বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে কিন্তু এদের ঝগড়া থামেনি। রুমের ভিতর তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেছে বাতাসি আর রূপসার। হাতে এত এত প্রমান থাকা সত্ত্বেও রূপসা থামার মত মেয়ে নয়। একে একে বাসার সবাই এসে জড়ো হলো। লাবীবা বেগম সাদকে নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলো তার শাশুড়ী অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছে। সাদ চিৎকার চেচামিচিতে ভয় পেয়ে ওর দাদীকে ঝাপটে ধরেছে। কারন রূপসা বার বার মাহাদের নাম নিয়ে জোড়ে জোড়ে চিৎকার দিয়ে কথা বলছে।
কামরান সাহেব সাদকে ওভাবে দেখেই দ্রুত এগিয়ে এলেন। স্বামীকে এগিয়ে আসতে দেখে লাবীবা বেগম উত্তজিত হয়ে হয়ে জিঙ্গেস করলেন-
~" এই এখানে কি হচ্ছে! মাহাদ কই? মাহাদের সাথে আবার কি ঘটলো!"
কামরান সাহেব রেগে গিয়ে চোখ কটমট করে তাকালো লাবীবার দিকে। তিনি এত চিৎকার চেচামেচির ভিতরও নিচুগলায় বলে উঠলেন-
~" তুমি কবে একজন দায়িত্ববান নারী হয়ে উঠবে! সাদকে এখানে নিয়ে এসেছ কেন? দেখছোনা, ওর রিয়াক্ট কেমন হচ্ছে! তাও আবার ওর বাবার নাম ধরে এখানে ঝগড়া চলছে!"
লাবীবা ঠিকমত কথা শুনতে পেলোনা। কিন্তু কামরান সাহেব আর এক মুহুত্বও দেরী না করে সাদকে কোলে নিয়েই রুম থেকে বের হয়ে এলেন।
সাদ ওর দাদাজানের গলা জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলো। কামরান সাহেবের ইচ্ছা হচ্ছে এখুনি এখান থেকে ছুটে চলে যেতে। ছেলেটার সম্মান আর রাখলোনা রূপসা। কথাগুলো ভাবতেই তিতিরের কথা মনে হল। এই মেয়েটা শেষে তিতিরের কোন ক্ষতি করেনিতো! ও থাকলেতো এতক্ষনে চলে আসতো!কামরান সাহেব খানিকটা অস্থির হয়ে তার এক দেহরক্ষীকে বলল-
~" দেখতো, আমার ছোট বৌমা কোথায় আছে?"
এমন সময় সাবিনা কাছে এসে বলল-
~" সাহেব, কারে খুজতাছেন?"
~" সাবিনা, তিতির কোথায় রে! তুই কি ওকে দেখেছিস! মেয়েকে রেখে ও কোথায় গেছে?"
~" আপা তো ভাইজানের পিছে পিছে গেল অতিথীরে অ্যারো দিয়া। কিছু দরকার ছিলো?"
মাহাদের সাথে গেছে! কামরান সাহেব কথাটা বলেই ফোন বের করে ডাইভারকে কল দিয়ে বলল-
~" সাবের, মাহাদ কি গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেছে?"
~" জ্বী স্যার, ছোট সাহেব তো প্রচন্ড রেগে ছিলো। ম্যাডাম আর গোলাবও তার সাথে গেছে।"
আচ্ছা ঠিক আছে। কামরান সাহেব কিছুটা হলেও মনে শান্তি পেলেন। তিতির সাথে যাওয়া মানে মাহাদকে শান্ত করা ওর বাম হাতের খেল। থাক্ কিছুটা সময় তারা একান্তে কাটাক।
♥
রূপসার বর তুষার কিছু বুঝতে পারছেনা। মাহাদ আর যাই হোক এমন কাজ সে কখনো করবেনা। সে মাহাদ সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। তার স্ত্রীকে নিয়ে কম কাহিনী হয়নি। এমন একটা মহান পুরুষ কেন তার স্ত্রীর সাথে এমন অশোভন আচরণ করবে। তুষারকে দেখে বাতাসী বিবি চিক্কুর দিয়ে বলল-
~" তোমার নষ্টা বউয়ের বিচার করো। অ্যার কতাতো বিশ্বাস করেনা কেউ! দেহ তোমার বউয়ের হাতে ঐ যে ক্যামেরা আছেনা! সেহানে সব প্রমান আছে। একটু ভালা কইরা দেহ! এত বছর সংসার করতাছো আর বউরে চিনতে পারলানা!"
বাতাসির ভাষা কিছুটা হলেও শুদ্ধ হয়েছে, যা শুনে নিসা খানিকটা অবাক হয়ে গেল। এই মহিলা আর কত নাটক করবে!
এদিকে বাতাসির কথা শুনেই রূপসা ওর হাতে রাখা ক্যামেরাটা এত জোরে ছুরে মারলো যে সেটা সাথে সাথেই ভেঙ্গে গেল।
তুষার সাথে সাথে রূপসার হাত চেপে ধরে বলল-
~" তুমি ওটা ফেলে দিয়ে ভাঙ্গলা কেন?"
~" ওখানে কিছু নেই। ওটা ওদের দাদী আর নাতির সাজানো প্লান ছাড়া কিছু না। তাছাড়া দেখছোনা, মাহাদ কাজগুলো করে চোরের মত পালিয়ে গেছে! ওর কি আর মুখ দেখানোর জো আছে নাকি! আর এত কিছু দেখেও আবার আমাকে প্রশ্ন করছো কেন!"
নিসা ক্ষেপে গেল রূপসার কথা শুনে। বিয়াদপ অসভ্য মেয়ে কোথাকার। এক থাপ্পড়ে দাতের মাড়ি খুলে ফেলবো। আর কত নাটক করবে! মাহাদ যদি তোমার উপর হামলা করে তাহলে তুমি মাহাদের রুমে কেন রয়েছ! তাহলে মাহাদের তো তোমার রুমে থাকা উচিত ছিল। তুমি এখানে কি করছো? আর তোমার মত মেয়ে উপর মাহাদের নজর থাকলে ও তিতিরকে বিয়ে করতোনা। তোমার কাহিনীতো আমরা কম জানিনা!
রূপসা নিজেকে বাঁচানোর জন্য নানা কথা বলে যাচ্ছে মাহাদের নামে। এবার লাবীবা আর ফুয়াদ রেগে গেল রূপসার উপর। হারামজাদা নে ঐ ফকন্নির পক্ষে নেহ্! কেমন করে মিথ্যা কথা বলছে দেখ বলে বাতাসী ফুয়াদকে সবার সামনে ইচ্ছামত গালাগাল দিতে লাগলো। উমহ্ হাজী মহসিন আইছে। দরদ যেন উতলে পড়ছে। মন চাইতাছে তোর চোপাই ভাঙ্গি।
নানী চুপ করবেন! তোমাদের এত সম্মান দিয়ে দাওয়াত করে আনলাম আর তার প্রতিদান এভাবে তোমরা দিচ্ছো! তোমরাতো দেখছি অকৃতঙ্গের দল....
রূপসার এমন কথায় তুষার ঠাশ্ ঠাশ্ করে সবার সামনে থাপ্পড় মারলো রূপসাকে। এই তুমি যদি এতই সত্যবাদী হও তাহলে ঐ ক্যামেরা ভাঙ্গলে কেন! আমাকেও দেখতে দিতে! সেখানে কি ছিল? তোমার আচরনই বলে দিচ্ছে তুমি কতটা খারাপ কাজ করেছ! বিয়ের আগে যদি আমি জানতাম তোমার ব্যবহার এরকম তাহলে তোমাকে বিয়ে করাতো দুরে থাক, তোমার মুখ অবদি দেখতামনা।
আমি সত্যি বলছি তুষার! এমন কাজ আমি করিনি বলে সবার সামনে রূপসা কেঁদে উঠলো। আমার সন্তান আছে, আমি কেন এসব করবো বল!
হ্যা তাইতো! তোমার তো সন্তান আছে। সেই সন্তানের মাথা ছুয়ে এবার বলবা, তুমি সত্যিই কথাগুলো বলছো কিনা! তাহলে আমি তোমার সব কথা মানবো। কথাগুলো বলে তুষার রূপসাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতেই রূপসা থমকে দাড়ায়। সে আর তুষারের সাথে যেতে চায়না। অবশেষে সে তুষারের পায়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো আর নিজের দোষ স্বীকার করল। সবার সামনে তুষারের মাথা হেট হয়ে গেল।
কত আনন্দে তার পরিবার এমন একটা নামজাদা পরিবারকে নিমন্ত্রন করেছিল। সবার সামনে কত গর্ব ভরে নিজের ভাগ্যর প্রসংসা করছিল। কিন্তু নিজেরই স্ত্রী সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। আর মুখ দেখানোর জো রইলোনা। তুষার রূপসার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল-
~" আর যাই হোক, আপনার মেয়ের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি আপনার মেয়ের থেকে আলাদা থাকতে চাই।"
রূপসার বাবার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল। নিজ শাশুড়ীর দিকে কঠোর চোখে চেয়ে বলল-
~" আজ যদি আমার মেয়ের সংসার ভেঙ্গেছে তো মনে রাখবেন, আপনার মেয়েরও সংসার ভেঙ্গে যাবে শুধু মাত্র আপনারই কারনে।"
সংসার ভাঙ্গলে অ্যার কি! মজিদ সাহেব জানতো, সে একখান হারামজাদা পুত জন্ম দিছে। তাই সব কিছু জাইনায় হের পুতের নামে কোন সম্পত্তি দেয় নাই। সব অ্যার মাইয়ার নামে লেইখা দিছে। তাই বাউস্তব হারা না হওন চাইলে অ্যার মাইয়ারে নিয়াই থাকতে হবে। আর যদি অ্যার মাইয়ার শরীরে কেউ ফুলের টোকাও দেয় তাহলে তারে জেলের ভাত খাওয়ামু। অ্যার মাইয়া না থাকলে তারে যে ভিক্ষা কইরা খাইতে হইত, হেইডা কি সে ভুইলা গেছে?
কথাগুলো বলে বাতাসি বিবি ফুয়াদকে একটা হোচনা মেরে বলল-
~" সার্কাস দেখাতাছোস! বাড়ীত চল। এইখানে এক দন্ডও থাকুমনা। এরা সগ্গলে এক রহম।"
রজনী কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলোনা। রূপসা কেঁদেই চলছে। রূপসার কান্না দেখে বাতাসি ভুবন জয়ী একটা হাসি দিয়ে বলল-
~" যেইতা কা তেইতা মিলে
রাজা কা রানী!
খাপসা কা খাপসী মিলে
ভুসা কা ভুসানী....।"
যার যেমন যোগ্যতা তার তেমনই সঙ্গী মিলবে....... আর মাহাদ কইছে ওর বিচার যদি তোমরা না করো তাইলে ও নিজেই ঐ ছুড়ির বিচার করবো। ওর বিচার মানে তোমার মাইয়া সহ তোমার ইজ্জত শেষ। মনে রাইখো পাপ বাপকেও ছাড়েনা।
ফুয়াদ রুম থেকে দ্রুত বের হয়ে ওর বাবার কাছে এসে বলল-
~" বাবা, মাহাদ কোথায়! সবাইকে রেডী হতে বলেন, আজই বাসায় চলে যাব আমরা।"
~" মাহাদকে ফোন দে তো! ও কল ধরছেনা।"
ফুয়াদ মাহাদকে কল দিতেই বাতাসী ফোন নিয়ে নিচে নেমে এসে বলল-
~" মাহাদের ফোনতো এই হানে।"
বাদ দেনা! ওর সাথে তিতির আছে। অত টেনশন করিস না। ওরা আসলে বের হয়ে যাব আমরা। ওকে একটু সময় দেওয়া উচিত।
ফুয়াদ আর কথা বললোনা। ফুয়াদ সাদকে শুধু বলল-
~" বাবা গোলাব কই!'
~" গোলাব ভাইয়া তো বাবার সাথে গেছেন বড়বাবা।"
আচ্ছা ঠিক আছে বলে ফুয়াদ অন্যদিকে চলে গেল। এতসব ঘটনা শুধু রূপসার বরই জানে। তাই ফুয়াদ সহ সবাই স্বাভাবিক আচরন করছে। হাজার হলেও রূপসার ঘর ভেঙ্গে যাক তারা সেটা চায়না।
♥
জনমানব শূন্য রাস্তা তাও আবার শীতের রাত। চারদিকে কুয়াশায় আচ্ছন্ন রাস্তাঘাট। দুর দুরান্ত থেকে শেয়াল আর বিভিন্ন প্রানীর আওয়াজ ভেসে আসছে। মাহাদ নেতিয়ে পড়েছে। গাড়ীর ভিতরের লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা গেল মাহাদের চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু ঝড়ছে। কিছুক্ষন আগেই তাকে কারা যেন গুলি করেছে।
ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটেছিল যে কোন কিছু বোঝার আগেই কিছুক্ষন পর একদল লোক গাড়ীর দিকে দৌড়ে এল। মাহাদ বাম হাতে গিয়ার বাড়িয়ে দিয়েই গাড়ী আবার ঘুড়িয়ে সামনে নিয়ে যেতে লাগল ফুল স্পীডে। তিতির স্তব্ধ হয়ে গেছে। মন যা ভেবেছে তাই হয়েছে। মাহাদের ক্ষত স্থান দিয়ে অঝোরে রক্ত বের হচ্ছে। তিতির ডুকরে কেঁদে উঠলো। আল্লাহ্ এতবড় পরীক্ষা আমার নিবেন না। যা আমার সহ্যর বাহিরে। তিতির হাত দিয়ে ক্ষতস্থান চেঁপে ধরেই গাড়ীর ভিতরের লাইট বন্ধ করে দিল। একহাতে হিজাব টেনে খুলে সেটা দিয়ে চেঁপে ধরলো গুলি লাগার স্থানে। মাহাদ অনেক কষ্ট বলে উঠলো-
~" তিতির, যাই কিছু ঘটুক না কেন তুমি কোন শব্দ করবেনা। এমনকি গাড়ী থেকে বেরও হবেনা। এটা আমার আদেশ।"
মাহাদ ভালো করেই জানে এদের কাছে তিতির কতটা অ-নিরাপদ। যদি ঘুনাক্ষরেও টের পায় ওরা, মাহাদের স্ত্রীও সাথে আছে তাহলে সব শেষ করে দিবে। এতে তিতিরের সম্মানহানি করতে ওরা একটুও ভাববেনা।
তিতির আল্লাহ্কে ডাকছে আর কেঁদেই চলছে। শত্রুদের ফেলে তারা অনেক দুরে চলে এসেছে। এমন সময় অন্য একটি দল রাস্তা আগলে পাঁচটা গাড়ী নিয়ে দাড়িয়ে আছে। পিছনেও ওদের ফলো করে আরো গাড়ী আসছে হয়ত। আর কোন উপায় না পেয়ে তিতিরের সুরক্ষার জন্য মাহাদ গাড়ী থামালো। গাড়ী থামতেই কয়েকজন লোক এসে মাহাদকে টেনে হিচড়ে গাড়ী থেকে নামালো। মাহাদ এর মধ্য ঐ অবস্থায় অন্ধকারে তিতিরের হিজাব তিতিরের দিকে ছুড়ে মেরেই গাড়ীর হেডলাইট সহ ডোর বন্ধ করে দিল। যাতে ওরা তিতির ও গোলাবকে দেখতে না পায়।
মাহাদকে ওরা রাস্তার মাঝখানে টেনে নিয়ে গেল। এরপর একটা লোক হকিস্টিক দিয়ে পায়ে কয়েকটা বারি দিয়েই ওর চুল ধরে মুখটা উপরে তুলে বলল-
~" আমায় চিনতে পেরেছিস? তোকে বহুদিন থেকে ফলো করছি। আজ তোকে নাগালে পেলাম। বাপ মন্ত্রী, বড় ভাই পুলিশের উদ্ধতর্ন কর্মকতা, তুই বিশাল বিজনেসম্যান। তুই কি ভেবেছিস এত স্ট্যাটাস তোকে বাঁচাতে পারবে? আমি ভুলি নাই সেই দিনের কথা। যেদিন ভরা থানায় তোর ভাই আর সমস্ত পুলিশদের সামনে আমাকে তুই বেদম মেরেছিলি। তোকে বলেছিলাম, আজ থেকে তোর মৃত্যুর দিন গুনে রাখ। আজ সেই দিন এসেই পড়েছে। আজ কিভাবে মারবি আমাকে! মেরে দেখা.......!"
কথাগুলো বলে এলোপাথারি মাহাদের শরীরের উপর হকিস্টিকের বারি পড়তে লাগলো। তিতির গোলাবের মুখটা চেঁপে ধরে গাড়ীতে বসে অঝোড়ে চোখের জল ফেলছে আর আল্লাহকে ডেকে ডেকে বলছে, আল্লাহ্ একটা সুযোগ দাও আমাকে তার কাছে যাওয়ার জন্য। তাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবেন না। আমার আর আমার দুই সন্তানের জিবন কেড়ে নিয়েন না। সে আমাদের জিবন। আমরা তাকে ছাড়া এত কষ্ট নিয়ে পৃথিবীতে থাকতে চাইনা। আল্লাহ্ রহম করো আমাদের উপর। আমার ইবাদতের যদি কমতি থাকে তাহলে আমি আরও কঠোর তপস্যা করবো ইবাদতের জন্য, তবুও আমার অলংকারকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবেন না। আমীন...........
গোলাব হাত-পা ছুড়ে চলেছে। ও যতই ছুটাছুটি করছে তিতির ততই ওকে বুকের সাথে চেপে ধরছে। সে প্রানপনে মাহাদের কাছে যেতে চাচ্ছে। মাহাদের শরীরের প্রতিটা আঘাতে ওর শরীর ভয়ানক ভাবে কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে মাহাদের শরীরের আঘাত ওর শরীরে এসে পড়ছে।
এদিকে লোকটি মাহাদের গলা শক্ত করে চেঁপে ধরে বলল-
~" শুনেছি তোর বউ নাকি খুব সুন্দরী। তোর মৃত্যুর পর ওর তো সঙ্গী দরকার। তখন না হয় ওকে আমার বেডে নিয়ে আসবো। আমার বউকেও আমি ভালোবাসতাম খুব। তার জন্যইতো তোর ভাইয়ের সাথে ঝামেলা বেঁধে গিয়েছিল। কিন্তু মাঝখানে তুই এসে নাক গলালি। বউ পুরনো হয়ে গেছে বুঝলি! তাই নতুনের স্বাদ নিতে মন চায়। এতে তোর বউ.........."
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মাহাদ সামনের লোকটির হাত থেকে হকিস্টিক কেড়ে নিয়েই লোকটির ঘাড়ে গায়ের শক্তি দিয়ে একটা হকিষ্টিকের বারি বসিয়ে দেয়।
লোকটি ধাম করে রাস্তায় পড়ে গেল। লোকটি পড়ে গিয়ে ছটপটাতে লাগলো। তারপর চিৎকার দিয়ে বলল-
~" এই ও যেন বাঁচেনা। ওর মৃত্যু দেখতে চাই আমি।"
লোকটির ছোট ভাই সহ কয়েকজন মিলে মাহাদকে গায়ের শক্তি দিয়ে এলোপাথারি বাড়ির উপর বাড়ি দিতে লাগলো।
হ্যা আমাকে বেঁচে রাখিসনা, মেরে ফেল আমায়। আমি যদি একবারও বেঁচে যাই তাহলে তোদের একজনকেও আস্ত ছাড় দিবোনা। তোদের চল্লিশা বের করেই তবে দম নিব। কথাগুলো বলেই মাহাদ জ্ঞান হারিয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে যায়। একটা লোক মাহাদকে চেক করে বলল-
~" বস, মনে হয়না আর এ বাঁচবে! এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকলে কিছুক্ষনের মধ্য ডেড। এমন শীতের রাতে এই নির্জন রাস্তা দিয়ে কোন গাড়ী চলাচল করেনা।"
অন্য একটা লোক মাহাদকে ঠেলে রাস্তা থেকে কিছুটা দুরে সরিয়ে দিল। যাতে কেউ এদিক দিয়ে আসলেও দেখতে না পায়। এমনিতেই এভাবে কিছুক্ষন পড়ে থাকলে সে এমনিই মারা যাবে। সব কাজ শেষ করে তারা গাড়ীতে উঠেই চলে গেল।
তারা সবাই চলে যেতেই তিতির গোলাবের মুখ ছেড়ে দিয়ে হিজাব আর ফোনটা নিয়ে জলদি ডোর খুলতেই গোলাব বিকট শব্দে লাফিয়ে পড়ে মাহাদের কাছে দৌড় দিল। ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে গোলাবকে অনুসরন করে তিতির প্রানপনে ছুটতে লাগলো। তিতিরের চোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পড়ে যাচ্ছে। চারদিকে কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গোলাব করুন কণ্ঠে মাহাদের পাশে দাড়িয়ে ডাকতে লাগলো। তিতির আছড়ে পড়লো মাহাদের পাশে। মাহাদ, মাহাদ বলে তিতির মাহাদকে ঝাকিয়েই চলছে। মাহাদের শরীরে গরম কোন কাপড়ও নেই। শরীরটা যেন ধীরে ধীরে জমে যেতে শুরু করলো। তিতির কোন হুস না পেয়ে আল্লাহকে বার বার ডাকতে লাগলো।
♥হে দুনিয়া ও বেহেস্তের পরম করুনাময় আল্লাহ্।আপনি পথ প্রদর্শক, আপনি ক্ষমতাশীল, আপনিই দয়ার সাগর। আমরা অসহায় বান্দা, শুধু আপনার কাছেই আশ্রয় খুঁজি, আপনার সাহার্য্য চাই এবং আপনার দয়ার মুখাপেক্ষী থাকি। আমাকে সাহার্য্য করুন। যেখানে সমস্ত পথ সমাপ্ত হয় সেখান থেকে আপনি আপনার নূর দিয়ে অসহায় বান্দাদের পথ দেখান। আমাকে সাহার্য্য করুন আমার প্রভু। তার জ্ঞান শ্রীঘ্রই ফিরিয়ে দিন। আমাকে পথ দেখান প্রভু।
আমীন.......♥
কিছুক্ষন পর মাহাদ একটা হেঁচকি তুলে শ্বাস নিল। তিতির জোড়ে জোড়ে মাহাদের হাতের তালু ঘষিয়ে দিতে লাগলো। আর জোরে জোরে বলতে লাগলো, মাহাদ আমি তিতির। চোখ খুলুন, দেখেন আমি আপনার কাছে। নিঃস্তব্ধ রাত্রিতে কথা গুলো দুর থেকে বহুদুর অবদি ছড়িয়ে পড়লো। মাহাদের যেন একটু হুশ হল। আস্তে আস্তে চোখ খুলে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে তিতিরের হাতটা চেপে ধরে অনুরোধের স্বরে বলল-
~" তিতির এখান থেকে চলে যাও। ওরা আবার আসবে। অন্য দল জানে তুমি আমার সাথে ছিলে। আমি মনে হয় আর বাঁচবোনা। তুমি নিরাপদে গোলাবকে নিয়ে চলে যাও। আমাদের সন্তানদের জন্য হলেও কোন একজনকে বাঁচতে হবে।"
মাহাদের এমন কথা শুনে তিতির প্রচন্ড রেগে গেল। তিতির চিৎকার দিয়ে বলল-
~" আপনাকে ছাড়া আমার চলবেনা! আপনি শুনতে পাচ্ছেন, আমাদের সন্তানদেরও আপনাকে ছাড়া চলবেনা। আজ যদি আপনার কিছু হয়ে যায় আমি কি করবো নিজেও জানিনা। হে আল্লাহ্, সারা জিবন আপনি আমার পরীক্ষা নিয়েছেন। আমি এই পাপী বান্দী আজ আপনার পরীক্ষা নিব। আপনি কিভাবে ওনাকে রক্ষা করবেন আমি জানিনা। আমি শুধু এটাই জানি, সুখে হোক আর দুঃখেই হোক, আমি আমার স্বামীর সাথে বাঁকি জিবনটা কাটিয়ে দিব। যার দায়িত্ব শুধু আপনারই নিতে হবে।"
তিতির ওর ওড়নাটা খুলে মাহাদের ক্ষতস্থানে হিযাবটা চেঁপে ধরে ওড়না দিয়ে শক্ত করে বেধেঁ, আল্লাহু আকবার বলেই মাহাদকে একটা হ্যাঁচকা টানদিয়ে দাড় করালো। আল্লাহর রহমতে মাহাদ আর জ্ঞান হারায়নি। তিতির মাহাদকে টেনে আনতেই দেখলো, দুরে কয়েকটা গাড়ী হেডলাইট জ্বালিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে এদিকে। আল্লাহ্ সাহার্য্য করুন বলে তিতির মাহাদকে নিয়ে অন্যপথে হাটা দিল। গোলাব যেহেতু একটা সর্বোবিষয়ে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত কুকুর তাই নিঃশব্দে তিতিরকে পথ দেখিয়ে নিরাপদ রাস্তার দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। কিছুদুর যেতেই গোলাব পিছু ফিরে বার বার চাইছিল। গোলাবের চোখদুটি জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। সেই চোখের আলো দেখে তিতির মাহাদকে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে জঙ্গলময় পথ দিয়ে। এক নিমিষেই সাদা কুয়াশাচ্ছন্নতে হারিয়ে গেল তারা। কিছুদুর যাওয়ার পরে মাহাদ তিতিরকে সহ নিচে পড়ে গেল। তিতির আমি আর পারছিনা বলে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো। তিতির হন্তদন্ত হয়ে কেবল ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বালাতে যাবে এমনসময় মাহাদ নিষেধ করলো লাইট জ্বালাতে। গোলাবের শরীরে হাত বুলিয়ে কিছু একটা বোঝাতে চেষ্টা করলো মাহাদ। সাথে সাথে গোলাব দৌড়ে কুয়াশার মধ্য হারিয়ে গেল। তিতির আমাকে সাহার্য্য করো বলতেই তিতির মাহাদকে আবার তুলে দাড় করাল। এত কষ্টের মধ্য তিতির আল্লাহ্কে স্মরন করতে ভুলে যায়না। বরং আয়াতুল কুরসি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ "কোরআন" এর আয়াতগুলো পাঠ করতে থাকলো। এমন সময় গোলাব আবার চলে আসলো।
মাহাদ বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে খুব কষ্টে বলে উঠলো-
~" তিতির, গোলাবকে অনুসরন করো।"
কথাগুলো বলে মাহাদ প্রায় সম্পূর্ন শরীরের ভর তিতিরের উপর দিয়ে চলতে লাগলো। খানিকটা চলার পর গোলাব থেমে গেল। একটা গাছের নিচে এসে দাড়ালো তারা। মাহাদ তিতিরকে সহ বসে পড়লো। আর চলার ক্ষমতা নেই। পা দু'টো যেন অবশ হয়ে আসছে। মাহাদ ঢোক চিপে বলল-
~ " তিতির, আমি পায়ে একদমই শক্তি পাচ্ছিনা। তুমি একটু দেখতো!"
তিতির আগে নিজের শরীরের লং কোটটা খুলে মাহাদকে পড়িয়ে দিয়ে ওর পায়ের তালু বার বার ঘষে দিতে লাগলো আর দোয়া পড়ে সেখানে ফু দিতে লাগলো।
তিতির হচ্ছেনা, আরও দ্রুত জোরে জোরে পায়ে ম্যাসেজ করতে থাকো। না হলে পা অচল হয়ে পড়বে। মাহাদের কথা শুনে তিতির প্রানপনে পা ম্যাসেজ করে দিতে লাগলো। মাহাদের প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তবুও তিতিরকে বুঝতে না দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইলো।
এমন সময় দুরে দেখলো, কয়েকটা লাইটের আলো এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে এদিকে আসছে। মনে হয় তারা তিতির আর মাহাদকে খুঁজছে। শত্রু যেন তাদের দোর গোড়ায় এসে পৌছালো। তিতির দ্রুত উঠে মাহাদের কাছে গিয়ে মাহাদকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে টেনে আরও গাছের আড়ালে নিয়ে গেল। তারপর মাহাদকে বুকের ভিতর নিয়ে গোলাবকে কাছে ডেকে মনের ভয়কে ছুড়ে ফেলে দু'হাত তুলে মোনাজাত ধরলো,
♥" ইয়া আমার রব্বে, আপনিই করুনাময় এবং ক্ষমাশীল। আমার মালিক, আমরা আপনার অকৃতজ্ঞ বান্দা। আমরা আপনার দয়ার প্রতি যথেষ্ঠ শুকরিয়া আদায় করতে পারিনা। আমাদের ক্ষমা করুন প্রভু। আমি স্মরন করছি, আপনার সেই মহিমাময় দিনগুলোকে। যে দিনগুলোতে আপনি আপনার প্রিয় হাবিব, রাসুল (সাঃ) কে কাফেরদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, যখন তিনি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। নবীজি(সাঃ) কে জালিমদের হাত থেকে রক্ষা করতে, গুহাকে দূর্গ, মাকড়শার জালকে বর্ম এবং পাখিকে বর্লম রুপে পাঠিয়েছিলেন। আজ তেমনই একদল জালিমের দল আমাদের পিছু নিয়েছে। আপনি আমাদের জয়ী করুন এসব জালিমদের উপর। রক্ষা করুন আপনার অপার মহিমাময় শক্তি দ্বারা। আমরাতো একমাত্র আপনার উপরই ভরসা করি। ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার শক্তি দিন।
আমীন, আমীন, আমীন।♥
মোনাজাত শেষ হতেই গোলাব ছুটে কুয়াশার মধ্য হারিয়ে গেল। তিতিরের কোন বাঁধায় সে না মেনে সামনে এগুতে থাকে। তিতির ওর চুলের খোঁপা খুলে ফেলল। তারপর ওর লম্বা লম্বা চুল দিয়ে মাহাদের মুখটা আড়াল করলো। যাতে মাহাদের মুখে কনকনে শীতের আঘাত না পরে। তিতির সব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে মাহাদকে শক্ত করে বুকের সাথে চেঁপে ধরে বলল-
♥ " আমরা এমন প্রভুর আয়ত্বে আছি, যিনি সারা জাহানের মালিক। তার থেকে উত্তম হেফাযত কারী আর কে আছে! আমরা ইনশাল্লাহ, ইনশাল্লাহ্, ইনশাল্লাহ্ এই বিপদ থেকে মুক্ত হব।"♥
হ্যাঁ, যারা একনিষ্ঠ ভাবে তার প্রভুকে স্মরন করেন, প্রভু তাদের হেফাযতের দায়িত্ব নিজে তুলে নেন। তিনিতো অপার দয়াময় আর ক্ষমাশীল।
গোলাব ছুটছে শত্রুদের দিকে। কিছু একটা দৌড়ে আসতে দেখে শত্রুরা থমকে দাড়ালো। ভালো করে লাইটের আলোয় দেখতে লাগলো চারপাশটা। তারা দেখতে পেল, সামনে সাদা একটা ধবধবে কুকুর দাড়িয়ে আছে। গোলাব ওদের দেখেই আক্রমারাত্নক হুংকার ছেড়ে চিৎকার দিয়ে জানিয়ে দিল তাকে অতিক্রম করা তাদের পক্ষে সহজ হবেনা।
একজন বলে উঠলো, বস এটা মাহাদের কুকুর। এর অনেক রের্কড আছে। আমরা কেন গাড়ী চেক করলামনা! তখন করলেই ল্যাটা চুকে যেত। এত কষ্ট করতে হতোনা। রোস্তম আমাদের না বললে তো, আমরা জানতামইনা ওর বউ আর কুত্তাও ওর সাথে ছিল। কথাগুলো বলে খেক খেক হেসে উঠলো লোকটি।
কুকুর এখানে আছে মানে, আশে-পাশে ওরাও আছে। এই সবাই খুঁজতে লাগো। কুকুরের কামড়ে হাই হলে ইনজেকশন নিতে হবে। এর বেশি কিছুতো আর হবেনা। ওকে ভয় না করে এগিয়ে যাও।
বসের হুকুম পেয়ে দলের বাঁকি লোকগুলো এগুতেই যা দেখলো, তাতে তাদের হুস উড়ে গিয়ে আবার মাটিতেই পরে গিয়ে আছাড় খেল। গোলাবের পরপর কয়েকবার ডাকে লোকগুলোর কাছে মনে হল, শতশত কুকুর দাড়িয়ে আছে। সবার চোখে দিয়ে যেন আগুন ঝড়ছে। এমন দৃশ্য দেখে প্রানের মায়ায় যে যার মত এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে লাগলো। এটা একটা অশুভ জায়গা, এটা একটা অশুভ জায়গা বলে চিৎকার দিয়ে যে যেদিক দিয়ে পারলো সেদিকেই দৌড়াতে লাগলো। এমন সময় মাথার উপর দিয়ে একটা হেলিকাপ্টার তীব্র আলো ফেলে ঘুরে গেল। তারপর ঘুরে আবার এদিকেই এল। মনে হয় তারা কিছু খুঁজছে।
তিতিরে ফোন ট্যাগ করে বড় একদল পুলিশ বাহিনী জঙ্গলে নেমে গেছে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে সয়ং ফুয়াদ। রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তে শুকে চারটা কুকুর প্রানপনে ছুটছে। তাদের পিছনে ফুয়াদরাও ছুটে চলছে। কামরান সাহেব আরো ফোর্স সহ রাস্তায় দাড়িয়ে আছেন। অস্থির মনে আল্লাহ্ কে ডেকে ডেকে বলছে, "আল্লাহ্ আমার ছেলে আর তিতিরকে সুরক্ষায় রেখ। তাদের সাথে খারাপ কিছু যেন ঘটেনা। ততক্ষনে পাঁচটা পাইভেট কার তারা জব্দ করেছে।
পথ যেন শেষ হচ্ছেনা। ফুয়াদের বুকটা ভারী হয়ে যাচ্ছে। সব যেন ঠিক থাকে। এমন দূর্গমময় জায়গায় মাঝে মাঝে নেটওর্য়াক অচল হয়ে পড়ছে। একসময় কোন নেটওর্য়াক আর পাওয়ায় গেলোনা। আহত মানুষকে নিয়ে এতদুর আসা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাহলে আমরা কি ভুল রাস্তায় এসেছি? তবে কুকুরগুলো এখনো তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আরও গভীরে দৌড়ে যাচ্ছে। জঙ্গলে আরও পাঁচটা পুলিশের দল নেমেছে। সাথে একটা সামরিকের দলও যোগ দিয়েছে।
শেষে কুকুরগুলো জোড়ে জোড়ে চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগলো। দুরে কুকুরের ডাক শুনে গোলাব কান সজাগ করে ভুগভুগ করে ডাকতে লাগলো। কিন্তু কিছুটা দুরে গিয়েই শব্দ মিলিয়ে গেল। ওদের কাছে আর পৌছালোনা। এমন সময় দলে দলে শিয়াল ডেকে উঠলো। শিয়ালদের শত্রু কুকুর হয়। তাদের ডাক শুনলে কুকুর সেই ডাকের দিকে ছুটে যায়। চারটা কুকুর এবার এত জোড়ে দৌড়াতে লাগলো যে তাদের কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়লো। এভাবে আরও দশমিনিট দৌড়ানোর পর গোলাবের দেখে মিললো। ফুয়াদকে চিনতে গোলাবের আর ভুল হয়না। ছুটে গেল ফুয়াদের কাছে। তারপর করুনসুরে ডাকতে লাগলো। লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেল গোলাবের চোখ ভেজা। এমনকি এখনো সে কাঁদছে............।