সাইকো ইজ ব্যাক - পর্ব ১২ - সিজন ৩ - সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি - ধারাবাহিক গল্প


কুহু হাত পা বসা অবস্থায় খাটের এক কোনায় বসে আছে।বসে বলা ভুল হবে মুচড়া মুচড়ি করতেসে হাত খোলার জন্য।তা দেখে ইউসুফ মুচকি হেসে বলল,,

---লাভ নেই খুলতে পারবা না!

কুহু রাগে, দুঃখে অন্য দিকে তাকিয়ে জল ফেলছে। মুখে কিছু বলতেও পাচ্ছে না।তাই রাগে দুঃখে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে।আর ইউসুফ সোফায় বসে ফোন টিপে যাচ্ছে।তা দেখে আরো রাগে গা রি রি করছে কুহুর।মনে হচ্ছে ইউসুফকে কেঁটে কুচি কুচি করে পানিতে ভাসিয়ে দিতে। কিন্তু সে ব্যর্থ। কঠিনতম ব্যর্থ।

---স্যার মিস্ত্রি আইয়া পড়ছে।রুমি এসে বলল।

ইউসুফ তখন মাথা নাড়িয়ে বলল,,

--ওকে যাও! আসচ্ছি আমি।বলে কুহুর দিক বাঁকা হেসে চলে গেল। 

ইউসুফের বাঁকা হাসিতে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।এদিকে ইউসুফ বাহিরে এসে মিস্ত্রীদের সকল ইনস্ট্রাকশন দিয়ে রুমে চলে আসলো।

কুহু বাহির থেকে শব্দের আওয়াজ শুনে, খাট থেকেই বসে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখতে লাগলো বাহিরে কি হচ্ছে।তখনি রুমে ইউসুফের আগমন। কুহু তা দেখে মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নেয়।তখন ইউসুফ কাছে এসে দুষ্ট হেসে বলল,,

---উঁকিঝুঁকি দিয়ে লাভ হলো?  আমার মনে হয় হলো নাতো! আমাকে জিগ্যেস করতে আমি বলেই দিতাম।উফস...! তুমি জিগ্যেস করবে কিভাবে আমিতো তোমার মুখ বেঁধে দিয়েছি...! হা হা হা...!

ইউসুফের হাসি শুনে কুহু নিজেকে এবার অসহায় মনে হচ্ছে। আর হাজার বার দোষারোপ করছে সেি দিনটির যেইদিনে কুহুর সাথে ইউসুফের দেখা হয়েছে...! মনে মনে নিজেকে হাজারটা গালি দিয়ে যাচ্ছে সে।

---এই আমার বাবুইপাখিকে গালি কেন দিচ্ছো হুম? দিস ইজ নট ফেয়ার?? তোমার কোনো অধিকার নেই তাকে গালি দেয়ার বুঝলা..! নাকি প্র্যাকটিক্যালি বুঝাবো (চোখ টিপ দিয়ে)

ইউসুফের কথায় প্রথমে চমকে গেলেও পরে আবার রাগ লাগচ্ছে তার। না পাড়চ্ছে কইতে না পাড়চ্ছে সইতে।মনে মনে শুধু এইটুকু ঠিক করে নিল কুহু...!

---নাহ্ আর মুহূর্তেও না। তাহলে আমি নিজেই পাগল হয়ে যাবো। যে করেই হোক এইখান থেকে বের হতে হবে বাই হুক অর বাই ক্রুক।


এদিকে মিস্ত্রি পুরো বাড়ির জানালা দরজা সব কিছুতে কাঠ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। কুহু আপাদতে যেই রুমে আছে...সেটা বাকি নাই। তা দেখে কুহু হু হু করে কেঁদে যাচ্ছে। পালাবার একটি রাস্তাও ইউসুফ রাখেনি। কুহুর এখন নিজেকে কারাগার বন্দি মনে হচ্ছে।তার উপর ইউসুফ কুহুর খাওয়া দাওয়া নিজ হাতে করিয়ে দিচ্ছে আর ফ্রেস করিয়ে রুমি দিচ্ছে।তবুও হাত খুলার চান্স নেই।খাবার সময় বা ফ্রেস করার সময় মুখ খুলার সময় অনেক কাকুতি মিনতি করছে কুহু কিন্তু এর পরবর্তীতে ইউসুফে রাম ধমক খেয়ে নিরবে চোখের জল ফেলেছে কুহু।

এভাবে কেঁটে যায় কয়েকদিন।এর মাঝে কুহু অনেক বার পালানো চেষ্টা করেছে। তাই ইউসুফ কুহুর পায়ে শিকল পড়িয়েছে। হাত - মুখ এবার খুলে দিয়েছে।

তেমনি একদিন ইউসুফ বাহির থেকে এসে থমকে যায়। কুহু পুড়ো রুম উলোট পালোক করেছে।তার সাথে হাতে তার কাচেঁ ভাঙ্গা ফুলের টবের টুকরো। যা ধারা অলরেডি নিজের হাত পায় জখম করে ফেলছে। কুহুর এই রক্তাক্ত অবস্থা দেখে ইউসুফ বুকে হু হু করে উঠলো। ইউসুফ কাছে যেতেই আরো তেঁতে উঠলো কুহু...চেচিয়ে বলতে লাগলো,

--একদম কাছে আসবি না। একদম না আমি নিজেকে শেষ করে দিবে সত্যি বলছি। আমি... আমি আর পারছিনা এরকম বন্দিদশায় থাকতে। আমার আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়....

কুহুর কথার মাঝেই ইউসুফ কুহুর কাছে এসে থামতে চেষ্টা করে...

--বাবুইপাখি... বাবুইপাখি ওটা ফেল প্লীজ দেখো কতো চোট পেয়েছো প্লীজ ফেরে দেও আর আমার কথা....

ইউসুফকে বলতে না দিয়ে কুহু দিগুণ চেচিয়ে বলল,,

---তোর কথা শুনবো না আমি।  একটুকো না...! একদমি না। তুই শুনবি আমার কথা তুই।তোর জন্য ছোট থেকে আমার লাইফটা হেল হয়ে গেছে। শুধু মাত্র তোর জন্য। আরে আমি তোকে আমার বন্ধু বানিয়েছিলাম। আর তুই? তুইতো শত্রু থেকেও অধম! আজ আর কোনো কথা আমি শুনবো না তোর।  তোর জন্য কটা মাস আমার মাকে দেখি না, বাবাকে দেখি না আমার ছোট ছোট ভাই বোন (কান্না করতে করতে দুহাত উপরে তুলে) আদর করতে পাড়ি না তোর জন্য। আমার লাইফ, ক্যারিয়ার সব ধংস এক মাত্র তোর জন্য।কেন বুঝিস না আই হেট ইউ..! হে আই হেট হেট হেট ইউ...! জীবনে সবচেয়ে বেশী ঘৃণা লাগে তোকে। কেন ছেড়ে দিস না আমায়। আমি আর পাড়ি না।  সত্যি পাড়ি না সত্যি না...(কান্না করতে করতে দেয়াল ঘেসে মাটিতে বসে পরে কুহু আর কাঁদতে লাগে জোরে জোরে)

কুহুর প্রতিটি কথা হৃদয়ে গিয়ে লাগলো ইউসুফের সাথে সাথে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো তার চোখ থেকে।তার বাবুইপাখি তাকে ঘৃণা করে কথাটা যেন মাথার মাঝে ভন ভন করে ঘুড়চ্ছে কিন্তু সে তার বাবুইপাখি ছাড়া অচল কেন বুঝে না তার বাবুইপাখি তাকে..! একটি বার কি বুঝতে পারে না..! ইউসুফ কুহুর সামনে বসে কুহুর দুগালে হাত দিতেই কুহু ইউসুফ ধাক্কা মারে। ইউসুফ ছিটে যায় কিছুটা তখনি কুহু বলতে লাগে,,

---একদম কাছে আসবেন না আমার..! আকদম ছুঁবেন না আমায়। আমাকে আমাকে মুক্তি দিন নয়তো শেষ করে দিবো আমি নিজে একদম শেষ করে দেব বলেই ডান হাতর রগের জায়গায় এক পোচ মারতেই গল গল করে রক্ত বের হতে লাগলো।

ইউসুফের তা দেখে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। কি করে ফললো তার বাবুইপাখি। এসব ভাবতে ভাবতেই আরেকবার একি জায়গায় আঘাত করার আগেই ইউসুফ বলে উঠল চকিতেই,

---কুহু এমন করো না।আতি আমি মুক্ত করে দেব তোমায়।

কুহু এবার ঠান্ডা হলো কিছুটা।

--সত্যি ছেড়ে দিবেন আমায়? আমার মাথা হাত রেখে বলুন ছেড়ে দিবেন নয়তো আবার আঘাত করবো নিজেকে সত্যি। কি হলো?  বলছেন না কেন করবো??(টুকরো টা দিয়ে আঘাত করার ইমচারা করে)

কুহুর এসব কথায় ইউসুফ ভিতর থেকে ভেঙ্গে চুরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার বাবুইপাখি তার হাত থেকে বাঁচার জন্য মরতে চাইছে। ভেবেই বুকের মাঝে ধক করে উঠে ইউসুফের। আর যাই হোক তার বাবুইপাখিকে মরতে দিবে না সে।  কিছুতেই না। যে কোনো মূল্য বাঁচাবে। সে জন্য তাকে তার বন্ধন থেকে মুক্তি দিয়ে দিবে সে। নিজের মনের সাথে বোঝা পড়া করে কুহুর মাথায় হাত রাখলো ইউসুফ। বুক যেন তার চিড়ে যাচ্ছে।তাউ নিজেকে সামলে নরম সুরে বলে উঠলে,,

--হে বাবুইপাখি তোমাকে আমি মুক্ত করে দিবো। এবার এসব ছাড়ো।

--কখন করবেন মুক্তি? এখনি করুন এখনি..!

---কুহু আমি তোমাকে মাথা ছুঁয়ে বলেছপতো মুক্ত করে দিবো তাহলে দিব। আজ অনেক রাত হয়ে গেছে কাল সকালে আমি তোমাকে তোমার বাড়ি পৌঁছব দিব। 

---সত্যি?

---তিন সত্যি।

কুহু মুচকি হাসলো। আর ইশরা করলো পায়ের শিকলের দিক।

--এটা খুলে দিনা না..!

ইউসুফ খুলে দিল। কুহুকে ধরে হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। তারপর আদুরে সুরে বলল,,

--এখন শুয়ে পর। সকালে তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসবো।(ছোট শ্বাস ছাড়লো)

কুহু মাথা নাড়িয়ে চুপ করে শুয়ে পড়লো।আর ইউসুফ সেখানেই পাশে বসে রইল কিছুক্ষণ।  ভিতরে তার দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।সত্যি সে কাল তার বাবুইপাখিকে মুক্ত দেব। আর রাখবে না বেঁধে আর না।

এদিকে কুহু মনে মনে অনেক খুশি। খুব খুশি। আজকে তার প্লেন সাকসেস হয়েছে।সে এই রাক্ষসপুরীর থেকে মুক্তি পাচ্ছে।  ভেবেই শান্তি শান্তি লাগছে। কুহু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আজকে যে ঘুম আসচ্ছেই না। কিন্তু কেন? কাল মুক্ত পাখির মতো উড়বে বলে? প্রকৃদীর সতেজ বাতাস প্রাণ খুলে নিবে বল? তারপরেও মনের কোনে কোথায় জেন খুব কষ্ট চেপে আছে! কিন্তু কিসের কষ্ট?  তার খুব খুশি লাগচ্ছে। আর সে খুশিও তাহলে কেন? কেন লাগচ্ছে চাঁপা কষ্ট টা??

এদিকে ইউসুফের দম বন্ধ হয়ে আসচ্ছে কুহু কাল চলে যাবে কি নিয়ে থাকবে সে? কি নিয়ে বাঁচবে?তার জীবনের আর কোন মোটিভ রইল না! সকালের সূর্য নতুন একটি দিনের আগমন ঘটায়। কিন্তু কালকে সূর্য যে ইউসুফের জীবনে অন্ধার নামিয়ে আনবে। ঘোর অন্ধকার। ইউসুফ একবার কুহুকে দেখে নিল। কুহু ঘুমুচ্ছে শান্তির ঘুম। কিন্তু ইউসুফ তার চোখের যে ঘুম নেই...! 

ইউসুফ কুহুর ঘুমন্ত মুখটির দিক তাকিয়েই আছে।  কাল এই ঘুমন্ত পরি তার পাশে থাকবে না। তার সামনে থাকবে না। তাকে তার হাত দিয়ে খাওয়াতে পারবে না। তার সাথে কথা বলতে পারবে না। মাথায় হাত বুলাতে পারবে না। এসব যে মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে কম না তার কাছে।ইউসুফ যখন কুহুর মুখখানি দেখে ভাবনায় বিভোর তখনি কুহু ইউসুফের কোলে মাথা রাখে। ঘুমের মাঝে বলতে লাগে,,

---মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দুন না..!

ইউসুফ কুহুর গুম জড়ানো কন্ঠ শুনে হাসলো। কুহি আগেও এমন করতো যখন তার স্মৃতি ছিল না। ইউসুফ কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে গুন গুন করে গান ধরলো। মনের অজান্তেই। হয়তো এটা তার করা শেষ আদর, ভালবাসার মুহূর্ত...!

ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান, ঘুমাও আমার কোলে 
ভালবাসার নাও ভাসাবো, ভালবাসি বলে
তোমার চুলে হাত বুলাবো,  পূর্ণ চাঁদের তলে 
কৃষ্ণচূড়া মুখে তোমার, জ্যোৎস্না পড়ুক কোলে 
আজকে জড়ায় ধরবে, তোমার মনকে আমার মন
গাইবে পাখি গাইবে জোনাক, গাছগাছালি বন

কুহুর সাথে কাঁটানো প্রতিটি মুহূর্ত ইউসুফের মনে পড়চ্ছে এখন। কুহুর সাথে তার প্রথম দেখা। কুহু প্রথম চুমু খাওয়ার কথা ভেবেই  এক চিলতে হাসি ফুঁটে উঠলো ঠোঁটের কনে।

এতো ভালোবাসা গো জান রাখিও আঁচলে
দোলোও তুমি দুলি আমি জগৎবাড়ি দোলে 
শব্দ ঘুমের মূর্ছনাতে বাতাসেও সুর তোলে
ভালোবাসার শিশিরকণা পড়বেও অাচঁলে 

কুহুকে তার কাছে নিয়ে আসার পর প্রতিটি মুহূত মনের পরছে তার। কুহুর মুখের খিলখিল হাসি, মুখ ফুলিয়ে বসে থাকা। ইউসুফকে খুব সুন্দর করে ভালবাসি বলা।

এতো ভালোবাসা গো জান রাখিও আঁচলে
দোলোও তুমি দুলি আমি জগৎবাড়ি দোলে 
ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান, ঘুমাও আমার কোলে 
ভালবাসার নাও ভাসাবো, ভালবাসি বলে

গান শেস হতে চোখ মুছলো ইউসুফ। কুহুর এই বিচ্ছেদ তাকে কতটা পুড়চ্ছে কুহু যদি জানতো? কুহু যদি আর না যেত...! সত্যি কি এমন হবে?
নাহ্(দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসে তার) কুহুকে বিছানায় শুয়ে রুম থেকে বের হয়ে ছাদে চলে আসে সেম বাহিরে তখা মুশলধারে বৃষ্টি। তার মাঝেই ছাদের মাঝে এসে কাঁদতে লাগে ইউসুফ। জোড়ে, চিৎকার করে কেঁদে চলচ্ছে সে। বৃষ্টির শব্দে যেমন চিৎকারের আওয়াজ মিশে যাচ্ছে তেমনি মিশে যাচ্ছে ইউসুফের চোখের পানি।
তাহলে কি সত্যি তার বাবুইপাকিকে হারাতে বসলো ইউসুফ?

—————

বাহিরে ঝিঁঝিঁপোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। রাত প্রায় শেষের দিকেই। বেলকনির সাইডে সাজানো ডিভানে  ইউসুফ ঘুমুচ্ছে...! দূর থেকে ভেসে আসচ্ছে আযানের মধুর সুর। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সুর। যে সুর শুনলে যে কোনো মানুষের মন প্রাণ জুড়ে যায়।

ইউসুফের কানে আযানের শব্দ যেতেই ঘুম ছুটে গেল। দু হাতে মুখে চেপে উঠে বসলো সে..! চোখ মুখ তার ফোলা ফোলা। সারা রাত কান্নার ফল হয়তো..!

আযানের সুরটি চুপ চাপ কর্ণপাত করলো।আযান শেষে রুমে ঢুকে যায় সে।কুহুর দিক একবার নজর দেয়..! মেয়েটি নিশব্দে ঘুমুচ্ছে।চোখের কোন জল এখনো জমে।হয়তো ঘুমের মাঝেই কান্না করেছে সে!

ইউসুফ দীর্ঘ শ্বাস বের হলো এবার।কুহুর শুকনো মুখখানি দেখে হু হু করে উঠচ্ছে বুক। ভেবে যাচ্ছে সে..

--সত্যি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আমি। খুব কষ্ট কুহু। পাগল মানুষতো তাই নিজের আবেগ,  অনুভতি কান্ট্রোল করতে পারিনা। পারিনা ছোট বেলার সেই ছোট বন্ধুর হাতটি ছেড়ে দিতে..! কিন্তু এবার বুঝে গেছি আমি..!ভালবাসার আরেক নাম ত্যাগ, ভালবাসার মানুষের মুখে হাসি..!কিন্তু আমি সেই অভাগা..যার ভালবাসার মানুষকে নিজ হাতে শেষ করে দিচ্ছি।

এসব বলতে বলতেই গলা ধরে এলো তার।শুকনো ঢুক গিলে, জ্বিব দিয়ে শুকনো ঠোঁট জোরা ভিজিয়ে নিলো সে, কুহুর চোখের কনের জল তর্জনী আঙ্গুল নিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো সে,,

---বাবুইপাখি!  এটাই হোক তোমার শেষ কান্না। আমি নামক ব্যক্তিটি চলে যাবে দুর থেকে বহুদূর।
________

নামাজ পড়ে দু হাত আল্লাহর দরবারে তুলে কান্না করতে লাগলো সে..!দাদুর কাছে শুনেছিল সে..!মন থেকে কোনো জিনিস চাইলে তা আল্লাহ দেন..! আর তাই হাত তুলে কাঁদচ্ছে আর বলচ্ছে,,

---আল্লাহ আমি জানি আমি নাফরমানি, গুনাগার,  হয়ত পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট ব্যক্তি আমি..!প্লীজ আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার শাস্তি স্বরূপ বাবুইপাখিকে দূর করবেন না প্লীজ আমার থাকে..!তাহলে যে আমি মরে যাবো। সত্যি মরে যাবো..! তার থেকে বরং আমাকে দুনিয়া থেকে তুলে নিন। ভালবাসার মানুষ থেকে দূরে থাকার কষ্ট অনুভব আর করতে পারবো না আমি। আর না...!

এসব বলতে বলতে কান্না করতে লাগলো ইউসুফ।
____________

ভোরে আলো ফুটেছে কিছুক্ষণ। ঘুম ভেঙ্গে গেল কুহুর। শুয়া থেকে উঠে বসলো সে। আশাপেশে ইউসুফকে দেখতে না পেয়ে বিছনা থেকে নেমে হলে আসতেই চোখ আটকে গেল কিছু দূর জায়নামাজের উপর সিজদার হালতে থাকা ইউসুফের দিক। সিজদার মাঝে থেকেই বার বার কেঁপে কেঁপে উঠচ্ছে সে।হয়তো কাঁদছে..! কিন্তু কেন?কেন কাঁদচ্ছে? কুহু দূর থেকে এসব দেখে মনের মাঝে কেমন হু হু করে উঠলো। সে কিছুটা এগিয়ে আসতেই কানে ভেসে আসলো কোদন রত কন্ঠে বিড়বিড় করে বলা কথা গুলো।

---আল্লাহ বাবুইপাখি যেন আমাকে ছেড়ে না যায়..! কখনো যেন না যায়। আমি যে বাঁচবো না? প্লীজ ওকে আমার করে দিন। নয়তো এই দুনিয়া থেকে আমাকে তুলে নিন..! এভাবে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে কখনো সম্ভব না।

শেষের কথা গুলো শুনে ধক করে উঠলো মনে কুহুর। "আমাকে তুলে নিন" কথাটি যেন ঝড় তুলে দিল কুহুর বুকে...! চোখ থেকে নিজের অজান্তেই গড়িয়ে পড়লো দু ফোঁটা জল।
_____________

ছেলেরা নাকি কাঁদে না আজ দ্বিতীয় বার ভুল প্রমান হলো কুহুর কাছে।ছোট থাকতে সে দেখেছিল তার বাবা কাঁদতে, তখন সবে তার বয়স তিন পেরিয়ে ছোট বেলার আধো-আধো স্মৃতির মাঝে বাবা্ কান্নার মুখখানি খুব স্পষ্ট তার চোখের পাতায়।সেদিন কুহু খেলছিল তারেক হাসানে ওষুধের বক্স নিয়ে। জবেদা তখন রান্না ঘরে। তারেকের জন্য চা করছিল। মাত্রই ফিরেছিল অফিস থেকে সে। ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখে কুহু ফ্লোরে পরে ঘুমুচ্ছে। মনের মাঝে হালকা খটকা লাগে তার। সে কুহুকে কোলে তুলে ডাকতে লাগে। কুহুর কোনো সারা শব্দ নেই। মনের মাঝে এবার ভয়ের সৃষ্টি হয়। সাথে চোখ মাটিতে পরে থাকা ঘুমের ঔষধ আর পেশারের ঔষধের ছেড়া পাতা গুলো দিকে।যেখান থেকে তিন টারটা ঔষধ মিসিং। বুঝতে আর বাকি নেই কুহু এগুলো খেয়ে ফেলেছে। সাথে সাথে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হাসপাতালে কুহুকে। ভিতর থেকে ওয়াশ করে বের করে সব। একটি ঔষধতো গলাতেও আঁটকে ছিল তার।সেদিন তার বাবা কেঁদে ছিল,  মেয়েকে হরাবার ভয়ে কারন কুহুর জ্ঞান ফিরছিল না তখন। যখন তার চোখ খুলে বাবা- মাকে  কান্না মাখা মুখ দেখে ছিল সে..! আর আজও চোখ বন্ধ করলেও সেই স্মৃতি ভেসে উঠে তার চোখে।

সেদিনের পর আজ আবার কোনো পুরুষ মানুষকে কান্না করতে দেখলো সে। মা বলতো ছেলেরা খুব বেশী কষ্ট না পেলে নাকি কান্না করতে পারে না। তাহলে কি ইউসুফ তার বিচ্ছেদ সহ্য করতে পারছে না?  তাই কান্না করছে? আর তার এই কান্নার শব্দে কুহুর কেন বুকে চিনচিন ব্যথা করছে? কেন?
বিছানায় বসে এসব ভেবে যাচ্ছে কুহু। তখনি রুমে প্রবেশ করে ইউসুফ।কুহু তাকায় ইউসুফের দিক সুন্দর বিলাই চোখ গুলো ফুলে লাল, মুখটাও তাই।কুহুর মুখ খানি দেখে বুকের মাঝে কেমন জানি লাগলো কুহুর।

কুহুকে বসে থাকতে দেখে সেদিক চোখ বুলিয়ে অন্যদিকে ফিরে। ছোট শ্বাস ফেলে বলে উঠে,

---রুমি খাবার দিচ্ছে খেয়ে তৈরি হয়ে নেও। তোমার বাসায় পৌঁছে দিব।

বলে বের হয়ে গেল সে। আর তাকালো না কুহুর দিক। সে যে চায় না কুহুকে তার চোখে পানি দেখাতে! সে চায় না কুহুকে আর আটকাতে। তাকালে হয়তো তার আবেগ গুলো আবার সজাগ হয়ে যাবে! চাইবে তার বাবুইপাখিকে ছুঁতে, আদর করতে ভালবাসতে।কিন্তু এখন আর সে ধরে রাখবে না।  কিছুতেই না। যেতে দিবে তার ভালবাসাকে।
_____________

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। এতদিন তারা ছিল খাগড়াছড়ি একটি বাংলো বাড়িতে। সেখান থেকে বের হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে।গাড়িতে চলছে পিনপতন নিরবতা। কুহুর আজ জানি কি হয়েছে ভেবে পাচ্ছে না সে। সামনের ব্যক্তিটি আজ তাকে অনেক ভাবাচ্ছে। কেন? সেতোছিল  যা চাইছিল তাই পেয়েছে। মুক্ত করে দিচ্ছে তাকে! তাহলে এই লোকটির থেকে দূরে যাওয়ার পথ যত এগুচ্ছে তত তার ভিতরেটা কেমন যেন করছে তার। চোখের কোনে জল জমে যাচ্ছে সাথে সাথে।

কুহু আড় চোখ ইউসুফকে বার বার লক্ষ করছে কিন্তু ইউসুফ নির্বিকার ভাবে গাড়ি চালচ্ছে। তার দৃষ্টি শুধু সামনেই। কুহুর মনে হচ্ছে এক প্রকার ইগনোর করছে তাকে। এতে যেন কষ্টের ঝুড়িটা আরো বেড়ে গেল তার।কিন্তু কেন কষ্ট হচ্ছে তার? এই মানুষটি তো তার কেউ না! তাহলে? কেন এমন হচ্ছে।কেন????
___________

গাড়ি এসে থেমেছে কুহুদের বাড়ির সামনে। কুহুর যেন সেদিকে খেয়াল নেই। সে তার ভাবসায় মগ্ন তখনি ইউসুফ জোরে হর্ন বাজিয়ে বলে উঠে,

---আমরা এসে গেছি।

ইউসুফের এ কাজে বিরক্ত হলো কিহু। এ কেমন কথা? লোকটি কোনো কাজ কি সোজা করতে পারে না? সব সময়ই কি ত্যাড়া থাকবে? আল্লাহ্
এই কথাটি হর্ন না বাজিয়ে কি বলা যেতে না! যেতে যেতেও সাইকোগিরি করে যাবে। এসব ভাবতে ভাবতেই কুহু দরজা খুলে নামতে নেয়। তখনি ইউসুফ কুহুর দিক একটি বক্স এগিয়ে দিয়ে ফিকে হেসে বলল,

---কায়নাত এটা তোমার জন্য। আমার তরফ থেকে লাষ্ট তফা।ভাল থেক।

কুহু গাড়ি থেকে নামতেই চলে গেল ইউসুফ। আর দাঁড়ালো না। কিন্তু কুহু দাঁড়িয়ে রইল, চেয়েরইল ব্লেক কালারের গাড়িটির দিক। যা মুহূর্তে মিলিয়ে গেল। আর এদিকে কুহুর বুকে হু হু করে উঠলো সাথে সাথে। মনে যেন হচ্ছে তার কেউ যেন তার প্রাণ ভ্রমর টা নিয়ে গেল তার।
___________

মেয়েকে পেয়ে খুশির ঢল নেমে এলো তারেক হাসানের বাড়িতে। যেই খুশিটি কুহুর সাথেই চলে গেছিল তাই যেন কুহুর সাথেই ফিরে এলো।  জবেদা মেয়েকে ধরে কখন থেকে কেঁদে যাচ্ছে। তারেক সাহবের চোখও পানি। তন্বী,  পল্টুও পাশে বসে। কুহু সামলাতে ট্রাই করছে খুব কিন্তু ব্যর্থ। বুঝতেই পারছে মার মন। এতদিনের কষ্ট কান্না হয়ে ঝড়ে পড়চ্ছে।

তারেক হাসান বউকে সামলে কুহুকে রুমে পাঠালো। কুহু রুমে এসে ফ্রেস হয়ে নিল। খাটের কাছে সবতেই তখন ইউসুফের দেখা  বক্সটির কথা মনে পরে গেল তার। সাথে সাথে বের করতেই পেল একটি পেনড্রাইভের। তার সাথে একটি চিরকুট। যেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা,,
     """""For y❤️u"""""

কুহু জলদি উঠে বসে লেপটপ নিয়ে আসে। পেনড্রাইভ সেট করে,, ফোল্ডার ওপেন করলো। যেখানে একটি ভিডিও। ভিডিওতে কি আছে দেখার জন্য আন চান করতে লাগল মন। কিন্তু হাত কাঁপচ্ছে কুহুর থর থর করে। কেন জানি পারছে না সে এটি ওপেন করতে মনের মাঝে কেমন জানি করছে তার। সাহস পাচ্ছে না যেন।তাউ সাহস করে যেই না ভিডিও অন করলো সে,,
তখনি একটি কল এলো তার। কলটি রিসিভ করতেই অপাশের কথা শুনে ফোনটি পরে গেল হাত থেকে। সাথে গড়িয়ে পরতে লাগলো চোখের পানি...!

ঠিক তখনি শুনতে পেল একটি গান,,

""ভালো আছি ভালো থেকো,,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো ""

গানটি কানে যেতেই ল্যাপটপের দিক তাকালো কুহু। স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ইউসুফের হাসি মুখখানি। হাতে তার গিটার।  তাই বাজিয়ে গাইছে সে। এটা দেখারপর "নাহ্" বলে এক চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালো সে...!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন