বকুল ফুলের মালা - পর্ব ০৪ - সুলতানা পারভীন - ধারাবাহিক গল্প


০৭!! 

আধা ঘণ্টার মতো পরে সীমান্ত ফিরলো বাসায়। মায়রা এসে দরজা খুলতেই সীমান্ত বিরক্ত মুখে একটা প্যাকেট মায়রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সরে গেল সামনে থেকে। মায়রাও আর কিছু না বলে চলে গেল সেখান থেকে। দশটার দিকে মায়রা ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে সীমান্তকে খেতে ডাকলো। সীমান্ত ল্যাপটপে কিছু একটা কাজ করছিল। কাজ রেখে ডাইনিং রুমে এসে বসলো। প্লেটের দিকে তাকিয়েই বিরক্তি ফুটে উঠলো চোখে মুখে। মায়রাও ওর পাশেই একটা চেয়ারে বসেছিল৷ সীমান্ত মায়রার মুখের দিকে তাকালো।

-সিরিয়াসলি মায়রা? এসব ভাত, ডাল, আলুবাজি! এগুলো খেতে হবে এখন? সারাদিন বাসায় কি এমন কাজ করো যে একটু ভালোমন্দ কিছু রান্না করারও সময় হয় না তোমার? 

-না আসলে----। শরীরটা ভিষণ খারাপ করছিল--। পেটেও ব্যথা ছিল তাই----।

-বাহ! কি সুন্দর কথা বলে দিলে--। তোমার সমস্যার জন্য আমি সারদিন এতো পরিশ্রম করে এসে রাতে এসব রোগীর ওষুধ টাইপের খাবার খাবো? আর একটা কথা শোনো--। দুনিয়াতে তুমিই একমাত্র মেয়ে না যে এসব মেয়েলি সমস্যা ফেইস করছ-৷ তোমার মায়ের এসব ঘটেছে, আমার মাও এই ব্যাপারগুলোর মধ্য দিয়ে গেছে--। কই আমার তো কখনো নিজের মেয়েলি সমস্যার কথা বলে আমাদেরকে এমন আধপেটা খাইয়ে রাখে নি--। তোমার মা কি তোমাকে এসবই শিক্ষা দিয়ে পাঠিয়েছে?

-না----। আমি সরি আসলে---।

-তুমি আর তোমার এই সরি মায়রা! কাজ যখন করতেই পারো না তাহলে প্রথমদিন বলে দিলেই পারতে--যে তুমি নিজের সংসারের এসব খুঁটিনাটি কাজকর্ম করতে পারবে। আজ এই অযুহাত, কাল এটা সেটা। এর চাইতে আমি নাহয় গাঁটের পয়সা খরচ করে একটা কাজের লোক রেখে দিই---। সে অন্তত কিছু টাকা আর দুবেলা খাওয়ার বিনিময়ে কাজগুলো ঠিক করে করবে--। তোমার মতো বসে বসে সময়গুলো টিভি বা আজাইরা কাজে নষ্ট না করে----।

-----------------------

-আর তুমি খাচ্ছো না কেন? 

-আমার খিদে নেই---।

-বাহ! বেশ তো। এখন আপনাকে কিছু বলাও যাবে না। কিছু বললেই না খেয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকবেন--।

-আমার ইচ্ছে করছে না খেতে---।

-সেটা তো করবেই না এখন। ভালো কথা কার কবে সহ্য হয়েছে? এখন এসব করে খাবে না, খাবারগুলো নষ্ট হবে--আর নিজে হবা অসুস্থ--। তারপর ডাক্তারের পিছনে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ হোক। সেটাই চাইছ তো?

-না----।

-তো খাও চুপচাপ---। খাবার নষ্ট করা এটা কোন ধরনের বদঅভ্যেস? জানোই যদি খাবে না তাহলে এসব রাঁধতে গেলেই বা কেন? আমাকে বলতে আমি বাইরে থেকে অর্ডার করে দিতাম--। এমনিতেও তো কেউ এলেই খাবার অর্ডার করাতেই হয়। এখন না হয় রোজকার খাবারটাও অর্ডার করিয়ে আনবো বাইরে থেকে। তাহলে তোমারও আর কোন কাজ করতে হলো না--। ভালো না বলো?

-----------------------

-আচ্ছা মায়রা? তুমি আমাকে একটা কথা বলো তো? তুমি কি আমার সাথে সংসারটা করতে চাইছো না? এমন কিছু? অন্য কাউকে পছন্দ করতে মামা মামির ওখানে? তার কাছে ফিরত যেতে চাই বলেই কি এমন টর্চার করছ আমাকে? দেখো সেরকম যদি হয় তাহলে বলে দাও--। আমি নাহয় তোমার আর আমার দুজনের বাসায়ই মেনেজ করে নিবো---।

-উঁহু---। আমি সবকিছু শেখার চেষ্টা করছি---। বিশ্বাস করুন---।

-আবার তোমার এই আপনি আজ্ঞে? আর কেমন চেষ্টা যে করছ সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি----। 

-সরি----।

-আমার খাওয়া হয়ে গেছে---। তুমি খেয়ে নাও--। আর দয়া করে কাল থেকে একটু ভালো কিছু রান্না করার চেষ্টা করো---। 

সীমান্ত কয়েক লোকমা খেয়েই হাত ধুয়ে উঠে চলে গেছে। মায়রা দু লোকমা খেয়ে সবকিছু ধুয়ে গুছিয়ে রেখে রুমে এলো। রুমে এসে বেশ অবাক হলো মায়রা৷ বেড রুমের সোফায় বালিশ আর চাদর নিয়ে শুয়ে পড়েছে সীমান্ত। মায়রা এগিয়ে এসে সীমান্তের মাথার কাছে দাঁড়ালো।

-কি সমস্যা? গিয়ে শুয়ে পড়ো। তোমার নাকি শরীর খারাপ? কাজ করতে পারছিলে না, রান্না করতে পারছিলে না? এখন না ঘুমিয়ে এমন মাথার কাছে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

-না মানে--। তুম--সোফায় শুয়েছ--।

-হ্যাঁ তো? সোফায় শোয়া কি বারণ? 

-না মানে----।

-দেখো---। তোমার এই অবস্থায় এক বিছানা শেয়ার করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার কাছে বিশ্রি নোংরা একটা ফিলিংস কাজ করে পিরিয়ড জিনিসটাকে। আর তাছাড়াও মনে হয় এই সময়টাতে আমাদের দুজনে আলাদা থাকাই ভালো হবে---। 

-তুমি বেডে ঘুমাও, আমি নাহয়--।

-কোন প্রয়োজন নেই--। বিছানার চাদর চেইঞ্জ করলে তো পরিস্কার হয়ে যাবে, কিন্তু সোফার ফোম তো আর ধোয়া যাবে না। তাই না?

-ওহ---। তাহলে ফ্লোরে বিছানা পেতে----।

-যা করতে ইচ্ছে করে কাল থেকে করবা, এখন আপাতত ঘুমাতে দাও। 

----------------------

-দয়া করে লাইটটা অফ করে দাও।

 

কথাটা বলেই সীমান্ত গায়ে চাদর জড়িয়ে নিয়ে চোখ বুজলো। মায়রা লাইট বন্ধ করে ওয়াশরুমে ঢুকে পানির পাইপ ছেড়ে দিয়ে আয়নায় নিজের দিকে তাকালো। মুখে হাত চেপে ধরে কান্নার শব্দ ঠেকানোর চেষ্টা করলো মায়রা৷ নিজেকে এই মূহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে অস্পৃশ্য মানুষ মনে হচ্ছে ওর। মনে হচ্ছে ওর মতো নোংরা আর অপবিত্র কিছু এই পৃথিবীর বুকে নেই। আর সেই অপবিত্রতা ধীরে ধীরে ওর সমস্ত জীবনটায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। নিজেকে এর আগে এতোটা অসহায় কখনো মনে হয় মায়রার। মনে হচ্ছে এর চাইতে মরে গেলেই হয়তো ওর ভালো হতো৷ অন্তত মৃত্যু ওকে অস্পৃশ্য বলে ফেলে যেত না। 

এদিকে আয়ানের জীবনেও এই ১৫ টা দিনে বেশ অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। সকাল আটটার এ্যালার্মে জেগে উঠে হালকা কিছু মুখে দিয়েই অফিসে চলে যায় আয়ান। নতুন চাকরিটায় নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করছে আয়ান। অফিস আওয়ারের পরেও বেশ অনেকটা সময় আয়ান অফিসেই কাটায়। তারপর বেরিয়ে আরো ঘন্টাখানেক কোন জনশূন্য নিস্তব্ধ জায়গায় চুপ করে বসে থাকে। রাত একটু গভীর হলে তারপর বাসায় ফিরে আয়ান৷ ইচ্ছে করেই দেরি করে ফেরে যাতে কারো সামনে পড়ে কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে না হয়। আয়ানের বাবা, মা, বন্ধু বান্ধব সবার সাথে যোগাযোগ একেবারে নেই বললেই চলে। একেবারে আঁটঘাট বেঁধেই সবার চোখে আড়ালে গিয়ে দিন কাটাচ্ছে আয়ান। আর সবার আড়ালেও একটা নাম তার মনের মনিকোঠায় গেঁথে তার প্রতিটা হৃৎস্পন্দনের সাথে মিশে আছে। নামটা আর কারো নয়, মায়রা।

ভিন্ন ভিন্ন দুটো শহরে দুজন ভালোবাসার মানুষ এভাবেই তিলে তিলে একটু একটু করে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে সবার অগোচরে। না কেউ তাদের কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারছে, না দেখতে পাচ্ছে কি তুমুল ঝড় চলছে এই দুটো মানুষের মধ্যে। এই দুটো মানুষের ভাগ্য তাদের সাথে কি লুকোচুরি খেলা খেলছে কে জানে! নিয়তি কি করতে চাইছে ওদের নিয়ে কে জানে!

০৮!! 

একটা ছোট্ট শিশুর কাছে তার প্রিয় খেলনাটা যেমন, ঠিক তেমনটাই সীমান্তের জীবনে মায়রার অবস্থান। শিশু যেমন নিজের খেলনা নিয়ে মহা আনন্দে খেলায় মেতে থাকে। আবার কখনো রাগে বা কখনো বিরক্ত হয়ে সেই প্রিয় খেলনাটাকে দূরে ধূলোয় ছুঁড়ে ফেলে। তেমনটাই মায়রার সাথে সীমান্তের ব্যবহার। মায়রাকে নিজের স্ত্রী কম পুতুল হিসেবেই বেশি ট্রিট করে সীমান্ত৷ যখন ইচ্ছে হয় কাছে টেনে নেয়। আর কখনো মায়রার কাছ থেকে এমন ছিটকে সরে যায় যেন মায়রা কোন অস্পৃশ্য কিছু, যাকে ছুঁতেও ঘৃণায় নাক মুখ কুঁচকে যায় তার৷ সীমান্তের এসব ব্যবহারের সাথে মায়রা ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কখনো মানিয়ে নিতে পারে, আবার কখনো নিজের জীবন নিয়েই ওর ঘৃণা জন্মায়। একেই কি বলে জীবন? এভাবে বেঁচে থাকা যায়? আজকাল আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবিটা দেখতেও কেমন একটা সংকোচ বোধ করে মায়রা৷ এভাবেই কি তার বাকিটা জীবন কাটাতে হবে?

দেখতে দেখতে মায়রা আর সীমান্তের বিয়ের তিনটা মাস কেটে গেছে। মায়রা সংসারের কাজ শিখতে মরিয়া হয়ে লেগে থাকে। চেষ্টা করে কোন ভুল না করে কাজগুলো করার৷ কারণ কোন ভুল হলেই সীমান্ত হয়তো গায়ে হাত তোলে না, কিন্তু হয়তো এর চাইতে মারলেও কষ্টটা কম হতো মায়রার। কথায় ঠিকই বলে। শব্দের ধার তলোয়ারের চেয়েও বেশি তীক্ষ্ম হয়। তাই হয়তো সীমান্তের বলা প্রতিটা ধারালো শব্দ একবারে হৃদপিণ্ড এফোড় ওফোড় করে দেয় মায়রার৷ এসব ভাবতেই ভাবতেই সন্ধ্যায় রান্নার তোড়জোড় করছিল মায়রা। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে ভ্রু কুঁচকে গেল ওর। এখন ভর সন্ধ্যায় কে আসতে পারে সেটা চিন্তা করার চেষ্টা করলো কিছুক্ষণ। এখনো সীমান্তের ফেরার সময় হয়নি। মায়রার তেমন কোন পরিচিত বা বন্ধু বান্ধবও নেই এই শহরটায়৷ অবশ্য থাকলেও সেটা মায়রার জানা নেই। তারপর আরেকবার বেলের আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি এসে দরজাটা খুলে দিলো। দরজা খুলেই মায়রা একটু চমকে গেল। সীমান্তের বন্ধু মাহিম তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছে দেখে হাসিমুখেই অভ্যর্থনা জানালো মায়রা।

-আরে? ভাবি আপনারা এখনো রেডি হন নি? সীমান্ত কোথায়? ওকে তো বলেইছিলাম আমরা নিতে আসবো----।

-ও তো বাসায় ফিরে নি ভাইয়া এখনো----।

-ওফফ--। এই ছেলেকে নিয়ে কি যে করি! কিছু যদি মনে থাকে ওর। আমি ওকে কল করছি--। আপনি রেডি হয়ে নিন----।

-আসলে ভাইয়া-----।

-আচ্ছা। ওয়েট। পারমিশন নিয়ে টেনশন তো? ওয়েট--। কল করি ব্যাটাকে----।

মাহিম সীমান্তকে কল করলো। দুবার কলটা বাজার পর রিসিভ করলো সীমান্ত।

-হ্যাঁ মাহিম বল। 

-শালা? আবার ভুলে মেরে বসে আছিস? কই রে তুই? 

-আমি? আমি তো অফিসে---।

-তুই এখনো অফিসে কেন? আজকে আমরা চারজনে শপিংয়ে যাবো বলেছিলাম না? আর তুই কি রে--?

-ইয়ার? সরি রে। ভুলে গেছি। আর আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং পড়ে গেছে----।

-শালা! তুই জীবনেও শোধরাবি না। ভাবিকে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। তুই থাক বসে---।

-আরে? ও ঢাকার কিছুই চিনে না--। 

-আরে রাখ ব্যাটা। ভাবি আমার আর তিয়ার সাথে যাচ্ছে--। উনার কিচ্ছু চিনতে হবে না। আমরা সহিসালামতে আবার দিয়ে যাবো তোর বউকে। ভাবিস না--।

----------------------

-দাঁড়া। ভাবির সাথে কথা বল--। উনি রেডি হতেও যাচ্ছে না---। নিন ভাবি---। কথা বলুন আপনার মিস্টারের সাথে---।

মায়রা মাহিবের এগিয়ে দেয়া মোবাইলটা কানে লাগালো। কি বলবে বুঝতে পারছে না বেচারি। 

-হ্যালো?

-হ্যাঁ মায়রা? মাহিব আর তিয়া বলেছিল ওদের সাথে শপিং এ যাবার কথা। আমার একদমই মনে ছিল না। 

-হুম-----।

-শোনো? তোমার ইচ্ছে করলে যেতে পারো। আর হ্যাঁ--আমার ফিরতে আজকে একটু লেইট হবে--।

-আচ্ছা---। 

সীমান্ত কলটা কেটে দিতেই মায়রা মাহিবের দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিলো। মায়রা কি করবে বুঝতে পারছে না। ওর রান্না করাও হয়নি। যাবে কি না। 

-ভাবি? তাড়াতাড়ি রেডি হোন প্লিজ? তিয়ার শপিংমলে ঢুকলে সময় কোনদিক দিয়ে উড়ে যাবে সেটা টেরও পাবেন না---। 

-আসলে ভাইয়া--। আমার কাজ শেষ হয়নি--। রান্নাটা বাকি----।

-আরে ম্যাডাম? একদিন বাইরে থেকে আনিয়ে নিবেন ডিনার। মাঝে মাঝে একটু রুলস ব্রেক করা ভালো। আর লাইফে একটু চেইঞ্জ আনা জরুরি। কি বলেন? এখন আমি এতো কথা শুনতে চাই না। ১৫ মিনিট সময়। তাড়াতাড়ি রেডি হন। আমরা ওয়েট করছি কিন্তু---।

-জি আচ্ছা ---। আপনাদেরকে একটু চা করে দিই?

-আরে না না না। এখন এসব কিছু লাগবে না। আপনি জলদি জলদি তৈরি হয়ে নিন। তিয়া একটা অলরেডি আমার বিকেলের পুরো দুটো ঘন্টা বরবাদ করে দিয়েছে--।

মায়রাকে মাহিব আর তিয়া যখন বাসার সামনে ড্রপ করে দিয়ে গেল তখন প্রায় দশটা বাজে৷ মাহিবদেরকে বিদায় জানিয়ে বাসার দরজার সামনে এসে দরজা ভিতর থেকে লক করা দেখে অবাক হলো। সীমান্ত কি তবে বাসায় ফিরেছে! মায়রা একবার চিন্তা করে কলিং বেল বাজালো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আরেকবার কলিং বেল বাজালে সীমান্ত এসে দরজা খুলে দিলো। মায়রাকে দেখেই বিরক্ত মুখে দরজার সামনে থেকে সরে এসে দাঁড়ালো সীমান্ত। আর মায়রাও বাসায় ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে সীমান্তের দিকে তাকালো।

-বাহ! তা ঘোরাঘুরি শেষ হলো অবশেষে আপনার? একটু কম হয়ে গেল না ঘোরাঘুরি? সবে তো দশটা বেজেছিল রাতের--। আরো কিছুক্ষণ ঘুরে আসতে--। নাহয় একেবারে সকালেই ফিরতে-। সেটাই ভালো হতো, কি বলো?

-তিয়া ভাবি শপিং করছিল--তাই-।

-তাই? তাই কি? কোথাও গেলে সময়ের হুঁশ থাকে না তোমার? এর জন্যই তোমাকে নিয়ে কোথাও বের হই না আমি--। 

----------------------

-আর তুমি তো বের হতে পেরে সাপের পাঁচ পা দেখেছ---। একেবারে জানা নেই শোনা নেই তাদের সাথেই রাতের দশটা পর্যন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছ! বাসায় যে কিছু রান্নাটা পর্যন্ত করে রেখে যাও নি সেই কথাটা পর্যন্ত বেমালুম ভুলে গেছ! বাহ বাহ! এসবই শিখে এসেছ মামা মামির কাছ থেকে! বাহ!

-তোমার দেরি হবে বলেছিলে তাই মাহিব ভাইয়া আর ভাবি ছাড়ছিল না।

-হ্যাঁ সেই তো। এখন তো নিজের স্বামীর চেয়েও তারাই তোমার বেশি আপন হয়ে গেছে। তাই না? বাহ! বেশ বেশ!

মায়রা কি বলবে খুঁজে না পেয়ে সীমান্তের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। সীমান্তের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে আবার। মায়রার হাতে দুটো প্যাকেট দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো সীমান্ত।

-বাহ! তা বেশ গিফ্ট টিপ্টও পাচ্ছো তাহলে! ভালোই তো। তা এসব গিফ্টের লেনদেনের অভ্যাস আগে থেকেই আছে? নাকি নতুন করে--।

-সীমান্ত!! 

-চেঁচাবে না একদম মায়রা। আমি যাই নি তবুও খুব নাচতে নাচতে ওদের সাথে চলে গেলে শপিং এ। এরপর থেকে আর কি করবে কে জানে!

-মাহিব ভাইয়া আপনার ফ্রেন্ড মিস্টার সীমান্ত। সেটা কি আপনি ভুলে গেছেন? নাকি আমি উনাদেরকে বলেছিলাম আমি উনাদের সাথে যেতে চাই! আপনার যদি আমার উনাদের সাথে যাওয়াতে এতোই সমস্যা হচ্ছে তাহলে নিজেই মানা করে দিলেন না কেন? 

-আমি তোমাকে তো যেতেও বলি নি মায়রা---।

-ও আচ্ছা! তাই নাকি? তাহলে আমিই আপনার ফ্রেন্ড আর উনার ওয়াইফের সাথে বেহায়ার মতো নাচতে নাচতে চলে গেছি! 

-তুমি মানা করে দিলেই এসব কিছুই হতো না মায়রা৷ আর-----। শুধু তুমি যে শুধু ওদের সাথে গেছো তাও কিন্তু না--। ওরা তোমাকে বেশ ভালোই শপিং টপিং করিয়েও দিয়েছে---।

-এই দুটো শাড়ি আমি নিজের টাকায় কিনেছি মিস্টার সীমান্ত৷ আমার আর আপনার মায়ের জন্য৷ আর শুনুন-যেটা বলার সেটা সামনাসামনি বলতে শিখুন--। 

-মায়রা? কি বলতে চাইছো তুমি?

-কিছুই বলতে চাইছি না। শুধু বলছি যে নিজের মতামতটা সবার কাছে সবসময় একই দিবেন। একজনের কাছে মহান সেজে অন্যজনের উপরে নিজের মতামতটা চাপিয়ে দিবেন না।

-মায়রা? 

সীমান্ত এক পা এগিয়ে এসে মায়রার বাম হাতটা মচকে ধরলো শক্ত করে।

-মুখে মুখে কথা বলে শিখেছ তাই না? খুব সাহস হয়েছে তোমার? তোমার এই সাহসটা কে জোগায় সেটাও আমি দেখবো--। আর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো। এমন বাড়াবাড়ি তোমার বাড়িতে গিয়েই করবে। এখানে নয়। আর এসব ছাড়তে না পারলে কাল সকালেই নিজের বাপের বাড়িতে চলে যেও। কোন অবাধ্য মেয়ের জায়গা আমার ঘরে হবে না--।

মায়রাকে একটা ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিয়েই রুমে চলে গেল সীমান্ত। আর মায়রা হাতে ধরা ব্যাগ দুটো নিয়েই সেখানে বসে পড়লো। মেয়েটার চোখ দিয়ে অঝোর ধারা বইতে শুরু করেছে৷ কি এমন অন্যায়ের জন্য এমন শাস্তি দিচ্ছে ওকে বিধাতা সেটাই ভাবার চেষ্টা করছে। এসব থেকে কি কখনোই মুক্তি পাবে না ও?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন