার একটা বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল। তিন মাস অনেক খোঁজ করেও শেষে পুলিশ কেইসটা ক্লোজ করে দিয়েছে। কোন প্রমাণই পায় নি তারা।

-তুমি? মায়া তুমি ওই লোকটাকে? লোকটাকে! লোকটাকে তুমি খুন করেছিলে! তুমি!?

-খুন? হা হা হা। এটাকে খুন করা বলে না দ্বীপ। এটাকে বলে শাস্তি। যেমনটা এখন তোমাকে শাস্তি দিবো ঠিকই সেরকমই একটা ছোট্ট শাস্তি। তুমিও তো আমাকে এখানে জোর করে ভোগ করতেই এনেছিলে তাই না? ভোগ করা হয়ে গেলে এখানেই ফেলে দিয়ে যেতে মরার জন্য। আর বাসায় গিয়ে বলতে তুমি বিয়েটা করতে পারবে না। অথবা তোর আশ মিটে গেলে আমাকে এখানেই কোথাও পুঁতে রেখে যেতে। কি ঠিক বলছি তো?

-মায়া? আমি-আমি-আমি এসবের কিছুই করতাম না বিশ্বাস করো? আমি শুধু-শুধু তোমাকে ভয়-ভয় লাগাতে কথাগুলো বলেছিলাম। যাতে-আম-যাতে তুমি আর রাহাতের সাথে দেখা করতে না যাও। বিশ্বাস করো মায়া? আমার আর কোনো ইনটেনশান ছিল না। গড প্রমিস।

দ্বীপের কথাটা শেষ হতেই মায়া এমন শব্দ করে হাসলো যে নির্জন রাস্তাটায় সেই শব্দ যেন প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো বারবার। আর সেই শব্দে দ্বীপের আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হওয়ার জোগাড়। মায়া হাসতে হাসতেই দ্বীপকে ছেড়ে দিতেই দ্বীপ ভয়ে একেবারে এক কোণে সেঁধিয়ে গেল। মায়া দরজা খোলার জন্য ইশারা করতেই দ্বীপ তাড়াতাড়ি সুইচ টিপে ডোর লকটা খুলে দিলো। মায়ার হাসিটা তখনো থামে নি। গাড়ি থেকে নেমেই মায়া দ্বীপের জানালার পাশে আসতেই দ্বীপ চমকে সরে গেল। সেটা দেখেও মায়া খিলখিল করে হেসে ফেললো।

-এরপর কোনো মেয়েকে দুর্বল ভেবে খারাপ কথা বলার আগে, বাজে কোনো ইঙ্গিত করার আগে মনে রাখবি মেয়েরা দুর্বল নয়। ওরা চাইলেই তোর মতো কাপুরুষকে ভেজা বেড়াল বানিয়ে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতে পারে। কথাটা মাথায় রাখবি। 

-আচ্ছা। আমি প্রমিস করছি মায়া। আর কখনো কোনো মেয়ের সাথে ভুলেও খারাপ ব্যবহার করবো না। 

-হুহ। আর একটা কথা। এই কথাগুলো ভুলেও যদি কাউকে বলো বা বাসায় অহেতুক বিয়ে করবো না বলো তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না জানু। কথাটা যেন মনে থাকে।

-আমি-আমি কাউকে কিচ্ছু বলবো না মায়া। 

-এখন কোথায় যাচ্ছিলে যাও তো। আমি আমার কাজে যাচ্ছি। অহেতুক তোমার নাটক দেখতে গিয়ে আমার এতোটা সময় নষ্ট হলো। ডিজগাস্টিং। 

মায়ার কথা কোনমতে কান দিয়ে ঢুকিয়ে দ্বীপ ফুল স্পিডে গাড়িটা টার্ন করে প্রায় পালিয়ে গেলে মায়া নিজেও হেসে মেইন রোডের দিকে পা বাড়ালো। এই দুনিয়ায় দুর্বলদের আসলেই কোনো ঠাঁই নেই। সবাই নিজের থেকে ছোট মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে, অত্যাচার করে কেমন যেন একটা পৈশাচিক সুখ পায়। আর সেই দুর্বল, অবলা, ছোট মানুষটির শরীরে যদি মেয়ে নামের ট্যাগটা লেগে থাকে তাহলে তো কথাই নেই। কিছু অমানুষ তো বিশ্বাসই করে যে মেয়ে বলে এদের সাথে যা ইচ্ছে করা যায়, খুবলে খুবলে এদের শরীরটাকে ছিঁড়ে খাওয়া যায়, এদেরকে যা ইচ্ছে করা যায়, বলা যায়। কিন্তু এই হায়েনার দলটাই হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে কাপুরুষ জাতি। যখনই আপনি মাথা তুলে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন সে ও হয়তো মরিয়া হয়ে আক্রমণ করবে আপনাকে। কিন্তু একবার যদি আপনি এদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিতে পারেন তাহলে এরা লেজ গুটিয়ে পালাবে। আপনাকেও তাই মনে রাখতে হবে। যে নারী মৃত্যুর যন্ত্রণা সহ্য করে একটা প্রাণকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারে সে কেন এই হায়েনাগুলোর ভয়ে নিজে কেন তটস্থ হয়ে থাকবে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মায়া নিজের গন্তব্যের দিকে পা বাড়ালো। 

দেখতে দেখতেই চারটা দিন কেটে গেছে। আজ আরেকবার মায়াদের বাড়িতে ঘটা করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পাড়া প্রতিবেশী সবাই এসে জড়ো হয়েছে মায়ার গায়ে হলুদের ছোঁয়া দেয়ার জন্য। মায়াদের ছোট্টো বাড়িটায় এতো লোকের জায়গা হবে না বলেই হয়তো ওদের পাড়ার গলিতে পেন্ডেল করে সবার জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্যান্ডেলের এক কোণে কিছুটা উঁচু করে তৈরি করা স্টেইজটায় হলুদ পরী হয়ে বসে আছে মায়া। একটু পর পর নিজের মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে আর পেন্ডেলের চারদিকে চোখ বুলিয়ে চিরচেনা একটা মুখ দেখার অপেক্ষা করছে। মায়া জানে লোকটা আজকে আসবেই। তাকে আসতেই হবে। আজকে সে নিজের সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ঝেড়ে মায়াকে নিজের মনের কথা বলবেই বলবে। শুধু তার আসারই অপেক্ষা এখন। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মায়ার মোবাইলে টুং করে একটা মেসেজ ফুটে উঠলো। ছোট্টো একটা মেসেজ। 

"মায়া আমরা এখান থেকে রওনা দিয়েছি। মিনিট পনেরো এর মধ্যে পৌছে যাবো। দোয়া করি তোমার প্ল্যানটা আজকে যেন সফল হয়।"

এদিকে মায়ার অপেক্ষার পালা শেষ করে আরো দুজন মানুষও যোগ দিয়েছে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে। রাহাত আর ওর বাবা আজীজ মাহমুদ চৌধুরী। তারা আসার পরেই মায়ার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটা শুরু হলো। এতোক্ষণ এই দুজন মানুষের জন্য মায়া অপেক্ষা করছিল। কিন্তু রাহাতের থমথমে মুখটার দিকে তাকিয়ে কিছুটা চমকে গেল মায়া। লোকটার চোখ মুখ এমন ভার ভার লাগছে কেন? রাহাতও এক নজর মায়াবতীর মুখের দিকে তাকিয়ে একটুখানি হলুদ নিয়ে ধীর পায়ে মায়ার দিকে এগিয়ে এলো। এই কয়েক কদমের দূরত্বটাকেও যেন কয়েক শো যোজন বলে মনে হচ্ছে রাহাতের। পা জোড়াও কেমন ভারি হয়ে আসতে চাইছে ওর। এমনটা কেন হচ্ছে! ও তো মায়াবতীটার আবদারেই এসেছিল। তাহলে এখন কেন ও এতোটা অসহায় হয়ে পড়ছে? কেন লাল পাড়ের হলুদ শাড়িটায় তার মায়াবতীকে দেখে এতো কষ্ট হচ্ছে? এতোগুলো কেনর কোনটারই উত্তর নেই আজ রাহাতের কাছে। শুধু বুক চেড়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই যেন অনুভব করতে পারছে না ছেলেটা।

২২!! 

হাতে এক মুঠো হলুদ নিয়ে মায়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাহাত। হলুদটুকু মায়াকে ছুঁইয়ে দেয়ার শক্তিটুকুও যেন তার মধ্যে নেই। মায়াবতীটাকে অন্য কারো নামের হলুদ পড়ানোর খেয়াল হতেই বুকের ভেতরে কেমন একটা কাঁপন ধরে গেছে রাহাতের। এই কয়দিনে দ্বীপ ছেলেটার সম্পর্কে সবরকম খোঁজ খবর নিয়েছে রাহাত। ছেলেটার স্কুল লাইফ থেকে এই কয় বছরের চাকরি জীবন পর্যন্ত সব জায়গায় লোক লাগিয়ে এক রকম চিরুনি অভিযান চালিয়েছে রাহাত। স্কুল, কলেজ, বন্ধুমহল, কলিগ, আত্মীয় স্বজন- কারো কাছেই দ্বীপের ছোট্ট একটা বদ অভ্যাসের কথাও রাহাত শোনে নি। সব খোঁজ খবর নেয়ার পরও রাহাতের কেমন একটা অশান্তি লাগছিল। দ্বীপ ছেলেটা মায়াকে সুখে রাখতে পারবে, এটা নিয়ে রাহাতের মনে কোনো সন্দেহ নেই ঠিকই, তবু একটা চাপা কষ্ট হচ্ছে রাহাতের। কষ্টটা কেন হচ্ছে রাহাত সেটাই ভেবে ভেবে অস্থির হচ্ছে। মায়াবতীটার উপর তার অধিকার হারিয়ে ফেলবে বলবো এতো কষ্ট? নাকি মায়াবতীটা তার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে বলে? সারারাত এসব চিন্তায় এক ফোঁটাও ঘুম হয়নি রাহাতের। আর নির্ঘুম রাতটার কারণে সারাটা দিন প্রায় ঘুমিয়েই কেটেছে রাহাতের। ছাড়াছাড়া ঘুমের মাঝে কত কি যে স্বপ্ন দেখলো রাহাত। আর তাই চোখমুখও এমন ফোলাফোলা হয়ে আছে। 

রাহাত এবারে মায়ার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো। মায়াও এতোক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। শুধু তাকিয়ে থাকা না, কিছু শোনার অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে রাহাতকে দেখছিল মায়া। এবারে মায়াকে অবাক করে দিয়ে রাহাত একটুখানি হলুদ মায়ার গালে ছুঁইয়ে দিতেই মায়ার চোখ থেকে টুপ করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। ব্যাপারটা খেয়াল করতেই রাহাত একটু থমকে গেল। 

-আম সরি মায়া যদি কখনো তোমায় কোনোভাবে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে মাফ করে দিও। আমি চাই না আমার কারণে তুমি নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট করো। দ্বীপের ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি তাতে বলতে পারি ছেলেটা খারাপ না। আর তোমাকেও সুখে রাখবে। আমার কাছে এই একটা জিনিস কখনোই পেতে না তুমি। তাই চাই না আবেগের বশে তোমাকে আটকাতে। তোমার ভালো থাকার চেয়ে আর কোনো কিছুই জরুরি নয় মায়া। এমন কি আমার অনুভূতিগুলোও না। আশা করি মায়া নতুন জীবনে সব ভুলে তুমি সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো তোমার জন্য মায়াবতী----।

রাহাতের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে মায়া। রাহাতের বলা প্রত্যেকটা শব্দ মায়ার সামনে যেন একটা অবিশ্বাসের দেয়াল তৈরি করে দিচ্ছে। মায়া অবাক হয়ে তাকাতেই আবার রাহাতের হাতটাকে এগিয়ে আসতে দেখলো। এবারে অবশ্য মায়ার গালে হলুদ ছোঁয়ানোর আগেই কেউ রাহাতের হাতটা টেনে ধরলো। রাহাত কিছুটা বিরক্ত হয়ে পিছনে তাকিয়েই দ্বীপকে দেখে অবাকই হলো। 

-দ্বীপ? তুমি আজকে এখানে? 

-শুধু আমি না স্যার। উনারাও আছেন। 

দ্বীপ সরে দাঁড়াতেই কয়েকজন পুলিশ অফিসার রাহাত আর মায়ার সামনে এসে দাঁড়ালো। এদের মধ্যে কয়েকজন আবার মহিলা পুলিশও আছে দেখে রাহাত ভ্রু কুঁচকে দ্বীপের দিকে তাকালো।

-উনারা এখানে কি করতে এসেছে দ্বীপ? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

-আমি আপনাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলছি মিস্টার চৌধুরী। এই ভদ্রলোক মিস্টার দ্বীপ আমাদের কাছে কমপ্লেইন করেছেন যে মিস মায়া নাকি তার গ্রামের বাড়িতে কাউকে খুন করে এসেছেন। এবং কথাটা নাকি উনি দ্বীপ সাহেবের কাছে কনফেস করেছেন। 

-হোয়াট?

-জি। আর উনি নাকি দ্বীপ সাহেবকে হুমকিও দিয়েছেন যে কথাটা কাউকে জানালে মিস মায়া উনাকেও মেরে ফেলবে। তবু দ্বীপ সাহেব সাহস করে আজ আমাদের কাছে এসেছেন। আমরা তাই----।

-তাই? তাই আপনারা মায়াকে এ্যারেস্ট করতে এসেছেন? হাউ কুড ইউ! যার তার কথায় আপনি এভাবে মানুষকে হ্যারাস করবেন নাকি?

-না মিস্টার চৌধুরী। আপনি আমাদেরকে ভুল বুঝছেন। আমরা শুধু মিস মায়াকে কিছু প্রশ্ন করতে এসেছি----।

-আর ইউ গাইজ ক্রেজি! আজ ওর গায়ে হলুদ। আর যার সাথে বিয়ে সেই কিনা কমপ্লেইন করছে! আর আপনারা সেটা বিশ্বাসও করে নিয়েছেন!?

-এক মিনিট স্যার?

পিছন থেকে মায়ার কণ্ঠটা শুনে রাহাত দাঁড়িয়ে গেল। মায়া গুটিগুটি পা ফেলে এসে দ্বীপের সামনে এসে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলো দ্বীপের গালে। দ্বীপ প্রায় ছিটকে একজন অফিসারের গায়ের উপরে দিয়ে পড়তেই একজন মহিলা অফিসার মায়ার হাত চেপে ধরার চেষ্টা করলো। মায়া বাম হাতটা তুলে তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই অফিসার লোকটার সামনে এসে একটা অডিও ফাইল ওপেন করলো।

-আগে পুরো অডিওটা শুনুন স্যার। তারপর আপনি নিজেই ঠিক করুন কাকে ইন্টারোগেইট করবেন। আমাকে নাকি মিস্টার দ্বীপকে।

-হুম। ওকে। প্লে ইট।

"-ছাড়ুন আমাকে। কি করতে চাইছেন কি আপনি? আর মোবাইলটা নিলেন কেন আপনি? দিন আমার মোবাইল।

-তোমার খুব সাহস বেড়েছে তাই না মায়া? আমার পাশে বসে থেকেও তুমি তোমার ওই পেয়ারের রাহাতকেই কল করছ? এই রাস্তায় তো সেদিন রাতে রাহাতের সাথেও গিয়েছিলে না? কই সেদিন তো এমন করো নি? আজ আমার সাথে যেতেই তোমার যত নাচানাচি শুরু হয়ে গেল? কেন? কি এমন আছে তোমার ওই রাহাতের মাঝে যা আমার নেই?"

পুলিশ অফিসার, রাহাত আর দ্বীপ সবাই মন দিয়ে অডিওটা শুনছে। আর মায়া সেদিনের ঘটনাটার কথা মনে করলো। দ্বীপ মায়ার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে রাহাতের নাম দেখে রেগে গিয়ে মায়ার উপরে আক্রমণ করে বসে। দ্বীপ রাগের মাথায় খেয়ালও করে নি মায়া আগেই মোবাইলে ভয়েস রেকর্ডিং চালু করে দিয়েছিল। তাই দ্বীপ কলটা কেটে মোবাইলটা পাশে ছুঁড়ে ফেলে মায়াকে জাপটে ধরতেই মোবাইলও খুব যত্নে নিজের কাজটা করেছে। মায়া সেদিন দ্বীপকে যা যা বলেছিল তার সবটা অফিসার, রাহাত আর দ্বীপ তিনজনেই শুনতে পেল। শেষ পর্যন্ত শোনার আগেই রাহাত দ্বীপের কলার চেপে ধরে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি বসিয়ে দিয়েছে। এই অমানুষটার হাতে নিজের মায়াবতীকে তুলে দিতে চাইছিল ভাবতেই নিজের উপরেই রাগ হলো রাহাতের। তাই রাগটা গিয়ে পড়লো দ্বীপের উপরেই। কয়েকজন অফিসার রাহাতের হাত থেকে দ্বীপকে ছুটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো। রাহাত তবু তাকে এলোপাথাড়ি মেরেই চলেছে। আশেপাশে যে লোকজন জড়ো হয়ে তামাশা দেখছে সেদিকে রাহাতের বিন্দুমাত্র হুঁশই যেন নেই। মায়াও এবার ছুটে এসে রাহাতকে পিছন থেকে টেনে ধরতেই রাহাত নিজেকে সামলে মায়ার মুখটা দুহাতে তুলে ধরলো। 

-মায়াবতী? তুমি-তুমি ঠিক আছো? এতো কিছু হয়ে গেল আর তুমি আমাকে জানালে না পর্যন্ত! আবার এই লোকটার সাথে তুমি বিয়েও করতে চলেছিলে! তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?

মায়া রাহাতের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর দ্বীপের দিকে তাকালো। কয়েকজন অফিসার লোকটাকে ধরে রেখেছে। ঠোঁটের কোণ ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে লোকটার, আর চোখেমুখে হতভম্ব চাহনি। মায়া আবার হেসে দ্বীপের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

-আপনাকে কে বলেছে রাহাত যে আমি এই লোকটাকে বিয়ে করতাম? এতো নিচ একটা লোক! সেদিন লিজা আমাকে ওর কথাগুলো বলার পর আমি আপনাকে বলতে গিয়েও বলতে পারি নি। বললেও হয়তো আপনি আমার কথা মেনে ওকে পুলিশে দিতেন। কিন্তু এই অমানুষটার মুখোশের আড়ালের কালো চেহারা তো পুলিশও দেখতে পেত না। যেমনটা আপনি পান নি রাহাত। কোনো প্রমাণ তো আমি দিতে পারতাম না। এই লোকটাকে বাইরে থেকে দেখতে যতটা সাদামাটা ভদ্রলোক মনে হয় ঠিক ততটাই কুৎসিত এর ভেতরটা। এই লোকটা কী কী করেছে শুনবেন? সেদিন পার্টির পর আপনি যখন আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে আসছিলেন তখন থেকে আমাদের দুজনকে ফলো করেছেন উনি। পরদিন আপনি যখন বিয়ে করবেন না বলে চলে এসেছেন আমাদের বাড়ি থেকে সেই খবরটা পেয়েই তিনদিনের মাথায় নিজের বাবা মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় উপস্থিত হয়েছেন। আমাকে বিয়ে করার প্ল্যান তো এর কখন ছিলই না। তাই তো মিস্টার দ্বীপ?

মায়ার কথাগুলো শুনে দ্বীপের মুখটা চুপসে গেলেও রাহাত রীতিমতো আকাশ থেকে পড়লো। মায়ার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই রাহাত যেন বুঝতেই পারছে না। কোনমতে মায়াকে টেনে নিজের দিকে ফেরালো রাহাত। মায়ার ঠোঁটের কোণে আগের হাসিটা এখনও ঝুলে আছে। হাসিটা তাচ্ছিল্যের নাকি কষ্টের সেটাও আজ রাহাত বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। কি চলছে কি মেয়েটার মনে!

-বিয়ে করত না মানে কি মায়া? কিসব বলছ? সবটা জানার পরও কেন তাহলে তুমি কিছু বললে না? কেন বিয়েটা ভেঙে দিলে না?

-আপনার পার্টির রাতের কথাটা মনে আছে স্যার? উনি আমাকে উনার সাথে ডান্স করার জন্য ইনসিস্ট করছিল। আর আমি উনাকে রিজেক্ট করেছিলাম। ব্যাপারটা উনি ঠিক নিতে পারেন নি। ইগোতে লেগেছিল খুব। উনিও ঠিক একইভাবে অপমান করতে চেয়েছিলেন আমাকে। বিয়ের আসরে এসে রিজেক্ট করে দিয়ে। তাই না মিস্টার দ্বীপ? কিন্তু রিজেক্ট করার আগে একবার-একবার হলেও ইন্টিমেট করতে চেয়েছিলেন আর কি। তাই না? এঙ্গেজমেন্টের পর ব্যাপারটা ততটা কঠিন হবে ভাবেন নি উনি। আর একবার নিজের প্ল্যানে সফল হয়ে গেলে আমাকে ছুঁড়ে ফেলতে আরো বেশি সহজ হতো উনার জন্য। কি দ্বীপ সাহেব? সব ঠিক ঠিক বলছি তো?

-মায়া?

-আপনি একটু আগে বলছিলেন না স্যার উনার কোনো ব্যাড রেকর্ড আপনি পান নি? ব্যাড রেকর্ড নেই বলে আপনি উনাকে একদম ক্লিন সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কি জানেন স্যার? কারো সম্পর্কে কোনো খারাপ তথ্য সামনে আসে নি তার মানে এই না যে সে খুব ভালো একজন মানুষ। হতে পারে সে খারাপ কিছু করার সুযোগ পায়নি বলেই তার বিদঘুটে কালো চেহারাটা কারো নজরে আসে নি। অথবা এমনও হতে পারে যাদের কাছে আপনি এই লোকটার ভালো মন্দ বিচার করছিলেন, তারাও ওরই মতো ভালোমানুষির মুখোশ পড়ে আছে। আর তাছাড়াও নিজের গরুর দুধ গোয়ালা কখনই খারাপ বলে না। প্রবাদটা মানুষের ক্ষেত্রেও খাটে।

-মায়া? আম----।

-অফিসার? এই লোকটা আমার লোকহর্ষক খুনের বর্ণনার কারণটা বুঝতে না পারলেও আপনি আশা করি সেটা বুঝতে পেরেছেন। তবু আপনাদের স্যাটিসফেকশের জন্য আমার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা আপনাকে দিচ্ছি। আপনি আমাদের এলাকার থানায় খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন এরকম ঘটনা আমাদের এলাকায় কখনোই ঘটে নি। ইট ওয়াজ জাস্ট এ স্টোরি।

মায়ার কথা শেষ হতেই একজন মহিলা পুলিশ মায়াকে একটা কাগজ কলম বাড়িয়ে দিতেই মায়াও সেখানে নিজের গ্রামের বাড়ির পুরো ঠিকানাটা কাগজে লিখে ফিরত দিলো। দ্বীপকে অন্য অফিসারেরা টেনে নিয়ে যাচ্ছে এমন সময় সিনিয়র অফিসার রাহাতের দিকে একনজর তাকিয়ে আবার মায়ার দিকে ফিরলেন।

-আপনাদের দুজনের সাথেই পরিচিত হয়ে খুশি হলাম মিস্টার চৌধুরী এন্ড মিস মায়া। আশা করি আপনাদের মধ্যে যা কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে সেগুলো নিজেরাই মিটমাট করে নিবেন। আর মিস মায়া? আই মাস্ট সে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মেয়ে যদি শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত নিজের সাহস আর বুদ্ধি দিয়ে লড়াই করতে পারে তাহলে এদেশ থেকে এমন কুলাঙ্গার, সুবিধাবাদী শয়তানগুলো লেজ গুটিয়ে পালাবে। আসলে কি বলুন তো? এরা এক একজন এতোটাই ভিতু যে সমাজে সবার সামনে এসে নিজের কুকর্ম করতে পারে না। তাই লুকিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। আর সুযোগ পেলেই এরা নিজের আসল রূপে কোনো একা অসহায় মেয়ে, শিশু বা বৃদ্ধার উপরে হামলে পড়ে। কত শত নারী, মা, বোন, মেয়ে এদের কাছে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত হেরে গিয়ে নিজের জীবন হারাচ্ছে। 

-হুম। 

-একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন। মেয়েরা হলো হরিণের মতো। তাদের নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা আছে ঠিকই, শুধু এসব রাস্তার কুকুরের ভয়ে সেই ক্ষমতাটা প্রকাশ করতে ভুলে যায়। যেদিন এই ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পারবে সেদিনই একটা মেয়ে অনুভব করতে পারবে এসব হাজারটা কুকুরও একটা তেজী ক্ষিপ্র গতির হরিণের কাছে কিছুই না। একদম কিছুই না। আপনি যে নিজের সেই শক্তিকে অনুভব করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পেরেছেন তাতে আমরা সত্যিই গর্বিত মিস মায়া। আবার কোনো দরকার হলে অবশ্যই আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। আজ তাহলে আসি? বহুদিন পর একজন জেন্টেলম্যান ক্রিমিনাল এরেস্ট করলাম। তাকে খাতির যত্ন করার সুযোগ সবাইকে তো পেতে হবে।

-স্যার? আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যান প্লিজ? তাহলে হয়তো বামাল সমেত আরেকজন অতিথিকে সাথে নিয়েই ফিরবেন আজকে। প্লিজ? ১০টা মিনিট সময় দিন? কিছু না বলে শুধু দেখে যান। বাকিটা আপনি নিজেই ধরতে পারবেন।

-আমমম। ওকে। একদিনে আরো একটা সফলতা পেলে আমি ১০ মিনিট কেন আরো ঘন্টাখানেকও অপেক্ষা করতে পারি। তবে আপাতত বাকিদের মিস্টার দ্বীপকে নিয়ে এগোতে বলি। 

-ওকে স্যার।

অফিসার বাইরের দিকে পা বাড়াতেই মায়া ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে আবার রাহাতের দিকে ফিরলো। ওদেরকে ঘিরে থাকা ভিড়ের গুঞ্জন ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে এবারে। সেসব নিয়ে একদমই মাথাব্যথা নেই রাহাতের। সে একদৃষ্টিতে মায়াকে দেখছে। মায়ার এই হাসির পিছনে লুকিয়ে থাকা কারণটা কিছুতেই ধরতে পারছে না বলেই আরো দোটানায় পড়ে যাচ্ছে রাহাত। এই মায়াবতীটাকে সম্পূর্ণ অচেনা লাগছে রাহাতের। কি চলছে মেয়েটার মনে কে জানে!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন