আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্ধন (পর্ব ২২)


৪৩!! 

ড্রইংরুমের ডেকোরেশনটা দেখে মায়রা এতোটা অবাক হয়ে গেছে যে তিথি কখন ওকে টেনে সবার মাঝখানে দাঁড় করিয়েছে সেটা টেরই পায় নি মেয়েটা। ড্রইংরুমটা নানা রঙিন অর্কিড ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সাদা আর গোলাপী পর্দার ফাঁকে ফাঁকে ফুলের সাজ। মায়রা চারদিকে চোখ বুলিয়ে সেই দৃশ্যই অবাক চোখে দেখছে। হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে মায়রা পাশে তাকাতেই আয়ানকে দেখতে পেল। মায়রার চোখেমুখে এতো খুশি দেখতে বেশ লাগছে আয়ানের। আয়ান মায়রাকে কেক কাটতে ইশারা করায় মায়রা নিচে তাকিয়ে আরো অবাক হয়ে গেল। সামনে টি টেবিলের উপরে রাখা মায়রার পছন্দের বড় একটা চকলেট কেক। 

খুশিতে কি বিস্ময়ে মায়রা কি করবে সেটাই বুঝতে পারছিল না। হাত পা সুদ্ধ কাঁপছে মেয়েটার। হুট করে এতো সারপ্রাইজ আসলেই হজম করে উঠতে পারছে না বেচারি। আয়ান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মায়রার হাত ধরে কেকটা কাটতে হেল্প করলো। এক টুকরো কেক মায়রাকে খাইয়ে দিয়ে সবাইকে কেক খাওয়াতে ইশারা করলো আয়ান। মায়রা ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে সবাইকে কেক খাওয়ানোয় মন দিলো। তিথি শুধু ধরে ধরে সবাইকে কেক না খাইয়ে গালে মুখে কেক মাখালো সবার। মায়রার মুখেও আচ্ছা করে কেক মাখিয়ে দিয়ে তিথি পালালো। 

কেক মাখামাখি পর্ব শেষ হলে সবাই যে যার রুমে চলে গেল। মায়রা রুমে এসে টিস্যু দিয়ে মুখের কেকগুলো মুছছে আর নিজের মনেই হাসছে। তিথিটা যে কি পাগলামি করে! এভাবে কেক মাখানোর কোন মানে হয়? হঠাৎ হাতের টিস্যুটা কেউ নিয়ে নেয়ায় মায়রার হুঁশ হলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো আয়ানকে। মানুষটা ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে হাতের টিস্যুটা ডাস্টবিনে ফেললো। 

-এই? টিস্যু ফেলছ কেন?

-এভাবে বুঝি কেউ মুখ থেকে কেক মুছে?

-তো কি করে মুছে?

-দাঁড়াও---। করে দেখাই----।

আয়ান মায়রার হাত ধরে টেনে নিয়ে কোমড় পেঁচিয়ে ধরে মায়রার ঠোঁটে মুখে লেগে থাকা কেকটুকু লিক করে নিল। মায়রা কেঁপে উঠে আয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে নিল। আয়ানও হেসে মায়রার মুখটা দুহাতে তুলে ধরলো। 

-লজ্জা পাওয়া হচ্ছে লাজুক পরী? 

-আচ্ছা তুমি জানলে কি করে আজ আমার জন্মদিন?

-তিয়াশ ভাইয়ার কাছ থেকে---। সারপ্রাইজটা কেমন লেগেছে পরীটার? পছন্দ হয়েছে?

-হুম ভিষণ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু এতো সব ব্যবস্থা করল কে?

-কেন গো বউটা? আমাকে কি চোখে পড়ে না?

-হুম? তুমি তো সারাদিন অফিসে ছিলে। আর সন্ধ্যা থেকে তো---।

-হুম। তোমার সাথে ছিলাম। পরীটাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য আর পরীটার স্পেশাল দিনটা যেন একসাথে কাটাতে পারি তাই আগেভাগে মিটিংগুলো শেষ করতে হয়েছে গতকাল।

-ওহ---।

-কিন্তু হলো তো উল্টো--। সারপ্রাইজের আগেই পরীটার মনই খারাপ হয়ে গেল। সরি পরীটা--।

-এই না না---।

-আচ্ছা সেসব বাদ দাও। এখন আমার রিটার্ন গিফট দাও---?

-হুম? কিসের?

-বাহ! এতো প্ল্যানিং করে তোমাকে সারপ্রাইজ দিলাম--রিটার্ন গিফ্ট পাবো না?

-কি গিফ্ট দিবো? আমার কাছে দেয়ার মতো তো--।

-আছে তো---। দাও না? প্লিজ?

-কি?

-উউমমমম--। আচ্ছা আমি বলছি ওয়েট---।

আয়ান মায়রাকে টুপ করে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ের উপরে ঝুঁকে মায়রার গলায় মুখ ডুবালো। মায়রা চমকে আয়ানের হাত খামচে ধরলো। 

-এই কি করো?

-আমার তোমাকে চাই লাজুক পরী--। দিবে?

-হুম?

-এভাবে লজ্জা পেলে চলবে না তো বউটা--। তোমাকে চাই তো? 

-আমি তো তোমারই---। 

-তাই নাকি? প্রুভ করো---।

-হুম? কি?

-আজকে বউটা আমাকে আদর করবে। তাহলে তো বুঝা যাবে--।

মায়রা লজ্জায় আর কিছু বলছে না দেখে আয়ান মায়রাকে ঘুরিয়ে নিজের উপরে তুলে নিল। মায়রা লজ্জায় তাকাতেই পারছে না দেখে আয়ান মায়রার মুখটা তুলে ধরলো। আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আয়ান। 

-কই? করো আদর?

-আমি পারবো না--। যাও---।

-হুম সেটাই--। তা পারবা কেন? আচ্ছা লাগবে না বাদ দাও--। ঘুমাও--।

আয়ান মায়রাকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিল। বেচারি কি করবে বুঝতেও পারছে না। আয়ান রাগ করেছে ভাবতেই খারাপ লাগছে। আয়ান যদিও রাগ করে নি৷ ইচ্ছে করেই রাগ করার ভান করেছে মায়রা কি করে দেখার জন্য। আয়ান একটু পরেই টের পেল কাজটা মোটেও ঠিক হয়নি। পাগলিটা আয়ানের বুকে খুব ডুবিয়ে ফোঁপাচ্ছে। আয়ান মায়রার মুখটা তুলে ধরলো। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ছে দেখে আয়ান আলতো করে পানিটা ঠোঁট দিয়ে শুষে নিলো। মায়রা চমকে একটু কেঁপে উঠলো। 

-বউটা কাঁদছে কেন হ্যাঁ? 

-আম সরি। রাগ করো না প্লিজ। আমি কি করবো? আমার লজ্জা করে---। 

আয়ান মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে ঠোঁটে কামড় দিল একটা। 

-ইশ! নিজের বরকে আদর করতেও লজ্জা পেতে হয়? হায় রে! আর এই! তোমাকে না বলেছি আমার বউকে কাঁদানো যাবে না? তোমার সাহস তো কম না?

-সরি----।

-আবার? একে তো আদর করছ না, তার উপরে কান্না করছ, এখন আবার সরি বলা হচ্ছে? একসাথে এতোগুলো অপরাধ? শাস্তি তো দিতেই হবে দেখছি---।

-------------------------------

-শাস্তি চাই বউয়ের? হুম হুম?

মায়রা কিছু না বলে আবার লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে দেখে আয়ান ঘুরে মায়রাকে শুইয়ে দিয়ে ঠোঁটে আলতো করে কামড় দেয়ার ব্যস্ত হয়ে গেল। একটু পর মুখ তুলে মায়রার ভারি নিঃশ্বাস পড়া দেখলো আয়ান।

-কি হলো ম্যাডাম? বলুন বলুন? শাস্তি চাই? না বললে কিন্তু আরো জ্বালাতন করবো৷ আদর করবো না। 

-হুম--। চাই।  অনেক অনেক শাস্তি--।

-বাহ! শুধু শাস্তি হলে চলবে? আদর চাই না?

-যাও জানি না--। 

আয়ান হেসে মায়রাকে নিয়ে পাগলামিতে মাতলো। পাগলীটাকে আদরের পরশে মাতাল করে তুলে সুখের সাগরে হারিয়ে গেল দুজনেই। 

এদিকে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় তিয়াশ আর বাসায় ফিরে নি। অনেকক্ষণ গেস্টরুমের বিছানায় শুয়ে থেকেও ঘুম আসছে না বেচারার। এখানে আসার পর থেকে পিচ্চিটার সাথে তেমন ভালো করে কথাই বলা হয়ে উঠে নি। পিচ্চিটাও সেই সন্ধ্যা থেকেই কাজ করছে। তাই এতো রাতে আর কলও করছে না তিয়াশ। না পারছে পাগলিটাকে দেখতে, না পারছে না দেখে থাকতে। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ দরজায় মৃদু নক হওয়ার শব্দ শুনে চমকে উঠলো তিয়াশ৷ আর পর মূহুর্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো তিয়াশের। দরজাটা খুলেই হাত চেপে ধরে টেনে তিথিকে রুমে ঢুকিয়ে নিল। তিথি হেসে তিয়াশকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করলো। 

-ঘুমাচ্ছ না কেন?

-একজনকে খুব মিস করছিলাম তাই ঘুম আসছিল না--। 

-হুম--। দেখছি তো এতো মিস করছে যে কল টল দেয়ার কথা মনে নেই---।

-তিনি তো আজ সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত--। কি করে কল দিই বলুন ম্যাডাম?

-হুহ---। বুঝি বুঝি---।

-বুঝলে তো ভালোই। তা পিচ্চি বউটা এতো রাতে না ঘুমিয়ে এখানে কেন?

-আমাদের বাড়ি। যেখানে ইচ্ছে যেতে পারি---।

-আহা! তা অন্যসময়ও গেস্টরুমে অন্য কেউ থাকলেও সেখানে---। 

-অসভ্য লোক একটা--। ভিষণ খারাপ একটা ছেলে তুমি--। ছাড়ো?

-বারে! আমি তো তোমার কথা শুনেই বললাম-।

-যাও তো--। ছাড়ো--। আমি আর আসবই না। ধুর----।

-আহারে! পিচ্চিটা আবার ক্ষেপেছে রে। এটা কোনো কথা? আমি তো দুষ্টুমি করছি-। কই বলো না? এখন এখানে কেন এলে?

-কেমন কেমন একটা লাগছিল। তাই ভাবলাম তোমাকে একটু দেখে যাই।

-বাহ! আজকাল দেখছি বউটাও মিস করছে আমাকে---।

-হুহ--। কচু মিস করছি---। একটা কথা বলতে এলাম--। মনে ছিল না বলতে---।

-জি ম্যাডাম। বলে ফেলুন---।

-আমার তো পরীক্ষা শেষ। এখন ভাবছি সামনে ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্স করবো---।

-বাহ! বেশ তো! তুমি কোথায় কোর্স করবে ঠিক করো। আমিও বাসায় আমাদের ব্যাপারে কথাবার্তা বলি কি বলো?

-বাহ! কি শখ! আমি তো আমেরিকায় যাব ফ্যাশন ডিজাইনিং করার জন্য-----।

তিথি কথাটা শেষ করার আগেই তিয়াশ চমকে একটু সরে গেল। তিথিও একটু অবাক হলো। একটু দুষ্টুমি করেই বলেছিল দেশের বাইরে যাবে ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্স করতে। এই পাগল মানুষটাকে রেখে কি করে দূরে গিয়ে থাকবে ও? কিন্তু লোকটা তো বুঝলোই না। উল্টো দূরে সরে গেল। ধুর। তিথি রাগ করে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করলেই তিয়াশ পিছন থেকে তিথিকে টেনে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো। তিথিও রাগ করে তিয়াশের হাত ছাড়ানোর জন্য লাফালাফি করতে লাগলো। লোকটা যখন ইচ্ছে জাপটে ধরবে, যখন ইচ্ছে দূরে ঠেলে দিবে সেটা হবে না। কিছুতেই হবে না। 

৪৪!! 

তিয়াশ পিছন থেকে তিথিকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে ঘাড়ে, কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে। তিথি কেঁপে কেঁপে উঠলেও কিছু বলছে না। তিয়াশের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য সমানে চেষ্টা করছে। কিন্তু কাজটা করতে গিয়ে মেয়েটা ভালোই টের পাচ্ছে এই কাঁপা কাঁপা হাতে আর যাই হোক এই মানুষটার এই শক্ত বন্ধনটা থেকে নিজেকে আলাদা করা কখনোই সম্ভব না। তিয়াশও বুঝতে পারছে পিচ্চিটার রাগ। তাই সেও দুষ্টুমি করছে সমানে। 

-ছাড়ো---?

-রাগ করেই থাকবা? সরি তো?

-কি করছ কি তুমি?

-তোমাকে একটু পাগল করার চেষ্টা করছি। যাতে আমাকে ফেলে কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতেও না পারো---। 

-হুহ----।

-আর যেন একটু বেশি করে মিস করো--। যাতে অন্তত বিয়ের ব্যাপারে সিরিয়াসলি ভাবতে শুরু করো---।

-ছাড়ো--। আমি যেন এমনিতেও কাউকে ছেড়ে বিদেশে গিয়ে বসে থাকবো? এই চিনসে সে আমাকে এতোদিনে।

-আহা! যেতে পারবা না তো তাহলে বললা কেন? তুমি জানো না এতো কিছু আমি চিন্তা করতেও পারি না। তোমাকে ছাড়া থাকতে হবে সেটা শুনেই তো দুনিয়া ওলট পালট হয়ে যাচ্ছিলো---। কিন্তু আবার ভাবলাম যেই পাগলিটা কয়েক ঘন্টা কথা না বলতে পেরে কাঁদতে কাঁদতে মাঝরাতে বাসায় গিয়ে হাজির হয় সে কি করে আমাকে ছেড়ে থাকবে?

-ছাড়ো-----।

-নিজে থেকে এসে এখন ছাড়ো ছাড়ো করছ কেন?

-ঘুমাবো----। 

-হুম--। ঘুমাও--। আমি মানা করেছি নাকি?

-দাঁড়িয়ে ঘুমাবো এভাবে? আমি কি ঘোড়া?

-হা হা হা। আহা! পিচ্চি বউটা এখনো রাগ করে আছে?

তিথি কিছু বলছে না দেখে তিয়াশ সরে এসে তিথিকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। তারপর রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তিথি হাত পা ছুঁড়তে লাগলো।

-এই এই এই? কই নিচ্ছো?

-তোমার রুমে--। ঘুম পাচ্ছে না বললা?

-একদম রুমে নিবা না এখন। আমি এখানে ঘুমাবো---।

-তিথি! পাগল হলে? কেউ দেখলে কি ভাববে?

-ধুর--। সবাই ঘুম এখন। দেখতে কে আসছে? আর আসলেও বা কি হবে? আমরা তো এখন গল্প করবো অনেকগুলা---। 

-আহা! শুধু গল্পই করবো? আর কিছু না?

-আর কি করবো?

-এই যে আদর করা যায় আর কি।

-যাও পচা লোক--। খালি এসব বলে---।

-এই যে পিচ্চি---। এতো রাতে যে আমার সাথে বসে গল্প করতে চাইছো, ভয় করছে না?

-ভয় কেন করবে?

-এই যে আমি আর তুমি রুমটায় একা---। উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেললে?

-ধ্যাত--। ভয় লাগাবা না একদম। 

-আচ্ছা বাবা ভয় লাগাবো না। রুমে দিয়ে আসি। চুপচাপ ঘুমাও। সারাদিন বহু কাজ করেছে আমার পিচ্চিটা। এখন একটু রেস্ট নিতে হবে তো?

-না না না--। আমি তোমাকে দেখবো। কতোদিন দেখা হয় না আমাদের--।

-আহারে! পিচ্চিটা এতো মিস করে? আগে বললে সোজা বাসায় চলে আসতাম দেখা করার জন্য--।

-ইশ! নাটক করবা না একদম। চলো বারান্দায় গিয়ে বসবো?

-ওকে ম্যাডাম-----। 

তিয়াশ তিথিকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজেও তিথির পাশে একটা চেয়ারে বসলো। তিথি মনের আনন্দে বকবক করছে। আর তিয়াশ ওর কথা শুনছে। পাগলিটার যে এতো কথা জমে ছিল সেটা তিয়াশ ভাবতেও পারে নি। চেয়ারে হেলান দিয়ে কথা বলতে বলতে একসময় ঘুমিয়েও গেল তিথি। তিয়াশ হেসে ফেললো তিথির অবস্থা দেখে। আবার তিথিকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে গিয়ে তিথির রুমে শুইয়ে দিল তিয়াশ। দরজাটা ভেতর দিক থেকে লকের বাটনটা টিপে দিয়ে তিয়াশ আবার নিজের রুমটায় ফিরে এসে শুয়ে পড়লো। নিজেও একসময় ঘুমিয়ে গেল। 

এদিকে মাঝরাতে আয়ান ঘুমের ঘোরে পাশে হাত দিতেই মায়রাকে না পেয়ে চোখ বুজেই হাতড়ালো ভালো করে। মায়রার স্পর্শ না পেয়ে চোখে ঘুম নিয়ে চোখ খুললো আয়ান। মায়রারে না দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে বসলো। ওয়াশরুমে গেল কিনা মেয়েটা সেটা ভেবেই আয়ান ট্রাউজারটা পড়ে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। ওয়াশরুমের দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ দেখে আয়ানের বুকটা ধ্বক করে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে রুমের দরজার দিকে আসতেই বারান্দার দিকে নজর গেল আয়ানের। বারান্দার দরজাটা একটু ফাঁক করা দেখে আয়ান বারান্দার দরজাটা নিঃশব্দে খুললো। মায়রাকে দেখামাত্রই এবার আয়ানের বুকের ভেতরে কেউ হাতুড়ি পেটা শুরু করলো যেন। আয়ান ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে পা টিপে টিপে মায়রার একদম পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ মায়রাকে দেখে জড়িয়ে ধরার জন্য হাত বাড়ালো আয়ান।

-তোমার ঘুম ভেঙে গেছে?

-আরে? এটা কি হলো? তুমি টের পেলে কি করে? আমি তো একদম সাউন্ড করিনি? 

-আমি তো তোমার হার্টবিট শুনতে পেলাম--। 

-ওহো! তাই নাকি ম্যাডাম?

আয়ান মায়রাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো।

-তা ম্যাডাম এতো রাতে এখানে কি করছেন একা একা? হুম?

-ঘুম ভেঙে গেছে হঠাৎ। তাই---।

-তাই বলে একা একা আসতে হবে? আমাকে ডাকা যেত না? হুট করে ভয় পেতে যদি?

-তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে?

-একা একা আপনি বোর হচ্ছিলেন না ম্যাডাম?

-না তো। একা কোথায়? ওই দেখো কি সুন্দর চাঁদটা আকাশে?

-হুম। সেটাই একা কোথায়। আমাকেও আষ্টেপৃষ্টে নিজের গায়ে জড়িয়ে রেখেছো?

-হুম?

-এই যে শুধু আমার শার্টটা পড়নে তোমার--। শার্টটা যেন একেবারে নিজের মধ্যে তোমাকে আঁকড়ে নিয়েছে। একদম আমার মতো---।

-না মানে---।

-হুম হুম। মানে কি?

-তোমার শার্টটাই হাতের কাছে পেলাম---। 

-হুম হুম---। বুঝি তো। আমাকে আদর করতে লজ্জা পায় বউটা। কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে সেই আমাকেই নিজের দিকে টানা হয় তাই না ম্যাডাম?

-কি সব বলো? তোমার শার্ট কি আমার পড়া বারণ?

-উহু--। একদম না। আমি তো বলছি। এভাবে আমি ঘুমিয়ে থাকতে না পরে আমার সামনেই তো পড়া যায়--। তাহলে আমিও একটু---।

-তুমি যাও তো! ঘুমাও--।

-এখন তো ঘুম আসবেই না ম্যাডাম। আমার শার্টটা আমার বউকে এভাবে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে সেটা দেখে কি আর ঘুম আসে বলো? আমার বউকে এখন আমিও এভাবে নিজের মধ্যে লুকিয়ে না ফেললে তো হবে না---। 

-আরে? কি করছ?

আয়ান মায়রাকে ঘুরিয়ে বারান্দায় দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। মায়রা আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ান ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে মায়রার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে শার্টের একদম উপরের বাটনটায় হাত দিলো। 

-কি করছ?

-এই শার্টটার সাহস দেখেছো? আমার বউকে আমার সামনে এভাবে জড়িয়ে আছে? মানি না আমি। আমার বউয়ের গায়ে আমি এভাবে লেপ্টে থাকবো। এভাবে আমার বউটাকে আমি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখবো। এক চাদরে বন্দী হয়ে থাকবো দুজনে। আর পাড়ি জমাবো সুখের সাগরে। এই শার্টটা খোলো এখন। খোলো----।

-আরে? তুমি পাগল হয়ে গেছ? এটা তোমার শার্ট। এটার সাথে তোমার কম্পিটিশন হয়?

-হয় হয়---। তোমাকে যেটার কারণেই ছুঁতে পারবো না সেটার সাথেই আমার কম্পিটিশন। এখন আপাতত এই শার্ট তোমার গায়ে আমি মানবো না--। একদমই না। 

-উফফফফ। আমি ঘাট হয়েছে জনাব আপনার শার্ট পড়ে। আমি এখনই চেইঞ্জ করে শাড়ি পড়ছি--।

-নাহ নাহ নাহ। কিচ্ছু পড়া লাগবে না। বলছি না? এটাও খুলে ফেলবো-----।

-আরে?

মায়রা আর কিছু বলার আগেই আয়ান একহাতে মায়রার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে অন্য হাতে মায়রার মুখটা তুলে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। মায়রা লজ্জায় লাল হয়ে চোখ বুজে আয়ানের গলা জড়িয়ে ধরলো।  আয়ান একটু পরে সরে এসে মায়রাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বিছানায় এনে নামালো। মায়রাকে বুকে জাপটে ধরে কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আলতো করে।

-বলেছিলাম না এমন হুটহাট আক্রমণ চলবে সবসময়? আর তোমার প্রতিটা অঙ্গে অঙ্গে থাকবে আমার ঠোঁটের স্পর্শ। আমি ছাড়া আর কিছু তোমার এই মোলায়েম শরীরে এ্যালাউড না। একটা সুতাও না। বুঝসো? সো এই শার্টটাও না। 

মায়রা কেঁপে উঠে চোখ বুজে নিতেই আয়ানের হাত চলে গেল মায়রার গায়ের শার্টটায়। বহুদিনের ব্যস্ততা আর অভিমান ভুলে আজ কথা হবে দুজনের ঠোঁটে ঠোঁটে, ভালোবাসার পরশে। রাগ, মন খারাপের পালা শেষ হয়ে আরো গভীর বন্ধনে জড়াবে দুজন। কথা হবে নিঃশ্বাসের উষ্ণতায় আর ভালোবাসার পরশে। আর হারিয়ে যাবে কোন এক অসীম ভালোবাসার জগতে৷ যেখানে ভালোবাসার বিপরীতে থাকবে শুধুই ভালোবাসা। আর পাগলামির বিপরীতে আরেক গুচ্ছ পাগলামি ভরা ভালোবাসা।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।