প্রিয়ন্তি দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে রায়হান আহাম্মেদ এর সামনে এসে দারায়....
আচমকা প্রিয়ন্তি সামনে এসে দারাতে রিমা রায়হান দুজনে ঘাবড়ে যায় এটা ভেবে প্রিয়ন্তি না আবার তাদের কথা শুনে ফেলে.......
প্রিয়ন্তি রিমার দিকে এক নজর তাকিয়ে হুট করে বলে ওঠে ...."" তোমরা কি বলছো খালু ভাতে মারবে না মানে কি যেন বললে?""
"তেমন কিছু না বলছি রিমা কে খেতে দিতে ভাত বা অন্য কিছু..""
প্রিয়ন্তি কিছুটা রেগে গিয়ে রায়হান আহাম্মেদ কে বলে ওঠে "" খালু রিমা খালা কে তুমি যেহেতু এনেছো তখন তুমি রিমা খালার দেখা শুনা করো আমি খালামনির কাছে যাচ্ছি...""
প্রিয়ন্তি রায়হান আহাম্মেদ কে ভারটেক করে রান্না ঘরে গিয়ে চিনির পানি গুলিয়ে নিয়ে আসে রিয়ানা বেগমের কাছে...
"" খালামনি পানি টা খেয়ে নেও ভালো লাগবে...""
"" না প্রিয়ন্তি আমার গলা দিয়ে এক বিন্দু পানি নামবে না ৷ রিদের বাপ কি করে পারলো আমার সাথে এমন টা করতে বল প্রিয়ন্তি ?"" আবার ও ঢুকরে কেঁদে ওঠে রিয়ানা বেগম...
তখনি রায়হান আহাম্মেদ রিমা কে নিয়ে রিয়ানার রুমে ঢুকে ...
"" এখন কেমন আছো রিয়ানা? কেমন বোধ করছো?""
"" আমি কেমন আছি সেটা তুমি কি বুজতে পারছো না রিদের বাপ?""
"" আমার বুঝা উচিত বলছো?""
রিয়ানা বেগম আর কিছু বললো না চুপ করে কেঁদে যাচ্ছে ৷ রায়হান আহাম্মেদ কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলতে লাগলেন"" রিয়ানা এখন যেহেতু তুমি তোমার বাপের বাড়ি যাচ্ছো না এখন সেহেতু তুমি আজ থেকে বাড়ির সব কাজ করবে ৷ কাজের লোক ছাড়িয়ে দিবো আমি...""
"" কি বলছো খালু খালামনি এই শরীলে কাজ করবে?""
"" কেন মুন মা যদি অসুস্থ থাকা অবস্তায় ঘরে সব কাজ করতে পারে তাহলে ও কেন পারবে না ?""
প্রিয়ন্তি চুপ হয়ে যায় কারন রায়হান আহাম্মেদ এর কথার টন শুনে বুজতে পারলো তিনি মুন কতোটা কষ্ট করেছে তা বোঝানোর জন্য এতো কিছু.....
"" কিহ হলো রিয়ানা এখনো পাথরের মতো বসে আছো কেন ?যাও সবার জন্য রান্না করো ৷ ""
রিয়ানা বেগম এক দৃষ্টিতে তাকায়ে আছে তার স্বামীর দিকে এতো পরিবতর্ন তিনি যেন মেনে নিতে পারছে না ৷ বুকে প্রচন্ড কষ্ট অনুভব করছে ৷ হুট করে মনে হলো কেউ তার বাহু ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ৷ ভালো করে তাকিয়ে দেখে রায়হান আহাম্মেদ তার বাহু শক্ত করে ধরে রান্না ঘরের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে৷
"" নেও কাজ শুরু করে দেও ঝটপট দু ঘন্টার মধ্যে টেবিলে যেন খাবার পাই না হলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো বুজতে পেরেছো?""
কথা গুলো বলে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রায়হান আহাম্মেদ ....
রিয়ানা বেগম চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চুলা জ্বালিয়ে ভাতের হাড়ি বসিয়ে দেয়৷
.
.
.
.
____________ '' আবির আবিদ কে সবটা জানিয়েছিস তো"( মনিরা বেগম)
"" হ্যা আম্মু কিন্তু আবিদ কে ফোনে পাইনি তাই নিরব কে কলে সবটা জানিয়ে দিয়েছি...""(আবির)
"" যাক তবুও ভালো , তোর আব্বু তার প্রয়োজনে কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা একমাত্র আমি জানি কিন্তু তোরা কেউ জানিস না ৷ কিন্তু এবার আর আমি চুপ থাকবো না আমার ছেলে বা ছেলের বউয়ের কোন ক্ষতি হলে আমি ওনাকে ছাড়বো না ৷""
"" কি করবে তুমি? আব্বু যদি জানতে পারে আমি তুমি আব্বু বিরুদ্ধে আবিদ মুন কে সাহায্য করছি তাহলে আমাদের দুজনকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে আম্মু""
"" আমি জানি বাবা কিন্তু তা বলে বসে বসে নিজের ছেলে বউয়ের ক্ষতি করবে আর আমি তা দেখবো তা কখনো হবে না আবির ৷ তুই আজমিরের উপর নজর রাখ ৷ আমি জানি তোর আব্বু আজমির কে এই সব কাজে বিশ্বাস করে তুই ও আজমিরের বিশ্বাস অর্জন কর আর সাথে সাথে থেকে ওর প্রত্যেক টা কাজের উপর নজর রাখ..""
"" ওকে আম্মু তাই হবে৷ আমি তাহলে এখুনি বেরিয়ে যাচ্ছি কারন কিছুক্ষন আগে আব্বু ভাইয়া কে নিরবের মামার বাড়িতে যেতে বলেছে৷""
"" ঠিক আছে যা তবে সাবধান আজমির যেন কিছু বুজতে না পারে...""
"" কি বুজতে না পারে মনি..?""
মনিরা বেগমের কথা শেষ হতে পিছুন থেকে একটা ভারি কণ্ঠ শুনে পিছুনে তাকিয়ে দেখে আফজাল সাহেব ...
আফজাল সাহেব কে দেখে আবির আর মনিরা বেগম দুজনে ঘাবড়ে যায় ৷
"" কি হলো আমি কিছু জ্বিগাসা করছি তোমাদের বলছো না কেন?"" (আফজাল)
"" তেমন কিছু না তু, তুমি এখানে কিছু প্রয়োজন তোমার? ""
"" ওহ হ্যা আমার ফোনের চার্জার টা খুজে পাচ্ছি না, কোথায় রেখেছো চার্জার..??""
"" চার্জার তো সাইড টেবিলের প্রথম ড্রয়ারে রাখা আছে..""
"" ঠিক আছে .. আর শোন খুব খিদে পেয়েছে টেবিলে খাবার বারো আমি ফোন চার্জে দিয়ে আসছি..""
"" আচ্ছা.. তুই ও খেয়ে যা আবির""
" আচ্ছা আম্মু...""
মনিরা বেগম দ্রুত চলে গেলে রান্না ঘড়ে.....
অন্যদিকে মুন আর আবিদ এক সাথে লান্চ করছে আর রিদ সামনে দাঁতে দাঁত চেপে দারিয়ে আছে ৷ আবিদের সাথে মুন কে রিদ সহ্য করতে পারছে না ৷ প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রিদের কিন্তু আফসোস কিছুই করতে পারছে না রিদ৷
মুন আবিদ কে খাবার খাইয়ে দিচ্ছ আর রিদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে ৷ আবিদ আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে রিদ কে ৷ রিদের হাবভাব বোঝার ট্রাই করছে এর মাঝে আবিদের ফোনটা বেজে ওঠে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে নিরব নামটা ভেষে উঠেছে৷ আবিদ কল টা রিসিব করে ...
"" হ্যালো দোস্ত আমি তোর দেওয়া এড্রেসে পৌছে গেছি কিন্তু বাড়িতে তো কেউ নেই কয়েকজন কাজের লোক ছাড়া...""
"" ওকে তুই আদঘন্টা ওয়েট কর আমি আসছি ""
"" ওকে""
কল ডিসকানেক্ট করে আবিদ মুনকে বলতে লাগলো.."" মনপাখি আমাকে এখুনি বের হতে হবে তোমার কি আজ আর কোন ইমপটেন্ট কাজ আছে ?""
"" হ্যা গো মির্জা কোম্পানির সাথে আজ একটা মিটিং আছে উমম আদ ঘন্টা পর .. " ঘড়ি দেখে বললো মুন
"" তাহলে তো আর তোমাকে নিয়ে যাওয়াটা হলো না আমার..""
"" উফফফ আবিদ তুমি না যাও যেখানে যাচ্ছো ৷ আমাকে ফাইল টা চেক করতে হবে ৷ আর এই যে মিস্টার রিদ এগুলো ক্লিন করে আপনি আপনার কাজে ফিরে যান""
"" ওকে ম্যাম""
রিদ নিঃশব্দে নিজের কাজ গুলো করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল ৷ তখনি আবিদ মুন কে জরিয়ে ধরে মুনের ঠোট জোড়ায় দখল করে নিলো ৷ মুন আবেশে দু চোখ বন্ধ করে ফেলে ৷ রিদ মুনের কেবিনে পানির গ্লাস রেখে আসার জন্য দরজায় নক করতে যাবে তখনি খেয়াল করে দরজা খোলা রিদ ভিতরে তাকিয়ে আবিদ মুনকে জরিয়ে ধরে মুনের ঠোট জোড়া দখল করে আছে এটা দেখে রিদের বুকের বা পাশে চিন চিনে ব্যাথা অনুভব করলো ৷ রিদের অজান্তে দু-চোখ থেকে দু-ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো ৷ রিদ আর ভিতরে ঢুকলো না দরজা চাপিয়ে নিজের ডেক্সে গিয়ে বসে পড়লো রিদ....
আবিদ কিছুক্ষন পর মুন কে ছেড়ে দিয়ে মুনের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে...
"" নিজের খেয়াল রেখো মনপাখি আর কোন প্রব্লেম হলে আমাকে কল করবে আমি সাথে চলে আসবো আর ওই লোকটাকে আজ আর কোন শাস্তি দিতে হবে না ওকে""
"" ঠিক আছে , আর তুমি সাবধানে যাবে ওকে""
"" একদম মনপাখি..""
আবিদ মুনের থেকে বিদায় নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল৷ মুন কিছুক্ষন পর মিটিং রুমে চলে গেল ...
.
.
.
.
"" রিয়ানা রিয়ানা .."" জোড়ে চিৎকার করে রিয়ানা বেগম কে ডাকতে লাগলো রায়হান আহাম্মেদ ... রিয়ানা বেগম শাড়ির আচলে হাত মুচতে মুচতে দৌরে আসে ...
"" কি কি হয়েছে রিদের বাপ?""
"" কি হয়েছে মানে ক-টা বাজে হুম দুপুর দুটো বেজে গেছে আর এখনো রান্না হয়নি আমি খাবো কি হুম?""
"" রান্না প্রায় শেষ রিদের বাপ তুমি আর একটু অপেক্ষা করো আমি আমি এখুনি তোমাকে খেতে দিচ্ছি৷ ""
"" চুপ একদম চুপ আমার কথা অমান্য করার শাস্তি তো তুমি পাবে রিয়ানা ,,""
"" শাস্তি ..""(অবাক হয়ে)
"" হ্যা শাস্তি আর শাস্তি টা হলো আজ সারাদিন তোমার খাওয়া বন্ধ ৷ যাও রান্না ঘরে যাও বাকি রান্না টা শেষ করো আমি ততোক্ষনে রিমার সাথে সময় কাটাই..""
রায়হান আহাম্মেদ মুচকি মুচকি হেসে রিমার রুমের দিকে চলে গেল৷ রিয়ানা বেগম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রায়হান আহাম্মেদ এর যাওয়ার দিকে আজ যেন তার স্বামীকে নয় নিজের ছেলে কে দেখছে ৷ ঠিক এই একই ব্যবহার করেছিলো মুনের সাথে আর আজ তা তার নিজের সাথে ঘটছে৷ রিয়ানা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেল৷
.
.
.
রিদ মুনের দেওয়া কাজ গুলো মনযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই তা সম্ভব হচ্ছে না যতোবার কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করছে ঠিক ততোবার আবিদ আর মুনের ঘনিষ্ট মুহূর্তের ছবি চোখের সামনে ভেষে উঠছে৷ ৷ এর মাঝে রিদের ফোনটা বেজে ওঠে ৷ ফোনের স্কিনে নাম টা না দেখে কল রিসিব করে কানে ধরে.....
"" হ্যালো ..""
"" রিদ ভাইয়া তুমি কি আজ একটু তারাতারি বাড়ি আসবে.?""
গলা শুনে রিদের বুজতে মটেও অসুবিধা হয় না যে এ প্রিয়ন্তি...
"" কেন কি হয়েছে?""
"" বাড়িতে আসলে জানতে পারবে রিদ ভাইয়া প্লিজ একটু তারা তারি আসার চেষ্টা কর""
"" ঠিক আছে আমি দেখছি ম্যাম আমাকে এই হাফ বেলার ছুটি দেয় কিনা...""
"" ঠিক আছে রিদ ভাইয়া রাখছি তাহলে..""
"" হুম""
কল কেটে আবার কাজে মনোনিবেশ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কারন যতোক্ষন না মুন মিটিং শেষ করে বের হচ্ছে ততোক্ষন ওকে অপেক্ষা করতে হবে৷ এক ঘন্টা পর মুনের মিটিং শেষ করে কেবিনে আসতে রিদ গিয়ে কেবিনে সামনে গিয়ে নক করে ..
"" কামিং..."" ফাইল দেখতে দেখতে বললো মুন.....
রিদ কেবিনে প্রবেশ করতে মুন ফাইল নামিয়ে রিদের দিকে তাকায়...
"" ম্যাম আমার এই হাফ বেলা ছুটি প্রয়োজন ""
"" আপনাকে যে কাজ গুলো দেওয়া হয়েছে সে গুলো কম্পিলিট মিস্টার রিদ?""
মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে রিদ..
"" ওয়াও কাজ কম্পিলিট না করে আপনি এসেছেন ছুটি চাইতে বাহ আপনার সাহস দেখে আমি যাস্ট স্পিচলেস মিস্টার রিদ....""
"" ম্যাম প্লিজ ছুটিটা আমার খুব দরকার বাড়িতে কোন একটা প্রব্লেম হয়েছে আমাকে যেতে হবে ম্যাম...""
মুন কিছু একটা ভেবে পারমিশন দিয়ে দেয় রিদ কে রিদ মুন কে থ্যাংকিউ বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়৷
তার কিছুক্ষন পর মুন ও বেরিয়ে পরে অফিসের গাড়ি নিয়ে .......
.
.
.
এদিকে রিদ বাড়িতে সবটা জেনে প্রচন্ড রেগে যায় ৷ রাগে থরথর করে কাঁপছে রিদ ৷ চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলে রাগ টা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে রিদ আর সামনে দা......