বন্ধন - পর্ব ০৮ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


১৫!! 

আয়ান সেই কখন থেকে পুকুরপাড়ের বসার জায়গাটায় বসে আছে। মেয়েটার আসার নাম গন্ধও নেই৷ কি যে করছে কে জানে! নাকি জামাটা পছন্দ হয় নি? ওর পছন্দের রঙ কী সেটাও তো আয়ান জানে না। জিজ্ঞেস করে নেয়া উচিত ছিল। সময়ই তো পায় নি কিছু আলোচনা করার। অবশ্য আলোচনা করে দিলে কি আর সারপ্রাইজ দেয়া হয়! এসব ভাবতে ভাবতেই মিষ্টি একটা ঘ্রাণ নাকে এসে লাগলো আয়ানের৷ এই ঘ্রাণটা কোত্থেকে আসছে! দেখার জন্য মুখ তুলেই থ হয়ে গেল আয়ান। একটা পরী সামনে দাঁড়িয়ে আছে! আয়ান কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে গেল। পরীটাও লাজুক হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ানের কাছে আসা ওর ভেতরও কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। আয়ান একেবারে কাছে এসে থামলো। আঙুল দিয়ে  আলতো করে মেয়েটার চোখের উপরে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে মুখটা তুলে ধরলো।

-মায়রু? এটা সত্যি তুমি? নাকি সত্যি কোন পরী দেখছি মিস গোলাপীবালা?

-হুম?

-দাঁড়াও একটু ভালো করে দেখে নেই-----।

আয়ান একটু পিছিয়ে এসে মায়রাকে দেখতে লাগলো। গোলাপী সুতোর ভারি কাজ করা গোলাপি রঙা থ্রিপিচটায় একেবারে গোলাপি পরী লাগছে মায়রাকে। চোখে হালকা করে কালো কাজলের টান আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। এবার অবশ্য খালি পায়ে আসেনি মেয়েটা। পায়ে কালো পামসু। আয়ান ভ্রু কুঁচকে মায়রার পুরো মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিলো। তারপর মায়রার চোখে চোখ পড়তে ভ্রু জোড়া নাচালো।

-কি?

-টিপ কই?

-এই যে?

মায়রার হাতে টিপের প্যাকেটটা দেখে ভ্রু আরেকটু কুঁচকে গেল আয়ানের। 

-টিপ কি হাতে রাখার জিনিস ম্যাডাম?

-কেউ পড়িয়ে দিলে--ভালো হতো।

-হুম?

কাঁপা গলায় কথাটা বলে মায়রা নিচের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসলো। আয়ানও ঠিক যেটা শুনেছে সেটা সত্যি কিনা বুঝতেই একটু সময় লাগলো। একটু ধাতস্থ হতেই মায়রার একদম কাছে এসে হাত থেকে টিপের প্যাকেটটা নিলো৷ একটা গোলাপি রঙের টিপ নিয়ে মায়রার কপালে দুই ভ্রুর ঠিক মাঝখানে বসিয়ে দিলো। মায়রার মুখে হালকা গোলাপি একটা আভা ছড়িয়েছে দেখে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মায়রা একটু কেঁপে উঠে লাজুক হাসলো। আয়ান মায়রার হাতটা ধরে কাছে টেনে নিলো। মায়রা লজ্জা পেয়ে লাল নীল হতে লাগলো। সাথে একটু ভয়ও করতে লাগলো। বাবা বা মা হুট করে দেখে ফেললে কি যে হবে কে জানে?

-মায়রা? ভয় করছে আমাকে এখনো?

-নাহ মানে---। কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে?

-কে কি ভাববে ম্যাডাম?

-বাবা মা কি মনে করবে?

-দেখলে তো কিছু মনে করবে-। উনারা চারজনে সকালে নাস্তা করে বাবার এক বন্ধুর বাড়িতে গেছে।

-সেকি? আমি টেরও পাই নি? কি ভাবলো সবাই? 

-কিছুই ভাবলো না ম্যাডাম। এখন আসুন?

-কো-কোথায়?

-গেলেই দেখবেন--। আসুন। কেমন?

-হুম----।

আয়ান মায়রার হাত ধরে আস্তে আস্তে বাড়ির পিছন দিকের একটা অংশের দিকে গেল। জায়গাটায় ছোটখাটো একটা ফুলের বাগানের মতো করা৷ বাগানটার ঠিক মাঝখানে একটা টেবিল আর দুটো চেয়ার রাখা। মায়রা অবাক হয়ে একবার আয়ানকে আর একবার সামনের টেবিলটাকে দেখছে। আয়ান হেসে মায়রাকে নিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। মায়রা অবাক হয়ে টেবিলের উপরে প্লেটগুলোর দিকে তাকালো। একটা প্লেটে পাউরুটি একটু টোস্ট টাইপের ভাজা, অমলেট, আপেল, আম, কলা আর একটা বাটিতে নিউটেলা। মায়রা আয়ানের দিকে তাকাতেই আয়ান মাথা চুলকে হাসলো।

-আসলে আমি তো কিছু তেমন বানাতে পারি না। তাই এগুলোই করলাম আরকি--। সরি---?

আয়ানের কথা বলার ভঙ্গিতে মায়রার হেসে ফেললো। আয়ান মায়রার দিকে একবার তাকিয়ে প্লেটে পাউরুটি, অমলেট আর ফল তুলে দিতে লাগলো। একটা গ্লাসে পানি ঢেলে দিলো। 

-খাওয়া শুরু করুন ম্যাডাম?

-হুম----। ভাইয়া আর তিথি খাবে না?

-ওদেরটা ওরাই জানে কি করছে--।

-ওহ--। আপনিও খান?

-হুম--। এখন কথা কম। খাও--।

মায়রা ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে খাওয়ায় মন দিলো। আয়ানও খাওয়া শুরু করলো। একটু পরে আয়ান মায়রার দিকে তাকাতেই থমকে গেল। মায়রা ছোট বাচ্চাদের মতো বাটিতে আঙুল ডুবিয়ে নিউটেলা খাচ্ছে। ঠোঁটে, মুখে, গালে চকলেট লেগে একেবারে মাখামাখি অবস্থা। সেদিকে হুঁশ নেই পাগলিটার। বাচ্চাদের মতো চকলেট খেয়েই যাচ্ছে। ব্যাপারটা দেখার সাথে সাথেই আয়ানের বুকের ভিতরে ধ্বক করে উঠলো৷ মেয়েটাকে বুকে জাপটে ধরে আদর করে দিতে ইচ্ছে করছে আয়ানের। কিন্তু ব্যাপারটা কেমন দেখায়!

আয়ানের দিকে চোখ পড়তেই মায়রা দেখলো মানুষটা অবাক হয়ে ওকেই দেখছে। মায়রা লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি চকলেট খাওয়া বন্ধ করলো। আয়ানও নিজেকে সামলানোর জন্য চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে নিলো। একটা লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে নিঃশ্বাসটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। মেয়েটার চকলেট মাখানো মুখটা তবুও মাথার মধ্যে খেলা করছে আর বুকের ধুকপুকানি বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

আয়ান মুখ নামিয়ে নিতেই মায়রার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। নিজের হাতের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলো আয়ান এতোক্ষণ ওর চকলেট মাখানো মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিল। ব্যাপারটা আয়ানের একেবারেই পছন্দ হয়নি এটাই মায়রার মনে হলো। এমন একটা মানুষকে নিয়ে নিশ্চয়ই সমাজে কোথাও যেতেও পারবে না, তাই হয়তো আয়ান রাগ করেছে বা বিরক্ত হয়েছে। এটা ভাবতেই ভিষণ কান্না পেল মায়রার৷ আসলেই তো! এমন হলে মায়রাকে কোথাও নিয়ে গিয়েও তো লোকটা লজ্জায় পড়বে! তার বিরক্ত হওয়াটা তো আসলেই যুক্তিযুক্ত। মায়রা একবার আয়ানের দিকে তাকালো। মানুষটা এখনো চোখ বুজে মাথা নিচু করে বসে আছে। মায়রা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আয়ান মুখ তুলে তাকাতেই মায়রার চোখের টলমলানি দেখতে পেল।

-মায়রা? কি হলো?

-সরি---। আসলেই আমাকে নিয়ে আপনাকেও হয়তো লজ্জায় পড়তে হবে--। সরি---।

-আরে? মায়রা?

কথাটা বলেই মায়রা আর দাঁড়ালো না। হাঁটা শুরু করলো। আয়ানও তড়িঘড়ি করে এসে মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে কাছে টেনে নিলো। আলতো করে মায়রার চিবুক ধরে মুখটা তুলে দিতেই দেখলো মেয়েটার চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। চকলেটে মাখামাখি মুখটা আর চোখে কান্না জল। আয়ান আর কিছু না ভেবেই আলতো করে মায়রার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। তারপর আলতো করে মায়রার ঠোঁটে মুখে লেগে থাকা চকলেটটুকু লিক করে নিলো। মায়রা চোখ বুজে আয়ানের হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছিল। আয়ান একটু পরে চোখ খুলে দেখলো মায়রা চোখ বুজে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

-চোখ খোলো মায়রু?

-হুম?

-রাগ করে তোমার থেকে চোখ সরিয়ে নিই নি তো পাগলী৷ বিয়ের আগে এই কাজটা করতে চাচ্ছিলাম না৷ তাই চোখ বুজে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিলাম। এর জন্য আমি অবশ্যই সরি বলবো না৷ কজ এভাবে তুমি এমনভাবে পাগল করলে আমার নিজেকে কন্ট্রোল করার মতো আসলেই কোন অবস্থা ছিল না৷ 

-------------------------------

-আর ম্যাডাম? দয়া করে নিজের মতো ভেবে নিবেন না। সেরকম কিছু মনে হলে অবশ্যই আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করবা---। তোমার চোখে পানি আমার একটুও সহ্য হয় না। সো কাঁদবা না একদম--। মনে থাকবে?

-হুম----।

-আর ম্যাডাম? লিপস্টিক দিতে ইচ্ছে না করলে দিও না। আরো গভীর আবেশে তোমার ঠোঁট জোড়া রাঙিয়ে দিতে আমি তো আছি--। 

মায়রা লজ্জায় চোখ খুলতেই পারছে না। একটু সরে আসার চেষ্টা করতেই আয়ান মায়রার কোমড় চেপে আরো শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলো। মেয়েটার লজ্জা রাঙা মুখটা দেখে আরেকবার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো। একটু পরে সরে এসে মায়রার মুখটা দু হাতে তুলে ধরলো। 

-এভাবে হুটহাট আক্রমণটা অভ্যেস করে নাও। বিয়ের পর একটা মিনিটও শান্তি দিবো না। হুটহাট এসে এভাবে জ্বালাতন করবো। যত বেশি লজ্জা পাবে, তত বেশি জ্বালাবো। তোমার লজ্জামাখা মুখটা দেখলেই কি যে ইচ্ছে হয় লাজুক পরী--।

মায়রা লজ্জা পেয়ে আরো লাল নীল হতে লাগলো। আয়ান হেসে ফেললো মায়রার লাজুক মুখটা দেখে। পাগলিটা লজ্জায় চোখও খুলতে পারছে না। আয়ান মায়রার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমো খেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো মায়রাকে। এই লাজুক পাগলিটাকে ছাড়া যে তার এক দন্ডও চলবে কি করে? একদম চলবে না আর এই পাগলিটাকে ছাড়া।

১৬!! 

তিয়াশ আলতো করে তিথির মুখটা তুলে ধরতেই তিথির আনকোরা মুখটায় চোখ পড়ে। কোন সাজ নেই মুখে। না কোন রঙচঙে মেকাপ, না লিপস্টিক, না চোখে আইলাইনারের কালি। শুধু বিন্দু বিন্দু কিছু পানির ফোঁটা ছিটিয়ে আছে তিথির মুখে। এই জলের বিন্দুগুলোই যেন তিথির মুখটাকে আরো বেশি মায়াবী করে তুলেছে। কি অসাধারণ লাগছে মেয়েটাকে! তিয়াশ কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি কোন প্রসাধন ছাড়া একটা মেয়েকে এতোটা মায়াবী লাগতে পারে। তিথি তিয়াশের দিকে তাকিয়ে ছিল এতোক্ষণ। লোকটাকে কখন থেকে ছাড়তে বলছে। সে যেন শুনতেই পাচ্ছে না তিথির একটাও কথা। তিথি বিরক্ত হয়েই তিয়াশের হাতে জোরে একটা চিমটি দিলো।

-আউচ! এই মেয়ে? এভাবে রাক্ষসী রাণী কটকটির মতো বিশাল নখ দিয়ে খামচি দিলে কেন?

-কি বললা? আমি রাক্ষসী রাণী কটকটি? অসভ্য লোক! তুমি এমন হা করে তাকিয়ে আছো কেন? কেউ দেখলে কি ভাববে? 

-কি ভাববে?

-কি ভাববে মানে? এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলে পচা ভাববে না?

-উহু-। কিচ্ছু পচা ভাববে না। ভাববে তুমি আমার পিচ্চি বউ---।

-যাহ---। কিসব বলে?

-পিচ্চি বউটা লজ্জা পেল বুঝি? বাহ! আমাদের পন্ডিত ম্যাডাম লজ্জাও পায় তাহলে?

-অসভ্য লোক। আমি কি তোমার মতো বেহায়া? যে লজ্জা পাবো না?

-ওহ! আমি এখন বেহায়া না? কাল তো কেঁদে কেটে একাকার হয়ে যাচ্ছিলে, আমি আনরোমান্টিক এই দুঃখে। আর এখন রোমান্স করছি তবুও সমস্যা! হে আল্লাহ! উঠায়া নাও আমারে!

-যাহ! কি সব বলো? মাইর লাগাবো পচা কথা বললে। মরার কথা বললে তোমাকেই খুন করে ফেলবো। হুহ।

-রাগলে তোমাকে একদম লালপরী লাগে পিচ্চি বউ। আর এই ঘুম আদুরে মুখটা! উফফফ--। আমি তো শেষ----।

-যাও-----।

-হা হা। লজ্জা পেলে? কিন্তু জানো কারো সাজবিহীন মুখটা এতোটা মায়াবী হতে পারে আমার একদম ধারণাই ছিল না। ইচ্ছে করছে একেবারে বুকের ভিতরে পিষে ফেলি তোমাকে-।

-আপনার কি মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে বেয়াই সাহেব?

-বেয়াই না বউ--। তিয়াশ বলেই ডাকো না একবার?

-ধ্যাত--। ছাড়ো তো। কেউ দেখবে--।

-কে দেখবে! বাড়িতে কেউ নেই--।

-মানে! বাবা মা ভাইয়া ভাবি কই গেলো?

-হা হা--। কি ঘুম ঘুমিয়েছ গো পিচ্চি? সবাই সেই কখন গেছে বাইরে--। এখন কি করা যায় বলো তো?

-কি-কি করা যায়?

-বাড়িতে শুধু আমি আর তুমি। আর কেউউ নেই কোথাও। কোথায় পালাবে এখন?

-পা-পালাবো কেন!

-এই কয়দিন ধরে যে জ্বালাচ্ছ সেটার শোধ নিতে হবে না? হা হা হা। পালাবে কোথায় ম্যাডাম?

তিয়াশ কথাটা শেষ করে তিথির কোমড় টেনে একেবারে কাছে নিয়ে এলো। তিথি চমকে উঠে তিয়াশের মুখের দিকে তাকালো। তিয়াশের চোখে মুখে দুষ্টু একটা হাসি খেলা করছে দেখে তিথি হাঁফ ছাড়লো। তিয়াশ আরেকটু কাছে টানার চেষ্টা করলে তিথি আচমকাই তিয়াশের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে জোরে একটা কামড় দিলো। 

-আউউউ--। তিথি? পিচ্চি? এভাবে কামড়াচ্ছো কেন?

-ভয় দেখানোর চেষ্টা করবা না একদম। হুহ।

-ভয়ে তো মুখটা শুকিয়ে গেছিলো পিচ্চিটার--। এখন আবার কামড়ে দিয়ে আরেকটা দোষ করেছ। সেটার শাস্তি তো পেতেই হবে ম্যাডাম।

-যাও তো। 

-গেলে খুশি হবে পিচ্চি?

-সবাই কই বলো না?

-ব্যথা দিয়েছ বলবো না। আদর করে দিলে চিন্তা করতে পারি---।

-অসভ্য লোক একটা-। আমার থেকে গুনে গুনে ১০০ হাত দূরে থাকবা তুমি---। সরো---। দূরে যাও---।

-তাই? ওকে---। ঠিক আছে---।

তিয়াশ 'ঠিক আছে' বলেই তিথিকে নিবিড় করে বুকে টেনে নিলো। তিথি থতমত খেয়ে গেল। বুকের ভিতরে ধুকপুকানি বাড়িয়ে দিয়েছে লোকটা।

-তিথি? নাস্তা করবে না?

-কি নাস্তা করবো?

-সেটাও কথা-। আর ভয় নেই ম্যাডাম। আপনার ভাইয়া ভাবি আছে। বাগানের দিকে--। চলুন আপাতত রান্নাঘরে কি আছে দেখা যাক। খিদে লেগেছে---।

-আচ্ছা----।

 

তিয়াশ আর তিথি রান্নাঘরে এসে খাওয়ার মতো কিছু খুঁজতে লাগলো। একটা বক্সে ময়দা পেয়ে গেল। আর রান্নাঘরের তাকে তেল, ডিম এসব। তিথি একটু কাবিলতি করে পরটা আর ডিম ভাজি করায় লেগে গেল। মাকে কতো পরটা বানাতে দেখেছে। এ আর এমন কি কঠিন কাজ! ময়দার সাথে একটু লবণ দিয়ে মিক্স করে তাতে পানি দিয়ে ডো বানাতে হবে। তিথি একটা বাটিতে ময়দা ঢেলে পানি দিতেই বিপত্তি। পরটার খামির না হয়ে মোটামুটি ঘোল হয়ে গেছে জিনিসটা। আরো কতোগুলো ময়দা দিয়েও পরটার খামিরের আশেপাশের কিছুও হলো না। রাগে, দুঃখে আর খিদেয় সব মিলিয়ে তিথি পাগল হয়ে গেল। ধুমধাম ময়দার গোলাটায় ঘুষি বসিয়ে দিলে। তাতে কাজের কাজ বলতে পুরো হাতে আর জামায় ময়দার গোলায় মাখামাখি হলো। তিথি এবার কান্না করে ফেললো। ওর এতো সাধের জামাটার দফা রফা করে দিয়েছে বজ্জাত ময়দাগুলো। 

তিথির অবস্থা দেখে তিয়াশ হেসে ফেললো। সারা গায়ে মুখে ময়দা মেখে একটা অবস্থা করে ফেলেছে মেয়েটা। পাগলিটা কাঁদছে দেখে তিয়াশ আলতো করে তিথিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো। পাশ থেকে তিথির গালে একটা চুমো খেল তিয়াশ। 

-কাঁদছে কেন আমার পিচ্চিটা? 

-ময়দাগুলো কি খারাপ! আমার সারা গায়ে, জামায় কি অবস্থা করেছে দেখো? আমি আর জীবনেও পরটা বানাতে যাবো না। এ্যাঁ-----।

-তিথি? কাঁদে না পিচ্চি--। আচ্ছা বানিয়ো না। দেখি দেখি? তাকাও আমার দিকে-----?

-না---। তুমিও হাসবা আমাকে নিয়ে---। আমি তাকাবোই না একদম---।

-আরে পাগলিটা----?

তিয়াশ তিথিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে মুখটা তুলে ধরলো। মেয়েটা কেঁদে কেটে চোখ লাল করে ফেলেছে। তিয়াশ হেসে তিথির চোখ মুছিয়ে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। 

-পিচ্চিটা এখন কান্না থামাও। দেখি খাওয়ার কি ব্যবস্থা করা যায়-। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো যাও-।

-হুম------।

তিথি এক ছুটে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তিয়াশও কি করা যায় ভাবতে লাগলো। এই ময়দার গোলাটা দিয়ে কিছু একটা করতে পারলে ভালো হয়। কিন্তু কি বানানো যায়! এদিকে খিদেয় জান যায় যায় ওর নিজেরই। বাচ্চাটারও তাহলে নিশ্চয়ই খুব খিদে লেগেছে। হঠাৎ তিথির ডাক শুনে চমকে উঠলো তিয়াশ। আবার কি হলো ভেবেই তিথিকে খুঁজতে বের হলো রান্নাঘর থেকে। রান্নাঘরের পাশের ঘরটাই খাবার ঘর। সেখানে তিথিকে দেখে এগিয়ে গেল তিয়াশ। 

-কি হলো পিচ্চি? ডাকলে যে?

-এই দেখো?

তিথির ইশারায় টেবিলের দিকে তাকিয়েই একেবারে হা হয়ে গেল তিয়াশ। খাবার টেবিলের উপরে কয়েকটা বাটি ঢাকনা দিয়ে ঢাকা আছে৷ ঢাকনা খুলেই তিয়াশ অবাক হয়ে একবার তিথির দিকে আর একবার বাটির দিকে তাকালো। একটু পরে দুজনেই হেসে ফেললো। তিয়াশ আর তিথির মা যাওয়ার আগে ওদের জন্য রান্না করে গেছেন, আর ওরা কিনা খিদেয় আধমরা হয়ে গেছে। তিথিও এক ছুটে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। তারপর দুজনে মিলে খেতে বসলো। খুদা পেটে খাবারগুলো একেবারে অমৃতের মতো লাগলো দুজনেরই। দুজনেই খাচ্ছে আর এটা ওটা নিয়ে আলোচনা করছে। তার মাঝে মাঝে চোখাচোখি হতেই হেসে ফেলছে। দুজনের মনেই একটা কথাই খেলা করছে।

"জীবনটা আসলেই কত সুন্দর!"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন