অনুভবে - পর্ব ০৬ - নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা - ধারাবাহিক গল্প


এই মুগ্ধময় দৃশ্যের শোভা বাড়াচ্ছে সভ্যের গান,
"মেঘ সায়রে ভাসবো আবার তুমি আমি মিলে
স্বপ্ন তোমার রূপকথার 
আমার স্বপ্ন তুমি 
ও প্রিয়তমা, ও প্রিয়তমা তোমার স্বপ্নে বাঁচি আমি,
আমার হৃদমাঝারে কেবল তুমি..." 

সভ্যের দৃষ্টি যেয়ে থামে ইনারার দিকে। সে রুমের দরজায় হেলান দিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে, "অবশেষে তাহলে তোমার ঘুম ভাঙলো। প্রায় এক ঘন্টা ধরে ঘুমাচ্ছ।" 

সভ্যের এমন কথা হজম করতে কষ্ট হয় ইনারার, "আপনি কি আসলেই মানুষ না রোবট বলেন তো। মনে মায়া মমতা কিছু নেই? কোথায় বলবেন, 'আমার গান বাজানোর কারণে তুমি ঘুম থেকে উঠে গেছ? আহারে! সরি। আমি তোমার ঘুম নষ্ট করতে চাই নি।'তা না বলে খোঁটা দিচ্ছেন? অনুভূতিহীন প্রাণী। আপনার জন্যই ঘুমে শেষ আমি। সকাল সাতটায় কে উঠে?"
"তোমার চাকরি লাগবে?"
"ভাবতে গেলে সকালে ঘুম থেকে উঠা স্বাস্থ্যের জন্য তো ভালো। ক'দিনেই অভ্যস্ত হয়ে যাব।"
"গুড, আসো এবার। আর একটা শব্দও মুখ দিয়ে বের করবে না।" 

সভ্য তার ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে গেল। পিছনে ইনারা ব্যঙ্গ করে তার পিছু এলো। দরজার কাছে এসে তার নিজের ব্যাকপ্যাকের কথা মনে পড়ে। সোফা থেকে তার ব্যাগ নিতে যেয়ে দেখে সেখানে একটি কম্বল। কম্বলটা তার উপর দেওয়া ছিলো। সভ্য দিয়েছে? তাহলে সে সবে তার ঘুম নিয়ে এত রুক্ষ ব্যবহার করল কেন? ইনারার সবে মাথায় এলো সভ্য তাকে চাইলেই বকা দিয়ে ঘুম থেকে উঠাতে পারতো। এভাবে তার জন্য অপেক্ষা করতো না। অর্থাৎ লোকটা এতও খারাপ না। মন থেকে খারাপও না। কেবল নিজেকে কঠিন দেখায়। কিন্তু কেন? সকলে বলে সভ্য একটা রহস্য। তার ব্যক্তিগত জীবনের ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কেউ জানে না। তার মনে কি চলে কখনো কেউ জানতে পারে না। হঠাৎ ইনারার আগ্রহ বাড়ে। সে উৎসুক হয়ে বলে, "রহস্য যত ইনারার আগ্রহও ততই বেশি। ওই অসভ্যের খোঁজ তো এবার আমি নিব। আর জোহানের সাথে কি হয়েছে তাও জানবো। ডিটেকটিভ ইনারা মোড অন।" 

"এই মিস বকবকানি কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি?" সভ্য দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকে তাকে। অপেক্ষা করতে করতে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে তার। তার কন্ঠ শুনতেই ইনারা দৌড়ে আসে। সভ্য আবার বলে, "এত ধীরে ধীরে কাজ করে মানুষ? জলদি চলো।" 

সভ্য নিচের গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে ইনারাকে বসতে বলে। সে স্বভাবতই গাড়ীর পিছনের সিটে যেয়ে বসে। সভ্য কাঠখোট্টা গলায় জিজ্ঞেস করে, "মহারাণীর মতো পিছনে বসেছ কেন? আমি কি তোমার ড্রাইভার?"
ইনারা খোঁটাটা ধরতে পারে না। সে উৎসুক গলায় বলে, "মহারাণী? আপনারও মনে হয় আমাকে রাজপরিবারের মেয়ের মতো দেখা যায়? আমার ফুপাও তাই বলে। সে আমাকে রাজকুমারী বলে ডাকে জানেন?" 

সভ্য বিড়বিড় করে বলে, "কোন পাগল-ছাগলের পাল্লায় পরলাম আমি!" 
সে নিজেকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে বলে, "তুমি যে মেয়ে তাই তো বুঝা যায় না, রাজকুমারী তো দূরের কথা। এখন সামনে এসে বসো। আমি তোমার ড্রাইভার না।"
ইনারা মুখ ফুলিয়ে মিনমিন করে বলে, "অসভ্য, রাক্ষস, বেয়াদবগিরির বাদশাহ। ব্যাঙের মতো মুখে যেন নিমপাতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।" 

গাড়িতে ইনারা কথা বলেই যাচ্ছিলো এবং সভ্য কেবল বিরক্ত হচ্ছিলো। মেয়েটাকে চাকরি দেবার প্রধান দুটো কারণ ছিলো। এক, মেয়েটা কোনো দিক থেকেই তার জন্য পাগল নয় অর্থাৎ তাকে বিক্ষুব্ধ করার কোনো উপায় নেই। দুই, তার সাথে বেয়াদবিটা এক ধরনের অপরাধ। এই অপরাধের দণ্ড দেবার জন্য মেয়েটারকে কাছে রাখতে হলো। তবে হলো উল্টো, মেয়েটা তাকে বিরক্তও করছে এবং সকাল থেকে এত কথা বলে তার উপর একপ্রকার অত্যাচার করছে যেন। তাকেই দণ্ড দিচ্ছে। 

অফিসের দরজার থেকে রিহার্সাল রুমে যাওয়া পর্যন্ত ইনারা অনেক গীতিকার এবং অভিনেতার দেখা পায়। তাদের দেখে উৎসুক হয়ে যায় ইনারা। এই কিছু মুহূর্তেই সে যে এত বিখ্যাত মানুষের দেখা পাবে তা কল্পনাও করেনি। বাচ্চাদের মত খুশি হয়ে যায় সে। রিহার্সাল রুমে যেয়ে সভ্যকে বলে, "বাপরে এত নামজাদা মানুষ একসাথে! আপনি প্রতিদিন তাদের সাথে দেখা করতে পারেন?"
"এই নামজাদা আবার কী?"
"আরে নামজাদা বুঝেন না? বিখ্যাতকে নামজাদা বলে। এত নামজাদা মানুষ একসাথে? কী ঝাক্কাস ব্যাপার।"
"এই ঝাক্কাস আবার কী?"
"আপনি মানুষ না অন্যকিছু বলেন তো? কোনো কথাই বুঝেন না আপনি। মাথাটা ছালাফালা করে দিলেন।"
"তুমি কী এইসব শব্দ কোনো ডিকশনারিতে পেয়েছ, না'কি নিজে বানিয়েছ।"
"ছিঃ ছিঃ পাঠ্য বই পড়ে কুল কিনারা খুঁজে পাই না আবার ডিকশনারি পড়তে যাব।"
সভ্য বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে। এই মেয়ের সাথে কথা বলা এবং নিজের মাথায় হাতুড়ি মারাটা ঠিক এক। অবশেষে তাকে বলতে হলো, "চুপচাপ সোফায় বসে থাকবে, একটা কথাও বললে বের করে দিব রুম থেকে।"
"তাহলে তো আমি সব নায়ক আর অভিনেতার সাথে দেখা করতে পারবো তাই না?"
"চাকরি থেকেও বের করে দিব।"
"আমি সোফায় চুপচাপ থাকছি।" 

অনেকক্ষণ সোফায় চুপচাপ বসে থেকে ইনারা সভ্যকে দেখলো। এই বিশাল কক্ষে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র রয়েছে। এমনও বাদ্যযন্ত্র রয়েছে যা সে আগে কখনো দেখে নি। এর মধ্যে সভ্য পিয়ানো এবং ভায়োলিন বাজানোর প্রাক্টিস করে। অন্যদিকে ইনারা বসে থাকে ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে। তার কিছুই ভালো লাগছে না। এভাবে চুপচাপ সে বসে থাকতে পারে না। অনেক সময় পরই দরজা খোলার শব্দ পেল ইনারা। দেখে ইরফান এবং সামি এসেছে। সামি রুমে ঢুকতেই তাকে জিজ্ঞেস করে, "আরে তুমি গতকালের মেয়েটা না যে চাকরির জন্য এসেছিলে? গতকালের কাহিনীর পরও সভ্য তোমাকে চাকরিতে রেখেছে, বাহ!"
"আপনারা সবসময় এই সময়তেই আসেন?"
"হ্যাঁ।"
"তাহলে উনি সকাল সকাল আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ঘোড়ার মতো ভাগাচ্ছে কেন?" 

"তোমাকে মোটেও ঘোড়ার মতো দেখা যায় না। ছোট ইঁদুর যে ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকে না? ঠিক তার মতো দেখা যায়।" সভ্য তার চর্চা করতে করতেই বলল। 
ইরফান এবং সামি দুইজনের ফিক করে হেসে দেয়। আর ইনারা মেজাজ খারাপ করে, "আর আপনাকে যেন কোনো স্বপ্নের রাজকুমারের মতো দেখা যায়।"
"একদম। মেয়েরা তাই বলে।"
"ব্যাঙ রাজকুমারের মতো দেখা যায়।"
সভ্য চোখ রাঙিয়ে তাকায় ইনারার দিকে, "কী বললে তুমি?"
"যা সত্যি তাই বলেছি। আপনি আমাকে বলতে পারেন, আমি পারবো না? একশোবার বলব। ব্যাঙের মতো দেখা যায়, ব্যাঙের মতো দেখা যায়, ব্যাঙের মতো দেখা যায়। আরও বলব। কী করবেন আপনি?"
ইরফান এবং সামি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে ইনারার দিকে। তারা আগে কখনো কাওকে সভ্যের সাথে এভাবে কথা বলতে দেখে নি। কেউ সাহস-ই করে নি।
"আমি জানতাম তুমি ওই ফাজিল মেয়েই যে কনসার্টে এসে পাগলামি করেছিলে।"
"তো আপনি এখন কি করবেন শুনি।"
"তোমাকে আমি..." 
ইরফান দেখে পরিস্থিতিটা এখন আসলেই বিগড়ে যাচ্ছে। দুইজনের ঝগড়া থামার নামই নিচ্ছে না। সে সভ্যের পাশে যেয়ে তাকে থামায়। আর সামিকে বলে, "ও তো অফিসে নতুন এসেছে। ওকে অফিস দেখিয়ে আয়।"
"এখনই যাচ্ছি।"
সামি ইনারাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। 

সভ্য রাগে কটমট করতে থাকে। ইরফান তাকে বলে, "ব্রো তুই এভাবে একটা মেয়ের সাথে তর্কাতর্কি করছিস? এটা শোভা দেয় তোকে?"
"মেয়ে? এইটা আস্তো এক চলাফেরা করা বিপত্তির ভাণ্ডার। সকাল থেকে আমার মাথা নষ্ট করে দিয়েছে। মাথা ব্যাথা হয়ে গেছে আমার।"
ইরফান মিটিমিটি হাসে কথাটায়, "তোর মাথা খারাপ করে দিয়েছে? মেয়েটা আসলেই এক জিনিস তাহলে।"
"খবরদার হাসবি না।"
"আচ্ছা ভাই, তুই শান্ত হ। প্রয়োজনে মেয়েটাকে চাকরি থেকে বের করে দে। এত কষ্ট করে রাখার প্রয়োজন কী?"
"মানে আমি হার মেনে যাব? সভ্য পরাজিত হবে এমন এক পাগল মেয়ের সামনে? অসম্ভব। ওই মেয়ের জীবন আমি হারাম করে ছাড়বো। আমাকে চেনে নি তো। আচ্ছা বাদ দে, ওকে আমি দেখে নিব। ঐশি কোথায়?"
ইরফান কিছুসময় চুপ থাকে। তারপর বলে, "ও কল দিয়েছিল। আসবে না।"
"এটা কী আবার মি. শাহেদ হকের কারণে?"
"আর কোন কারণে হতে পারে?"
সভ্য উঠে দাঁড়াতেই ইরফান জিজ্ঞেস করে, "কোথায় যাচ্ছিস?"
"ঐশিকে নিয়ে আসতে।"
.
.
"এই রাক্ষসের সাথে থাকেন কীভাবে আপনারা? শয়তান, ফাজিল, অসভ্য একটা!" ইনারা রাগে ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলে। তার হাতে বার্গার। বড় এক কামড় দিয়ে আরও কিছুও বলে সে। তা বোঝা যায় না। কথা না বুঝলেও সামি বুঝতে পারে নিশ্চয়ই সভ্যকে বকছে সে। তাই সে তালে তাল মেলায়, "অসভ্য মানে ভীষণ রকমের অসভ্য। গতকাল কথাগুলো বলায় আমাকে একশোবার কান ধরে উঠবস করিয়ে আবার রাতে সালাদ দিলো খেতে। মানুষ এসব কীভাবে খায়?"
"আয়হায়, বলেন কি? সাহস কত বড় হয় ওই অসভ্যের। ওই অসভ্য থেকে এটাই আশা করা যায়। আপনি বার্গার খাবেন?"
"না, থাক। আমি জাঙ্কফুড এড়িয়ে চলি। সকালে কেবল ফ্রাঞ্চটোস্ট খাই এতটুকুই সারাদিনের একমাত্র মজাদার খাবার, নাহয় সারাদিন সালাদ আর প্রোটিন জাতীয় খাবার খেয়ে বাঁচতে হয়।"
"আয়হায় কেন?"
"বুঝলে এমন ইন্ডাস্ট্রিতে আছি যেখানে মানুষ কাওকে নিয়ে খারাপ কথা বলার ফ্রী লাইসেন্স পেয়ে যায়। তুমি সম্ভবত জানো, ব্যান্ড শুরু হবার প্রথম দিকে আমার স্বাস্থ্য অনেক বেশি ছিলো। একারণে অনেক সোশ্যাল মিডিয়াতে বুলিং করা হতো। সামনা-সামনিও। এসব দেখে মানসিক অশান্তি হতো। তাই ওই অশান্তি থেকে এই তেল মসলা ছাড়া খাবারই ভালো। আর জানো সভ্য মুখের উপর যত বাজে ব্যবহারই করুক না কেন, ও আমাদের ব্যান্ডের সবচেয়ে কেয়ারিং পার্সোন। ওর মনটা সবচেয়ে ভালো। আমাকেও ওই এই অশান্তি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। এমনকি আমি জলদি ওজন কমানোর জন্য অনেক বাজে রাস্তা ব্যবহার করছিলাম। ওই আমাকে মনে করাল, আমি যেমন তেমনই পার্ফেক্ট। অন্যের কথার জন্য নয়, নিজের স্বাস্থ্যের জন্য যা ভালো তা করা উচিত।" 

সামি'র প্রথম কথাগুলো শুনে ইনারার মন প্রথমে খারাপ হলেও শেষের কথাগুলো শুনে তার ঠোঁটের কোণে হাসি এঁকে উঠে। তার মনে পড়ে সভ্য সকালে কীভাবে তাকে নাস্তা বানিয়ে দিয়েছিলো। আবার ঘুমানোর পর তাকে ঘুম থেকে না উঠিয়ে তার জন্য অপেক্ষাও করেছিলো। সে বলে, "তা ঠিক সে এতটাও খারাপ না। আমাকেও সকালে নাস্তা বানিয়ে দিয়েছে। অনেক মজার ছিলো।"
"তাই না? ওর রান্না অসম্ভব মজার। আমাকে ডায়েট ফুড করে দেয় তাও মন চায় খেতেই থাকি।"
"তার আম্মু মনে হয় অনেক ভালো রান্না করে, তার থেকে শিখেছে তাই না?"
"ঠিক জানি না। আমি সভ্যের পরিবারের কারও সাথে দেখা করি নি।"
"বলেন কি? ছয় বছর হলো তাও না?"
"আমি তো পরে এসেছি। জোহান ওর সর্বপ্রথম বন্ধু। ওরাও আজ পর্যন্ত ওর পরিবার সম্পর্কে কিছু জানে না।"
"জোহান এবং সভ্য বন্ধু!" হতবাক হয় ইনারা, "তাহলে কী মিডিয়াতে যে বলে ওরা একে অপরকে দেখতে পারে না। সে খবর কি তা মিথ্যা?"
"ঠিক মিথ্যা বলা যায় না। ওরা সবার কাছের বন্ধু ছিলো কিন্তু দুইবছর পূর্বে হঠাৎ করে কি যেন হলো, একে অপরের চেহেরা দেখতেও নারাজ তারা। আমাদের ব্যান্ড তৈরি হবার পরপরই এমনটা হয়েছে। জোহানও এরপর অনেকটা পরিবর্তন হয়। ব্যক্তিগত জীবন পাশে রেখে এখনো কাজ করে একে অপরের সাথে, তবে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। বললে ঝগড়া ছাড়া কিছু হয় না।"
"নিশ্চিত ওই অসভ্য কিছু করেছে। জোহান এত ভালো, ও খারাপ কিছু বলতেই পারে না।"
একথায় সামি চুপ হয়ে যায়। কিছু বলে না। তাকে খানিকটা অপ্রস্তুত দেখায়। তার ঠোঁটের হাসিটা কিছু মুহূর্ত আগের মতো নেই। 

ইনারা বার্গারের সাথে একটা কাপকেক এবং কোক নিয়েছিলো, তা সে সামির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, "একটা খেয়ে নিন। কেউ জানবে না। কি আছে জীবনে? বুড়াকালে যেয়ে আফসোস করতে হবে। মাঝেমধ্যে একটু মনমতো খেয়ে নিতে হয়।"
"তবুও আমার ডায়েট..." সামির কেক দেখেই মুখে পানি চলে আসে। সে করুণ দৃষ্টিতে কাপকেকের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, "আমার ডায়েট কেককে এডজাস্ট করে নিবে। এতটাই মাইন্ড করবে না।"বলেই জলদি করে কেকটা নিয়ে খেতে শুরু করে। 

কক্ষে ফিরে এসে সভ্যকে না দেখতে পেয়ে সামি তার কথা ইরফানকে জিজ্ঞেস করে জানতে পায় সভ্য ঐশির কাছে গেছে। ইনারা তো মহাখুশি। কিছুক্ষণ শান্তিতে কাটাতে পারবে। কিন্তু তার শান্তি ছিলো খানিক সময়ের। কিছুক্ষণের মাঝেই সভ্য ফিরে আসে। ইরফান জিজ্ঞেস করে, " ঐশি আসে নি?"
সভ্য ইনারাকে একটিবার আড়চোখে দেখে, "শরীর ভালো না। তাই দেখা করে নি।"
কেউ কিছু বলে না। ইনারা জিজ্ঞেস করে, "কী হয়েছে ঐশি আপুর?"
"ঠান্ডা লেগেছে।" বলে সভ্য তার সোফায় যেয়ে বসে হাতে গিটার নেয়। গিটারের তার ঠিক করার সময় ইনারা বলে, "আপুর ছোটবেলা থেকেই অসুখ বেশি থাকে৷ কোল্ড এলার্জির কারণে তো প্রায়ই জ্বর ঠান্ডা থাকেই।"
সভ্য চমকে তাকায় ইনারার দিকে। ঐশির কোল্ড এলার্জির কথা খুব কম মানুষেরা জানে। 

সামি বলে, "তাও উনি বসে বসে আইস্ক্রিম খাবে আর ঠান্ডা লাগাবে।"
"ভাই বোন দুইজনই একরকম। জোহানেরও চিংড়িতে এলার্জি কিন্তু তাও সে প্রতিদিন খেত। তার সবচেয়ে প্রিয় খাবার যে।" 

"আর তা তুমি কীভাবে জানো?" সভ্য জিজ্ঞেস করে। ইনারা হতবুদ্ধি হয়ে ফটফট করে পেটের সব কথা বলে দিলো অথচ এর পরিণাম কি হবে ভাবলো না। সে এক ঢোক গিলে। আমতা-আমতা করে বলে, "কী...কী জানবো?"
"ওদের এলার্জির কথা।"
"এ-এটা তো সবাই জানে।" ভীত সুরে বলে ইনারা। সভ্য ততটাই কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করে, "না, এটা সবাই জানে না। খুব কাছের মানুষ ছাড়া কেউ-ই জানে না। তোমার ওদের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই, তাহলে তুমি কীভাবে জানলে?"
.
.
.
চলবে....................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন