আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ৩৪ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


চাচ্চু এটাই কি তোমার বাসা?

নিধির এমন কথায় লাবীবার সমস্ত রাগ যেন উবে গেল। ছলছল চোখে নিধির দিকে চেয়ে রইলো।

মাহাদ নিধিকে একটা কিস করে বলল," হ্যাঁ মা, এটাই আমার বাসা। শুধু আমার বাসা নয়,  এটা তোমারও বাসা।"

" তাহলে আমরা অন্য বাসায় থাকি কেন! তোমার বাবা কোনটা চাচ্চু?"

" মাহাদ কঠিন চোখে ওর বাবার দিকে চেয়ে বলল," তোমার পাশে আমার বাবা বসে আছে মা!"

" নিধির ছোট্ট চোখ চকচক করে উঠলো। নিধি কামরানের গালে হাত দিয়ে বলল," আমার বাবার বাবা! মাহাদের কোল থেকে উঠে গিয়ে কামরানের কোলে গিয়ে কামরানের কপালে একটা কিস করল। "

কামরান সাহেবের কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। কামরান অসহায়ের মত ওর মা বাতাসির দিকে চেয়ে রইলো।

মা, বাবার বাবা না, ওটা তোমার দাদু হয়। পাশের বাসার তোমার ফ্রেন্ড ফারিহার যেমন দাদু রয়েছে ইনিও তেমন তোমার দাদু হোন। সব সময় বাসায় বাবা-মার সাথে ঝগড়া করো ফারিহার দাদুর কাছে যাবে বলে! তাই আজ তোমাকে দাদুর কাছে নিয়ে এসেছি। 

নিধি কামরানের বুকের মধ্য ফারিহার মত সুখ খোঁজার জন্য চুপটি করে বসে আছে। তার নিজেরও খুব ভালো লাগছে। ফারিহাকে বলতে পারবে তার নিজেরও দাদু আছে। 

লাবীবা শাশুড়ীকে তোয়াক্কা না করে  কামরানের কাছ থেকে নিজেই নিধিকে কোলে নিয়ে উপরে চলে গেল। 

ব্যাপারটা বাতাসির ভালো লাগলোনা। এবার বাতাসি যা সিদ্ধান্ত নিল তা খুবই ভয়াভয়। কামু তোর বৌ কিন্তু কাজটা ঠিক করলোনা। আজ তুই অ্যার ঘরে থাকবি। তোর বৌ অ্যার কাছে মাফ না চাওয়া অবদি তুই ওর ঘরে যাবিনা।

বাতাসির এমন কথায় মাহাদ ক্ষেপে গিয়ে বলল," আমার বাবাকে সারা জিবন আমি হাফ লেডি হিসাবেই দেখেছি। তোমার বিরুদ্ধে তার সৎ কথা বলারও সাহস নাই। চিন্তা করোনা আজও তার প্রতিবাদ করবেনা। তবে তুমিও শুনে রাখো। মা যদি নিধিকে কোলে নিয়ে অপরাধ করে তাহলে তোমারও আমার সাথে কথা বলার অধিকার নাই। আজ থেকে তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্কই নেই।"

মাহাদ,  কথা বাড়াবি না একদম। তোর যা খুঁশি তাই কর কিন্তু অ্যার পোলার উপর অ্যারই সব থাইকা অধিকার আছে।

মাহাদ তাচ্ছিল্য সহকারে হেঁসে উঠলো। বাতাসি, তোমার যখন কিছুই প্রয়োজন নেই তখন ছেলেকে না বিয়ে দিয়ে সোকেসে শোপিসের মত সাজিয়ে রাখতে! এত কিছু করার তো দরকার ছিলনা। আজ যদি বাবাকে নিয়ে টানাটানি করছো তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন। মাহাদ ওর বাবার হাত ধরে টেনে নিয়ে উপরে চলে গেল।

বাতাসি শুধু রাগী চোখে মাহাদের কাজগুলো দেখলো। নিজের মধ্য রাগ পুষে রাখতে জানে বাতাসি। যেদিন সে এই রাগ যাকে উগলে দিবে তার জিবন শেষ করে ছাড়বে।

♦♦♦

মাহাদ চলে যেতেই একটু পর তিতির ডাইনিং টেবিলে বসতেই আসমা ওকে খাবার এনে দিল। তিতির কেবল মুখে খাবার তুলবে এমন সময় বাতাসি আক্রোসের সাথে বলল," ঐ মাইয়া এমন ফাও আর কয়দিন খাবি! পরীক্ষাতো শেষ হয়ে গেল। এবার নিজের বাড়ির দিকে ঘাটা ধর।

ডাইনিং টেবিলে তখন কেউ ছিলনা। তিতির খাবার মুখে পুরে দিয়ে বলল," দাদী আপনিও স্বামীর ঘরে থাকেন আমিও থাকি। আমাদের সবার সমান অধিকার রয়েছে। আপনি যদি এখানে থাকতে পারেন তাহলে আমি কেন পারবোনা?

"তোগো বেহুদা লীলাখেলা কি সগ্গলরে কইতে হবে! ভালো চাসতো চলে যা। তাছাড়া তোর এমন হাল করুম তখন কান্দে কুল পাবিনা।"

তিতির আর কোন কিছু না বলে খাবার শেষ করে উপরে চলে গেল। এখানে থাকলে কথায় কথা বাড়বে তাই না থাকায় ভালো।

♦♦♦♦

লাবীবা নিধির সাথে নানান কথায় ব্যস্ত। তাকে এটা দিচ্ছে ওটা দিচ্ছে কখনো বুকের সাথে জড়িয়ে আদর করছে। বার বার কিস করছে। 

" তুমি আমার দিদা হও!"

" হুম বলে চোখের জল ফেললো লাবীবা।"

" নিধি ওর ছোট হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল," কাঁদছ কেন দিদা! আমাকে কি তোমার পছন্দ হয়নি!"

" হবে না কেন বাবা! সব থেকে বেশি পছন্দ হয়েছে। দুধের থেকে দুধের স্বরের মায়া বেশি হয়।"

" দিদা, তুমি না খুব সুন্দর। আমার স্কুলের কারো দিদা তোমার মত এত সুন্দর নয়।"

লাবীবা জড়িয়ে ধরে বলল, " তাই! তোমার মায়ের থেকেও আমি সুন্দর?"

" মামুনির থেকেও সুন্দর তুমি।"

এমন সময় মাহাদ রুমে আসলো ওর বাবাকে নিয়ে। নিধি তোমার দাদু সুন্দর না!

" দিদার মত এতটা সুন্দর না চাচ্চু। তবে চাচী আম্মু খুব সুন্দর। তোমার মত আর দিদার থেকেও।"

নিধির কথা শুনে মাহাদের মুখ শুখিয়ে গেল। কামরান আর লাবীবা পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। মাহাদ, ও কি বলল! তোর বৌ মানে?

" মা ছাড়ো তো ওর কথা। ইংলিশ মুভির এক হিরোইনের  পিক দেখিয়ে ওকে মজা করে বলেছিলাম এটাই ওর চাচীআম্মু। সেই থেকে এমন করে। 
নিধি, বাসায় যাবানা! তোমাকে রেখে আসি চল? তোমার মামুনি টেনশন করবে।

নিধি সুড় সুড় করে লাবীবার কোল থেকে নেমে মাহাদের কাছে এসে দাড়ালো।

"মাহাদ, ওকে আজ রাতের জন্য রাখলে হতোনা! আমাদের কাছে একটা রাত থাকুক না!"

"ছেলে আর ছেলের বৌকে বাসায় আনলেই তো সবসময় ওকে কাছে পাও। কথাগুলো বলে মাহাদ নিধিকে নিয়ে চলে আসলো।"

মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মাহাদ নিধিকে জিঙ্গাসা করলো, "মা, তোমার চাচী আম্মুর কথা কেন বলতে গিয়েছ! আমি কি তোমাকে বলার অনুমতি দিয়েছি!"

"মামুনি যে বলতে বললো!"

" নিশা! মাহাদ ভ্রু কুচকে বলল," মামুনি কি কি বলেছে মা!"

" মামুনি বলল," চাচী আম্মু কে যেখানেই দেখতে পাবো সেখানেই যেন তাকে ডাক দেই। আর......"

" আর কি মা!"

" মামুনি কাউকে বলতে নিষেধ করেছে।"

ওকে বলতে হবেনা মা বলে মাহাদ গাড়ী স্ট্যার্ট দিতেই নিধি বলল," মামুনি জানলে বকা দিবে আমায়। তুমি মামুনিকে বলবানা তো!"

" বলতে হবেনা মা। কেউ কিছু বলতে নিষেধ করলে সেটা বলতে নেই।"

" নিধি কিছুক্ষন ভেবে তারপর বলল," মামুনি চাচীআম্মুকে সবসময় পঁচা মেয়ে বলে গালি দেয়। মামুনি বলেছে দাদুর কাছে যেন বলি চাচীআম্মুর কথা।"

" মাহাদ একমিনিটের মত বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। নিশা এমন কাজ করতে পারলো! কিসের স্বার্থে এমন কাজ করলো। ওর জন্য ভাইয়া আর আমি কি করিনি! তারপরও  শেষ পর্যন্ত তিতিরের সাথে হিংসা করতে লাগলো?"
মাহাদ নিধিকে ওর বাসায় রেখে চলে আসার সময় নিসা পিছন থেকে ডাকলো। মাহাদ বাসার ভিতর না ঢুকে বাহির থেকে চলে যাচ্ছিস কেন! ভেতরে আয়?"

মাহাদ পিছন ফিরে নিসাকে লম্বা একটা সালাম দিয়ে বলল," ভাবীমা, যেদিন নিজেকে সঠিক ভাবে শুধরাতে পারবেন সেদিন আমাকে আপনার বাসায় নিমন্ত্রন জানাবেন। আমি অবশ্যই আপনার নিমন্ত্রন গ্রহন করবো। আজ থেকে আপনার আর আমার মধ্য শুধু ভাবী আর দেবরের সম্পর্ক। নো ফ্রেন্ড.........."

মাহাদ আর কোন কথা না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। 

নিসার বুঝতে বিন্দু মাত্র বিলম্ব হল না। মাহাদ কেন তাকে এতবড় কথা বললো। নিসা হতাশ গলায় বলল, 

"মাহাদ, ঐ মেয়েকে তোর পাশে আমি মেনে নিতে পারিনা। মেয়েটা ঠিকি তোকে এক নিমিষেই জয় করে নিয়েছে। কিন্তু আরও অনেকে তোর পিছে পাগলের মত ঘুরেছে তবুও তাদের জন্য তোর মায়া হয়নি। আমি মেনে নিতে পারিনা এমন একটা কঠিন হৃদয়ের মানুষকে সে কিভাবে কব্জা করে নিলো। তোকে তো কারো মন দিয়ে জয় করা খুব কঠিন, তাহলে সেই কঠিন দেয়াল একটা সামান্য মেয়ে এসে কিভাবে চুরমার করে দিল। তুই সে বলতেই পাগল।

 তার জন্য  কোন কাজ করতে, সব কিছু পরিত্যাগ করতে দু'বারও ভাববিনা তুই। কেন তোর এত পরির্বতন।  আমি তোকে সেই কঠোর মাহাদই দেখতে চাই। আমাদের ভালোবাসায় মেয়েটা এসে ভাগ বসাল। আমাদের থেকে তোর কাছে তার প্রায়োরিটি বেশি। সেটা কিভাবে আমি মেনে নিব । আমি কখনোই মানতে পারছিনা তোদের এই গভীর ন্যাকামি ভালোবাসা। তুই মিলিকে মেনে নিসনি কিন্তু মনটা ঠিকি তিতিরের হাতে তুলে দিয়েছিস। তোকে নিয়ে আমার খুব গর্ব হত। কিন্তু শেষে একটা নাম পরিচয়হীন মেয়ে! ছিহ্ঃ আমি ভাবতেই পারিনা।" 


রাতে বাতাসির রুমে গোল মিটিং বসলো। একমাত্র আসামী কামরান মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। তার অপরাধ সে তার মায়ের কথা শোনেনি। ছেলের বৌ তো পরের ঘরের মেয়ে, সে কথা না শুনলে মানা যায় কিন্তু ছেলে নিজ ঘরের হয়েও কেন তার মাকে সবার সামনে বেইজ্জতি করলো! আজ তো সে কামুকে দেখেই ছাড়বে।

কামরান এবার এতদিনে সে তার মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলল,
"আম্মাজান, ছোটরা দোষ করলে শাসন করা যায় কিন্তু পা দিয়ে ঠেলে ফেলা যায়না। আমি সবসময় চেয়ে যাব ফুয়াদ যেন ভালো থাকে। আমার বড় সন্তান সে, প্রথম বাবা ডাক তার মুখ থেকেই শুনেছি। তাকে ছাড়া আর কতকাল থাকবো বলেন!"

রুপালী কামরানের দিয়ে চেয়ে আছে পরম তৃপ্তিতে। এই প্রথম ভাই তার মুখ ফুটে কিছু চেয়েছে তার মায়ের কাছে। এখন দেখা যাক তার মা কি করেন।

ছেলের কথা শুনে বাতাসি ক্ষেপে গেল। আরে নাদান!কাল সাপ ঘরে আনার জন্য উঠে পড়ে কেন লাগছোস?  আই মানুষের চেহারা দেখে ধরে ফেলি। আজ তোর ছেলেকে কেড়ে নিছে কাল তোর কলিজাটাই ছিড়ে খাবে। আই তোর মা হয়ে সেটা কেমনে সহ্য করবো! আমি ব্যাঁইচা  থাকতে ওদের এই বাড়িতে আসা নিষেধ। মরে যাই হের পর কি করবি জানিনা। তোর পুতের বৌ কেমন স্বভাবের যে দাদা-দাদী ডাকটা পর্যন্ত শেখাইনি। হুমহ্.....  তোরে বলে বাবার বাবা। ওরে চেনা হয়ে গেছে অ্যার।

অ্যার কথা আই কইছি। যাত্রাপালা শেষ,এইহানে সার্কাস না দেইখা সগ্গলে সগ্গলার ঘরে যাও। বাতাসি অন্য দিকে চেয়ে রইলো। সবাই চলে গেল।

♦♦♦♦

রাত ন'টা বাজে। মাহাদ ছোট একটা ব্রিজের উপর বসে আছে। মা বার বার কল দিচ্ছে। মাহাদ শেষে রিসিভ করে বলল," মা আমার মন ভালো নেই, তাই অহেতুক কথাবার্তা বলবানা।"

" ফুয়াদের নাম্বার নাই। তাই তোকে কল দিছি। ওদের কালই বাসায় আসতে বল। তোর দাদীর কথা আর শুনতে পারবোনা। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসুক।"

মাহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল," মা, ভাইয়ার রিযিক যেদিন আমাদের বাসায় মাপবে সেদিন ভাইয়া নিজেই হাজির হবে আমাদের বাসায়। আর দাদী মুরুব্বি মানুষ,  সে নিশ্চয় আমাদের থেকে বেশি বোঝে। তাই দাদীর সম্মান নিয়ে আর টানাটানি করোনা।" মাহাদ কথাগুলো বলে কল কেটে দিল।"

নিসা আজ যা তোর রুপ দেখলাম তাতে আমি নিজেই শিহরিত হয়ে গেলাম। তুই আমাদের বাসায় আসলে যে পরিবেশ নষ্ট হবে সেটা আজ হারে হারে টের পেয়েছি। আল্লাহ্ যা করে বান্দার মঙ্গলের জন্য করে। শুধু আমরা নিজেরাই না বুঝে তারাহুরা করি। তিতির তোর সম্পর্কে যা বলেছিল তাই সঠিক হল। আমি শুধু শুধু ওর গায়ে হাত তুলেছি সেদিন। বাবাকে দাদা ডাকটাও শিখাই দেসনি তুই নিধিকে। আমি কিভাবে তোকে চিনতে ভুল করলাম!

রাত দশটা পর্যন্ত ব্রীজে বসে থেকেই কাটালো মাহাদ। কেবল ব্রীজ থেকে নামবে এমন সময় একটা বাইক দ্রুত এসে কারা যেন মাহাদের গলা বরাবর  ছুড়ি দিয়ে আঘাত করলো। মাহাদ সাথে সাথে সরে গেল কিন্তু খানিকটা অসাবধানতার জন্য ছুড়ি গিয়ে হাতের বাহু বরাবর আঘাত করলো। অনেকখানি হাত কেটে গেল। বাইক তখন চলে গেছে। মাহাদ বুঝতে পারলো ওরা আবার আসবে তাই প্রস্তুত হয়ে রইলো। 

মাহাদের চিন্তাধারা ভুল ছিলনা। সত্যিই তারা আবার আসলো আর একই কায়দায় মাহাদকে আক্রমন করলো। মাহাদও সাথে সাথে সরে এসে বাইক বরাবর গায়ের শক্তি দিয়ে ধাম করে জোড়ে একটা লাথি বসিয়ে দিল। যার ফলাফল বাইক ছিটকে পড়ে যায়। দু'জন আহোরীকে নিয়েই গাড়ী ছিচড়ে অনেকদুর পর্যন্ত চলে গেল। মাহাদ দৌড়ে গিয়ে দেখলো একজনের পা বাইকের চলন্ত চাকার সাথে লেগে থেঁতলে গেছে। অন্য জন বাইকের নিচে পড়ে কোকড়াচ্ছে।

মাহাদ দ্রুত গিয়ে বাইকটা বন্ধ করে ওদের উপর থেকে বাইকটা উঠিয়ে একটা আম্বুলেন্সকে কল দিল। মাহাদ নিজের শার্টটা খুলে ছেলেটার কাটা অংশে শক্ত করে কষে বেঁধে ফেলল, যাতে বেশি ব্লিডিং না হয়। অপর জন অসহায়ের মত মাহাদের দিকে চেয়ে রইলো।

একজন কিছুটা ভালো আছে কিন্তু অন্যজনের অবস্থা খুব খারাপ। আম্বুলেন্সের আসতে দেরী হতে আহত জনকে কোলে তুলে ওর বাইকের কাছে আধা দৌড় দিয়ে এসে বাইকে তুলে অন্য জনকে ইশারা করলো নিজের কাছে আসতে। অবশেষে মাহাদ দু'জনকে নিয়ে হসপিটালে চলে গেল। ছেলেটাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে নিজে রক্ত দিল। ফিরে আসার সময় যেই ছেলেটি একটু সুস্থ ছিল তাকে বলল," দেখ ভাই, তোমাদের ঘরেও বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান আছে। তোমাদের উর্পাজনে হয়ত তাদের জিবন চলে। তাই একজন মানুষ হয়ে এত নিরাপরাধ মানুষদের কষ্ট বাড়াতে চাইনা। পারলে নিজেদের শুধরে নিও। মনে করো আল্লাহ্ তোমাদের বাঁচার আর একবার সুযোগ দিয়েছে। তাই তোমরা উত্তম কর্ম দ্বারা নিজেদের জিবন পরিবর্তন করো। "

মাহাদের হাত ড্রেসিং করে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বাসায় ফিরলো । ডাইনিং রুমে কেউ ছিলনা তাই চট জলদি রুমে ঢুকতেই বাতাসি মাহাদকে ডাক দিল।

উফ্ বলে মাহাদ নিচে আসতেই বাতাসি বলল," তোর হাতে কি হয়েছে?"

মাহাদ সেই কথার জবাব না দিয়ে বলল, " দাদী তুমি তিতিরকে কেন পছন্দ করোনা! তিতিরের মধ্য কি এমন খারাপ দেখেছ যার জন্য তুমি ওমন ব্যবহার করো ওর সাথে!"

তুই আবার ঐ মাইয়ার কথা বলছোস! যার জাতকুল নাই, যার মা অন্যর সাথে..... , যে ঐ কারনে গলায় দড়ি দিয়েছে তার ভিতর থাইকা ভালা মাইয়া জন্মিবে!  ওরে দেখলেই অ্যার শরীর জ্বইল্যা যায়।"

"আর কিছু না!"  

" আর কি থাকবো ঐ টুকু মাইয়ার। "

" বাতাসির শেষ কথায় মাহাদ অত্যান্ত তৃপ্তি পেল। এতদিনেও তিতিরের কোনো দোষ ধরতে পারেনি সে কিন্তু প্রথম দিন নিসার দোষ ঠিকি ধরতে পেরেছে।"

দাদী তুমি অনেক চৌকস্ মানুষ। মাহাদ বাতাসির কপালে টুপ করে একটা কিস করে নিজের রুমে চলে গেল।

যত রাগ ছিল সব রাগ যেন বাতাসির সুখের বন্যায় ভেঁসে গেল। মাহাদের এই ব্যবহারটা বাতাসির খুব ভালো লাগে।

♦♦♦♦

মাহাদ রুমে এসে ফ্রেস হয়ে আসতেই দেখলো ফোনে কল এসেছে। মাহাদ ফোনের কাছে গিয়ে দেখলো তিতিরের কল।  ৮৫+ কল এসেছে। ফোন সাইলেন্ট ছিল। মাহাদ তাড়াহুড়ো করে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে এক ঝুড়ি গালি পড়লো মাহাদের মাথার উপর। এ কেমন গালি! 
পুঁইশাকের বাচ্চা লাল পুঁইশাক, লাল শাকের বাচ্চা, ঢেড়শের বাচ্চা, তিতা পাট শাক। ভেবোনা তোমায় আমি ভেজে  গরম ভাতের সাথে খাবো। তোমাকে আমি বাঁসি পান্তা ভাতের সাথে চুবিয়ে চুবিয়ে পোড়া শুকনো মরিচ দিয়ে খাবো। কতবার কল দিয়েছি হ্যা কতবার দিয়েছি!  আর তুমি আমার কল রিসিভ করোনা কেন! চোখ আর কান কি পকেটে তুলে রাস্তায় চলাফিরা করো!
বলি, চিন্তা হয়না আমার, কষ্ট হয়না আমার? 

" বাহ্ আপনি থেকে তুমি! গুড জব তিতির, চালিয়ে যাও। চমৎকার লাগছে তোমার মুখে তুমি শব্দটা। এতদিন নিজেকে পর পর লাগত। এখন আপন লাগছে।"

" কই তুমি বললাম হুম! আপনি ইদানিং কানে কম শোনেন। ডাক্তার দেখান জলদি।"

" দিন দিন দেখছি মিথ্যার জাহাজ হয়ে যাচ্ছো তিতির।"

" এত কথা কিসের! বলি,  এই বৌটা কার! আপনার না অন্য কারো?"

" বৌ তো আমারই। অন্য কারো হওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি! একদম জান্ত মাটিতে দাফন করে দিব।"

" এবার তিতির খুঁশি হয়ে বলল," এখন আপনার কাছে যাই!"

" আমার দরজার সামনে যদি তোমায় দেখেছি তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। আমি ঘুমাবো। আমাকে একদম ডিসর্টাব করবি না।"

" করলাম না বলে ঠাস্ করে কলটা কেটে দিল তিতির।"

হাতের কাটা অংশে প্রচন্ড যন্ত্রনা করছে মাহাদের। ব্যাথা কমানোর জন্য ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে কিন্তু এতক্ষনে তো কাজ হওয়া দরকার।

♦♦♦♦

তিতির ওর ব্যালকুনিতে এসে দাড়ালো। কিভাবে নামা যায় এখান থেকে সেটাই ভাবছে। খোলা ব্যালকুনিতে দাড়িয়ে এইসব ভাবতেই চট করে মাথায় বুদ্ধি এল। ওড়না তিনটা নিয়ে গিট দিয়ে সেটা দিয়ে অনায়াসেই নেমে গেল তিতির। তারপর মাহাদের ব্যালকুনির সামনে এসে দাড়ালো। এখন এটা কিভাবে পার করে মাহাদের কাছে যাবে! ডাইনিং রুমে  বাতাসি ছিল বলে এইভাবে আসা আরকি!

"বর♥ তোমাকে ছাড়া আমি মা হবো কেমনে বলতো!" 

কথাটি বলেই একটা ছোট ঢিল নিয়ে ব্যালকুনির দরজা বরাবর  ঢিলটা ছুড়ে মারলো তিতির। এই প্রথম সে তার বরের সাথে লাইন মারতে এসে সোজা বরের দরজায় ঢিল ছুড়তে মারতেও দ্বিধাবোধ করলোনা। বরং মনের আনন্দে সে ভেঁসে যাচ্ছে।

কাজ হলনা তাই আরও দুইটা ঢিল পর পর ছুড়ে মারল দরজা বরাবর। আর ওমনি দাড়োয়ান চাচা কে কে বলে চিৎকার দিতে দিতে তিতিরের দিকে দৌড়ে এল। 

মাহাদ সুয়ে ছিল। দাড়োয়ানের চিৎকারে মাহাদ বিছানা থেকে ধরপর করে উঠে পড়লো। মাহাদের বুঝতে বাঁকি রইলোনা এটা তিতির ছাড়া আর কেউ নয়। আল্লাহ্ ওর এই কাঁচা প্লানের জন্য না জানি তিতির আজ ধরাই পড়ে যায়।

একে একে বাসার সব লাইট জ্বলে উঠলো। দাড়োয়ানের চিৎকারে আরো কয়েকজন পাহারাদারও দৌড়ে সেদিকে গেল। এর মধ্য বাসার সবাই জেগে উঠল। যে যার রুম থেকে বের হয়ে এল।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।