অচেনা অতিথি - পর্ব ০৪ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


- পুরো চিঠিটা পরে তিতির থরথর করে কেঁপে উঠল। রবিন আমি কিছু জানি নারে। কেই এই লোক কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। আমার কেমন জানি ভয় লাগছে।

|

- আরে বেকুব অত চিন্তা করছিস কেন! আমিতো জানি তুই কেমন। দেখি জল কতদুর যায় বলে তিতির কে নিয়ে উঠে পড়ল রবিন।

|

- তিতির বাসায় এসে দেখল সমস্ত কাজ পরে আছে ওর নামে। ব্যাগটা রেখেই জলদি কাজে নেমে পড়ল। সমস্ত হাড়িপাতিল পরিষ্কার করে একগাদা কাপড় নিয়ে পুকুর ঘাটে চলে এল। শান বাঁধানো পুকুরের ঘাট আর সচ্ছ পানি। তিতির সিড়িতে বসে দু পা পানিতে নামিয়ে দিয়ে কাপড় কাচতে লাগল। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ এসে লাফ দিল পুকুরে। তিতির চমকে উঠে সামনে তাকাল। পুকুর থেকে পানি ছিটকে পড়ল চারদিকে। তিতিরে গা ভিজে গেল। তিতির রাগী চোখে তাকিয়ে রইল ছেলেটার দিকে।

|

- তমাল দাঁত কেলিয়ে হেঁসে উঠল। তিতির তোরে রাগলেও সুন্দর লাগে। কাপড় ধুচ্ছিস?

|

- তিতির দ্রুত কাপড় ধুয়ে ঘাট থেকে উঠে গেল। এই তমাল ছেলেটার নজর একদম ভালো না।

তমাল কোমড় অবদি পানিতেই দাড়িয়ে রইল।

সবার চোখ এড়ালেও আদরীর চোখ এড়ালো না।

|

- তিতির বাসার ভিতর ঢুকতেই আদরী চিল্লায় বলল কিরে প্রেমলীলা শুরু করছোস মায়ের মত! তাইতো বলি ঐ বাড়ির ছেলে হয়ে ও পুকুরে ডুব দেয় কেন! মানসম্মান হারাবি কুত্তার বাচ্চা! বাসায় থেকে যদি বের হস তাহলে মাটিতে পুঁতে ফেলব।

|

- তিতির চুপচাপ কথাগুলো শুনলো শুধু তারপর কাপড় গুলো নিয়ে ছাদে গেল। সব কাপড় শুকাতে দিয়ে নিচে নেমে এসে গোসল দিয়ে নামায পড়ে খাবার খেতে গিয়ে দেখে কোন ভাত নাই। আমিতো ভাত রান্না করে গেছি তাহলে ভাত কই। মা ভাত কি আর নাই?

|

- না শেষ হয়ে গেছে। কিছু মুড়ি খেয়ে নে বলে আদরী ঘুমাতে চলে গেল।

|

- খুদাই পেট জ্বলে যাচ্ছে। তবুও মুখে দু-গাল মুড়ি দিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে বিছানায় গিয়ে আবার সেই চিঠিটা পড়ল। আরও কয়েকবার পড়ল। এ নিয়ে ১২ বার পড়ল। অদ্ভুত একটা শান্তি আছে চিঠিটার ভিতর। তারপর ঘুমিয়ে পড়ল তিতির।

|

- তিতিরের ঘুম ভাঙ্গল আদরীর ডাকে। বেলা ডুবে যাচ্ছে তাও তোর ঘুম ভাঙ্গলনা! যা ছাদ থেকে কাপড় তুলে আন বলে আদরী চলে গেল।

|

- তিতির ছাদ থেকে কাপড় তুলে এনে আসরের নামায পড়ে রাতের রান্নার জোগাড় করে সব কিছু কমপ্লিট করতে রাত ৮ বেজে গেল। তারপর ফ্রেস হয়ে পড়তে বসতেই আদরী ইভাকে ওর কাছে দিয়ে গেল। কিন্তু ইভা বার বার তিতিরকে বিরক্ত করতে লাগল দেখে তিতির জোড়ে একটা ধমক দিল ইভাকে। এতেই গলা ফাটিয়ে ইভা চিৎকার করে কান্না করে উঠল।

|

- আদরী দ্রুত তিতিরের রুমে এসেই ইভাকে কোলে নিয়ে বলল তুই ইভাকে মেরেছিস! সৎ কোনদিন আপন হয়না। ওদের আসল রংটা দেখেই দেয়।

|

- তিতির কিছু না বলে চুপ করে পড়ার প্রতি মনযোগ দেয় যাতে আর মাইর না খাইতে হয়। তিতিরের পড়া দেখে আদরী আরও রেগে যায়। বই ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঠাশ্ করে একটা চড় দিয়ে বলল আমি কথা বলছি তোর কানে যায়না? পন্ডিত হয়ে গেছিস?

|

- এত চুপ করে থাকার পরও রেহায় পেলনা। তিতির রুম থেকে একেবারে বাসার বাহিরে চলে এল। গেটের সাথে বসার জন্য শান বাঁধানো আছে। ওখানেই বসে পড়ল তিতির। শূন্য আশায় আকাশের দিকে চেয়ে রইল তিতির। মানুষ মারা গেলে কি সত্যই আকাশের তারা হয়ে যায়! মা তুমি কি আমায় দেখতে পাও? খুব কষ্টে আছি মা। এমন কোন দিন নাই যে আমি ম্যার খাইনা মা। আমায় নিয়ে যাও মা। একদমকা বাতাশ ওর শরীর ছুয়ে গেল। তিতির এক ধানে বসে কেঁদেই চলছে।

|

- তিতির এখানে কি করছিস! এই রাতে বাসা থেকে বের হয়েছিস কেন? বাসায় যা আমি এখানে দাড়িয়ে আছি বলেই মনুজান তিতিরকে বাসায় পাঠিয়ে দিল।

|

- তিতির বাসায় এসে চুপ করে বসে থাকতেই কিছুক্ষন পর এরশাদ বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে তিতিরকে খাবার দিতে বলল। তিতির ফ্রীজ খুলেই দেখে গামলাতে ভাত ছিল। তিতিরে চোখে জল ছলছল করতে লাগল। নিজেকে সামলিয়ে বাবাকে খাবার দিল তারপর নিজের রুমে এসে সুয়ে পড়ল। ওর আর খাওয়া হলনা।

পরের দিন খুব জ্বর আসল তিতিরের। শরীরে ৩ টা আচড়ের দাগ। ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারলনা।

|

- এভাবে আরও কিছু দিন কেটে গেল। তিতির পড়াশোনায় বেশ প্রখর তাই টিচার হতে ছাত্র-ছাত্রী সবার কাছে একটা সুনাম তৈরি হয়েছে এত দিনে। একদিন ক্লাস করে রবিন আর তিতির বের হচ্ছিল এমন সময় ওদের ক্লাসমেট শান্তনা এসে বলল তিতির তোমার খাতাটা দিবা! আমি দেরি করে আসছি তাই ক্লাসটা করতে পারিনি।

|

- তিতির ব্যাগের চেন খুলে খাতা বের করে ওকে দিয়ে ফোন চেক করতে গিয়ে দেখে ৪ বার মিসকল। কল ব্যাক করতেই কল কেটে দিল ওপার থেকে। তারপর আবার কল দিল। তিতির কলটা রিসিভ করতেই বলল ম্যাম সুন্দরবন কোরিয়া সার্ভিস থেকে বলছি আপনার জন্য একটা পার্সেল আছে।

|

- তিতির কলটা কেটে দিয়ে রবিনের দিকে চাইল। রবিন তখন শান্তনার সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত ছিল। তিতির একা চলে গেল সেখানে। মাত্র ৫ মিনিটেই পৌছে গেল সেখানে। প্যাকেটটি রিসিভ করে সোজা বাসায় চলে আসল।

তিতির ওর বাসায় না গিয়ে দাদীর ঘরে চলে গেল। দাদী তখন রান্না করছিল। দাদীর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বক্সটি খুলল। একটা বোরখা প্যাকেট করা। হাতে নারাচাড়া করে দেখল অনেক দামী বোরখা। তারপর সেই চিঠি। খামের মুখ খুলে তিতির পড়তে লাগল।

♥তিতির♥

বোরখা পরে যাতায়াত করলে কি হয়। নিজের চেহারাটা কি অন্যকে দেখাতেই হবে! হেফাযত করে রাখতে বলেছি আমার নামক আপনাকে কিন্তু কথা মানেন নি তো আমার! এর পরের বার কোন কথা হবে না আর শুধু শাস্তি আর শাস্তি............

আপনিতো দেখছি আমাকে পাগল করে ছাড়বেন। সব সময় আপনার মুখটা আমার চোখের সামনে ভালবাসা নিয়ে ভেঁসে ওঠে। কি করি বলেন তো! সময় আসলে সব সুদে-আসলে পুরুন করে নিব।

★অচেনা অতিথি★

তিতির পড়া কমপ্লিট করে মুখ বেকিয়ে বলল আমি ওনার টাকার কেনা গোলাম যে আমার কথা ওনার শুনতে হবে। পাব্বোনা তেনার কথা শুনতে। তিতির রবিনকে কল দিয়ে বলল ও বাসায় চলে এসেছে। পাঠানো বক্সটা দাদীর কাছে নিয়ে গিয়ে বলল দাদী এটা চুলায় দিয়ে পুরে ফেল। তারপর বাসায় চলে এসে বোরখাটা খুব যত্নে রেখে দিল।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- এভাবে অনেক সময় কেটে গেল। অচেনা অতিথিরূপীর লোকটার অনেক চিঠি জমা হয়ে গেল। তিতিরটা খুব ভালবেসে ফেলেছে এতদিনে। তিতির মাধ্যমিক দিয়েছে। রেজাল্টও বেরিয়েছে। পুরো জেলায় ১ম হয়েছে আর বিভাগ মিলে ৩য় স্থান। সবকিছু তেনার জন্য। জনাবের কবে ইচ্ছা হবে আমার সাথে দেখা করতে আল্লাহ্ আর তিনিই ভাল জানেন। জনাবের হুকুম রাবিতে চান্স পেতেই হবে সেটাও মেধা তালিকাতে তাই তিতির সব ভুলে পড়ার প্রতি খুব মনযোগ দিল। কারন রেজাল্ট যদি তার মনের মত হয় তাহলে সেদিনই তাদের দেখা হবে।

মায়ের নানা অত্যাচারেও নিজের পড়াটা ঠিক করে রেখেছে তিতির। রাবিতে ভর্তি পরীক্ষার দিন চলেই এল। সকালে উঠে সব কমপ্লিট করে সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে একটা অটো ভাড়া করে রবিনকে নিয়ে তিতির রওনা দিল। দেড় ঘন্টার পথ তাই তিতির বই খুলে পড়াগুলো বার বার পড়তে লাগল। এমন সময় অটোটা থেমে গেল।

|

- মামা থামলেন কেন বলেই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল ১০/১২ ছেলে নিয়ে পৌর মেয়রের ছেলে উৎপল দাড়িয়ে আছে। রবিন ভয় পেয়ে গেল। একদিন তিতিরকে খারাপ কথা বলাতে রবিনের সাথে বেশ ঝামেলা হয় উৎপলের। সেদিন উৎপল তিতিরকে খুব শাসিয়েছিল।

|

- কিরে রবিন তুই কি তিতিরের বডিগার্ড নাকি যে সবসময় পাহারা দেস ওকে?

|

- ভাই তিতিরের আজ পরীক্ষা। আমাদের ছেড়ে দিন বলতেই উৎপল ঠাস্ করে চড় বসিয়ে দিল রবিনের গালে। তোদের পরীক্ষা আজ বের করবো। রবিনও সহ্য করতে না পেরে উৎপলের নাক বরাবর একটা ঘুষি দিল।

|

- উৎপল নাক চিপে ধরল। ঐ ওকে ধর বলতেই ওরা সবাই মিলে রবিনকে টেনে হিচড়ে অটো থেকে নামাল তারপর রাস্তার পাশে কলমবাতার ডাল ভেঙ্গে ফটাফট মারতে লাগল রবিনকে।

|

- অটোচালক মামা উৎপলের পা ধরে বলল বাবা পোলাটারে ছেড়ে দেন। পরে কিছু বলেন মাইয়াটার পরীক্ষা। কিন্তু কে কার কথা শোনে। এদিকে উৎপলের সাথে তিতিরে ধস্তাধস্তি চলছে। রাস্তায় কয়েকটা অটো যাচ্ছিল সেগুলো থেমে কয়েকজন এসে এদের মারামারি বন্ধ করল। এদিকে রবিনের অবস্থা খারাপ। সেন্স নাই। রবিনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। তিতিরের স্বপ্ন এভাবেই মাটি হয়ে গেল।

কয়েকজন উৎপল কে ধরল কিন্তু একজন বলে উঠল এটা মেয়রের ছেলে ওকে ছেড়ে দে পরে আমাদেরই সমস্যা হবে।তাই ওরা উৎপলকে ছেড়ে দিল।

|

- ঘন্টা ৩ নেক পর রবিনের সেন্স ফিরল। এর মধ্য হাবিব,এরশাদ, মর্জিনা,শামীম সকলে আসল। মর্জিনা তো রেগে গিয়ে তিতিরের সাথে কথাও বলল না। তিতির এক কোনায় দাড়িয়ে থেকে চোখের জল মুছছে।

এরশাদ তিতিরকে নিয়ে বাসায় চলে আসল।

|

- আদরী তিতিরকে দেখেই জোড়ে জোড়ে বলে উঠল আজ যদি মর্জিনা কিছু বলে তাহলে তোদের বাপ বেটির অবস্থা খারাপ করবো। উম বেটির লেখার পড়া দরকার। এখানে হচ্ছেনা তাই অন্য জায়গায় যেতে হবে।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- আদরীর কথা ভুল হয়নি। দুপুরের পরে মর্জিনা এসে ঝগড়া লেগে গেল। শয়তান মেয়ে,,,,,,,,,, মারে খাইছিস এখন আমার ছেলেটার পিছনে লাগছিস! অপায়া মেয়ে বলে বিশ্রী ভাষায় গালাগালি করল তিতিরকে। মনুজান বাধা দিতে এলে তাকে ছেড়ে দিলনা মর্জিনা। মর্জিনা ভুলেই গেল আদরী কি করতে পারে তিতিরকে এর জন্য।

|

- তোর জন্য মানুষের মুখে গালি খাবো বলেই আদরী তিতিরের চুলের মুঠি ধরে ঘরের ভিতর নিয়ে গিয়ে কাঠের খুন্তি দিয়ে মারতে লাগল দরজা বন্ধ করে। তিতির আজ আর চুপ করে থাকতে পারলনা। ওর আর্তচিৎকার বাসা ছেড়ে আরো দুরে চলে গেল। প্রথমে এরশাদ চুপ করে ছিল কিন্তু তিতিরে কান্না সহ্য করতে না পেরে দরজায় ধাক্কাতে লাগল। আদরী দরজা খোল। অনেক হয়েছে। কিন্তু আদরীর দরজা খোলার নাম নাই।

|

- বাসার বাহিরে গেটে ধাক্কা দিচ্ছে মনুজান। এরশাদ বাপ আমার মাইডারে আর মারিস না। তোর কি দরদ হয়না! দরজা খোল আমি তোর মা হয়ে বলছি দরজা খোল। ওরে আর কষ্ট দিসনা। আল্লাহর লানত পরবো তোদের উপর আর মাইটারে মারিস না।

|

- এই আদরী দরজা খোল বলেই ধমাধম কয়েকটা লাথি মারল দরজায়। আদরী এবার দরজা খুলে দিতেই তিতির টলতে টলতে বাহিরে এসে পাতিলের কালি চোখে মুখে দিয়ে কান্না করতে লাগল। আল্লাহ্ কেন এই রুপ দিছ। মা...হ্ আমারে নিয়া যাও আর সহ্য করতে পারছিনা। প্রতিটা দিন প্রতিটা মূহুত্ত আমার জন্য কষ্টকর হয়ে গেছে। আল্লাহ্ তুমি কি কিছুই দেখনা? আমি তো আর পারছিনা। তিতিরে কান্নার আওয়াজ শুনে বাড়ির বাহিরে মানুষ জড় হল। মেয়েটা আর সুখ পাইলো না।

|

- এরশাদ এসে দরজা খুলে দিয়ে বলল মা ওরে গোসল দিয়ে ঘরে নিয়ে যাও বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। মনুজানও তিতির কে ধরে নিয়ে গেল গোসল খানায়। তিতির ওর দাদীকে জড়িয়ে ধরে বলল দাদী আমি আর পারছিনা। মৃত্যু আমায় ভুলে গেছে। আমার মরন হয়না কেন বলে ডুকরে কাঁদতে লাগল।

|

- তিতির গোসল সেরে ওর দাদীর সাথে রুমে আসল। ওর ফর্সা শরীরে শুধু দাগ আর দাগ যেটা দেখে মনুজান চিল্লায় বলল আল্লাহ্ সইবেনা আদরী। তোর ঘরেও নিজের মেয়ে আছে। এর মধ্য এরশাদ দোকান থেকে কিছু মেডিসিন এনেছে।

|

- আমার মেয়েরে আপনি অভিশাপ দেন কোন সাহসে বলে মনুজানের সাথে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল আদরীর। আমার বাসা থেকে বের হোন বলছি বলেই আবার এসে তিতিরে চুল ধরতেই এরশাদ আদরীর চুলের মুঠি ধরে বাহিরে নিয়ে এসেই জুতা দিয়ে কয়েকটা থাপ্পর মারল। এই জুতাপেটা তোরে আগেই করার উচিত ছিল। ভুল হয়ে গেছে আমার তোকে শাসন না করে।

আজই তোরে তালাক দিব। তুই আমার মাকে বলিস বাসা থেকে বের হয়ে যেতে! যা বাসা থেকে বের হয়ে যা বলেই এরশাদ ধাক্কা দিল আদরীকে।

ভাবছি একদিন হয়তো ঠিক হয়ে যাবি। কিন্তু তুই তো ঠিক হওয়ারই নস। বাসায় থাকতে হলে কাজ করে খাবি। যদি শুনছি তিতিরকে আরাদ করা তাহলে তোরে কি করবো সেটা আমি নিজেও জানিনা।

|

- পুরো পাড়া সহ গ্রামে রটে গেল তিতিরের কাহিনী। এরশাদের মাথায় হাত পরে গেল। মেয়েকে কোথায়ও বিয়েও দিতে পারবেনা মনে হয়। কি থেকে কি হয়ে গেল। এখন আমি এরে নিয়ে কি করি আল্লাহ্। সব শেষ হয়ে গেল।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- সন্ধ্যায় রবিনকে নিয়ে আসা হয় হসপিটাল থেকে। তিতিরদের সাথে টোটালি কথা বলা অফ। পরের দিন তিতির ছাদে উঠল রবিনকে দেখার জন্য। ছাদ থেকে রবিনদের পুরো বাসা দেখা যায়। রবিন উঠানে চেয়ার পেতে বসে আছে আর ওর মা ওকে খাওয়ায় দিচ্ছে।

|

- রবিন ছাদের দিকে তাকাতেই তিতিরকে দেখতে পেল। তিতির কে দেখে সব বুঝতে পেরে রবিন ইশারা করে বলল ও ঠিক আছে।

|

- মর্জিনা তিতিরকে দেখে ক্ষেপে গেল। কিছু বলতে গিয়েই তিতির চলে গেল দৌড়ে।

মা তুমি তিতিরকে অযথাই বকা দিচ্ছো। তুমি জানো ঐ উৎপলের সাথে আমার আগেও ঝগড়া হয়েছিল কলেজে। তার জন্য ঐ দিন ও আমাকে সুযোগ পেয়ে মারছিল। না জেনে কাউকে কিছু বলতে নাই মা।

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

- রাত ৯ টা বাজে এমন সময় তিতিরদের বাসার গেটে দুইটা হাইস এসে থামল। গ্রামের মেম্বর এসে এরশাদের নাম ধরে ডাকল কয়েকবার। এরশাদ এসে খুলে দিতেই মেম্বর সহ আরও ১০ জন বাসায় এল। স্যার এই এরশাদ বলে এরশাদকে দেখিয়ে দিল মেম্বর খায়রুল।

|

- এরশাদ অবাক। কারন এখানে সাবেক পৌর মেয়র বারিক সিদ্দিক এসেছে। ওদের সবাইকে নিয়ে গিয়ে ডাইনিং রুমে বসিয়ে দিয়ে আদরীকে চা নাস্তা বানানোর জন্য বলে দিল। আদরীরও কৌতুহল কম না।

|

- ভাইজান ওসবের দরকার নাই আপনার মেয়েকে ডাকুন প্লিজ। আমি দুটা কথা বলেই চলে যাবো। এর মধ্য খায়রুল গিয়ে হাবিবকেও ডেকে আনল।

|

- কেন স্যার আমার মেয়ের কাছে কি দরকার? আমাকে বলুন। (এরশাদ)

|

- না ভাইজান ওকেই ডাকেন বলে জোড়াজুড়ি করতে লাগল বারিক। শেষে তিতির কে ডাকা হল। তিতির এক-পা দু-পা করে ওদের কাছে যেতেই বারিক সিদ্দিক সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিতিরে পা চিপে ধরতেই তিতির দু-হাত পিছনে চলে গেল।

মাগো কাল রাতেই আমার ছেলেটারে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। ছেলেটা আমার খেতে বসেছিল। খাওয়ার টেবিল থেকেই টেনে হিঁচড়ে ওকে নিয়ে গেছে। এমন দৃশ্য বাপ হয়ে আমি কিভাবে সহ্য করি মা। ছেলের আমার ভাল খেয়ে অভ্যাস। ওখানে গিয়ে কি অবস্থায় আছে আমি জানিনা বলেই বারিক সিদ্দিক চোখের পানি মুছল।

অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ছাড়াইতে পারিনি। আমার একটায় ছেলে মা। বাসার সবাই কান্নাকাটি করছে। থানার এসআই বলেছে তোমার অনুমতি ছাড়া নাকি ওদের কাউকে ছেড়ে দিবেনা। জানিনা কোন উপর মহলের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে। তুমি গিয়ে একটু বল তাহলে সব ছেলেদেরই ছেড়ে দিবে। তোমার যা ক্ষতি পুরুন হয়েছে তা সব আমি পুরুন করে দিব তবুও আমার ছেলেটারে ছাড়ার ব্যবস্থা করে দাও।

মা তোমার একটা কথার উপর আমার এই মেয়র পদটাও টিকে আছে। আমার নামে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এসআই হুমকি দিয়েছে।

|

- বারিকের কথা শুনে আদরী সহ সবাই অবাক হয়ে তিতিরের দিকে তাকালো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন