তখনি ইউসুফ একটি মেয়েকে নিয়ে প্রবেশ করে সদর দরজা দিয়ে। কুহু তখন অদ্রিকে নিয়ে নিচে নামছিল। কুহু আর অদ্রি সেইম রঙ্গের, সেইম ডিজাইনের গাউন পড়ে এক সাইড তরে চুল বেঁধেছে। সবাই তাদের দিক তাকিয়ে। কিন্তু ইউসুফ? সে ব্যস্ত সেই মেয়েটির সাথে। মনটা খারাপ হলো কুহুর। মেযেটি তার থেকে ইম্পর্টেন্ট একটি বার যে তাকিয়ে দেখলো না তাকে? তার রাগ লাগচ্ছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে রাগ দমাতে চাইছে। এ মুহূর্তে ইউসুফের মাথা বাড়ি দিতে ইছে করছে! খুব জোড়ে স্বরে। কুহু ইচ্ছে দমালো! ইউসুফে ঠিক উল্টো হেটে চলে গেল। ইউসুফ তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না? ভেবেই বুকে মুচরে কান্না ছিটকে আসতে লাগলো। তাও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে দাঁড়িয়ে রইলো তিথির সাথে। আড় চোখে বার বার ইউসুফকে দেখে যাচ্ছে সে। আর তিথির কথায় হু হা উত্তর দিচ্ছে। এর মাঝে ইউসুফের সাথে চোখাচোখি হলো। কুহু খুশিতে হাত নাড়ালো। ইউসুফ সুপ্ত ভাবে তা এড়িয়ে গেল। কুহুর মনে এবার অভিমানের গ্লানিতে ভরে গেল। নিজেকে ছোট মনে হলো তার। কুহু ঠিক করলো যতক্ষণ আছে আর জ্বলাবে না, না আর তাকাবে, সে থাকুক নিজের মতো! কিন্তু পাড়লো না সে আড় চোখে আবার তাকালো। মেয়েটি এবার ইউসুফের হাত জড়িয়ে ধরে আছে। দেখেই চোখ কঁপালে তুলে ফেললো কুহু।মনে মনে ভাবতে লাগলো,,
--" ইউসুফের সাথে এ মেয়েটির ইটিশ পিটিশ নেই তো? তাহলে আমার কি হবে?? এ জন্যই কি ইগনোর করছে সে আমাকে? আমার আর তার মাঝে এখন এ মেয়েটি ঢুকে গেছে বলে? ইউসুফ ভাই তাই আমাকে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে? কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে? আর আমি আসার পর থেকে আমার সাথে হাসাতো দূর ভাল করে তাকিয়ে কথাই বলে না। যাই হোক উনি যেহেতু এ মেয়ের সাথে হেপি! সো আর কি করার? তাদের পথের কাঁটা না হওয়াই ভালো।"
ছোট শ্বাস ছাড়লো। কুহুর মুখে কালো মেঘে ছেয়ে গেল। কোনো কিছুই ভাল লাগচ্ছে না তার। এখান থেকে ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে যাবে না। এখানেই থাকবে। নিজের সকল স্বপ্ন এখানেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে যেতে দেখবে।
--" কায়া দেখো কে এসেছে!"
পিছন থেকে প্রিজমের কথা শুনে তার দিক ঘুড়তেই, হাসি হাসি মুখে ডাঃ আশিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কুহু। সে চাপা হেসে বলল,,
--"হাই ডাঃ আশিক! কেমন আছেন?"
ডাঃ আশিক হেসে বলল,
--" আম ফাইন ডাঃ কায়া! আপনি কিন্তু এখানে এসে আমাদের ভুলেই গিয়েছেন। না কোনো খবর না কিছু? রাজশাহী আসচ্ছেন তো? "
কুহু মলিন হাসলো। বলল,,
--" জি ডাঃ আশিক। কাল সকালেই রওণা হবো!"
--" ওহো দ্যাটস গ্রেট। কাল আমিও ফিরত যাবো। আপনারা চাইলে আমার সাথে যেতে পারেন পুরো গাড়ি খালি আমার!"
ডাঃ প্রিজম হাসলো বললো,,
--" ডাঃ আমি ওল রেডি আমার গাড়ি খবর দিয়েছে ওন দ্যা ওয়ে। আপনি বরং কায়াকে নিয়ে যান। সেই সুবাধে আমি আর জয়ীতা আলাদা টাইম স্পেন্ড করতে পারবো! তাই না জয়ী!"
জয়ীতা লাজ্জা পেল।বলল,,
--"যাহ্!"
--" কই যাবো তোমায় ছাড়া? জয়ী বেবি? আরে আরে কই যাও? দাড়াও?"
জয়ী আর দাঁড়ালো না। লজ্জায় লাল হয়ে পালালো। তার পিছনে প্রিজমও ছুটলো। এদের কান্ডে হাসলো কুহু আর আশিক। তারপর পিনপতন নিরবতা। নিরবতা কাঁটিয়ে প্রথম কথা পাড়লো আশিক। বলল,,
--" যাবেন তো? মিস কায়া!"
কুহু কিছু বললো না। সে এখন দোনামোনায় পড়লো। তখনি পিছনে চোখ পড়লো কুহুর। ইউসুফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে আছে তাদের দিক। কুহু সাথে সাথে বুদ্ধি খেলে গেল মাথায়।ইউসুফকে জব্দ করার । ইউসুফকে জালানোর জন্য চোখ মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,
--"অফকোর্স! ডাঃ আশিক! এটা আমার সৌভাগ্য! আপনার সাথে যাবো বলে কথা? এত বড় ডাক্তার ওফার করছে, এ সুযোগ কেই বা হাত ছাড়া করবে বলুন?"
আশিক লজ্জা পেল। তখনি মেসদাক মাইক হাতে দাঁড়িয়ে পড়লো হলে সবার মধ্য বিন্দু হয়ে। সবাইকে তার দিক আকর্ষণ করে বলল,,
--" হে গাইজ। জানি সবাই বোরিং হচ্ছে। অনেকই হয়তো ঝিমিয়েও যাচ্ছেন। তার হতে দিচ্ছি না। চলুন সবাই মিলে পার্টিটা ইঞ্জয় করি। সবাই সবার পার্টনার নিয়ে নেমে পড়ুন ঝটপট মাঠে। এখুনি শুরু হবে কাপেল ডান্স। সো সময় নষ্ট না করি! লেটস ডেন্স..!"
মেসদাক সরতেই লাইট ওফ হয়ে গেল। সাথে জ্বলে উঠলো চারিদিক লাল নীল পার্টি লাইট। এতে একে নেমে পড়লো সবাই তার পার্টনারের সাথে। কুহু পাশ থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিল। ডাঃ আশিক তার কাছে এসে হালকা গলা ঝেড়ে হাত বাড়িয়ে বলল,,
--" কেন আই!"
গান বাজতে শুরু করলো তখন,,
Dil ibaadat kar raha hai,
dhadakane meri sun
Tujhako main kar loon haasil
lagi hai yahin dhun
Jindagi ki shaak se loon
kuchh haseen pal main chun
Tujhako main kar loon haasil
lagi hai yahin dhun
কুহু না করতেই যাচ্ছিল। সামনে ইউসুফকে ড্রিংকিং এরিয়াতে দেখতে পেলো। ইউসুফ বিয়ারের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর কুহুর দিক রাগী রাগী চেখে তাকিয়ে আছে। এই বুঝি চোখের আগুনে ঝলসে পুড়ে ছাই করে দিবে। কুহু শুকনো ঢুক গিললো। সাহস নিয়ে আশিকের হাতে কাঁপা কাঁপা ভাবে তার হাতটি রাখলো। এবং ডান্স ফ্লোরে নেমে পড়লো তারা।
এদিকে কুুহুর এমন কান্ডে রাগে ফেটে পড়লো ইউসুফ। হাতে থাকা গ্লাসটি দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙ্গে ফেললো। টুকরো টুকরো হয়ে মাটি পড়লো গ্লাসের অংশ।সাথে সাথে ইউসুফের হাত থেকে ফিরিঙ্গি মেরে রক্ত বের হয়ে ফ্লোরে বন্যা বয়ে গেল। দূর থেকে এমন কান্ড দেখে মিশু এগিয়ে এলো। আজি এসেছে সে। কুহুর প্রতি বিন্দু ফুঁটাও রাগ তার কমেই নি। সে ইউসুফের হাত দেখে বিচলিত হয়ে গেল। নিজের রুমাল দিয়ে ইউসুফের হাতে পেচাতে পেচাতে বলল,,
--" ছোট ভাইয়া? এ কি করলে তুমি? সামণ্য ফালতু মেয়ের জন্য নিজের শরীরে ক্ষত করে বসলে? কেন ভাই? যে মেয়ে তোমার সামনে অন্য কারো হাত ধরে নাচতে পারে সে কি তোমাকে আদো ভালবেসেছো? বলো? ছাড়ো এবার তাকে? ভুলে যাও! তুমি রুবাইয়াৎকে দেখ কত সুন্দর সব দিক দিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মাঝে বন্ডিং ও ভাল হয়ে গেছে তোমার! তুমি কুহুকে ভুলে যাও ভাইয়া!"
মিশুর কথা কতটুকু কানে তুললো বুঝতে পাড়লো না মিশু। মনে মনে দোয়া করতে লাগলো এক ধাক্কায় বের করে দিক এই কুহুকে। ওর জন্য ওর বাবা আজ সাথেই নেই তার! ক্ষমতা থাকলে আগুন ধেড়িয়ে দিতো গায়ে তার।
ইউসুপ রুবাইয়াৎ এর কাছে এগিয়ে গেল। কিছু বুঝার আগেই তাকে টেনে ডান্স ফ্লোরে আনলো। রুবাইয়াৎ খুব খুশি হলো। সাথে লজ্জাও পলো। ইউসুফ সে দিকে কোনো পাত্তা না দিয়ে ডান্স করতে লাগলো তারা। কিন্তু ইউসুফে তীর্যক নযর কুহুর দিক। কুহু ইউসুফকে ডান্স ফ্লোরে দেখে ভয় পেয়ে যায়। সাথে সেই মেয়েটিকে দেখে মন খারাপ করে ফেলে সে। কিন্তু আড় চোখে যতবার তাদের দিক তাকিয়েছে ইউসুফের ভয়ঙ্কর চাউনিতে চুপসে গেছে। ডান্সের এক পর্যায় পার্টনার এক্সচেঞ্জ করা হলো। কুহু ঘুড়তে ঘুড়তে গিয়ে পড়ল ইউসুফে বুকে। কুহু ইউসুফের দিক তাকাতেই ভয়ে চোখ-মুখ শুকিয়ে গেল। ভয়ে কাঁপতে লাগলো সে। ইউসুফ তখন কুহুকে খুব শক্ত করে চেপে ধরে পিছনে ঘুড়িয়ে ফেলে। কুহু পিঠ এসে ঠেকে তখন ইউসুফের বুকে। ইউসুফ তখন কুহুর কোমরে চেপে ধরে আছে শক্ত করে। কুহুর ব্যথায় যেন মরে যাচ্ছে! তখনি ইউসুফ কুহুর কানের মুখ নিলো। শরীর শিড়শিড় করে উঠলো। চোখ বুঝে নিলো সাথে সাথে। ইউসুফ তখন হিসহিস করে বলল,,
--" এতো সাহস ভাল না। ছেড়ে রেখেছি তাই বলে এই নয় যে উড়ার অনুমতি পেয়েছিস..! এতো সাহস পেলি কিভাবে? হাউ..!"
কুহু কেঁপে উঠলো ভয়ে। অনেক বছর পর এমন ভয়ঙ্কর রূপ কুহু দেখবে ভেবেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। সে তো ভেবেছিল ইউসুফকে জ্বালাবে। এখনতো এখানে পাশাই উল্টে গেল। ভয়ে এবার কুহু কেঁদেই দিল।তখনি ইউসুফ বলল..!
—————
--"এখন কাঁদচ্ছিস কেন? পরপুরুষদের সাথে রঙ্গো লিলা করার সময় মনে ছিল না?"
কুহু এবার তপ্ত আগুনের মত জ্বলে উঠলো। বলল,,
--" আমি যা ইচ্ছে করবো! তাতে আপনি বলার কে? আর কিসের অধিকার দেখাচ্ছেন এতো? আমি রঙ্গ লিলা করি আর যাই করি! সেটা আমার ব্যাপার আপনি জান আপনার সেই সো কোল্ড রুবাইয়াৎ য়ের কাছে।"
ইউসুফ এবার ঘটনা ধরতে পড়ে হাসলো। কুহুর হাত ধরে ডান্স ফ্লোর থেকে নিয়ে বাগানের দিক চলে এলো।এখনোও খুব সুন্দর লাইটিং করা ফেরি লাইট দিয়ে। কুহু হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। সে রাগে বলতে লাগলো,,
--" ফালতু লোক। দিন দিন ভাষার অবনিত ঘটছে! সে আবার এমপি।নিজে রঙ্গ লিলা করে সেটা কিছু না আমি করলেই দোষ। হুহ। হাত ছাড়ুন! ছাড়ুন বলছি! নয়তো খবর আছে আপনার!"
ইউসুফ বাগানের মাঝবরাবর এসে কুহুকে ছেড়ে দিল। হেসে বলল,,
--" কটার খবর?!"
কুহু বিরক্তি নিয়ে দু হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে রইলো। ইউসুফ কাঁধে আলতো ভাবে হাত রেখে বলল,,
--" রিভেঞ্জ নিছিলে? হুম!"
কুহু কিছু বলল না অন্য দিকে তাকালো! ইউসুফ আবার বলল,,
--"ওদিকে কি? লুক এট মি? আমি এখানে!"
কুহু তবুও তাকালো না। তার মনে এখন একগাদা অভিমান ভরা। এতদিনে একটি কথাও বলে নি আর আজকে ভালবাসা উতলে পড়চ্ছে। বলবে না সে কথা..!
ইউসুফ এবার ধমক দিয়ে বলল,,
--" কি ব্যাপার কিছু বলছিস না কেন?"
কুহুর হেলদুল হলো না। এতো দিনের রাগ অভিমান কান্না হয়ে বয়ে পড়তে চাইছে। সে চোখ মুছলো। ইউসুফ বলল,,
--" আরে পাগলী কাঁদচ্ছিস কেন? "
অভিমানের সুরে বলল,,
--" তাতে আপনার কি? "
--" অনেক কিছু! কলিজা পুড়ে আমার! "
--" মিথ্যা কথা! এমপি সাহেব আপনি মিথ্যা বলা শিখে গেছেন!"
--" কুহু সত্যি বলছি!"
কুহু খেয়াল করলো ইউসুফ একটি বারো বাবুইপাখি বলে সমর্থন করলো না তাকে। এমন কি আসচ্ছে পর থেকেও করে নি। কুহুর মন আরো ভারী হতে লাগলো। বলল,,
--" হে দেখছি কেমন পুরছে মন আপনার।"
ইউসুফ অসহায় কন্ঠে বলল,,
--" তুই জানিস কুহু তোকে কতটা মিস করেছি আমি! মরে মরে বেঁচে ছিলাম আমি। কিন্তু তুই? ফেলে চলে গেলি আমায়!"
--" আমি নিজেও সুখে ছিলাম না। আপনাকে ছাড়া। এখানে এসে ভেবেছিলাম সব মান অভিমান, দূরত্ব দূর হবে। কিন্তু আপনি? প্রতিবারের মতো আপনারটা দেখলেন। নিজের সব রাগ আমার উপর ঢাললেন। দূরে ঠেলে দিলেন। আমাদের মাঝে অদৃশ্য দেয়াল বানিয়ে দিলেন।একটি বার ভেবেছিলেন? আমি কেমন ছিলাম? আমার কষ্ট কি হয় নি? কিন্তু না আপনি নিজের টা ধরে বসে। সব সময় নিজের রাগটাকে প্রাধান্য বেশি দেন আপনি। সামনের ব্যক্তিরও কিছু বলা কওয়ার আছে তা তো মানতেই নারায আপনি।তো ঠিক আছে বসে থাকুন আপনি! আমি কাল চলে যাবে! ভাল থাকবেন। আসি!"
বলে কুহু ভিতরে চলে গেল।নিজের সকল রাগ, অভিমান ঢেলে দিলো কুহু আজকে। এদিকে ইউসুফ চুপ করে রইলো। আকাশের দিকে তাকাতেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো তার। সত্যি তার বাবুইপাখি যে তার মতোই কষ্টে ছিল। সে শুধু তারটাই দেখে গেল। কি করবে এখন ইউসুফ? তার বাবুইপাখির রাগ কিভাবে ভাঙ্গবে সে...!যেভাবেই হোক ভাঙ্গাবে। আর যেতে দিবে না দূরে। দরকার পড়লে বেঁধে রাখবে তাকে। ভেবেই মলিন হাসলো ইউসুফ..!
বিড়বিড় করে বলল,,
--" এবার আমার পাগলামো দেখ বাবুইপাখি! "
কেক কাটা শেষ হলো। সকলকেই কেক খাওয়ানো হলো। অদ্রি তো সেই খুশি হয়েছিল তার বারবি কেক দেখেই। সে তার বন্ধুদের সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত। ভাবি তার সাথে দাড়িয়ে। তিথি তার বাবু কুহুর কোলে দিয়ে হাত ধুতে গেছে। কুহু কথা বলছে বাবুর সাথে। বাবু রিপিট বু বু করছে। তা দেখে কুহু হাসচ্ছে।তখনি গিটারের টুং টাং শব্দ হতেই সেদিকে তাকালো।ইউসুফ একটি উঁচু চেয়ারে বসে আছে। তার হাত গিটার। কুহু অবাক হয়ে তাকালো ইউসুফের দিক। ইউসুফও তাকিয়ে কুহুর দিক..!গাইতে লাগলো,,
শুধু তোমায় ঘিরে,
শুধু তোমায় ঘিরে,
সিঁদুর রাঙা মেঘ করেছে দূরে
শুধু তোমার ছায়া মেঘের উপর
ঢেউ খেলে রোদ্দুরে।
অভিমানের আড়ি কেটে,
কোথায় তুমি যাচ্ছ হেঁটে
হৃদয়ের চিরকুটে তুমি খুব ডানপিটে।
আমি তোমার মান ভাঙাবো,
ভালোবাসার চোখ রাঙাবো,
মিষ্টি কোনো গান শোনাবো
গলার নরম স্বরে।
শুধু তোমায় ঘিরে,
শুধু তোমায় ঘিরে,
সিঁদুর রাঙা মেঘ করেছে দূরে
শুধু তোমার ছায়া মেঘের উপর
ঢেউ খেলে রোদ্দুরে।
আনমনে আলতো করে
হাত ছোঁয়াবো মুখে,
তোমার চোখে জল গড়াবে
একটুখানি সুখে।
অভিমানের আড়ি কেটে,
কোথায় তুমি যাচ্ছ হেঁটে
হৃদয়ের চিরকুটে তুমি খুব ডানপিটে।
আমি তোমার মান ভাঙাবো,
ভালোবাসার চোখ রাঙাবো,
মিষ্টি কোনো গান শোনাবো
গলার নরম স্বরে।
শুধু তোমায় ঘিরে,
শুধু তোমায় ঘিরে,
সিঁদুর রাঙা মেঘ করেছে দূরে
শুধু তোমার ছায়া মেঘের উপর
ঢেউ খেলে রোদ্দুরে।
আলগোছে আঁকড়ে ধরি
মুখ লুকানো হাসি,
তোমার বুকে আছড়ে পড়ি
আমি অহর্নিশি।
অভিমানের আড়ি কেটে,
কোথায় তুমি যাচ্ছ হেঁটে
হৃদয়ের চিরকুটে তুমি খুব ডানপিটে।
আমি তোমার মান ভাঙ্গাবো,
ভালোবাসার চোখ রাঙ্গাবো,
মিষ্টি কোনো গান শোনাবো
গলার নরম স্বরে।
শুধু তোমায় ঘিরে,
শুধু তোমায় ঘিরে,
সিঁদুর রাঙা মেঘ করেছে দূরে
শুধু তোমার ছায়া মেঘের উপর
ঢেউ খেলে রোদ্দুরে।
কুহু কেঁদে দিলো। এক ছুটে রুমে চলে আসলো। দরজা বন্ধ করে অঝড়ে কেঁদে চলল।
______________________________
পরের দিনও কুহুর যাওয়া হলো না। যাওয়ার আগেই কি হুলুস্থুল কাণ্ড বাজিয়ে দিয়েছে ইউসুফ। সকলের চোখে ছানাবড়া। ইউসুফ এমন টিনেজারের মতো কাজ করবে কেউ ভাবে নি। সকাল সকাল কবর খানার ইমাম এসে হাজির। সাথে এক কালো কোট পড়া উকিল। এদের দেখেই কুহুু ভয়ে সিটিয়ে গেছে।কি হতে যাচ্ছে বুঝতে পরেই গলা শুকুয়ে কাঠ তার। বাড়ির সবাই তখন অবাক! ইউসুফ কুহুকে টেনে এনে সোফায় বসালো। সাথে ইউসুফ বসে পড়ল গা ঘেষে।থমথমে গলায় বলল,,
--" শুরু করুন!"
কুহু অজানা ভয় পাচ্ছে। হাত পা কাপচ্ছে।ইউসুফ হুট করে এমন কিছু করবে সকলের ধরণার বাহিরে ছিল। তারতো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু সে পাচ্ছে না।কেন পারছে না? কি সমস্যা আমার? কিছুই মাথায় খেলছে না। আমার ভাবনার মাঝেই ইমাম বললেন,,
--" বাবা কবুল বলুন!"
--"কবুল, কবুল, কবুল!"
ইউসুফ নির্বিকার ভাবে গম্ভীর কন্ঠে তিন বার বলে দিলো ইউসুফ। কুহু যেন বিষম খেলো। বাকি সবাই হাসতে লাগলো। রাহুল ভাই বলে উঠলো,,
--" ভাই আস্তে বল! ট্রেন ছুটে যাচ্ছে না তো!"
কিন্তু ইউসুফের মুখে বুলি নেই সে চুপ করে আছে। থমথমে তার মুখ। ইমাম এবার কুহুকে বলল,,
--" মা কবুল বলুন!"
কুহু চুপ। তার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না। সব কথা দলা পাকিয়ে গিট্টু লাগিয়ে বসে আছে কন্ঠোনালীর মাঝবরাবর। আর চোখের পানি যেন ঝড়ণার পানির মতো উপচে পড়চ্ছে। নিজের উপর নিজেরি রাগ চেপে যাচ্ছে। কুহুকে এভাবে বসে কাঁদতে দেখে ইউসুফ দাঁত চেপে বলল,,
--" কি হলো? বলছিস না কেন কিছু? তারা এখনে সারা জীবন বসে থাকবে? স্পিক কুইক লি? "
কুহু তাও কিছু বলতেই পারছে নাম উল্টো ভয় পেয়ে নাজেহাল তার।ইউসুফ আবার ধমকে উঠলো। কুহু থর থর করে কেঁপে উঠলো। তখনি বড় মামি এসে বসলো কুহুর পাশে। কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে আদরের সুরে বলল,,
--" কিরে মা! বল?দেখ তোদের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। "
কুহু কান্নার জন্য কেঁপে কেঁপে উঠছে। বড় মামির কথায় অসহায় ফেইস করে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,,
--" আ..সঁ..চ্ছে না।"
বলে আবার কান্না করতে লাগলো! ইউসুফের যেন এবার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেল।রাগ আরো বাড়লো। রাগের ঠেলায় কুহুকে সবার সামনেই ঠাটিয়ে এক চর মারলো। সাথে সাথে কান্না বন্ধ কুহুর। সে চেঁচিয়ে বলল,,
--" কবুল বল!একদম নাটক করবি না এখন! কোনো হিন্দি সিরিয়াল চলছে না এখানে"
কুহু কম্পন জড়িত কন্ঠে বলল,,
--" ক..বু..ল! "
ইউসুফ কুহুর হাত চেপে ধরে বললো,,
--"আবার বল!"
--"ক..বু...ল!
--" আবার"
--"কবুল"
বলেই বড় মামিকে ধরে হু হু করে কেঁদে দিল। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ইউসুফের। সে গট গট সাইন করে কুহুর দিক এগিয়ে দিলো। কুহুর তখন বেহাল অবস্থা। তাই কুহুর আঙ্গুল উচিয়ে টিপ সই দিয়ে দিলো।
কুহু আর ইউসুফের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল। বাসার সবাই কি খুশি। ছোট মামি মিষ্টি নিয়ে হাজির। সকলকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। ইউসুফ কাজি আর উকিলকে বাহির পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেছে। কুহু এখনো ফুপাচ্ছে।কেন ফুপাচ্ছে সে নিজেই জানে না। কেন এমন করলো তাও জানা নেই তার।