"সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না "-এই বাক্যটা চিরন্তন সত্য। কেটে গেছে পাঁচ মাস।এই পাঁচ মাসে যতটা ভালোবাসা পেয়েছি তার চেয়েও বেশি সম্মুখীন হয়েছি নতুন নতুন পরিস্থিতির।ফিরেও পেয়েছি জীবনে মা নামক মানুষটা কে।জেনেছি নিজের ভালোবাসার মানুষের লুকায়িত বিশাল এক সত্য।ছোট থেকেই ভয় পেতাম যা নিজের স্বামী কে সেই রুপে দেখেই হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম আমি।থমকে গিয়েছিল আমাকে ঘিরে থাকা আমার পুরো পৃথিবী। তবুও ভালোবাসি মানুষটাকে খুব বেশি।আর কোনো সত্যের সম্মুখীন হতে চাই না আমি।
মনে মনে কথাগুলো বলতে বলতে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল আরশি।সকাল সাতটা বাজে এখন।সারা রাত দুচোখের পাতা এক করে নি সে।করবেই বা কি করে তার নায়ক সাহেব যে অসুস্থ। হঠাত করেই জ্বর উঠেছে তার।বোনের বিয়ে নিয়ে এতোই ব্যস্ত ছিল যে নিজের খেয়াল রাখতেই ভুলে গিয়েছিল মানুষটা।হুম আনহার বিয়ে হয়েছে গত পরশু।আনহার বিদায়ের দিন আবারও গভীর রাতে লুকিয়ে চোখের জল ফেলতে দেখেছে মানুষটাকে।আরশির সহ্য হয় না একদমই সহ্য হয় না তার নায়ক সাহেবের চোখের জল।
আয়াজ এখনো ঘুমিয়ে। পাশে এসে বসল আরশি।কপালে হাত দিতেই বুঝল জ্বর কিছুটা কমে এসেছে। আয়াজের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে ডেকে উঠল আরশি--" এই যে নায়ক সাহেব উঠবেন না আপনি?"
কিছুটা নড়ে উঠল আয়াজ।আরশির কোলে মাথা রেখে কোমড় জরিয়ে ধরে আবারও ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল সে।হাসি চলে এলো আরশির।আয়াজের চুল টানতে টানতে আবারও ডেকে উঠল --উঠুন না। ঔষধ খেতে হবে তো।
সাড়া দিল না আয়াজ।তাই আবারও দুষ্টমির স্বরে বলে উঠল আরশি--স্বপ্নে আবার কারো খুন করছেন নাতো?
ভ্রু কুঁচকে তাকাল আয়াজ।কেমন অদ্ভুত লাগল আরশির কথাটা তার কাছে।পরক্ষণেই মনে হলো আরশি হয়তো আনহার হলুদের রাতের বিষয় টা ভেবেই দুষ্টুমি করে এমন বলেছে।
বাঁকা হাসল আয়াজ।কোল থেকে মাথা উঠিয়ে আরশির মুখোমুখি বসল। আচমকা আরশির গলায় মাথা রেখে বলে উঠল
- খুন করছিলাম তবে সেইটা আদরের খুন।
খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির স্পর্শ গলায় লাগতেই কেঁপে উঠল আরশি।
--আদরের খুন হয় নাকি?(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
--হয়তো।এই যে আমার স্পর্শে তুমি কাঁপতে কাঁপতে মরে যাচ্ছো।
একটু হাসল আরশি।চোখ দুটো বন্ধ করে আয়াজের চুলগুলো মুঠোতে পুরে নিল।
---চুলগুলো একটু টেনে দাও তো বউ।
কথাটা বলেই আরশির গলায় মুখ গুজে চোখ দুটো বন্ধ করে নিল আয়াজ।আবারও কেঁপে উঠল আরশি।আলতো হাতে টানতে লাগল আয়াজের চুল গুলো।একদম বাধ্য মেয়ের মতো।
আনহার হলুদের দিন জরুরি একটা কাজে আয়াজ কে খুঁজে খুঁজে অস্থির হয়ে পড়ছিল আরশি।একজন সার্ভেন্ট কে জিজ্ঞেস করতেই জানাল আয়াজ ছাদে গিয়েছে। প্রথমে বিশ্বাস হলো না আরশির যে নিচে অনুষ্ঠান ছেড়ে আয়াজ ছাদে কেনো যাবে কিন্তু পরে মনে হলো দেখতে তো সমস্যা নেই। ছাদে গিয়ে আয়াজ কে কোথাও পেলো না আরশি।যখনি ফিরে আসার জন্য পা বাড়াবে অনুধাবন করল তার কোমরে কারো হাত।ভয়ে আতকে উঠল আরশি। কারণ এই হাতের মালিক তার নায়ক সাহেব না।তার নায়ক সাহেবের স্পর্শ সে খুব ভালো করেই চিনে।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে যাবে তার আগেই কোমর থেকে সরে গেলো অচেনা মানুষ টার হাত।লুটিয়ে পড়ল তার দেহ নিচে।বুকে ছুড়ি গাঁথা। রক্ত ঝরে যাচ্ছে। ভয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো আরশি।আয়াজ এগিয়ে এসে নিজের পা চেপে ধরল লোকটার হাতে।নিচে পরে কাতরাচ্ছিল লোকটা।নিজের পা টা লোকটার হাতে আরো জোরে চেপে ধরে হিংস্র কন্ঠে বলে উঠল আয়াজ--
"কুত্তার বাচ্চা!!! তোর সাহস কি করে হলো আমার প্রিয়তার গায়ে স্পর্শ করার?আমার প্রিয়তার গায়ে শুধু আমার স্পর্শ থাকবে।তুই জানিস ও আমার কতটা প্রিয়?আর তুই ওকে অপবিত্র করতে চাইছিলি?ও আমার বউ। আমার প্রিয়তা।"(আরশিকে জরিয়ে ধরে)
কথাটা বলেই আয়াজ নুয়ে লোকটার বুক থেকে ছুড়ি তুলে হিংস্রভাবে আঘাত করতে লাগল একের পর এক। আয়াজের এই হিংস্রময় রুপ কল্পানতেও ভাবে নি আরশি।এমন দৃশ্য দেখে আর সহ্য করতে পারল না সে।জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়তে নিলে আয়াজ আগলে নিল তাকে।হুঁশ ফিরতেই একদম নীরব ছিল আরশি।কোনো কথা বলে নি আয়াজের সাথে।কিন্তু আয়াজ যখন বুকে টেনে নিল একদম লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমিয়েছিল তার বুকে।একদম আর উচ্চারণ ও করে নি সেই রাতের কথা।প্রতিদিনের মতো স্বাভাবিক আচরণই করল।আয়াজের কাছে প্রথম অবাক লাগলে ও পরে তার মন বলে উঠল তার প্রিয়তার অগাধ বিশ্বাস আছে তার প্রতি। আসলেই কি তাই?
।
।
।
মায়ের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে আরশি।শরীর তেমন ভালো নেই তার।জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছেন তিনি।রুমে কারো উপস্থিতি টের পেতেই ফিরে তাকালেন।আরশিকে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে এলেন তিনি।
--- আম্মু তুমি উঠেছ কেন?তোমার শরীর তো ভালো না।একটু পরেই ডক্টর আসবেন তোমাকে দেখতে।
---আমি ঠিক আছি।জামাই কেমন আছে আরশি?জ্বর কমেছে?
---কমেছে আম্মু ।তুমি শুয়ে থাকো।আমি খাবার পাঠাচ্ছি।
কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসল আরশি।
দু'মাস আগে,,
"তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে প্রিয়তা।"
গা থেকে জ্যাকেট খুলতে খুলতে কথাটা বলল আয়াজ।চমকে উঠল আরশি।আয়াজের কিছুটা কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল --কেমন সারপ্রাইজ নায়ক সাহেব?
আরশির কোমড় আকড়ে ধরে কাছে টেনে নিল আয়াজ।গালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে উঠল- সেইটা নাহয় কালই দেখবেন মিসেস আরশি।
পরেরদিন বেগুনি রঙের একটা ড্রেস পরে রেডি হয়ে আয়াজের সাথে বেরিয়ে পড়ল আরশি।তাদের গাড়ি এসে থামল একটা চারতলা ভবনের সামনে।অবাক হলো আরশি।ভ্রু কুঁচকে তাকালো আয়াজের দিকে।
--আমরা কোথায় এসেছি নায়ক সাহেব?
---এখানেই তোমার সারপ্রাইজ।
--এখানেই সারপ্রাইজ মানে?আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
--গেলেই বুঝতে পারবে জান।
কথাটা বলেই আরশির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিল আয়াজ।লিফটে উঠে আরশিকে জরিয়ে নিল নিজের সাথে।চার তালায় একটা ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাঁড়াল দুজন।নিশাদকে ও দাড়িয়ে থাকতে দেখে খুব বেশি অবাক হলো আরশি।কি হচ্ছে কিছুই তার মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারছে না।আয়াজ কে দেখেই দরজা টা মেলে দিল নিশাদ।ভিতরে ঢুকে চমকে গেলো আরশি।খুব সুন্দর ফ্ল্যাট টা।কিন্তু কেন এখানে এসেছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না আরশির।আয়াজ এতো বড় বাড়ি রেখে ফ্ল্যাটে কেনো থাকতে যাবে?কথাটা ভাবতেই আরশির চোখে হাতের প্রলেপ দিল আয়াজ।
---কককি হচ্ছে নায়ক সাহেব?
---নাথিং। জাস্ট ক্লোজ ইউর আইজ প্রিয়তা।(স্লো ভয়েজে)
চোখ বন্ধ রেখেই আয়াজের হাতটা ধরে এগিয়ে গেলো আরশি।কিছুক্ষণ বাদেই আয়াজ হাত সরাতেই চোখ মেলে সামনে তাকিয়েই কেঁদে দিল আরশি।দুচোখে বিশ্বাস করতে পারছিল না।কেঁদে দিল মা কে জরিয়ে ধরে।মার কাছ থেকে জানতে পারল সেদিন আয়াজ বাচিয়েছিল আগুন থেকে।মায়ের জানা ছিল না আরশি বাহিরে ছিল।এটাই সত্যি আরশি তার মাকে বলে যায়নি কারণ বাবার নিষেধ ছিল।হয়তো তার ভালোর জন্যই বাবা এমন করেছে। আরশিকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই সিলেটে ও বলে নি আয়াজ যে মা বেঁচে আছে।এতে কষ্ট অনুভব হয় নি আরশির বরং কৃতজ্ঞতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আয়াজের বুকে।
।
।
আজ আনহা আসবে নিশাদ কে নিয়ে।তাই রান্নায় ব্যস্ত আরশি।ননদিনীর জন্য নিজের হাতে রান্না করতে চায় সে।সেই কখন থেকে রুমে বসে আছে আয়াজ।সারাদিন রুমে বসে থাকতে কারই বা ভালো লাগে।কিন্তু প্রিয়তার কড়া নির্দেশে রুমে বসেই বোরিং সময় কাটাচ্ছে সে।তবে প্রিয়তার চেহারা দেখে সারাদিন ও রুমে বসে থাকতে পারবে এতে কোনো সন্দেহ নেই আয়াজের।কারণ তার প্রিয়তাই এখন তার প্রাণ।কিন্তু ঘন্টাখানেক হয়ে গেলো আরশিকে না দেখতে পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে তার মনটা।উঠে দাঁড়াল সে।নিচে এসে জানতে পারল আরশি কিচেনে। তাই সেইদিকে পা বাড়াল সে।
—————
আলো এসে চোখে লাগতেই ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকাল আরশি।দরজায় ঠেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা আয়াজের হাতে আয়না দেখে আর বুঝার বাকি রইল না তার এইটা আয়াজের কান্ড। মনে মনে হাসি পেলেও উপর দিয়ে একটু রাগ দেখালো আরশি।চোখ রাঙিয়ে বলে উঠল,,
--কি সমস্যা কি আপনার?অসুস্থ শরীর নিয়ে এখানে এসেছেন কেন?এসেছেন যখনই ডিস্টার্ব করছেন কেন?দেখছেন না আমি কাজ করছি?
ঠোঁট কামড়ে হাসল আয়াজ।হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো পিছনে ঠেলে দিল।পা বাড়াল আরশির দিকে।আয়াজ কে এমন করে এগিয়ে আসতে দেখে আঁতকে উঠল আরশি।জোর গলায় বলে উঠল,,,
--দেখুন নায়ক সাহেব।আমি এখন খুব বিজি।আমার ননদিনী হয়তো চলে আসছে। সো দূরে থাকুন। আমাকে কাজ করতে দিন শান্তিতে।
----আমি অশান্তি দিচ্ছিলাম তাই না? ওকে এখন অশান্তি কাকে বলে তা জানার জন্য রেডি হয়ে যাও।(বাঁকা হেসে)
---মমমানে?দদদেখুন একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না।এগিয়ে ও আসবেন না।আর,,,
কথাটা শেষ করার আগেই আয়াজ কে একদম নিজের কাছে আবিষ্কার করল আরশি।একটু ও ফাঁক নেই দুজনের মাঝে।মাথা উঁচু করে আয়াজের মুখের দিকে তাকাল আরশি।তাকাতেই দেখল আয়াজ কেমন মিষ্টি হেসে তাকিয়ে আছে তার শ্যামলা মুখশ্রী তে।চোখে তার ঘোর নেশা।বুঝতে পারছে না আরশি আয়াজের চোখ দুটো হঠাৎ এমন দেখাচ্ছে কেন!ভয়ে ঢুক গিলল সে।নেশাতুর চোখে আরশির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়াজ।আরশির ঘামার্ত শ্যামলা মুখটা কেমন নেশা ধরিয়ে দিয়েছে তার মাঝে।চোখ দুটো ফিরিয়ে নিতে পারছে না সে।দুহাতে আরশির কোমর জরিয়ে ধরে নিজের একদম কাছে টেনে নিল আয়াজ।আরশির হাত দুটো গিয়ে ঠেকল আয়াজের বুকে।দৃষ্টি রাখতে পারছে না সে আয়াজের চোখ দুটোতে।যতবার চেষ্টা করেছে লজ্জায় নুয়ে পড়েছে বারবার।এমন নেশাময় আঁখি তে তাকিয়ে থাকার সাধ্য হয়নি আরশির।
মাঝে মাঝে তার আয়াজ কে বলতে ইচ্ছে করে,,
"এই প্রেমময়ী পুরুষ, আপনি কি জানেন না আমি কতো লজ্জাবতী?এভাবে তাকিয়ে আমায় বারবার লজ্জায় ফেলবেন না প্লিজ "
কিন্তু এই কথাটা আরশি কখনই মুখ ফোটে বলতে পারে নি লজ্জায়। আরশির লজ্জায় রাঙা মুখটা দেখে হাসল আয়াজ।এই মেয়ের লজ্জায় মাখা চেহারাটা তার ভীষণ পছন্দ। ভীষণ মানে ভীষণ।আরশির দিকে নুয়ে গেলো আয়াজ।চমকে উঠল আরশি কানের লতিতে আয়াজের ঠোঁটের উষ্ম ছোঁয়া পেয়ে।গরম শ্বাস এসে পড়ছে তার কানের কাছে।সরে যেতে চেয়েও পারছে না।আয়াজের বলিষ্ঠ হাতের বাঁধন থেকে সরে যাওয়া আরশির পক্ষে সম্ভব না।তাই অনেক কষ্টে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল,,,
---আননহা চলে আসবে।রান্নাটা শেষ করতে দিন প্লিজ।
কানের লতিতে আলতো করে একটা কামড় দিয়ে সরে এলো আয়াজ।একটু নড়ে উঠল আরশি।আয়াজ সরে গিয়ে ফ্রীজ থেকে আপেল বের করে আনল।ধুয়ে সেটা ছুড়ি দিয়ে কেটে পিস পিস করে নিল।অবাক হলো আরশি।ভাবল হয়তো আয়াজ খাবে।তাই নিজের কাজে মনোযোগ দিল সে।তার ভাবনা ভুল প্রমাণিত করল আয়াজ।নিজের মুখের সামনে আপেলের পিস দেখে সে চমকে তাকাল আয়াজের দিকে।আয়াজ ইশারা করল তাকে আপেলের পিছটা মুখে নিতে।ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল আরশি,,
---আমি খাবো না নায়ক সাহেব।আপনার খাওয়া জরুরি। কারণ আপনি অসুস্থ।
---না প্রিয়তা।তা বললে কি হবে বলো?আমার বউ ঘেমে কষ্ট করে রান্না করছে আর আমি বসে বসে আপেল খাব?নেভার,,রান্না করতে পারি নাতো কি হয়েছে? বউকে খাইয়ে দায়ে সুস্থ তো রাখতে পারি।(মুচকি হেসে)
মনে শীতল স্রোত বয়ে গেল আরশির।এ কেমন মানুষ স্বামী হিসেবে পেয়েছে সে?নিজে অসুস্থ অথচ তার যত্ন করতে লেগে পড়েছে। আয়াজের দিকে তাকিয়ে আপেলের পিসটা মুখে নিল সে।
"
"
"
দুপুরের দিকে চলে এলো আনহা আর নিশাদ।খাওয়া দাওয়া শেষে আনহার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলল আরশি।আনহা ক্লান্ত তাই রেস্ট নিতে বলে মায়ের রুমের দিকে পা বাড়াল আরশি।যেতে নিয়ে আয়াজের রুম থেকে ভেসে এলো নিশাদের কন্ঠ। দরজার কিছুটা আড়ালে দাঁড়াল আরশি।
---স্যার ইফাজের সাথের সবগুলোকে ধরা হয়েছে? এখন কি করবেন স্যার?
চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো আয়াজের।চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।রাগী কন্ঠে বলে উঠল,,,
---সবগুলো কে এমন মৃত্যু দিব যেনো তাদের লাশের দিকে মানুষ ফিরেও তাকাতে না পারে।আপাতত এদের বন্দী করে রাখো।কিন্তু অত্যাচার করতে একটুও কমতি যেন নাহয়।ইফাজের চোখের সামনে এমনভাবে মারব সবগুলোকে যেনো ইফাজের আত্মা কেঁপে উঠে। আমি মারার আগেই যেন ও নিজের মৃত্যু কামনা করে।
কথাগুলো কানে ভেসে আসতেই কেঁপে উঠল আরশি।পা দুটো থমকে গেছে তার।গলা শুকিয়ে গেছে ভয়ে।বুক ফেটে কান্না আসছে নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষটার এমন রূপ দেখে।আজ তার মনে হচ্ছে কিছু মানুষ নিজেকে যতটা ভালো দেখায় আড়ালে তার চেয়ে ও বেশি জঘন্য সে।নিজেকে আর সামলাতে পারছে না আরশি।কোনোমতে পা দুটো চালিয়ে ছাদে উঠল।হাঁটু গেড়ে বসে ডুকরে কেঁদে উঠল আরশি।বিড়বিড় করে বলে উঠল,,,
--ইফাজ ভাইয়া তুমি যা বলছিলে সব সত্যি। ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি।কেন আমায় ঠকালেন নায়ক সাহেব?কেন?এতো নিচ আপনি।আপপনি একজন খুনী।
চোখ দুটো মুছে উঠে দাড়াল আরশি।স্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠল,,
---এখনো তোর অনেক কিছু করা বাকি আরশি।অপরাধী কে শাস্তি দেওয়া বাকি।সে তোর যতই কাছের মানুষ হোক না কেন জানোয়ারদের কখনো ছাড় দিতে নেই।