ড.ওয়াহিদ তার শিশু কন্যা ওয়াসিকাকে নিয়ে বসে আছে। মেয়েটির এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি। বুকের ভিতর একটা উত্তেজনা কাজ করছে ওয়াহিদের। কিন্তু কেন করছে সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছেনা।
স্বামীর এহেন অবস্থা দেখে আসমা পেরেশানিতে বলেই ফেলল-
~" দেখুন, এখন যা করছেন করেন কিন্তু ভাইজানের সামনে যেন এমন করবেন না। তাহলে আমার মান-সম্মান কিছুই থাকবেনা না। কারন ভাইজান অত্যন্ত বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তার কাছে কোন কিছুই অাড়াল করা যায় না।"
ওয়াহিদ একটু হাসার চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছু বলল না। এমন সময় ওদের দরজার কলিংবেল বেজে উঠলো। কলিংবলের শব্দ শুনে ওয়াহিদ কিছুটা চমকিত হয়ে গেল। আসমা দেরী না করে রুম থেকে বের হতেই দেখলো কাজের মেয়েটি ইতিমধ্যে দরজাটি খুলে দিয়েছে। আসমা প্রায় আধা দৌড়ে তিতিরের কাছে এসেই ওকে জড়িয়ে ধরে আবেগপ্রবন হয়ে বলল-
~" আপা কেমন আছেন?"
তিতির খুব একটা কথা বললোনা। তিতিরের এমন ব্যবহারে আসমা একটু কষ্ট পেল কিন্তু মাহাদ ওর সাথে কথা বলতে লাগলো। তিতিরের একজোড়া চোখ কাকে যেন খুজছে। সাদতো আসমাকে পেয়ে খুব খুশি। আসমা সাদকে কোলে নিয়ে মাহাদকে বসতে বলতেই গাড়ীর ড্রাইভার হরেক রকম ফল আর মিষ্টান্ন নিয়ে হাজির।
দরজায় ওয়াহিদ তার মেয়েকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তিতিরের চোখ যায় ওয়াসিকার দিকে। মুখে হাসি ফুটিয়ে ওয়াহিদের কাছে যেতেই ওয়াহিদ তিতিরকে সালাম দিয়ে ওয়াসিকাকে ওর কোলে তুলে দেয়। তিতির এত খুশি হয় যে, এমন খুশি এই ক'মাসে ওকে হতে আর দেখা যায়নি। মেয়েটিকে আদর করতে ব্যস্ত হয়ে যায়। ওয়াহিদ মাহাদের কাছে এসে সালাম দিয়ে এক অপরের সাথে গলা লাগিয়ে ভালোমন্দ জিঙ্গাসা করলো। এই সুযোগে আসমা সাদকে নিয়ে তিতিরের কাছে চলে গেল। সাদও ওয়াসিকাকে দেখে খুব খুঁশি হলো। মনে হয় ওদের কাছে অতিথী ফিরে এসেছে।
ওয়াহিদ তিতিরের দিকে একবার চেয়ে বলল-
~" ওকে খুব খুশি দেখাচ্ছে না!"
মাহাদ তিতিরের দিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে সম্মতি জানালো। ওয়াহিদ এবার আসল কথায় আসলো। মাহাদ আমি তিতিরকে একটু পরীক্ষা করতে চাই। ক্যালিফোর্নিয়াতে এমন কয়েকটা পেসেন্ট পেয়েছিলাম। যার মধ্যে একজনকে সুস্থ করা সম্ভব হয়েছিল।
ওয়াহিদের কথা কেড়ে নিয়ে মাহাদ শান্ত গলায় বলল-
~" বাঁকি জনেরা?"
মাহাদের প্রশ্নে ওয়াহিদ কিছুক্ষন চুপ থেকে গম্ভীর মুখে বলে উঠলো-
~" বাঁকিরা ওপারেশন থিয়েটারেই মারা গেছে।"
এমন কথা শুনে মাহাদের কলিজা অবদি কেঁপে উঠলো। সে দ্রুত বলে উঠলো, দরকার নেই ওর আর সুস্থ হওয়ার। ও যেভাবে আছে ঐ ভাবেই আমার কাছে বেশ আছে। সারা জিবনও যদি ও এভাবেই আমার সাথে থাকে তাহলে আমি এতেই খুঁশি।
ওয়াহিদ মুখটা তুলে মাহাদের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করলো। তিতিরের যা কন্ডিশন, আর মাহাদকে ও যে ভাবে হ্যারেজ করে তাতে অন্য কেউ হলে অধৈর্য হয়ে উঠতো। কতটা সহনশীল মাহাদ। ওয়াহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথাটা সোফায় এলিয়ে দিয়ে বলল-
~" কাল ওর মাথার যন্ত্রনা দেখেছিলেন তো! ওর যদি এমন আর কয়েকবার হয় তাহলে ওর অবস্থা আর পজেটিভ ভাবে নিতে পারবেন না। তখন ধরা হবে, এক প্রকার ও বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে।"
কথাগুলো বলেই ওয়াহিদ চুপ করে রইলো। মাহাদেরও মুখ থেকে আর কোন কথা বের হলোনা। কিন্তু কিছুক্ষন পরে হঠাৎ প্রশ্ন করলো মাহাদ, তোমরা হঠাৎ এই সময় এখানে?
~" তিতিরের জন্য এসেছি।"
~" আমিতো কাউকে কল করে জানায়নি। খবর পেলে কিভাবে?"
ওয়াহিদ এই কথার জবাব না দিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল-
~" আপনি আসুন আমার সাথে। ওকে চেকাপ করি।"
ওকে চলো বলেই মাহাদ ওয়াহিদের পিছনে গেল তিতিরের কাছে। তিতির তখন ওয়াসিকাকে নিয়ে ব্যস্ত। আসমা মেয়েকে তিতিরের কাছ থেকে নিয়ে নিতেই তিতির মাহাদের দিকে ছলছল চোখে চাইলো।
মাহাদ ওর কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল-
~" ওয়াহিদ তোমার চেকাপ করুক, তারপর আবার নিও?"
তিতির কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো। এমন সময় মাহাদের ফোনে কল এল। অফিসে কি যেন প্রবলেম হয়েছে। মাহাদ তিতিরকে ওদের কাছে রেখে দ্রুত অফিসে চলে গেল।
মাহাদ চলে যেতেই আসমাও সাদকে নিয়ে বের হল রুম থেকে। সবাই চলে যেতেই ওয়াহিদ তিতিরের কাছে বসে আদুরে গলায় বলল-
~" তোমার কি হয়েছে তিতির? আমি বুঝতে পারছিনা এমন অবস্থায় তুমি আমাকে কেমন করে খুঁজে নিলে!"
ওয়াহিদের কথা শুনে তিতিরের চোখের পানি ঝরঝর করে পড়তে লাগলো। ওয়াহিদের এত খারাপ লাগলো যে, মনে হচ্ছে সব দোষ মাহাদের। সে তিতিরের খেয়াল রাখতে পারেনি। কিন্তু আল্লাহ্ যদি তাকে এই সুযোগটা দিত তাহলে এই মেয়েটিকে সে বুকের মধ্যে আগলে রাখতো। তিতির কিছু বলো?
তিতির দু'হাতে চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হয়ে বলল-
~" ওয়াহিদ আমি মনে হয় আর বাঁচবোনা। আমার মাথায় প্রচুর যন্ত্রনা হয়। আমি দিনের বেশিভাগ সময়ে অস্বাভাবিক থাকি।"
~" অস্বাভাবিক বলতে?"
~" আমার কিছু স্মরনে থাকেনা। আমি মানুষিক আর শারিরীক ভাবে মাহাদকে টর্চার করি। পরে যখন বুঝতে পারি তখন খুব কষ্ট হয়। তবুও দেখেন, এতসবের পরও ও ধৈর্য্য ধরে সব কিছু নিরবে সামলিয়ে যাচ্ছে। আর তাছাড়া মাহাদের অনেক বিপদ সামনে। আমি কিছুই করতে পারছিনা। আমাকে বাসা হতে বেরও হতে দেয়না। আমার পরিবারটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।"
ওয়াহিদ সব শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতে এর মস্তিষ্ক এতটা শার্প থাকে কিভাবে? উফ্ তিতির, তুমি জেনে শুনে মাহাদকে এত কষ্ট দিচ্ছো কেন? ওর সাথে সব শেয়ার করতে পারতে!
আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। এমনি সে অনেক টেনশনে থাকে তার ভিতর এত কিছু সে কিভাবে নিবে! কারন সেও তো মানুষ। আমার একটা কাজ করে দিবেন?
~" হুম বলো!"
~" আপনার ল্যাপটটা একটু নিয়ে আসেন।"
এই রিলাক্স, এত টেনশন করতে হবেনা। ১টা কেন আমি ১০০টা কাজ করতেও রাজি আছি। ওয়েট আমি আসছি বলে ওয়াহিদ উঠে চলে যেতেই তিতির বেডে মাথা এলিয়ে দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে। তারপর ওর ব্যাগ থেকে দু'টা খাতা বের করে রাখলো।
ওয়াহিদ আসার সময় কিছু মেডিসিন সহ নাস্তা নিয়ে এসে তিতিরের সামনে রেখে আবার চলে গেল। কিছুক্ষন পর ল্যাপটপ নিয়ে আসতেই দেখলো তিতির কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। ওয়াহিদ কাছে এসে বসতেই তিতির কল কেটে দিয়ে ওয়াহিদের হাতে খাতা ধরিয়ে দিয়ে বলল-
~" এখানে সব লেখা আছে। আপনি সেই মোতাবেক কাজ করে দিন। হাতে সময় খুব কম। আমি চাইনা মাহাদ কোন কাজে হার মানুক। যে মাহাদের সাথে ঝামেলা করছে তাকেও আমি খুব ভালো করে চিনি। কিন্তু আমি সময় নিচ্ছি আমার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য।"
~" সেটা আমি ঠিক করে দিব। কিন্তু কার সাথে এতক্ষন তুমি কথা বললে?"
আমার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড দিপু আর রেনুর সাথে। দিপু সচিবালয়ে খুব বড় পদে কর্মরত আছে। আর রেনু সাংবাদিকতা করে। আমার বেশিভাগ কাজ ওরাই করে দিয়েছে। আপনি প্লিজ কাজটা করেন। আমি এখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারবোনা। কারন এর পর হয়ত আমি আর এমন সময় পাবোনা। তাই সময়টাকে কাজে লাগাতে চাই। আপনি দ্রুত করেন। বলেই তিতির ওয়াহিদের দিকে চাইলো।
~" আরে আমি কি না বলেছি! আগে তুমি নাস্তাগুলো খেয়ে এই মেডিসিন খাও। তোমার যে মাথার যন্ত্রনা হয় তা থেকে দীর্ঘ টাইম তুমি মুক্ত থাকবে। তখন তোমার এই কাজগুলো করতে ইজি হবে।"
তিতির হঠাৎ দরজার দিকে চেয়ে দেখলো, সাদ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। বাবা বাহিরে কেন এখানে এস?
ওয়াহিদ তিতিরের কথায় সাদের দিকে চাইতেই সাদ এসে মায়ের পাশে বসল। তারপর নাস্তা দেখে বলল-
~" মা আমি আপনাকে খাওয়াই দেই?"
তিতির মুচকি হেসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। সাদ মায়ের সম্মতি পেতেই তার মায়ের মুখে চামুচ ভর্তি পায়েস তুলে দিল।
মা ছেলের এমন গভীর সম্পর্ক দেখে ওয়াহিদ মুচকি হেঁসে বলল-
~" তুমি আসবে বলে আমি পায়েসটা নিজ হাতে রান্না করেছি। ভালো লেগেছে?"
~" মাশাআল্লাহ। "
বুঝলে তিতির, মানুষে মস্তিষ্ক মিষ্টি জিনিস বেশি পছন্দ করে। তাই তোমার মস্তিষ্ককে খুঁশি করার চেষ্টা আরকি! ওয়াহিদ কথাগুলো বলে সাদের হাতে মেডিসিন দিয়ে বলল-
~" এগুলো মাকে খাওয়ায় দাও।"
ওয়াহিদ কাজে লেগে পড়লো। পার্সওর্য়াড দিয়ে ইমেলে ঢুকেই দেখলো, তিতির সপ্তাহ খানেক আগে ফুয়াদের অফিসে একটা ছুটির দরখাস্ত করে ইমেইল পাঠিয়েছে। ফুয়াদকে নিয়ে এত টেনশন কেন সেটা কিছুতেই বুঝতে পারলোনা ওয়াহিদ। এমন সময় তিতির ফুয়াদকে কল দিল।
ফুয়াদ কল রিসিভ করতেই তিতির বলল-
~" ভাইয়া আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে। আমি আসমাদের বাসায় আছি। আপনি এখানে এসে প্লিজ আমাকে বাসায় নিয়ে যান।"
তিতির, তিতির বলতেই কল কেটে দেয় তিতির। ফুয়াদ বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। তিতিরকে মনে হল সুস্থ স্বাভাবিক। এমন ভাবে ও কতদিন থেকে যে কথা বলেনি সেটাই মনে নেই ফুয়াদের। কিন্তু মাহাদকে কল না দিয়ে আমাকে কেন কল দিল? মাহাদ মনে হয় বিজি আছে। ফুয়াদ গাড়ী থেকে নেমে ডাইভার কে অফিসে ব্যাক করতে বলে একটা সিএনজি নিয়ে তিতিরের দেওয়া তথ্য মতে আসমার বাসার দিকে রওনা দিল।
এরপর তিতির ওর শশুড়কে কল দিল। আজ কামরান সাহেব তেমন একটা বিজি থাকবেন না তাই এই দিনটাকেই কাজে লাগাল তিতির।
কল রিসিভ হতেই তিতির সালাম দিয়ে বলল-
~" বাবা আমি তিতির!"
~" এই অসুস্থ শরীর নিয়ে তুমি কই গেছ?"
বাবা আপনার কাছে আমার একটা আবদার ছিলো। আপনি আমার বিষয়ে সবই জানেন। এতদিন ধরে আমায় সাহার্য্যও করেছেন। জানিনা আগামী দিনগুলোতে আমি থাকবো কিনা? আপনি যদি পারেন তাহলে আমার বাবার সাথে একটু দেখা করে আসেন। আমি বলতে পারতাম কিন্তু আপনি তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি অনেক খুঁশি হবে। আমার এই শেষ অনুরোধ টুকু রাখেন প্লিজ। কথাগুলো বলেই তিতির চুপ হয়ে গেল।
কামরান সাহেব কথা বলতে পারলেন না। তিনি নিরবে কলটি কেটে দিলেন। মনের আকাশে যেন একরাশ মেঘ জমেছে। সেই মেঘ কিছুক্ষনের ভিতর বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে লাগলো।
মোটামুটি সব কাজ সেরে ওয়াহিদ আর সাদকে নিয়ে বের হয়ে গেল তিতির। আর আসমাকে বলল, ফুয়াদ আসলে যেন বলে তিতির বাসায় ব্যাক করেছে এবং তাকে জলদি বাসায় যেতে বলেছে।
♥
চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে। গাছের ডাল নতুন পাতায় ভরে উঠেছে। আকাশের কোনে মেঘ জমেছে। এই বুঝি বৃষ্টি নামলো বলে। একটু পর বৃষ্টি সত্যিই নেমে গেল। পুরোদিন ওয়াহিদকে নিয়ে অনেক কাজ করেছে তিতির। মাহাদ অনেকবার কল দিয়েছে কিন্তু তিতির বার বারই কল কেটে দিয়েছে। একদিনের কষ্টে যদি সারা জিবন সুখ পাওয়া যায় তাহলে সেই কষ্ট বরন করাই বেটার।
রেনুর বাসায় মাগরিবের নামায পড়ে বের হয়েছে তিতির। তিতির সাদকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে আছে। আর ওয়াহিদ ড্রাইভ করছে। তিতিরের তথ্য মতে এক বাসার গেটে এসে গাড়ী থামলো। গাড়ী থেকে নেমে দাড়োয়ানের কাছে এসে ওয়াহিদ বলল-
~" আপনার স্যারকে বলেন, অফিস থেকে লোক এসেছে।"
দাড়োয়ান তার মালিকের সাথে যোগাযোগ করে অনুমতি নিয়ে বাসায় ঢুকতে দিলো তাদের। ভিতরে ঢুকতেই একটা ছেলে এসে তাদের বসতে বলে উপরে চলে গেল।
তিতির ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে সাদের মাথা মুছে দিতেই পার্থ রায়ের আগমন ঘটলো। পার্থ দেখলো, ফুল পর্দা করা একটি মেয়ে বসে আছে। সাথে একজন বিদেশি নাগরিক। কিন্তু শিশু বাচ্চাটির দিকে চোখ পড়তেই সে বিশ্মিত হলো। কারন এটা মাহাদের সন্তান। ম্যাগাজিন জগতে ছেলের সাথে কিছু পিক আছে মাহাদের। তাছাড়া মাহাদের ডিটেলস্ সব কিছুই জানে পার্থ। কিন্তু ওর ওয়াইফ সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারেনি। তাহলে এটা মাহাদের ওয়াইফ। সাথে এটা কে? ব্যাটাকে ভাবতাম দম আছে। কিন্তু এখন তো দেখছি ও পুরুষই নয়। নিজে না পেরে বউকে পাঠিয়েছে! আজব ব্যাপার। দেশের আর উন্নতি হলোনা।
পার্থ সামনে আসতেই তিতির ওর দিকে চাইলো। পার্থের চেহারার অনেক উন্নতি হয়েছে। দেখতে বড় বিজনেসম্যানের মতই লাগছে। এমন সময় খুব সুন্দর করে একটা মেয়ে এসে পার্থের সাথে দাড়ায়। শরীরের পোষাক দেখেই মাথা নিচু করলো তিতির। এটা শাড়ী না মশারি! শরীরের সব কিছু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
প্রাচী ইনি কে জানো! আমার প্রতিপক্ষ মাহাদ নামের যে একজন ছিলোনা! ইনি তারই ওয়াইফ। আপনার নাম কি আমি জানিনা তবে আপনাকে একটা জিনিস দেখানোর আছে বলেই পার্থ টিভিটা অন করলো। আর তাতেই তিতির দেখতে পেল, ফুয়াদের অফিসের গাড়ীটা জব্দ করা হয়েছে। ফুয়াদের নামে মামলা করা হয়েছে। কারন তার গাড়ীতে কোটি কেটি টাকার কোকেন ধরা পড়েছে। সাথে দেখা যাচ্ছে অন্য একটি বারের সামনে কামরান সাহেবকে চলাফেরা করতে । বাবার ক্ষমতার জোড়ে ছেলে পুলিশের উদ্ধতন কর্মকতা হয়ে স্মাগলারের বিজনেস করছে তাও সরকারি গাড়ীতে।
ওয়াহিদ এসব দেখে বিশ্মিত হয়ে গেল। কতটা নিখুত খেলা খেলেছে পার্থ রায়। একে মানুষ বলবে না পশু বলা যাবে!
নিজে লজ্জায় আসতে পারেনি তাই স্ত্রীকে পাঠিয়েছে। এমন বেলজ্জাহীন স্বামীর কাছে আপনি থাকেন কি করে মিস?
মুখের কথা শেষ না হতেই তিতির রেগে গিয়ে দ্রুত এসে পার্থ গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়েই শার্টের কলার চেঁপে ধরে বলল-
~" তুই এত নিচে নেমে গেছিস? আর আমার বরকে তুই তোকারি করে কথা বলার তুই কে হে! তোর পাওয়ার বেশি লম্বা হয়ে গেছে? একদম গোড়া থেকে তোরে ছেটে ফেলবো।