৩৫!!
রাহাত ড্রইংরুমে এসেই দেখলো মিহান, দিয়া আর মা একেবারে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিয়েছে। রাহাত মিহানকে নিজের গাড়ির চাবিটা ধরিয়ে দিলো।
-গাড়িটা নিয়ে যান ভাইয়া-। কতদূর যেতে হবে-।
-আরে!
-না ভাইয়া--। প্লিজ না করবেন না।
মা আর ভাইয়া ভাবি বেরিয়ে যেতে রাহাত গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেল। মায়া বিরক্ত হয়ে রান্না ঘরে গিয়ে কাজ করতে লাগলো। এই লোকটা পুরোটা দিন চোখের সামনে ঘুরঘুর করবে, ভাবতেই রাগ লাগছে মায়ার। কেন যে মরতে মায়ের সাথে গেল না সেটা ভেবে নিজের উপরও রাগ লাগছে প্রচন্ড। কিন্তু একবার যাবো না বলে পরে যেতে চাইলে মা নিশ্চয়ই সন্দেহ করতো! হয়তো জানতেও চাইতো কি হয়েছে। কিন্তু রাহাতের এই কথাগুলো কি করে মাকে বলতো মায়া? আর বলার পরই বা কি হতো! মা বা ভাইয়া কেউ কি রাহাতকে ছেড়ে কথা বলতো! কত অপমান করতো মানুষটাকে! সেটা মায়া কি করে সহ্য করবে! যতই রাগ করে চলে আসুক না কেন মানুষটাকে তো সে আজও ভালোবাসে! সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। ইভেন নিজের জীবনের চেয়েও বেশি হয়তো---।
-এই? মায়াবতী? আঙুলে কি হয়েছে?
-হুম? তুমি----?
-তোমার আঙুল কেটে রক্ত পড়ছে--।
-হুম? আরে! খেয়াল করি নি---। তুমি এখানে কি করো? যাও জার্নি করে এসেছো না এতোটা রাস্তা--? ঘুমাও।
-মাঝে মাঝে তুমি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলো--। বুঝসো?
-যাও তো। ঘুমাও--। আর এই একটু কাটায়, এইটুকু রক্ত ঝড়লেই বা কি হবে? এর চেয়ে কতো বেশি রক্তপাত হচ্ছে বুকের ভেতরে--। সেটা তো কেউ দেখতেও পায় না--।
-মায়া?
-যাও তো এখন--। হাত ছাড়ো--। রান্না বাকি আমার---।
রাহাত এক ছুটে বড় ঘরটার দিকে চলে গেল। মায়া পাশে রাখা জগ থেকে একটু পানি ঢেলে হাতটা ধুয়ে নিল। এতটা অন্যমনস্ক ছিল যে আঙুলটা এতোটা কেটেছে টেরই পায় নি ও। এখন পানি লাগায় জ্বালা করছে প্রচন্ড। শাড়ির আঁচলে আঙুলটা ধরে রক্ত পড়া বন্ধ করার চেষ্টা করছে এমন সময় রাহাতের হাতের স্পর্শ পেল মায়া। মায়া মুখ তুলে দেখলো রাহাত তুলোয় সেভলন লাগিয়ে মায়ার আঙুলে লাগানোর জন্য বাড়াচ্ছে। মায়া আঁতকে উঠে হাতটা টেনে নেয়ার চেষ্টা করলো। রাহাত বিরক্ত হয়ে মায়ার মুখের দিকে তাকালো।
-মায়া? এতো লাফালাফি করছো কেন?
-এমনিতেই বড্ড জ্বালা করছে। আবার সেভলন! না না না--। জ্বালা করবে আরো--।
-মায়া? নড়ো না বলছি না? ব্যান্ডেজ করে দিবো। আর সেভলন না দিলে ইনফেকশন হতে পারে--।
-না নাআআআ--। আমি সেভলন লাগবো না-।
-বেশি কথা বলবা সেভলন খাওয়াই দিবো বলে দিলাম মায়াবতী---। চুপ করে বসে থাকো---।
মায়া চুপ হয়ে গেল। মনে মনে ইচ্ছে মতো গালি দিচ্ছে রাহাতকে। ফাজিল লোকটা একটুও শান্তি দেয় না। এমনিতে তার কথা চিন্তা করতে করতে হাত কেটেছে আর সে এখন সেভলন দিয়ে আরো বেশি জ্বালা দিচ্ছে। খারাপ লোক একটা। রাহাত মায়ার ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা মানে কাটা আঙুল সেভলন দিয়ে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। তারপর আলতো করে ব্যান্ডেজে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-বেশি কষ্ট হচ্ছে মায়াবতী?
-এ আর কি কষ্ট? এর চাইতেও বেশি কষ্ট নিয়ে ঘুরতে হবে আজীবন আমাকে--। সরো---? রান্না করি---।
-কাটা হাত নিয়ে রান্না করতে হবে না--। এসো?
-হুহ---। রান্না করতে হবে না--। বললেই হলো আর কি--। না খেয়ে থাকবে দুপুরে?
-তোমার কষ্ট কম করতে না খেয়ে সারাদিনটাও থাকতে পারবো---।
-ইশ-! পরে খোঁটা দিতা যে না খাইয়ে রেখেছি-। হুহ---। সরো তো?
-মায়াবতী? আচ্ছা যাও---। তুমি বলে দাও--। আমি রান্না করছি---।
-আহারে! ভালোবাসা দেখাইতে আসছো! জীবনে মাটির চুলা দেখেছ তুমি? যে এখন রান্না করবা বলতেছো?
-তোমার জন্য আমি সব করতে পারি মায়াবতী-। জাস্ট আরেকটা সুযোগ দিয়ে দেখো--। প্লিজ?
-আচ্ছা আচ্ছা। তোমাকে রান্না করতে হবে না--। তুমি শুধু মাছে মসলাটা মেখে দাও--। আমি নিজে বাকিটা করে নিবো---।
রাহাত খুশি হয়ে মায়ার কাজে হেল্প করছে। আর মায়া কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাহাতের হাসি মুখটা দেখছে। লোকটা এমন কেন বুঝে না মায়া। এক মূহুর্ত মনে হয় মানুষটাকে বিশ্বাস করে সারাটা জীবন হাত ধরে চলা যায়। আর পরক্ষণেই সব কিছু ধোঁয়াশা হয়ে মিলিয়ে যায় অনিশ্চয়তার অতলে। মানুষটা সত্যিই কি বদলে গেছে? নাকি আবার মায়াকে কাছে টানার জন্য মুখোশ পড়েছে? কিছুই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মায়া। মায়ার সমস্ত সত্তা চাইছে রাহাতের কাছে ফিরে যেতে। কিন্তু কোথাও একটা বাঁধছে। আর সেই বাঁধাটাকে মায়া কিছুতেই উপেক্ষাও করতে পারছে না।
রান্না শেষ হতে হতে দুপুর হয়ে গেল। রাহাত বেচারা তো মাটির চুলোর তাপে গরমে ঘেমে নেয়ে একসার অবস্থা। মায়া সেটা দেখেই হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।
-আমার বেহাল দেখে মজা পাচ্ছো সুন্দরী? দিন আমারও আসবে। মনে রেখো বধূ এক মাঘে শীত যায় না--।
-হুহ---।
মায়া হাত মুখ ধুয়ে এলো পুকুর থেকে। আর রাহাত বাচ্চাদের মতো ঝাঁপাঝাপি করে পুকুরে নেমে গোসল করলো৷ লোকটার এমন ছেলেমানুষি দেখে মায়া হেসে ফেললো। এই লোকটা বাচ্চাদের মতো হয়ে যায় মাঝে মাঝে৷ যেমনটা এখন করছে৷ কখনো পানি ছিটাচ্ছে মায়ার গায়ে। আবার কখনো পানিতে ডুব দিয়ে কয়েক মিনিট পর মাথা তুলছে। শেষে প্রচন্ড খিদে পাওয়ায় রাহাত পুকুর থেকে উঠে এসেছে। নইলে তার পানিতে লাফালাফি কতক্ষণ চলতো কে জানে!
খেতে বসেও আরেকটা ভেজাল বাঁধলো। মায়ার ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা বেশ অনেকটাই কেটেছে। তার উপরে ব্যান্ডেজ করা। এই কাটা ব্যান্ডেজ করা আঙুল নিয়ে বেচারি খেতেও পারছে না৷ তার উপরে ডান হাতের এই বুড়ো আঙুল হলো এমন একটা আঙুল যেটা ছাড়া মাখিয়ে ভাত মুখে পোরা একেবারেই অসম্ভব একটা ব্যাপার। মায়ার চুপ করে থাকা দেখে রাহাত এক লোকমা মায়ার মুখের সামনে ধরলো। মায়া মুখ তুলে তাকাতেই রাহাত মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো।
-ঝগড়া ঝাটি, রাগা রাগী ব্যাপারগুলো একটু সাইডে রাখো। খাওয়া শেষ হলেও আমাকে রাগ দেখানোর জন্যও পাশে পাবে মায়াবতী--। তাই আপাতত খেয়ে নাও। প্লিজ?
মায়াকে খাইয়ে দিয়ে রাহাত নিজেও খেয়ে নিলো। তারপর দুজনে মিলে প্লেটগুলো ধুয়ে রান্নাঘর গুছিয়ে নিয়ে মায়াকে নিয়ে রুমে এলো রাহাত। ছুটির দিনগুলোতে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় নি ওদের দুজনের। তাই রাহাত চাইছে যতটা সময় পারে মায়াকে সময় দিতে। ঢাকায় ফিরার পর ব্যস্ত হয়ে গেলে হয়তো এভাবে এতোটা সময় মেয়েটাকে দিতেও পারবে না। তারচেয়েও বড় কথা হলো মেয়েটার রাগটা ভাঙাতে হলে কিছু একটা করা চাই। কি করা যায়?
-তোমার না টায়ার্ড লাগছে? তুমি ঘুমাও----।
-তুমি কি করবা?
-আমি মায়ের রুমে গিয়ে------।
মায়া কথাটা শেষ করার আগেই রাহাত মায়াকে বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে গেল বিছানায়। তারপর গায়ে কাঁথা টেনে একেবারে জাপটে ধরে রইলো বুকের ভিতরে।
-কি করছো কি তুমি?
-মায়ের রুমে কেন যাবা? আমার বউ আমার বুকে থাকবে--। কোথাও যাওয়া চলবে না---।
------------------------------
-এই মায়াবতী? ঠোঁটের কোণে হাসি নেই কেন তোমার? চোখের কোণাটা কেমন চিকচিক করছে! এই সুন্দর মুখখানাই বা এতো মলিন কেন? মনটা কি ভিষণ খারাপ? এই পরী? তোমার কষ্টগুলো বেচবে আমার কাছে? জগতের সমস্ত সুখের দামে কিনে নিবো-। প্রমিস। তোমার মনের প্রতি বিন্দু কান্নার বিনিময়ে আমার উচ্ছল হাসিটুকু নিয়ে নাও--। কখনো ফেরত চাইবো না কথা দিলাম--। শুধু একটা জিনিসই চাইবো--। তোমার ঠোঁটের সেই হাসিটা প্রতিবার দেখার জন্য তোমার পাশে থাকতে চাই। সুযোগটা দিবে? প্লিজ?
মায়া এবারো কিছু না বলেই রাহাতের বুকে মুখ ডুবিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো। আর রাহাতও কিছু না বলেই মায়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। মেয়েটাকে একটু কেঁদে হালকা হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে রাহাত। এর পর আর কখনো এমন কিছু করবে না যাতে মায়ার কাঁদতে হয়। বা এমন কিছু করবে না যাতে মায়া ভুল বুঝে ওর থেকে দূরে কোথাও চলে যায়। আর নিজের অতীতের ভুলগুলোর দিকে ভুলেও পা বাড়াতে চায় না রাহাত৷ এসব ভাবতে ভাবতেই রাহাত মায়াকে আরেকটু নিবিড় করে বুকে টেনে নিলো।
৩৬!!
পরের কয়েকটা দিন শ্বশুরবাড়িতে রাহাতের বেশ কাটলো। রাহাত, মায়া, মিহান আর দিয়া মিলে অনেক মজা করেছে এই কয়টা দিন। সবাই মিলে হাতে হাতে রান্না করেছে, রাতে বারবিকিউ স্টাইলে পার্টি করেছে, চাঁদ দেখতে দেখতে মুড়ি মাখা খেয়েছে টানাটানি করে, ভর দুপুরে পুকুরে ঝাঁপাঝাপি করেছে, মাছ ধরেছে জাল টেনে। দিয়া আর রাহাতের ছেলেমানুষিগুলো ছিল দেখার মতো। এর আগে কখনো গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য ওরা এভাবে উপভোগ করে নি। তাই হয়তো এতো উৎফুল্ল ওরা। আর ওদের দুজনের খুশি দেখে বাকি তিনটা মানুষও খুশি। মিহানের এক সপ্তাহের ছুটি নেয়াটা যেন সার্থক হয়েছে ওদের সবার খুশিতে।
তবে এতো হাসি খুশি সময়টাতেও রাহাত কিছুটা চিন্তিত। মায়ার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না মেয়েটার ভেতরে কি চলছে। রাগ করে আছে কিনা এখনো বা ঢাকায় ফিরে মেয়েটা কি করবে! এসব ভেবে ভেবে রাহাত ঢাকায় ফিরার কথাটা তুলতেও ভয় পাচ্ছে। কি থেকে কি হবে কে জানে!
ছয় নাম্বার দিন রাতে ওরা চারজন উঠানে মাদুর পেতে কুপির আলোয় ঝাল করে আমড়া মাখা খাচ্ছে আর গানের কলি খেলছে। মা অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে। তাই ওরা একটু নিচু গলায় গান করছে৷ দুটো টিম। মায়া আর দিয়া একটাতে আর রাহাত আর মিহান একটাতে। বসেছেও সেভাবে মুখোমুখি করে ওরা চারজন। মায়ার বরাবর রাহাত। আর দিয়ার বরাবর মিহান। ফার্স্ট টার্ন রাহাতদের। রাহাত মায়ার দিকে তাকিয়েই গান ধরলো।
"মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা
তুল তুল রাঙা পায়েতে ফুল ফুল বন ছায়েতে
পলাশের রঙ রাঙালো কখন
চোখে সে স্বপন আঁকে
গুন্ গুন্ গুন্ গুন্ ফিরে এলো ওই ফাল্গুন
মহুল বনে মৌ দোল দোল দোল দু নয়নে নেই ঘুম ঘুম
ছুন্ ছুন্ ছুন্ ছুন্ নুপূর বাজে কার রুমঝুম্
পথিক মেয়ে হয় চঞ্চল কাঁকন বাজে ঠুন ঠুন ঠুন
মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা"
আ দিয়ে গান ধরলো মায়া।
-"Agar Tum Mil Jao
Zamana Chod Denge Hum
Agar Tum Mil Jao
Zamana Chod Denge Hum
Agar Tum Mil Jao
Zamana Chod Denge Hum
Tumhe Paakar Zamane Bhar Se
Rishta Tod Denge Hum
Agar Tum Mil Jao
Zamana Chod Denge Hum
Agar Tum Mil Jao
Zamana Chod Denge Hum
Bina Tere Koi Dil Kash Nazara Hum Na Dekhen Ge
Bina Tere Koi Dil Kash Nazara Hum Na Dekhen Ge
Tumhe Na Ho Pasand Usko Dobara Hum Na Dekhen Ge
Teri Surat Na Ho Jis Mein...
Teri Surat Na Ho Jis Mein
Wo Sheesha Tod Denge Hum
Agar Tum Mil Jao
Zamana Chod Denge Hum
Tere Dil Mein Rahenge, Tujhko Apna Ghar Bana lenge
Tere Dil Mein Rahenge, Tujhko Apna Ghar Bana lenge
Tere Khwaabon Ko Ghenno Ki Tarha Khud Par Saja lenge
Kasam Teri Kasam...
Kasam Teri Kasam
Taqdeer Ka Rukh Mod Denge Hum
Agar Tum Mil Jao
Zamana Chod Denge Hum
Tumhe Hum Apne Jism-Jaan Mein Kuch Aise Basa Lenge
Tumhe Hum Apne Jism-Jaan Mein Kuch Aise Basa Lenge
Teri Khusboo Apni Jism Ki Khusboo Bana Lenge
Khuda Se Bhi Na Jo Toote...
Khuda Se Bhi Na Jo Toote
Wo Rishta Jod Lenge Hum
Agar Tum Mil Jao
Zamana Chod Denge Hum
Tumhe Paakar Zamane Bhar Se
Rishta Tod Denge Hum
Agar Tum Mil Jao
Zamana Chod Denge Hum
Agar Tum Mil Jao
Zamana Chod Denge Hum"
দু মিনিট চিন্তা করে মিহান গান ধরলো দিয়ার দিকে তাকিয়ে।
-"Mujhe Haq Hai
Tujhko Jee Bhar Ke Main Dekhu
Mujhe Haq Hai
Bas Yuhhi Dekhta Jaoon
Mujhe Haq Hai
Piyaaaa Piyaaaaaa
Piyaaa Piyaaa
Bole Mere Jiyaaaaa
Tumhe Haq Hai
Tumhe Haq Hai
Tumhe Haq Hai
Dhal Rahi Pighal Yeh Raat Dheere Dheere
Badh Rahi Hai Pyaar Ki Baat Dheere Dheere
Chudiyan Gun Guna Ke Kya Kahe Sajanaa
Yeh Chudiyan Gun Guna Ke Kya Kahe Sajanaa
Raat Ki Raat Jagau
Mujhe Haq Hai
Chand Poonan Ka Churaaoon
Mujhe Haq Hai
Piyaaaa Piyaaaaaa
Piyaaa Piyaaa
Bole Mere Jiyaaaaa
Tumhe Haq Hai
Tumhe Haq Hai
Tumhe Haq Hai
Kal Subah Tujhse Mein
Door Chala Jaunga
Ek Pal Ko Bhi Tujhe Bhool Nahi Paunga
Yeh Chehara, Yeh Muskaan
Ankhon Mein Bhar Ke
Yeh Chehara, Yeh Muskaan
Ankhon Mein Bhar Ke
Main Teri Yaad Mein Tadpu
Mujhe Haq Hai
Tujhse Milne Ko Main Tarsuu
Mujhe Haq Hai
Piyaaaa Piyaaaaaa
Piyaaa Piyaaa
Bole Mere Jiyaaaaa
Tumhe Haq Hai
Tumhe Haq Hai
Tumhe Haq Hai"
মিহানের গান শেষ হতেই দিয়া মিহানের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসলো। এবার দিয়ার গান গাওয়ার কথা। কি গান গাওয়া যায় ভাবতে লাগলো। আর এদিকে রাহাত আর মিহান কাউন্ট ডাউন শুরু করে দিয়েছে। ৮ পর্যন্ত গোনা হয়েছে এমন সময় রাস্তায় গাড়ির আওয়াজ শুনে সবাই চমকে উঠলো। গাড়িটা ওদের বাড়ির গেইটে হর্ন বাজাচ্ছে দেখে রাহাত আর মিহান গেইটের দিকে এগিয়ে গেল। কেউই ড্রাইভারকে চিনতে পারলো না।
-জি? কাকে চাইছেন?
-স্যার? রাহাত স্যার? আমাকে দিহান স্যার পাঠিয়েছে--।
-দিহান?
-জি স্যার--। আপনার কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছিল না--। আর এখানে পৌঁছেছেন কিনা সেটাও জানা যাচ্ছিলো না--৷ তাই---। স্যার নিজেই আসতেন --। কিসের প্রজেক্টের কাজে আটকে গেছে তাই --।
-ও আচ্ছা। আসুন ভিতরে আসুন--।
-স্যার? আমি?
-আরে সমস্যা নেই-। কাল সকালেই না হয় চলে যাবেন। আর খাওয়া দাওয়া করে নিন। একটু রেস্ট নিয়ে নিন--।
-জি স্যার---।
ড্রাইভারকে খাইয়ে গেস্টরুমে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিলো। ওদেরও আর আড্ডা দেয়া হলো না। যে যার রুমের দিকে পা বাড়াবে এমন সময় রাহাত মিহানকে ডাকলো।
-ভাইয়া? আপনি কয় দিনের ছুটিতে এসেছেন?
-আম--। সাত দিনের--। কালই ছুটি শেষ--।
-তাহলে তো কালই ফিরে যাবেন?
-বুঝতে পারছি না একচুয়েলি--। নতুন চাকরি-। মিস করলে ঝামেলা হবে---।
-হুম--। আমরা না হয় কাল চলে যাই?
-আপনি আর মায়া আরো দুটো দিন থেকে যান না হয়?
-জি আচ্ছা। দেখি ও রাজি হয় কিনা---।
রাতে রাহাত মায়াকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজলো।
-মায়াবতী? অফিসে অনেক কাজ জমা হয়ে আছে--।
-তো? আমি কি করবো? তুমি যাচ্ছো না কেন? আজব!
-তুমি চলো না??
-নাহ--। আমি আরো কয় দিন থাকবো--। ভাইয়া, ভাবি যাবে হয়তো--।
-ওকে--। এজ ইউর উইশ ম্যাডাম--।
সকালে ঘুম ভাঙতেই মায়া দেখলো মা, মিহান আর দিয়া রেডি হচ্ছে। মায়া মায়ের কাপড় গুছিয়ে দিলো।
-কি রে মায়া? তুই রেডি হয়ে নে?
-না মা--। আমি কয়েকটা দিন থাকবো এখানে। শহরে যেতে ইচ্ছে করছে না---।
পাশে থেকে মিহান হাসলো।
-সেই তো--। রাহাত ভাইয়া আছে--। সমস্যা নেই মা--।
-মানে? তোমার না অফিসে কাজ আছে অনেক?
রাহাত মায়ার কানের কাছে ফিসফিস করলো।
-সেটা ব্যাপার না। বউকে কয়েকটা দিন একা পাবো--। এই সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায় সুন্দরী?
-আমি থাকবোই না---।
-হুম হুম--। বলো মাকে? তুমি নিজেই মাকে বললে থাকতে চাও--?
-উফফ---।
মায়া রেগে গিয়ে তাকাতেই দেখতে পেল মিহান আর রাহাত দুজনেই মুখ টিপে হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে। মায়ারও বুঝতে অসুবিধা হলো এই প্ল্যানিংটা এদের দুজনের ছিল। ইচ্ছে করছে দুজনকেই চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে। সবসময় জব্দ করা লাগে এদের?
ড্রাইভারের গাড়িতে ব্যাগগুলো হাতে হাতে এগিয়ে দিলো রাহাত। সেই গাড়িতেই মা, মিহান আর দিয়া শহরের দিকে যাত্রা করলো। রাহাত বার বার করে ড্রাইভারকে কিছু একটা বুঝিয়ে দিলো। গাড়ি চোখের আড়াল হতে মায়া রুমে এলো। মাথাটা ফেটে যাচ্ছে রাগে। এই লোকটার থাকতে হলো কেন ওর সাথে! তার নাকি কাজ বেয়ে বেয়ে পড়ছে! কয়টা দিন একটু একাও থাকা যাবে না এই মানুষটার জন্য? ভাবতে ভাবতেই মায়া টের পেল কেউ পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজছে। মায়া বুঝে পায় না এই লোকটার সমস্যাটা কি! এভাবে হুটহাট এসে জাপটে ধরারই বা কি আছে?