আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অচেনা অতিথি - পর্ব ২৬ - নাফিসা মুনতাহা পরী - ধারাবাহিক গল্প


মাহাদ মোড়ে মোড়ে গিয়ে একটু নিজেই বাইক হান্ডেল করছে আর  তিতিরকে বাসার রাস্তা বলে দিচ্ছে কোন দিকে দিয়ে যেতে হবে। আর খানিকটা পথ তারপর বাসায় পৌছে যাবে তারা।

মাঝপথে ফোনে মাসেজ এল। প্যান্টের পকেট ফোনের ভাইব্রেশনে কেঁপে উঠলো। মাহাদ তিতিরকে ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে মাসেজটা দেখে আবার ফোনটা পকেটে রেখে দিল। বাসার খানিকটা দুরে মাহাদ বাইকটা ব্রেক করলো। পিছন দিক থেকে তিতিরে গালে একটা কিস♥ করে বললো," তিতির নামো।"


সুখের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসে। এই পথ চলা যদি শেষ না হত! তিতির একরাশ অভিমান নিয়ে মাহাদের বুকে নিজের শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চুপ করে রইলো। তিতিরের এমন আচরন মাহাদের ডিসিশনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে।


মাহাদ বাধ্য হয়ে বাইক সম্পূর্ন থামিয়ে তিতিরের ঘাড়ে কয়েকবার আলিঙ্গন করে বললো," সামনের গেটে রূপসা দাড়িয়ে আছে। তাই তুমি এখানে নেমে যাও। "


রূপসার কথা শুনে তিতির ঝট করে নেমে পড়ল বাইক থেকে। তারপর মাহাদের গালে ওর ঠোট দুটি চিপে ধরলো। তিতিরে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ে পড়ল। অশ্রুধার তিতিরকে বেশ ভালো করেই জানান দিল এ সুখের জল ছিল। মাহাদকে ছেড়ে দিতেই মাহাদ তিতিরকে কাছে টেনে বললো," ওখানে আসমা দাড়িয়ে আছে। ওর সাথে চলে যেও। আর ড্রেসটা খুলবেনা। আমি তোমায় দেখবো।"

মাহাদ তিতিরকে ছেড়ে দিয়ে বাইক নিয়ে দ্রুত চলে গেল।


মাহাদ চলে যেতেই আসমা এসে তিতিরে পাশে দাড়ালো। আপা শাদী মোবারক। আমার সাথে আসেন বলে তিতিরকে টেনে নিয়ে নিয়ে গেল বাসার পিছন দিকে।

♦♦♦♦

মাহাদের কথায় ঠিক। মাহাদ গেটের সামনে এসে হর্ন বাজাতেই দাড়োয়ান এসে গেট খুলে দিতেই দেখলো, রূপসা কিছুটা দুরে চেয়ার পেতে বসে আছে। মাহাদ দেখেও না দেখার ভান করে ভিতরে ঢুকে বাইক জায়গামত স্ট্যান্ড করে বাইকের চাবি হাতে নিয়ে রূপসাকে ক্রস করে যেতেই রূপসা চেঁচিয়ে উঠে বললো," কি রে আমায় দেখতে পাচ্ছিস না!"


মাহাদ চার পা পিছন  ফিরে রূপসার সামনে দাড়িয়ে বললো," আরে রূপসা তুই! তোকে তো দেখতেই পাইনি রে। 
কি আর করবো বল! চোখটা পকেটে তুলে রেখে রাস্তা চললে কি আর দেখতে পাব!"


এমন সময় আসমা তিতিরকে নিয়ে বাসার ভিতর ঢুকে মাহাদের সামনেই থেমে গেল।
মাহাদ চোখ বড় বড় করে আসমাকে ইশারা করতেই আসমা তিতিরকে নিয়ে চলে গেল।


কিরে! চোখ বড় বড় করে ওদিকে কি দেখিস বলে পিছন ফিরলো রূপসা। তারপর কিছু দেখতে না পেয়ে বললো, " ওদিকে কি দেখছিলি!"


এই ফালতু কথা বাদ দে তো! এখানে এত রাতে কেন দাড়িয়ে আছিস! আমি খুব ক্লান্ত। যা কথা হবে কাল সকালে হবে।


রূপসা কি যেন ভেবেই বাসার ভিতর দৌড় দিল। ওর মনে হল কেউ একজন বাসার ভিতর ঢুকছে। সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই ডাইনিংরুমে এসে দাড়ালো। পুরো ডাইনিং সহ দু'তলাতে যতদূর চোখ যায় সব কিছু দেখে নিল। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলনা। ততক্ষনে তিতির ওর রুমে ঢুকে গেছে আর আসমা একটা মোটা থাম্বার আড়ালে দাড়িয়ে পড়েছে।


মাহাদও প্রায় রূপসার সাথে সাথেই বাসার ভিতর ঢুকে পড়ে। বড়সড় একটা শ্বাস ফেলে রূপসাকে এড়িয়ে সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতেই রূপসা বললো," আমার কথার জবাব না দিয়ে কই যাস।"


দেখ, আমি খুব ক্লান্ত। তোর সাথে প্যাচাল পাড়ার মত আমার এত সময় নাই। নিজেও ঘুমা আর অন্যদেরও শান্তিতে ঘুমাতে দে বলে মাহাদ দেরি না করে ওর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।


রূপসা অপমানিত হয়ে আগে ডাইনিং এর দরজা বন্ধ করে দিতেই আসমা ওর নিজের রুমে চলে যায়। রূপসা আর নিজের রুমে না গিয়ে ওখানেই সোফায় বসে মাহাদের রুমের দিকে চেয়ে রইলো। যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই রাতে সে মাহাদের রুমে যাবেই। তারপর এই রূপসা তার খেল দেখাবে।


আসমা এসে কেবল বিছানায় সুয়েছে এমন সময় সাবিনা ঘুমের ঘোরে বললো," আসমা বুবু, তুমি কই গিছিলা এই রাইতে!"


মসিবতের দেখছি শেষ নাই। আসমা হাই তুলে বললো," আসমা, তোমায় কাল সকাল আটটায় ভাইজান তার রুমে ডেকেছেন। তুমি কিন্তু অবশ্যই যাবা।"


সাবিনা আসমার গায়ের উপর ঠাং তুলে দিয়ে বললো," বুবু, কাল মনে কইরা দিও।"

আসমা সাবিনার পা সরিয়ে ওর গায়ে ক্যাঁথা জড়িয়ে দিয়ে পাশ ফিরে সুয়ে পড়লো।

♦♦♦♦

তিতির সেই কখন থেকে বসে আছে। ফ্রেস হতেও পারছেনা। এমন সময় তিতিরের হাতে থাকা ফোনটি কেঁপে উঠলো। সাথে সাথে ফোনের স্কীনে চেয়ে দেখলো, মাহাদের কল।
মুহুত্তেই তিতিরের চেহারায় হাসি ফুটে উঠলো। কলটা রিসিভ করে অভিমানী সুরে কেবল কিছু বলতে যাবে এমন সময় স্কীনে ভেঁসে উঠলো, মাহাদ গোসল সেরে টাওয়াল দিয়ে ওর চুলগুলো ভালো করে মুছছে।
এই দৃশ্য দেখে তিতিরের অভিমান এক নিমিষেই উধাও। এক ধ্যানে মাহাদের দিকে চেয়ে রইলো। মাহাদের পিঠে পানির বিন্দু বিন্দু ফোটাগুলো তিতিরকে বড্ড টানছে। ঠোট দিয়ে ছুয়ে দিতে মন চাচ্ছে।


মাই নটি বউ, এতক্ষন কি দেখা হচ্ছিল হুম! মাহাদ ওর হাতের চুটকি বাজিয়ে তিতিরের ধ্যান ভেঙ্গে কথাগুলো বললো।

" মাহাদ আপনার পিঠের পানি গুলো মুছা হয়নি। আমি গিয়ে মুছে দিয়েই চলে আসবো। আমি যাই আপনার রুমে!"

" উমহু্,,, নিচে রূপসা একে ফোটর্টি সেভেনের বন্দুক হাতে বসে আছে আমার রুমের দিকে তাক করে। তাই ভুলেও আমার কাছে আসার চেষ্টা করোনা। আর রূপসা থাকা অবস্থায় খুব সাবধানে থাকবে। ও খুব চালাক মেয়ে তাই সাবধান।"

" কাছে যখন যেতেই পারবোনা তাহলে আপনার শরীর দেখিয়ে আমায় লোভ দেখানোর কোন মানে হয়! আমি ঘুমাবো। "

" ওকে, গোসল দিয়ে ঘুমাও। আমি রাখছি।"

মাহাদের কথা শুনে তিতির ক্ষেপে গেল। রাখতে বলছি বলে রাখতেই হবে! তিতির চট করে লাইন কেটে দিল।  তারপর ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে ওড়না খুলে চুলগুলো খুলতেই আবার ফোন ভাইব্রেশনে কেঁপে উঠলো।

মাহাদকে এবার উচিত শিক্ষা দেবে তিতির। শুধু দেখবে আর লুচির মত ফুলবে। কল রিসভ করে ফোনটা ওর দিকে রেখে একটু দুরে গিয়ে শরীরের একেকটা কাপড় খুলতে লাগলো। তারপর মাহাদের দিকে চেয়েই একটা পৈশাচিক আনন্দ পেল। মাহাদের চেহারা দেখার মত ছিল। মাহাদ ওর চোখগুলো রসগোল্লার মত করে তিতিরের দিকে চেয়ে আছে।

তিতির একটা একটা করে কাপড় খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে ওয়াশরুমে চলে গেল গোসল করতে। পাক্কি চল্লিশ মিনিট ওয়াসরুমে কাটিয়ে দিয়ে তিতির শুধু টাওয়াল জড়িয়ে বের হয়ে আসলো। তারপর একটা অরেঞ্জ  কালারের ট্রী শার্ট আর ধুতি পাজামা পড়ে এসে মাহাদের সামনে বসে ওর লম্বা লম্বা চুলগুলো টাওয়াল দিয়ে মুছতে লাগলো। তিতিরের চিপ বেয়ে চুলের পানি পড়ছে। এ এক অন্যরকম রুমান্টিক মুহুত্ব।


মাহাদ লম্বা একটা হাই তুলে বললো," তোমার সিনেমা দেখানো শেষ! না আরো বাঁকি আছে? যদি থাকেও তাহলে ওখানেই অফ করে দাও। এতে আমার উপর কোন আর্কষন তৈরি হবে বলে মনে হয়না। আমার নিজের উপর যথেষ্ঠ কন্টোল এবং কনফিডেন্স রয়েছে। অনেক রাত হয়েছে তাহাজ্জুদ পড়ে ফোনে এর্লাম দিয়ে সুয়ে পড়ো। তাছাড়া ফযরের সালাত মিস করে ফেলবে।"


তিতিরের ব্লক-ব্লাস্টার প্লান যে এভাবে ফ্লপ হয়ে যাবে সেটা তিতিরের কল্পনাতীত ছিল। প্লান কাজ না হওয়াতে তিতির রাগে ফুঁসে উঠলো। 
এই নামায নিয়ে একদম আপনার কাছ থেকে লেকচার শুনতে আমি রাজি নই। নিজে নামাযের ধারেকাছে যায় না সে আবার আমাকে ফতোয়া দিতে এসেছে। আমার চাইনা আপনার এই সব ফতোয়া।


তিতিরের কথা শুনে মাহাদ অত্যন্ত কষ্ট পেল। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল," তিতির, ফ্লোরের কাপড়গুলো গুছিয়ে ওয়াসরুমে রেখে আসো। যাতে কাল সকালে আসমার সামনে লজ্জিত না হতে হয়। আসমা খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে। সে সহজেই ধরে ফেলবে। আর ঐ ফুলগুলো ব্যালকুনিতে রেখে তারপর ঘুমিয়ে পড়বে।"
কথাগুলো বলেই মাহাদ কল কেটে দিল........


তিতির পরক্ষনে অনেক ট্রাই করলো কল দিয়ে কিন্তু মাহাদের আর কোন রেসপন্স পেলনা। অনেক মাসেজও করলো তবুও কাজ হলোনা।  তিতির জানে এই কথার জন্য কাল হতে হয়ত মাহাদ নিয়মিত নামায পড়বে কিন্তু যে খারাপ লাগাটা তিতিরকে ঘিরে বসেছে সেটা ও দুর করবে কি করে!

তিতির ঐ রাতেই ওর ড্রেসগুলো ধুয়ে দিল তারপর সব পরিষ্কার করে নামায পড়ে ফোনে এর্লাম দিয়ে সুয়ে পড়লো। পুরোটা দিনের ক্লান্তি দুর করে ঘুমের পথে যাত্রা ধরলো তিতির এবং খুব শীঘ্রই সে ঘুমিয়ে পড়লো।

♦♦♦♦

পরের দিন সকালে সাবিনা খুব উৎসুক হয়ে মাহাদের রুমের সামনে ঘুর ঘুর করতে লাগলো। ঠিক যখন আটটা বাজলো তখন দরজায় টোকা দিল।

"সাবিনা, দরজা খোলায় আছে, ভিতরে আয়।"

"সাবিনা টুক করে দরজা খুলেই ভিতরে ঢুকে বলল," ভাইজান,, আজ সূর্য কোন দিক উঠেছে? আন্নে এই সাত সক্কালে উঠছেন!"

" সূর্য পূর্ব দিকেই ওঠে সাবিনা! পূর্ব ছাড়া অন্য দিকে যদি উঠতে দেখতে চাস তাহলে তোরে কিয়ামত অবদি বেঁচে থাকতে হবে। আর সেটা সম্ভব না। তাই ফালতু কথা বাদ দিয়ে টেবিলের উপর তিনটা প্যাকেট আছে সেটা আমার কাছে নিয়ে আয়।"

"সাবিনা এত পেঁচানো কথা বোঝেনা কিন্তু পেঁচ লাগাইতে সে খুব পছন্দ করে। সাবিনা টেবিলের উপর থেকে তিনটি সপিং ব্যাগ নিয়ে এসে মাহাদের কাছে রাখলো। ভাইজান এইগুলা কি!"

" রুমকির বৌ ভাতে যাবিনা! তার পোষাক। তোর, আসমা আর বাঁকিটা তিতিরের জন্য। সবাইকে দিয়ে আয়। আর আমার সামনে তোরটা খুলে দেখ, তোর পছন্দ হয়েছে কিনা! তোর তো আবার যেটা সেটা পছন্দ হয়না।"


সাবিনার আর তর সইলোনা। ওর নিজের নামের সপিং ব্যাগটা খুলে চমকে উঠলো সাবিনা। এত সুন্দর জামা ওকে আজ পযর্ন্ত কেউ দেয়নি। সাবিনার চোখে কখনো পানি দেখা যায়না। আজ সে কেঁদেই দিল। ভাইজান, আপনি আরে এত ভালোবাসেন!


মাহাদ একটা মুঁচকি হাঁসি দিয়ে বলল," তুই তো অনেক ছোট!  আর আমার মেয়ের মতোও। সবাই আনন্দ করবে আর তুই করবিনা সেটা আমার চোখে একদম বেমানান। চঞ্চলতা শুধু তোকেই মানায় সাবিনা।


ভাইজান, আমি আন্নেরে কত্ত ভালোবাসি। আর আন্নে আরে নিজের মাইয়া বানাই দিলেন! এই সম্পর্কটা আর পছন্দ না।


মাহাদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল," আজ যদি ঠিক বয়সে বিয়ে করতাম তাহলে তোর মত দুই-চারটা ছেলেমেয়ে আমার থাকতো। "
আর কথা বাড়াস না। যা ওগুলো দিয়ে আয়।

সাবিনা চলে যেতেই মাহাদ উঠে পড়লো বিছানা হতে। তারপর ওর আলমারীটা খুলে খুব বড় একটা মাটির ব্যাংক বের করলো। স্কালারসীপের পুরো টাকাটা এখানে সে জমিয়েছিল। সেই ক্লাস ফাইভ থেকে যত টাকা পেয়েছে সব টাকা জমাতো মাহাদ। এরকম দুটো ব্যাংক ছিল। অন্য ব্যাংকে প্রায় টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে জমা করতো। সেটা ভেঙ্গে মাকে একটা শাড়ী আর বাবাকে একটা ঘড়ি দিয়েছিল ইন্টারমিডিয়েটে থাকতে। বাঁকি আছে শুধু এই ব্যাংক। এটারও ভাঙ্গার সময় চলে এসেছে। মাহাদ ব্যাংকটি ফ্লোরে ফেলে দিতেই ওটা ভেঙ্গে গেল। ছোট বাচ্চাদের মত হাঁসিমুখে টাকাগুলো ফ্লোরে বসে গুছিয়েই গুনতে লাগলো। এ যেন ভালোবাসার এক তৃপ্তি।

টাকা গুনে মাহাদ আরও খুশি হয়ে গেল। সে যতটা আশা করেছিল তার থেকে বেশি টাকা এখানে আছে। মাহাদ আর দেরি না করে রেডী হয়ে নিচে নেমে আসলো। আসমা তখন সকালের নাস্তা সাজিয়ে রাখছে টেবিলে।

"আসমা, আমার রুমটা একটু এখুনি গিয়ে পরিষ্কার করে রাখতো! "
আর কোন কথা না বলে মাহাদ চলে গেল।

♦♦♦♦

মাহাদ যে সাবিনাকে ড্রেস দিয়েছে সেটা সাবিনা আনন্দ সহকারে বাসার সবাইকে দেখালো। বাতাসি বিবি খুশি হয়ে বলল," দেখছোস সাবিনা! আর নাতীর কত বড় দিল! ঠিক আর মত হইছে।"


সাবিনা সাথে সাথে কথার প্রতিবাদ জানিয়ে বলল," হুমহ্,,, আন্নের মত ভাইজান হলে, আর কপলে পাঁচ টাকার বেশি টাকা জুটতো না। তোয় নাতীটা কিন্তু আন্নের। হেইডা অস্বীকার করোন যাবেনা।"


শেষের কথা শুনে বাতাসি বিবি খুশি হয়ে বলল," আই কিপ্টা নো! ধর তোরে দশ টাহা দিলাম। এইটা দিয়ে মটরকালি চাবাবি। দাঁত তোর লোহার মত মজবুত থাকবো।"


বুড়ি একদম কিপ্টার সর্দারনী। তাও পাঁচ টাকা বের করছেই ঐ ডাই লাভ বলে খপ করে বাতাসির হাত থেকে টাকা নিয়ে সাবিনা রুম থেকে চলে গেল। এই বুড়িকে তার ভরসা নাই। একটু কথার অমিল হইলেই এই দশ টাকাও কেড়ে নিবে।

♦♦♦♦

সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই বসে নাস্তা করছে। আজ রুমকির বৌভাত বলে কথা। যে যার মত খেয়ে দ্রুত চলে যায়। কারন ও বাসায় যেতে হবে। রেডী হওয়ারও একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে। তিতির মাহাদকে খুঁজেই চলেছে। কিন্তু মাহাদকে তার দু'চোখের সামনে পাচ্ছেনা। কলও রিসিভ করেনা। রুমের মধ্য তিতির একমনে ধ্যান ধরে বসে আছে। কাল রাগে যে কেন ঐসব কথা গুলো বলতে গিয়েছিলি তিতির! এখন বসে রুমে বসে বসে তার কথা ভাব আর পস্তা। আল্লাহ্ ওনার একটা খবর আমাকে দাও প্লিজ।

এমন সময় সাবিনা আর আসমার আগমন তিতিরের রুমে।


আপা আপনি এখনো গোসল দেননি!  যান গোসল দিয়ে আসেন। আর এইগুলো পড়েন বলে সপিং ব্যাগ তিতিরের হাতে ধরে দিল সাবিনা।

" এই গুলো কে দিয়েছে সাবিনা! তিতির কথাগুলো বলে সাবিনার দিকে চাইলো।"

" কে আবার দিবে আপা! ভাইজান আজ সক্কালে আরে ডাইকা এগুলো দিছে।"

তিতিরের চোখ চকচক করে উঠলো। মাহাদ দিয়েছে! তারমানে ওনার আমার উপর রাগ নাই। দিন শেষে অবশ্যই ফিরে আসবে তিনি আমার কাছেই। 
সাবিনা, আসমা তোমরা যাও। আমি বৌভাতে যাচ্ছিনা। আমার সামনে এক্সাম তাই প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে।


আপা আপনার জামা খুলে দেখি বলেই সাবিনা ড্রেস খুলে ফেললো। ব্লাক রঙ্গের একটা সিম্পল ড্রেস। সাবিনার পছন্দ হয়নি। আপা, ভাইজান আমাদের দু'জনকে ভালো জামা দিল আর আপনার বেলায় এমন পোষাক দিল। এ কেমন বিচার।


আসমা সাবিনাকে ধমক দিয়ে বলল," ভাইজানের যা সামর্থ্য হয়েছে তাই উনি দিয়েছেন। এতে আমরা কথা বলার কে! চল এখান থেকে।"
আসমা সাবিনাকে নিয়ে চলে গেল।


ওরা চলে যেতেই তিতির দরজা বন্ধ করে ড্রেসটি নিজের গায়ের উপর ধরে আয়নার সামনে দাড়ালো। তারপর ড্রেসটি হাতে নিয়ে কয়েকটা কিস করে আলমারিতে তুলে রাখলো। মাহাদের প্রতিটা গিফট্ তিতিরের কাছে অসামান্য লাগে। সেটা দুই টাকার জিনিসই হোকনা কেন!

♦♦♦♦♦

বাসায় শুধু তিতির আর কাজের মানুষ ছাড়া কেউ নেই। তিতিরের পড়াশুনার চাপের কারনে আর যাওয়া হয়নি। সেই সকাল থেকে বইয়ে মুখ গুজে আছে। কিছু  কাজে তিতির নিচে নামতেই রূপসাকে দেখলো, ডাইনিং রুমে বসে টিভি দেখছে। এ এখানে কি করছে! খানিকটা ভয় নিয়েই তিতির নিচে নামল।


তিতির নিচে নামতেই রূপসা তিতিরকে ডাক দিল। এই মেয়ে শোন!


এই রে সেরেছে।  কি প্রশ্নের মুখামুখি হতে হয় আল্লাহ্ ভালো জানেন। তিতির খানিকটা ভয়ে ভয়ে এসে রূপসার পাশে দাড়াল।

" তুমি কি জন্মগত ভাবেই কম কথা বল!"

রূপসার কথার কোন জবাব না দিয়ে শুধু ঘাড় নাড়িয়ে হুম বললো তিতির।

" শুনেছি তুমি এই বাসায় কয়েকমাস ধরে আছো। মাহাদ সম্পর্কে কিছু জানো!"

" তিতিরের মুখ দিয়ে আর একটি কথাও এবার বের হয়না।"

তোমাকে কেন এগুলো কথা বলছি। তুমিতো এই বাসার আশ্রিতা একজন। তুমি যাও এখন।

তিতির এবার হাফ ছেড়ে ওর রুমে ফিরে যায়। পরের কাজ পরে দেখা যাবে। 


তিতির চলে যেতেই রূপসা বলল, "কাল এই বাসায় বোমা ফাটাবো। মাহাদ আমাকে তুই চেতাইছোস না! এর ফল তোর ভোগ তো করতেই হবে।"

♦♦♦♦

রাত ১১টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট। এমন সময় মাহাদ বাসায় আসে। লাবিবা মাহাদের জন্য সেই কখন থেকে বসে আছে ওর রুমে। ছেলেকে দেখেই লাবীবা ফুঁসিয়ে  উঠলো।

" আজ রুমকির শশুড় বাসাতেও যাসনি কিন্তু পুরোটা দিন কই ছিলি?"

মাহাদ শার্টটা খুলতে খুলতে বললো, "ভাইয়ার বাসায় গিয়েছিলাম।"

এবার লাবীবা আর কোন কথা বলেনা। সোজা রুম থেকে বের হয়ে যায়। মাহাদও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াসরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

একটু পর বের হয়ে দেখে সাবিনা খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মাহাদ টাওয়ালে মুখটা মুছে বললো," কিরে আজ কেমন মজা করলি!"

" ভাইজান ফাটাফাটি। তয় তিতির আপা যায়নি।  আই আর আসমা বুবু গেছি। "
ভাইজান, গরম গরম একখান খবর আছে হুনবেন!

" হুম।"

" ভাইজান, ঐ যে রূপসা ম্যাডাম আছেনা! হেই কার সাথে কি যেন কথা কইছে আর বলছে কাল সকালে সবার সামনে কার যেন মুখোশ খুলে দিবে।"

সাবিনার কথার পাত্তা না দিয়ে মাহাদ বলল, " কুটনামো ছাড়াতো তুই মনে হয় কিছু জানিস না। সব ব্যাপারে তোর বাড়াবাড়ি। আর শোন, আমি খাবার খাবোনা। খাবারগুলো তুই নিয়ে যা।"

" আহারে এত ভালা ভালা খাওন কেউ ফেলায় দেয়! আই হলে চেটে পুটে খাইতাম।"

" তো খা! তোরে কে নিষেধ করছে!"

" সাবিনা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ফ্লোরেই বসে ভাত খাইতে লাগলো। আহ্ কি স্বাদ।"

মাহাদ বসে সাবিনার খাওয়া দেখছে। এরা অল্প পেলেই কত্ত খুঁশি আর আমরা যত পাই তত চাই।

সাবিনা খাওয়া শেষ করে সুখের একটা ঢেকুর তুলে সব গুছিয়ে নিয়ে রুম থেকে চলে গেল। কিন্তু দরজার বাহিরে এসে রূপসাকে দেখে থমকে দাড়ায়।

রূপসা ঝাঝালো কন্ঠে বলল," এই তুই এত মাহাদের রুমে যাস কেন! তোর সাথে মাহাদের এত কিসের সম্পর্ক যে এত ফ্রী মাইন্ডে ওর সাথে চলাফেরা করিস!"

" সাবিনা রূপসার কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল," ভাইজান আন্নেরে পাত্ত দেয়না বলে এমন কথা কইছেন! তাহলে শোনেন ভাইজান আরে খুব ভালোবাসে। আরে মাঝে মাঝে গিফ্ট দেয়। আজও দিছে। এহন এই গুলো দেওয়নের লায় আরে মারবেন! আই কি জিনিস হেদিন আন্নেরে দেহাইছি। আর পিছনে আইয়েন না তাইলে কিন্তু মারা পড়বেন।"

" সাবিনার কথা শুনে রূপসা ক্ষেপে গেল। কাল যেটা করতে চাইছিলাম সেটা আজই করবো। ছিহ্ মাহাদ এত নিচে নেমে গেছে! শেষ পর্যন্ত কাজের মেয়ের সাথে..........! তোর এসবের দরকার হলে আমাকে বলতে পারতি। আমি তোকে বিনা বাধায় তোর কাছে নিজেকে সঁপিয়ে দিতাম! 

রূপসা নিচে এসে বাসার সবাইকে ডাকলো। ১০ মিনিটের মধ্য বাসার সবাই হাজির। এমনকি রূমকির বরকেও এখানে রাখা হয়েছে। রূপসার উদ্দেশ্য আজ রাতেই মাহাদের মুখোশ খুলে দেওয়া।


কিরে এত রাতে সবাইকে কেন ডাকছিস! রজনী তার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললো।

মা আমি এমনি এমনি ডাকি নাই। কিছু জরুরি কথা আছে। আপনারা কি জানেন! মাহাদের সাথে সাবিনার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে! তাছাড়া মাহাদ  এটা ওটা গিফ্ট করে সাবিনাকে রেগুলার ভোগ করেই চলছে! শুধু সাবিনাকে ভোগ করেই ক্ষান্ত হয়নি, বাহিরে একাধিক মেয়ের সাথে তার নষ্টি ফষ্টি করার স্বভাব রয়েছে। কাল রাতে এক মেয়েকে নিয়ে রাত কাটিয়েছে।


রূপসার মুখে এমন কথা শুনে সবাই থ মেরে গেল। এই মেয়েটা বলেকি! মাহাদ চুপটি মেরে বসে রূপসার কথা শুনছে কিন্তু এর প্রভাব গিয়ে তিতিরের উপর পড়লো। কথাটা শুনে ওর হাত-পা কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। তিতির ওখান থেকে উঠে কিচেনে চলে গেল। তারপর ঢকঢক করে দু'গ্লাস পানি খেয়ে বলল," আল্লাহ্ এগুলো শোনার আগে আমার কান কেন নষ্ট হয়ে গেলনা। এত কুৎসিত ভাষায়, বাসার সবার সামনে এভাবে খারাপ কথাগুলো বলতে রূপসার মুখে বাঁধল না!"


আমার কাছে যথেষ্ট প্রমান আছে বলতেই ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় পড়লো রূপসার গালে। রূপসা হতবম্ভ হয়ে সামনের দিকে চেয়ে রইলো। সে ভাবতেই পারেনি সবার সামনে এই ভাবে ওর মানহানি হবে।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।