মাহাদ তিতিরকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই নিধি চাচীআম্মু বলে কাছে আসলো। তিতির ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলল," মা, কেমন আছো?"
খুব ভালো বলেই নিধি চট করে তিতিরের মুখে একটা চুমা খেয়ে বলল," চাচীআম্মু চল তোমাকে আমার রুম দেখাই।"
এই নিসা, ওখানে কি করছো! এখানে আসো বলে ফুয়াদ আবার নিসাকে ডাকল।
ভাইয়া তুমি যাও আমি দেখছি বলে মাহাদ কিচেনে গেল।
নিসা একধানে পাকোড়া ভাজছে। মাহাদ নিসার কাছে এসে বলল," তোর মন চাইছে এখুনি তিতিরকে শেষ করে দিতে তাই না নিসা!"
নিসা চমকে উঠে মাহাদের দিকে তাকালো। মাহাদের হঠাৎ এমন প্রশ্নে নিসা ঘাবড়ে গেল। নিসা জবাব দিতে পারলোনা মাহাদের প্রশ্নের। নিসা চুপ করে রইলো
সর, আমি ভাজি বলে মাহাদ নিসাকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই ওর আনাড়ি হাতে পাকোড়া ভাজতে মনযোগ দিল।
" নিসা।"
" হু...ম...।"
" তিতিরের দোষ কি?"
মাহাদের কথায় নিসা চুপ করে রইলো। ছলছল চোখে মাহাদের দিকে শুধু চেয়ে রইলো।
দেখ, আমি কিন্তু পাকোড়া ভাজতে পারছিনা। সব পুড়ে যাচ্ছে। এই গুলো শুধু আমি আর তুই খাবো। আমার বৌকেও আমি খাইতে দিবনা।
এবার নিসা ঝুপঝুপ করে কেঁদেই ফেললো। সে আগের মাহাদকে খুঁজে পেয়েছে। নিসা বড়সড় একটা ঢোক চিপে বলল," মাহাদ, তুই অনেক পাল্টে গেছিসরে.."
" কই আমি পাল্টে গেছি নিসা! বড় হয়ে গেছিনা? ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব এসে পড়েছে। আমি তো কাউকেই ঠিকমত সময় দিতে পারছিনা। "
" তোর বৌকে তো ঠিকি সময় দেস?"
"এটা কিন্তু ভুল কথা বললি নিসা। তোকে দিয়েই একটা উদাহরন দেই, তোর বিয়ে হওয়ার পর তুই ভাইয়ার কাছ থেকে কত রাত আলাদা থেকেছিস?"
নিসা দু'হাতে চোখের পানি মুছে বলল," এক রাতের জন্যও না। ফুয়াদ বা আমি, আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা।"
" আর দেখ, আমি বিয়ে করে বৌয়ের সাথে একটা রাতও ঘনিষ্ঠ ভাবে কাটাতে পারিনি। আজও তাকে আপন করে নিতে পারিনি। তাকে সবার সামনে স্ত্রীর মর্যাদা পর্যন্ত দিতে পারিনি। আমাকে কত রাতের পর রাত চোখের পানি ফেলে কাটিয়ে দিতে হয়েছে তার জন্য। তবুও তাকে কাছে রাখতে পারিনি।"
" মাহাদ, তোর সাথে ও যায়না রে। এর থেকে বেটার কিছু তুই আশা করিস।"
" বাহ্, তুই তো দেখছি আমার মা হয়ে গেছিস? ছেলের কোনটাতে সুখ আর কোনটাতে কষ্ট সেটা না দেখে আমার উপযুক্ত কাউকে খুঁজতে শুরু করেছিস?"
" এটাই আমার সমস্যা। কেন তুই ওর প্রতি এত মজে গেছিস? ওকে পেলে মনে হয় তোর আর কিছু চাইনা। না পরিবার না অন্যকিছু। কি এমন ওর মধ্য আছে, যার জন্য তোর কাছে পরিবারেরও মূল্য নেই? "
নিসা, হয় তোর মধ্য হিংসা কাজ করে না হয় তুই একজন মানুষিক রোগী। আমার তো মনে হচ্ছে তোর সিজোফ্রেনিয়া হয়েছে। চল কালই তোকে ডাক্তার দেখাব।
মাহাদের কথা শুনে নিসা ক্ষেপে গেল। আমি মানুষিক রোগী! উচিত কথা বললেই আমি অসুস্থ?
মিলি......! সে তো তোকে পাগলের মত ভালবাসতো। তোর জন্য ও পাগলামির সীমা পার করে দিয়েছিল। ওর প্রতিটা কষ্টময় দিন আমি নিজের চোখে দেখেছি। তোর অবহেলা ওকে কুড়ে কুড়ে শেষ করে দিয়েছিল। কই তার প্রতিতো তোর দরদ এত উথলে পড়েনি। শেষে মেয়েটা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। ও যদি জানে, তুই এই কোয়ালিটির মেয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছিস তাহলেতো ও মরেই যাবে।
নিসার কথায় মাহাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। পাকোরা ভাজা শেষ। মাহাদ চুলা বন্ধ করে টেপের পানি ছেড়ে দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে করতে নিসাকে বলল," চল আজ তোকে একটা গল্প শুনায়।"
" আমি তোর কোন গাঞ্জাখুরি গল্প শুনতে চাইনা। সবাই তোর কথার ছলে ভুলতে পারে কিন্তু আমি তোর কথার ভিতর কখনোই ডুব দিবনা। তাই আমাকে এগুলো শুনাতে আসিসনা।"
কি করবো বল! তোর কথা শুনে এখন আমার মনে হচ্ছে, আমার আর ভাইয়ার জিবন একই স্রোতে বয়ে চলছে। এখানে নিসা আর তিতির একই জায়গায় দাড়িয়ে আছে।
তোদের বিয়ের আগেরদিন ভাইয়ার রিয়া নামে আমাদের এক প্রতিবেশি মেয়ের সাথে এঙ্গেজমেন্ট হয়েছিল। আমি কিন্তু তখনো জানতামনা তোরা রিলেশনে ছিলি। শেষে তুই রাতে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে ফোন দিয়ে সব জানালি। আর আমি আমার বাবার মান-সম্মানের কথা না ভেবে পরেরদিনই তোদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছি। যার ফলাফল রিয়া আপুর সুইসাইড করা। আমি তোকে ছোট করতে চাচ্ছিনা। কিন্তু এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি, রিয়া আপুর যা যোগ্যতা তুই তার ধারে কাছেও যাসনা। তাহলে ভেবে দেখ, এতটা যোগ্যতা সম্পন্ন মেয়েও তার মনুষ্যত্বকে বির্সজন দিয়ে মৃত্যর পথ বেছে নিয়েছিল। শুধু ভালোবাসার জন্য। যার ফলাফল তুই সুখে সংসার করছিস।
" তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি! আমি ঠিকি বলেছি, তুই বদলে গেছিস। বৌয়ের একটু ভূল ধরতেই তোর গায়ে ফোসকা পড়ে গেল। আমার জিবনে আমি ফুয়াদকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি তারপর তোর স্থান। যেই স্থান আমার মেয়ে নিধিরও নেই।
আর শোন, রিয়ার লাভটা এক তরফা ভালোবাসা ছিল। আর আমরা দু'জন দুজনকে ভালোবাসতাম। আর সেটা ছিল অনেক মজবুত।"
" ভুল বললি, নিজের সন্তানের থেকে বড় আর কিছু হয়না। যাইহোক, তোকে ডাক্তার দেখাতে হবে। আমার যা বোঝার আমি বুঝে গেছি। মাহাদ পাকোড়ার বাটিটা হাতে নিয়ে ডাইনিংরুমে এসে দেখলো পাশের বাসার ফারিহা, ওর মা আর দাদু এসেছে। সবাই মিলে গল্প করছে। মাহাদও কিছু না ভেবেই বাটিটা ট্রী টেবিলের উপর রাখলো। তারপর মাহাদের মনে পড়লো অনেকগুলো পাকোড়া পুড়ে ফেলেছে সে। মাহাদ পিছনে নিসার দিকে তাকাতেই নিসা চোখ বড় বড় করে ইশারা করলো, " এটা তুই কি করলি? আমার সম্মান আর রাখলিনা।"
" ফারিহা একটা পাকোড়া হাতে নিয়ে বলল, " আঙ্কেল, আপনাদের পাকোড়া এমন ব্লাক কালার কেন?"
ফারিহার মা ফারিহার কাছ থেকে পাকোড়া কেড়ে নিয়ে বলল," এগুলো খেলে শরীর খারাপ করবে।"
মাহাদ লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। এমন সময় তিতির উঠে গিয়ে খাবার টেবিল থেকে একটা বাটি এনে কড়া ভাজার পাকোড়া তুলে ফারিহার মাকে বলল," আমি একটু কড়া ভাজা পছন্দ করি তো তাই কয়েটা এমন বানানো হয়েছে। বাঁকিগুলো খান আপনারা।"
তিতিরের এমন কাজে মাহাদ খুঁশি হলেও নিসা বড্ড রেগে গেল। ও নিমিষেই কিভাবে ধরে ফেলল এটা মাহাদের কাজ? এত মনের মিল!
তিতিরের কথা শুনে ফারিহার মা বলল, " অহ্ তাই বল, এই ফারিহা নাও বলে সবাই যে যার মত নিতে লাগলো। তারপর নিসা তাদের চা এনে দিল। আড্ডাটা বেশ জমেই গেল।"
♦♦♦♦
রাত ন'টা বাজে। ফুয়াদ,মাহাদ আর নিধি একটা রুমে আড্ডা দিচ্ছে আর অন্যরুমে নিসা তিতিরের সাথে বসে আছে।
"তিতির....!"
তিতির মাথাটা নিচু করেই বলল," জ্বী ভাবি!"
"তোমার চেহারার মত নামটাও সুন্দর। কিসে পড়ছো?"
" অর্নাস সেকেন্ড ইয়ার, অর্থনীতি।"
" ভালো. তুমি কি জানো, মাহাদ যদি তোমার সাথে তার বিবাহিত জিবন কাটায় তাহলে সে কোনদিনও বাবা ডাকটা শুনতে পাবেনা?"
" চোখে কোনে জল চিকচিক করছে তিতিরের কিন্তু কথা বলতে পারছেনা।"
" আমার নিধিকে দেখ, তাকে পেয়ে ফুয়াদ কতটা সুখী। আমি তাকে এমন সন্তানের সুখ দিয়েছি বলে সে আমাকে এখন দ্বিগুন ভালোবাসে। কিন্তু আফসোস মাহাদের বাবা ডাক কখনো শোনা হবেনা শুধু মাত্র তোমারই কারনে।"
......................?
তিতিরের কোন জবাব না পেয়ে নিসা আবার বলল," তুমি কি এ বিষয়ে জানোনা?"
" জ্বী ভাবী, একটু জানি কিন্তু বিশ্বাস করতামনা। আজ বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম।"
" অহ্ রেলি, তুমি সত্যিই জানতেনা! নাহ্, জেনেও না জানার ভান করেছিলে?"
......................?
" আমি তোমার মত এত নিলজ্জ্ব আর বেহায়া মেয়ে আজও দেখিনি। যে তোমার পুরো দায়িত্ব নিয়েছে তাকেই তুমি সব থেকে বেশি কষ্ট দিচ্ছ দিনের পর দিন। ওকে ছেড়ে চলে যাচ্ছোনা কেন?"
" আমি ওনার জিবনে মেডিসিন, তাই আমাকে ছাড়া ওনার চলবেনা। আমি যদি ওনাকে ছেড়ে চলে যাই তাহলে সেটাই আমার জন্য হবে সবথেকে বড় ধরনের বেঈমানীর কাজ। আমি কাউকে ঠকাতে শিখিনি ভাবী।"
" তিতিরের কথায় নিসা প্রচুর রেগে গেল। এই মেয়ে, তোমার কি যোগ্যতা আছে ওর পাশে দাড়ানোর? তুমি ওর মেডিসিন! তুমি ওর জিবনে কত বছর হল এসেছ? তোমার মত মেডিসিন ছাড়া কি ও এতদিন বাঁচেনি?
" ভাবী, আমি ওনার গার্লফ্রেন্ড নয় যে ওনাকে ছেড়ে যাব। আমি ওনার বিবাহিত স্ত্রী, তাই ওনাকে ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।"
" আমি তোমার মত চতুর আর লোভী মেয়ে আমার লাইফে আর দেখিনি। এত সুন্দর,স্মার্ট, কোয়ালিটি সম্পন্ন, আভিজাত্য ছেলেকে হাত ছাড়া করতে কে চায় বল! তার থেকে তো তুমি ব্যাতিক্রম নও।"
" ভাবী, আপনার যা ইচ্ছা তাই বলেন। তিতিরের চাহিদা যতদিন মাহাদের শরীর, মন, সবকিছুর খোরাক হয়ে থাকবে ততদিন এই তিতিরও মাহাদের কাছ থেকে এক পাও কোথায়ও নড়াবেনা। তাই এগুলো কথা বলে কোন লাভ নেই। আপনি আপনার বন্ধুকে কতটা চেনেন আমি তা জানিনা কিন্তু আমি আমার মাহাদকে অনেক ভিতর থেকে জানি এবং অনুভব করি। তাই তাকে ছাড়া আমার বা তার কারোই চলবেনা।"
"তোমাদের সম্পর্কের খুব বড়াই তাই না! তুমি জানো, আমি তোমাকে কতটা ঘৃনা করি! তুমি কাল যখন বাসা থেকে চলে যাবে তখন আমি পুরো বাসা, যেখানে যেখানে তোমার পা পড়েছে সব জায়গা স্যাভলন আর পানি দিয়ে ধুয়ে দিব!"
"কাল কেন দিবেন ভাবী! আজ এই রাতেই কোমড়ে কাপড় পেচিয়ে কাজে নেমে পড়ুন না! কারন কাল না আজই বাসা থেকে চলে যাচ্ছি। আর মনে রাখবেন, আমি কখনো আপনার বাসায় আর আসবোনা। যতক্ষন না আপনি আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন। আমি যদি সামান্য পরিমানে অপরাধ করতাম তাহলে এই তিতির প্রয়োজনে আপনার পায়ে পড়তো কিন্তু আমার সাথে আপনার ঠিকমত কথাও হয়নি তারপরও আমাকে আপনি সহ্য করেননা। এসেছিলাম আপনাকে আপন করে নিজের বড় বোন বানাতে কিন্তু জা কখনো বোন হয়না সেটা আপনি খুব ভালো করেই আমার চোখে এখুনি আঙ্গুল দিয়ে বুঝালেন। ভালো থাকবেন বলে তিতির নিসাকে সালাম দিয়ে উঠে দাড়ালো।"
"খুব দেমাক তোমার তাইনা? আমিও দেখি তুমি কেমন করে এখান থেকে এই রাতে মাহাদকে নিয়ে যেতে পার।"
তিতির তাচ্ছিল্য সহকারে হেঁসে বলল," আটকিয়ে দেখান। "
তিতির নিকাবটা বেঁধে সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেল।
♦♦♦♦
কাজের মেয়েটা মাহাদ, ফুয়াদ আর নিধির প্লেটে খাবার বেড়ে নিসা আর তিতিরকে ডাকতেই তিতির গোলাবকে নিয়ে ডাইনিংরুমে এসে দেখলো, মাহাদ খেতে বসেছে। সেটা দেখে চুপ করে গেল তিতির। এই অবস্থায় মাহাদকে তোলা উচিত নয়।
"তিতির, তুমি আবার কোথায় যাবে এত রাতে? আসো এখানে খেতে বস।"
"ভাইয়া, আসমা ফোন করেছিল। ও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওকে বাসায় একা রেখে আসছি। তাছাড়া কাল আমার ক্লাসটেষ্ট পরীক্ষা আছে ভাইয়া।"
" ভাতটা একটু খেয়ে যাও তিতির।"
" আল্লাহ্ চাইলে ইনশাল্লাহ্ আবার কোনদিন আসবো। সেদিন এসে আমি কিন্তু আপনার নিজের হাতের করা রান্না খেয়ে যাবো। আজ না ভাইয়া।"
" চাচীআম্মু, আজ না তুমি আমাদের এখানে থাকবে? আমাকে অনেক গুলো গল্প শুনাবে! তাহলে চলে যাচ্ছো কেন বলে নিধি ছলছল চোখে তাকালো তিতিরের দিকে।"
" বাবার সঙ্গে আমাদের বাসায় যেও মা! সেদিন যতগুলো উইস করবা আমার কাছে, ইনশাল্লাহ্ সব পুরুন করবো। আজ বাসায় যেতেই হবে মা।"
মাহাদ বুঝতে পারলো তিতির মিথ্যা কথা বলছে। তিতিরের কাছ থেকে অন্তত মিথ্যা কথা বলাটা আশা করেনি মাহাদ। মাহাদ চোখ গরম করে বলল," আসমাকে দেখার জন্য অন্য কেউ আছে। আসো এখানে বসে সবার সাথে খাবার খাও। আর আজ আমরা কোথায়ও যাচ্ছিনা। এখানে রাতে থাকবো আমরা।
মাহাদের এমন কথায় নিসা চ্যালেঞ্জ জয়ের একটা হাসি দিয়ে তাচ্ছিল্য সহকারে খানিকটা দুরে দাড়িয়ে দরজায় হেলান দিয়ে গা এলিয়ে দিল।
ফুয়াদ খাবার ছেড়ে উঠে বলল," আচ্ছা তুমি যাবা ভালো কথা। নিসা কত কষ্ট করে তোমাদের জন্য রান্না করলো সেটা অন্তত খেয়ে যাও? মাহাদ না নিয়ে গেলেও আমি তোমায় বাসায় পৌছে দিব তিতির।"
" আমার যে গলা দিয়ে খাবার নামবেনা ভাইয়া। আসমা ওখানে অসুস্থ আর আমি এখানে কিভাবে খাবার খাই বলেন?"
তিতির চিয়ারে বসে থাকা নিধিকে পিছন দিক থেকে একটা কিস করতেই এক ফোঁটা চোখের পানি নিধির কাধে পড়ল। মা, চাচীআম্মুকে দেখতে এসো বলে ফুয়াদকে সালাম দিয়ে গোলাবকে নিয়ে বের হয়ে গেল।
মাহাদ যখন দেখল তিতির এখানে এক সেকেন্ডও থাকতে রাজি না তাই বাধ্য হয়ে খাবার ছেড়ে উঠে নিসাকে বাই বলে বের হল। সাথে ফুয়াদও এগিয়ে দিতে এল। মাহাদ ফুয়াদকে বলল," ভাইয়া, আমার মনেহয় নিসা "সিজোফ্রেনিয়া" তে আক্রান্ত হয়েছে। এটা আমার ধারনা কিন্তু কনর্ফাম না আমি। ওকে ভালো একটা মানুষিক ডাক্তারকে দেখাও। ভালো টিট্টমেন্ট হলে ও খুব দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। আর ওর সাথে যেন রাগারাগি করোনা।"
ফুয়াদ চুপ করে সব শুনলো কিন্তু কিছু বললনা।
এদিকে মাহাদ চলে যাওয়াতে নিসার চোখে পানির জোয়ার এল। তার একই কথা, মাহাদ তুই বদলে গেছিস। আমি আমার প্রিয় বন্ধুটারে হারিয়ে ফেলেছি মাহাদ। যার জন্য ঐ মেয়েটিই একমাত্র দায়ী। ওকে আমি ছাড়বোনা।
♦♦♦♦
ফুয়াদ বাসায় এসে খাবার না খেয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। একটু পড় নিধিও ওর বাবার কাছে এসে বুকের ভিতর ঢুকে সুয়ে পড়লো।
" বাবা।"
" জ্বী মা?"
" চাচীআম্মু যাওয়ার সময় কাঁদছিলো কেন? মামুনি দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।"
" তোমার কথা ঠিক না মা! মামুনি যে অসুস্থ। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।"
এর মধ্য নিসা এসে ফুয়াদের সামনে বসে কেঁদেই ফেললো। ফুয়াদ দেখেছ, মাহাদ কতটা বদলে গেছে। ওর কাছে ওর বৌ ই সব। আমরা যেন ওর কিছুই না।
" নিসা, মাহাদের নিজের একটা পার্সোনাল লাইফ বলেও কিছু আছে। ওকে ওর মত থাকতে দাওনা! কেন ওদের মাঝে তুমি আমাদের ঢুকাতে চাচ্ছো?"
" ওরতো কোন দোষ নেই। যতদোষ ঐ মেয়ের। ও মাহাদকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। ওকে ইচ্ছামত ঝেড়েছি আজ। এতো ঝেড়েছি তবুও ওর দেমাগ কমে নাই। বিয়াদপ মেয়ে একটা। কেন ও আমাদের মাঝে আসবে?"
ফুয়াদ নিধিকে সহ বেড থেকে উঠেই ঠাস্ করে একটা চড় বসিয়ে দিল নিসাকে। এই তোমার সমস্যা কি! মেয়েটা এই প্রথম আমাদের বাসায় এসেছে। আর তার সাথে এমন নিকৃষ্ট ব্যবহার তুমি করতে পারলে? একটুকু মেয়ের সাথে তোমার এত শত্রুতা! ওদের আমি আসতে বলেছিলাম। যাতে তুমি তোমার সমস্যা গুলো মিটিয়ে ফেলতে পারো। কিন্তু নাহ্, তুমি তো তাকে সহ্যই করতে পারছোনা। এখুনি আমার চোখের সামনে থেকে তুমি চলে যাও। তুমি ফুল পাগল হয়ে যাওনি যে তোমার এত নিকৃষ্ট পাগলামি আমার সহ্য করতে হবে।
আমি পাগল বলে নিসা ক্ষেপে গেল। দেখছো, ঐ মেয়ে তোমাকেও এরমধ্য যাদু করে ফেলেছ। তাই তুমি ওর হয়ে সাফাই গাইছো? শুধু তুমি না, নিধিও একই কাজ করছে। ওকে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও, ও বাররার ওর কাছেই গেল। আমিতো এত সব সহ্য করবোনা? এবার কাছে পেলে ওকে খুন করেই ছাড়বো।
চুপপপ, যথেষ্ঠ হয়েছে। ফুয়াদ নিসার হাত ধরে রুমের বাহিরে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। ফুয়াদ চিৎকার করে বলল," তুমি আজ অত্যান্ত খারাপ কাজ করেছ। তোমার জায়গা আমার কাছে নেই।"
♦♦♦♦
তিতির আগেই একটা টাক্সি ধরে বাসায় চলে এসেছে শুধু মাহাদকে ফোনে একটা ছোট্র মাসেজ করে দিয়ে। বোরখা খুলে ছুড়ে মারলো ফ্লোরে। গোলাবকে খেতে দিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল শাওয়ার নিতে। শাওয়ার শেষ করে এসে লাইট বন্ধ করে সুয়ে পরলো। আজ নিজের বাবার কথা মনে পড়ছে বারবার তিতিরের। কতদিন হয়ে গেল বাবা একবারও আমার খোঁজ নেয়না। এখন মনে হচ্ছে আমার জিবনটাই একটা ব্যার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়।
মাহাদ একটু পর বাসায় আসলো। দরজা খুলেই রেখেছে তিতির। ভিতরে ঢুকে মাহাদ দরজা বন্ধ করে দিয়ে দেখলো, গোলাব ওর খাবার খাচ্ছে।
মাহাদ এসে রুমে লাইট জ্বালালো। তিতিরকে দেখলো সুয়ে আছে। মাহাদ কিছু না বলে ফ্রেস হয়ে এসে চেন্জ করে এসি ছাড়ল।
তিতির, আমি ভালো করেই জানি তুমি ঘুমাওনি।
"তিতির তবুও চোখ বন্ধ করে রইল। আজ নিসা তিতিরকে তো শেষই করে দিয়েছে। নিসা, না তিতিরকে ছুয়েছে না মেরেছে তবুও জখম করে ছেড়েছে।"
কিন্তু মাহাদ তিতিরের কোন জবাব না পেয়ে যা করলো সেটাকে রোমান্স বলা যাবে, না ভালোবাসার টর্চার বলা যাবে সেটা সেই শুধু জানে।
মাহাদ চট করে তিতিরের শরীরে উঠেই কম্বোল দিয়ে পুরো শরীর চেপে ধরলো। তিতির তৎক্ষনাত ওর দু'টি চোখ খুলল। সাথে সাথে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ে পড়ল।
মাহাদ ক্ষোভের সাথে বলে উঠলো, আমার থেকে তোর জেদই তোর কাছে বড় হয়ে গেল? কেন এত রাগ? যে আমাকে মাঝ রাস্তায় ছেড়ে এলি? তোর এত সাহস হয় কি করে, আমার অনুমতি না নিয়ে চলে আসলি! খুব বড় হয়ে গেছিস তাইনা? খুব বুঝতে শিখে গেছিস বলেই কয়েকটা কিস করলো মাহাদ তিতিরকে।
তিতিরের পুরো শরীর কম্বলের মধ্য চেপে ধরে আছে মাহাদ। তিতির চেষ্টা করছে নিজেকে ছাড়ানোর কিন্তু মাহাদের শক্তির সাথে সে পেরে উঠছেনা। উমহ্ আমাকে ছাড়ুন........। আমার কিছু ভালো লাগছেনা। দেখেন, ভালোনা কাউকে এভাবে কষ্ট দেওয়া।
মাহাদ তাচ্ছিল্য সহকারে বলল, " হুমহ্, তুই আমার অন্য কেউ তাইনা?"
বাহ্ বাহ্ এখন দেখছি তোর মুখের বুলি ফুটেছে। তখন এত কথা বললাম কিন্তু কোন কথার জবাব নেই। এখন তোকে কে কথা বলতে বলেছে। এতবড় অপরাধ যখন করেই ফেলছিস তখন পুরো রাত এর শাস্তি উপভোগ কর। যাতে পরবর্তীতে এমন কাজ করার কথা দ্বিতীয় বার না ভাবিস। মাহাদ এমন কিছু করলো তাতে তিতিরের ফিলিংস এক নিমিষেই দ্বিগুন হয়ে গেল। শ্বাস ঘন ঘন পড়তে লাগলো কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও মাহাদকে নিজ থেকে স্পর্শ করতে পারলোনা। তিতিরের মন প্রচন্ড ভাবে চাচ্ছে মাহাদকে নিজের বুকের ভিতর নিয়ে নিজেকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিতে। কিন্তু তিতির সেটা মোটেও পারছেনা আর এটাই হল মাহাদের পক্ষ থেকে তিতিরের জন্য সব থেকে বড় শাস্তিস্বরুপ উপহার। যা বাঁকি রাত চললো। না মাহাদ নিজে ঘুমালো না তিতিরকে ঘুমাতে দিল.....