প্রিয়তা (পর্ব ০৮)


গত তিনদিন ধরেই অদ্ভুত আচরণ  করছে আরশি।আয়াজের সাথে ঠিকমত কথা ও বলছে না।আয়াজ কিছু বলতে গেলেই কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে তাকে।রাতে ঘুমানোর সময় ও দূরত্ব রেখে ঘুমায়। আয়াজ কাছে আসতে চাইলে ঘুমের ভান ধরে।এইসব ভালো লাগছে না আয়াজের। আরশি কি বুঝতে পারছে না ভীষণ কষ্ট অনুভব হচ্ছে তার নায়ক সাহেবের?

মাথায় হাত ঠেকিয়ে শুয়ে আছে আয়াজ।পাশেই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে আরশি।ঘড়িতে তিনটা বেজে বিশ মিনিট।ঘুম নেই আয়াজের চোখে। চিন্তা হচ্ছে তার।কেনো আরশি এমন ব্যবহার করছে তার সাথে বুঝতে পারছে না সে।পাশ থেকে আরশি কে টেনে বুকে আবদ্ধ করল আয়াজ।এতোক্ষণে শান্তি অনুভব করছে সে।মেয়েটাকে ছাড়া বুকটা শূন্য শূন্য লাগছিল তার।

"তিনদিন ধরেই তোমার অবহেলা সহ্য করছি।শুধু মাত্র ভালোবাসি বলে।কি ভেবেছে এই মেয়ে ভালোবাসি বলে আমার দুর্বলতায় আঘাত করবে?নো প্রিয়তা।আর না।তুমি চাইলেও আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে না।"
 
কথাটা বলে আরশিকে বুকের মাঝে চেপে ধরল আয়াজ।আরশিও ঘুমের ঘোরে আয়াজ কে শক্ত করে জরিয়ে ধরল।হাসল আয়াজ।দূরে থাকতে পারছে না আবার দূরে থাকার অভিনয় করছে এই মেয়ে। 
সকালে ঘুম থেকে উঠে অনুভব করলাম কেউ আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে রেখেছে।চোখ তুলে উপরে তাকাতেই ভেসে উঠল নায়ক সাহেবের সুদর্শন মুখশ্রী টা।মন চাইছে সারা মুখে চুমুতে ভরিয়ে দেই।সিল্কি চুলগুলো টেনে দিয়ে বলি আপনি বড্ড খারাপ নায়ক সাহেব।বড্ড খারাপ আপনি।এতো খারাপ বলেই শাস্তি দিচ্ছি আপনাকে।মনে মনে কথা গুলো বলে আরশি নিজের ঠোঁট দুটো এগিয়ে নিল আয়াজের  কপাল বরাবর।যখনি ঠোঁটের স্পর্শ দিতে যাবে চোখ মেলে তাকালো আয়াজ।আরশির চিন্তায় ভালো ঘুম হয়নি তার।আরশি নড়ে উঠতেই ঘুম হালকা হয়ে এসেছিল।পুরো তিনদিন পর নিজের প্রিয়তাকে বুকে পেয়ে ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে হচ্ছিল না একদম। তাই আরশিকে জরিয়ে ধরে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে ছিল।আয়াজ চোখ মেলে তাকাতেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো আরশির। সরে আসত নিলেই কোমড় আকড়ে ধরে নিজের উপর তুলে নিলো আয়াজ।অসম্ভব ভালো লাগলেও আয়াজ কে রাগ দেখানোর জন্য মোচড়া মুচড়ি করতে লাগল সরে আসার জন্য। আরও শক্ত করে নিল আয়াজের হাতের বাঁধন টি।মুচকি হেসে বলল,

-কি জান?সাপের মতো ফুঁস ফুঁস করছো কেনো?আর এইভাবে মুচড়া মুচড়ি করে লাভ হবে বলো?আমার বলিষ্ঠ হাতের বাঁধন থেকে ছুটে যাওয়া তোমার মতো পুচকির দ্বারা পসিবল না।বুঝেছ জান?

মুখ ফিরিয়ে নিল আরশি।কোনোভাবেই এই লোকের কাছে ধরা খাওয়া যাবে না।এই লোক কে বুঝাতে হবে ভীষণ রেগে আছে সে।

---কি মুখ ফিরিয়ে নিলে কেনো?তখন তো ঘুমে আমার ইজ্জত নেওয়ার চেষ্টা করছিলে তাহলে এখন মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছো কেনো?

হঠাৎ -ই আরশি এমন কথা বলে বসল যা শুনে আয়াজও হতভম্ব হয়ে গেলো।আরশির কথাটা ছিল এমন--

-আপনার ইজ্জত তো সেই রাতেই হরণ হয়ে গেছে। 

মুখ ফসকে এমন কথা বলায় আরশি নিজেও বেক্কল বনে গেলো।আর বেচারা আয়াজ তো একদম বরফ হয়ে গেলো আরশির কথায়।হাত দুটো ঢিল হয়ে আসল তার।ভাবতে লাগল সত্যি এটা তার প্রিয়তা তো?হাতের বাঁধন ঢিল হয়ে আসতেই আয়াজের বাহু থেকে উঠে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো আরশি।কি বলল সে?ওয়াশরুমের দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বড় বড় শ্বাস ফেলতে লাগল সে।লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার।কিভাবে যাবে সে আয়াজের সামনে?অপরদিকে আয়াজ হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগল।
গোলাপি একটা শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নিল আরশি।চুলটা খোপা করে পা বাড়াল আনহার রুমের দিকে।রুমে আসতেই দেখল আনহা বসে আছে একদম চুপ করে।হয়তো কিছুটা মন খারাপ। আরশি চুপটি করে গিয়ে আনহার পাশে বসল।আলতো করে আনহার হাতটা নিজের হাতে নিলো।কারো স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকালো আনহা।আরশি কে দেখেই ঠোঁট দুটো প্রসারিত করল সে।
---মন খারাপ কেনো আনহা?আজ তো তোমার খুশির দিন।

---ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম ভাবি।বাবা-মার কথাও খুব মনে পড়ছে।বাবা-মা কে ভালো করে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি।কিন্তু আজ তারা থাকলে ভাইয়াকে জীবনে এতো কষ্ট করতে হতো না।নিজের জীবনের সুখ গুলো বিসর্জন দিতে হতো না।যারা আমাদের  বাবা-মাকে কেঁড়ে নিয়ে আমাদের এতিম করেছে আল্লাহ তাদের কঠিন বিচার করুক ভাবি।

অবাক হলো আরশি।ঝটপট প্রশ্ন করে বসল
--কেড়ে নিয়েছে মানে?
 একটা নিশ্বাস ছাড়ল আনহা।যা বুঝাচ্ছিল তার ভিতরে থাকা অবিরাম কষ্ট। 
--খুন করা হয়েছিল আমার বাবা মা কে।
ভিতর টা কেঁপে উঠল আরশির।আয়াজের বাবা মার মৃত্যু টাও স্বাভাবিক না।
---কে খুন করেছে? 
---আমি জানিনা ভাবি।মধ্যবিত্ত পরিবার ছিল আমাদের।বাবা-মা, ভাইয়া আর আমি মিলে ছোট একটা পরিবার ছিল আমাদের।ভাইয়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়তে যেতো স্যারের বাসায়।প্রতিদিনকার নিয়ম অনুযায়ী সেদিনও ভাইয়া বেরিয়ে যায়।আমি তখন ছোট ছিলাম।তাই কিছুই মনে নেই আমার। সেদিন প্রাইভেট থেকে ফিরে বাবা -মায়ের লাশের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়েছিল আমায়।কেউ আমাদের পাশে ছিল না ভাবি।কারণ কি জানো?অর্থ পাওয়ার কিছুই ছিল না আমাদের।মামারও এতো সামর্থ্য ছিল না আমাদের ভরণ পোষণ দেওয়ার।তবুও যতটুকু পেরেছে আমাদের জন্য করেছে।সেই ছোট বয়সে ভাইয়া বেঁচে থাকার লড়াই  করা শুরু করেছিল। শুরু করেছিল সমাজে নিজের পাওয়ার বানানোর লড়াই।। দু হাতে আগলে রেখেছে আমাকে।বাবা-মায়ের আদর দিয়ে বড় করেছে। তুমি জানো ভাবি?আমার ভাইয়া কখনও সুখ পায় নি।পরিশ্রম জীবনের টানা পোড়নে কেটে গেছে তার শৈশব -কিশোর জীবন।গড়েছে নিজের সামর্থ্য।হাসি-খুশি মানুষটা হয়ে উঠেছিল গম্ভীর প্রকৃতির।কঠোর হয়ে উঠেছিল তার মন।ভাইয়ার সেই কঠোর জীবনে যখন তুমি এলে সেদিন ভাইয়াকে প্রথম হাসতে দেখেছিলাম আমরা।ভাইয়া যতোটা স্ট্রং দেখায় নিজেকে ততটা সট্রং না সে।কতো রাত তাকে দেখেছি বাবা মায়ের জন্য কাদতে হিসেব নেই।বড্ড ভালোবাসতো সে বাবা-মাকে।তাদের এমন পরিণতি আজো মেনে নিতে পারছে না ভাইয়া।কে বা কারা আমাদের বাবা -মা কে খুন করেছে জানিনা আমি।তুমি জানো ভাবি,,,আমমমার মাররর রেইইইপপ হয়েছিল।

কথাটা বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠল আনহা। কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছিল তার কথাটা বলতে গিয়ে।আরশিও আনহা কে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিল।গায়ের লোম গুলো দাড়িয়ে গেলো তার শেষ বাক্য টা শুনে।কে এতো নিকৃষ্ট হতে পারে?
কাঁদতে লাগল আরশিও।বুঝতে পারছে আয়াজ কে অবহেলা করা তার একদম উচিত হয়নি।আরশি ভালো করেই জানে তার নায়ক সাহেব কখনও ভুল করতে পারে না।দৃঢ় বিশ্বাস আছে তার।মনে মনে ভেবে নিল আর জীবনেও বিন্দু পরিমাণ কষ্ট দিবে না সে নায়ক সাহেব কে।অভিমান করে কষ্ট দেওয়া ও উচিত হয়নি তার। 

---তুমি কখনও ভাইয়াকে কষ্ট দিও না ভাবি।ভাইয়া তোমাকে তার জীবনের চেয়ে ও বেশি ভালোবাসে।তুমিই পারবে ভাইয়াকে খুশি রাখতে।তুমি কখনও ভাইয়াকে ভুল বুঝবে না ভাবি।
---কখনও না।(বলেই ঢুকরে কেঁদে উঠল আরশি।)
আনহা কে নীল একটা শাড়ি পড়িয়ে রেডি করে দিল আরশি।নিশাদরা চলে এসেছে।আনহা কে নিয়ে নিচে গেলো সে।আরশির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আয়াজ।মনে মনে বলে উঠল---""শ্যামলা কন্যা যতই তোমার প্রশংসা করবো ততই কম হবে""।

আনহা কে নিশাদের পাশে বসাল আরশি।সবার অগোচরে আনহার বাম হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল নিশাদ।কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল--আমার নীল পরী খুব শীগ্রই আমার টুকটুকে লাল বউ হতে চলেছ তুমি।

নিশাদের কথায় লজ্জাময় হাসি হাসল আনহা।কারো দৃষ্টিতে না পড়লেও আয়াজের দৃষ্টিতে পড়ল ঠিকি।তৃপ্তিময় হাসি দিল আয়াজ।বোনের জন্য আর কেনো চিন্তা নেই তার।এই ছেলেটা কে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।

—————

অন্ধকার রুমে বসে আছে আয়াজ।সেই কখন থেকে আরশির সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু আরশি এইটা সেটা বলে এড়িয়ে যাচ্ছে। সকালেও তো সব ঠিক ছিল।নিশাদরা চলে যাওয়ার পর আরশি নিজ থেকেই কথা বলেছিল আয়াজের সাথে।তো এখন আবার কি হলো?এই মেয়েটার মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছে না আয়াজ।পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে ফেসবুকে লগইন করল সে।কিছুক্ষণ ফেসবুকে স্ক্রল করে ফোনটা রেখে দিল ।ঘড়িতে সময় দেখে নিল।এগারো টা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট।সেই যে আরশি গেলো আর আসার নাম নেই।এই মেয়েকে শায়েস্তা করতে হবে।বেশি বাড় বেড়েছে। কথাটা বলে উঠে দাঁড়াল আয়াজ।তখনি ফ্লোরে কারো ছায়া দেখতে পেয়ে সামনে তাকালো সে।সামনে তাকাতেই মনে হলো বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো।হৃৎস্পন্দন হতে লাগল প্রচন্ড বেগে।বাহির থেকে আলো এসে পড়ছে রুমে।সেই একটু আলোতে ভেসে উঠছে এক হৃদয়স্পর্শীর চেহারা।পড়নে তার লাল শাড়ি। চুলটা ছেড়ে দেওয়া। সেই প্রথম মূহুর্তের মতোই আজো হৃদয়টা কেঁপে উঠল আয়াজের।থমকে গেলো সে।এক পলকে তাকিয়ে রইল সামনে দাড়িয়ে থাকা তার লাল শাড়ি পরিহিতা প্রিয়তার দিকে।ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে আয়াজের সামনে দাঁড়াল আরশি।মুখে তার লজ্জাময় হাসি লেগেই আছে।আয়াজের নেশা তুর দৃষ্টি তার লজ্জা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। খুব সাবধানে আয়াজের হাতটা ধরল আরশি।আরশির হাতের ছোয়া পেতেই আয়াজের সারা শরীরে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।মাথা নিচু করে মিহি কন্ঠে বলল আরশি,,

----শুভ জন্মদিন নায়ক সাহেব।

অবাক হলো আয়াজ।আজ যে তার জন্মদিন বোনের চিন্তায় সেটাও ভুলে গিয়েছিল সে।প্রিয়তার মুখে শুভ জন্মদিন শুনে মনটা খুশিতে ভরে উঠল তার।ইচ্ছে জাগল বহু বছর বেঁচে থাকার যেনো প্রতিবারই প্রিয়তার মিষ্টি কন্ঠে "শুভ জন্মদিন নায়ক সাহেব" এই বাক্যটা শুনতে পায়।সামান্য একটা বাক্য অথচ তার প্রিয়তার মুখে কতো মধুর শোনাচ্ছে।মুখ দিয়ে কোনো শব্দ উচ্চারণ করল না আয়াজ।হাত দুটো টেনে আরশিকে বাহু ডোরে আবদ্ধ করে নিল সে।দুই গালে হাত রেখে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে দিল আরশির কপালে।প্রিয় মানুষের ভালোবাসার স্পর্শ পেতেই চোখ দুটো আবেশেই বন্ধ হয়ে এলো আরশির।নিজেকে আয়াজের বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে আয়াজের হাতটা আকড়ে ধরে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।

ছাদে আসতেই চোখ মুখে হাসি ফোটে উঠল আয়াজের।পাশাপাশি অনেক অবাক ও হলো।হয়তো আজ আয়াজের অবাক হওয়ার একটা রাত।প্রথমে প্রাণের চেয়ে প্রিয় প্রিয়তার লাল পরী সেজে হৃদয়হরণী হয়ে উঠা।আর এখন পুরো ছাদে লাইটিং,সাদা গোলাপ,,লাল সাদা বেলুন দিয়ে সাজানো ডেকোরেশন দেখে।সামনেই কলিজার বোন দাড়িয়ে আছে হাসি মুখে। লাস্ট কবে নিজের বার্থডে তে এমন সারপ্রাইজ পেয়েছে মনে পড়ছে না তার।প্রতিবছর আনহা জোর করে কেক কাটাত।ফিল্মে যাদের সাথে কাজ করতো পার্টি দিত।কই কখনও তো এতো আনন্দিত হয়নি মনটা?আজ প্রিয় মানুষ টা ভালোবাসার মানুষ টা কাছে আছে বলেই কি সবকিছু তে আনন্দিত হচ্ছে এই হৃদয়? আয়াজ কে দেখেই এগিয়ে এলো আনহা।ভাইকে জরিয়ে ধরে বলে উঠল- 

---হ্যাপি বার্থডে ভাইয়া।তুমি জানো,,এই সবকিছুর আয়োজন ভাবি করেছে।গতকাল বিকালে আমার কাছ থেকে যখনি শুনেছে আজ তোমার জন্মদিন তখন থেকেই এতো আয়োজন তার।

আনহার কথায় পাশ ফিরে আরশির দিকে তাকাল আয়াজ।লজ্জায় অন্যদিকে তাকাল আরশি।কেমন যেনো অনুভূত হচ্ছে তার।আচ্ছা নায়ক সাহেবের সারপ্রাইজ টা পছন্দ হয়েছে তো?কথাটা ভেবেই আবারো আয়াজের দিকে ফিরে তাকালো সে।আয়াজের ঠোঁটে লেগে থাকা হাসিটা দৃষ্টি কেড়ে নিল তার।কেক কেটে এক পিছ কেক আনহার মুখের সামনে ধরল আয়াজ।সেটা খেয়ে নিল আনহা। আয়াজকেও খাইয়ে দিল।ফোন আসতেই কথা বলতে বলতে নিচে নেমে এলো সে।আনহা যেতেই হাতে এক পিছ কেক নিয়ে আরশির কাছে এসে দাঁড়াল আয়াজ।চুপ করে দাড়িয়ে ছিল আরশি।

---কেক খাওয়াবা না আমাকে?(ঘোর লাগা কন্ঠে বলল আয়াজ)
---জিজজজ্ব।
--তো খাইয়ে দাও।
 আরশি যেই না কেক নিতে যাবে হাত ধরে আটকে দিল আয়াজ।

----কেক তো আমার হাতে আছে।সি প্রিয়তা।
---হুমম।কিন্তু আপনাকে যে খাওয়াতে বললেন?
--খাওয়াবে তো কিন্তু অন্যরকম ভাবে।
---মাননননে?
---মানে টা খুব সোজা।
কথাটা বলেই কেকের ক্রিম লাগিয়ে দিল আরশির ঠোঁটে। 
কেঁপে উঠল আরশি।
---কি কর,,,,
কথাটা শেষ করার আগেই তার ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরল আয়াজ।চমকে গেলো আরশি।চোখ দুটো বড়বড় হয়ে এলো তার।কিছুক্ষণ বাদেই খালি কোমড়ে আবিষ্কার করল আয়াজের হাত দুটো।মিনিট দশেক বাদেই আরশির ঠোঁটে বেশ জোরেই  একটা কামড়া দিয়ে সরে এলো আয়াজ।আ আ...আ করে উঠল আরশি।আয়াজ কপাল ঠেকালো আরশির কপালে।হাত দুটো এখনও আরশির কোমড়ে বিচরণ করছে।জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগল দু'জনেই।হাঁফানো গলায় বলে উঠল আয়াজ--

---আমায় অবহেলা করার শাস্তি প্রিয়তা।

মাথা নিচু করে ফেলল আরশি।

কপালে পরে থাকা চুলগুলো আরশির কানের পিছে গুজে দিল আয়াজ।সেই সাথে গুজে দিল একটা সাদা গোলাপ।লাল শাড়ির সাথে সাদাগোলাপ আয়াজের প্রিয়তার সৌন্দর্য যেনো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিল।আয়াজের ইচ্ছে হচ্ছে তার প্রিয়তাকে নতুন আরেকটা নাম দিতে--"পুষ্প কন্যা "।ইচ্ছে করছে এই পুষ্প কন্যা কে নিজের মাঝে মিশিয়ে নিতে।

আরশির কানের কাছে মুখ নিয়ে গেলো আয়াজ।ঘোর লাগা কন্ঠে ফিসফিস করে বলে উঠল

----ধন্যবাদ পুষ্প কন্যা। ধন্যবাদ আমায় এই সুখ  নামক গিফট টা দেবার জন্য।

একটু কেঁপে উঠল আরশি কানের কাছে আয়াজের নিশ্বাস পড়তেই।শাড়ি খামচে ধরল দু হাতে।

ঘোর কন্ঠে আবারও বলে উঠল আয়াজ--আমিও তোমায় রিটার্ন গিফট দিতে চাই নিবে কি?

--হুমমম (মাথা নিচু করে)

----তো চলো।

---কোথা,,,,

কথাটা শেষ করার আগেই আয়াজ কোলে তুলে নিল।
ভয় পেয়ে গেলো আরশি।নিজেকে রক্ষা করতে খামচে ধরল আয়াজের শার্টের কিছু অংশ।

---------------

কালো একটা ড্রেস পরে রেডি হয়ে আয়াজের অপেক্ষায় ড্রইং রুমে বসে আছে আরশি।আজ ভার্সিটিতে ভর্তি করাতে নিয়ে যাবে আয়াজ তাকে।কালো শার্ট চোখে সানগ্লাস পরে নিচে নেমে এলো আয়াজ।আয়াজ কে এই লুকে দেখে এক দফা ক্রাশ খেলো আরশি।হাতটা এগিয়ে দিতেই আয়াজের হাত ধরে বেরিয়ে এলো সে।

ভার্সিটিতে ভর্তি কমপ্লিট করে বেরিয়ে এলো দুজন।পিছনে গার্ডরা পাবলিক সামলাতে ব্যস্ত। অটোগ্রাফ দিতে আর সেলফি তুলতে তুলতে হাফিয়ে উঠছিল আয়াজ।আর আরশি বেচারি তো নিজের স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে সেলফি তুলতে দেখেই কেঁদে অবস্থা খারাপ।আরশির চোখের জল দেখে বুকটা ব্যাথা করে উঠল আয়াজের।বুঝতে একটু ও অসুবিধা হলো না কেনো তার প্রিয়তার চোখে জল।
তাই আরশিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসল সে।চোখের পানি মুছে দিয়ে জিজ্ঞেস করল?

--আর ইউ জেলাস প্রিয়তা?
 
ফুঁসে উঠল আরশি।দাত কটমট করে বলে উঠল- 

--জেলাস হব না তো কি হবো?ইয়েস আ'ম জেলাস।কজ ওই অসভ্য বেহায়া মেয়েগুলো কেমন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিল আমার স্বামীকে।

হাসল আয়াজ।আরশিকে একহাতে টেনে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে গাড়ি চালাতে শুরু করল সে।কিছুক্ষণ নীরবতায় কাটল সময়।আয়াজের মুখের দিকে তাকাল আরশি।নিজের মনে কোনোরকম দ্বিধা রাখতে চায় না সে।

---নায়ক সাহেব আপনার কাছে কিছু সময় হবে?
---অবশ্যই হবে জান।(গাড়ি চালাতে চালাতে উত্তর দিল আয়াজ) 

আয়াজের বাহু থেকে সরে আসল আরশি।নিজের ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে আয়াজের সামনে ধরল সে।সাথে সাথেই গাড়িতে খুব জোরে ব্রেক কষল আয়াজ।আরশির কপাল গিয়ে ঠেকল আয়াজের হাতের তালুতে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন