কুহু আজ খুব সাজুগুজু করে স্বর্ণার বসায় পা রাখলো।ড্রাক রেড কালার শাড়িতে গায়ের ফর্সা রংটা আরো ফুটিয়ে তুলচ্ছে তাকে।আসতে লেট হয়ে গেছে মোটামোটি।সদর দরজায় পা রাখতে একটি মিষ্টি সুরের কন্ঠ কানে বাঁজলো তার।
🖤Hamen Tum Se Pyaar Kitanaa, Ye Ham Nahiin Jaanate
Magar Jii Nahiin Sakate Tumhaare Binaa
Hamen Tum Se Pyaar🖤
গানের কন্ঠটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে তার।মনে হচ্ছে সে এই কন্ঠ অনেক বার শুনেছে।আর এই গানটি? এই গানটি শুনে বুকে ধক করে উঠলো।মনে পরে গেল সেই ছোট বেলার কথা সাথে সাথে কতে লাগলো কিছু স্মৃতি বিচরণ....
কুহুদের বাগান বাড়িতে ছিল প্রকন্ড এক আম গাছ।সেখানে কুহুর আব্বু কুহুকে দোলনা টানিয়ে দিয়ে ছিল। সময়ে অসময়ে এখানেই বসে থাকতো সে।একদিন বাসায় রাগ করে এখানে বসে ছিল কুহু।তখন পিছন থেকে গিটার হাতে সামনে এসে দাড়ায় ইউসুফ।ইউসুফকে দেখে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয়।আর মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে।তখন ইউসুফ হেসে বলে উঠে,,
--বাবুইপাখি মন খারাপ?
---
--কথা বলবে না?
--
--আচ্ছা গান শুনবে?
কুহু মাথা নায় বাচ্চাদের মতো।যার অর্থ সে শুনবে। এটি দেখে হেসে দেয় ইউসুফ। আর এই গানটি গাইতে শুরু করে ইউসুফ।
🖤Sunaa Gam Judaai Kaa, Uthaate Hain Log
Jaane Zindagii Kaise, Bitaate Hain Log
Din Bhii Yahaan To Lage, Baras Ke Samaan🖤
গান শেষ হতেই টুপ করে চুমু খেয়েছিল কুহু। আর বলেছিল,,
---তুমি খুব সুন্দর গান গাইলে,তোমার জন্য আমার মন ভাল হয়ে গেছে। তার জন্য তোমার জন্য প্রাইজ দিলাম।
বলে বাই বলে চলে গেল সে। কিন্তু ইউসুফ সেখানেই গালে হাত দিয়ে বসে রইল।কুহু অতীতের কথা ভেবে শ্বাস নিলো ছোট আর বিড়বিড় করে বলল,,
--আপনি যদি এমন না করতেন? হয়তো আমাদের বন্ধুত্বটা এখন পর্যন্ত টিকে থাকতো।
কুহু সামনের এগিয়ে গেল। মনের মাঝে খুব কৌতূহল নিয়ে। গানটি কে গাইছে? জানার জন্য মনটা আনচান করে চলছে।তার সাথে লোকটি কন্ঠে মাতাল করছে তাকে! লোকটি গানের গলায় কেমন যেন একটি মায়া, টান উপলব্ধি করতে পারছে।তার কন্ঠে দুঃখ মিশ্রিত।মনে হচ্ছে গান ধারা তার কথা গুলো বুঝিয়ে দিচ্ছে! আচ্ছা লোকটি কাউকে ভালবাসে? কাউকে ভাল না বাসলে এতটা বেদনাদায়ক কন্ঠে কেন প্রকাশ পাবে??এসব চিন্তার মাঝে মূহুর্তেই ভর করতে থাকে কুহু ছোট মাথায়।এসব এক সাইডে রেখে এগিয়ে গেল স্টেজের দিকে।
🖤Hamen Intazaar Kitanaa, Ye Ham Nahiin Jaanate
Magar Jii Nahiin Sakate Tumhaare Binaa
Hamen Tum Se Pyaar🖤
স্টেজের কাছে আসতেই পিলে চমকে উঠল কুহু। মুহুর্তে ভয়জনিত রোগ হানা দিল তাকে।দ্রুত শ্বাস উঠনামা করতে লাগলো শ্বাস কষ্টের মতো।পা দুটোও যেন সেটে গেছে মাটির সাথে।এক পা এগিয়ে বা পিছিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই তার।বিন্দু বিন্দু ঘাম এসে জমা হয়েছে কুহুর কপালে।গাল শুকিয়ে কাঠ।শুকনো ঢোক গিলচ্ছে বার বার।সামনে ইউসুফ গান গাইছে।চারিদিক মানুষ চুপ করে শুনচ্ছে বসে।তখন কোথা থেকে দৌড়ে এসে স্বর্ণা আর কুহুর হাত ধরে ঝাঁকি দিতেই হকচকিয়ে উঠে সে। তা দেখে স্বর্ণা অবাক হয়ে বলে উঠে,,
--দোস্ত আর ইউ ওকে? তুই এভাব কাঁপচ্ছিস কেন? আর ঘামচ্ছিসি বা কেন???
কুহু কোনো জবাব দিতে পারছে না। তার মন চাইছে এখনি ছুটে পালাতে।কিন্তু দুটো চলচ্ছে না। মনে হচ্ছে আটকে গেছে সে।কুহু নড়তেই পারচ্ছে।একবার স্বর্ণার দিক তাকিয়ে স্টেজের দিক তাকালো।সাথে সাথে আরো শকড খেল।ইউসুফ তার দিক তাকিয়ে আছে। ঠোঁকা বাঁকা হাসি।এ হাসিতে যে কোনো মেয়ে পাগল হতে দু সেকেন্ডের বিষয়। কিন্তু কুহুর কাছে এটি বিষাক্ত সাপের ছোঁবলের মতো।ইউসুফ তার হাসি বহাল করেখেই গাইতে লাগলো,,
🖤Tumhen Koi Aur Dekhe, To Jalataa Hai Dil
Badii Mushkilon Se Phir, Sambhalataa Hai Dil
Kyaa Kyaa Jatan Karaten Hain, Tumhen Kyaa Pataa
Ye Dil Beqaraar Kitanaa, Ye Ham Nahiin Jaanate
Magar Jii Nahiin Sakate Tumhaare Binaa
Hamen Tum Se Pyaar🖤
এত কিছুর মাঝে হঠাত করে প্রশ্ন খেলে গেল কুহু!আচ্ছা.....
কুহুকে দেখে ইউসুফের চমকে যাওয়ার কথা। সেখানে ইউসুফ কুহুর দিক তাকিয়ে মুচকি হেসে গান গাইছে?এতটা শান্ত? হাউ?তাহলে কি সে যেনে এখানে এসেছে?
কুহুর ভাবার মাঝেই গিটার সুর বাঁজাতে বাঁজাতে কুহুর মুখোমুখি দাড়ায় ইউসুফ। সাথে থাকে স্বর্ণা হাসি হাসি মুখে এক্সাইটমেন্ট নিয়ে। কিন্তু কুহুর ভয়টা আরো বেরে গেলে ইউসুফকে এতটা কাছে দেখে চোখ বড় করে তাকিয়ে রইলো বিস্ময়ের সাথে.... আর তখনি ইউসুফ কুহুর চার পাশে ঘুড়তে ঘুড়তে গেয়ে উঠে...
🖤Hamen Tum Se Pyaar Kitanaa, Yah Ham Nahiin Jaanate
Magar Jii Nahiin Sakate Tumhaare Binaa
Hamen Tum Se Pyaar Kitanaa🖤
গান শেষে সবাই "ওয়ান্স মোর " চিল্লাতে লাগলো। আর হাত তালি দিতে লাগলো।কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই ইউসুফের। সে তার বাবুইপাখিকে দেখে এত দিনে তৃষ্ণা মিটাতে ব্যস্ত। কুহুর তো ভয়ে জান যায় যায়। অনেক কষ্ট সাহস যুগিয়ে স্বর্ণাকে কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,,
--দোস্ত আআমার শশশরীর ভভভাল লাগচ্ছে না। আমি বববাসায় যাবো। সরিরে বলে আর এক মুহুর্ত দাড়িয়ে না থেকে। দৌড়ে পালালো সে।
কিন্তু অদ্ভুত আর অবাক করার বিষয়, ইউসুফ না তাকে আটকালো আর না রাগ দেখালো। প্রতিটাখন শুধু মুখে হাসি রেখা টেনে রাখলো তার সুন্দর মুখ খানায়।
🍁
কাপড়চোপড় লাগেজে ভরে রেডি হয়ে গেছে কুহু। এ শহরো সে ছেড়ে দিবে। ইউসুফের আজ এত ঠান্ডা রূপ কতটা ভয়াবহ বুঝতে বাকি নেই কুহুর।ব্যাগ পত্র গুছিয়ে দরজা খুলে বের হতে নিতে থমকে গেল কুহু।কাঁপাকাঁপি জনিত রোগ হুট করে জেঁকে বসলো।
তখনি সামনে থেকে একটি কন্ঠে ভেসে আসতেই কুহু এবার কান্না করে দেয়ার উপক্রম।
-- কায়নাত! আর কত পালাবে বলো তুমি??আমি এসবে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছি। তুমি বুঝতে চাইছো না? যেখানে যাবে আমাকেই পাবে? তাহলে এসব কেন বন্ধ করচ্ছো না হোয়াই??
কুহু কাঁদ কাঁদ কন্ঠে বলল,,
--আমিতো বলিনি আমার পিছনে দৌড়ান।দৌড়ে ক্লান্ত হোন? আমি নিজেই এসব থেকে মুক্ত চাই।প্লীজ মুক্ত দিন আমায়।(হাত জোর করে)
ইউসুফ খানিকটা এগিয়ে গেল কুহুর দুহাত নামিয়ে এক আঙ্গুলে মুখটি উপরে তুলল, কুহু চোখ বন্ধ করে আছে। সে তাকাবে না এই লোকের দিকে।একদম না। এই লোকটিকে যেমন ভয় পায় সে। তার থেকে আরো ভয় পায় এই লোকের বিলাই চোখ গুলোকে,,এই চোখের চাহনীর গভীরত্ব কে। যতবার এই লোকের চোখের দিকে কুহু তাকায় ততবার হাড়িয়ে যেত এই চোখের অতলে।ইউসুফ কুহুর চোখের পানি মুখে দিল।এবং তার মুখের উপর পরে থাকা চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে দু চোখে ঠোঁটে ছোঁয়ালো ইউসুফ।এতে কেঁপে উঠলো কুহু।আর খিচে বন্ধ করে রাখলো চোখ।মনে হচ্ছে শরীরে শীতল কিছু বয়ে গেল।ইউসুফ এবার খাটের উপর বসিয়ে দিল কুহুকে। সাথে সাথে চোখ মেলে তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নেয় সে।ইউসুফ কুহুর সামনে হাটু গেরে বলে উঠলো,,
--বাবুইপাখি! কেন এত ঘৃণা কর আমায়?? আমাকে কি একটু ভালবাসা যায় না?জানি আমি ভুল করেছি।অনেক বড় ভুল করেছি।এর জন্য সাজাতো কম পাচ্ছি না আমি বল? দেখ না একটি ভুলের জন্য আমি তোমার মত বন্ধু হারিয়েছি, তোমার থেকে দূর করে দেয়া হলো আমাকে। আর এখন যখন পেয়েছি? তুমি পালিয়ে বেড়াচ্ছো আমার থেকে?তুমি জানো না কত কষ্ট হয় এই জায়গায়(বুকে বা পাশে আঙ্গুল দেখিয়ে)খুব কষ্ট হয় বুঝনা তুমি।চিন চিন করে ব্যথা করে খুব করে। একটু বুঝ না প্লীজ। একটু বাসোনা ভালো বাবুইপাখি। জানি অনেক টর্চার করেছি আমি...বিশ্বাস করো এসব কখনো করতে চাইনি আমি। কখনো না। কিন্তু তোমাকে হারাবার ভয়ে এগ্রেসিভ হয়ে এসব করে ফেলি। আমি তোমাকে হার্ড করতে চাইনি কায়নাত।তা করে ফেলছি। আমার মাথা ঠিক তাকে না কায়নাত।কি করি বলো?? তুমি ছাড়া বাঁচবো না আমি। এক মুহুর্তো না। প্লীজ বাবুইপাখি কাম ব্যাক। আমি প্রমিস করচ্ছি। আমি তোমাকে হার্ড করবো না। অনেক অনেননক ভালবাসবো প্লীজ বাবুইপাখি প্লীজ।কাম ব্যক বাবুইপাখি কাম ব্যাক কম।
শেষ কথা বলতে বলতে কুহুর কোলে মাথা রেখে ফুপিয়ে উঠলো ইউসুফ।ইউসুফের কান্নায় কুহুর বুব্যথা অনুভব করচ্ছে। কিন্তু কেন?ইউসুফের এই আলাদা রূপ দেখে আর কথা গুলো শুনেও কষ্ট লাগচ্ছে কুহুর।মনের মাঝে এই পাগল ছেলেটির জন্য মায়া অনুভব করছে সে। কিন্তু কি করার আছে তার। সে কি কখনো পারবে এই ছেলেটির সাথে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে পা বাড়াতে?? এটা কি আদ সম্ভব??
—————
অনেকক্ষণ যাবৎ একি ভাবে বসে ছিল কুহু। যার ফলে পা ব্যথা করচ্ছে তার। ইউসুফও একি ভাবে মাথা রেখে।কিন্তু নিশ্চুপ দুজনেই।নিরবতা ভেঙ্গে কুহু বলে উঠে,,
---আমার কথাটা একটু শুনবেন?
ইউসুফ মাথা তুলে তাকায়। কুহুর দু হাত তার হাতের মুঠে নিয়ে মুচকে হেসে বলে উঠলো,,
--সারাজীবন শুনবো।একটু কেন? অনেক টুকু শুনবো।বল..!
কুহু মাথা নত করে আমতা আমতা করে বলল,,
--আপনি এতখন যা বলেছেন আমি চুপ করে শুনেছি তাই না বলুন?(ইউসুফ মাথা নাড়ায় অর্থাৎ হে শুনেছ) তাহলে আমারটা এখন শুনবেন।(আবারো মাথা নাড়লো অর্থাৎ শুনবে) দেখুন।আপনি একা ভালবাসলেই কি চলবে! বলুন? আমারও তো ভালবাসতে হবে?কিন্তু সত্যি বলচ্ছি, আপনার জন্য ভালবাসাতো দূর, ভালবাসবো এ কথাটি মেনে নিতেই পারচ্ছি না আমি। আপনি বলুন যাকে মন থেকেই মানতে পারচ্ছি তার সাথে সারা জীবন কাঁটাবো কিভাবে?এটা কি সম্ভব। আপনি আগুন আর আমি পানি। আগুনের সাথে যেমন পানির মিল হয় না তেমনি আমাদের মিল অসম্ভব।আশা করি বুঝতে পেড়েছেন? বলে চোখ তুলে তাকাতেই আত্মকে উঠে সে।
ইউসুফ চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে বসে আছে।বিলাই চোখ গুলো ধারন করেছে টকটকে লাল রঙ্গে।যা দেখে কিছুক্ষণ আগের ভয়টা আবার এসে হাজির।তখনি ইউসুফ তার চোয়াল শক্ত করে বলে উঠে,,
--তার মানে তুমি আমার কাছে আসবে না? আমাকে ভালোও বাসবে না?আমাকে ফিরিয়ে দিতে চাইছো? তাই তো?
কুহু এবার ভয়ে ভয়ে বলল,,
---আপনি আমার কথাটুকু একটু....আহ্....
আর কিছু বলতে পারলো না কুহু। তার আগেই হাতের মাঝে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করলো। আর সাথে সাথে ঢলে পড়ল ইউসুফের বুকে। ইউসুফ বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলে উঠে,,
---আমি জানতাম কুহু তুমি আমার কথা এত সহজে মানতে না। তাই এই পদক্ষেপ। আজ যদি তুমি আমার সাথে চলে যেতে তাহলে এত কষ্ট পেতে হতো না বাবুইপাখি। এর জন্য সরি বলব না আমি।কখনো না। এর জন্য দায়ী তুমি। আজকের পর থেকে আমি যা বলবো তাই তোমার কাছে থাকবে সত্যি।
এসব বলে কোলে তুলে নিল কুহুকে। আর হাটা ধরলো।
🍁
পিটপিট করে চোখ খুলে কুহু দেখতে পেল মাথার উপর হোয়াইট ডিজাইন করা সিলিং। আশপাশ টা চোখ বুলাতেই আবিষ্কার করলো সুসজ্জিত খুব বড় একটি রুমের বেডে শুয়ে।যা অপরিচিত লাগচ্ছে তার কাছে। ধীরে ধীরে উঠে বসে সে। মাথায় ঝিমঝিম করচ্ছে। সারা শরীরে ব্যথা প্রচুর।মনে হচ্ছে কেউ পিটিয়েছে।বসা থেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে ডান বাম দেখে যাচ্ছে।কিছু বুঝে উঠতে পারচ্ছে না সে। মাথাটা খুব বেশী ঝিমঝিম করচ্ছে। কুহু মাটিতে পা রাখতেই পাশের সেন্টার টেবিলে চোখ পরে তার। টেবিল লেম্পের সাথে ছোট একটি ছবির ফ্রেম। যার এক পাশে একটি ছেলে আর আরেক পাশে একটি মেয়ের হাস্যজ্জল ছবি। দুজনেকে দেখে চেনা চেনা লাগচ্ছে।কিন্তু মনে করতে পাড়লো না কারা এরা। উঠে দাঁড়তেই গা গুলিয়ে বমি আসতে লাগলো তার।সামনে ওয়াশরুমের দরজা খুলা দেখে ঢুকে পরে। ভেসিনের সামনে গিয়ে বমি করে দেয়।বমি শেষে হাত মুখে পানি দিয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই দু কদম পিছয়ে থমকে যায় সে। কি মনে করে পিছনে ফিরে রুমে দৌড় লাগায় আর তাকতেই অবাক হলো। সেই ছেলেটির আর মেয়েটি অনেক ছবি এ রুমে। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় ছেলেটির সাথে কুহুর ছবি। ছেলেটিকে কি সে চিনে? মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছে সে?আর ও এখন কই?তার সাথে যোগ করে আরেকটি প্রশ্ন উৎপন্ন হয়, আমি! আমি কে? হু আই এম? কুহু কিছুতেই মনে করতে পারচ্ছে না।বার বার মনে করাতে সব ঘোলা হয়ে আসচ্ছে চোখের সামনে।মাথা আরো জোর চাপ দেয়ার চেষ্টা করতেই মাথায় চিন চিন করে ব্যথা অনুভব করতে লাগলো কুহু। ব্যথাটা ধীরে ধীরে তীব্র হতেই মাথা চেপে ফ্লোরে বসে পরে কুহু কিছুই মনে পড়চ্ছে না তার। এটা কেমন কথা? কেনই বা মনে পড়চ্ছে না?আর কিছু মনে হলেই এই ব্যথা কেন হচ্ছে?
তখনি খট করে দরজাটা খুলে যায়।আর ভিতরে ঢুকে সেই ছেলেটি। আর তার সাথে মাঝ বয়সী একটি লোক।কুহু তাদের দিক তাকিয়ে।ছেলেটি কুহুকে ফ্লোরে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে কাছে গিয়ে বলতে লাগে,,
---বাবুইপাখি আর ইউ ওকে? কিছু হয়েছে? মাথায় কি বেশী পেন হচ্ছে? তুমি ফ্লোরে কেন?প্লীজ কিছু বলো?
কুহু ছেলেটির দিক অবাক চোখে তাকায়।দেয়ালের ছেলেটিই সে।যার সাথে কুহুর ছবি।ছেলেটি কে? তার সাথেই বা কি সম্পর্ক তার? কুহু ভ্রু কুচকে বলে উঠে,,
---আপনি কে? আমি বা কে??আআর আপনার সাথে আমার ছবি কেন???
ছেলেটি অবাক হয়ে কুহুর দু গালে হাত রেখে বলল,,
---বাবুইপাখি আমাকে চিন্তে পারচ্ছো না??আই এম ইউর হাজবেন্ড। ইউসুফ! (ডাক্তারের দিক তাকিয়ে)কি হয়েছে ডাক্তার ও আমাকে চিন্তে কেন পারচ্ছে না? বলুন ডাক্তার?
ডাক্তার চিন্তিত কন্ঠে বলল,,
---আই থিংক সি লষ্ট হার মেমোরি!
ইউসুফ যেন আকাশ থেকে পড়ল। এমন ভাব করে ডাক্তারকে বলল,,
--কি যাতা বলচ্ছেন??
--আমি ঠিক বলছি।আপনাদের এত বড় এক্সিডেন্টের পর এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। (একটি কাগজ হাতে দিয়) এগুলো খাওয়ান তাহলেই খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।এসব বলে বের হয়ে গেলেন তিনি।ডাক্তার যেতেই ইউসুফ কুহুকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে যায়।এবং শুয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
--বাবুপাখি ঘুমাও ভয় পেও না আমি আছি তোমার পাশে।একটু ঘুমাও।
কুহু এতক্ষণ ধরে এসব কিছু দেখে যাচ্ছে কিছু বুঝতে পারচ্ছে না সে। মাথা ঘোরাচ্ছে এখন তার।চোখে সামনে আবারো ঘোলা হয়ে আসচ্ছে। সব কিছু কেমন মিথ্যে মিথ্যে লাগচ্ছে।সব কিছু?কিছু বুঝতে পারচ্ছে না সে। এই ছেলেটি কি সত্যি বলচ্ছে? নাকি এটা কোনো বড় ফাঁদ? যদি ফাঁদ হয়েই থাকে তাহলে এ রুমের মাঝে এতো সব ছবি? সব কি মিথ্যে? নাহ্ আর ভাবতেই পারচ্ছে না সে। মাথা হঠাৎ করেই চক্কর মারতে শুরে দিয়েছে আবার? তাহলে কি সে আবার জ্ঞান হারাচ্ছে??