অচেনা অতিথি - পর্ব ২৯ - সিজন ২ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাপলভিউ এলাকায় পুরো দেশীয় মেজাজে গড়া বিশাল বাসাটি। বাসাটির গা ঘেষে প্রায় ৫৬০ বছর বয়সী 'রেডউড' গাছটি গগনচুম্বী হয়ে দাড়িয়ে আছে। সকাল বেলার সূর্যের আধো আলো এসে পড়েছে রেডউডের ডালে। গাছের পাতায় সূর্যরশ্মি পরার কারনে মনে হচ্ছে, পাতা থেকে টুপ টুপ করে পবনের লাভা এসে কাঁচের জানালাকে ছুয়ে দিচ্ছে। এমন দৃশ্য পানে একজোড়া চোখ যেন আটকে গেছে। এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকার জন্য চোখ বেশ জ্বালা করছে। শেষ পর্যন্ত চোখ ঝাঝালো বাতাসের ঝাপটা সহ্য করতে না পেরে, কয়েক ফোটা অশ্রু ত্যাগ করলো নিজ অবস্থান থেকে।
১৮ মাসের কন্যা সন্তানকে বুকে নিয়ে স্বামীর জন্য খাবার টেবিল সাজিয়ে অপেক্ষা করছে মেয়েটি। খাবারের এত পদ যে, টেবিলে স্থান সংকুলান হচ্ছিলো না। অনেকদিন লাখ্কা মাছ খাওয়া হয়নি। সেও টেবিলের ছোট্ট এক জায়গায় নিজের স্থান করে নিয়েছে। 

হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডী হয়ে ওয়াহিদ সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখলো, আসমা তার জন্য অপেক্ষা করছে। ওয়াহিদ হাসি মুখে এসে নিঃশব্দে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। মনটা তার বড্ড খুসখুস করছে। কিভাবে কথাটি বলা যায়। ধুয়া ওঠা কফির মগে চুমুক দিয়েই ওয়াহিদ বলল-

~" চলোনা আমরা লং ড্রাইভে যাই!"

ওয়াহিদের ভাঙ্গা বাংলা কথায় ঘোর কাটলো আসমার। স্বামীর দিকে বেশ কিছুক্ষন চেয়ে আবার মেয়ের দিকে তাকালো। তারপর চট করে বলল-

~" কোথায় যেতে চাও?"

উম বলে কিছুক্ষন ভেবে আবেগী গলায় বলে উঠলো ওয়াহিদ-

~" সুনসান নিরবতায় জড়ানো 'সেন্ট জোসেফ' শহরে?"

~" নাহ্ সেখানে যেতে মন চাচ্ছেনা।"

তাহলে তাহলে কোথায় যাওয়া যায় হু!
 চল তোমাদের বাংলাদেশে যাই! কত বছর তোমাদের দেশ দেখা হয়নি। আমার তো তেমন ছুটি নেই তবে ১ সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে সময় কাটিয়ে  আসতে পারবো। কি বলো, যাবে তোমার দেশে আমাকে নিয়ে! বলে ওয়াহিদ অনেক আশা নিয়ে আসমার দিকে চাইলো।

আপাকে দেখতে যেতে চাও! সোজা মুখের উপর প্রশ্ন ছুড়ে মারলো আসমা ওয়াহিদের দিকে।

নাহ্ কফিটা আর খাওয়া হল না ওয়াহিদের। কফির মগটা টেবিলে রেখে আমতা আমতা করে বলল-

~" তেমন কিছু নয়। একটু দেখতে তাকে মন চাচ্ছিলো তাই আর কি!"

আসমা ভ্রু কুচকে ওয়াদিকের দিকে চেয়ে মুখটা মলিন করে বলল-

~" তুমি এখনো আপাকে পছন্দ করো?"

~" বিলকুল নেহি। সে হামার খুব ভালো ফেন্ড অর তুম  হামারা বিবি। তোমে শাদী করার পর তার দিকে ঐ নজরে কভি চাইনি।"

স্বামীর মুখে আধো বাংলা মিশ্রিত উর্দু ভাষা শুনে আসমা বলল-

~" তাহলে আমরা পাকিস্থানে যাই। সেখানও তো কত দিন যাওয়া হয়নি। আম্মাও অনেকবার যাইতে বলে।"

ওয়াহিদ দু'হাত মুঠ করে বলল-

~" তুম ভুল গেয়া, উছকা এহসানের কথা।"

~" না না আমি ভুলবো কি করে তার সাহার্য্যর কথা। সেই কথাগুলো ভোলার মত সাহস আমার নেই। আমি ভাবছি অন্য কথা।"

~" হাম লোক বাংলাদেশে যাচ্ছি ওকে! সামনের সানডে আমাদের ফ্লাইট। সব কুছ প্যাক করে নাও।"

ওয়াহিদ আর কোন কথা না বলে বরং রুক্ষ মেজাজ দেখিয়ে চলে গেল আসমার সামনে থেকে। আসমা অবাক চাহোনিতে চেয়ে রইলো স্বামীর চলে যাওয়ার পথের পানে। গভীর চিন্তায় মগ্ন সে। বাংলাদেশে যেতে চায়না ও। পুরনো স্মৃতি মনে পড়ছে। বিশেষ করে ওকে যারা মানুষ করেছিল তাদের ব্যাপারে। তারা কি বেঁচে আছে? মন চায়না তাদের মুখ না দেখতে।  কিন্তু ওয়াহিদ এত জোড় করছে কেন? হঠাৎ আসমার মনে উদয় হলো, আপা ঠিক আছে তো? মাঝে মাঝে কথা হয়। কিন্তু গত কয়েকমাস যাবত তার সাথে কথা হয়নি। নিশ্চয় কিছু হয়েছে বলে ওর মেয়ে 'ওয়াসিকা' কে কোলে নিয়ে উঠে উপরে চলে গেল বাবার কাছে কল করে সব কিছু খোলসা করতে। 


ফিহার মাথার চুল কামিয়ে দেওয়া হয়েছে। টাকলা মাথা নিয়ে শিহাবের কাছে আসতেই মুখটা বেকিয়ে নিল ফিহা। সেটা দেখেই শিহাব বলে উঠলো-

~" ন্যাড়া মাথা চার আনা
     চাবি দিলে ঘোরে না
     চিংড়ি মাছের ঝোল
     ন্যাড়া শালা চোর।"

ব্যাস হয়ে গেল। গলা ফেটে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো ফিহা। কাছেই বাতাসি বিবি বসে ওদের ঝগড়া দেখছিল। সে কিছু না বলে বরং মজা নিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ বাতাসিরও একটা ছড়া মনে পড়তেই ও ফিহাকে কাছে ডেকে বলল-

~" ক্যারে কান্দোস ক্যান? শিহাবের ছড়া বুঝি তো পছন্দ হয়নি! আই একখান শুনাই! হেইডা তোর আরও ভালো লাগবে। শুনবি.......
  ন্যাড়ীরে হা
  চাউল ভাজা খা 
 নাকোতও দড়ি দিয়া
 হালালা হাটে যা।"

আম্মু বলেই গলার রগ টেনে ফিহা চিৎকার দিয়ে উঠলো। নিসা ওর রুম থেকে বের হয়ে বলল-

~" কি হয়েছে! কাঁদছো কেন?"

দেখোনা, শিহাব ভাইয়া আর বাতাসি দাদী আমাকে ক্ষেপাইছে। আমাকে উল্টা পাল্টা কথা বলছে। মেয়ের কান্না দেখে নিসা নিচে নামতে লাগলো। এমন সময় বাতাসি খানিকটা উল্লাসিত হয়ে শিহাবকে বলল-

~" ঐ বাঁচতে চাইলে এহোনি মায়েরে ডাইকা আন। ঐ যে দেখ, বাদ্য বাজানি আইচে তোর বাদ্য বাজাইতে। যাহ্ যা ডাইকা আন।"

আপনী কি বললেন আমায়! আমি বাদ্যবাজানি! আপনার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধে। কথা বলতে চাইনা তবুও গায়ে পড়ে কথা বলতে আসে। কথাগুলো বলেই মেয়ের হাত ধরলো নিসা।

কথা কইতে তোরে কে কইছে! বাতাসি শূন্যতে পা তুলে নিসাকে দেখিয়ে বলল, তোর সাথে কথা কওনের লাগি অ্যার পায়ে ধুলা পড়চে নাকি! অ্যার ঠেকা পড়চে তোর সাত কতা কওয়ার। আইতো ছড়া কই...

"এক গাড়ী দুই গাড়ী হল হলাতে যায়
ন্যাড়া মাথায় বুম মারলে
ছিলকা উটে যায়।"

খানিকটা দুরে দাড়িয়ে বাতাসির সাথে মুখ মিলালো শিহাবও। তা দেখে নিসার সমস্ত রাগ শিহাবের উপর গিয়ে পড়লো। তাছাড়া নিধির কাছে শুনছিল আজ কিভাবে রুপালী ফুফু নিধিকে বকা দিছে। সেটার একটা ঝাঝও আছে নিসার মনে। তাই গলা ফাটিয়ে বলল-

~" এমন বিয়াদপ ছেলে আমি জিবনেও দেখিনি। এই বাসায় তো আরও একটা ছেলে আছে কই তাকে তো কখনো দেখিনি এসব নোংরা ভাষায় অন্যের পিছে লাগা। শিক্ষার অভাব আছে। না হলে কেউ কারো পিছে এভাবে লাগে!"

নিসার কথার মধ্য বাতাসির মনে হচ্ছে ধেয়ে আসছে ঝগড়ার কোন সাইক্লোন। সেই খুশিতে বাতাসির মনে ডুক্কি খেল মজার ম্যাটিনি সো দেখার উল্লাস। আহ্ কুসুম কই গেলিরে আয় কাছে আয়। লগে দু'কাপ চা আর টোষ্ট বিস্কুট লইয়া আয়। ঝগড়া দেখুম। এই নিসা আর রুমকি এক লগে ঝগড়া লাগলে কমছে ২ ঘন্টাতেও ঝগড়া থামবোনা। পারলে মটর কালি লইয়া আয়। চাবামু আর ঝগড়ার সুর তুলুম। সাবিনা থাকলে ওরে কওন লাগতোনা। 

বাতাসির কথার মাঝেই রুমকি হাজির হলো। সে গলার চরক বাজিয়ে বলল-

~" কি হয়েছে! আমার ছেলেকে বকছেন কেন? কি করেছে ও?"

আমার কারো সাথে কথা বলার মোটেও ইচ্ছা নেই। নিজের বাচ্চা যেন সামলিয়ে রাখে। অন্য জনের সাথে যেন লাগতে না আসে! এবার যদি রির্পোট পাই তাহলে চড়েই গালের সব দাঁত ছুটাইবো। কথাগুলো বলে নিসা চলে যেতেই রুমকি পিছন থেকে জোর গলায় বলল-

~" আপনার মেয়ে বুঝি খুবই ভালো! এই বাসায় তো সাদও আছে কই আপনার মেয়েও তো তার মত হয়নি। নরমের উপর সে খুবই গরম ঝাড়ে। আমার ছেলে সাদ না যে ওকে যা বলবে ও চুপ করে থাকবে।"

নিসা রুমকিকে কিছু না বলে ফিহাকে শাসাতে শাসাতে নিজের রুমে গেল। বাসার সবাই মগের মুল্লুক পাইছে নাকি। যার যা ইচ্ছা হবে আমাকে কথা শুনাইবে! দেখি আজ বাবা এর বিচার কি করে! বাসাতে ঢুকতে না ঢুকতেই বিভিন্ন কথা শুনাই। আর তুই! বলে ফিহাকে জোড়ে একটা ধমক দিল নিসা। তোরে যদি দেখছি সাদ বা শিহাবের সাথে মেশা তাহলে ঠাং ভেঙ্গে রুমে বসিয়ে রাখবো।

যাহ্ ঝগড়া থেমে গেল! কথাগুলো বলতেই কুসুম দু'কাপ চা নিয়ে বাতাসির কাছে হাজির হল। দাদি চা কই রাখবো?

~"অ্যার মাথায় ঢাল।"

আপনার মাথায় ঢাললে তো ন্যাড়া মাথার মত ছিলকা উঠে যাবে। ফিহাকে বলা কথাগুলো আপনার সাথে ঘটলো না! কি বলেন সত্যি কথা বলেছি তো? কথাগুলো বলেই বাতাসির মাথার উপর দু'কাপ চা তুলে ধরলো কুসুম।

মাইরা ফেল অ্যারে বলে বাতাসি উঠেই তার রুমের দিকে চলে গেল। 
হ আপনি মরলেই তো দুনিয়া ঠান্ডা হবে বলে কুসুমও রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো।


কামরান সাহেব তিতিরের সামনে অনেক্ষন ধরে বসে আছে, সাথে লাবীবাও। আজ বাসার সবাইকে কিভাবে সামলিয়েছে সেটা শুধুমাত্র কামরান সাহেবই ভালো জানেন। এর জন্য বড় আপার কাছে কতগুলো বকাও খেয়েছে। কিন্তু তিতিরের জন্য সব কথা হজম করেছেন তিনি। মাথা গরম করলে কিছুই ভালো আশা করা যায় না। তাই তিনি এখনো মাথা ঠান্ডা রেখে তিতিরের সামনে বসে আছেন।

তিতিরের সামনে একটা গিফট্ পেপারে মোড়ানো বক্স রয়েছে। কামরান সাহেব অনেকবার সেটা খুলতে বলেছে কিন্তু তিতির সেটা না খুলে মাথা নিচু করে হাতের আঙ্গুল আলতো করে মুচরিয়ে চলছে। লাবীবা বেগমের আর সহ্য হলোনা। তিনি নিজেই সেটা নিয়ে খুলতেই বেরিয়ে এলো ১ ঝুড়ি নানান রকম চকলেট। তিতিরের মুখে হাসি ফুটতেই কামরান সাহেব সেই সুযোগটা লুফিয়ে নিয়ে বলল-

~" আজ সবার সাথে ঝগড়া কেন করেছিলে মা!"

তিতির তবুও কোন কথার জবাব দিলো না। লাবীবা একটা চকলেট খুলে মুখে পুরে দিয়ে বলল-

~" বাহ্ চকলেটগুলো খেতে তো অনেক সুস্বাধু! "

~" মা আমাকে কটা চকলেট দিবেন? আমার ছেলের জন্য!"

তিতিরের কথা শুনে কামরান সাহেব ঠিক করলেন, ওকে আর কিছু বলবেন না। এমন মানুষিক রোগীকে কিছু বলাও ঠিক না। যা করছে করুক বলে উঠতেই হঠাৎ মাহাদের উপর সন্দেহ জাগলো। মাহাদ এসব করতে বলেনি তো! তিতিরের এসব পাগলামি দেখে ওকে যদি কিছু বলি তাহলে মাহাদের এখন যা রাগ! তাতে ও এক মুহুত্বের জন্যও এ বাসাতে থাকবেনা। ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে চলে যাবে। 
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে কামরান সাহেব তার স্ত্রীকে বললেন-

~" লাবীবা, তোমার ছোট ছেলে কার মত হয়েছে? আমার না তোমার মত?"

তার স্বামী যে এমন সিচুয়েশনে এসব কথা কেন বলছে তা ভেবে পেলোনা লাবীবা। তবুও স্বামীর কথার পেক্ষাপটে বলেই ফেললেন-

~" মাহাদের কথা বলছেন তো! ও তো আপনার আম্মাজানের মত হয়েছে।"

আম্মাজানের মত হয়েছে মানে! কথাটা বলেই কামরান সাহেব নিজ স্ত্রীর দিকে চাইলেন। লাবীবা আমি কি এখন জোক শুনাচ্ছি! তুমি এমন কথা কিভাবে বললে?

স্বামীর ওমন রাগান্বিত লুক দেখে লাবীবার চকলেট খাওয়া বন্ধ করে থ মেরে রইলো। বাড়তি কথা বলার আর সাহস দেখালেন না। একদম চুপ মেরে গেলেন। কিন্তু কামরান সাহেব ছেলেকে নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেছেন। মাহাদ আমি তোকে জন্ম দিয়েছি তুই আমাকে না। তাই তোর মস্তিষ্কে কি কি চলে সেটা আমি সহজেই ধরে ফেলি। ভাবছিস তিতিরকে কাজে লাগিয়ে এই বাসা থেকে চলে যেতে চাচ্ছিস! নাহ্ সেটা আমি হতে দিবোনা। তুই চলিস পাতায় পাতায় আর তোর এই বাপ চলে সেই পাতার শিরায় শিরায়। কথাগুলো মনে মনেই বললেন তিনি কিন্তু স্ত্রীর কাছে সেটা প্রকাশ না করে বরং মাহাদের উপর রাগ করেই রুম ত্যাগ করলেন।

শশুড় মসাই চলে যেতেই তিতির সব চকলেট নিজের ওড়নাতে কুড়িয়ে নিয়ে বলল-

~" এগুলো আমার ছেলের জন্য। আপনি এখান থেকে আর একটাও খাবেন না।"

তিতিরের এমন বদলে যাওয়া দেখে লাবীবা খুবই কষ্ট পেলেন। আগের তিতির কোনদিনও এমন ব্যবহার করতোনা তবুও তাকে সইতে পারতাম না। আর এখন এমন ব্যবহারেও তাকে সইতে হচ্ছে। আল্লাহ্ আর এমন শাস্তি দিয়ে কতবার বোঝাবেন। লাবীবা তিতিরের মাথায় হাত ছোয়াতেই তিতির হাত ঝিটকা দিয়ে সরিয়ে দিল। তারপর উচ্চস্বরে সাদকে ডাকতে লাগলো। 

কিছুসময় পর সাদ রুমে আসলে তিতির সব চকলেট গুলো ছেলেকে দিল। সাদও সেগুলো নিয়ে রুম থেকে বের হলো।
লাবীবা আর বসে থাকতে পারলেন না। তিনি জানেন সাদ কোথায় যাচ্ছে। তাই দ্রুত তিনি সাদের পিছু নিলেন।

সাদ চকলেটগুলো নিয়ে প্রথমে নিধিদের রুমে গেল। দেখলো নিধি পড়ছে। বড় মাকে সালাম দিয়ে তাদের দু'বোনকে চকলেট দিতেই ফিহা ফেলে দিয়ে বলল-

~" তুই আমার সাথে একদমই কথা বলবিনা। শিহাবের সাথে মিল লাগাইছিস? ও কয়দিন থাকবে? তারপর তোরে মজা দেখাবো।"

ফিহার এমন আচরনে নিসা কিছুই বললো না। কিন্তু নিসা জানতোনা দরজার আড়ালে তার শাশুড়ী দাড়িয়ে আছে। লাবীবা সাথে সাথে দরজার পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকেই বলল-

~" ঐ কি করবি ওকে! তোর বাবাও তো কত কি নিয়ে আসে তবুও তুই ওরে দিতে যাস? ও নিজে চকলেট না খেয়ে তোকে দিতে আসছে আর ওকেই তুই শাসাস! তোর সাহস তো কম না!"

নিসা ভয় পেয়ে গেছে লাবীকে দেখে। ও উঠেই আমতা আমতা করে বলল-

~" মা ফিহা ছোট। ওর কথায় কিছু মনে করেন না।"

ও ছোট কিন্তু ওর কথাগুলো অনেক বড়। যে ছোট বয়সে এত কিছু বলে না জানি বড় হয়ে কি করবে! আর ও এতগুলো কথা বলল, তুমি কি তাকে একবারও শাসন করেছ! যাকে তুমি দিন রাত পাগল বলে বলে বাসা মাথায় তোল! সেই পাগলই তার ছেলেকে উত্তম শিক্ষা দিয়েছে যে, সবার সাথে কি ভাবে মিলেমিশে থাকতে হয়। 
তারপর লাবীবা ফিহাকে দিয়েই চকলেটগুলো কুড়িয়ে নিল। এর মাঝে নিসা আর একটা কথাও বলার সুযোগ পায়নি। তার আগেই সাদকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল লাবীবা।


রান্নাঘরে তিতির ঢুকে ফ্রীজ থেকে কোরাল মাছ বের করে কিউব করে কেটে নিতেই কুসুম এসে ভয়ে বলল-

~" ভাবী কি করছেন?"

তিতির নিজেও জানে কুসুম তারে ভয় পায়। তাই ওকে ভয় দেখানোর জন্য বলল-

~" মানুষ জবাই দিব। চিন্তা করছি কারে জবাই দিব?"

এমন কথা শুনে কুসুম আর রান্নাঘরে থাকতে পারলো না। দৌড়েই বাতাসির রুমে গিয়ে স্লিপ কেটে হুড়মুড় করে ফ্লোরে পড়ে যেতেই বাতাসি চিক্কুর দিয়ে বলল-

~" ভাঙ্গ, মোর ঘরের মাঝাটা ভাঙ্গ। ওমন হাতীর মত শরীর লইয়া মাইঝাতে পড়লে অ্যার মাঝা থাহে! ভাঙ্গে না গুরা গুরা হইবো!"

থোন আপনার মেঝের বাহাদুরি!  আপনি জানেন, ভাবী চাক্কু নিয়ে কারে যেন জবাই দেওয়ার জন্য ক্ষেপে আছে। কুসুম তাড়াহুড়া করে ফ্লোর থেকে উঠতে উঠতে কথা গুলো বলল।

কিহ্ কি কস তুই! হ্যাচা কতা? তাইলে তো তোরেই ঐ চাক্বুর তলে ফেলাইমু বলে বাতাসি বিছানা থেকে উঠেই বলল-

~" পাগলডা আছে কই!"

কুসুম বাতাসির কথা শুনে চোখ ফাড় ফাড় করে বলল-

~" করেন মস্করা, রান্না ঘরে যান তারপর ভাবী আপনার এই মস্করা ছুটাইবে। ঐ একজনই তো আপনাকে সোজা করতে পারে।"

ধ্যুর পাগলের কতা বাদ দে তো। বাতাসি আর কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরে চলে এলো। দেখল, তিতির কি যেন করছে। বাতাসি কাছে গিয়ে বলল-

~" আম্মা কি করেন?"

তিতির বাতাসির দিকে না ফিরেই বলল-

~" কোরাল মাছের পপকর্ন ভাজি।"

~" ধ্যুর কি ছাইপাস বলিস! মাছের আবার পপকর্ন হয় নাকি?"

~" হুঁ, মাইনষের নাম আবার কাউতাসি হয় নাকি?"

বাতাসি মুখটা মলিন করে বলল-

~" অ্যারে আবার কাউয়াতাসি কস! নাম যহন রাখছোস, তয় অ্যার জন্য একখান গরু দিয়া আকীকা দিস! তাইলে লেটা চুকে যাইবো?"

বাতাসির কথা শুনে তিতির চাকু ঘুড়াইতেই বাতাসির গলা শুকিয়ে এলো। বাতাসির ওমন কেবলাকান্ত চেহারা দেখে তিতির ফিক করে হেসেই বলল-

~" গরু দিব কেন! আপনার জন্য একটা বকরির ব্যবস্থা করেছি। চলবেনা.....!"

তিতিরের কথা শেষ না হতেই রজনীর চিৎকারময় কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেল। কুসুমও দৌড়ে রান্না ঘরে এসে তিতিরের হাতে চাকু দেখে ভয় পেয়ে থরথরিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল-

~" দাদী খুব খারাপ খবর আছে। রেজওয়ান ভাইজান নাকি হসপিটালে। তারে কারা যেন চাকু দিয়ে শুধু ফুরেই গেছে। অবস্থা খুবই খারাপ। বাঁচবোনা মনে হয়।"

এমন খবর পেয়ে বাতাসি একবার তিতিরের দিকে চেয়েই দ্রুত রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গেল। কিন্তু কুসুম আর না গিয়ে ভুতুড়ে দেখার মত তিতিরের দিকে চেয়ে রইলো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন