বন্ধন - পর্ব ০৪ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


০৭!! 

মায়রার সাথে চোখাচোখি হতেই আয়ান ওর ফ্যাকাশে মুখটা দেখতে পেল। আয়ান ভ্রু কুঁচকে মায়রাকে কিছুক্ষণ দেখলো। মেয়েটা রীতিমতো পা কাঁপাচ্ছে, নখ খুঁটছে, দাঁতে নখ কাটছে। মেয়েটাকে দেখেই হঠাৎ করে মনে হচ্ছে ভিষণ নার্ভাস। হঠাৎ কি এমন হলো কিছুই বুঝতে পারছে না আয়ান। আলতো করে মায়রার হাতটা ধরলো। মায়রা মুখ তুলে আয়ানের দিকে তাকালে। কষ্ট করে একটু হাসি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলো।

-কোন সমস্যা হয়েছে মায়রা?

-না মানে----। ২ টা বাজে---। 

-ওহ! শিট! দুটো বেজে গেছে! তোমার সাথে কথা বলতে বলতে সময়টা কোন ফাঁকে পালিয়ে গেছে খেয়ালই করি নি---। সরি সরি-।

-ইটস ওকে।

-বেশি দেরি হয়ে গেছে না? বকবে বাসায়?

-নাহ--। তেমন কিছু না। সমস্যা নেই---।

-চলো পরী? ভাবলাম একসাথে লাঞ্চ করব--। সমস্যা নেই পরে একসময় না হয়--। কি বলো?

-হুম---। আচ্ছা---। 

-এসো?

আয়ান মায়রার হাত ধরে উঠতে হেল্প করলো। তারপর মায়রাকে বাসার সামনে ড্রপ করে দিয়ে নিজে অফিসে এলো। প্রেজেক্টের কাজ কতদূর এগুচ্ছে সেটাও তো দেখতে হবে ওর। 

এদিকে বাসায় ঢুকতেই কেউ একজন ঠাস করে গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিল মায়রার। মুখ তুলেই মাকে দেখতে পেল মায়রা৷ মা ভয়ংকর রেগে আছে। আরেকটা চড় বসিয়ে দিল মায়রা মায়ের দিকে তাকানোয়। 

-ওই মেয়ে? গতকাল বিয়ের কথা হয়ে সারে নি আজ থেকেই সাপের পাঁচ পা দেখেছিস? ছুটি হয় কয়টায় কলেজ তোর? ১ টায় না? এখন পোনে তিনটা বাজে। এতোক্ষণে আসার সময় হলো? নবাবজাদী ভেবেছিস নিজেকে? কোথায় ছিলি এতোক্ষণ? কার সাথে ছিলি?

কথাটা বলেই আরেকটা চড় বসালো মায়রার গালে। মায়রা কিছু না বলেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে কাঁদছে। কি বলবে! এসব ওর নিত্যদিনের ঘটনা। সহ্য হয়ে গেছে গায়ে। তবে আজ খারাপ লাগছে কেন জানি! মায়ের জোর গলা শুনে তিয়াশ ছুটে এসেছিল। মায়ের সামনে থেকে মায়রাকে টেনে সরিয়ে আনলো।

-মা? কি করছো? পাগল হলে? ও ছোট নাকি এখনো? দুদিন বাদে বিয়ে। এভাবে মারার কি আছে?

-কি আছে জানিস না তুই? এতো দেরি করে রাস্তায় রাস্তায় ড্যাঙ ড্যাঙ করে ঘুরবে কেন?

-আরে! আশ্চর্য! রাস্তায় ঘুরতে যাবে কেন! একদিন দেরি তো হতেই পারে! আর তাছাড়া হয়তো গেলেও কোথাও আয়ানের সাথেই গেছে। সাধারণ একটা ব্যাপার----।

-ওই ছেলের সাথেই বা বিয়ের আগে এতো মেলামেশার কি আছে! মেয়ে শেয়ানা হয়ে গেছে বেশি? আজ ছেলেটা কিছু একটা করে দিয়ে আর বিয়ে না করলে! তখন এই পোড়ামুখী কাউকে মুখ দেখাবে কি করে! সেটা মাথায় থাকে না?

-মা! কি সব বলছ? আয়ানকে দেখে তো তেমন মনে হয় না---। লোকটা ভালোই আর ওর ফ্যামেলিটাও ভালো---। এতো ভালো একটা ছেলে তোমাদের মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে-আর তোমরা কিনা----?

-আর একটা কথা বলবি না তিয়াশ! উচ নিচ কিছু একটা ঘটলে তখন? তখন মুখ দেখাতে পারবি সমাজে! ওই মেয়ে তো মরে গিয়েও বোঝাই বাড়াবে তখন---। এর চেয়ে আগেভাগে সাবধান হওয়া দরকার না? নাকি ওই ছেলের সাথে যেখানে মন চায় চলে যাবে?

-আহ---। মা? থামো না একটু--। মায়রা যা---। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে--। যা---।

-তুই এতো সোহাগ দেখাচ্ছিস কেন এই মেয়েকে! আমি আগেই ওকে ভর্তিই তো করাতে চাই নি---। তুই তো বললি টাকা-খরচ পাতি লাগবে না পড়াতে--। মাসে মাসে বৃত্তির টাকা পাচ্ছে--। টিউশন করে টাকা আনছে ঘরে- তাই পড়াচ্ছি--। নইলে এই ঘাড়ের বোঝাকে আর পড়ানো? সেই কবেই কোন রিকশা, ট্যাক্সিওয়ালার ঘরে ফেলে আসতাম--।

-আহ! মা---। থামো না?

-তুই থাম---। তোর বাবা বাসায় নেই---। দুপুরে ফিরলে ঘরে কি লঙ্কা কান্ড ঘটত এই মেয়ে জানে না? আমার সুখের ঘরে আগুন লাগতে লাগতে বেঁচে গেছে আজকে। আর এখন তুই আজ এই মেয়ের জন্য আমার মুখে মুখে তর্ক করছিস?

-ধুর বাবা---। এই মায়রা যা তো সামনে থেকে। রুমে যা---। 

মায়রা মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে এলো। দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো এবার। ছোটবেলা থেকে এসবই দেখে এসেছে মায়রা। কেউ কল্পনাও করতে পারবে না একটা মেয়ে হওয়ার অপরাধে ঠিক কতটা বাজে অবস্থায় থাকতে হয় মায়রাকে। তাও আবার তার নিজের ঘরে, নিজের প্রিয় মানুষগুলোর কাছেই। তিয়াশ আগে কিছু বলতো না। তবে ইদানিং একটু আধটু বলে। মা ওকেও ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে থামিয়ে দেয়। আসলেই কি মায়রা পরিবারের কাছে এতোই বড় বোঝা! আয়ান নামের মানুষটা আসলেই কি সুযোগ মতো ব্যবহার করে ওকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলবে!

ভালো মতো ফ্রেশ হয়ে এসে জামা পাল্টে রান্নাঘরে মায়ের সাথে কাজ করলো কিছুক্ষণ। রান্না করে শেষ হলে রুমে আসতে আসতে আটটা বেজে গেল। কিছুক্ষণ বই নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলো। কিছুই ভালো লাগছে না দেখে খেয়ে এসে শুয়ে পড়লো। সবে চোখটা লেগে এসেছিল এমন সময় মোবাইলের কলের আওয়াজে চোখ ছুটে গেল মায়রার৷ সারাদিন মোবাইলটা একবার হাতে নেয়ারও খেয়াল ছিল না। তড়িঘড়ি করে ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে দেখলো আয়ানের নাম্বার। রিসিভ করতে করতেই কলটা কেটে গেল। কল কেটে যেতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ১৫ টা মিসডকল। সবগুলোই আয়ানের নাম্বার থেকে এসেছে। মায়রা জিভ কাটলো। এতোগুলো কল কখন এলো! টেরই পায় নি। এখন কি হবে! কি বলবে আয়ানকে ও?  ভাবতে ভাবতেই আবার মোবাইলটা বেজে উঠলো। মায়রা একটু সামলে নিয়ে রিসিভ করলো কলটা। তারপর মোবাইলটা বাম কানে লাগিয়ে খাটে বসে দেয়ালে হেলান দিলো।

-হ্যালো?

-কি খবর ম্যাডাম? রাগ করেছেন নাকি?

- না না--। রাগ করি নি। রাগ কেন করবো!

-তাহলে সেই কখন থেকে কল করছি--কোন খবর নেই কেন?

-না মানে! কাজ করছিলাম--। কাজ শেষ করে এসে একটু পড়লাম--। কখন চোখ লেগে গেছে টের পাই নি---।

-ওহ! শরীর খারাপ নাকি? খাও নি রাতে?

আয়ানের কথাটা শুনে মায়রা একটু ফুঁপিয়ে উঠলো। কতো রাত এভাবে না খেয়ে কাটিয়েছে সেটার হিসাব ঘরের কেউ তো দূরে থাক মায়রা নিজেই জানে না। আজ এই দুদিনের পরিচয়ের মানুষটা ওর শরীর কেমন, খেয়েছে কিনা এসব নিয়ে কতো চিন্তা করছে! অথচ ওর নিজের বাবা মা! তাদের কি আসলেই একটুও দয়া হয় না মায়রার জন্য! 

-হ্যালো‌! মায়রা? কি হয়েছে!

-হু--হুম? কি-কিছু হয় নি তো।

-কাঁদছ কেন?

-কই নাহ!

-বকা খেয়েছ না ভিষণ আজকে! সরি পরীটা--। বাসায় বলো নি আমার সাথে ছিলে! বললেই তো হতো রে পাগলি!

-না না---।

-আচ্ছা যাও---। এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখা ক্যানসেল---। বাসা থেকে বলে আসবে-----।

-না না---। বলে দেখা করা---।

-কেন প্রবলেম হয়েছে বাসায় কোন? আমি কথা বলবো!

-নাহ---। তেমন--তেমন কিছু না--। 

-মায়রা? কি হয়েছে? না বললে বুঝব কি করে!

-কিছু হয় নি--। আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

-হুম---। করো না পরী?

-আচ্ছা? আমাকে আর ভালো না লাগলে কি আপনি আমাকে ছেড়ে--ছেড়ে দিবেন?

-মানে! ছাড়ব কেন! কি বলছ একটু ক্লিয়ার করে বলো?

-না মানে---। সকালে-- ভাইয়া বলছিলো চোখ, ঠোঁট রাঙিয়ে, সাজগোজ করে না চললে নাকি ছেলেদের পছন্দ হয় না--। আমি তো কখনই এতো সেজেগুজে থাকি না। এতো কটকটে লাল লিপস্টিক, মেকাপ এসব আমার কখনই পছন্দ না। এর জন্য আপনি কি আমাকে ছেড়ে দিবেন? বিয়ে করবেন না?

-পাগলিটা! তুমি যেমন তোমাকে আমি ঠিক তেমনটাই চাই--। তোমার পছন্দ না হলে লিপস্টিক পড়ে ঠোঁট রাঙাতে হবে না---। আমি নিজেই রাঙিয়ে দিব অন্য উপায়ে----।

-কি করে?

-বললে তো হবে না ম্যাডাম--। প্রাকটিক্যালি রাঙিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে---। ওয়েট সময় বুঝে সেটাও দেখিয়ে দিব---। তখন কিন্তু মানা করলে শুনবো না----। 

আয়ানের কথায় কি ছিল কে জানে মায়রা লজ্জা পেয়ে চুপ করে গেল।

-ম্যাডাম? কাল কি কলেজে যাবেন?

প্রশ্নটা শুনেই মায়রা একটু চমকে উঠলো। গালে মায়ের হাতের ছাপগুলো স্পষ্ট বসে গেছে। এই অবস্থায় কাল সকালে তো কোনভাবেই কলেজে যাওয়া যাবে না। কিন্তু এই মানুষটাকে না দেখেই বা ও থাকবে কি করে!

-হ্যালো? শুনছেন গো?

-জি? একটু শরীর---শরীর খারাপ করছে--। সম্ভবত জ্বর আসবে---।

-ওহ শিট! রোদে অনেকক্ষণ বসে ছিলে তাই হয়তো--। শিট! রোদ সহ্য হয় না আগে বলবা না পাগলি! আচ্ছা কালকে যেতে হবে না। ওকে? এখন ঘুমাও তাড়াতাড়ি? কেমন?

-হুম----। আপনিও ঘুমান--।

-হ্যাঁ--। একটু কাজ বাকি--। ওটা করেই শুয়ে যাবো। বায়।

-বায়।

আয়ান কলটা কাটতেই মায়রা মোবাইলটা বুকে চেপে ধরে শুয়ে পড়লো। মানুষটা ভাবছে ওর রোদ সহ্য হয় না। ও যে প্রায়ই কলেজ থেকে এতোটা রাস্তা ধু ধু রোদের মধ্যে হেঁটে বাসায় ফিরে সে কি জানে! সেদিন যে তিথিকে ফুসকা খাওয়ালো, সেই ৩০ টা টাকাও ওর রিকশার ভাড়া ছিল। সেদিনও প্রচন্ড রোদে হেঁটে এসেছে। এই কথাটা তো মানুষটা জানেই না৷ ওর তো রোদে কষ্ট হয় না। ওর কষ্টটা অন্য জায়গায়। আর সেটা কি করে বলবে ও আয়ানকে! হাজার হোক পরিবারটা ওর নিজের। তারা যাই করুক, তাদেরই তো সন্তান ও। 

০৮!! 

গত দুদিন মায়রাকে একবারের জন্য দেখতে পায় নি আয়ান৷ সেই জন্য বেচারা না পারছে খেতে, না পারছে কোন কাজে মন দিতে। বাসায় সবাই এটা নিয়ে বেশ মজা করছে দেখে না খেয়েই রুমে এসে ধুম করে দরজা বন্ধ করে দিলো আয়ান। সবার উপরে এতো এতো রাগ হচ্ছে ওর এই মূহুর্তে। সবাই কি বুঝে না ওর কষ্টটা! হেল্প করার নাম নেই, আসছে দাঁত কেলাতে! আরেকটা হলো এই মায়রা! মায়রার কথা মনে পড়তেই মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে কল করলো আয়ান। প্রায় সাথে সাথেই কলটা রিসিভ করলো মায়রা। একটু পরেই মায়রার মিষ্টি কণ্ঠটা শুনতে পেল আয়ান।

-হ্যালো---?

-------------------------------

-কথা বলছেন না কেন?

-বলো?

------কি হয়েছে আপনার?

-সবাই মিলে কি শুরু করেছ বলো তো!

-আমি! আমি কি করলাম!

-তুমিও করছো--। সবাই করছে--।

-কি! কি করছে!

-বাবা-মা-তিথি সবাই মিলে হাসাহাসি করছে--। আর তুমি!

-হাসাহাসি কেন?

-ওদেরকে গিয়েই জিজ্ঞেস করো--। আমাকে কেন বলতে বলছো?

-জি?

-আই জাস্ট ওয়ান্ট টু সি ইউ রাইট নাউ-নাউ-নাউ---।

-মা-মানে! এতো রাতে কি করে দেখবেন!

-আমি এতো কিছু জানি না মায়রা। আমি তোমাকে দেখতে চাই মানে চাই-। না একটা কাজ করতে পারছি না কিছু---। তোমাকে এক নজর হলেও দেখা চাই--। নইলে আর পারছি না---।

-আম---। আপনি?

-আমি তোমার বাসার সামনে আসছি---।

-বাসায়! বাসায় আসবেন এখন?

-আগে আসি--। পরে দেখো----।

আয়ান কলটা কেটে দিয়েই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। সোজা গাড়ি ছুটিয়ে মায়রাদের বাসার নিচে এলো। এবার কি করবে! এতো রাতে বাসায় যাওয়াটা ঠিক হবে না সেটা আয়ান নিজেও ভালো মতো জানে। কিন্তু পরীটাকে যে তার এক নজর হলেও দেখা চাই ই চাই। উপরের দিকে তাকাতেই বারান্দায় নজর পড়লো। আর সাথে সাথেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো আয়ানের৷ মায়রাকে কল করলো। আর সাথে সাথেই কলটা রিসিভ করলো।

-মায়রু? সরি--। এ্যাকচুয়েলি তখন মাথা কাজই করছিল না একদম--। সরি?

-আপনি! আপনি কোথায় এখন?

-আপনার বাসার নিচে ম্যাডাম--।

-বা-বাসা-বাসার নিচে!

-একটু বারান্দায় আসবে? জাস্ট পাঁচ মিনিটের জন্য? প্লিজ?

-এখন!

-প্লিজ? তুমি না এলে আমি সোজা এসে দরজায় বেল বাজাবো বলে দিলাম---।

- না না---। আমি আসছি বারান্দায়----।

মায়রা আস্তে করে রুমের দরজা খুলে ইতিউতি করে উঁকি দিয়ে পা টিপে টিপে ড্রইং রুমের লাগোয়া বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। বারান্দায় এসেই ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আয়ানকে দেখতে পেল মায়রা। মানুষটা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ওদের বারান্দার দিকেই তাকিয়ে আছে। মোবাইলটা কানে লাগিয়ে মায়রা সামনের দিকে আয়ানের দিকেই তাকিয়ে রইলো।

-মায়রা?

-জি?

-তুমি কি জানো এই আধো আলো আধো আঁধারিতে তোমাকে ঠিক কতোটা মায়াবী দেখাচ্ছে? এই দুটো দিন এই মায়াভরা মুখটা দেখতে না পেয়ে আমার কি যে কষ্ট হচ্ছিল সেটা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না পরী----। 

-সরি----।

-সরি কেন পাগলিটা? তোমার ফ্যামেলি হয়তো তাদের দিক থেকে রাইট---। কিন্তু আমি কি করবো বলে দিতে পারো?

জবাব দিতে গিয়ে গলাটা কেঁপে উঠলো মায়রার। কি বলবে! এতো কেন মায়ার বন্ধনে বাঁধছে ওকে মানুষটা! এতোটা সুখ সহ্য করার মতো কপাল করে কি ও এসেছে! আরো কিছুক্ষণ মায়রাকে দেখে বাসায় ফিরলো আয়ান। পরীটাকে দেখে এসে একটু শান্তি শান্তি লাগছে। মায়রার মায়াভরা মুখটা চিন্তা করতে করতেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো আয়ান।

বেশ ভোরে ভোরেই মুখের পানির ছিটে পড়ায় বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে নিলো আয়ান। একটু পরে এক আঁজলা পানি এসে মুখে পড়ায় থমকে উঠে বসলো আয়ান। নাকে মুখে পানি ঢুকে কাশি শুরু হয়ে গেছে।

-তিথিনি? তোকে আজকে আমি খুন করে ফেলবো---।  

-কখন থেকে ডাকছি৷ কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাচ্ছিস। আমি কি করবো?

-আমাকে ডাকতে কে বলেছে তোকে? ফাজিল মেয়ে--। ধরে দিব এক থাপ্পড়?

-এ্যাঁ! এই জন্য বলে যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর! এ্যাঁ--।

-এবার সত্যি থাপ্পড় দিবো তিথি--। কানের সামনে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করছিস কেন? যা এখান থেকে--। আমি ঘুমাবো----।

- তোর জন্য প্ল্যান করাই আমার উচিত হয় নি বেয়াদপ ছেলে---। আমি আর কক্খনো একটাও হেল্প করবো না। দেখিস--।

-যা তো--। ঘুমাতে দে---।

-উঠে রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি। সেই কখন আমরা সবাই রেডি হয়ে বসে আছি---।

-কেন! এই ভোরে সবাই মিলে জগিং করতে যাব রেডি হয়ে? আজব!

-উফফ--। এতো আজাইরা প্যাঁচাল কেমনে করিস রে ভাইয়া তুই? আমরা পিকনিকে যাচ্ছি-। আমাদের বাগান বাড়িতে---। 

-কোন খুশিতে!

-বাহ! ভাবিকে দেখাতে হবে না আমাদের বাগান বাড়িটা কতো সুন্দর?

ঘুমের ঘোরে আয়ান শুয়ে পড়েছিল। তিথির কথাটা শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।

-মায়রাকে দেখাবি মানে! মায়রাও যাবে?

-হ্যাঁ--। ভাবির বাসার সবাই যাবে--। 

-এসব প্ল্যানিং কখন করলি?

-গত দুদিন যখন দেবদাস হয়ে পড়েছিলি তখন-। হিহি---। 

-মায়রা তো আমাকে বললো না?

-আরে ভাবি নিজেও তো জানে না--। হা হা--।

-তিথি! ইউ আর দা দ্রেট সিসটার এভার---।

-আহা! ঢং কম করো--। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে--। যেতে সময় লাগবে তো---। 

-হুম হুম---।

আয়ান ঝটপট উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো। আজকে সারাটা দিন পরীটা তার সামনে থাকবে। ভাবতেই বেশ লাগছে আয়ানের। কথাটা ভাবতেই মায়রার কল এলো। আয়ান হেসে কলটা রিসিভ করলো।

-হ্যালো ম্যাডাম? রেডি হয়েছেন?

-এখনই ভাইয়া এসে বললো রেডি হতে---। 

-জি একটু তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন। আমরা বের হচ্ছি এখান থেকে।

-আচ্ছা-----।

একটা গাড়িতে আটজন মানুষের জায়গা হবে না। তাই ঠিক হলো আয়ান আর তিথি একটা গাড়িতে যাবে, সেটায় করে মায়রা আর তিয়াশ উঠবে ওদের সাথে। আর আয়ানের বাবা মা যে গাড়ি নিয়ে যাবেন সেটায় মায়রার বাবা মা। বাবা মায়ের গাড়ি বেরিয়ে পড়তেই তিথি পিছনের সিটে বসলো। আয়ান ড্রাইভারের সিটে বসতেই তিথি সবগুলো দাঁত বের করে হাসি দিলো আয়ানের দিকে তাকিয়ে।

-চলো ড্রাইভার?

আয়ান ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত হয়ে গাড়ি চালানোয় মন দিলো। চাইলেও এই মেয়েকে এখন কিছু বলা যাবে না। মেয়েটা অনেক হেল্প করছে। ওর এইটুকু অত্যাচার তো সহ্য করতেই হবে আয়ানকে। 

মায়রাদের বাসার সামনে আসতেই দেখলো তিয়াশ নিচে ওয়েট করছে। তিথি জোরে জোরে ইশারা করে তিয়াশকে ডাকলো। তিয়াশ ভ্রু কুঁচকে গাড়ির দিকে এগিয়ে এলো।

-জি বলুন?

-বেয়াই সাহেব ভাবিকে একবার ডেকে দিয়ে আমার পাশে এসে বসুন।

-মানে! আপনার পাশে কেন!

-আপনার সাথে প্রেম করবো তাই!

-কি?

-এরা সবাই এতো পানশা কেন বুঝি না বাপু। আরে! আরেকজন এসে যদি পিছনে আমার সাথে এসে বসে তাহলে তো আমাদের ড্রাইভার সাহেবের লুকিং গ্লাসে তাকাতে তাকাতে ঘাড় লম্বা হয়ে যাবে--। শেষে আপনার বোনেরই কষ্ট না বলুন?

-হা হা হা---। মায়রা বের হচ্ছে রুম লক করে---।

তিয়াশ হেসে তিথির পাশে এসে গাড়িতে বসলো। আয়ানও ব্যস্ত চোখে চারপাশে মায়রাকে খোঁজায় মন দিলো। এদের বক বক শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও ওর এখন নেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন