০৫!!
রাহাত চোখ বুজে থেকেও মায়ার স্নিগ্ধ মনোরম ঘ্রাণটা যেন উপভোগ করতে পারছিল। কতোক্ষণ এভাবে চোখ বুজে মেয়েটার উপস্থিতি অনুভব করছিল রাহাত নিজেও জানে না। একসময় রাহাতের হুঁশ ফিরে মোবাইলের রিংটোনের শব্দে। রাহাত খানিকটা চমকে চোখ মেলে পাশে তাকাতেই দেখতে পেল পাশে কেউ নেই। রাহাত ওর মায়াবতীটাকে তো একটু আগেও অনুভব করতে পারছিল। তাহলে হঠাৎ করে মেয়েটা কোথায় হাওয়া হয়ে গেল! কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রাহাতের মোবাইলটা আরেকবার আর্তনাদ করে উঠতেই রাহাত স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে "পি.এ কলিং" লেখাটা ভেসে উঠতে দেখেই কলটা তাড়াতাড়ি রিসিভ করে মোবাইলটা কানে লাগালো। অপর প্রান্ত থেকে কিছু বলার আগেই রাহাত নিজেই মরিয়া হয়ে বলা শুরু করলো।
-হ্যালো মায়া? কোথায় তুমি? না বলে চলে গেলে কেন? আর কখন গেছ আমি একটুও টের পাই নি কেন? হ্যালো? হ্যালো? কথা বলছ না কেন? টক টু মি ড্যাম ইট--।
-স্যার? আমি মায়া নাই। আমি লিজা। আপনার পি.এ---।
-হোয়াট! লিজা? ওহ! হ্যাঁ--। সরি মিস লিজা। বলুন। কি জন্য কল করেছেন---।
-সরি স্যার। আপনি হয়তো কোনো কারণে ডিস্টার্বড হয়ে আছেন। কিন্তু--।
-ভনিতা না করে মূল প্রসঙ্গে আসুন মিস লিজা। এমনিতেই আমার এই মূহুর্তে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
-সরি স্যার। আসলে---। আসলে মিস মায়া কল করেছিলেন। উনি--। মানে উনি আপনার সাথে দু মিনিট কথা বলতে চায়।
-হোয়াট! মায়া কল করেছিল! কখন! কোথায় ও এখন?
-স্যার মিস মায়া তো উনার নিজের বাসায়---।
-ওকে বলে দিন বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ আমি অফিসে আসবো। ও চাইলে তখন আসতে পারে। আর 'মিস মায়া মিস মায়া' কি করছেন আপনি? বয়সে আর পজিশনে ও যে আপনার সিনিয়র কথাটা কি ভুলে গেছেন নাকি আপনি? সেকেন্ড টাইম এই ভুলটা যেন আর না হয় মিস লিজা।
-সরি স্যার। আপনিই তো সেদিন নিষেধ করলেন উনাকে আপু কিংবা ম্যাডাম কিছুই বলে না ডাকতে। তাই আমি বুঝতে পারি নি--। সরি স্যার।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে। আপনাকে এতো ব্যাখ্যা করতে বলা হয়নি। আপনি মায়াকে কল করে জানিয়ে দিন। আর হ্যাঁ। আমি এখন বাসায় যাচ্ছি। আমি সাড়ে চারটার মধ্যেই চলে আসার চেষ্টা করবো অফিসে। তবু মায়া আগে পৌঁছে গেলে ওকে সোজা আমার রুমে নিয়ে গিয়ে বসাবেন। আর সুন্দর করে ট্রিট করবেন। ইট’স এন অর্ডার। মনে থাকবে?
-জি স্যার। মনে থাকবে।
-আর আমি চেষ্টা করবো সাড়ে চারটার আগেই পৌঁছে যেতে। বাই এনি কেইস পৌঁছাতে দেরি হলেও মায়া আসার সাথে সাথেই আমাকে কল করে জানাবেন। বোঝা গেল?
-জি-জি স্যার।
-গুড। আর কিছু বলার আছে?
-আমম--। আসলে স্যার। আরেকটা কথা ছিল। স্যার মিস্টার দিহান এসেছেন। উনি নিজেকে আপনার ফ্রেন্ড পরিচয় দিচ্ছেন।
-ও দিহান শেখাওয়াত? ও দেশে কখন এলো? বাসায় আসতে বলে দিন।
-স্যার আমি উনাকে বলেছি। কিন্তু উনি শুনছেন না---।
-শুনছে না মানে কি?
-স্যার। উনাকে বলেছি আপনি আজ বিজি আছেন। তাই অফিসে আসেন নি। বাসায় যেতে বলেছি উনাকে। কিন্তু উনি তো অফিস থেকে নড়ছেনই না। সারাদিন পিছে পিছে ঘুরছে। যেন উনাকে আমি এসিস্ট্যান্ট রেখেছি।
-হোয়াট?
-আপনি কি উনার সাথে দু মিনিট কথা বলে নিবেন স্যার? মনে হয় উনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না। বার বার বলছেন আপনি অফিসে এলে আপনার সাথে দেখা করে তারপর যাবেন। উনার নাকি তাড়া নেই কোনো---।
-আজকাল আমার পরিচিত সবাই কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ করছে। এদের কারো মতিগতি আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ধ্যাত! ওকে বলে দিন থাকলে থাক। আর গেলে যাক। আমি আসা পর্যন্ত থাকতে পারলে কথা বলে নিবো। এর আগে চলে গেলে পরে দেখবো ব্যাপারটা। আপনি আপাতত আপনার নিজের কাজ করুন।
-জি স্যার। রাখছি স্যার।
লিজা মেয়েটা দিহানের নামে কি বললো সেটা নিয়ে রাহাত মোটেও বিচলিত নয়। রাহাতের সমস্ত ধ্যান ধারণায় শুধু একটা নামই ঘুরপাক খাচ্ছে। আর সেটা হলো মায়াবতী। এই মেয়েটার কথা এতো কেন ভাবছে রাহাত নিজেও জানে না। তবু ভাবছে। ভাবনাগুলোকে দূরেও সরিয়ে রাখতে পারছে না রাহাত। মায়াবতীর মায়া ভরা মুখটার কথা চিন্তা করতে করতে কল্পনায় হারিয়ে গিয়েছিল রাহাত। তাই অতীত আর বর্তমানের ব্যবধানটা হঠাৎ করে টের পায় নি। এখন দুটোর অস্তিত্ব আলাদা হতে শুরু করেছে রাহাতের কাছে। একটু আগেই রাহাত যে কথাগুলো ভাবছিল তার প্রায় ছয়মাস পার হয়ে গেছে। রাহাত খুব করে মায়াবতীর মায়ায় ডুবে যেতে শুরু করেছিল। মেয়েটার লাজুক হাসি মাখা রাঙা মুখটা আর ভীত হরিণীর চাহনি যতটা না রাহাতকে মুগ্ধ করতো, রাহাত তারচেয়ে বেশি মুগ্ধ হতো মেয়েটার কাজে। রাহাত কখনো মায়াকে কোনো একটা কাজে এক বিন্দু পরিমাণও ফাঁকি দিতে দেখে নি। আর এতো নিখুঁতভাবে কাজগুলো করতো যে রাহাত সেখানে চাইলেও খুঁত ধরতে পারতো না। শুধু রাহাতের জন্য ডার্ক কফির ব্যাপারটা ছাড়া আরকি। মায়াবতীটা কখনো ঠিকঠাক করে ডার্ক কফি করতেই পারতো না। আর সে কারণেই কি না কে জানে রাহাতও মায়ার হাতের লাইট কফিতেই ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছিল। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো রাহাতের।
-স্যার? আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে আছেন?
-হুম? নাহ! আরে চাচা! আপনি গাড়ি থামাতে গেলেন কেন? আমি ঠিক আছি একদম। বাড়িতে চলুন তাড়াতাড়ি। আবার অফিসে যেতে হবে বিকেলে। তার আগে বাবার সাথে অনেক কথা বলা বাকি আছে।
-জি স্যার--।
গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট হতেই রাহাত আবার সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে ভাবনার জগতে পাড়ি জমালো। ঘটনাটা কয়েকদিন আগের। বি.এস.এম কোম্পানির সাথে প্রজেক্টটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে ফুলফিল করতে পারার খুশিতে অফিসে একটা ছোটোখাটো পার্টি থ্রো করেছিল রাহাত। অবশ্য আইডিয়াটা সম্পূর্ণ জুলির আর সোহানের ছিল। অফিসের সব স্টাফকেই পার্টিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। এদিকে মায়ার এসব পার্টিতে যাওয়ার কোনো এক্সপেরিয়েন্সই নেই। কি পড়ে পার্টিতে আসবে, কেমন করে সাজবে, কি ড্রেসআপ-সবকিছুই ধোঁয়াশা মেয়েটার কাছে। আর রাহাত মায়ার এতো টেনশন দেখে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। এই মেয়েটাকে গড়েপিঠে নিতে রাহাত কখনো কাহিল হয় না। উল্টো দারুণ একটা অনুভূতি কাজ করে রাহাতের মনে। যাই হোক, রাহাত মায়াকে নিয়ে একটা শপিংমলে এসে মেয়েদের গাউন সেকশনে এসেছে। এতো এতো গাউনের ভিড়ে বেচারির আবার অথৈ সাগরে পড়ার জোগাড়। রাহাত পাশ থেকে হাসতে শুরু করেছে ততক্ষণে।
-স্যার আপনি একদম হাসবেন না। আমি মরছি টেনশনে আর উনি হেসে কূল পাচ্ছেন না। ধ্যাত আমি যাবোই না পার্টিতে---।
-সেটা বললে তো হবে না মিস মায়াবতী। কোম্পানির সাকসেসের পার্টি। সবাইকে অবশ্যই এটেন্ড করতে হবে।
-বলে দিবেন আমি অসুস্থ তাই আসতে পারি নি। ভিষণ ভিষণ ভিষণ জ্বর আমার। বিছানা থেকে উঠতেই পারছি না----।
-হা হা হা। কাকে বলবো? পার্টি তো আমি থ্রো করেছি--। এখন গেটআপের টেনশনে তোমার সত্যি সত্যি ১০৫° জ্বর হলেও আমার বিশ্বাস হবে না।
-স্যার! ধ্যাত! আমি আজ এক্ষুণি রেজিগনেশন দিবো----।
-হা হা হা। রেজিগনেশন দেয়ার জন্যও হলেও তোমাকে পার্টিতে আসতেই হবে। অফিশিয়াল কাজ সব অফিসেই কিনা---।
-ধুর ছাই! ভালো লাগে না।
-হা হা! মিস মায়াবতী? আমি অবশ্য আপনার কাজটা চাইলে সহজ করে দিতে পারি--। ইফ ইউ ওয়ান্ট--।
-কি করে স্যার? প্লিজ প্লিজ বলুন না? প্লিইজ?
-এই ধরো আমার মাস্টার কার্ড। পিন তো তোমার জানাই। নাউ গো। জাস্ট সোয়াইপ ইট এন্ড বাই হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট---। গো গো গো---।
-স্যার?
-ও হ্যাঁ? টাইম বাউন্ড গেইম কিন্তু ওকে? ১০ মিনিটের মধ্যে গ্রাউন্ড ফ্লোরের সামনে আমার সাথে মিট করবা। আর শোনো একদম কিপ্টামি করবে না কিন্তু। যা ইচ্ছে হবে নিবা। একদমই দরদাম করতে লেগে যাবা না। যা পছন্দ হয় ১০ মিনিটের মধ্যে প্যাকিং করে আমার সাথে মিট করো। ফাস্ট। ইওর টাইম স্টার্ট নাউ।
-স্যার?
-গো?
১০ মিনিট পরে অবশ্য মায়া মুখ কালো করেই ফিরে এসেছে। সবকিছুর এতো দাম যে মায়া কিছু কেনার সাহস পর্যন্ত পায় নি। রাহাত কিছু না বলে জোরেই হেসে ফেলেছিল। মায়াও কিছুটা বিব্রত আর বিরক্ত হয়ে শপিংমল থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়েছে। একটু পরেই রাহাত এসে বসে গাড়ি ড্রাইভ ছুটালো মায়ার বাসার উদ্দেশ্যে। পুরো রাস্তায় একটা কথাও বলেনি মায়া বা রাহাত কেউই। মায়ার বাসার সামনে আসতেই রাহাত মায়াকে কয়েকটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলো। শপিংব্যাগগুলো যে গাড়ির পিছনের সিটে রাখা ছিল মায়া খেয়ালই করে নি। মায়ার অবাক হওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে রাহাত আবার হাসলো। গাড়ি স্টার্ট করতে করতে একটা কথা বললো রাহাত। আর সেটা শুনেও মায়া থতমত খেয়ে রাহাতের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। রাহাতের গাড়িটা দূর থেকে আরো দূরে চলে যাচ্ছে। অথচ রাহাতের বলা শেষ কয়েকটা কথা তখনো মায়ার কানে বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
-সাড়ে সাতটার মধ্যেই রেডি হয়ে থাকবা। গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। সোজা অফিসে চলে আসবা। আর অবাক হওয়ার কিছু নেই। তুমি যে কিছুই কিনতে পারবা না সেটা আমি আগেই জানতাম। তবু একবার দেখতে চাইছিলাম কি করো--। হা হা। বায়। একদম লেইট করবে না আজকে--।
০৬!!
রাহাত একটু পর পর অফিসের দরজার দিকে তাকিয়ে হতাশ হয়ে আবার পার্টিতে মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে। আটটা বাজতে চললো। অথচ মেয়েটার দেখাই নেই। রাহাত তো গাড়িও পাঠিয়েছিল মায়াকে আনার জন্য। তাহলে? রাস্তায় কিছু ঘটলো না তো? নাকি মেয়েটার গাউনটা পছন্দ হয় নি? নাকি ইচ্ছে করেই আসছে না মেয়েটা! এতো কনফিউশানের মাঝে রাহাত বুঝতে পারছে না ওর রাগ করা উচিত নাকি টেনশন। এদিকে ড্রাইভারের কাছেও মোবাইল নেই যে কল করে জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে বা কতোটুকু পৌঁছেছে। রাহাত এবারে কিছুটা বিরক্ত হয়ে আবার তাকালো দরজার দিকে। আর তাকিয়েই এবারে আর রাহাত চোখ ফেরাতে পারলো না। একটা লাল পরী গুটিশুটি পায়ে এগিয়ে আসছে রাহাতের দিকেই। ফ্লোরটাচ স্লিভলেস গাউনটায় মায়াকে সম্ভবত পরী বা অপ্সরার সাথে তুলনা করা যাবে আজকে। গলায় রেড পার্লের নেকলেস আর হাতে ভারি স্টোন বসানো ব্রেসলেটটার সাথে মায়ার চুলের হালকা কার্ল করে একটা হেয়ার বান করায় সাজটা যেন কমপ্লিট লাগছে। আর মায়ার মোটা আইলাইনার টানা গভীর কালো চোখ জোড়ায় কিসের এক মায়া খেলা করছে সেটা রাহাত ভেবে পাচ্ছে না। রাহাত মায়াকে অবাক চোখে দেখতে দেখতেই মিউজিক প্লেয়ারে গান বেজে উঠলো।
"Pal ek pal mein hi tham sa gaya
Tu haath mein haath jo de gaya
Chalun main jahaan jaaye tu
Daayein main tere, baayein tu
Hoon rut main, hawayein tu
Saathiya…
Hansu main jab gaaye tu
Roun main murjhaaye tu
Bheegun main barsaaye tu
Saathiya…"
হাই-হিলের কারণে মায়ার হাঁটতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে বুঝতে পেরে রাহাত এগিয়ে এসে মায়ার হাত ধরে মেইন হলে নিয়ে এলো। অফিসের বোর্ডরুমের সব চেয়ার টেবিল সরিয়ে বিশাল হলরুমের মতো করে নেয়া হয়েছে। এই হলেরই এক পাশে ককটেইল কাউন্টার সাজানো হয়েছে আর অন্যপাশে ডান্স ফ্লোর। কাউন্টারে বেশ কয়েকটা চেয়ারও রাখা হয়েছে বসার জন্য। যারা ড্রিংকস করছে তাদের কেউ কাউন্টারেই বসা, আর কেউ ডান্সফ্লোরে, আর কেউ পার্টি ইনজয় করতে করতে মনের মতো ডান্স পার্টনার খুঁজছে। রাহাত মায়াকে কাউন্টারে বসিয়ে দিয়ে নিজে পাশে এসে দাঁড়ালো।
-তোমাকে না লেইট করতে বারণ করেছিলাম? তবু কেন লেইট করলে?
-আসলে? বুঝতে পারছিলাম না পার্টি ড্রেসআপ হয়েছে কিনা। আর এমন অদ্ভুত করে মেকাপ করে এই টকটকে লাল গাউন পড়ে বাসা থেকে বের হতেও কেমন কেমন লাগছিল--।
-হা হা। কেমন কেমন লাগছিল মিস মায়াবতী?
-ওড লাগছিল। নিজেকে সার্কাসের ক্লাউনের মতো লাগছিল। ছি! এসব পড়ে বের হওয়া যায়?
-তোমাকে অসাধারণ দেখতে লাগছে মায়াবতী। একদম পারফেক্ট বিউটি কুইন।
-হুম?
-তোমার থেকে আজ কেউ চোখ ফেরাতেই পারবে না দেখো। অবশ্য এমন কাতিলানা লুকের একটা সাইড ইফেক্টও আছে। উমমম। সমস্যা নেই। আমি আছি। কারো সাহস হবে না আমার সামনে তোমার কাছে আসার।
-কিসের সাইড ইফেক্টের কথা বলছেন?
-তোমার টকটকে লাল রক্তরাঙা ঠোঁটের---।
-জি?
-হা হা। তুমি দু মিনিট শান্ত হয়ে এখানে বসে থাকো। খবরদার কোথাও যাবা না একদম। মনে থাকবে?
-হুম। আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
-তোমার খাওয়ার জন্য স্ন্যাক্সের অর্ডার করে আসি। বাকি সবারই তো খাওয়া হয়ে গেছে। তুমিই বাকি--।
-এখানে! এখানে কি খাবো? ছি! সবাই কিসব খাচ্ছে আর কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ করছে।
-অদ্ভুতের কি দেখলে? কি আর খাবে? ককটেইল খাচ্ছে--। আর ডান্সের পার্টনার খুঁজছে। যার পছন্দ হবে সে এসে তাকে জয়েন করবে, আর যার হবে না সে রিজেক্ট করে দিবে। সিম্পল।
-ওহ! ককটেইল টা কি জিনিস? এতো বড় কাউন্টার দিয়ে রেখেছে এখানে?
-ওই--। জুস আর কি। অনেক ধরনের জুস মিক্স করে বানায়।
-জুস? তাহলে আমিও খাবো। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে একদম। তিয়াশ লেগেছে---।
-এই না না। তোমার জন্য আমি সফ্ট ড্রিংকস নিয়ে আসছি। এসব খেতে যেও না। অনেক কড়া তো। ফার্স্ট টাইম খেলে সহ্য হবে না---।
-হ্যাঁ? জুসই তো! সহ্য না হওয়ার কি হলো?
-আমমম। আরে বাবা! মিক্সড জুস তো। অনেকের সহ্য হয় না। নেশা হয়ে যায়। খবরদার ওই জিনিস ছোঁবেও না। বুঝেছ?
-নেশা হয়ে যাবে! ও মাই গড! আপনি তো বলেছিলেন পার্টিতে মদ টদ খাবে না কেউ। এখন বলছেন এই জুস খেলে নেশা হয়ে যাবে? নেশার ওষুধ দেয়া জুসে! আগে জানলে আমি আসতামই না। ধুর! আমি এখনই চলে যাবো। এক মিনিটও থাকবো না।
-আরে বাবা! ড্রিংকসের কি দেখলা এখানে! ককটেল অনেক কড়া তাই অনেকের সহ্য হয় না। কিছুটা মাতলামি করে ফেলে। আর তাছাড়া তুমি না খেলেই তো হলো?
-হুহ---।
-আচ্ছা। তুমি এখন চুপ করে এখানে বসো তো। ওকে? আমি এক্ষুণি আসছি।
-হুম। আচ্ছা।
রাহাত স্ন্যাকস কাউন্টারে মায়ার জন্য খাবার আনতে বলে একটা সফ্ট ড্রিংকসের ক্যান নিয়ে আসার সময় মায়ার পাশে একটা ছেলেকে দেখে একটু অবাক হলো। ছেলেটা মায়াকে কিছু একটা বলছে। আর মায়া মাথা নেড়ে মানা করলেও লোকটা শুনছে না। আরো খানিকটা এগিয়ে এসে মায়ার দিকে নিজের ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। রাহাতও ততক্ষণে মায়ার কাছাকাছি আসায় কথাগুলো শুনতে পেল। মায়া এদিক ওদিক তাকিয়ে হয়তো রাহাতকেই খুঁজছে সেটাও বুঝতে পারলো রাহাত। তাই ধীর পায়ে ওদের দিকে এগিয়ে এলো।
-মিস মায়া? উড ইউ লাইক টু ডান্স উইথ মি? আর কতোক্ষণ স্যারের সাথে এভাবে চিপকে থাকবে? স্যারকেও একটু পার্টিটা এনজয় করতে দাও?
-নো থ্যাংকস। আমার ইচ্ছে করছে না।
-ওহ কাম অন মায়া! ইট উইল বি ফান। ডান্সিং জাস্ট এন ইউ নো-- অসাম ফিলিংস। আর পার্টিতে এসে ডান্স না করলে পার্টির মজাটাই মিস হয়ে যাবে। সো প্লিজ কাম?
-লুক মিস্টার? আই সেইড আই হ্যাভ নো ইন্টারেস্ট। ওকে?
-আরে ইয়ার!
ছেলেটা আরো কিছু বলার আগেই রাহাত মায়ার পাশে এসে দাঁড়ালো। আর রাহাতকে দেখেই ছেলেটা তড়িঘড়ি করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।
-আম সরি মায়া। দেরি করে ফেলেছি না আসতে? সরি। আরে? মিস্টার দ্বীপ? আপনি এখানে?
-আমম। স্যার আসলে--। মিস মায়াকে ডান্সের জন্য ইনভাইট করতে এসেছিলাম। বাট উনি তো--।
-ওও। একচুয়েলি মায়া আমার সাথে পেয়ারে এসেছে। আই মিন ও আজ পার্টিতে আমার পার্টনার হয়ে এসেছে। তাই আর কি হেজিটেট করছে। মিস মায়া? আপনি চাইলে মিস্টার দ্বীপকে জয়েন করতে পারেন। আই হ্যাভ নো প্রবলেম।
মায়া রাগে কটমট করে একবার রাহাতের দিকে তাকিয়ে রাহাতের হাত থেকে সফ্ট ড্রিংকসের ক্যানটা নিয়ে খোলায় মন দিলো। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে ছোট্ট করে একটা জবাব দিলো মায়া।
-নো থ্যাংকস।
মায়ার চাপা জবাবটা শুনে দ্বীপ আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস পেল না। কোনোমতে সেখান থেকে সরে পার্টির ভিড়ে মিশে গেল। অবশ্য ততক্ষণে নাক মুখ অপমানে লাল হয়ে গেছে বেচারার। আর সেটা দেখে রাহাত হেসে ফেলেছিল। অবশ্য রাহাতের বেশি মজা লাগছে মায়াবতীর লাল টুকটুকে রাগী মুখটা দেখে। রাগের চোটে ক্যানটা কিছুতেই খুলতেও পারছে না বেচারি। সেটা দেখেও হেসে ফেললো রাহাত। মায়ার হাত থেকে ক্যানটা নিয়ে রাহাত নিজেই খুলে দিলো। ততক্ষণে ওয়েটার মায়ার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। রাহাতও আশেপাশে দেখলো আরো বেশ কিছু পরিচিত মুখের মধ্যে বি.এস.এম কোম্পানির ম্যানেজার আর মিস্টার খানের সেক্রেটারিকেও দেখতে পেল। রাহাতকে দেখতে পেয়ে তারাও হাত নাড়াচ্ছে দেখে রাহাত একটু হেসে মায়ার দিকে তাকালো।
-এই যে মিস মায়াবতী? আপনি এখানেই থাকুন। আর নাস্তা করুন। কিছু লাগলে কাউন্টারে বললেই ব্যবস্থা করে দিবে। ওকে? আর কেউ ডিস্টার্ব করলে বলে দিবেন যে আপনি আমার সাথে এসেছেন। আমার পার্টনার বললেই আর কেউ বিরক্ত করার সাহস পাবে না। ওকে?
-আপনি কোথায় যাচ্ছেন স্যার?
-মিস্টার খানের ম্যানেজার আর সেক্রেটারি এসেছে। দেখা করে আসছি। কোথাও যাবে না কিন্তু বলে দিলাম। আমি এখানেই আছি।
-হুম----। আচ্ছা।
রাহাত একটু পরেই বি.এস.এম কোম্পানির ম্যানেজার আর সেক্রেটারির সাথে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ খেয়াল করলো জুলি মায়াকে একটা ক্যান দিচ্ছে। ব্যাপারটা দেখেই রাহাতের ভ্রু জোড়া কিছুটা কুঁচকে গেল। কিসের ক্যান এটা ভাবতে ভাবতেই রাহাতের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। পাশে থেকে ম্যানেজার আর সেক্রেটারি যে রাহাতের প্রজেক্ট, আজকের পার্টি এসব নিয়ে তারিফ করেছে তার কিছুই রাহাতের কানে ঢুকছে না। রাহাত কোনমতে তাদেরকে 'এক্সকিউজ মি' বলে সরে আসার চেষ্টা করতেই দেখতে পেল মায়া ততক্ষণে ক্যানের স্বচ্ছ তরলটায় চুমুক দিয়ে দিয়েছে। রাহাত এবারে মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে বসলো এবার কি হবে। এই মেয়েটাকে রাহাত এখন সামলাবে কি করে!